অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_৩০

0
5936

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_৩০

বিশ মিনিট যাবত ড্রইংরুমের সোফায় অনির জন্য অপেক্ষা করছে রিশাদ। দু একবার অনির নাম ধরে ডেকেও কোন সাড়াশব্দ পায় নি। বাধ্য হয়ে আবার রুমের দিকে যায় রিশাদ।

অনি অনেকক্ষণ যাবত চুলগুলো বাঁধার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই পেরে উঠছে না। বার বার হিজাবের নিচ দিয়ে চুলগুলো বেরিয়ে আসছে। ব্যর্থ হয়ে বসে পড়ে বিছানায়।

রিশাদ রুমে গিয়ে অনিকে বিধ্বস্ত অবস্থায় বসে থাকতে দেখে। অনির কাছে গিয়ে বলে; কি হয়েছে?এখনো হয়নি আপনার?

অনি হতাশ কণ্ঠে বলে; কিছুতেই চুলটা বাঁধতে পারছিনা বার বার হিজাবের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে।

–আম্মুকে ডাকবো?(রিশাদ)

–মামনি সাবিনা আন্টিকে নিয়ে সামনের বাসায় গেছেন একটা দরকারে। রিশাও নেই। কোচিং ক্লাসে গেছে। (অনি)

–চুল বাঁধতে পারেননা তো এতো বড় চুল কে রাখতে বলেছে বলুন তো দেখি।(রিশাদ)

অনি রিশাদের দিকে অসহায়ভাবে তাকিয়ে থাকে। তার দিদাই সব সময় তাকে চুলগুলো সুন্দর করে হিজাবের নিচে সেট করে দিতো। মূলত জাহানারা বেগমই অনিকে এত বড় চুল রাখতে অনুপ্রাণিত করে। তার নিজেরও খুব পছন্দের জিনিস হলো চুল।

–আচ্ছা ঠিক আছে।আপনি আরেকবার বাঁধার চেষ্টা করুন আমি আপনাকে হেল্প করছি। (রিশাদ)

অনি রিশাদের কথা শুনে কিছুটা ভরসা পায়। সে পুনরায় চুল গুলো বাঁধা শুরু করে। রিশাদ পেছন থেকে চুলগুলো আটকে রেখে ক্লিপ লাগিয়ে দেয়। অনি শক্ত করে রাবার দিয়ে বেঁধে ফেলে। খুব ভালোভাবে চুল গুলো আটকে যায়। অনি যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে।

রিশাদ আয়নার ভেতর দিয়ে আড়চোখে অনির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

–আপনি তাহলে নিচে আসুন আমি গাড়ি বের করছি। বলেই রিশাদ রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

অনি ভালোভাবে হিজাবটা পিন আপ করে নেয়। চোখে কাজল দিয়ে হাতে একটা আংটি পরে নেয়। মোবাইলটা পার্সে ঢুকিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যায় অনি।

বাড়ির ভেতর থেকে বেরিয়ে দুহাত দিয়ে গাউনটা একটু উপরের দিকে তুলে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়। রিশাদ গাড়ির মিররে চুল ঠিক করছিল। অন্যমনস্কভাবে অনির দিকে চোখ পড়তেই তার চোখ আটকে যায়। মনে হচ্ছিল কোন পরী যেন তার দিকে এগিয়ে আসছে। বিড় বিড় করে বলে; মেয়েটা মারাত্মক সুন্দরী।এমন অসঙ্গতিপূর্ণ মনোভাব হওয়ায় রিশাদ নিজেকে সংযত করে নেয়।

অনি গাড়ির দরজার সামনে আসতেই রিশাদ ভেতর থেকে লক খুলে দিলে অনি উঠে বসে পড়ে।রিশাদ আড়চোখে বার বার অনির দিকে তাকাচ্ছে। অনির বাম গালের লালচে তিলটায় বার বার রিশাদের চোখ আটকে যাচ্ছে।কোন সাজ নেই তার মুখে তবুও যেন চোখ ফেরা দায় হয়ে যাচ্ছে। নিজের এমন কাজে রিশাদ বেশ বিরক্ত হচ্ছে মনে মনে সাথে লজ্জাও পাচ্ছে বটে।

অনি গাড়িতে বসে শায়লা বেগমকে কল করে জানিয়ে দেয় তার বেরিয়ে যাচ্ছে। আগে থেকেই সে শায়লা বেগমকে বলে রেখেছিল আজকের কথা। শায়লা বেগমও কোন দ্বিমত পোষণ করেননি। রিশাদের অসুস্থতায় কোথাও ঘুরতে যাওয়াও হয়নি সাথে বউভাতের অনুষ্ঠানটাও ক্যানসেল করে দিতে হয়েছিল।

একটা শপিং মলের সামনে এসে গাড়ি দাঁড় করায় রিশাদ। অনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বলে ;কি ব্যাপার এখানে দাঁড়ালেন কেন?

