অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_৫০

0
6087

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_৫০

পৃথিবীর দুইপ্রান্তে রিশাদ অনি নিজেদের জীবনে ব্যস্ত হয়ে গেছে। সবটা মানিয়ে নিয়ে একে অপরকে ছাড়া জীবনযাপন মোটেও সুখকর ছিল না। প্রযুক্তির কল্যাণে তারা দূরে থাকলেও তাদের মাঝের যোগাযোগ ছিল নিরবিচ্ছিন্ন। একে অপরের সাথে ভিডিও কলের মাধ্যমে তাদের দিনের শুরু হতো শেষটাও হতো একইভাবে। তবুও কোথায় যেন এক নীরব অসম্পূর্ণতা। দিনশেষে কাছের মানুষটার একটু সান্নিধ্য পাবার জন্য আকুল মনটা বার বার হতাশ হয়। কাছের মানুষকে একবার ছুঁয়ে দেয়ার আকুলতায় হৃদয় আজ হয়রান হয়ে আছে।

রাতে ঘুম থেকে হঠাৎ জাগা পেলে আর সেই মানুষটার মুখ দেখা যায়না।ভোরবেলা কেউ জোর করে মসজিদে পাঠায় না। কি অদ্ভুত সব থেকেও যেন কিচ্ছু নেই। হৃদয়ের গহীনে শুধুই ভালোবাসার মানুষটাকে কাছে পাবার আকুলতা, প্রেয়সীর কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়ার আকুলতা। সবশেষে প্রাণহীন আসবাব দিয়ে ঘরটায় একা এক প্রাণকে ঘুমোতে হয়। ফোনের এপারে ওপারে নীরব হাহাকার যেন এক শব্দহীন অনুভূতি। একে অপরের দিকে চেয়ে দুজনেই তাদের কষ্টগুলো লুকোনোর ব্যর্থ চেষ্টায় ব্যস্ত থাকে। তারা কি জানে তাদের মলিন চোখের ভাষায় যে মনের গহীনে শব্দ হয়ে বাজতে থাকে।
নীরবে সবটা মেনে নিয়ে হৃদয়ের মলিনতার উপর জোরপূর্বক হাসির রেখা ফুটিয়ে তুলিয়ে দিনাতিপাত করছে। ব্যস্ততার মাঝে একাকীত্ব বেশ দারুণ ভাবে তাদের হৃদয়ে হাহাকারের উদ্ভব ঘটায়।

ফোনের রিংটোনটা বেজে উঠতেই রিশাদ তার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসে। কাত ঘুরে ফোনের দিকে তাকাতেই অনির হাস্যজ্জ্বল মুখটা ভেসে ওঠে। রিশাদের চোখের কোণায় চিক চিক করতে থাকা দুফোঁটা বিষাদ অশ্রু সন্তপর্ণে মুছে নিজেকে সামলে নেয়।

চোখ মুখ ঠিক করে ফোনটা রিসিভ করেই একটা প্রশস্ত হাসি দেয়। ফোনের অপর পাশে অনি রিশাদের হাসি দেখে কিছুটা কষ্টময় প্রশান্তি অনুভব করে। এই হাসির পেছনে থাকা মলিনতাটাই তার হৃদয়ে আছড়ে পড়ে। রিশাদের হাসির জবাবে অনিও মলিন হাসি দিয়ে রিশাদকে কিছুটা শান্ত গলায় বলে;

–ঘুমাওনি এখনো?

–তোমার সাথে কথা না বলে ঘুমিয়েছি এরকম কি কখনো হয়েছে বলো?(রিশাদ)

–মামনি বাবা রিশা সবাই কেমন আছে?(অনি)

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছে। (রিশাদ)

–ওহ আচ্ছা। বাসায় কখন আসছো?খেয়েছো রাতে?(অনি)

-কিছুক্ষণ আগেই ফিরেছি।(রিশাদ)

–এত দেরিতে যে?(অনি)

–সাইট ভিজিটিং এ গেছিলাম।একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং ছিল তাই আরকি।(রিশাদ)

–হুম বুঝছি। কেমন আছো?(অনি)

–কাছের মানুষকে ছাড়া যতটা ভালো থাকা সম্ভব ততটাই ভালো আছি।

নীরব অনি।

–তারপর বলো।এক্সাম কেমন হলো?(রিশাদ)

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো হয়েছে। (অনি)

–ওহ আচ্ছা।(রিশাদ)

–চলো খাবে এখন।(অনি)

–তুমি খেয়েছো?(রিশাদ)

–তোমাকে ছাড়া কবে খেয়েছি??(অনি)

