অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_৪৪
সবে মাত্র ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। রাতের আঁধার ভাব এখনো কাটেনি। মলিন আকাশে নীলভে আভার আভাস দেখা দিয়েছে। গাছের পল্লবগুলোর প্রান্তবিন্দুতে ঝুলতে থাকা বিন্দু বিন্দু শিশির কণা খানিক পর পর নিচে সবুজ গাসের ডগায় এসে বারি খাচ্ছে। কুয়াশার চাদর মোড়া থেকে প্রকৃতি একটু একটু করে মাথা করে উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখছে তাদের কাঙ্ক্ষিত সূর্যের আলোর ঝলকানি পাওয়ার জন্য। পাখিদের আনাগোনা এখনো শুরু হয়নি। বোধ হয় তারা আড়মোড়া ভেঙে সকালের প্রস্তুতি নিচ্ছে। একবার আলসেমি কাটিয়ে উঠতে পারলেই শুরু হয়ে যাবে তাদের নিত্য দিনের কাজ। সোডিয়াম আলো গুলো এখনো জ্বলছে। আলোর চারপাশে কুয়াশার জন্য কেমন সোনালি রঙা হলুদ ধোঁয়াটে ভাব। নির্জন রাস্তায় মানুষজনের লেশ মাত্র দৃশ্যমান নয়। কয়েকটা কুকুরকে দেখা যাচ্ছে। ছড়িয়ে ছিটিয়ে তারাও ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে।প্রতিটি প্রভাতই যেন একেবারে আনকোরা।আযানের প্রথম ধ্বনি শুনেই বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে অনি। আজ একবারেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। কোন রকম আলসেমি কাজ করছে না। কেমন একটা ঝর ঝরে ভাব। রিশাদ গভীর ঘুমে মগ্ন। অজু করে এসে জায়নামাজ বিছিয়ে নেয়। নামাজ শেষ হতেই রিশাদ ঘুম থেকে উঠে পড়ে। সেও ফ্রেশ হয়ে অজু করে মসজিদে নামাজ পড়তে যায়।
অনি জায়নামাজটা জায়গামতো গুছিয়ে রেখে এসে বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে গভীর মনোযোগ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সে দেখছে সব কিছু। যদিও দেখার মতো আকর্ষণীয় বা গুরুত্বপূর্ণ তেমন কিছুই নেই। তবুও তার চাহনি দেখে মনে হচ্ছে যেন ভার্সিটির কোন গুরুত্বপূর্ণ লেকচারে সে স্যার এর দিকে গভীর মনোযোগ দিয়ে তাকিয়ে দেখছে।নজর সরছেই না যেন অনির। ভোরের আকাশটা তার অসম্ভবত প্রিয় একটি বস্তু। অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে সে আকাশের দিকে। কত অল্প সময়ের মধ্যে আধারটা উধাও হয়ে যায়। কালো অন্ধকার থেকে ধূসর বর্ণ ধারণ করে। অতঃপর মূহুর্তের মধ্যেই যেন একেবারে উজ্জ্বল হয়ে যায়। পরিষ্কার নীল আকাশ।
পরিবেশটা খুব ভালো লাগছে অনির। এই সময় এক কাপ কফি হলে মন্দ হতো না। প্রকৃতি বিলাস করতে করতে ধোয়া ওঠানো কফির মগে চুমুক দেয়ার অনুভূতি যে কতটা মোহনীয় তা ভাবাই যায় না। তবে তার এই মূহুর্তে এখান থেকে নড়তে মন চাচ্ছে না। হালকা শীতল বায়ু অনির চোখে মুখে বারি খাচ্ছে আর শরীরে মাঝে মাঝে শিহরণ জাগিয়ে দিচ্ছে। এলোমেলো খোলা চুলগুলোও হাওয়ায় ঢেউ খেলিয়ে চোখের গালে পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। তা সরানোর কোন প্রয়াস করে না। বেশ ভালোই লাগছে তার।