অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_২৯
শায়লা বেগমের রুমের দরজার সামনে গিয়ে থেমে যায়। রিশার একটা কল আসায় সে নিজের রুমে চলে যায় কথা বলতে বলতে। অনি দরজায় নক করে।
–মামনি ভেতরে আসবো? (অনি)
শায়লা বেগম আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছিলেন। অনির আওয়াজ পেয়ে তিনি পিছনে ফিরে বলেনঃ
–হ্যা আয় না। ওখানে দাঁড়িয়ে পারমিশন নেয়ার কি আছে। (শায়লা বেগম)
শায়লা বেগমের কথা শুনে অনি মুচকি হাসি দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। পুরো বিছানা জুড়ে ছড়ানো রয়েছে কিছু গয়নার বাক্স।
–মামনি তুমি ডেকেছিলে??(অনি)
–হ্যা, বোস এখানে। (শায়লা বেগম)
শায়লা বেগম অনির হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে নিজেও তার সামনাসামনি বসে পড়েন।
শায়লা বেগম একে একে গয়নার বাক্সগুলো অনির হাতে ধরিয়ে দেয়। অনি কিছুটা অবাক হয়ে যায়। এ বাড়িতে আসার পর পরই শায়লা বেগম তাকে ইতিমধ্যে অনেকগুলো গয়না দিয়েছে যা সে কখনোই ব্যবহার করে নি।
–আসলে এই গয়না গুলো আমার শ্বাশুড়ি মা তার নাতির বউ এর জন্য রেখে গিয়েছিলেন। দুই বছর আগে তিনি মারা যান। রিশাদকে খুবই ভালোবাসতেন। তিনি বেঁচে থাকলে হয়ত আজ নিজে হাতে তোকে এই গয়নাগুলো পরিয়ে দিতো। খুব শখ ছিল রিশাদের জন্য লাল টুকটুকে বউ আনবে। নিজে হাতে তাকে গয়নাগুলো পরিয়ে দেবে। যাই হোক সেসব কথা থাক। মা মারা যাওয়ার আগে আমাকে এসব দিয়ে গেছেন। এখন তুই তোর নিজের জিনিস গুলো বুঝে নে তো বাপু। আস্তে আস্তে এই সংসারটা আমি তোর হাতে তুলে দিয়ে একটু আরাম করতে চাই।
শায়লা বেগমের কথাগুলো অনির কানে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে। সে যতটা এই সংসারের থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখতে চাচ্ছে ততোটাই যেন সংসারের মায়ায় আবদ্ধ হচ্ছে। এই পরিবারের মানুষগুলোকে এভাবে আশা দেখিয়ে তাদের নিরাশ করাটা কি সায় দেবে অনির মন??
অনির কাঁধে হাত দিয়ে শায়লা বেগম বলেনঃ
–কিরে কি ভাবছিস? গয়না গুলো পছন্দ হয়নি তোর?(শায়লা বেগম)
–না না মামনি তেমন কিছু না। আচ্ছা মামনি তুমি এখন এগুলো তোমার কাছে রাখো আমি পরে নিয়ে নেব। (অনি)
–এতদিন তো আমার কাছে ছিলই। এখন নিজের জিনিস নিজের কাছে রাখো। আমি কোন কথা শুনবো না। (শায়লা বেগম)
অনি শায়লা বেগমের কথায় বেশ অপ্রস্তুত বোধ করছে। জোর করে মুখে হাসি টেনে অনি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়।
শায়লা বেগমের সাথে টুকটাক কথা বলে নিজের রুমে যায় অনি। গয়নাগুলো নিতে তার খুবই অস্বস্তিবোধ হচ্ছিল। তবুও সে শায়লা বেগমকে মুখের উপর সরাসরি না করতে পারেনি।
রুমে এসে গয়নাগুলো আলমারি তে রেখে দেয় অনি। তার মস্তিষ্ক জুড়ে হাজার কল্পনার ভিড় জমেছে। তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো সে যেন আটকাতে পারছে না। সবকিছু আপনা আপনি ঘটে যাচ্ছে।
বিছানায় হেলান দিয়ে বসে পড়ে অনি। শায়লা বেগম অনিকে যেন একটু বেশিই ভরসা করে ফেলছেন। অনি যখন চলে যাবে তখন এই মানুষটাই হয়তো সবচেয়ে বেশি কষ্ট পাবে। যে মানুষটার কাছে থেকে মাতৃস্নেহ পেয়েছে তাকে কষ্ট দেয়ার কথা ভাবতেই অনির মনটা কিঞ্চিত খারাপ হয়ে যায়। চোখ বুজে থাকায় তার কিছুটা তন্দ্রাভাব চলে আসে।
চৌধুরী বাড়িতে বেশ ভালোভাবেই জন্মদিনের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। হিমাদ্রী খুবই ব্যস্ত সময় পার করছে। তার সাথে রাফি, নিধি আর নিরাও যোগ দিয়েছে। সবার থেকে যেন হিমাদ্রীর আগ্রহটাই বেশি। তার ভাষ্যমতে প্রিন্সেস এর জন্য সে সব কিছু নিজে হাতে এরেঞ্জ করতে চায়। টুক টাক কাজ সেরে সে উপরে যায় গুনগুনের কাছে।
