অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_১৩
ভোররাতে ফজরের আযান শুনে অনির ঘুম ভেঙে যায়। রাতে কখন যেন ঘুমিয়ে গেছে সে মনে করতে পারছে না। ঘাড়ে হালকা ব্যথা অনুভব হচ্ছে তার। সোজা হয়ে উঠে বসার চেষ্টা করে সে। ঘাড়ের ব্যথাটা তীব্র হয়ে যায় অনির। কোন মতে উঠে বসে পড়ে সে। ঘাড়ে হাত দিয়ে বোঝার চেষ্টা করে ব্যথাটা কেন হচ্ছে। কিন্তু কোন সুরাহা করতে পারে না অনি। ঘাড় ঘুরাতে নিলে ব্যথাটা আরো বেড়ে যাচ্ছে। এদিক ওদিক তাকাতে হলে পুরো শরীর ঘুরিয়ে পিছনে তাকাতে হচ্ছে। হটাৎ তার ঘাড় শক্ত হয়ে গেছে। রাগে দুঃখে এই মূহুর্তে তার কান্না পাচ্ছে। সোফায় ঘুমানোর ফলে তার ঘাড়ে টান পড়েছে।
অনি কোন মতে উঠে অযু করে এসে ফজরের নামাজটা আদায় করে সোফায় বসে পড়ে। এই মূহুর্তে সে ভাবছে এখন কি করবে। রিশাদকে ডাকতে যেয়েও থেমে যায়। রাতে যে রিশাদ ঠিকমতো ঘুমায়নি সেটা অনি ভালোভাবেই টের পেয়েছে। এখন একটু ঘুমিয়ে আছে তাই সে আর রিশাদকে ডাকে নি।
কিছুক্ষণ পর অনি ঘাড়ের নিচে হাত রেখে পা টিপে টিপে বাইরের দিকে যায়।
অনি মনে মনে ভাবে; গরম পানির সেঁক দিতে হবে। হট ব্যাগ পেলে আরো ভালো হত। কিন্তু আমি এখানে হট ব্যাগ পাব কোথায়। এত ভোরবেলাই কেউ উঠেছে কিনা কে জানে।
অনির মেজাজটা একদম বিগড়ে যায়। নিজেকে সংবরণ করে অনি রান্নাঘরের দিকে যায়। লাইট জ্বালিয়ে একটা পাতিলে পানি নিয়ে চুলায় বসিয়ে চুলা জ্বালায়।
পানি তো গরম করতে দিলাম এখন হট ব্যাগ পাব কোথায় ভেবেই অনি রান্নাঘরে খুঁজতে থাকে হট ব্যাগ আছে কিনা।
শায়লা বেগম সবেমাত্র নামাজ শেষ করেছেন। রান্নাঘরে কিছু একটার আওয়াজ পেয়ে তিনি রান্নাঘরে যান। সেখানে এত ভোরবেলা অনিকে দেখে তিনি কিছুটা অবাক হন। অনির গতিবিধি দেখে তিনি বুঝতে পারেন সে কিছু একটা খুঁজছে।
শায়লা বেগম অনির কাছে এসে বলেন;
কিরে কি খুঁজছিস এত ভোরবেলা?কিছু লাগবে তোর? আমাকে বললেই পারতি।
হঠাৎ করে কারো আওয়াজ পেয়ে অনি ভয় পেয়ে যায়। আওয়াজটা শায়লা বেগমের উপলব্ধি হতেই সে কিছুটা স্বস্তি পায়। ঘাড়ে হাত রেখে পুরো শরীর ঘুরিয়ে নিয়ে অসহায় মুখ করে অনি শায়লা বেগমের দিকে তাকায়।
শায়লা বেগম কিছুটা ঘাবড়ে যান অনির এ অবস্থা দেখে। চিন্তিত কণ্ঠে বলেন; তোর ঘাড়ে কি হয়েছে?