ওড়নাটা দিয়ে মাথার অর্ধেক পর্যন্ত ঢাকা দেয়া। পুরোপুরিই ঢাকা ছিল তবে আস্তে আস্তে তা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। এই মূহুর্তে ওড়নাটা ঠিক করা তার গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে। আশেপাশে সবটা নির্জন;দূর দূর পর্যন্ত কাউকে দেখা যাচ্ছে না। আর দেখা গেলেও অনির দিকে নজর পড়ার সম্ভাবনা নেই। পাখির গুঞ্জন কানে ভেসে আসছে। প্রকৃতির ছোটখাটো বিষয়গুলো কেও আজ অনির বেশ আকর্ষণীয় লাগছে। কেমন একটা সুখী সুখী ভাব চলে এসেছে। নিজের অজান্তেই বার বার ঠোঁটের কোণে স্মিত হাসির রেখা ফুটে উঠতে দেখা যাচ্ছে। খুশির ঝিলিক যেন ঠিকরে পড়ছে।
বেলকনির দরজায় কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে অনি মাথার কাপড়টা তুলে দেয়। পেছনে ফিরে রিশাদের হাস্যজ্জ্বল মুখখানি দেখে অনিও ফিক করে হেসে দেয়। প্রতি উত্তরে রিশাদ এক ভুবন ভোলানো হাসি উপহার দেয়।
টুপিটা খুলে পাঞ্জাবির পকেটে রাখে। চুলগুলো হাতের আঙুলের ফাঁক দিয়ে ঠিক করতে করতে অনির দিকে এগিয়ে যায়। অনি মুগ্ধনয়নে রিশাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। প্রত্যেক মেয়েরই বোধ হয় কোন স্বপ্নের পুরুষ থাকাটা স্বাভাবিক। চরম অস্বাভাবিকতা গুলোর মাঝে বড় হতে হতে অনির জীবনে কখনো এমন কোন চিন্তার আগমন ঘটেনি সেখানে স্বপ্নের পুরুষের আগমন ঘটাটা একেবারেই বেমানান। কখনো এভাবে কেউ তার মনের দখল নিয়ে নেবে তা তার ভাবনাতীত ছিল। কয়েকটা দিনের ব্যবধানে তার জীবনের মোড় বদলে গেছে। শুরটা অপ্রত্যাশিত ভাবে হলেও বর্তমান তার কাছে বেশ সুখকর মনে হচ্ছে। তারও মনে মানুষ আছে। একটা পরিবার পেয়েছে সে,একটা ঘর পেয়েছে সাথে ঘরভর্তি আপন মানুষজন।
অনিকে গভীরভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিশাদ অনির সামনে গিয়ে অনির মুখে ফুঁ দেয়।অনির চোখের সামনে আসা চুলগুলো ঢেউ খেলে পুনরায় তার চোখের উপর পড়ে থাকে। অনির ঘোর কাটে। রিশাদের দিকে তাকিয়ে চোখ কুঞ্চিত করে। ভ্রুযুগল কুঁচকে গিয়েছে। রিশাদ অনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে;
–“এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন মিস?সকাল সকাল কি প্রেমে পড়ে গেলেন নাকি?”(রিশাদ)
অনি ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে রিশাদের দিকে। মাঝে মাঝে রিশাদের অদ্ভুত সব কথা বার্তা শুনে তার মস্তিষ্ক দ্বিধায় পড়ে যায় কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে। এই মূহুর্তেও তার ঠিক তাই ই মনে হচ্ছে। রিশাদের এমন অদ্ভুত আচরণের সাথে সে কিছুটা অভ্যস্ত আছে বটে। তবে প্রতিবারই সে যেমন চুপ থাকে এবারেও চুপই থাকে। তবে একটু পার্থক্য আছে এবারে। প্রত্যেকবার সে রিশাদকে কিছুটা এড়িয়ে চলে যেত। তবে এবারে সে আর তা করে না। বরং রিশাদের দিকে কেমন অদ্ভুত চাহনি নিয়ে তাকিয়ে থাকে। আর মনে মনে প্রেম শব্দটা বার বার আওড়াতে থাকে। প্রেম শব্দটার সাথে পরিচিত সে তবে এর প্রয়োগ তার বাস্তব জীবনে নেই। তাই রিশাদের কথাটা তার মস্তিষ্কে খুব গভীরভাবে গেঁথে যায়।