–হেই প্রিন্সেস! কি করছো?( হিমাদ্রী)
বিছানায় শুয়ে শুয়ে পুতুল নিয়ে খেলছিল গুনগুন। হিমাদ্রীকে দেখে গুনগুন নৈসর্গিক হাসি দেয়। উত্তরে হিমাদ্রী ও হাসি দিয়ে গুনগুনের কপালে আলতো করে চুমু দেয়। তার কপালে এখনো ব্যান্ডেজ লাগানো আছে।
–কালকে তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।(হিমাদ্রী)
–কি সারপ্রাইজ চাচ্চু?(গুনগুন)
–এখন বলে দিলে তো সারপ্রাইজ নষ্ট হয়ে যাবে। কালকেই দেখতে পারবে। (হিমাদ্রী)
গুনগুন খুশিতে হেসে ওঠে। হিমাদ্রী গুনগুনের সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটায়। নিরা গুনগুনকে খাবার খাওয়াতে আসলে হিমাদ্রী রুম থেকে বেরিয়ে পুনরায় কাজের তদারকি করতে থাকে।
রিশাদ বাসায় ফিরে নিজের রুমে চলে যায়। রুমে ঢুকতেই চোখ পড়ে অনির উপর। আধশোয়া ভাবে বিছানায় শুয়ে আছে। রিশাদ অনির দিকে কিছুটা এগিয়ে যায়। অনির দিকে ভালোভাবে খেয়াল করতে সে বুঝতে পারে অনি ঘুমোচ্ছে। অনিকে দেখে কিছুটা চিন্তিত মনে হচ্ছিল। তাই রিশাদ আর অনিকে ডাকে না।
রিশাদ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসে। হাতের ঘড়িটে খুলে বেড সাইড টেবিলে রাখতেই ঠাস করে শব্দ হয়। শব্দ পেয়ে অনি কিছুটা সজাগ হয়। ঘুম ঘুম চোখে রিশাদের দিকে তাকায়। দু এক মিনিট সময় নিয়ে অনির ঘুম ছেড়ে যায়। সে বিছানায় সোজা হয়ে বসে।
রিশাদকে দেখে বলে; আপনি কখন ফিরলেন?
–এইতো দশ মিনিট আগে হয়তো। আপনি উঠলেন কেন? ঘুমান না। (রিশাদ)
–নো ইটস ওকে। বসে থাকতে থাকতে চোখ লেগে গেছিল। কিন্তু আপনার ফিরতে এতো দেরি হলো কেন বলুন তো?(অনি)
–আমার একটা ফ্রেন্ড এর সাথে দেখে করতে গিয়েছিলাম। একটু কাজ ছিল। কাজের ব্যাপারে ডিসকাস করতে করতেই দেরি হয়ে গেছে। (রিশাদ)
–ওহ আচ্ছা।(অনি)
অনি ঘড়ির দিকে তাকায়। সাড়ে চারটা পার হয়ে গেছে। অনি রিশাদের সাথে আর কথা না বাড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে যায়। রিশাদ অনির দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে।
অযু করে বেরিয়ে এসে আসরের নামাজটা পড়ে নেয়। রিশাদ সোফায় বসে ল্যাপটপে কিছু একটা দেখছিল। অনিকে দেখে সে তাড়াহুড়ো করে ল্যাপটপটা বন্ধ করে রাখে।
অনির কপাল কুঁচকে যায়। রিশাদের এমন কাজের কারণ সে বুঝতে পারে না। তবে অনি এ বিষয়ে খুব বেশি মাথা ঘামায় না। সে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
রিশার রুমে গিয়ে দেখতে পায় সে শব্দ করে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে। তাই আর সে রিশাকে ডিস্টার্ব করে না।
অনি পুনরায় রুমে ফিরে আসে। রিশাদ আবারও ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল। তবে সে এবার অনিকে দেখে ল্যাপটপটা বন্ধ করে দেয় না। একবার আড়চোখে অনির দিকে তাকিয়ে পুনরায় তার কাজে মন দেয়। যা অনির চোখ এড়ায়নি। অনি রিশাদের দিকে মনোযোগ না দিয়ে ফোন নিয়ে কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে। সেখানেও সে বোর হয়ে যায়।
রিশাদ অনির অবস্থাটা বুঝতে পারছে। তবে এই মূহুর্তে সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা কাজ করছে তাই সে অনির দিকে মনোযোগ দিতে পারছে না।
দরজায় কেউ একজন নক করে। শব্দ পেয়ে অনি রিশাদ দুজনেরই নজর পড়ে দরজার দিকে। হাতে একটা বই নিয়ে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে মিথিলা। মিথিলাকে দেখে অনির সকালবেলার ঘটনাটা মনে পড়ে যায়। কিছুটা অবাক হয় অনি। মিথিলার ব্যাপারটা এতক্ষণ তার মাথায় আসেনি।
মিথিলা শান্ত গলায় বলে; ভেতরে আসবো?
