#অদ্বিতীয়া
#পর্ব_০৩
#নুজাইফা_নূন
-” উইল ইউ ম্যারি মি মিস?আমি বুঝতে পারছি আপনার জীবনে অনেক দুঃখ কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে।একবার আমার হয়ে দেখুন ।আমি আপনার সমস্ত দুঃখ কষ্ট ভুলিয়ে দিবো। কোনো দুঃখ কষ্ট আপনাকে স্পর্শ করতে পারবে না। বলুন না মিস বিয়ে করবেন আমাকে?”
-” ইজহানের মুখে বিয়ের কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেল জারা।সে ভাবতেও পারে নি তার সব কিছু জানার পরেও একজন পুলিশ অফিসার তাকে বিয়ে করতে চাইবে।জারার থেকে কোনো রেসপন্স না পেয়ে ইজহান বললো, আমি কিন্তু এখনো আমার প্রশ্নের উত্তর পাই নি।চুপ করে থাকা সম্মতির লক্ষণ।তবে কি আমি ধরে নিবো আপনি আমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করেছেন?”
-” আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাই না? আমার অসহায়ত্বের সুযোগ নিতে চাইছেন ?”
-” এমনটা মনে হবার কারণ কি?”
-” আপনি একজন পুলিশ অফিসার।দেখতেও মাশাআল্লাহ।আপনার জন্য মেয়ের অভাব হবে না।আপনি কেনো আমার মতো একটা এতিম মেয়েকে সেচ্ছায় বিয়ে করতে চাইবেন?”
-” যদি বলি ভালোবেসে বিয়ে করতে চাইছি।সেটা বিশ্বাস করবেন? জানেন ভালোবাসা কখনো বলে কয়ে আসে না।হুট করেই হয়ে যায়। যেমন টা আপনাকে প্রথম বার দেখে আমার হয়েছিলো। আপনার ঐ কাজল কালো চোখে আমি আমার স’র্ব’না’শ দেখতে পেয়েছিলাম।কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে আমার হৃদয় হরণ করে নিয়েছিলেন আপনি। আমি চাইলে আপনাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতে পারতাম। কিন্তু আমি সেটা করি নি।আমি আপনাকে আমার নিজের করে পেতে চাই। একান্তই নিজের।”
-” সেদিন জারা এক বাক্যে ইজহানের কথা মেনে নেয়।ইজহান কালবিলম্ব না করে পরের দিন তাদের বিবাহ সম্পন্ন করে জারা কে নিয়ে গ্ৰামে চলে আসে। মূহুর্তের মধ্যে ইজহানের বিয়ের খবর গ্ৰামে ছড়িয়ে পড়ে। শামসুল জোয়ার্দার তাদের বিবাহ মানতে নারাজ হন।তিনি তার এমপি বন্ধু সাইফুল শিকদারের মেয়ের সাথে ইজহানের বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন নিজের স্বার্থ লাভের জন্য। কিন্তু ইজহান তার পরিকল্পনায় জল ঠেলে দেওয়ার ইজহানের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে যান তিনি।তিনি ইজহান কে সোজাসুজি বলে দেন,
-” এই মেয়ে শামসুল জোয়ার্দারের পুত্রবধূ হবার যোগ্যতা রাখে না। আমি কোনদিন ও এই মেয়েকে আমার পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিবো না। আমার বাড়িতে এই মেয়ের কোনো জায়গা হবে না।”
-“শামসুল জোয়ার্দারের কথা শুনে লজ্জায় অপমানে জারার মাথা নিচু হয়ে যায়।দর্শনেন্দ্রিয় থেকে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়ে।যা দেখে ইজহান বললো ,
-” সে আমার বিবাহিত স্ত্রী , আমার জীবনসঙ্গী, আমার অর্ধাঙ্গীনী।যে বাড়িতে আমার অর্ধাঙ্গিনীর ঠাঁই মিলবে না, সেই বাড়িতে আমি ও থাকবো না বলে ইজহান জারা কে নিয়ে বেরিয়ে আসে।ইজহান কে বেরিয়ে আসতে দেখে তার মা মুক্তি বেগম ইজহানের বাবার কাছে হাত জোর করে বললেন,
-” আপনি এতো নিষ্ঠুর হবে না। আমার ছেলেটা চলে যাচ্ছে আমাদের ছেড়ে। দয়া করে আপনি তাকে আটকান। প্রতিত্তরে শামসুল জোয়ার্দার কিছু না বলে হনহন করে হেঁটে নিজের রুমে চলে যান।”
-” ইজহান জারা কে নিয়ে তার কর্মস্থল বরিশাল আসে। সেখানে তারা একটা ভাড়া বাড়িতে নিজেদের দাম্পত্য জীবন শুরু করে।বেশ সুখে শান্তিতে দিন পার হয় তাদের।ইজহানের এতো ভালোবাসা দেখে জারার মনে ভয় হয়।সে ভাবে তার মতো অভাগীর কপালে এতো সুখ সইবে তো? দেখতে দেখতে ইজহান জারার দাম্পত্য জীবনের দুই টা বছর অতিবাহিত হয়ে যায়। অকস্মাৎ জারা একদিন বুঝতে পারে তার মধ্যে ছোট্ট একটা প্রাণ বেড়ে উঠছে।সে ইজহানের বাচ্চার মা হতে চলেছে। নিজের বংশ বৃদ্ধির সংবাদ পেয়ে শামসুল জোয়ার্দার আর রাগান্বিত হয়ে থাকতে পারেন না ছেলে , ছেলের বউয়ের উপর।