–বার্থডে পার্টিতে যাবেন আর খালি হাতে যাবেন?? গিফট নিতে হবে না??(রিশাদ)

অনি মিন মিন করে বলে; হ্যা তাইতো। আমি তো ভুলেই গেছিলাম।

শপিং মল থেকে গুনগুনের জন্য গিফট কিনে নিয়ে টুকটাক কথা বলতে বলতে রিশাদ অনি চৌধুরী বাড়ির সামনে পৌঁছে যায়। বাড়ির সামনে বেশ লোকজনের আনাগোনা। অনি গাড়ি থেকে নেমে পুরো বাড়িটার দিকে চোখ বুলায়। তাদের আভিজাত্য সম্পর্কে ধারণা পায় অনি।

রিশাদ গাড়ি পার্ক করে আসলে অনি রিশাদ পাশাপাশি হেঁটে বাড়ির ভেতর চলে যায়। চারপাশে সবাই অচেনা অনি রিশাদের। চেনা পরিচিত মুখ খুঁজছে অনি।

পিছন থেকে একজন নারীর কন্ঠে অনি নিজের নাম উচ্চারিত হতে শুনে পিছনে ফিরে তাকায়।

–অনন্যময়ী (নিরা)

অনি পিছনে ফিরে নিরাকে দেখে বলে; আসসালামু আলাইকুম আপু। কেমন আছেন?(অনি)

–আলহামদুলিল্লাহ। তুমি কেমন আছো? (অনি)

–এইতো আছি।একা এসেছো?? কাউকে দেখছি না যে। (নিরা)

অনি পাশে তাকিয়ে দেখে রিশাদ তার পাশে নেই। কিছুটা দূরে সে ফোনে কথা বলছে।

–একচুয়ালি না একা আসিনি। অনি নিরাকে হাত দিয়ে ইশারা করে রিশাদকে দেখিয়ে বলে সে রিশাদের সাথেই এসেছে।

নিরা কৌতূহলবশত অনিকে জিজ্ঞাসা করতে নেয় রিশাদ তার কে হয়। তার পূর্বেই গুনগুন পেছন থেকে ডেকে ওঠে ;পরী আন্টি!

অনি হাসিমুখে গুনগুনকে কোলে তুলে নেয়। তার চেহারা কিছুটা মলিন হয়ে আছে ঠিকি তবে খুশিটা যেন উপচে পড়ছে। অনি গুনগুনের কপালে চুমু দিয়ে তার সাথে টুকটাক কথা বলে। গুনগুন অনিকে দেখে তো মহাখুশি।

একে একে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় অনিকে। অনি সবাইকে সালাম জানিয়ে কুশল বিনিময় করে। রিশাদও অনির পাশে এসে দাঁড়ায়। সেও সবার সাথে পরিচিত হয়। প্রথমদিকে রিশাদের কিছুটা অস্বস্তি হলেও এখন তার একটু ভালো লাগছে তবে পুরোপুরিভাবে তার অস্বস্তি কাটেনি। গুনগুনের সাথে পরিচিত হয়েও তার বেশ ভালো লাগে।

রিশাদ অনির সম্পর্ক নিয়ে কারো কোন ধারণা নেই। নিরা ভেবেছিল সে হয়তো অনির কাজিন হতে পারে। সে সবাইকে তাই বলেছিল। তবে অনি রিশাদের সামনে না বলায় তারা এ সম্পর্কে কিছুই জানে না।

নিরা অনির সাথে টুকটাক গল্প করছিল। অনি এবাড়িতে আসার পর থেকে অনেককেই দেখেছে তবে এখনো গুনগুনের বাবার সাথে তার দেখা হয়নি। গুনগুনের বাবার সম্পর্কে কৌতূহল জাগে অনির। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে অনি বলে; আপু সবাইকে দেখছি কিন্তু গুনগুনের পাপাকে তো দেখতে পাচ্ছি না??

