অদ্বিতীয়া পর্ব ৬

0
75

#অদ্বিতীয়া
#পর্ব_০৬
#নুজাইফা_নূন

-” পলির লা’শ পাওয়া গেছে মানে? কে মা’রলো পলি কে?”

-” কেউ মা’রে নি।পলি বৈঠক খানায় ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁ’স দিয়ে আ’ত্ম’হ’ত্যা করেছে। বুঝতে পারছি না মেয়েটা আ’ত্ম’হ’ত্যা করতে গেলো কেন ?সে তো দিব্যি হাসিখুশি ছিলো। আ’ত্ম’হ’ত্যা করার কোনো কারণ নেই তার কাছে। তবু ও কেনো মেয়েটা আ’ত্ম’হ’ত্যার পথ বেছে নিলো?”

-” কথাটা শোনা মাত্রই অদ্বিতীয়া ঠাস করে ফ্লোরে বসে পড়লো।দর্শন্দেন্দ্রিয় থেকে আপনা আপনি পানি গড়িয়ে পড়লো।পলির সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠতেই নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এলো তার। অদ্বিতীয়া মনে মনে বললো, মেয়েটার সাথে রাতে ও কতো কথা হলো।তাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখালাম।মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কি থেকে কি হয়ে গেলো।পলি তো আমাকে বলেছিলো সে ম’রতে চায় না।তার ভাইয়ের জন্য বাঁচতে চায়।তাহলে পলি পাভেলের কথা বাদ দিয়ে কেনো আ’ত্ম’হ’ত্যা’র পথ বেছে নিলো?অদ্বিতীয়ার ভাবনার মাঝে জারা বলে উঠলো,

-” জানো অদ্বিতীয়া আমার মনে হচ্ছে আমাদের যা দেখানো হচ্ছে, সেটা সত্য নয়।সত্যের আড়ালে মিথ্যা লুকিয়ে রয়েছে।”

-” তুমি কি বলতে চাইছো বুঝতে পারছি না আপু।”

-“একটা হিসাব আমি কিছুতেই মেলাতে পারছি না অদ্বিতীয়া।পলির যদি আ’ত্ম’হ’ত্যা করার ই ছিলো, ও তো নিজের রুমেই করতে পারতো‌।ও কেনো বৈঠক খানায় আ’ত্ম’হ’ত্যা করতে গেলো।ছোট চাচীর কাছে শুনেছি বৈঠক খানা আমাদের দাদা শ্বশুরের সময়ে তৈরি করা।তিনি ও একজন চেয়ারম্যান ছিলেন। বৈঠক খানায় তিনি গ্ৰামের লোকেদের সালিশ করতেন। এমনকি বড় বড় লোকেরা আসলে তাদের সাথে তিনি বৈঠক খানায় মিলিত হতেন। তিনি মা’রা যাওয়ার পর বাবা ও সেই ধারা অব্যাহত রাখেন। কিন্তু আজ থেকে দশ বছর আগে কোনো কারণবশত বাবা বৈঠক খানা পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন।বড়ো তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বৈঠক খানার দরজায়।পলি এতো জায়গা থাকতে দশ বছর আগে বন্ধ হ‌ওয়া বৈঠক খানায় কেন আ’ত্ম’হ’ত্যা করলো? বুঝতে পারছি না এটা কি আদৌ আ’ত্ম’হ’ত্যা নাকি পরিকল্পিত খু’ন?আর যদি খু’ন হয়েও থাকে তাহলে কে করলো পলির খু’ন? আর কেনোই বা করলো?”

-” ভাইয়ার বাতাস তোমার উপর ও লেগেছে দেখছি।পুলিশের ব‌উ পুলিশের মতোই গোয়েন্দা গিরি করছো।”

-” হ্যাঁ করছি। কিন্তু সেটা সন্দেহের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আমি চাইলেও পলির সাথে ঠিক কি হয়েছে সেটা খুঁজে বের করতে পারবো না।আর না পারবো অধরাধিদের শাস্তি দিতে। শ্বাশুড়ি আম্মা আমার কাছে এসে হাতজোড় করে বলেছেন ,আমি পোয়াতি মানুষ।আমি যেনো পলির ব্যাপারে মাথা না ঘামায়।এমনকি ইজহান কেও পলির ব্যাপারে জানতে নিষেধ করছেন।একটা বার বৈঠক খানায় ঢুকতে ও দেই নি আমাকে। তুমি আসো সবটা নিজের চোখেই দেখবে বলে জারা নিচে চলে গেল। অদ্বিতীয়া জারার পিছু পিছু রুম থেকে বেরিয়ে বৈঠক খানায় গিয়ে দেখে সেখানে অনেক মানুষের সমাগম রয়েছে। অদ্বিতীয়া তাদের সরিয়ে ভেতরে গিয়ে দেখলো পলির লা’শ তখনো ফ্যানের সাথে ঝুলছে। যা দেখে কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো অদ্বিতীয়ার। অদ্বিতীয়া তার ছোট চাচী শ্বাশুড়ি রত্না কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না করে দিলো।সে কিছুতেই পলির মৃ’ত্যু মেনে নিতে পারছে না।রত্না অদ্বিতীয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

-“এভাবে ভেঙ্গে পড়লে চলবে না। নিজেকে শক্ত করো অদ্বিতীয়া। মানুষ মাত্রই মরণশীল। যেটা হয়েছে সেটা মেনে নাও।”

-” কিভাবে মেনে নিবো চাচী? রাতেও মেয়েটার সাথে কতো কথা হয়েছে আমার। আমার মনে হচ্ছে পলি আ’ত্ম’হ’ত্যা করে নি।তাকে খু’ন করা হয়েছে চাচী।আর তাকে খু’ন করেছে শামসুল জোয়ার্দারের ছোট ছেলে ইরহান জোয়ার্দার।”

