অচেনা তুমি পর্বঃ২০

0
870

#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ২০
হেসে খেলে ঢাকায় এসে শুভ্রা আর কুবরা খুব এঞ্জয় করে। সাদাফদের পরিবার হাসি খুশিতে সারাদিন ভরপুর থাকে।

নাদিম এখন তেমন সাদাফদের বাড়ি আসতে পারে না। তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বয়সের ভারে শরীরে বিভিন্ন অসুখ দেখা দিয়েছে তার। তাই এখন সবকিছু নাদিম কেই সামলাতে হচ্ছে। তবে ফাক পেলেই সে সাদাফদের বাড়ি হাজির। অবশ্য কারণ হলো কুবরা।

নাদিম এখন দিনকে দিন কুবরার প্রতি আরও দূর্বল হয়ে পেড়েছে। এখন আর অন্য মেয়েদের পিছনে লাইন মারতেও তার আর ভালো লাগে না। অফিসে থাকলে সারাক্ষণ কুবরার জন্য মন আনচান করে অথচ দেখা হলে ঠিকই আবার ঝগড়া বাধিয়ে দেয় দুজনে।

অন্যদিকে কুবরা ও তাই। আগে তো নাদিম ছিলো, ঝগড়া করে হলেও হাসি ঠাট্টা করে দিন যেতো এখন সাদাফ, আছে আর তার উডবি নি আর বড়দের কথাবার্তা তো কতো বোরিং। ইদানীং নাদিম কে সে বড্ড মিস করে। মনে মনে বার বার ভেবে রাখে ঝগড়া করবে না তবু সামান্য বিষয়ে দুজনেই চেতিয়ে উঠে।

???
সকালে সাদাফ রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য। শুভ্রা এসে সাদাফকে কফি দিয়ে পাশে দাঁড়িয়ে থাকে।

সাদাফঃ আচ্ছা আমার বউটি কবে হবে তুমি?? আমার তো এভাবে আর ভালো লাগছে না শুভি। সবসময় দূরে দূরে থাকো। আমার একদম ভালো লাগছে না। তুমি জানো না মায়াপরী তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি কতো টা তৃষ্ণার্ত( আদুরে গলায়)

শুভ্রাঃ বিয়ে করার জন্য যখন এতো তাড়া তাহলে মামনি বাবাইকে বলুন। এমনি এমনি তো আর আমি আপনাকে টাচ করতে দিতে পারি না। আগে তো সার্টিফিকেট লাগবে না??? ( নখে ফু দিয়ে)

সাদাফঃ তুমি দেখছি দিন কে দিন খুব শয়তান হয়ে যাচ্ছো। আগে তো খুব শান্ত ছিলে। ভিতু ও ছিলে। এখন তো আমায় পাত্তা ও দাও না। দাড়াও আগে বিয়ে টা হোক না।

শুভ্রাঃ হুম হোক না। তারপর না হয় আরো অনেক কিছু দেখে।

সাদাফঃ কি কি দেখাবে(শুভ্রার দিকে ঝুকে)
শুভ্রা চোখ তুলে সাদাফের দিকে তাকিয়ে দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

শুভ্রাঃ এএএএএ আমি কিন্তু ওসব কিছু মিন করে বলে নি? এভাবে কেন তাকাচ্ছেন??

সাদাফঃ আমিও তো কিছু মিন করি নি শুভি বেইবি……. আমি কি মিন করছি সেটা তুমি কি বুঝছো?? তুমি তো দেখি ভিতরে ভিতরে পাক্কা শয়তান!! তুমিও তো দেখি ইলিয়ানার মতোই শয়তান। শুধু চেপে রাখো, এই আর কি তাই না??

শুভ্রাঃ কিইইই আপনি আমাকে ওই মেয়ের সাথে তুলনা করছেন?? শুনুন মানুষ উপর থেকে যেমনটা দেখায় আসলে সেরকম তারা হয় না। সত্যি বলতে এক মানুষের রুপ এক হয় না। ভিন্ন ভিন্ন মানুষের ভিন্ন ভিন্ন রুপ থাকে। আর আমি কোনো দিক দিয়েও আপনার সো কলড “স্যাডি…….বেইবি…… ” বলা মিচকে শয়তান নই। (চেচিয়ে)

সাদাফঃ এম্মা এতে এভাবে রেগে যাওয়ার কি হলো? আর রুপ গুনের কথা আসলোই বা কোথা থেকে?