–হ্যা আয় না। পারমিশন নিতে হবে পাগলি!(রিশাদ)
মিথিলা ভেতরে প্রবেশ করে। রিশাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
–আসলে আমি একটা ম্যাথ প্রবলেম সলভ করতে পারছি না। তুমি একটু দেখবা প্লিজ। (মিথিলা)
মিথিলার কথায় রিশাদ কোনরকম অস্বস্তি বা বিরক্তবোধ প্রকাশ করে না। তবে এই মূহুর্তে সে খুব ইম্পরট্যান্ট একটা কাজ করছিল।
–আচ্ছা একটু ওয়েট কর আমি দিচ্ছি। জাস্ট ফাইভ মিনিটস। (রিশাদ)
মিথিলা রিশাদের কথায় কোন উত্তর দেয় না। মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায় যা রিশাদ দেখেছে কিনা মিথিলা খেয়াল করে নি। মিথিলা সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।
অনি সবটাই লক্ষ্য করছিল। মিথিলাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে;
–দাঁড়িয়ে আছো কেন? প্লিজ বসো না। (অনি)
–হ্যা বসছি। (মিথিলা)
মিথিলা সোফায় বসে পড়ে।রিশাদের থেকে বেশ খানিকটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে পড়ে। মিথিলার হাবভাব দেখে অনি বুঝতে পারে সে রিশাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে। মিথিলার চোখের দিকে তাকিয়ে অনি তার শুষ্ক দৃষ্টির পেছনে লুকিয়ে থাকা মলিনতা গুলো অনুভব চেষ্টা করে। সত্যিই এই অল্প বয়সে সে অনেকটা মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করেছে। কেননা রিশাদ আর অদ্রির সম্পর্কের ব্যাপারটা শুরুর দিক থেকেই সবাই জানতো যার ফলে মিথিলাও হয়তো জানতে পেরে গিয়েছিল। তখন তো সে আরো ছোট ছিল। কিভাবে সামলে নিয়েছে নিজেকে কেউ কখনো টেরই পায়নি মিথিলার ভেতরে কি চলছে।
একই বাড়িতে থাকে তারা। তবুও খাওয়ার সময় ব্যতীত হয়তো ভুল করে একবারও দেখা হয়না মিথিলার সাথে অনির। মেয়েটা নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নিয়েছে। সে কি আগে থেকেই এমন নাকি পরিস্থিতি তাকে এমন বানিয়ে দিয়েছে? হরেক রকমের প্রশ্ন জাগে অনির মনে। যার কোন সুরাহা সে করতে পারে না। তবে সে মন থেকে চায় মিথিলা যেন ভালো থাকে।হয়তো অনির উপস্থিতিতেও মিথিলা মনে মনে কষ্ট পাচ্ছে।
রিশাদ কাজ শেষ করে মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলে; হ্যা বল। কোন ম্যাথটা সলভ করতে পারছিস না?
