অচেনা তুমি পর্বঃ৫৩

0
657

#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ৫৩

কুয়াশাচ্ছন্ন গাছগাছালিতে আবদ্ধ বিষন্ন মনোরম সকাল। আযানের প্রহর শেষে নামাজ পড়ে ফার্মহাউজের সামনে একটু হাটতে বের হয় ইলিয়ানা। চারদিকে পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজের আনাগোনা। কিছু বৃদ্ধ জোয়ান কৃষক কাধে লাঙ্গল নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। নানান রঙের পাড়ের একরঙা শাড়ি পড়ে বধুরা কোমরে কলসী নিয়ে গ্রামের টিউবয়েল থেকে পানি আনতে যাচ্ছে। ছোট ছোট বাচ্চারা কেউ মাথায় টুপি কেউবা হিজাব পড়ে হাতে সিফারা কিংবা কোরআন নিয়ে মক্তবে যাচ্ছে।

গ্রামের পরিবেশ কতোই না সুন্দর। নেই কোনো ব্যস্ততা নেই কোনো ছিন্নতা। সবাই কতো সুন্দর মিলেমিশে থাকে। হাটতে হাটতে একটা বড় আমগাছের নিচে এসে সামনের ক্ষেতে কাজ করার দিকে দৃষ্টি মনোনিবেশ করে।

” আপনিও হাটতে বের হয়েছেন বুঝি? ”

পেছন থেকে পরিচিত কণ্ঠস্বর কানে ভেসে আসায় তাকিয়ে দেখে পারভেজ মাথায় টুপি আর হাতে জায়নামাজ নিয়ে পাঞ্জাবি পরিহিত দাঁড়িয়ে আছে।

ফজরের নামাজ পড়ে সাদাফ, নাদিম, আবির, পারভেজ মিলে গ্রামের রাস্তায় হাটাহাটি করছিলো। ইলিয়ানাকে দেখা মাত্র পারভেজকে একা ছেড়ে দিয়ে কিছু দূরে গিয়ে দাঁড়ায় তারা।

ইলিয়ানা পারভেজকে দেখা মাত্র মিষ্টি একটা হাসির মাধ্যমে সালাম জানায়।

ইলিয়ানাঃসকাল সকাল হাটতে বের ন হলে এতো সুন্দর দৃশ্য দেখতাম কি করে বলুন তো?

পারভেজঃ তা অবশ্য ঠিকি বলেছেন। জানেন আগে যখন ছিলাম তখন এতোটা মায়া কাজ করতো না যেমনটা এখন করে। যবে থেকে বিদেশ চলে যাই এই পরিবেশ, এই গ্রাম, এই রাস্তা, এই ক্ষেত খুব মিস করতাম। জানেন আমি যখন ছোট ছিলাম তখম আম গাছের এই ডাল টায় বসে থাকতাম। ( গাছের বড় ডাল টা দেখিয়ে)

ইলিয়ানাঃ হুম গাছ টা অনেক পুরোনো তাই না? অনেক বড়। দেখুন কতো সুন্দর মুকুল এসেছে।

পারভেজঃ হুম আম কিন্তু খুব মিষ্টি। ছোট বেলায় আমি যখন এই গাছে উঠে বসে থাকতাম তখন কুবরা আর শুভ্রা চেয়ে থাকতো। শুভ্রার এসব গাছে চড়ার ইচ্ছে কোনো দিন ও ছিলো না। একদিন কুবরাকে দুষ্টুমি করে তুলেছিলাম। ব্যাস এরপর থেকে আছাড় খেয়ে কবার পড়েছে তার হিসেব নেই। তবু প্রত্যেকদিন এখানে ঝুলে ঝুলে থাকতো।

পারভেজরা তেমন একটা ব্যক্তিগত কথা না বলায় প্রায় বড় বড় করেই বলছিলো দুজনে। যার কারনে নাদিম পারভেজের কথাটা শুনতে পায়। নাদিম কথাটা শুনা মাত্রই দৌড়ে গিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায়।

সাদাফঃ এই নাদিম কোথায় যাচ্ছিস?