গুনগুনের পাপার কথা শুনে নিরার মনটা খারাপ হয়ে যায়। বিষাদ মলিনতায় ছেঁয়ে যায় তার মুখটা। কিছুটা শান্ত কণ্ঠে নিরা বলতে শুরু করে;

–“গুনগুনের পাপা নেই।”

–ওহ আচ্ছা কোথাও গেছেন মনে হয়!( অনি)

–হ্যা,এই গুনগুনকে ছেড়ে আমাকে ছেড়ে সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে গুনগুনের পাপা। গুনগুনের জন্মের আগেই তার পাপা মারা যায়। সিলেট গিয়েছিলেন একটা মিটিং এটেন্ড করতে। ফেরার পথে এক্সিডেন্ট করে। গাড়িটা নদীতে পড়ে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও ওনাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। গাড়িটা উদ্ধার করা হয়েছিল সেখানে শুধু ড্রাইভারের ডেডবডি মেলে। গুনগুনের পাপাকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। গুনগুনের পাপা মারা যাওয়ার সময় আমরা কেউই গুনগুনের অস্বস্তিতের টের পাইনি। গুনগুন আমাদের জীবনে আশার আলো নিয়ে এসেছে। বলেই নিরা দুফোঁটা বিষাদ অশ্রু মুছে নিয়ে মুচকি হাসে।

অনির চোখ ভরে আসে। গুনগুনের জন্য তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। নিরা পরিস্থিতি হালকা করতে প্রসঙ্গ পাল্টায়। অনির সাথে টুকটাক গল্প করে বসে বসে। সাথে নিধি রেহানা বেগমও এসে যোগ দেন।

হিমাদ্রী তদারকির কাজে ব্যস্ত। সবাইকে ইন্সট্রাকশন দিয়ে কাজ করিয়ে নিচ্ছে।একটুও যেন এদিক ওদিক না হয়।

হিমাদ্রী ফোনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছিল মাঝপথে গুনগুন তাকে আটকে দেয়। হিমাদ্রী গুনগুনকে মুচকি হেসে বলে; একটু ওয়েট করো প্রিন্সেস।আমি পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আসছি। বলেই হিমাদ্রী চলে যেতে নিলে গুনগুন তার পাঞ্জাবি টেনে ধরে।

–না চাচ্চু, তুমি এক্ষুণি চলো। পরী আন্টির সাথে তোমাকে দেখা করাবো।(গুনগুন)

হিমাদ্রী কোনভাবেই গুনগুনকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে বাইরের দিকে যায়। বাইরে দাঁড়িয়ে ছিল এ্যানি হাতে তার বিশাল কেকের কারটুন। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে মুখে মাস্ক পরিহিত এক ব্যক্তি।

–হ্যালো এ্যানি! হাই আর ইউ?( হিমাদ্রী )

–ফাইন। পার্টি কি শুরু হয়ে গেছে?(এ্যানি)

–না না এইতো শুরু হবে এখন। (হিমাদ্রী)

–ওহ ওকে। এই নিন আপনার স্পেশাল কেক। হোপ ইউ উইল লাইক ইট। (এ্যানি)

–থ্যাংকস।প্লিজ কাম ইন। হিমাদ্রী এ্যানির পাশে থাকা ব্যক্তির দিকে চোখ পড়ে হিমাদ্রীর।

–ইনি কে?(হিমাদ্রী)

–হি ইজ মাই পার্টনার এরিক। (এ্যানি)

এ্যানি হিমাদ্রীর সাথে এরিকের আলাপ করে দেয়। হিমাদ্রী এরিকের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে। এরিককে তার খুব চেনা মনে হচ্ছে। মাস্ক পরে থাকায় সে ভালোভাবে তার চেহারাটা বুঝতে পারছে না।

–আপনি এরিক! আচ্ছা আপনি কি কিছু দিন আগে ব্লাড ডোনেট করেছিলেন? আইমিন এই দুই তিন আগে। (হিমাদ্রী)

–হ্যা।কেন বলুন তো?(এরিক)

–আপনি কি বাই এনি চান্স গুনগুন নামের কোন বাচ্চাকে ব্লাড ডোনেট করেছিলেন নাকি?(রিশাদ)

–হ্যা। আপনি কিভাবে জানলেন?? (এরিক)

–আসলে আপনিই গুনগুনকে ব্লাড দিয়েছিলেন। নার্স আমাকে আপনার নামটা বলেছিল কিন্তু আপনাকে পরে আর খুঁজে পাইনি। (হিমাদ্রী)

–একচুয়ালি আমার একটা কল এসেছিল তাই আরকি চলে যেতে হয়েছিল।বাই দ্যা ওয়ে গুনগুন কেমন আছে এখন?(এরিক)