অনি মিনমিন করে বলে; জানিনা মামনি মনে হচ্ছে ঘাড় শক্ত হয়ে গেছে। ঘাড় ঘোরাতে পারছিনা। রান্নাঘরে এসেছিলাম গরম পানির সেঁক দিতে। কিন্তু হটব্যাগটা খুঁজে পাচ্ছি না।
-তুই আমাকে ডাকবি না আমি তো জেগেই গেছি। আমাকে ডাকলেই হতো। তোর কি খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে?? ডাক্তার ডাকতে বলব নাকি রিশাদের বাবাকে??(শায়লা বেগম)
-না মামনি তুমি এতো ব্যস্ত হয়ো না। কিচ্ছু হবে না।রাতে হয়ত ঘুমের অসুবিধার জন্য এরকম হইছে। তুমি চিন্তা করো না এমনিই ঠিক হয়ে যাবে। (অনি)
-তুই কি ডাক্তার নাকি যে বলছিস কিচ্ছু হবে না এমনিই ঠিক হয়ে যাবে? অনেক পাকনামি করছিস। এখন নিজের রুমে যেয়ে রেস্ট নে সকাল হতে অনেক বাকি। আমি এক্ষুণি হট ব্যাগ নিয়ে আসছি। (শায়লা বেগম)
অনি শায়লা বেগমের কথায় কোন জবাব না দিয়ে আমতা আমতা করতে থাকে। শায়লা বেগম তাকে জোর করে রান্নাঘর থেকে রুমে পাঠিয়ে দেয়।
অনি রুমে ঢুকতেই তার চোখ পড়ে সোফার উপর পড়ে থাকা বালশের উপর। শায়লা বেগম রুমে এসে যদি দেখে সোফার উপর বালিশ রাখা তাহলে তিনি সবটা বুঝে যাবেন ভেবেই অনি দ্রুতগতিতে বালিশটা সরিয়ে বিছানায় রাখতে গেলে ঘাড়ে টান পড়ে। হাতের বালিশটা ফ্লোরে ফেলে দিয়ে দু হাত দিয়ে হালকাভাবে ঘাড় চেপে ধরে ফ্লোরে বসে পড়ে। ব্যথায় আর্তনাদ করে ওঠে অনি। ব্যথায় তার চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসে।
মৃদু চিৎকারের শব্দে রিশাদের তন্দ্রাভাব কেটে যায়। রাতে ঘুম না হওয়ায় তার তার চোখ দুটো হালকা জ্বলছে। খুব কষ্ট করে চোখ মেলে তাকায় রিশাদ। রুমের এদিক ওদিক তাকিয়ে সে শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা করে। ঘাড় ঘুরাতেই তার চোখ পড়ে ফ্লোরের মাঝখানে হাটু ভাজ করে বসে থাকা মেয়েটির দিকে। কয়েক সেকেন্ড পর রিশাদের মস্তিষ্ক জানান দেয় মেয়েটি অনন্যময়ী। সে বুঝতে পারছে না এভাবে ফ্লোরে কেন বসে আছে অনি।
ঘুম ঘুম কণ্ঠে রিশাদ অনিকে ডাকে; অনন্যময়ী…
অনি রিশাদের গলার আওয়াজ শুনে নিজেকে সামলে নিয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। চোখ মুছে সে ধীরে ধীরে রিশাদের দিকে তাকায়।
অনির গালে অশ্রুর ছাপ স্পষ্ট। চোখের পাপড়িগুলো এখনও ভেজা। কুঁচকে যাওয়া শাড়ির আচলটা এলোমেলো হয়ে আছে। দুহাত দিয়ে ঘাড় চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে অনি রিশাদের সামনে। অনিকে এমন বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখে রিশাদের বুকটা কেপে ওঠে। এক অজানা ভয় তাকে গ্রাস করে।
ফ্লোর থেকে বালিশটা উঠিয়ে অঞ্জ ধীরে ধীরে রিশাদের দিকে এগিয়ে আসে। বালিশটা ঠিক জায়গামতো রেখে দেয় অনি।