নাদিমঃ এমন রোমান্টিক ওয়েদারে বউ ছাড়া জমে নাকি? বউকে আনতে যাচ্ছি।

সাদাফঃ সবাই সবার বউ নিয়ে থাকলে আমি কেন একা থাকবো আমি ও যাই চল। ( নাদিম আর সাদাফ হাটতে হাটতে)

আবিরঃ শুধু আমি হতভাগারই কেউ নেই একসাথে হাটার জন্য। নেভার মাইন্ড আল্লাহ আমার জন্য বেস্ট টাই চুজ করে রেখেছেন। আমি গিয়ে অই কৃষক ভাইদের সাথে কথা বলি। ( এই বলে আবির ক্ষেতের দিকে এগিয়ে যায়)

সাদাফ আর নাদিম বাড়িতে গিয়ে দেখে দুবোন মিলে উঠোনে বসে রোদ পুহাচ্ছে। নাদিম গিয়ে কুবরাকে টেনে টেনে নিয়ে চলে যায়।

কুবরাঃ আরে আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?

নাদিমঃ একা একা এখানে কি করছো বলোতো। চলো তোমাকে একটা জিনিস দেখাই। ( কুবরাকে নিয়ে যেতে যেতে)

শুভ্রাঃ আচ্ছা নাদিম ভাইয়া এভাবে দৌড়াদৌড়ি করে কোথায় যাচ্ছে?

সাদাফঃ জানি না। হঠাৎ করেই কেমন হম্বিতম্বি করে দৌড়ে আসলো নাকি বউ ছাড়া এমন ওয়েদার জমবে না। চলো আমরাও হেটে আসি।

শুভ্রাঃ চলুন আপনাকে ওই পেছনের পদ্ম বিল টায় নিয়ে যাই।

“আচ্ছা আপনি কি বিয়েতে স্বেচ্ছায় রাজি হয়েছেন নাকি মায়ের জোরাজুরিতে? ”

পাশাপাশি সমান দূরত্ব বজায় রেখে হাটছিলো ইলিয়ানা আর পারভেজ। সামনে মুরগি, কবুতরের খামার। তারই পাশে এক সরু রাস্তায় হাটছে দুজন। দুজনের মধ্যে বাইরের কথা সব শেষ হওয়ায় কিছুক্ষন বিরাজ করে পিনপতন নীরবতা। এরই মধ্যে ইলিয়ানা এই কথাটা বলে উঠে।

পারভেজঃ প্রশ্নটা তো আমার আপনাকে করা উচিন মিস সাবরিনা। আই থিংক এই উত্তর টা আমি সেদিন এয়ারপোর্টেও দিয়েছিলাম যে আমার মায়ের পছন্দসই মানেই আমার জন্য বেস্ট। এতে জোরাজোরির কিছুই নেই।

ইলিয়ানাঃ তাই বলে কি নিজস্ব পছন্দের মতামত নেই? এই যে দেখুন আপনি আর আমি পূর্বপরিচিত ঠিকি। কিন্তু তবু আপনার একটা ভালো লাগা না লাগার ব্যাপার তো থাকতেই পারে।

পারভেজঃ সত্যি বলতে আমি অনেক হ্যাপি। আর মানুষ হিসেবে আমার আপনার পারসোনালিটি, মেন্টালিটি সবই ভালো লাগে, আগে থেকে পরিচিত হওয়াতে আমার তো সুবিধেই হয়েছে যে আপনাকে চেনার সময়টুকু পেয়েছি। আর আপনাকে সেদিন বললাম না আপনার মতোনই কাউকে চাই। এর সুনির্দিষ্ট মানে তো আপনার খুব সহজেই বুঝে যাওয়া উচিত। মানে আমি যতোটা আপনাকে বিচক্ষন ভেবেছি। বাই দ্যা ওয়ে, আপনি কি কোনো মতে নাখুশ এই বিয়ে নিয়ে? মানে আপনার কি কেউ পছন্দের আছে? আমি তো যদ্দুর জানি বিয়ের ডিসিশিন আন্টি আংকেল নিয়েছেন। আপনারও কি সহমত আছে বিয়েতে?

