অচেনা তুমি পর্বঃ২২

0
802

#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ২২
নাদিম কুবরাকে জ্ঞান ফেরানোর পর বাসায় নিয়ে আসে। বাসায় এসে কুবরা সোজা গিয়ে বিছানায় পড়ে এক পড়াতেই ঘুমে কাবার।
কুবরা আর নাদিম ফিরে আসার ঘন্টা দুই একের মধ্যেই সাদাফ আর শুভ্রা চলে আসে। বেশি দেরি করে নি। নাদিম দরজা খুলে রাখাতে তেমন অসুবিধে ও হয় নি তাদের।

???

আজ শুভ্রা ঘুম থেকে উঠার আগেই মিসেস নাজমা মানে শুভ্রার মা উঠে সক্কাল সক্কাল মেয়ের জন্মদিন উপলক্ষ শুভ্রা সহ বাড়ির সকলের জন্য পায়েস, পুডিং, হালিম তৈরি করেন। তার মেয়ের এই তিনটি জিনিস বড্ড প্রিয়। প্রত্যেক জন্মদিনে তিনি শুভ্রার জন্য এই তিনটি পদ অবশ্যই বানান৷
শুভ্রা কাল রাত দেরি করে ঘুমুতে সকালে উঠতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিল। তবে প্রতিদিনকার মতো তারাতাড়ি উঠে নাস্তা বানাতে গেলে দেখে তার মা, মামনি ইতিমধ্যেই নাস্তা বানিয়ে টেবিলে পরিবেশন করছেন। সাদাফের বাবা তো এদিক ওদিক হাটাহাটি করছে কবে খেতে পারবে এই ভেবে।

শুভ্রাকে দেখা মাত্রই তারা তিনজন একসাথে বলে উঠলো ” শুভ জন্মদিন শুভি “।

শুভ্রা এতোক্ষনে বুঝতে পারে এতো আয়োজন কিসের। মুচকি হেসে একে একে সকলকে জড়িয়ে ধরে আলিঙ্গন করে শুভ্রা।

সাদাফের বাবাঃ তোর জন্যই তো বসে ছিলাম এতোক্ষন। খিদেই তো আমার পেট চৌচির করছে রে মা। (শুভ্রার কাদে হাত দিয়ে)

শুধু কি তোমার আমাদের ও তো খুশবু তে পেটে ইদুর দৌড়ানো শুরু করছে বাবাই। খুশবের জ্বালায় ঘুম ই ভেঙে গেলো৷

সাদাফের বাবা আর শুভ্রা পেছন ফিরে দেখে সাদাফ আর নাদিম দুজনেই সিড়ির রেলিঙে ঠেশ দিয়ে দাড়িয়ে আছে।

সাদাফের বাবাঃ তো খিদে লাগলে তো চলে আয় তাড়াতাড়ি। খিদেয় তো আর থাকতে পারছি না।

নাদিমঃ না না চেক করতে আসছিলাম আর কি আসলেই কি আমাদেরই বাসায় কিনা।

সাদাফের মাঃ হ্যা হ্যা আয় বস। আজ তো শুভ্রার জন্মদিন। তাই সেই উপলক্ষে দুজনে মিলে শুভ্রার কিছু প্রিয় খাবার বানিয়েছি। দেখি শুভ্রা আয় আজ তুই আগে খেতে বসবি।

শুভ্রার মাঃ হ্যা বস। দেখ সব তোর প্রিয়। এতোদিন আমাদের প্রিয় খাবার রান্না করে খাওয়াতি আজ না হয় আমরা তোকে খাওয়াই। আর কুবরা কই?? মেয়েটা এখনো পড়ে পড়ে ঘুমুচ্ছে নিশ্চয়? কোথায় বোনের জন্মদিন একটু এসে হেল্প করবে তা না। ( এই বলে তিনি কুবরার রুমে পাড়ি দিলেন)

