অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::১০

0
2590

অন্যরকম_ভালোবাসা ?পর্ব::১০
#ইফা_আমহৃদ

— আইছে আমারে দাদার রুমে পাঠাতে।। দশটা না পাঁচটা না,,একটা মাত্র বউ,, ছোট বেবী ।।কতো কষ্ট করে তুলে এনে বিয়ে করেছি ।।তার থেকে দূরে সরাতে।।(বেড থেকে লাফ দিয়ে উঠে দাড়িয়ে আয়ান)

আয়ানের এমন ব্যবহারে মুখ চেপে হাসছে ইশরা।।লজ্জাও করছে,, কিন্তু মুখ ফুটে কিছু বলতে পারছে না।। আয়ানের কথায় গুরুত্ব না দিয়ে তিথি হাত ধরে আয়ানকে বের করে দিতে দিতে বললো?..

— দেখ আয়ান আর মাত্র ১৭ দিন‌‌।।বলা তো যায় না কখন ইশরার পেইন উঠে যায় ।।তখন তুই সামলানো বদলে আরো ঘাবলে যাবি।। দেখা যাবে সাধারণ ব্যাথা মনে করে ,, পেটে ব্যাথার মেডিসিন খাইয়ে দিবি।।তাই আজ থেকে যতোদিন পর্যন্ত না আমাদের বাড়িতে নতুন অতিথি আসছে ।।ঠিক ততদিন তুই তোর দাদুর সাথে নিচে ঘুমাবি ।।চাইলে বাবা সাথেও ঘুমাতে পারিস ‌।।তবে ইশরার সাথে নয়।।

— এখনো ১৭ দিন বাকি আছে।।প্লীজ বিরক্ত করো না ,, গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো আর আমাকেও আমার বউয়ের কোলে শান্তিতে ঘুমাতে দাও।।যখন আমি তোমার গর্ভে ছিলাম ,, তখন তো আমি বাবার কাছ থেকে তোমাকে আলাদা করি নি ,, তাই তুমিও আলাদা করতে পারবে না।।(আবার দৌড়ে ইশরার কোলে মুখ গুঁজে আয়ান)

— ভাইয়া তুই তো দেখছি বউ পাগল হয়ে যাচ্ছিস ।।(তিথিকে উদ্দেশ্য করে অনয়া)বেবীর আগমন হতে না হতেই তোমার ছেলের এই অবস্থা ।।বেবী আসলে দেখবে ওয়াশরুমেও যাবে না।।হা হা হা ???

— বড় ভাইয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানিস না।।নাকি ভুলে গেছিস।।যদি কানের নিচে ঠাঁটিয়ে দুটো লাগিয়ে দেই না‌‌।।দেখবি সব মনে পড়ে গেছে ডাফার।।এখন ভাগ এখান থেকে।।(ইশরার পেটে ওষ্ঠ ছুয়ে দিয়ে আয়ান)

ইশরা মাথা নিচু করে বসে আছে ।। এতোক্ষণ যতটুকু লজ্জা লাগছিলো,,এখন যেন পৃথিবীর লজ্জা নামক বস্তুটা সব এসে তার উপর ভড় করেছে।। মায়ের সামনে কোনো ছেলে এমন করতে পারে ,, সেটা ধারনার বাইরে ছিলো তিথির।।আয়ানই বা কী করবে ,, এমন পাগলামী করে দেখলে ,,যদি তিথিকে এই রুম থেকে বিদায় করতে পারে ,, যদি একবার ভুল করে হলেও দিদা আর তিথি কেউ রুমের বাইরে পা রাখে ।। তাহলে আয়ান দরজা যে একবার লক করবে ,,পেইন উঠার আগে আর খুলবে না।। এরমধ্যে রুমে প্রবেশ করলো আজাদ আহম্মেদ আর তার বাবা রুহান আহম্মেদ।। আয়ানকে এভাবে ইশরার কোলে মাথা রাখা দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো আজাদ আহম্মেদ।। কিন্তু সেদিকে তোয়াক্কা না করে তিথির দিকে এগিয়ে গেলেন।।

— আরে ছারো তো ওদের ।।আয়ান একহাতে সব ঠিক সামলে নিবে চিন্তা করো না।। তুমি বরং রুমে চলো ,, আমার ঘুম পেয়েছে।।(তিথির আঁচল টেনে আজাদ আহম্মেদ)

— যত্তসব ডং।। চোখের মাথা খেয়েছো নাকি ,, দেখতে পারছো না বাবা মা ,, ছেলে ,, ছেলের বউ ,, মেয়ে আছে।। দুদিন পর নিজে দাদু হবে তবুও ডং কমলো না।।( রাগ দেখিয়ে তিথি)