রিশাদ কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে অনিকে বলে; তোমার কি হয়েছে? তোমাকে এরকম দেখাচ্ছে কেন? শরীর খারাপ নাকি? দাঁড়াও আমি এক্ষুণি আম্মুকে ডাকছি।
রিশাদ অনিকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জোরে জোরে তার মাকে ডাকে। দুবার ডাকতেই শায়লা বেগম হাতে হট ব্যাগ নিয়ে রিশাদের রুমে আসে।
-কিরে এত চিল্লাছিস কেন আমি তো আসছিলামই।
– আম্মু দেখো তো অনন্যময়ীর কি হইছে? ওর মনে হয় শরীর খারাপ? ওকে কেমন বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। বিচলিত কণ্ঠে বলে রিশাদ।
শায়লা বেগম রিশাদকে অনির জন্য চিন্তিত হতে দেখে মনে মনে খুশি হন। তিনি হাসিমুখে বলেন; হ্যা বাবা আমি জানি তোমার অনন্যময়ীর শরীর খারাপ। আমি তো এতক্ষণ ওর জন্য পানি গরম করে আনছিলাম। সে তো আমাদের এখনও আপন ভাবে না তাই কাউকে কিছু না জানিয়ে এই অবস্থায় গেছিল পানি গরম করতে। বলেই শায়লা বেগম গোমড়া মুখ করে থাকেন।
-একদম না মামনি। আসলে এত ভোরবেলা তুমি উঠছো কিনা আমি বুঝতে পারছিলাম না। তাই আর তোমাকে ডাকিনি। (অনি)
-হয়েছে বাবা এখন আয় আমার কাছে।(শায়লা বেগম)
রিশাদ কথার মাঝখানে বলে; আম্মু ওর কি হইছে?
-তুই এখনও জানিস না। অনির ঘাড় শক্ত হয়ে গেছে। রাতে এলোমেলো ভাবে ঘুমানোর জন্য এমন হইছে। (শায়লা বেগম)
শায়লা বেগমের কথায় রিশাদের মনে পড়ে যায় রাতে অনি সোফায় শুয়ে ছিল। যার জন্য এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রিশাদের মনে মনে খারাপ লাগে অনির জন্য। তার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে।
শায়লা বেগম অনিকে বিছানায় বসিয়ে ঘাড়ে গরম পানির সেঁক দিয়ে দেন। অনির বেশ আরাম লাগে। তবে ব্যথাটা এখনও সাড়ে নি। এদিকে ওদিকে ঘাড় ঘুরালেই ব্যথা বেড়ে যায়।
কিছুক্ষণ পর শায়লা বেগম কিছু একটা ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অনি হাত দিয়ে ঘাড়ের কাছে হট ব্যাগটা ধরে বিছানায় হেলান দিয়ে থাকে। তার মাথা ব্যাথা টা বাড়ছে। তিন রাত ধরে সে ঠিকমতো ঘুমাতে পারছে না।
কিছুক্ষণ পর শায়লা বেগম কফি নিয়ে হাজির হন। কফি দেখে অনির মনটা উৎফুল্ল হয়ে যায়। এই মূহুর্তে তার এই জিনিসটাই সবচেয়ে বেশি দরকার ছিল। শায়লা বেগম কিভাবে যেন অনির মনের কথাটা বুঝে ফেলেছে ভেবেই অনি বেশ অবাক হয়ে যায়। তার চোখেমুখে খুশির ঝলকানি দেখা যায়। শায়লা বেগম অনির হাতে কফির মগ দিতেই সে একটা মুচকি হাসি দেয়। শায়লা বেগমও মনে মনে খুশি হয়। অনিকে অল্প কয়দিনের মধ্যেই তিনি খুব ভালোবাসতে শুরু করেছেন। নিজের সন্তানের চেয়ে কোন অংশে কম দেখেন না।