কুবরার কথা শুনাতেই নাদিমের বুকটা ধুরু ধুরু কাপতে শুরু করলো। না জানি কাল রাতের ফল কোন বোমে পরিণত হয়। ধুর কি দরকার ছিলো বেচারিকে ভয় লাগানোর। আর এভাবে ভয়ের জ্বালা বেহুশ হয়ে যাবে কে জানতো।

এতোক্ষনে সবাই টেবিলে বসে পড়েছে। সাদাফের মা একে একে সকলকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। ততক্ষণে কুবরা আর শুভ্রার মা চলে এসেছে। কুবরা তো দাঁড়িয়েই ঘুমে টুলুমুলু করছে।

তারপর সকলে মিলে শুভ্রাকে আবারও একসাথে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে খাওয়া শুরু করে।

খাওয়াদাওয়া শেষে সকলে যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অবশ্য ব্যস্ত বলতে তেমন কিছু না। সাদাফ আর অফিস যায়নি। শুভ্রার জন্য আজ ছুটি কাটাচ্ছে। আর নাদিম তো ছুটি কাটানোর জন্যই এসেছে। খাওয়া দাওয়া শেষে শুভ্রা আর সাদাফ বাগানে হাটছে।
কুবরার ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি। তাই সে ছাদে গিয়ে দোলনায় আধ শুয়া হয়ে হেলান দিয়ে আছে। হঠাৎ পাশে কারোও উপস্তিতি টের পেয়ে কুবরা চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে নাদিম মাথা নিচু কিরে বসে বসে দুল খাচ্ছে। নাদিমকে দেখার পর কুবরা আবারও চোখ মুদে নিলো৷

দুজনের মাঝেই চলছে পিনপতন নীরবতা। বেশ খানিকক্ষণ পর নাদিম সেই নীরবতা ভেঙে বলে উঠলো “এখন কেমন লাগছে তোমার?? ”

কুবরা মাথা তুলে চোখ খুলে বলে ” এহহ কেমন লাগছে মানে? আমার কি কিছু হয়েছে নাকি? ”
নাদিম অবাক চোখে কুবরার দিকে তাকিয়ে থাকে। এই মেয়ের কি কিছু মনে নেই নাকি?

” কি হলো তাকিয়ে আছেন যে? বলুন আমার কি কিছু হয়েছে যে জিজ্ঞেস করছেন ‘এখন কেমন লাগছে ‘??”

নাদিমঃ তোমার মনে নেই কাল রাতে তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে??
কুবরাঃ এহহহ অজ্ঞান?? আমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলাম?
নাদিমঃ হ্যা ভয় পেয়ে মনে হয় তুমি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলে। এই তুমি কি ভীতু! গিয়েছিলে না বয়ফ্রেন্ড জোগাড় করতে? শেষে তো আমাকেই নাকানিচুবানি খাওয়ালে।
কুবরাঃ এএএএএ এখন মনে পড়েছে আমার!!! মিস্টার পচা বাদাম আপনাকে তো আমি ছাড়বো না…… আমাকে ভুতের ভয় লাগিয়ে পুরো অজ্ঞান করে ফেলেছিলেন??? আমার তো এর হেলদোল ও ছিলো না এতোক্ষন। বয়ফ্রেন্ড তো কাউকে আমি বানিয়েই ছাড়বো। আর আপনাকে তো আমি ছাড়বো না……

( এই বলে কুবরা পুরো ছাদময় নাদিমের পিছনে ছুটছে।)

শুভ্রা আর সাদাফ বাগানে হাটছিল। এমন সময় বাড়ির সদর দরজা দিয়ে বড় এক গাড়ির প্রবেশ করলো।

শুভ্রা আর সাদাফ গাড়ির আওয়াজ শুনে সেদিকেই তাকায়। উপর থেকে নাদিম আর কুবরা ও গাড়ির আওয়াজ শুনে দৌড়াদৌড়ি থামিয়ে দুজনেই নিচে কে এসেছে দেখতে মনোযোগ দেয়।

