অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_১৫

0
7601

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_১৫

গোধূলি লগ্নে পশ্চিমা আকাশে সূর্য হেলে পড়েছে। কর্মব্যস্ত মানুষদের সাথে সাথে পশুপাখিরাও তাদের নীড়ে ফিরে যেতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। চাঞ্চল্যকর কোলাহলপূর্ণ ব্যস্ত পরিবেশটা ধীরে ধীরে নির্জীব শান্ত হয়ে পড়ছে। চারপাশে যেন অদ্ভুত স্বর্গীয় প্রশান্তি বিরাজ করছে। নৈসর্গিক নীরবতায় ছেয়ে গেছে। সূর্যের আবীর রাঙা রক্তিম আভায় প্রকৃতি নিজের রূপ বদলাতে ব্যস্ত। রক্তিম আকাশে পাখিদের আনাগোনা বাতাসে ভেসে আসছে অজানা এক পুষ্পের মিষ্টি ঘ্রাণ। গাছের সবচেয়ে উঁচু ডালের নবপল্লব গুলো দূর থেকে চকচক করছে। আলোর অবসান ঘটিয়ে ধীরে ধীরে আঁধারের লম্বা ঘোমটা টানার প্রস্তুতি চলছে আরেকটি নতুন সকাল পাবার উদ্দেশ্যে। এক অদ্ভুত নৈসর্গিক সৌন্দর্যের মাঝে প্রকৃতি ডুবে যাচ্ছে। রহস্যময় এই ক্ষণস্থায়ী সৌন্দর্যে দুচোখের তৃষ্ণা মেটে না। আলো আঁধারের এই খেলায় প্রকৃতি নিজের রঙ বদলিয়ে একেক সময় একেক রূপ ধারন করে। এটাই সৃষ্টি জগতের নিয়ম। যারা এই সৌন্দর্য বুঝতে পারে তারাই স্বর্গীয় প্রশান্তি লাভের অংশীদার হতে পারে। আর যারা পারে না প্রকৃতি তাদের কাছে নিতান্তই গোলকধাঁধা ছাড়া কিছুই নয়।

উন্মুক্ত রক্তিম আকাশের নিচে ছাদের মাঝ বরাবর বসে আছে একজোড়া মানব মানবী। আপাতদৃষ্টিতে মানব শরীর দুটির মধ্যে হাত খানেকের মতো দূরত্ব। মনের দিক থেকে তাদের দূরত্ব পরিমাণযোগ্য নয়। সমান্তরালে চলমান তাদের জীবনের গন্তব্য যেমন আলাদা পথও তেমনি আলাদা। তবু তারা আজ যেন একই পথের পথযাত্রী যেখানে কেউ কারো মনের খবর রাখে না। যার রাখার কথা ছিল সে তো সবকিছু পিছনে ফেলে আকাশপথে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়েছে। আচ্ছা সত্যিই কি সব কিছু এভাবে ফেলে চলে যাওয়া যায়? তার কি একবারও ভুল করেও কল্পনায় আসে না পেছনে ফেলে যাওয়া মানুষগুলো কিভাবে থাকবে????

নিস্তব্ধ অপরাহ্ণের শেষভাগে প্রকৃতির সাথে পাল্লা দিয়ে অনি রিশাদ যেন নীরব থাকার অদৃশ্য এক প্রতিযোগিতার খাতায় নাম লিখিয়েছে। কারো মুখে কোন কথা নেই।পিন পতন নীরবতা।

একসময় নীরবতার চাদর ভেঙে রিশাদ মলিন কণ্ঠে তার পাশেই থাকা মানবী কে উদ্দেশ্য করে বলে; আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?

হঠাৎ রিশাদের কথায় চমকে ওঠে অনি। মাথা নাড়িয়ে সে হ্যা বলে।

রিশাদ অনির দিকে না তাকিয়েই বলে; আপনি ইংল্যান্ডে কবে ফিরবেন??