অনি মুখ ফুটে কিছু না বলতেই শায়লা বেগম তার মনের কথাটা বুঝে যায় ভাবতেই তার ভালো লাগার অনুভূতি সৃষ্টি হয়। শায়লা বেগমের কথা ভাবতেই অনির তার বাবার কথা মনে পড়ে যায়। জাহানারা বেগমের পর একমাত্র এই ব্যক্তিই অনিত মনের কথাগুলো বুঝতে পারত। এ বাড়িতে আসার পর থেকে অনির একবারও তার বাবার সাথে কথা হয়নি। ভেবে তার মনটা খারাপ হয়ে যায়। অনি তার বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। প্রতি বছর অল্প কয়েকটা দিন অনি তার বাবার সাথে কাটানোর সুযোগ পেলেও তার ভালোবাসাগুলো পুরোপুরিভাবে প্রকাশ করতে পারে না। সংকোচবোধ জড়তা তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ধরে। সময়ের সাথে ভালোবাসার সাথে সাথে সমানুপাতিক হারে জড়তাটাও বেড়ে গেছে।
রিশাদ নীরব দর্শক হয়ে সবটা দেখে যায়। অনির মুখে হাসি ফুটতে দেখে তার নিজেরও বেশ ভালো লাগে যা অপ্রকাশিতই রাখে সে। তবে এই ভালো লাগার কারণটা রিশাদের অজানা।
সকালবেলা ডাক্তার আংকেল এর আগমন ঘটে রায়হান খানের বাসায়। অনি ডাক্তার আংকেলের সাথে কুশল বিনিময় করেন।
-হাই আর ইউ মাই সুইট গার্ল? শুনলাম তুমি নাকি অসুস্থ?হোয়াট হ্যাপেন ডিয়ার?(ডাক্তার)
অনি ডাক্তার আংকেলের সাথে টুকটাক কথা বলে। ডাক্তার তাকে বিশেষ কোন ঔষধ দেয় না। একটা পেইন কিলার দেয়। দু একদিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।
রিশাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে তিন রায়হান সাহেবের সাথে বেরিয়ে যান। শায়লা বেগম তাকে ব্রেকফাস্ট করতে বললে হসপিটালে ইমারজেন্সি আছে বলে বেরিয়ে যান।
ব্রেকফাস্ট শেষ করে অনি রুমে যায়। রিশাদ বেডে হেলান দিয়ে বই পড়ছিল। রিশাদ মাথা তুলতেই অনির সাথে চোখাচোখি হয়ে যায়। অনি খানিকটা বিব্রতবোধ করে। সে সোফায় গিয়ে বসে পড়ে।
রিশাদ অনির দিক থেকে চোখ সড়ায় না। অনিকে সোফায় বসতে দেখে তাকে টিজ করে বলে;
কারো মনে হয় ঘাড় আটকে গিয়েও এখনও শিক্ষা হয় নি। সোফাকে এত ভালোবাসে যে সেটা ছাড়া আর কিচ্ছু চলেই না।
অনি খুব বিরক্তবোধ করে। কড়া গলায় জবাব দেয়; আপনার কোন সমস্যা তাতে??
-না আমার কোন সমস্যা নেই। আপনার কিছু হলে তো সেই আমার ফ্যামিলিকেই ভোগান্তি ভোগ করতে হবে। (অনি)
– আমি তো কাউকে কিছু করতে বলিনি। আর আপনার তো কিছু করতে হচ্ছে না। সো আপনি চুপ করে থাকুন।(অনি)
-হ্যা তাই তো। আমাকে কিছু করতে হচ্ছে না। বড়দের কথা না শুনলে এরকমই হবে। হাজাত হোক গুরুজনদের আদেশ অমান্য করার শাস্তি তো ভোগ করতেই হবে না। কাল রাতে তো আমার কথা শুনলেন না তার ফলাফল হাতে নাতে পেলেন। তাইনা মিস অনন্যময়ী। বলেই রিশাদ শয়তানি মার্কা হাসি দেয়।
রিশাদের হাসি দেখে অনির গা জ্বলে যায়। তার মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে ওঠে। নাকের ডগা কাঁপতে শুরু করে। প্রচণ্ড রাগের চোটে এখন তার কান্না পাচ্ছে। নিজেকে সংবরণ করে নিয়ে অনি ওয়াশরুমে যায়। ওয়াশরুমের দরজাটা ঠাশ করে লাগিয়ে দেয়।