শুভ্রাঃ একদম কথা বলবো না আপনার সাথে শয়তান লোক। যান আড়ি আপনার সাথে।
এই বলে শুভ্রা রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।

সাদাফঃ এই এই শুভি। মজা করছি জাস্ট। এই যাহহহ চলে গেলা??

এরপর সাদাফ নিজে বের হয়ে গিয়ে দেখে মহারানি মুখ ফুলিয়ে টেবিলে নাস্তা দিচ্ছে। ইনিয়ে বিনিয়ে বিভিন্ন কথা বলার চেষ্টা করলেও শুভ্রা টু টি ও উত্তর দেয় না। চুপচাপ নাস্তা করে আবার গার্ডেনে চলে গেলো। এদিকে সাদাফের অফিসেও দেরি হয়ে যাচ্ছে। তবে যাই হোক শুভ্রার রাগ না ভাঙিয়ে সে যাবে না।

বাগানের চারপাশে শুভ্রা চারদিকে ফুল গাছ দেখছে। পেছনে সাদাফ সরি সরি বলে চেচিয়ে উজাড় করে দিচ্ছে। এদিকে শুভ্রা না শুনার ভান করে মতো নিজের গতিতে চলছে। এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে সাদাফ শুভ্রাকে নিজের দিকে ঘুরায়। তারপর কানে ধরে উঠবস করে।

সাদাফঃ এই আমি কান করলাম নাক ধরলাম এই দেখো উঠবস করলাম (এই বলে উঠবস করতে শুরু করলো) প্লিজ শুভি সরি, আমি বুঝতে পারি নি আসলে।

সাদাফের এমন বাচ্চামো দেখে শুভ্রার তো ইচ্ছে করছে পেট চিরে হাসতে। তবে আজ একটু তার সাদাফকে বাজিয়ে দেখতে মন চাইছে।দেখা যাক নবাবের ধৈর্য কদ্দুর! মুখে কাঠিন্যতা বজায় রেখে শুভ্রা “হুহ” বলে ভেতরে চলে গেলো।

শুভ্রা চলে যাওয়ার সাথে সাথে অসিফ থেকে কল আসায় সাদাফ আর শুভ্রার পিছু যেতে পারলো না। তারও অগত্যা ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অফিসেই চলে যেতে হলো।

অন্যদিকে কুবরা উপরে ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে সব কান্ড দেখছে আর মজা নিচ্ছে। বেচারা সাদাফের কি অবস্থাটাই না করলো তার বোন। এবাড়িতে আসার পরই সে আবার তার আগের জীবনে ফিরে এসেছে মনে হচ্ছে। বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে একেবারেই নিশ্চুপ হয়ে গিয়েছিল তার বোনটা। সাদাফ ভাইয়ার সংস্পর্শে এসে আজ সে আবার নিজের কৃত্রিম খোলস পেরিয়ে বের হতে পেরেছে ভেবেই মনটা আনন্দে ভরে উঠে তার।
দুপুরবেলা অফিস থেকে ফিরেও শুভ্রা আর সাদাফের সাথে কথা বলে নি। অনেক চেষ্টা করার পর শুভ্রা সাদাফের সাথে শুধু হু, না, হুম এই ভাবেই উত্তর দিয়েছে। সাদাফ এতো ক্ষমা চাইছে তবু শুভ্রা মুখে গম্ভীর্যতা বজায় রেখে সাদাফের সামনে সমস্ত কাজ করছে। খাওয়া দাওয়া শেষে বিকেলের
আগে সাদাফ তার মাকে কাজ আছে বলে বেরিয়ে যায়। কোথায় যাচ্ছে বলে যাই নি কাউকে৷

বিকেলের দিকে সাদাফদের বাড়িতে নাদিম আসে। এতোদিন পর নাদিম কে দেখতে পেয়ে কুবরার মনে যেন খুশির বাধ সাধছে না। তবে সেটা মনে মনে।

সাদাফের মাঃ কিরে ঢাকায় আসার পর থেকে দেখছি একদম পর হয়ে গেছিস। এই মাকে বুঝি দেখতে আসতেও ইচ্ছে করে না? জানিস তোকে আমার কত্তো মনে পড়ে। উসসস কয়েক দিনে চোখমুখের কি অবস্থা করেছিস তুই? ঘুম, খাওয়া দাওয়া কি ছেড়ে দিয়েছিস নাকি??