রিশাদের প্রশ্ন শুনে অনি চমকে যায়। এ ধরনের প্রশ্ন সে প্রত্যাশা করেনি। দু চোখ কুঞ্চিত করে ঘাড় ঘুরিয়ে রিশাদের দিকে তাকায়। রিশাদের দৃষ্টি তখন শূন্যে ভাসছে।

-গতকাল রাত ১০.৩০ টার ফ্লাইটে ফেরার কথা ছিল। (অনি)

– আমাকে জানান নি কেন? আর আপনি কেনই বাবা এখানে পড়ে আছেন?(রিশাদ)

-আপনি জানতে চাননি তাই হয়তো জানায় নি। আর চিন্তা করবেন না যখন সময় হবে ঠিকি চলে যাব। আপনি বুঝতেও পারবেন না সেটা। (অনি)

-আপনি চাইলে যেতে পারেন। বিয়েটা যে পরিস্থিতিতে হয়েছে তার জন্য আমি দুঃখিত। আমাকে ক্ষমা করবেন এই বিয়েটা আমি কোন দিনও মেনে নিতে পারব না। তাকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম সারাজীবন ভালোবাসার ; সে তার কথা রাখেনি তার ক্যারিয়ারের সামনে আমার দীর্ঘ পাঁচ বছরের ভালোবাসা খুবই ঠুনকো ছিল তাই হয়ত এত সহজে ছেড়ে যেতে পেরেছে । সবাই তো আর সেটা পারে না। তাই তার জায়গায় অন্য কাউকে বসানো অসম্ভব। তাছাড়া আপনার নিজের ব্যক্তিগত জীবন রয়েছে। আপনারও কিছু চাওয়া থাকতে পারে। পরিস্থিতির চাপে পড়ে বিয়েটা হয়ে গেছে আপনিও হয়ত বাধ্য হয়েই বিয়েটা করেছেন। আমি চাইনা আপনাকে এই মিথ্যে সম্পর্কের বাঁধনে বেঁধে রাখতে। আপনি চাইলে যেকোন মূহুর্তে এ বাড়ি ছেড়ে আপনার আগের জীবনে ফিরে যেতে পারেন। (রিশাদ)

অনি খুব মনোযোগ দিয়ে রিশাদের কথাগুলো শোনে। রিশাদের প্রতিটি কথায় অদ্রির প্রতি রিশাদের অসম্ভব ভালোবাসা গুলো অনুভব করতে পারছে। তার বেশ ভালো লাগে কেননা সে নিজেও চায় রিশাদের জীবনে শুধু অদ্রিই থাকুক।এখানে তার থাকা না থাকা দুটোই সমান। তাই চলে যাওয়াই বেটার। আজ হলেও যেতে হবে কাল হলেও যেতে হবে। বেশিদিন থাকলে শুধু শুধু এ বাড়ির মানুষগুলো উপর মায়া পড়ে যাবে। খুব দ্রুত সম্ভব চলে যেতে হবে।

কিছুক্ষণ ভেবে অনিব জবাব দেয়; বাংলাদেশে আসার সময়ই আমি আর দিদা ইংল্যান্ডে ফেরার ই-টিকিট কেটে এসেছিলাম। ফ্লাইটটা মিস হয়ে গেছে এখন চাইলেও দ্রুত ফিরতে পারব না। যত দ্রুত সম্ভব আমি দিদার সাথে কথা বলে টিকেট কাটার ব্যবস্থা করে নেব। তবে একটু সময় লাগবে। আশা করি ততদিন যদি আমি এ বাড়িতে থাকি তাতে আপনার কোন আপত্তি থাকবে না। (অনি)

-আইনত আপনি আমার স্ত্রী তাই আমারা বাড়িতে আপনি চাইলেই থাকতে পারেন। এ বাড়িতে থাকা না থাকা আপনার ইচ্ছা। আমার তাতে কোন আপত্তি নেই। (রিশাদ)

-জানেন আপনি খুব লাকি আপনার এত সুন্দর একটা পরিবার আছে আর তারা আপনাকে এত ভালোবাসে আদর যত্ন করে(অনি)।

-আসলে এখানে সবাই আমার আপনজন তো তাই।আর আপনজনদের নিয়েই তো পরিবার। তাই এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার। আপনি তো পরিবারের সাথে থাকেননা তাই জানেন না। পরিবার মানেই একে অপরের সুখ দুঃখের সাথী। যেখানে একজন কষ্ট পেলে বাকি সবাই সেটা অনুভব করতে পারবে। এটাই পরিবারের বন্ধন। (রিশাদ)