ইলিয়ানাঃ এমা না না এসব কি বলছেন? সত্যি বলতে আপনার মায়ের প্রতি যে প্রেয়রিটি আমার ও সেইম। আমার আম্মু আব্বু কখনোই আমার জন্য খারাপ কিছু চয়েস করতে পারবে না এটা আমার অঘাট বিশ্বাস আছে। আর একই ভাবে তো আমিও আপনাকে চিনেছি জেনেছি। একজন ভালো জীবন সঙ্গী হিসেবে আপনি সব দিক দিয়েই পারফেক্ট। তাতে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

কথাটা বলতেই পাশ ফিরে দেখে পারভেজ এক নজরে ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। পারভেজের এই সুক্ষ্ম চাহনীতে ইলিয়ানা নিজেও যেন ভাবনার ঘোরে ডুবে যায়।

” কি করে যে বলি শুরু থেকেই আমার আপনাকে খুব পছন্দ, নিজের অতীত আর সংকুচ এর জন্য আমি বলতে পারিনি ঠিকি কিন্তু আল্লাহ যে আমার পছন্দের মানুষকেই আমার জীবন সঙ্গী হিসেবে বেছে দিবেন সেটা আমার কল্পনাতীত ছিলো ” ( পারভেজের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে ইলিয়ানা)

“ এই আছে আপনার এই হরিনী চোখের অন্তরালে ? যতো বারই দেখি ততোবারই ডুবে যাই। প্রথম দিন যখন আমি দেখেছিলাম তখন এই হরিনী দুটি চোখ আমায় ক্ষনে ক্ষনে বার বার আপনার দিকে টানছিলো। যে আমি কোনোদিন কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাই নি,, সে আমি পদে পদে আপনার প্রতি আকর্ষিত হয়েছি, পদে পদে আপনার অনুপস্থিতিতে আপনাকে মিস করেছি, । কাকতালীয় ভাবে আমাদের আবার দেখা হয়। আজ সেই জোরে কদিন পর আমার সহধর্মিণী হতে চলেছেন। একেই বলে হয়তো ডেস্টিনি। ” ( ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে পারভেজ)

” এই তুমি নাকি সারাদিন এই গাছটাতে ঝুলে ঝুলে থাকতা? ” ( কুবরাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বলে নাদিম)

কুবরাঃ হ্যা এতে হাসির কি আছে? গাছে উঠা কি হাস্যকর ব্যাপার নাকি?

নাদিমঃ না না হাস্যকর নয়। তবে আশ্চর্য লাগছে যে আমি ছেলে হয়ে কখনো গাছে উঠতে পারলাম না আর তুমি মেয়ে হয়ে সারাদিন গাছে গাছে ঘুরে বেড়াতে?

কুবরাঃ হুম। আপনি জানেন না অইসব বিল্ডিংের ছাদে উঠার চেয়ে এই প্রাকৃতিক উচু গাছে উঠার মজা কতোটা আলাদা। এই চলুন, উঠবেন গাছে?

নাদিমঃ এ… না না..। দরকার নেই চলো হাটি। একবার ছোট বেলায় আমি উঠেছিলাম, পড়ে এক্কেবারে সে কি ব্যাথা….. আমি দুইমাস ব্যাডরেস্টে ছিলাম জানো?

কুবরাঃ হা..হা.. হা.. আপনি কি ডারপুক… । কিচ্ছু হবে না। এখানকার ডাল গুলো কতো বড় বর দেখছেন না? আমরা ত পাচ ছয় জন এক সাথে বসে গাছেই আম খেতাম আগে। চলুন আমি আপনাকে হেল্প করবো।

নাদিম এতোবার মানা করা সত্ত্বেও নাছুরবান্দা কুবরা টেনে টুনে নাদিমকে তুলেই ছাড়লো। নাদিমও আর কুবরার সাথে পেরে না উঠে, মনে কোনোরকম সাহস জুগিয়ে গাছে উঠে যায়।

নাদিমঃ কুবরা আমার ভয় লাগছে চলো নেমে যাই। এখন নির্ঘাত ডাল টা ভেঙে যাবে। ( কেপে কেপে কুবরাকে শক্ত করে চেপে ধরে)

কুবরাঃ আরে মাত্রই তো উঠলাম। আর এটা ভাঙবে কি করে? দেখছেন না কতো বড় জায়গা? আর চোখ বন্ধ করলে এই সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করবেন কি করে? একব্র চোখ বুলিয়ে দেখুন!