রিশাদের কথা শুনে মিথিলা তার হাতে থাকা বইটা রিশাদের দিকে এগিয়ে দেয়। কলম দিয়ে মার্ক করা জায়গাটা মিথিলা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিলে রিশাদ কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে তা পড়ে ফেলে। এরপর সে মিথিলাকে তা খুব সুন্দর করে বুঝিয়ে দেয়।
রাতের খাবার খেয়ে শায়লা বেগমের সাথে টুকটাক কথা করছিল অনি। কথা শেষ করে নিজের রুমে চলে যায় সে।
রিশাদ রুমেই কারো সাথেই কথা বলছিল রিশাদ। অনির উপস্থিতি টের পেয়ে রিশাদ ফোনের অপর পাশে থাকা ব্যাক্তিকে বাই বলে ফোন কেটে দেয়। অনির কিছুটা সন্দেহ হয় সাথে অস্বস্তিবোধ ও হয়। রিশাদের বিহেভিয়ার অনির মোটেও ভালো লাগছে না। কিছুটা রাগ হচ্ছে তার । তবে সে রিশাদের সাথে কোন কথা বলে না সে। বিছানা ঠিক করে নিয়ে সে শুয়ে পড়ে। অনির কাজকর্মে রাগটা স্পষ্টভাবে ফুটে উঠছে। তবে রিশাদ তা পাত্তা দেয় না। বরং মনে মনে কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে। কিছুক্ষণ পর কাজ শেষ করে রিশাদও অনির পাশে শুইয়ে পড়ে। অনি চোখ বন্ধ করে আছে তবে এখনো সজাগ আছে। মনে মনে খুব রাগ হচ্ছে তার রিশাদের উপর। ঘুমাতেও পারছে না সে ঠিকমতো। অন্যদিকে রিশাদ মনে হচ্ছে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়ার সাথে সাথেই ঘুমে তলিয়ে গেছে। কিছুটা বিরক্ত হচ্ছে সে। কাত ঘুরে একবার রিশাদের দিকে তাকিয়ে পুনরায় অন্যদিকে ফিরে যায়। রিশাদকে এভাবে বেঘোরে ঘুমাতে দেখেও অনির রাগ হচ্ছে। মনে মনে রিশাদকে হাজারটা কথা শোনায় সে। রিশাদের উপর রাগের কারণটাও অনি বুঝতে পারছে না। খুব অস্বস্তিকর লাগছে সবকিছু তার।
প্রায় এগারোটা বাজে। হিমাদ্রীর ফোনটা বেজে ওঠে। হিমাদ্রীও সবেমাত্র ঘুমাতে যাচ্ছিল। ফোনের শব্দ পেয়ে সে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে। ফোনের অপরপাশে থাকা ব্যক্তির কথা শুনে হিমাদ্রী বলে;
হোয়াট কেক ডেলিভারি দিতে পারবেন না মানে টা কি? লাস্ট মোমেন্টে এসে এভাবে অর্ডার ক্যান্সেল করছেন। হাউ কুড ইউ ডু দিস? (হিমাদ্রী)
–ইউ আর এক্সট্রিমলি সরি স্যার। প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড আওয়ার সিচুয়েশন স্যার। আমাদের একজন স্টাফ মারা গেছেন। কাল আমাদের শপ বন্ধ থাকবে। (ফোনের ওপাশে)
হিমাদ্রীর খুব রাগ হচ্ছে। তবে সে নিজেকে সংযত করে কথা বলে ফোনটা কেটে দেয়। সে গুনগুনকে সারপ্রাইজ দেবে ভেবে একটা স্পেশাল কেক অর্ডার করেছিল। শহরে খুব সীমিত সংখ্যক শপে এই কেকগুলোর অর্ডার নেয়া হয়। এই রাতে এখন সে কোথায় অর্ডার দেবে কেকটা ভাবতেই তার খুব বিরক্ত লাগছে। রাফির নাম্বার ডায়াল করতে নিয়ে আবার কেটে দেয়। সারাদিন রাফিকে অনেক খাটিয়েছে তাই আর তাকে কল দেয় না হিমাদ্রী।
কিছুক্ষণ ভাবতেই হিমাদ্রীর মনে পড়ে যায় সেইদিনের আইসক্রিম পার্লার টার কথা। সেখানে সে আইসক্রিমের পাশাপাশি কেক পেস্ট্রি ও এভাইলেবল দেখেছিল। তাই আর না ভেবে সে সে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। মিনিট দশেকের মধ্যে দোকানের সামনে পৌঁছে যায়।
দোকানের সামনে ক্লোজড লেখা বোর্ডটা ঝুলছিল তবে ভেতরে সব লাইট এখনো জ্বলছিল। সাথে দু একজন মানুষকেও দেখা যাচ্ছিল। হয়তো দোকানের স্টাফ হবে।
হিমাদ্রী ডোরে নক করে বলে; এক্সকিউজ মি।
একজন অল্প বয়সী তরুণী তার দিকে এগিয়ে এসে বলে; সরি স্যার আমাদের শপ ক্লোজ হয়ে গেছে। এখন কোন সার্ভিস এভাইলেবল নয়।
হিমাদ্রী ভালো ভাবে খেয়াল করতেই দেখে এই মেয়েটাকে সে সেদিন দেখেছিল। মনে হয় এই মেয়েটাই শপের ওনার।
— একচুয়ালি আই নিড এ হেল্প। (হিমাদ্রী)