রিশাদ অনির চাহনির মানেটা ঠিক ঠাওর করতে পারছে না। তার রহস্যময়ী অনন্যময়ীর চোখের ভাষা তার কাছে ধরা পড়েও যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়।রিশাদের মনে হচ্ছে অনন্যময়ী যদি কোন বই হতো তাহলে সে প্রতিটি লাইন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে মুখস্থ করে ফেলতো। আড়ালে থাকা অনন্যময়ীর বিচরণ তার মস্তিষ্ক জুড়ে, মনের গভীর অবধি অনন্যময়ীর ছাপ পৌঁছে গেছে।
রিশাদ কিছু একটা ভেবে অনির পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে নীরব শহরের দিকে একবার নজর বুলায় সে। কিছুক্ষণ নীরব থাকার পর অনির দিকে তাকায়। অনি ঠিক একই ভাবে তার দিকে তাকিয়ে আছে। রিশাদ এবার অনির মনের কথাটা কিছুটা আন্দাজ করতে পারে।
অনির দিকে ঘুরে দাঁড়ায়। কিছুটা লজ্জা পেয়ে অনি তার নজর সরিয়ে নিয়ে মাথা নত করে।
–“কি হয়েছে ম্যাম আপনার?সকাল সকাল এত লজ্জা পাচ্ছেন যে?”(রিশাদ)
–“কই না তো।”কিছুটা আমতা আমতা করে বলে অনি।
–“ওহ তাই বুঝি।”বলেই রিশাদ একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে অনির নাক টিপে দেয়। অনি লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিয়ে রিশাদের নজর কাড়ে।এই হাসিতেই যেন তার পরম সুখ। রিশাদের সামনে সুখের হাতছানি দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তার প্রিয় মানুষটি। এই সুখ প্রাপ্তির জন্য সে সৃষ্টিকর্তার কাছে অসংখ্য শুকরিয়া জানিয়েছে।
।
।
।
বেশ তাড়াহুড়ো করছে রিশাদ।কয়েক মগ পানি মাথায় ঢেলে নামমাত্র গোসল শেষ করে নেয়। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরে গোসল করতে করতে বেশ খানিকটা দেরি হয়ে যায়। তাই অনির কড়া নির্দেশে গোসলটা সেরেই ফেলে। যার দরুণ এখন তাকে তাড়াহুড়ো করতে হচ্ছে। শ্বাস নেয়ার সময় টুকুও পাচ্ছে না যেন সে। তাড়াহুড়ো করে শার্ট এর বোতাম লাগাতে যেয়ে উল্টোপাল্টা করে লাগিয়ে ফেলেছে সে। বেশ বিরক্ত লাগছে তার এই মূহুর্তে। অনি তো যেন শুধু নীরব দর্শক হয়ে দেখছে। মাঝে মাঝে রিশাদের জিনিসগুলো এগিয়ে দিচ্ছে। তবে রিশাদের শার্ট এর অবস্থা দেখে অনি আর হাসি চেপে রাখতে পারেনা। তাই সে ফিক করে হেসে দেয়।
রিশাদ ভ্রুযুগল কুঁচকে অনির দিকে তাকায়।অনির হাসির কারণটা স্পষ্ট হলেও তার মস্তিষ্কে তা পৌঁছায় নি। তাই সে নির্বোধ এর মতো প্রশ্ন করে;
–আপনি হাসছেন কেন?(রিশাদ)
অনি কথা বলতে যেয়েও যেন আর হাসি চেপে রাখতে পারছে না।তাই সে ইশারা করে শার্ট এর বোতাম দেখায়। রিশাদ শুধু ভেটকানি দিয়ে বোতামগুলো ঠিক করতে নেয়। তাড়াহুড়ো করায় তাকে দেখে মনে হচ্ছে যেন ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ লেগে গেছে।
অনি এবার শব্দ করে হেসে রিশাদের দিকে এগিয়ে আসে। রিশাদের হাত সরিয়ে দিয়ে তার শার্ট এর বোতামগুলো একটা একটা করে ঠিক করে লাগিয়ে দেয়।
লাগানো শেষ হলে অনি তাকে আয়নার দিকে ঘুরিয়ে বলে;
–“এবার দেখুন ঠিক আছে। কি যে করেন না আপনি। বোতামগুলো ও ঠিক মতো লাগাতে পারেন না।”(অনি)