— ডঙের কি আছে ,, ছেলে যদি বাবার সামনে প্রেম করতে পারে ,, বাবা কেন পারবে না।।

— যেমন বাবা তেমন তার ছেলে ।।দুজনেই বেহায়া।।

কথাটা বলে রাগ দেখিয়ে হনহন করে বেরিয়ে গেল তিথি।।তিথিকে যেতে দেখে বাবার দিকে ইশারা করে বের হয়ে গেল আজাদ আহম্মেদ।।ছেলের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রুহান আহম্মেদের দিকে তাকালো রিহু।।তার বুঝতে বাকি রইল না ।। আজাদ আহম্মেদের আসার পেছনে একমাত্র তার স্বামীই দায়ি ।।রুহান আহম্মেদের দিকে তৃক্ষদৃষ্টি নিক্ষেপের করে বললো,,”” আজ একবার রুমে আসো,,, তোমার একদিন আর আমার যেই কয়দিন লাগে””!! বলে আর দাঁড়ালেন না তিনি ।।দূরত্ব পায়ে হেঁটে রুম ত্যাগ করলেন।।রুহান আহমেদ পকেট থেকে নেলপলিশ বের করে বিরবির করে বললেন,,”” আজ একমাত্র তুইই পারিস এই অবুঝ বুড়োটাকে রক্ষা করতে “” ।।তিনিও রিহুর সাথে পা মিলিয়ে চলে গেলেন।।রিহুর ছোটবেলা থেকেই নেলপলিশ খুব পছন্দের।।রিহু যতোবার রুহানের সাথে রাগ করেছে ততবার রুহান নতুন নেলপলিশ কিনে এনে রাগ ভাঙিয়েছে।।আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

সকলে চলে যেতেই হাপ ছেড়ে বাঁচলো ইশরা।।সে নিজেও চায়নি আয়ানকে ছাড়া থাকতে।।তাই বলে সবার সামনে এমন পরিস্থিতি ক্রেট করবে।। লজ্জায় তো মাথা কাটা যাচ্ছিলো ইশরার।।রাগ দেখিয়ে আয়ানের মাথাটা সরিয়ে বেলকেনিতে চলে গেলো।। আয়ান বুঝতে পারলো,, ইশরা রাগ করেছে।।তাই সে নিজেও নেলপলিশ খুঁজতে লাগলো ।।যদি তার দিদার মতো ইশরার রাগ ভাঙাতে পারে।। কিন্তু তা আর হলো না ।। অনেকদিন নেলপলিশ না দেওয়ার কারনে বাতাস ঢুকে জমাট বেঁধে গেছে।। জমাট বাঁধা নেলপলিশের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বিরবির করে বললো..

— আজ বাড়ির সবাই একে অপরের সাথে রাগ করেছে।মা,, বাবার উপর ।।দিদা ,,দাদুর উপর ।।ইশরা আমার উপর ।।এখন তুইও আমার উপর ।।(মাথায় হাত দিয়ে আয়ান)

_______________

মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ইশরার ।।মাঝেমাঝেই ঘুম ভেঙ্গে যায়।। কিন্তু কখনো আয়ানকে ডাক দেয় না।দুই চোখ ভরে আয়ানকে দেখে।।সারাদিনের পাগলামীর পর ঘুমিয়েছে।। পরক্ষনেই নিজেকে আয়ানের বুকে পেয়ে মুচকি হাসলো।।যতক্ষন আয়ানের বুকে থাকে ,, ততক্ষণ আলাদা এক ধরনের শান্তি অনুভব করে ইশরা।।কখনো কাউকে আয়ানের বুকে দেখলে কেমন রিয়েক্ট করবে ইশরা।।তাও তার ধারনার বাইরে।।আয়ানের বুকটা যেন শুধুমাত্র তার একার ।।আচ্ছা আয়রা যখন আয়ানের বুকে মাথা রাখবে কিংবা কোলে উঠে ঘুমাবে,,তখন কি ইশরার হিংসা হবে।। হয়তো আবার হয়তোবা না।।এইসব ভেবে আনমনে হাসলো ইশরা।। বেবী আসতে না আসতে হিংসা শুরু করে দিয়েছে।।
হঠাৎ পেটে কেমন অনুভব করতে হাত রাখলো পেটের উপর।।বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো ইশরার কেন ঘুম ভেঙেছিল।। একটু আগে আয়ান পেট ভর্তি করে খাইয়ে দিয়ে ঘুমিয়েছে ।।এখন তাহলে কিভাবে ক্ষুধা পেলে। আয়ানকে ডাকতে গিয়েও আবার ধমকের গেল।। বেশিক্ষণ হয়নি ঘুমিয়েছে।। সামান্য একটু কারনে আয়ানের কাঁচা ঘুম ভাঙাতে চাইছে না ইশরা।। বেবী কিক করলে যেমন লাগে একদমই তেমন লাগছে না।। আস্তে আস্তে পেটের ব্যাথাটা আরো বারতে লাগলো ।।এবার বুঝতে বাকি রইলো পেইন শুরু হচ্ছে।। দুহাত দিয়ে পেট চেপে শুয়ে আছে ,, মুখ দিয়ে একটাও স্বর বের হচ্ছে না‌।। ঠান্ডা এসির মাঝেও ঘেমে গেছে ইশরা।। ব্যাথা যেন প্রান বেরিয়ে যায় যায় এমন অবস্থা।।হাত বাড়িয়ে কোনো রকম আয়ানকে ডাক দিলো।। কিন্তু হলো তার বিপরীত