রিশাদের কথা শুনে অনির মন আকাশে ধূসর মেঘ জমতা শুরু করে। চোখের পলক ফেললেই যেন বর্ষণ শুরু হবে। বর্ষণ ঠেকাতে মাথা তুলে আকাশের দিকে। তার নিজেরও পরিবার আছে যাদের সাথে এই প্রথম সে থাকার সুযোগ পেয়েছিল। পরিবারের অনুভূতি কেমন হয় তা বুঝে ওঠার আগেই আরেক নতুন পরিবার পেল যেখানে সবাই তাকে মাথায় তুলে রাখে। ভালো অনুভূতি গুলো হয়তো ক্ষণস্থায়ী তাই বোধ হয় পরিবারের সবার ভালোবাসা গুলো যত্ন করে উপভোগ করার পূর্বেই তাকে ভাবতে হচ্ছে ফুরে যাওয়ার কথা। তবে এটুকু পেয়েও সে নিজেকে সৌভাগ্যবতী মনে করছে। হয়ত দেশে না ফিরলে এটুকুও পেত না। যে কদিন সে দেশে আছে এই ভালো লাগার সুখানুভূতি গুলো তার যতটা পারে মনের ঝুলিতে আবদ্ধ করে নিতে চায়। তার জীবনের বড় প্রাপ্তি।

অনিকে চুপচাপ থাকতে দেখে রিশাদ আড়চোখে অনির দিকে তাকায়। অনির মুখাবয়ব দেখে রিশাদ অনুধাবন করতে পেরেছে কিছুটা। অদ্রির সাথে কথা বলার সময় সে অনেক বার অনির কথা শুনেছে অদ্রির মুখে। তাই অনির উদাসীনতার পিছনের কারণটা বুঝতে বেশি দেরি হয় নি। অনির এই উদাসীন চাহনি রিশাদের মনের কোথাও কাতরতার সৃষ্টি করছে।

রিশাদ কথা ঘুরানোর জন্য বলে; আপনার বিরুদ্ধে কিন্তু আমার একটা মারাত্মক অভিযোগ আছে।

অনি নিজেকে সংযত করে রিশাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। একটু আগে রিশাদকে যতটা মলিন দেখাচ্ছিল তার কিছুটা কমে গেছে। অনি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রিশাদের দিকে তাকায়।

-দুদিন হলো আপনি আমাদের বাসায় এসেছেন। আর এর মধ্যেই আমার পরিবারের সবাইকে হাত করে নিয়েছেন। আমার মা তো আপনার সবচেয়ে বড় ভক্ত আর রিশা তো সারাদিন আপনার নাম জপ করতে থাকে। আর বাবার কথা না হয় বাদই দিলাম। ওনাকে তো আপনি হসপিটালেই হাত করে নিয়েছেন। কি যাদু করেছেন বলুনতো। (রিশাদ)

রিশাদের কথা শুন্র অনি হেসে দেয়। অনি একটু ভাব নিয়ে বলে; ভালো জিনিসের কদর সবাই করতে জানে। কাউকে হাত করতে হয় না আমার। কোয়ালিটি আছে বস।

অনির মুখে এধরনের কথা শুনে রিশাদ হতভম্ব হয়ে যায়। ভ্যাবলার মতো অনির দিকে তাকিয়ে থাকে। অনির মধ্যে রিশাদ বার বার অদ্রিকে খোঁজার চেষ্টা করে। অনি অদ্রির মধ্যে আকাশ পাতাল তফাতটা তাকে বার বার অনন্যময়ীর অনন্য সত্ত্বার জানান দেয়। তার চোখ আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় এটা অনন্যময়ী তার মতো কেউ হতে পারে না।

অনি রিশাদকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি বন্ধ করে রিশাদের সামনে আঙুল দিয়ে তুরি বাজায়। রিশাদের ধ্যান ভাঙে।

অনি রিশাদের কিছু বলার অপেক্ষা না করে বলে; আপনাকে একটা কথা বলি? কথাটা যদি না রাখেন তাহলেও কোন সমস্যা নেয়। আমি নিজের ব্যবস্থা নিজেই করে নিতে পারব। তবুও একবার বলে রাখা ভালো।

-আচ্ছা ঠিক আছে বলুন ভেবে দেখব।(রিশাদ)

-আমি তো এই প্রথম দেশে এসেছি আমাকে একটু আপনার দেশটা ঘুরে দেখাবেন?(রিশাদ)

-আমার দেশ মানে? দেশটা কি আপনার না নাকি?(রিশাদ)

-হয়তো বা আমারও দেশ আবার হয়তো বা না । আমি লিগ্যালি ইংল্যান্ড এর সিটিজেন। জন্মের পর যখন আধো আধো বুলিতে কথা বলতে শিখেছি তখনই দিদা আমাকে নিয়ে এ দেশ থেকে নিয়ে চলে যায়। এখানে আমার কিচ্ছু নেই আবার অনেক কিছু আছে। জন্মভূমি বলে কথা শেষ হয়েও সব কিছু শেষ হয় না। (অনি)

-আচ্ছা বুঝলাম। আপনি যে বললেন আমি না বললে আপনি আপনার নিজের ব্যবস্থা করে নিবেন কি ব্যবস্থা করবেন মিস অনন্যময়ী?