নাদিমঃ আরে আস্তে আস্তে শান্ত হও। রিলেক্স… তোমায় মনে পড়ছে বলেই তো ছুটি নিয়ে চলে এলাম। আর চোখমুখ দেখার কি এখন আর সময় আছে?? তোমার ছেলে তো বড় বিজনেস টাইকুন হিসেবে সারাদেশে নাম জয় করে বিয়ে শাদিই করে ফেলছে। আমি বেচারা কি বসে বসে তাকিয়ে থাকবো?? তো বিয়ে করতে হলে তো নিজের পায়ে দাড়াতে হয়। এখন যদি তোমার ছেলের মতো টাইকুন না হই অন্তত কিছু হলেও তো করে আগে ঘুরে দাড়াতে হবে? নাহলে তো কেউ আর বিয়েই করবে না। (কুবরার দিকে তাকিয়ে)

সাদাফের মাঃ উমম ছেলে আমার কতো বুঝদার হয়ে গেলো এই কদিনে। আয় ফ্রেশ হয়ে নে যা।
নাদিমঃ আগে না হয় অবুঝ ছিলাম এখন তো বুঝতে হবে। আচ্ছা বাদ দাও সাদু মিয়া কই?
সাদাফের মাঃ সে কি। জানিস না? সে তো বেরিয়েছে খাওয়ার পর। আমি তো ভাবলাম তোর সাথে বেরিয়েছে। এখন তুই জানিস না?
নাদিমঃ না তো আমি তো জানি না। মনে হয় জরুরি কাজে গিয়েছে। চলে আসবে হয়তো।
সাদাফের মাঃ তাই হবে হয়তো৷ যা আমি তোর জন্য কফি আনছি৷

তারপর নাদিম জন্য বরাদ্দ রাখা রুমে চলে যায়। সাদাফের আম্মু কফিটা বানিয়ে কুবরাকে বলে যেন সেটা নাদিমের ঘরে দিয়ে আসে।

কুবরা কফি নিয়ে যেতে যেতে নাদিম ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে আসে।
হাত মুখ ধোয়াতে মুখে বিন্দু বিন্দু পানি জমে আছে , ভ্রু জোড়া দুটি ভিজে এলোমেলো হয়ে আছে, সদ্য গোসল করায় পরনের গেঞ্জিটা সুঠাম দেহী গায়ের সাথে লেপ্টে আছে, মাথার সামনে পড়ে থাকা চুল গুলো থেকে টপটপ পানি পড়ছে। কুবরা তো নাদিমের এমন ড্যাশিং লুক দেখে থ হয়ে দাড়িয়ে এক নজরে তাকিয়ে আছে। ছেলেরাও কি এতো সুন্দর হতে পারে?
অপরদিকে নাদিম এ তাই। কতোদিন পর আজ সে তার প্রিয়তমাকে দেখছে। নিজের প্রিয় মানুষটা কাছে থাকলে তখন বুঝা যায় না যে সে তার কাছে কতটা আপন। যখন সাময়িক এর জন্য দূরে চলে যায় তখন সে তার সুপ্ত অনুভূতি টা বুঝতে পারে। নাদিমের ক্ষেত্রে ও তাই। এতোদিন কুবরার আশেপাশে থেকেও নিজের অনুভূতি ফিল করতে পারলেও বুঝতে পারে নি সেটা কি কিংবা কেন? তবে দূরে সরে যাওয়াতে নাদিম হারে হারে বুঝতে পেরেছে যে কুবরা ছাড়াই সে নিজেই অচল, এক মূহুর্ত ও যেন তাকে না দেখলে চলছে না, রন্ধ্রে রন্ধ্রে সে প্রতিটি মূহুর্তে সে কুবরাকে অনুভব করে, মিস করে। আর এটাই যে কেন হয় তা ঠিক তার নিজেরও জানা নেই। তবে এটা জানে কুবরার চেয়ে প্রিয় আর নেশাক্ত তার কাছে আর কেউ নেই৷

নাদিম আস্তে আস্তে হেটে কুবরার দিকে এগোয়। কুবরা এখনো ঠায় নাদিমের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। নাদিম এসে একেবারে কুবরার কাছে চলে আসে। এতোটাই কাছে চলে আসে যে কুবরার হাতে কফির ট্রে টা ছিলো সেটাও নাদিমের পেটের সাথে লাগে আছে। বলতে গেলে এক প্রকার বাউন্স। নাদিম মাথা ঝুকে এক নজরে কুবরার দিকে তাকিয়ে আছে। দুজন দুজনের চোখের মধ্যে যেন তৃষ্ণার্ত নেশাখোর এর মতো ডুবে আছে।
হঠাৎ নাদিমের চুল থেকে কুবরার মুখে পানি পড়ায় হুশ ফিরে এতোক্ষণে যে সে কিভাবে আছে। তারপর কুবরা নাদিম থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ায়।

নাদিমঃ কেমন আছো??