গাড়ি থামার পর সবার আগেই নামে ধবধবে সাদা পা নিয়ে হাই হিল পড়া হাটু পর্যন্ত ড্রেস পরিহিত এক অপরুপ নারী।
আর সে অন্যকেউ নয় ইলিয়ানা ই।টাইট হাটু পর্যন্ত একটা শর্ট ড্রেস, সাথে হাই হিল, কাদ পর্যন্ত ব্রাউন কালার করা সিল্কি চুল, ভারি মেকাপে পুরাই ঐশ্বর্য লাগছিলো তাকে। নাদিম আর কুবরা তো হা হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে৷ মেয়েটাকে দেখলে কেমন জানি মনের এক কোনায় বড্ড হিংসে কাজ করে কুবরার। খুব ইচ্ছে করে তার মতো করে একটু সাজতে। আর দেখতেও তার চেয়ে খুব সুন্দর। চেহারাটা পুরাই সামিরা মাহির ন্যায় দেখতে।

পাশে চোখ ফিরিয়ে দেখে নাদিমও সেইম হা হয়ে তাকিয়ে আছে ইলিয়ানার দিকে। এই মূহুর্তে নাদিমের চাহনি দেখে গা জ্বলে খা খা করছে কুবরার। সটান দিয়ে নাদিমের হাতে দেয় এক চিমটি।

নাদিমঃ আউউউউউউচ। আহহহহ কি হলো কি প্রথমে দৌড়ে শান্তি হয়নি? এখন আবার চিমটি দিচ্ছো কেন??

ইলিয়ানাঃ ওভাবে কি তাকিয়ে আছেন হ্যা??? মেয়ে কোনো দিন দেখেন নি নাকি?? আমিও তো আপনার সামনে থাকি কই আমার দিকে তো একটু ভালো ভাবে তাকান না? ও ওই ছোটো ছোট কাপড় পরা মেয়েদের দিকেই শুধু নজর যায় তাই না?? সব বুঝি আপনি যেমন প্লে বয় তেমন একটা লুচু! আর যদি কোনো দিন দেখি কোনো মেয়ের দেকে তাকান, চোখ গেলে রেখে দিবো। এই আমি বলে দিলুম।

সূর্যএর আলো পড়ার পাশাপাশি রাগের কারনে কুবরার ওই লালচে মুখটা আরও লাল টমেটোর মতো লাল হয়ে আসছে। রাগে ফুসে ফুসে নিশ্বাশ নিচ্ছে।

নাদিমঃ আব.. আরে আমি ওর দিকে কই তাকুয়ে ছিলাম? কে এসেছে দেখার জন্যই তো তাকালাম। আর তুমি যেভাবে বলছো আমি মোটেও সেভাবে তাকাই নি।
কুবরাঃ হেহ দূরে রাখুন আপনার কথা। লেভেল দিতে আসবেন না আর। যান তো যান হেহ

এই বলে কুবরা রেগেমেগে ছাদ প্রস্থান করলো। আর নাদিম তো সেই একি জায়গায় কুবরার যাওয়ার দিকেই থ হয়ে দাড়িয়ে তাকিয়ে আছে তার পানে। কি এমন ভাবে তাকালো আর এমন রাগই বা কেন?

যাব্বাবাহ আমি তো কে আসলো এটা দেখার জন্যই তাকালাম৷ আমি কি কারো দিকে তাকাতেও পারবো না এখন? আর কি বললো? আর কোনো মেয়েদের দিকে তাকালে চোখ গেলে ফেলবে? মানে টা কি? তবে কি সে জেলাস ফিল করে? ইট মিন্স দ্যাট সি ইজ আলসো ফলেন লাভ উইথ মি? ওয়াও নাদিম কামাল তো করে দিয়েছিস রে? থাক একটু বাজিয়ে দেখি আরও। কি কি করে মহারানী। ( মনে মনে বলতে থাকে নাদিম সাথে শয়তানী দুষ্টু হাসি)
⬇️⬇️⬇️⬇️