-কি আবার করব একা একা ঘুরব।(অনি)

রিশাদ অনির কথা শুনে শব্দ করে হাসে। অনি ভ্রু কুঁচকে রিশাদের দিকে তাকায়।

রিশাদ হাসতে হাসতে বলে; সিরিয়াসলি অনন্যময়ী! আপনি একা একা ঘুরবেন। দুদিন আগে আপনি এদেশে এসেছেন মাত্র। কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হবে সেটাও আপনি জানেন না রাস্তাঘাট কিচ্ছু চেনেন না। ও মাই গড এ আমি কি শুনছি। একটা কথা বলুন তো আপনি বাংলা টাও ঠিক মতো পড়তে পারেন তো নাকি।

রিশাদের কথায় অনি মুখটা কুঁচকে ফেলে। অনি বলে; আপনি আমাকে কি ভাবেন বলুন তো। দেশে আসার পর থেকে কিন্তু আমি সবার সাথে বাংলাতেই কথা বলি ওকে। সো ডোন্ট মিসআন্ডারস্ট্যান্ড মি ওকে।

-আপনি আমার কথা ভুল শুনেছেন। আমি বলেছি বাংলা পড়তে পারেন কিনা। আই মিন টু সে ক্যান ইউ রিড অর রাইট বাংলা ল্যাংগুয়েজ? আশা করি এখন বুঝতে পেরেছেন। (রিশাদ)

-হ্যা বাংলায় বললেও বুঝি আমি ওকে। বাংলা লিখতে না পারলাম বলতে তো পারি এটাই আমার জন্য অনেক। আপনাকে এত ভাবতে হবে না। আপনি গেলে যাবেন না গেলে না যাবেন। (অনি)

-ইটস ওকে। বিদেশি বউ আমার।বলেই রিশাদ জোরে জোরে হাসতে থাকে।

অনক রিশাদের কথা শুনে চমকে যায়। রিশাদ কথার ছলে বউ শব্দটা উচ্চারণ করায় অনি যেন ঠাস করে আকাশ থেকে পড়েছে। চোখ বড় বড় করে অনি রিশাদের দিকে তাকায়।

রিশাদ কয়েক সেকেন্ড পর ব্যাপার টা বুঝতে পেরে হাসি থামিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ আগে ভুল করে কথাটা মনে হতেই সে নড়েচড়ে বসে।
কথা ঘুরানোর জন্য অনিকে বলে; আমি আপনাকে নিয়ে যাব কিভাবে আমি তো অসুস্থ আর আপনিও কতদিন থাকবেন তা তো জানি না আমি।

অনি স্বাভাবিকভাবে বলে; আচ্ছা আপনি আগে সুস্থ হোন তারপর দেখা যাবে। আর আমি যতদূর জানি কিছুদিন সময় লাগবে। এক মাসের বেশি লাগতে পারে আবার কমও লাগতে পারে। সো কোন ব্যাপার না যথেষ্ট সময় আছে।

-ওকে ম্যাম। আপনার যা ইচ্ছা। (রিশাদ)

অনি রিশাদের কথা শুনে মুচকি হাসে।

অনি রিশাদ কিছুক্ষণ টুকটাক গল্প করতে থাকে। তাদের দুজনকেই বেশ হাসি খুশি দেখাচ্ছিল।

অনি রিশাদের খোজ করতে করতে রিশা ছাদে চলে আসে। অনি রিশাদকে এত হাসিখুশি দেখে রিশার ও বেশ ভালো লাগছিল। ছাদের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে দূর থেকে সে তার ভাই ভাবীকে দেখতে থাকে। তার ঠোঁটের কোনণায় মুচকি হাসি ফুটে ওঠে।

কিছুক্ষণের মধ্যেই মাগরিবের আযান শুরু হয়ে যায়। অনি উঠে দাঁড়িয়ে রিশাদের দিকে তার হাত বাড়িয়ে দেয়। রিশা ঝটপট ফোন বের করে মূহুর্তগুলোকে ক্যামেরায় বন্দি করে নেয়। রিশাদ তার বাম হাতটা অনির হাতে রেখে অনির কাধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আস্তে আস্তে পা বাড়িয়ে হাটা শুরু করে। অনি পরম যত্নের সাথে রিশাদকে ধরে নিয়ে যায়। রিশা দূর থেকে তাদের অজান্তেই এই সুন্দর মূহুর্তগুলোকে ক্যামেরায় বন্দী করতে ব্যস্ত।