— আ-য়া-ন,, শু-ন-ছো ।।

কথাটা শেষ করার আগেই আয়ান ইশরার হাত টেনে চুমু খেলো।।ইশরাকে আবার বুকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।। ঘুমের ঘোরে কি হচ্ছে ,, বোধগম্য হলো না আয়ানের।।ইশরা আয়ানের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করে নিলো।। শরীরটা যেন ক্রমশ অপস হয়ে আসছে।। তেজহীন হাত শক্ত করে চেপে ধরলো আয়ানের বুকে।।হাতের নখগুলো মনে হচ্ছে আয়ানের বুকে ঢুকে যাচ্ছে।।ধরপর করে চোখ মেলে তাকালো আয়ান।। এতোক্ষণে ইশরার শরীর শক্তিহীন হয়ে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে।। হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্প জ্বালালো আয়ান।।ইশরার ঘেমে যাওয়া ফ্যাকাশে মুখটার দিকে তাকিয়ে আঁতকে উঠলো।।গালে হাত ছুঁয়ে কয়েকবার ডাক দিলো ,, কিন্তু ইশরার সাড়া শব্দ পাওয়া গেল না।।

________________________

হসপিটালের করিডোরে বসে আছে আজাদ আহম্মেদ,,তিথি ।।রুহান আহম্মেদ আর রিহু আসতে চেয়েছিলো।। কিন্তু আস্তে দেয় নি ।। তাদের দেখাশোনার জন্য জোর করে করে অনয়াকে রেখে এসেছে।।বলে এসেছে ,, “”ওখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে সবটা ফোন করে জানাবেন””।। রৌদ্র জুবায়ের আর তমোনা ,, তাদের ফোন করে জানালো হয়েছে ।। কিন্তু তারা এখনো এসে পৌঁছায় নি।। এতো রাতে খবর পাওয়াতে হয়তো আসতে কোনো সমস্যা হচ্ছে।।
ডাক্তার সিজার ডেলিভাড়ি সাযেষ্ট করছে ।। নরলামে লাইফ রিস্ক আছে।।
এদিয়ে ইশরা জেদ ধরেছে নরলাম ডেলিভাড়ি করবে ।।সে সম্পূর্ন মাতৃত্বের স্বাদ নিতে চাইছে।। কিন্তু আয়ান কিছুতেই ইশরাকে লাইফ রিস্ক নিতে দিবে না।। অবশেষে আয়ানের কথায় বাঁধ্য হয়ে সিজার ডেলিভাড়িই ঠিক করা হলো।।
আয়ান ইশরার হাত ধরে অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে দাড়িয়ে আছে।। সেদিন ইশরার বলা কথাগুলো আয়ানকে অনেক ভাবিয়েছে।।তাই সে নিজের চোখে ইশরার যন্ত্রনা দেখে উপলব্ধি করতে চায়।।ইশরাও আর বাঁধা দেয়নি।।
ডাক্তার একটা ইনজেকশন পুশ করতে নিলে ,, আহহহ করে ,,,চিৎকার করে চোখের উপর হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো আয়ান।।সবাই আয়ানের দিকে তাকিয়ে আবার তাদের কাজে ব্যস্ত হয়ে গেল।। পরক্ষনে ডাক্তারের হাতে সিজার দেখে ভয়ে ভয়ে ঢক গিললো আয়ান।। একবার ইশরার দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার সিজারের দিকে ।।
টেনশনে জ্ঞান হারালো আয়ান।।ডাক্তারেরা আয়ানের অবস্থা দেখে শব্দ করে হেঁসে দিলো।।শেষে কিনা বউয়ের কষ্ট উপলব্ধি করতে এসে নিজে বেহুঁশ।। ভাগ্যিস আয়ানের ডেলিভারি করা হচ্ছে না।।তাইলে হয়তো আয়ানকেই খুঁজে পাওয়া যেন না।। ??
দুজন ওয়ার্ডবয় এসে আয়ানকে নিয়ে গেল ।। আয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে তৃপ্তিকর হেসে দিয়ে বলে উঠলো ইশরা..

— বেঁচে থাকলে আবার দেখা হবে প্রিয় ।।

চলবে..??

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here