রিশাদ ফোনটা হাতে নিয়ে সেন্টার টেবিলে ফুলদানির সাথে হেলান দিয়ে রেখে টেবিলে রাখা খাবার প্লেটটা হাতে নিয়ে খেতে শুরু করে দেয়। ফোনের ওপাশে অনিও। এভাবেই গত দুমাস যাবত তাদের দূরে থেকেও কাছাকাছি থাকার অল্প একটু প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে।কষ্টের মাঝেও কোন অভিযোগ নেই রিশাদের।হাসিমুখে সবটা মেনে নিয়েছে শুধু প্রিয় মানুষটার স্বপ্ন পূরণের আশায়। কিছুটা দূরত্ব মেনে নিয়েছে শুধু তার হাসি মুখটা দেখার জন্য। ভালোবাসার মানুষের কাছ থেকে দূরে থাকার অনুভূতি বর্ণনার জন্য শব্দ ভান্ডার আজ সীমাবদ্ধ।

কষ্টের মাঝেও এক চিলতে সুখ নিয়েও তারা ভালো থাকার অভিনয় করছে। ব্যস্ত দিনশেষে অনি যখন ফোনের এপাশে থেকে তার ভালোবাসার মানুষটার ভালো থাকার সুনিপুণ অভিনয় দেখে বুকটা কেমন হাহাকার করে। শুধুই অপরাধবোধ জেগে ওঠে। স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে বোধ হয় সে তার বৃহৎ প্রাপ্তিকে উপেক্ষা করছে।কান্নাগুলো সব বেরিয়ে আসতে নেয়। মাঝে মাঝে অশ্রু আটকানোর চেষ্টায় যখন ব্যর্থ হয় তখনই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ডুকরে কেঁদে ওঠে অনি। অপর পাশে রিশাদেরও আর বুঝতে বাকি থাকে না অপর পাশে অনির হাল। কবে হবে তাদের এই যন্ত্রণাময় জীবনের অবসান।বিগত দুই যাবত ধরে এমন জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলেও তারা আজ বড্ড ক্লান্ত। অনি রিশাদ যে একে অপরকে ছাড়া কতটা অসম্পূর্ণ তা প্রতিটি মূহুর্তে তারা টের পাচ্ছে।

খাবার খাওয়া শেষ করে বেশ কিছুক্ষণ যাবত কথা বলে অনি রিশাদ।ক্লান্ত থাকায় রিশাদ কথা বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়ে। অনি রিশাদের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে এক আত্মতৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে। এই হাসির পিছনে রয়েছে কিছু আনন্দময় লুকনো কথা। অনি এভাবেই কিছুক্ষণ যাবত রিশাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। এভাবে কিছু সময় অতিবাহিত করার পর অনি ফোনটা কেটে দিয়ে পড়াশোনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কালই তার শেষ পরীক্ষা।এই পরীক্ষা টা শেষ হলেই বোধ হয় তার বিচ্ছেদের অবসান হবে। ভাবতেই কেমন প্রশান্তি লাগে অনির।

কিছুক্ষণ যাবত সে বইটায় চোখ বুলিয়ে নেয়।পড়া শেষ করে সে সে একেবারে গোসল করে বেরিয়ে আসে। জাহানারা বেগম তাকে অনেকক্ষণ যাবত ডাকছিল।

–হ্যা দিদা বলো ডাকছিলে কেন?

–তোমার সব কিছু প্যাকিং করে রেখেছো?লাস্ট মোমেন্টে গিয়ে আবার তাড়াহুড়ো করে আমাকে হয়রান করে ছাড়বে।(জাহানারা বেগম)

–নো টেনশন দিদা আমি সব প্যাকিং করে রেখেছি। শুধু একবার এক্সামটা শেষ হতে দাও। সাই করে চলে যাবো। (অনি) বেশ উৎসাহ নিয়ে কথাগুলো বলে অনি। জাহানারা বেগম অনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। অনি কোন মাত্রায় উত্তেজিত তা উনি ভালো ভাবেই টের পাচ্ছে না। যে মেয়ে কখনো বাংলাদেশে যেতেই চাইতো সে আজ সেখানেই যাওয়ার জন্য এতোটা উতলা হয়ে যাচ্ছে।

–রিশাদ কে বলেছো নাকি আমি বলবো?(জাহানারা)

–না না দিদা একদম বলবে না। তুমি বলে দিলে তো সারপ্রাইজটাই মাটি হয়ে যাবে।(অনি)

–তো ওবাড়ির কাউকে বলেছো?না বললে কি করে হয়?(জাহানারা)