অনির এমন আচরণে রিশাদ কিছুটা কেপে ওঠে। সে মনে মনে ভাবতে থাকে একটু বেশিই বলে ফেলেছি মনে হচ্ছে।
মিথিলা রিশাদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ভেতরে ঢোকার মূহুর্তে অনি আর রিশাদের কথাবার্তা শুনে সে থেমে যায়। সে মনে মনে ভাবছে ভিতরে যাওয়াটা উচিত হবে কিনা। কল্পনাজল্পনা শেষ করে মিথিলা দরজায় নক করে।
রিশাদ দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে। মিথিলার মুখটা শিকিয়ে গেছে। চোখের নিচে কালি পড়েছে। চুলগুলোও এলোমেলো হয়ে আছে। মনে হচ্ছে ঠকমতো খাওয়াদাওয়া করে না।
রিশাদ বলে; আরে মিথিলা আয় ভিতরে আয়। হসপিটাল থেকে আসার পর থেকে তো তোর সাথে ঠিকমতো কথাই হলো না। কই থাকিস সারাদিন?এতক্ষণে আমার কথা মনে পড়ল তোর।
আমার মন মস্তিষ্ক জুড়ে সর্বক্ষণ তোমারই বিচরণ যা তুম কখনোই বুঝতে পারোনি মনে মনে ভাবে মিথিলা।
-এইত ভাইয়া সামনে এক্সামতো তাই পড়াশোনা নিয়ে একটু ব্যস্ত আরকি। তুমি কেমন আছো এখন? মিথিলা শান্ত গলায় জবাব দেয়।
-তা না হয় বুঝলাম। কিন্তু তোর চেহারার এই হাল কেন? ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া করিস না নাকি। পড়াশোনার চাপটা মনে হচ্ছে বেড়ে গেছে। কিন্তু এভাবে অযত্ন করলে কিন্তু অসুস্থ হয়ে পড়বি আর পরে এক্সামটাও ভালো করে দিতে পারবি না।তোর সব পরিশ্রম বৃথা যাবে। (রিশাদ)
-সেরকম কিছু না। সামনেই আমার এডমিশন টেস্ট। একটু বেশি পড়াশোনা করতে হচ্ছে। ভালো কোথাও চান্স না পেলে তো আমার সব শেষ। (মিথিলা)
-পাগলি। এত চিন্তা করিস না। তুই যথাযথভাবে পরিশ্রম করলে আল্লাহ তোকে নিরাশ করবে না। মন দিয়ে পড়াশোনা কর আর নিজের খেয়াল রাখিস। তো আমাদের দুষ্টু টা কোথায়? ওর ও তো এক্সাম। কোথায় গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কে জানে?এই মেয়েটাকে যে কোন স্যার এইচএসসি পাশ করিয়ে দিল আমি বুঝলাম না। (রিশাদ)
রিশাদের কথায় মিথিলা হালকা হেসে জবাব দেয়; তোমার রুমে আসার আগে তো দেখলাম ড্রয়িংরুমে বসে চিপস খাচ্ছে আর কার্টুন দেখতেছে। (মিথিলা)
-এই মেয়েটা আর বড় হবে না। এত বড় হয়ে গেছে এখনো ওনার কার্টুন দেখা মিস যাবে না। আর দেখতে না পারলে পুরো বাড়ি মাথায় তুলবে। বুদ্ধিশুদ্ধি একেবারেই নেই। (রিশাদ)
করে ভাইয়া কার বুদ্ধি নেই।বলতে বলতেই আপেল খেতে খেতে রিশাদের রুমে ঢোকে রিশা।
-কার আবার বুদ্ধি থাকবে না এই বাড়িতে তো একজনই আছে এরকম। আমার বাবার দ্বিতীয় সন্তান।(রিশাদ)
-ওহ আচ্ছা তাই বলবি তো আমি ভাবলাম… বলেই রিশা রিশাদের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়। কোমড়ে হাত দিয়ে বলে; দ্বিতীয় সন্তান মানে তুই আমাকে মিন করছিস তাইনা। রিশা রেগে যায়।
রিশাদ হাসি মুখে বলে; যাক বুঝতে পেরেছিস তাহলে আমি তো ভাবছি বুঝতেই পারবি না। বুদ্ধি কম হলে যা হয় আরকি। তবে ভালো দেরি করে হলেও বুঝতে পারছিস।