–আলহামদুলিল্লাহ এখন ভালো আছে। আপনার জন্যই আমরা গুনগুনকে বাঁচাতে পেরেছি। প্লিজ আসুন না গুনগুনের সাথে দেখা করে যাবেন। প্লিজ আমি আপনার কোন কথা শুনবো না।

এনি প্রথম দিকে কিছুই বুঝতে পারছিল না। আস্তে আস্তে তাদের কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে যায়। হিমাদ্রীর জোরাজুরিতে এনি আর এরিক পার্টি এটেন্ড করতে রাজি হয়।

তারা তিনজন একসাথে ভেতরে ঢোকে। গুনগুনের সাথে আলাপ করিয়ে দেয় এনি আর এরিককে। গুনগুনের সাথে দেখা করে বেশ ভালো লাগে তাদের। বিশেষ করে এরিকের। হিমাদ্রী কেকটা বেলুন দিয়ে সাজানো টেবিলে রাখে। আর কিছুক্ষণ পরেই কেক কাটা হবে।

হিমাদ্রীর একটা ইম্পরট্যান্ট ফোনকল আসায় সে তাড়াহুড়ো করে সামনের দিকে যাচ্ছিল। হুট করে ধাক্কা লেহে যায় রিশাদের সাথে। রিশাদকে দেখে অবাক হয় হিমাদ্রী। সেদিন ডক্টরের কেবিনে রিশাদের সাথে আলাপ হয়েছিল তার।কিন্তু সে তো তাকে ইনভাইট করেনি। তাহলে রিশাদ??

–হেই রিশাদ হাউ আর ইউ? হোয়াট এ কো ইন্সিডেন্ট! (হিমাদ্রী)

–হিমাদ্রী!হাউ আর ইউ আপনি এখানে?(রিশাদ)

–আমিও তো সেটাই ভাবছি আপনি এখানে? এটা তো আমার বাড়ি। এখানেই থাকি আমি। (হিমাদ্রী)

–ওহ আই সি। গুনগুনের বার্থডে তে এসেছি আমরা। বাই দ্যা ওয়ে গুনগুন আপনার কে হয়? (রিশাদ)

–গুনগুন আমার একমাত্র ভাইঝি। আজ তারই জন্মদিন। (হিমাদ্রী)

–ওহ আচ্ছা।এখন বুঝলাম আসল ব্যাপারটা। (রিশাদ)

–ইয়াহ। তুমি কি একা এসেছো? আর কাউকে দেখছি না যে?(হিমাদ্রী)

–না।আমি তো অনন্যময়ীর সাথে এসেছি। একচুয়ালি উনিই মেইনলি ইনভাইটেড। গুনগুনের পরী আন্টি। তারই এসিসট্যান্ট হিসেবে আপনার পার্টিতে আসার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। (রিশাদ)

রিশাদের কথায় হিমাদ্রী সবটা বুঝে যায়। রিশাদের সাথে টুকটাক কথা বলে হিমাদ্রী। এরই মাঝে গুনগুন কোথায় থেকে এসে যেন হিমাদ্রীকে টেনে নিয়ে যায় তার পরী আন্টির সাথে দেখা করানোর জন্য। সাথে রিশাদকেও নিয়ে যায়। এরই মধ্যে রিশাদের সাথেও অনেক ভাব হয়ে গেছে গুনগুনের।

সবার সাথে বসে গল্প করছিল অনি। গুনগুনের অনিকে পেছন দিক থেকে ডাকে। গুনগুনের আওয়াজ পেয়ে পেছনে ফিরে তাকায় অনি।

অনি পেছনে ফিরতেই যেন হিমাদ্রী থমকে যায়। তার হার্টবিট বেড়ে যায়। চোখ দুটো স্থির হয়ে গেছে গুনগুনের উপর। এ কাকে দেখছে সে। তার সামনেই কিছুটা দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে তার মিষ্টি মায়াবতী। সে যেন বিশ্বাস করতেই পারছে না। তার মাথা কাজ করছে না। উত্তেজনায় সে কথা বলতে পারছে না মস্তিষ্ক থেকে আগত শব্দগুলো মুখে আসার পূর্বেই যেন হারিয়ে যাচ্ছে। অস্বাভাবিক রকম অনুভূতি হচ্ছে হিমাদ্রীর। যে মানুষটাকে প্রথম দেখায় সে তার অন্তরের গভীরে স্থান দিয়েছে আজ তাকে এত কাছ থেকে দেখেও যেন সে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছে না। তাকে সে শুধু এতদিন নিজের কল্পনায় আর ক্যানভাসে রঙ তুলির অবয়বে দেখেছে। আজ সেই মানুষটাই তার সামনে স্ব শরীরে দাঁড়িয়ে আছে।

হিমাদ্রী যেন এই দুনিয়া থেকে হারিয়ে গেছে। তার মনে হচ্ছে তার সামনে অনি ব্যতীত আর কেউ নেই। শুধু সে আর অনি। হিমাদ্রী বিড় বিড় করে বলে; মায়াবতী! কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলে?