কুবরা আবারও নাদিমের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আজ প্রথম সে তাকে তুমি করে বলেছে। আর তাও আগের মতোন ও নই। কতো টা আদুরে গলায় তার কথাটা বলা। কুবরাকে চুপ থাকতে দেখে নাদিম আবার বলে উঠেঃ কি হলো আসার পর দেখি আমার দিকে একমনে শুধু চেয়ে আছো? ব্যাপার কি?? আমি জানি আমি যথেষ্ট হ্যান্ডসাম। ক্রাশ খাওয়া স্বাভাবিক। তবে শেষে কি তুমিও?? ( ভ্রু তুলে)

কুবরাঃ হেহ আমায় কোনো পাগলে পাইছে যে আমি আপনার উপর ক্রাশ খাবো?? চোখমুখের কি অবস্থা করেছেন আয়না দেখেছেন?? আর খাওয়া দাওয়া করেন না?? সারারাত তো ঘুমান না মনে হয়, শুধু মেয়েদের সাথে চ্যাটিং ই করেন। আর সারাদিন নিশ্চয় অফিসে কাজ করেন? এরকম লুকে এখন কেউ কি আর ক্রাশ খাবে?
নাদিমঃ কি করবো বলো সব তো তোমারি জন্য করতে হচ্ছে।
কুবরাঃ আইছে, শুরু হইছে ফ্লার্টইং কথা। রাখেন এই নিন কফি খান। খেয়ে দেয়ে একটু উদ্ধার করুন।
এই বলে কুবরা রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। নাদিম তো এটা সত্তিই বললো। এটা তার কাছে ফ্লার্টইং লাগলো?? আফসোসও বসে দীর্ঘশ্বাস ফেলে কফিতে চুমুক দিলো।

বিকেল বেলা সবাই একসাথে ছাদে উঠে আড্ডা দিচ্ছে। সবাই বলতে বাড়ির সবাই আছে তবে সাদাফ ছাড়া। সবাই হেসে খেলে আড্ডা মজা করলেও শুভ্রার মনটা ভিষণ খারাপ হয়ে আছে। এতো বার কল করার পরেও সাদাফ তার কল ধরছে না। বার বার কেটে দিচ্ছে। তারপর ভাবছে হয়তো জরুরি কাজে আছে নিশ্চয় তাই ভেবে বারবার নিজেকে শান্তনা দিচ্ছে৷ এদিকে নাদিম আর কুবরা তো আবার ঝগড়া লাগিয়ে ফেলেছে। সামান্য খুটিনাটি বিষয়ে তারা কথা-কাটাকাটি করে বসে থাকে।

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেলো অথচ সাদাফের আসার নাম গন্ধ নেই। শুভ্রারা আসার পর থেকে সাদাফ সচরাচর দুপুরেই বাড়ি ফিরে তবে আজ প্রথম সে আজ প্রথম এতোক্ষন বাড়িতে নেই। আর নাদিম ও তো এখানে। নাদিমের সাথে বাইরে থাকলে এক কথা ছিলো।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হতে চললো তবু সাদাফের কোন খবর নেই। এদিকে শুভ্রা টেনশনে হাসফাস করছে। এখন তো শুভ্রার নিজের চুল নিজেরই ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কে বলেছে এতো পাকামি করে বাজিয়ে দেখতে। এখন তো নিজেই বাজছে ভালো করে।
রাত ১১ টা হয়ে গেলো তবুও এখনো সাদাফ বাড়ি ফিরে নি। টেনশনে শুভ্রার প্রেশার বেড়ে যাওয়ার অবস্থা। এদিকে এসব কাউকে দেখাতেও পারছে না। নাদিম কে বলেছিল একবার ফোন করতে কিন্তু নাদিম বলছে সে নাকি ফোন ধরছে না।

#চলবে।

(লেট হওয়ার জন্য খুবই দুঃখিত। তবে যথারীতি বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ভুল ক্রুটি হলে মাফ করে দিবেন, আজ রি চেইক করার সময় পাই নি) ।

ধন্যবাদ ???।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here