-তুই আসলেই একটা শয়তান। কোন দিনও ভালো হবে না তোর দেখিস। সব সময় এই বাচ্চার পিছনে লাগিস। আল্লাহ কোন দিনও তোত ভালো করবে না। অভিশাপ দিলাম তোকে। (রিশা)
-বোন আমার শোন। শকুনের দোয়ায় কোন দিনও গরু মরে না।(রিশাদ)
-এবার মরবে। রিশা রেগে জবাব দেয়।
-ও মাই গড আমি এ কি শুনলাম। তার মানে তুই নিজেকে শকুন বলে স্বীকার করলি। যাক ভালোই হলো নাকি বলিস। (রিশাদ)
রিশা প্রচণ্ড রেগে যায়। রেগে গিয়ে হাতের আপেল রিশাদের দিকে ছুড়ে মারে।
রিশাদ আপেলটা বাম হাত দিয়ে ধরে কামড় বসিয়ে বলে; ওয়াও আপেলটা খেতে দারুণ তো।
রিশা মুখ বাঁকিয়ে রিশাদ কে ভেংচি কাটে।
মিথিলা মাঝখানে বলে; রিশা কি করছিস। ভাইয়ার লেগে যাবে কিন্তু।
-মিথি তুই ভাইয়াকে বাজে কথা বলতে নিষেধ কর।না হলে কিন্তু খুব খারাপ হবে। (রিশা)
মিথিলা রিশাদকে বলে; ভাইয়া তুমি শুধু শুধু ওর পিছনে লাগো কেন বলো তো?
রিশাদ কিছু মা বলে শব্দ করে হাসতে থাকে। রিশা রাগে গজ গজ করতে থাকে।
ওয়াশরুম থেকে অনি মুখ মুছতে মুছতে বেড়িয়ে আসে। রুমের ভেতর রিশা মিথিলাকে দেখে অনি তাদের কাছে যায়।
রিশা অনিকে গিয়ে নালিশ দেয়; দেখো ভাবি ভাইয়া সব সময় আমার পিছনে লাগে। এখনো আমাকে কেমন করে লেগপুল করছে। বলেই ন্যাকা কান্না শুরু করে।
অনি রিশাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে; কি আর করবে বলো বেচারা। হাত পা চালাতে পারছে না তাই মুখটা বেশি চালাচ্ছে। দেখলেই বড্ড মায়া হয়। বলেই রিশাদের দিকে তাকিয়ে করুণ ভাবে দেখায়।
অনির কথা শুনে রিশাদের হাসি থেমে যায়। অনির উপস্থিতি টের পেয়েই মিথিলার হাসি মুখ মলিন হয়ে যায়। এক মূহুর্তের জন্য সে ভুলেই গিয়েছিল অনির অস্তিত্বের কথা।
রিশাদ রিশাকে বলে; নিজে পারিস না আরেকজন কে টেনে নিয়ে আসছিস এখন হুহ।
রিশা হাসতে হাসতে জবাব দেয়; রিলাক্স ব্রো। এতদিন আমাকে অনেক লেগপুল করছো। এখন সব প্রতিশোধ তুলব।
-ওকে মাই ডিয়ার কুড়িয়ে পাওয়া লিটল সিস্টার একবার আমাকে সুস্থ হতে দাও তোমাকে খুব তাড়াতাড়িই এই বাড়ি থেকে বিদায় করব(রিশাদ)।
-ওকে ব্রো দেখা যাবে। কিভাবে তুমি আমাকে বিদায় করো। বলেই রিশা একটা শয়তানি হাসি দেয়।
হাসি মজার মধ্যে দিয়ে রিশা রিশাদ অনি মিথিলা একসাথে আরো কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়। মিথিলা চলে যেতে চাইলেও সবার জোরাজুরিতে থাকতে বাধ্য হয়।
প্রথম থেকেই অনির নজর ছিল মিথিলার উপর। মেয়েটা পুরোটা সময় চুপচাপ ছিল। মাঝে মাঝে দুই একটা কথার জবাব দেয় শান্ত কণ্ঠে। মিথিলার দিকে তাকিয়ে অনি বোঝার চেষ্টা করে তার মনে কি চলছে। অনি কিছু আন্দাজ করতে পারছে না। তবে সে মনে মনে হাল ছাড়ে না। মিথিলার কি হয়েছে সেটা সে জেনেই ছাড়বে।
চলবে……..