অনি রিশাদ সামনের দিকে আসতেই রিশা ফোন রেখে তার ভাই ভাবীর কাছে যায়। রিশা রিশাদ আরেক পাশে ধরে। তারা তিনজন একসাথে নিচে নেমে আসে।

রিশাদকে রুমে নিয়ে এসে অনি তাকে বিছানায় হেলান দিয়ে শুয়ে দেয়। রিশাও তার রুমে চলে যায়। অনি অজু করে এসে মাগরিবের নামাজ পড়ে নেয়। রিশাদের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে রুমটা গুছিয়ে ফেলে।

একটু পরেই শায়লা বেগম হাতে একটা ট্রে নিয়ে রিশাদের রুমে ঢোকেন। রিশাদের জন্য তিনি কিছু ফল নিয়ে আসেন সাথে অনি রিশাদ দুজনের জন্যই কফি নিয়ে আসেন।

অনক শায়লা বেগমকে দেখে একটা মুচকি হাসি দেয়। শায়লা বেগমকে বলে; মামনি তুমি এত কষ্ট করলে কেন? আমাকে ডাকলেই পারতে।

শায়লা বেগম বলেন; এটুকু কাজ আমি নিজেই করতে পারব বুঝলি। আর বাড়িতে অনেক কাজের লোকও আছে। তোকে কিচ্ছু করতে হবে না।

শায়লা বেগম অনি রিশাদের সাথে কথা বলে চলে যান। অনি ওয়াশরুম থেকে হাত ধুয়ে এসে রিশাদের পাশে একটা চেয়ার নিয়ে বসে তাকে ফুলগুলো কেটে দেয়। রিশাদ ফল দেখে নাক মুখ কুঁচকে ফেলে। তার মতে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম বস্তু। এটা শুধুমাত্র অসুস্থ ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ।

রিশাদকে দেখে অনি কিছুটা আন্দাজ করতে পারে। তাই সে চোখ বড় বড় করে রিশাদের দিকে তাকায়। রিশাদ মুখটা গোমড়া করে এক টুকরো আপেল হাতে নিয়ে মুখে দিতে নেয়। অনি আবার রিশাদের দিকে চোখ বড় করে তাকায়। রিশাদ কিছু বুঝতে পারে না।

অনি বলে; আপনাকে বাম হাতে খেতে নিষেধ করেছি। অনি আর কোন কথা না বলে রিশাদের মুখে তুলে দেয়। রিশাদ চুপচাপ বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে নেয়। তার মুখ দেখলেই বোঝা যাবে কেউ হয়তো তার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাকে জোর করে ফল খাওয়াচ্ছে। সে না পারছে ফেলতে না পারছে গিলতে।

এত সবকিছুর মাঝে আশ্চর্যজনকভাবে অনির হাতে খেতে রিশাদের খুব একটা অস্বস্তি হচ্ছে না। সে মনে মনে ভাবছে অঅনন্যময়ীর ও কি কোন অস্বস্তিবোধ হচ্ছে না??

অনির দিকে তাকিয়ে তার মনে কি চলছে তা রিশাদ বুঝতে প্রতিবারের মতো এবারেও ব্যর্থ হয়। কিছুটা বিরক্তি নিয়ে রিশাদ ফল চিবুচ্ছে। অনি রিশাদের এই অবস্থা থেকে মুখ টিপে হাসছে। সে বেশ মজা পাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। যার ফলে রিশাদের মেজাজটা আরো বিগড়ে যায়।

রায়হান সাহেব দরজায় দাঁড়িয়ে নক করার পূর্বেই তার চোখ অনি রিশাদের উপর আটকে যায়। অনি রিশাদকে এভাবে দেখে তিনি মনে মনে বলেন;
আমি কোন ভুল সিদ্ধান্ত নেইনি। আমার রিশাদের জন্য অনি মা একদম উপযুক্ত। রায়হান সাহেবের চোখ দুটো ভরে আসে। চশমাটা খুলে চোখ মুছতে মুছতে রায়হান সাহেব চলে যান। কিছু একটা ভেবে তিনি আর রুমে ঢোকেন না।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here