অনির কথার উত্তরে রিশাদ মুচকি হাসে। যাক এতো বিড়ম্বনার মধ্যে অন্তত একটা তো ভালো ঘটনা ঘটলো। রিশাদ পুনরায় আনমনে হেসে টাই বাঁধতে নেয়।
–“টাইটা ভালো করে বাঁধবেন মশাই আমি কিন্তু বাপু টাই বাঁধতে পারিনা।”(অনি)
–“পারেন না তো কি হয়েছে মহারানী আপনার সেবায় নিয়োজিত এই সেবক শিখিয়ে দেবে আপনাকে যাতে করে মাঝে মাঝে তাকে একটু টাই বেধে দিয়ে উদ্ধার করতে পারেন।”(রিশাদ)
রিশাদের কথায় অনি হেসে দেয়। রিশাদ সেই হাসিটা উপভোগ করতে থাকে। দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে নেয় রিশাদ। সবগুলো কাগজ গুছিয়ে নিয়েছে কিনা একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। এরপর সে ফোন ওয়ালেট তুলে নেয়। হাতের ঘড়িটা পড়তে পড়তে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রিশাদ রুম থেকে বেরিয়ে গেলে অনি জিনিস পত্রগুলো গুছিয়ে রাখতে নেয়। বিছানা সহ পুরো রুমটা গুছিয়ে নেয় সে। ততক্ষণে রিশাদ নিচে গিয়ে ব্রেকফাস্ট সেরে নেয়। অনি হাতটা পরিষ্কার করতে ওয়াশরুমে যায়। ঢুকতে না ঢুকতেই তার কানে রিশাদের কণ্ঠ ভেসে আসে। রিশাদ তার নাম ধরে বার বার ডাকছে। অনি কোন মতে হাতটা ধুয়ে বেরিয়ে আসে।
রিশাদ রুমে ঢুকে ঝড়ে বেগে অনির কপালে একটা চুমু দিয়ে আবার ঝড়ের বেগে বেরিয়ে যায়।ঘটনাটা এত তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে অনির বুঝেই উঠতে পারছিল না কি ঘটে গেল তার সাথে।
যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। ভালোবাসার পরশ টুকু বেশ অল্পসময়ের জন্য হলেও তার রেশ এখনো কাটেনি। চোখ বড় বড় করে সে তাকায়। এটার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। তবে অনুভূতিটা একেবারে আনকোরা এক বিশেষ অনুভূতি বলে মনে হচ্ছে তার কাছে। এই অনুভূতিটাকে সে প্রেম বলে আখ্যায়িত করতে চায়। লজ্জায় তার গাল দুটো লালচে হয়ে যায়।
রিশাদ গাড়িতে বসে ড্রাইভ করতে করতে অনির কথা ভাবতে থাকে। সে মনে মনে ভাবছে নিশ্চয় তার অনন্যময়ী এখন লজ্জায় লাল,নীল,হলুদ হয়ে গেছে। অনন্যময়ীর এমন চাহনি রিশাদের বরাবরই পছন্দের। মিস করে ফেললো বলে মনে মনে আফসোস করতে থাকলেও ঠোঁটের কোণায় লেগে থাকা হাসি যেন আজ শপথ করেছে সে সেখান থেকে নড়বেই না।
হাজার রকমের কল্পনা জল্পনা ঘুরপাক খায় রিশাদের মাথায় যার মূলবিন্দু হলো তার মনের রাজ্যের রানী অনন্যময়ী। তার মনে শুধু আজ অনন্যময়ীরই আধিপত্য তারই একচ্ছত্র অধিকার। তিল পরিমাণ জায়গা অন্য কারো জন্য বরাদ্দ নেই সেখানে। আজ নিজেকে বড্ড বেশি সুখী মনে হচ্ছে। জীবনের প্রতিটি দিনের শুরু তো এভাবেই সে কল্পনা করতো।তার কল্পনাগুলো বাস্তবে রূপান্তরিত হতে শুরু করেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অফিসে পৌঁছে যায় রিশাদ।
সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের কেবিনে চলে যায়। ফাইল গুলো সব ডেস্কের উপর রাখে লাস্ট চেকিং এর জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রোজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টিম গঠনের জন্য ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং এটেন্ড করতে হবে।
সারাদিন হয়তো সে অনেক ব্যস্ত থাকবে। তাই এখনি স একবার ভাবে অনিকে কল দিয়ে জানিয়ে দিতে। মেয়েটা তো বড্ড চাপা স্বভাবের। অভিমানের পাহাড় জমিয়ে বসে থাকবে তবুও একটা কথা মুখ দিয়ে বেরোবে না। শুধু শুধু ক্রোধের অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে আমাকে একেবারে ভষ্ম করে দেবে। রিশাদ ফোন বের করে অনির নাম্বারে ডায়াল করে।
অনি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে। এক চুল পরিমাণ ও নড়েনি। ফোনের রিং টোনের শব্দ শুনে তার ঘোর কাটে। ধীর পায়ে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়। রিশাদে নাম্বারটা দেখে পুনরায় যেন লজ্জা পেয়ে যায়। ধরতে ধরতেই প্রথমবারের কল কেটে যায়।
রিশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ফোন রিসিভ না করায় তার মাথায় বিশেষ কোন চিন্তার আগমন ঘটে না। তাই সে পুনরায় ডায়াল করে। এবারে আর তাকে অপেক্ষা করতে হয়নি। প্রথমবার রিং হতেই অনি কলটা রিসিভ করে।
কল রিসিভ করেই অনি সুন্দর করে সালাম দেয়। রিশাদ সালামের জবাব দিয়ে অনির সাথে টুকটাক কথা বলে। অনির কথা শুনে রিশাদ ফোনের এপাশ থেকেও বুঝতে পারছে অনি কেমন লজ্জা পাচ্ছে। কিছুক্ষণ কথা বলে অনি ফোনটা রেখে দেয়।
অনি রুমে বসেই টুকটাক কাজ করছিল। শায়লা বেগমের ডাক পড়ায় সে হাতের কাজটা রেখেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। শায়লা বেগম অনিকে প্রথমে কিছুটা বকা দেন এখনো ব্রেকফাস্ট না করার জন্য। অনি শায়লা বেগমকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে নেয়।
দুপুরবেলা অনি অলসভাবে রুমে বসে ফোন ঘাটছিল। একটা টেক্সট আসায় অনির নজর সেদিকে যায়। রিশাদের টেক্সট।
“প্রিয় মহারানী,
দুপুরবেলা যথাসময়ে লাঞ্চ করে আমায় উদ্ধার করবেন।
ইতি
আপনার সেবায় নিয়োজিত এক সেবক।”
রিশাদের এই ছোট্ট টেক্সট দেখে অনির মনটা ভালো হয়ে যায়। বার বার সে মেসেজটা পড়তে থাকে। রিশাদের ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে সে নিত্য নতুন অনুভূতির আবিষ্কার করছে। নতুন নতুন সংজ্ঞা উপলব্ধি করতে পারছে সুখানুভূতির।আনমনেই মুচকি হাসে সে।
অনি রিশাদের মেসেজের উত্তরে লেখে;
“মহারানীর কড়া নির্দেশ সেবক যেন কাজের ব্যস্ততার বাহানা দিয়ে খাবার খেতে না ভুলে যায়। নয়তো তাকে কিন্তু শাস্তি পেতে হবে।”
মেসেজ লিখে অনি উত্তরের অপেক্ষায় বসে থাকে। অনেকক্ষণ পেরিয়ে যায় কোন উত্তর আসেনা। অনি বার বার ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকায়।কিন্তু কোন উত্তর আসে না। তাই অনির কিছুটা মন খারাপ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর সে ফোনটা রেখে গোসল করতে চলে যায়।
চলবে…..
আসসালামু আলাইকুম?
দেরিতে দেয়ার জন্য দুঃখিত?