-হ্যা বলেছি।তোমাকে আর এসব নিয়ে ভাবতে হবে না। আমি সব প্ল্যানিং করে রেখেছি। এই জন্মদিনটা রিশাদকে আমি সবচেয়ে বড় সারপ্রাইজটা দিতে চাই। হি হি হি। বলেই অনি তার দিদার গলা জড়িয়ে ধরে। এরপর সে তার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়।

অনি আজ এতটা খুশি যে খুশিতে তার নাচতে মন চাচ্ছে।রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে অনি রিশাকে কল দেয়। রিশা বেঘোরে ঘুমাচ্ছিল। ফোনের শব্দ পেয়ে সে খুব বিরক্ত হয়। প্রথমবার সে রিসিভ করে না। দ্বিতীয় বার রিং হতেই সে কল রিসিভ করে অনির নাম্বার দেখে।

কল রিসিভ করতেই রিশা এক ঝাড়ি খায় অনির কাছে।অনি ভুলেই গেছিল এখন তাদের ওখানে দিন হলেও এখানে মাঝ রাত। রিশা ঘুমের ঘোরে কি সব বলছিল মিন মিন করে বুঝতে পারে না অনি। সে যাই হোক অনি রিশার কাছ থেকে খবর নেয় সব ঠিকঠাক আছে কিনা। রিশা তাকে জানায় যে সব কিছু ঠিক ঠাক আছে। তাদের প্ল্যান মতোই সব রেডি করা আছে। শুধু তার দেশে আসার অপেক্ষা। কিছুক্ষণ কথা বলে ফোনটা রেখে দেয় রিশা। তার জীবনটা তেজপাতা হয়ে গেছে। একদিকে সে অনির ঝাড়ি খায় অন্যদিকে এক জলজ্যান্ত আপদ তার মাথায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। জীবনে কোন আনন্দ নেই তার।রাগে চোটে কিসব বিড় বিড় করতে ঘুমিয়ে পড়ে রিশা।

অনি ভার্সিটিতে গিয়ে তার বেস্ট ফ্রেন্ডস ইলিয়ানা আর মোনালিসার সাথে শেয়ার করে কিভাবে সে রিশাদকে সারপ্রাইজ দেবে তার জন্মদিনে। ইলিয়ানা আর মোনাও বেশ এক্সাইটেড। অনি তাদেরকেও যাওয়ার জন্য ইনভাইট করে বাট তারা ফ্যামিলির কারণে যেতে পারবে না বলে জানায়।

বেশ উত্তেজনা নিয়ে পরীক্ষা দেয় অনি।তার মনটা পড়ে আছে রিশাদের কাছে।কখন সে দেশে ফিরবে আর রিশাদকে একবার জড়িয়ে ধরবে। অনির ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা হাসি যেন সরার নামই নিচ্ছে না। কেমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার।রিশাদ কিরকম প্রতিক্রিয়া দেবে তাই শুধু ভাবছে সে। রিশাদ তো তাকে দেখলেই খুশিতে জড়িয়ে ধরবে।অনি মনে মনে ভাবে”জন্মদিনে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ উপহারটা আমি তোমাকে দিতে চাই।ফিরছি আমি তোমার আমার নীড়ে।”

পরীক্ষা দিয়ে অনি কোথাও কোন সময় ব্যয় করে না। ইলিয়ানা আর মোনাকে গুড বাই জানিয়ে সে বাসায় চলে যায়। জাহানারা বেগম আগে থেকেই সব রেডি করে রেখেছিলেন শুধু অনির আসার অপেক্ষামাত্র। অনির এত খুশিতে তিনিও আজ বেশ খুশি। রওনা দেন তার এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে।

অন্যদিকে রিশাদ বার বার অনিকে কল দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু অনি ফোন রিসিভ করছে না।রিশাদের বেশ চিন্তা হয়। অনির কিছু হলো মা তো আবার! তাই সে বাধ্য হয়ে জাহানারা বেগমকে কল দেন। জাহানারা বেগম অনির ইশারায় রিশাদকে বলে অনি বাসায় আছে আর তিনি বাইরে এক প্রতিবেশীর বাসায় আছে। রিশাদ আস্বস্ত হয় যে অনি ঠিক আছে। তবে সে বুঝতে পারছে না অনির কি হলো। কখনো তো এমন করে না। তাহলে আজ এরকম করছে কেন?রেগে থাকারও কোন কারণ খুঁজে পায়না রিশাদ।