জারা কে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন শামসুল জোয়ার্দার। নিজের ভুলের জন্য তিনি অনুতপ্ত হন। কিন্তু সেবার জারার বাচ্চাটা মিসক্যারেজ হয়ে যায়।জারাও কোনো কারণবশত গ্ৰামে থাকতে চায় না।তাই সে ইজহানের কাছে ফিরে আসে। এরপর আরো দুই টা বছর কে’টে যায়।জারা আবারো কনসিভ করে।এরই মধ্যে আবার ইরহানের বিয়ের খবর পায়।ইরহানের বিয়ে উপলক্ষে জারা ইজহান দুজনেই রহমতপুর এসেছিলো। কিন্তু ইজহানের ছুটি না থাকায় সে বরিশাল ফিরে গেছে।জারা ও ফিরে যেতে চেয়েছিল কিন্তু অদ্বিতীয়ার মতো মিষ্টি একটা বোন পেয়ে সে কিছু দিন গ্ৰামে থাকার মনস্থির করে।”
_____________________________
-“ধরণীর বুকে আঁধার নেমে এসেছে। শামসুল জোয়ার্দারের স্ত্রী মুক্তি বেগমসহ তার দুই জা মিলে রসাইঘরে মাটির উনুনে রাতের রান্না করছিলেন। মাটির উনুনের রান্না ছাড়া শামসুল জোয়ার্দার খেতে পারেন না।গ্ৰাসে রান্না করা খাবার খেলে তার নাকি পেটের ব্যামো হয়। তার কড়া নির্দেশ মাটির উনুন ছাড়া খাবার পাক করা যাবে না।বাড়ির বউরাও তার নির্দেশ অনুযায়ী তিন বেলা মাটির উনুনে রান্না করেন।তারা তিন জা মিলে রান্না করছিলো আর নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করছিলো। অদ্বিতীয়া একটা টুল পেতে বসে নিরব দর্শকের মতো তাদের গল্প শুনছিলো। অকস্মাৎ সেখানে শামসুল জোয়ার্দারের জননী জরিনা বেগম উপস্থিত হয়।তিনি অদ্বিতীয়া কে বসে থাকতে দেখে কর্কশ কন্ঠে বললো,
-” হ্যাঁ গো বউ বউ পোলারে বিয়া করাইছো কি নিজে রান্ধে বাড়ে খাওয়ানোর লাইগা?তোমরা কাম করছো আর হে বউ বিবি হয়ে বয়ে রয়ছে ক্যা?এক বউ তো আমার নাতনি রে বশ করে শহরে বইয়া ঠ্যাং এর উপ্রে ঠ্যাং তুলে খায়।এইডারেও যদি আশকারা দেও হেও গতর নাড়াই খাইতে চাইবে না।গতরে তেল চর্বি জমে যাইবো।”
-” জরিনা বেগমের কথা শুনে মুক্তি বেগম বললো,
ও মা ম’রা বাচ্চা একটা মেয়ে আম্মা। ছোটবেলা থেকে দাদির কাছে বড় হয়েছে। আমি ওকে আমার মেয়ে করে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছি। কাজের মেয়ে করে না আম্মা। তাছাড়া আমাদের বাড়ির নিয়ম কানুন এখনো অজানা ওর। কিছুদিন যাক। মেয়েটা আমাদের সাথে মানিয়ে নিক। তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে আম্মা।”
-” মুক্তির কথা শুনে জরিনা বেগম নিজের মতো বকবক করতে করতে নিজের রুমে চলে গেল।তিনি যেতেই মুক্তি অদ্বিতীয়ার কাছে এসে বললো, মায়ের কথায় কিছু মনে করো না। আগেকার দিনের মানুষ তো।”
-“দাদির কথায় আমি কিছু মনে করি নি আম্মা। দাদির বয়সী আমারো বু আছে।বু আমাকে খুব ভালোবাসে।আমি আমার বু আর তাকে আলাদা করে দেখি না আম্মা। যাই হোক আমি কি আপনাদের কোনো কাজে সাহায্য করবো?”
-” তার কোনো প্রয়োজন নেই। তুমি বরং আমাদের রান্না করা দেখে শিখো ।জারা তো গ্ৰামে থাকবে না। কিছুদিন পর শহরে চলে যাবে। আমার পরে তোমাকেই সংসারের হাল ধরতে হবে।তাই সব কিছু মনোযোগ দিয়ে দেখে শিখো।”
-” ঠিক আছে আম্মা বলে অদ্বিতীয়া ঠাঁই সেখানে বসে রইলো।এরই মধ্যে দূরের মসজিদ থেকে মাগরিবের আজানের মিষ্টি ধ্বনি ভেসে আসলো। আজান শোনা মাত্রই অদ্বিতীয়া নিজের রুমে এসে ওয়াশরুমে গিয়ে অযু করে মাগরিবের সালাত আদায় করে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে রুমের বাইরে পা বাড়ানোর আগেই কাজের মেয়ে পলি এসে অদ্বিতীয়ার পা জড়িয়ে ধরে অশ্রুবর্ষণ করে বললো, আমাকে আপনি মাপ করে দেন ভাবি।আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।আমি কি করবো বুঝতে পারছি না ভাবি।আমার যে মৃ’ত্যু ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমি যে কলঙ্কিনী।সারা অঙ্গে কলঙ্কের বোঝা বয়ে নিয়ে বেড়াতে পারছি না আমি।”
-” আহ্ পলি কি করছো টা কি? পা ছাড়ো আমার।কি হয়েছে আমাকে খুলে বলো।”
-” আমি ইরহান ভাইজানের বাচ্চার মা হতে চলেছি ভাবি………
চলবে ইনশাআল্লাহ।।