–হাউ ক্যান উই হেল্প ইউ স্যার। (মেয়েটি)
হিমাদ্রী মেয়েটিকে সব কিছু খুলে বলে। মেয়েটি কিছুক্ষণ ভেবে বলে; ওকে স্যার। কাল কখন ডেলিভারি দিতে হবে।
–কাল বিকেলের মধ্যে দিলেই হয়ে যাবে। (হিমাদ্রী)
–ওকে আপনার এড্রেসটা??(মেয়েটি)
হিমাদ্রীর দিকে মেয়েটি একটা কাগজ এগিয়ে দিলে সেখানে এড্রেসটা লিখে দেয় হিমাদ্রী।
মেয়েটিকে ভালো ভাবে বুঝিয়ে দেয় কিভাবে সে কেকটি বানিয়ে নিতে চায়। মেয়েটিও খুব ভালো ভাবে সবকিছু নোট করে নেয়। কথায় কথায় হিমাদ্রী জানতে পারে মেয়েটির নাম এ্যানি।
–ওকে মিস এ্যানি থ্যাংক ইউ সো মাচ ফর ইউর হেল্প। (হিমাদ্রী) বলেই হিমাদ্রী বেরিয়ে যায়।
এ্যানি তার শপের দুজন স্টাফকে কি কি করতে হবে সবটা বুঝিয়ে দেয়।
মাঝ রাতে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জাগা পায় রিশাদ। একটা ছোট্ট বাচ্চা। যার পেছনে ক্রমাগত ছুটে চলেছে রিশাদ। বাচ্চাটা একেবারেই তার ধরাছোঁয়ার বাহিরে। বাচ্চার হাসির শব্দ যতটা তীব্র হচ্ছে রিশাদের দৌঁড়ের গতি যেন ততটাই বাড়ছে। মাঝ পথে হোচট খেয়ে মুখ থুবড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে রিশাদ।
ঘুমের মাঝেই তার পুরো শরীর কাঁপুনি দিয়ে ওঠে। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। অনির ঠান্ডা লাগে ভেবে এসি চালায় নি রাতে। সোজা হয়ে বসে রিশাদ। মাথাটা তার ভন ভন করছে। ঘেমে টি শার্ট আধ ভেজা হয়ে গেছে। মাথার মধ্যে হাসির শব্দটা এখনো কিঞ্চিত ভেসে আসছে বলে মনে হচ্ছে তার। স্বপ্নটা বেশ অদ্ভুত লাগে তার। মিনিট পাঁচেক সময় নেয় ধাতস্থ হওয়ার জন্য। পাশেই অনি বেখেয়ালি ভাবে ঘুমোচ্ছে।
বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসে রিশাদ। এখন তার কিছুটা ভালো লাগছে।আবার শুয়ে পড়ে। এই মূহুর্তে তার মস্তিষ্ক অদ্ভুত স্বপ্নটার ভাবনায় বিভোর হয়ে আছে। কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না সে। ঘুমের ঘোরে একটা অদ্ভুত স্বপ্ন রিশাদকে বেশ বিড়ম্বনায় ফেলে দিয়েছে। খুব অস্বস্তিবোধ হচ্ছে তার।পাশ ফিরে একবার অনির দিকে তাকায়।
মুখে বিরক্তিভাব নিয়ে দুচোখ বুজে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তন্দ্রাভাব চলে আসে তার।
ভোরবেলা ফজরের আযান শুনে অনির ঘুম ভেঙে যায়। অলসতা কাটিয়ে উঠে দশ মিনিটের মাথায় অনি বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে অযু করে আসে। নামাজ শেষ করে অনি রিশাদের দিকে তাকায়।
রিশাদ এখনও বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। ওঠার কোন নামগন্ধও নেই। অনি জায়নামাজ টা গুছিয়ে যথাস্থানে রেখে দেয়।
রিশাদের উপর ঝুকে কিছু একটা বোঝার চেষ্টা করে অনি। রিশাদকে কোন কিছু সম্বোধন না করে বলে;
–আপনি ঘুম থেকে উঠবেন না? নামাজে যাবেন না?শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা??(অনি)
অনেকক্ষণ এভাবে বলেও অনি কোন সাড়াশব্দ পায় না। রিশাদকে হালকা ঝাঁকুনি দিয়ে রিশাদের নাম ধরে ডাকতে থাকে। এই প্রথমবার সে রিশাদের নাম ধরে ডাকছে।
–রিশাদ! নামাজে দেরি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু আপনার। রিশাদ!!প্লিজ উঠুন।(অনি)
রিশাদের মস্তিষ্কে আবছা আবছা অনি ডাক পৌঁছায়। ধীরে ধীরে সে চোখ মেলে তাকায়। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে তার মস্তিষ্ক পুরোপুরিভাবে সজাগ হয়। তার কানে স্পষ্ট ভেসে আছে অনির কণ্ঠে উচ্চারিত তার নাম। বার বার তার কানে নিজের নামটাই যেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। সবাই তো তাকে তার নাম ধরেই ডাকে কই আগে তো কখনো এমন হয়নি তাহলে আজ কেন এমন হচ্ছে?