হতাশ রিশাদ কাজে মন বসানোর চেষ্টা করে বার বার ব্যর্থ হয়। রিশাদের মাথায় এখন শুধু অনন্যময়ী নামক ভাবনা প্রকটভাবে বিরাজমান। সে কিছুতেই অনির এমন বিহেভিয়ার মেনে নিতে পারছে না। অনি ইচ্ছাকৃত ভাবে তাকে এড়িয়ে যাচ্ছে সে খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। খুব কষ্ট হচ্ছে তার অনির বিহেভিয়ার। এই দু মাসে আজই প্রথম বোধ হয় সে অনির মুখটা দেখেনি অনির কণ্ঠস্বর তার কানে ভেসে আসেনি।

অফিসের কেবিনে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে রিশাদ। অনি নামক ভাবনায় বিভোর তার মস্তিষ্ক। ফোনটা বের করে সে তার আর অনির ক্যামেরায় বন্দী করা কিছু ভালোবাসার মূহুর্ত দেখছে। ফোনের স্ক্রিন জুম করে তার প্রেয়সীর হাস্যজ্জ্বল মুখটার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে।অনির হাজার হাজার ছবি দিয়ে ভরা রিশাদের ফোন। যার বেশির ভাগই সে অনির অগোচরে তাকে না বলেই তুলেছে। ক্যামেরায় বন্দী অনির নানান অঙ্গভঙ্গির ছবি গুলো রিশাদের মুখে হাসি ফোটায়।

দরজায় নক করার শব্দ শুনে রিশাদের ঘোর ভাঙে। রিশাদের পি এ সালাম সাহেব দরজা ঠেলে মাথা ঢুকিয়ে দিয়ে বলে;

–স্যার সাইটে একটা ব্লান্ডার হয়ে গেছে। শ্রমিকরা বেশ ঝামেলা করছে। এক্ষুণি একবার আপনাকে যেতে হবে।

রিশাদ চোখ মুখ কুঁচকে কোটটা হাতে নিয়ে বিরক্ত হয়ে বেরিয়ে যায়। সাইটে গিয়ে শ্রমিকদের ঝামেলা মেটাতে মেটাতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে যায় তারপর আবার সে ডিসি অফিসে যায় প্রোজেক্টের কিছু পেপারস সাইন করতে।

প্রায় বিকেল পাঁচটার দিকে অনি বাংলাদেশে পৌঁছায় আশরাফ শেখ আর রায়হান সাহেব অনি জাহানারা বেগমকে রিসিভ করে এয়ারপোর্টে। অনি বাসায় পৌঁছার আগেই রিশার কাছে ফোন করে খবর নেয় রিশাদ বাড়ি ফিরেছে কিনা।

রিশাদ এখনো বাসায় ফেরেনি।তাই অনি সোজা বাসায় চলে যায়। শায়লা বেগম আজ এতদিন পর অনিকে দেখে খুশিতে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই ফেলেন। তিনি অনিকে আর কোথাও যেতে দেবেন না বলেই দেন।

অনি সবার সাথে কুশল বিনিময় করে। রিশার সাথে কথা বলে সব তাদের প্ল্যানিং মতো হচ্ছে কিনা। রিশা তাকে জানায় সব কিছু ঠিক ঠাক আছে। কিন্তু রিশা ভুলেই গেছে রিশাদের কেবিনে ফুলের তোড়াটা রাখার কথা। সে অনিকে আর কথাটা জানায় না। কেননা জানালেই তাকে এখন ঝাড়ি খেতে হবে। তাই সে কিছু একটা বাহানা দিয়ে বাড়ির বাইরে বের হয়। মার্কেট থেকে অর্কিড ফুলের তোড়া বানিয়ে নেয়। কিছুটা সময় লাগে। এরপর সে একটা নীল চিরকুটে অনির বলা কথাগুলো রেখে ফুলের মাঝে রেখে দেয়।

অফিসে গিয়ে সে পিয়নকে বলে ফুলের তোড়াটা রিশাদের কেবিনে রাখতে। পিয়নটা কিছুটা অবাক হয়ে যায়। সে কিছু বলতে যাবে তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রিশা তাকে ফুলটা কেবিনে রাখতে বলে চলে যায়।

পিয়ন টা বাধ্য হয়ে রিশাদের কেবিনে যায়। টেবিলের দিকে একবার তাকিয়ে সে ফুলের তোড়াটা রিশাদের রুমের কর্নার ডেস্কে রাখে। এরপর সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

অন্যদিকে অনি মিথিলার কাছ থেকে শাড়ি পরিয়ে নেয়। মিথিলা খুব সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দেয়। এরপর অনি গাড়িতে করে রওনা দেয় তার গন্ত্যবে যেখানে সে আগে থেকেই একটা রেস্টুরেন্ট বুক করে রেখেছিল। রিশাই এই সব কিছু করেছে তার পক্ষ থেকে।