নাদিম আগের মতো কুবরাকে শক্ত করে ধরে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে পুরো গ্রামের খালি জায়গা এখান থেকে কতোটা সুস্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে। মাঠ, ক্ষেত, বিল, মসজিদ, হাফেজ খানা সব কিছুই কতো নিখুত ভাবে উপভোগ করা যায় এখানে বসে বসে।

কুবরাঃ ওই দেখুন দেখুন আবির ভাইয়া জামাল চাচাদের সাথে ক্ষেতের মধ্যে।

নাদিমঃ আরে তাইতো এটা তো আবির ই। আর দেখো ওই লিচু গাছের নিচে পারভেজ ভাই আর ইলিয়ানা।

কুবরাঃ হুম নিশ্চিত দুজনে প্রেম করছে। আমি তো এগুলো অনেক আগেই টের পেয়েছি আফটার অল আমিও প্রেম করেছি বলে কথা! ( নাদিমকে জড়িয়ে ধরে)

নাদিমঃ হুম কচু করেছেন আপনি? প্রেমের চেয়ে বেশি রাগটাই করে কাটিয়েছেন।( কুবরার মাথায় হাত বুলিয়ে)

কুবরাঃ আর আপনি বুঝি আমায় ফেলে কতদিন অফিসের কাজ করতে মনে নেই বুঝি?

নাদিমঃ তখন কি আমি জানতাম যে, কেউ আমাকে নিয়ে এতোই মগ্ন এতোই মশগুল। আচ্ছা এটা সাদাফ আর ভাবি না?? ( হাত দিয়ে ইশারা করে)

কুবরাঃ হুম আসলে এই জায়গাটা আপ্পির খুব প্রিয়। সকাল সকাল যখন সতেজ পদ্ম শাপলায় পুরো বিল ভরে উঠে তখনই আপ্পি এই জায়গায় এসে শান্তভাবে বসে উপভোগ করে। ঠিক যেমন এখন আছে।

এভাবেই সারাদিন গ্রামীণ পরিবেশ দেখতে দেখতে আর উপভোগ করতে করতে কেটে যায়। পরের দিন সকলেউ বিয়ের কেনাকাটা করার জন্য সকাল সকাল রওনা দেয়। কোনো রকম ঝাকঝমক হীন ভাবেই বিয়ে করবে বলে স্থীর করে দুপক্ষের পরিবার। আর এতে বিশেষ ভাবে খুশি ইলিয়ানা। তার মনোবাসনা ছিলো এটাই যে তার বিয়েটা যেন মসজিদে হোক। আর সেই মোতাবেক পারভেজের মা ও এই বিষয়ে অনেক খুশি হোন।

বাকি সকলেও কেনাকাটা করতে গেলেও ইলিয়ানার বাবা মা আর পারভেজের মা যাইনি। কারণ বিয়ের আর মাত্র দুই দিন বাকি আছে। ছোটরা নিজেদের পছন্দ মতো কেনাকাটা করে সন্ধ্যের মধ্যে চলে আসে। ইলিয়ানার মা-বাবা আজকে টাউনে থাকায় ফার্মহাউজে একা হয়ে যাবে বলে শুভ্রাদের আগের বাড়ি চলে আসে। সকলে মিলে হাসিখুশিতে পার হয়ে যায় আরো একটি দিন।

?????

শুক্রবার জুমার দিন আজ। পারভেজ ইলিয়ানাদের বাড়িতে বিয়ের ধুমধাম আয়োজন শুরু হয়ে যায় ইতিমধ্যে। গ্রামের সকল পরিচিত মানুষ পারভেজদের বাড়িতে আসে। ইলিয়ানাদের গ্রামের কেউ চেনে না বলে শুধুমাত্র আত্মীয় স্বজনরাই এসেছে।

কোনো রকম গান বাজনা ছাড়াই একদম ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে জুমার নামাজের পরে মসজিদে বিয়ে পড়ানো হয়। পারভেজ শুভ্রাদের বড় উঠানে বিয়ের সকল খাবার দাবারের আয়োজন করা হয়।

পারভেজদের ড্রয়িং রুমে ইলিয়ানাকে বধুবেশে রাখা হয়। গ্রামের সকল প্রতিবেশী আর আত্মীয় স্বজনরা একে একে এসে ইলিয়ানাকে দেখে যাচ্ছে আর উপহার দিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ ইলিয়ানার সামনে অনেকে অনেক রকম কথা বলছে।

” বাবাহ বউ তো দেখি ভারি সুন্দর। পারভেজের আম্মার কপাল আছে বলতে হবে মাত্র দুই মাসের মইধ্যে এমন সুন্দর বউ পাওয়া তাও শহুরে ভাগ্যের ব্যাপার বলেন তাই না? ” ( একজন মহিলা বলেন)

তার প্রতিউত্তরে আরেকজন মহিলা বলেন–

” হ আপা ঠিকি কইছেন। আর পাবে নাই বা কেন? ছেলে আমাদের বিদেশের বড় ডাক্তার। হাজারের বাছা ছেলে। সুন্দর বউ তো পাবেই। আর শুনলাম বউ তো খুব পরহেজগার । মিনু আপার মন মতোই মিলিছে। ”