রিশাদ বিষয়টা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার পূর্বেই ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করে। উঠে গিয়ে অযু করে এসে চটপট নামাজ পড়ে ফেলে।ভোরের
আলোও ফুটে গেছে। রিশাদ আর ঘুমায় না।
বাইরে থেকে একটু হেঁটে এসে ড্রইংরুমে বসে পড়ে। রায়হান সাহেব আগে থেকেই বসে ছিলেন সেখানে। অনি রিশাদ ও রায়হান সাহেবের জন্য চা নিয়ে আসে।
অদ্ভুতভাবে রিশাদ রাতের অদ্ভুত স্বপ্নটার ব্যাপারে ভুলে গেছে। বিষয়টা তার মাথাতেই আসেনি। হয়তো নতুন ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে মানুষের মস্তিষ্ক কিছু কিছু অপ্রয়োজনীয় অস্বস্তিকর বিষয়গুলো মুছে দেয়।
দুপুরে অনি গোসল শেষ করে এসে ওয়ারড্রব এর সামনে দাঁড়িয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবছে। সে বুঝতে পারছে না কোন ড্রেসটা পড়বে। এদেশে কোন জন্মদিনের পার্টি কেমন হবে তা সম্পর্কে অনির কোন ধারণা নেই। তাই বুঝে উঠতে পারছে না কি করা উচিত। একের পর এক জামাগুলো উলটে পালটে দেখছে শুধু।
রিশাদ রুমে এসে অনিকে আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনির কাছে এগিয়ে যায়।
–কি ব্যাপার এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে এনি প্রব্লেম??
অনি কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে কোন উত্তর দেয় না। রিশাদ কিছু বুঝতে পারে না।
কিছুক্ষণ পর অনি কিছুটা গোমড়া মুখে বলতে শুরু করে;
–আসলে আমি তো কখনো কোন বার্থডে পার্টিতে যাইনি এদেশে তাই বুঝতে পারছি না কি পড়ে যাবো। (অনি)
রিশাদ অনির কথা শুনে হালকা শব্দ করে হাসে যা অনির বিরক্তির কারণ হয়ে যায়।
রিশাদ অনিকে আলমারির সামনে থেকে সরিয়ে দিয়ে বলে; সরুন আমি দেখে দিচ্ছি।
রিশাদ দুতিনটে গাউন বের করে অনির সামনে ধরে। একটা করে গাউন অনির গায়ে ধরে বোঝার চেষ্টা করছে কেমন লাগে। অনি রোবটের মতো সবটা দেখে যাচ্ছে।
কালো কালারের একটা গাউন অনির গায়ে ধরে রিশাদ মুচকি হেসে বলে; ইটস পারফেক্ট। নিন এটাই পরুন।
অনি এবার ভালোভাবে ড্রেসটার দিকে চোখ বুলায়। কালো কালারের একটা গাউন। অনির মনে পড়ে যায় এই গাউনটা দেশে ফেরার পর অদ্রি তাকে কিনে দিয়েছিল বউভাতের অনুষ্ঠানে পরার জন্য। আর আজ অদ্রির জায়গায় অনিই উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। ভাবতেই অনির মনটা খারাপ হয়ে যায়।
চলবে….
?পরের পর্বে দুইটা ধামাকা থাকবে?