অনি গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে যায়। ভেতরে রিসিপশনে গিয়ে তার নাম বলতেই একজন ম্যানেজার এগিয়ে আসে। হাসি মুখে অনিকে ওয়েলকাম জানায়।

অনিকে নিয়ে ম্যানেজার রুফটপে চলে যায়। অনির নির্দেশনা মোতাবেক এখানেই সব এরেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে। অনি চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। হ্যা সব কিছু তার পছন্দ মতোই করা হয়েছে। সে যা এক্সপেক্ট করেছিল তার থেকে অনেক ভালোই হয়েছে। হোটেল ম্যানেজারকে থ্যাংকইউ জানিয়ে অনি চারপাশটায় চোখ বুলায়। হ্যা সব কিছু একদম তার মনের মতো হয়েছে। এখন শুধু রিশাদের আসার অপেক্ষায় আছে অনি। রিশাদের কথা ভাবতেই অনির ঠোঁটের কোণায় মুচকি হাসি ঢেউ খেলে যায়।

শ্রমিকদের সব ঝামেলা মিটিয়ে রিশাদ ডিসি অফিসে গিয়ে সব কাগজগুলো সাইন করিয়ে নিতে নিতে প্রায় রাত দশটা বেজে যায়। এরপর সে অফিসে গিয়ে তার পিএর সহায়তায় কন্ট্রোল রুমে গিয়ে নিজ দায়িত্বে কাগজ গুলো প্রিন্ট করিয়ে নিয়ে সে হেড অফিসে মেইল করে দেয়। আজকের মতো সব কাজ তার শেষ। আজকের দিনটা তার বেশ দৌঁড়ের উপর ছিল। খুব ক্লান্ত লাগছে। নিজের কেবিনে গিয়ে ক্লান্ত শরীরটা চেয়ারে এলিয়ে দেয়।

সামনে তাকাতেই তার চোখে পড়ে একটি ফুলের তোড়া। রিশাদ বেশ কৌতূহলী হয়ে ফুলের তোড়াটা নেড়েচেড়ে দেখে। সে বেল বাজিয়ে পিয়নকে ডাকলে একজন মধ্যবয়স্ক ব্যক্তি হাজির হন।

তাকে ফুলের তোড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কিছু বলতে পারেন না। সবেমাত্র তার শিফট শুরু হয়েছে। আগের পিয়ন হয়তো জানতে এ বিষয়ে। রিশাদ তাকে যেতে বলে। কৌতূহলী রিশাদ ফুলের তোড়াটা ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতেই একটা চিরকুট বেরিয়ে আসে। চিরকুটটা খুলে সে একটা ছোট্ট মেসেজ পায়।

“An amazing surprise is wating for you.So please come.Don’t be so late.someone who loves you is waiting for you”

রিশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কিছুই বুঝতে পারছে না সে। চিরকুটের নিচে দিকে একটা এড্রেস দেয়া আছে। রিশাদ দ্বিধায় পড়ে গেছে। সে যা ভাবছে তা যদি হয় তাহলে!!!!না তা কি করে সম্ভব?রিশাদ কিছু ভাবতে পারছে না। কেমন যেন সব গুলিয়ে যাচ্ছে তার। কে এই চিরকুট পাঠাতে পারে। তার মনের সুপ্ত ভাবনাটা সত্যি হবে ভেবেই সে ফুলের তোড়াটা রেখে চিরকুট টা নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে যায়। গাড়ি চালিয়ে সে প্রদত্ত ঠিকানার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। আর তার অবচেতন মন প্রার্থনা করছে যেন তার ভাবনাটা সত্যি হয়। পরক্ষণেই সে ভাবে যে তার ভাবনাটা হয়তো অসম্ভব। তবুও ক্ষীণ আশার আলো বিরাজমান। এভাবেই সে হাজার দ্বিধাদ্বন্দ্ব নিয়ে পৌঁছে যায় চিরকুটের ঠিকানায়। কেমন এক উত্তেজনা কাজ করছে তার মাঝে। মস্তিষ্ক একেবারে শুন্য শুন্য লাগছে। এক পা দু পা করে সে এগিয়ে যায় হোটেলের দিকে। হোটেলের ভেতরে ঢুকতেই একজন ইউনিফর্ম পরিহিত ব্যক্তি তাকে সাদরে ওয়েলকাম জানায়।

চলবে…………..

আসসালামু আলাইকুম?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here