চারপাশ দিয়ে বিভিন্ন মানুষের ভ্রমরের মতো গুনগান শুনে ইলিয়ানা প্রায় মনে মনে খুব খুশি। অন্তত তার ভাবনার মতো কারো তাকে অপছন্দ হয়নি। এরই মধ্যে তারই বয়সী কয়েকজন ভাবি ননদের সাথে ভালো ভাব হয়। যারা পারভেজের কাজিন আর কাজিনের ওয়াইফ হয়।

সন্ধ্যা হতে হতে সকলে আস্তে আস্তে চলে যায়। বাড়ি প্রায় খালি খালি হয়ে উঠেছে। ইলিয়ানার মা বাবা এবং আবির এবার ফার্মহাউস থেকে বিদায় জানাতে এসেছে।

ইলিয়ানার মাঃ চলে যাচ্ছিরে মা। ভালো থাকিস, সুখে থাকিস। ( ইলিয়ানাকে জড়িয়ে ধরে)

ইলিয়ানাঃ না না আম্মু যেও না। প্লিজ থাকো আম্মু ( মাকে শক্ত করে চেপে ধরে)

ইলিয়ানার বাবাঃ ওরে বাচ্চাদের মতো কথা বলিস না। তোর ছোট দুটি বোন কে দেখ। তারাও শশুর বাড়িতে চলে গিয়ে সংসার করছে। মেয়ে যখন হয়েছিস তখন আমাদের ছেড়ে তো যেতেই হবে।

ইলিয়ানাঃ না না আব্বু এমন কথা বলো না। আমি তোমাদের খুব মিস করবো আব্বু। প্লিজ আর তো মাত্র তিন দিন বাকি আছে। এরপর কবে তোমাদের দেখা হবে জানি না। ( বাবাকে জড়িয়ে কান্না করে)

পারভেজের মাঃ হ্যা আর মাত্র তো তিন দিন। এরপর তো মেয়েটা বিদেশ চলে যাবে। তখন কি আর চাইলেও হুট করে দেখা পাওয়া যাবে?

ইলিয়ানাঃ ভাইয়া প্লিজ জাস না। তোর কথা তো আমি এখন সব অক্ষরে অক্ষরে পালন করি। আগের বেয়াদবি তো এখন করি না। প্লিজ আমায় ছেড়ে যাস না। ( আবিরকে কান্নারত অবস্থায় জড়িয়ে ধরে)

আবিরঃ ধুর পাগলি। আগে কিংবা পরে কোনো ব্যাপার না। তুই আম্র কাছে আগেও আদরের ছিলি এখনো আছিস আর ইনশাআল্লাহ থাকবি। তুই তো আমার একমাত্র বোন। খুব ভালোবাসি তোকে অনেক মিস করবো রে। ( বোনকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে)

জোরাজুরি করার পরেও অনেক বলার পরে তারা আর দুই দিন থেকে যেতে রাজি হয়। এদিকে শুভ্রা কুবরা তো পারভেজের বাসর ঘর সাজাতে ব্যস্ত। কোনো রকম কোলাহল হৈচৈ ছাড়া সুস্থ ভাবে বিয়েটা হওয়ায় মনে মনে যথেষ্ট খুশি ইলিয়ানা আর পারভেজ। আজ দুজনের মনোবাসনা নিজেদের পছন্দ মতো মিলে গিয়েছে। এক হতে পেরেছে অব্যক্ত ভালোবাসাময় দুটো মন। দুজনে মিলে স্রষ্টার কাছে হাত তোলে শুকরানা আদায় করে নতুন ভাবে একটা জীবন শুরু করতে চললো।

#চলবে।

( ইদানীং গল্প দেরীতে দেওয়া জন্য সবার কছে খুবই দুঃখীত। জানেনই সামনে আমার এসএসসি পরীক্ষা। বাসায় পড়া লেখার জন্য অনেক চাপ দিচ্ছে। যার জন্য খুবই কম মোবাইলটা হাতে পাই। আর এই মোবাইল দিয়ে আগের মতো তেমন সুবিধা করে গল্প লিখতেও পারি না। যার জন্য টাইপিং অনেক ক্ষেত্রে ভুল হয়। তবু যথাসম্ভব চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। ভুল ত্রুটি হলে ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ ??)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here