পাঞ্জাবিতে টান পড়ায় ধ্যান ভাঙে হিমাদ্রীর।

–চাচ্চু তুমি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছো না?? উচ্চস্বরে কথা গুলো বলে গুনগুন।

হিমাদ্রী আমতা আমতা করে বলে;হ্যা প্রিন্সেস বলো।

–তখন থেকেই তো বলছি।তুমিই তো কোন উত্তর দিচ্ছো না। এই দেখো আমার পরী আন্টি। (গুনগুন)

হিমাদ্রী বিড় বিড় করে বলে;তোমার পরী আন্টি সত্যিই পরী। মুচকি হাসে হিমাদ্রী।

অনি হিমাদ্রীর এভাবে তাকিয়ে থাকায় বাম পাশের ভ্রু টা বাঁকিয়ে হিমাদ্রীর দিকে তাকায়। হিমাদ্রী অনির এমন চাহনি দেখে ঘায়েল হয়ে যায়। আশে পাশের সবাই ও হিমাদ্রীর এমন কাজে কিছুটা হকচকিয়ে যায়। সচরাচর সে কখনোই কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না। সু সন্দেহ জাগে নিরা আর রেহানা বেগমের মনে। সু সন্দেহ করার কারণ হলো অনিকে মেয়ে হিসেবে বেশ মনে ধরেছে তাদের। তাই বোধ হয় নিরা আর রেহানা বেগম একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে।

নিরা আর রেহানা বেগমের ভালো লাগলেও আরো একজন উপস্থিত আছে যার ভালো লাগছদ না।চোখ মুখ খিচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিশাদ। অনির দিকে হিমাদ্রীর এভাবে ঘোর লাগানো দৃষ্টি মোটেও ভালো লাগছে না রিশাদের। খুব অস্বস্তি হচ্ছে তার। মনে হচ্ছে অনিকে হিমাদ্রীর সামনে থেকে এক্ষুণি সরিয়ে তাকে আড়াল করে দিতে।

অনির সাথে আলাপ করে হিমাদ্রী। অনি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলেও তা মুখে প্রকাশ করেনা। অন্যদিকে রিশাদের মেজাজটা যেন আরো বিগড়ে যাচ্ছে। সে কোনমতে নিজেকে সামলে নেয়। আর মনে মনে হিমাদ্রীর গুষ্টি উদ্ধার করে।

কিছুক্ষণ পরেই কেক কাটার জন্য সবাই একত্র হয়। মোমবাতি জ্বালিয়ে দিয়ে হিমাদ্রী তার হাতে কেক কাটার চাকুটা তুলে দেয়।

ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেয় মোমবাতি গুলো। সাথে সাথেই সবাই তালি দিয়ে উইস করে গুনগুনকে। কেক কেটে একে একে সবাইকে কেক খাইয়ে দেয় গুনগুন।

সবার সাথে এনিকেও খাইয়ে দেয় সে। এনির পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা এরিকের সামনে হাসিমুখে কেক তুলে ধরে গুনগুন । এরিক খানিকটা লম্বা হওয়ায় গুনগুন তার নাগাল পায়না। তাই এরিক হাঁটু ভাজ করে ফ্লোরে বসে পড়ে গুনগুনের সামনে। মুখের মাস্কটা খুলে গুনগুনের হাত থেকে একটু কেক নিয়ে তার মুখে তুলে দেয়।

গুনগুন এরিকের দিকে তাকাতেই তার কাছে সবটা এলোমেলো হয়ে যায়। সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখেই যেন সে চমকে যায়। অবচেতন মনে সে কিছুটা শব্দ করে আওড়ায় ;

–“পাপা”

গুনগুনের কথায় সবার নজর পড়ে গুনগুন আর এরিকের উপর। পার্টিতে উপস্থিত অধিকাংশ ব্যক্তিই যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না। সবাই যেন থমকে যায়।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here