এদিকে গাড়ি থেকে নামা মাত্রই ইলিয়ানা সাদাফকে দেখার সাথে সাথে হাগ করতে দৌড়ে আসে। তবে এবারে সাদাফের কাছাকাছি আসতেই সাদাফের সামনে শুভ্রা এসে দাঁড়িয়ে যায়। যার কারনে ইলিয়ানা শুভ্রাকে জড়িয়ে ধরে।

ইলিয়ানা কিছু বলবে এর আগেই শুভ্রা মুখে কৃত্রিম হাসি বজায় রেখে ইলিয়ানাকে জিজ্ঞেস করে” কেমন আছো আপু ??? ”

ইলিয়ানা মুখ শক্ত করে বলে “ভালো”। তারপর সাদাফকে জিজ্ঞেস করে ” স্যাডি বেইবি কেমন আছো? ইউ নো আই মিসড ইউ সো মাচ! ”

সাদাফঃ ইলিয়ানা আমি কোনো বাচ্চা নই যে তুমি আমাকে বেইবি বেইবি করছো। আমি তোমার চেয়ে বয়সে যথেষ্ট বড়। রেস্পেক্ট দিয়ে কথা বলো। আর এসব তো আমি তোমাকে এর আগেও বলেছি। বার বার একি কাজ রিপিট করো কেন বুঝি না আমি। ( বিরক্তি নিয়ে)
ইলিয়ানাঃ স্যাডি। আমি মাত্র আসলাম। আর তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো? ( ন্যাকা ভাব করে)
সাদাফঃ তুমি বাধ্য করছো।

এরপর আস্তে আস্তে পেছন থেকে ইলিয়ানার মা, বাবা আর ভাই আবির ও চলে এলো। সবাইকে একে একে শুভ্রা সালাম দিলে সকলেই হাসিমুখে সালামের উত্তর দেয়। তবে ইলিয়ানার বাবা মুখটা একটু গম্ভির করে আছেন।

তারপর শুভ্রা সকলকে বাড়ির ভেতর নিয়ে যায়। সকলে ঢুকলেও ইলিয়ানার বাবা দাড়িয়ে ছিলেন। সাদাফ ডাকতে গেলে তিনি চুপচাপ দাড়িয়ে থাকেন।

ইলিয়ানার বাবাঃ এটা ঠিক করোনি সাদাফ। তুমি জানতে আমার মেয়ে তুমাকে কতোটা ভালোবাসে। এমন কাজ টা তুমি কর‍তে পারলে?

সাদাফঃ খালাব্বু তুমিও? এটলিস্ট তুমি হলেও বুঝো। ইলিয়ানা না হয় বাচ্চা মেয়ে। সে বুঝে না বুঝে এসব করে। তোমরা জানো ও যেসকল বিহেভ আমার সাথে করে তা আমি মোটেও পছন্দ করি না। তবুও তোমরা কিছু বলো নি। আচ্ছা মানতাম। কিন্তু যার প্রতি কোনো অনুভূতি কাজ করে না, মায়া কাজ করে না তাকে বিয়ে করা কি করে সম্ভব। আর এসব তার ছেলেমানুষী।

ইলিয়ানার বাবাঃ সবই বুঝি রে বাবা। তবে আমি মেয়েটার চোখের জল এক্কেবারে সহ্য করতে পারি না। ছোট থেকে যে চেয়েছে, যেরকম চলেছে আমরা কেউ বাধা দেই নি। আজ হঠাৎ তোমার বিয়ের কথা শুনে মেয়েটার মনটা ভেঙে গিয়েছে। সেদিন তোমাদের বাড়ি থেকে আসার পর তো সারাদিন ঘরবন্দী হয়ে ছিলো।
সাদাফঃ আমি বুঝছি ব্যাপার টা তবে আজ না হয় কাল সে ঠিক এসব ভুলে যাবে তুমি দেখ নিও। এখন ভেতরে চলো। লং জার্নি করে এসেছো। টায়ার্ড নিশ্চয়। আসো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here