-” অদ্বিতীয়ার কথায় চমকে উঠলো রত্না।সে তৎক্ষণাৎ অদ্বিতীয়া কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,এই কথা টা ভুলেও আর মুখ থেকে বের করো না অদ্বিতীয়া।না হয় তোমার সাথে ও সেটাই হবে যেটা পলির সাথে হয়েছে বলে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে রত্না বৈঠক খানা থেকে বেরিয়ে এলেন।তার যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই থানার ওসি সহ দুজন কনস্টেবল বৈঠক খানায় প্রবেশ করলেন। তাদের কে নাকি স্বয়ং শামসুল জোয়ার্দার কল করে ডেকেছেন।ওসি আসা মাত্রই শামসুল জোয়ার্দার তাকে আলাদা ডেকে নিয়ে বললেন,

-” টাকা সময় মতো তোমার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার হয়ে যাবে।তবে যা করার ভেবে চিন্তে করো।আমার বা আমার ছেলের কোনো প্রকার সম্মানহানি যেন না হয়।”

-“আমি থাকতে আপনার কিসের টেনশন? আপনি অযথায় টেনশন করছেন চেয়ারম্যান সাহেব।”

-” আমি কথা নয় , কাজে বিশ্বাস করি।যাও গিয়ে নিজের কাজ করো।”

-” ঠিক আছে চেয়ারম্যান সাহেব বলে ওসি কনস্টেবলদের কে পলির লা’শ নিচে নামাতে বললেন।তারা ওসির কথা মতো পলির ঝুলন্ত‌ লা’শ নিচে নামিয়ে নিয়ে আসলো। অদ্বিতীয়া একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখলো পলির নাক , মুখ , কান দিয়ে র’ক্ত বের হচ্ছে। গলায় ফাঁ’স দিয়ে আ’ত্ম’হ’ত্যা করলে সাধারণত গলায় দাগ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু পলির গলায় সেরকম কোনো চিহ্ন নেই দেখে অদ্বিতীয়ার সন্দেহ আরো গাড়ো হয়। অদ্বিতীয়া ওসি কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই একজন কনস্টেবল পলির হাতের মুঠো থেকে একটা চিরকুট বের করে ওসির হাতে দেয়।ওসি সকলের সামনে চিরকুট পড়তে শুরু করে।চিরকুটে লেখা ছিলো,

-” আমার লেখাটা যখন আপনারা পড়বেন তখন হয়তো আমি আপনাদের মাঝে থাকবো না। সত্যি বলতে মানব সমাজে বসবাস করার মতো মুখ আমার ছিলো না। আমি অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিলাম। নিজের মুখ দেখতে নিজের‌ই ঘৃণা হচ্ছিলো।তাই আমি স্বেচ্ছায় মৃ’ত্যু কে গ্ৰহণ করে নিয়েছি। আমার মৃ’ত্যু’র জন্য কেউ দায়ী নয়। তবে চেয়ারম্যান চাচার কাছে আমার একটা শেষ অনুরোধ রইলো। আমার লা’শ টা যেনো পোস্টমর্টেম করা না হয়।ওসি সাহেব এটুকু পড়ে বললেন,

-“মেয়েটা যেহেতু স্বীকারোক্তি দিয়ে গিয়েছে, আবার শেষ ইচ্ছা স্বরুপ তার পোস্টমর্টেম না করার অনুরোধ জানিয়েছে । সেহেতু আমাদের আর কিছু করার নেই।আপনারা লা’শ দাফন কাফন করার ব্যবস্থা করুন বলে ওসি চেয়ারম্যানের সাথে হ্যান্ডশেক করে বৈঠক খানা থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে তাদের গন্তব্যে রওনা হলেন।”

________________________

-” ইরহান তখনো গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। অদ্বিতীয়া গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে ইরহানের বিছানার পাশে বসে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ইরহান কে দেখে বললো, ঘুমন্ত অবস্থায় কি মায়াবী লাগছে আপনাকে।মনে হচ্ছে সদ্য জন্ম নেওয়া নিষ্পাপ শিশু। কিন্তু কেউ না জানুক আমি জানি আপনি একটা খু’নী । নিজের আসল চেহারা যাতে কারো সামনে প্রকাশ না পায় সেজন্য পলি কে খু’ন করে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে রেখেছেন।যাতে মানুষ ভাবে পলি আ’ত্ম’হ’ত্যা করেছে।সেটার প্রমাণ স্বরূপ আবার সু’ই’সা’ই’ড নোট ও লিখে রেখেছেন। বাহ্ কি দারুন আইডিয়া।আসলে তুই কোন মানুষের কাতারে পড়িস না ইরহান। তুই একটা জা’নো’য়া’র ।মানুষ রুপি জা’নো’য়া’র।একটা জা’নো’য়া’রের বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই বলে অদ্বিতীয়া ইরহানের মুখের উপর বালিশ চেপে ধরলো বললো, তোর মতো নর্দমার কীট বেঁচে থাকা মানে পলির মতো হাজার টা মেয়ের জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া। কিন্তু এই অদ্বিতীয়া আর কোনো মেয়ের সাথে অন্যায় হতে দিবে না।ইরহান তখন বাঁচার জন্য ছটফট করতে লাগলো।এক পর্যায়ে ছটফট করতে করতে তার হাত পা স্থির হয়ে গেল।যা দেখে অদ্বিতীয়া পৈশাচিক হাসি হেসে নিজেকে বাহবা দিয়ে বললো, বাহ্ অদ্বিতীয়া বাহ্ একটা জা’নো’য়া’রে’র বিনাশ করলি তুই।”

চলবে ইনশাআল্লাহ।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here