#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ১৯
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার পর সকলে রেডি হয়ে নিলো। উদ্দেশ্য এয়ারপোর্ট। কুবরা তো খুশিতে নাচছে, লাফাচ্ছে। জিবনে প্রথম আজ সে প্লেনে চড়বে। আজ প্রথম কক্সবাজারের বাইরে ঢাকা যাবে। বইতে, ফেসবুকে, খবরে ঢাকার কতো সুনাম শুনেছে আজ তা সে নিজের চোখে দেখতে পারবে। শুভ্রা ও মনে মনে খুব খুশি তবে সে কুবরার মতো নাচানাচি করছে না।
সাদাফঃ কই হলো তোমাদের? এর পর তাও দেরি হয়ে যাবে।
কুবরাঃভায়া যান আমি এই ব্যাগটা নিয়ে আসছি।
তারপর সবাই একে একে বের হয়ে গেলো।
কুবরাঃ উফফ এই ব্যাগটাও না। এতো ভারি কি করে হয়ে গেলো। আল্লাহ আমার কোমড় তা তো গেলো।
নাদিমঃ এই দিকে দাও আমি হেল্প করছি।
কুবরা একবার নাদিমের দিকে তাকালো। তারপর ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আবার টানাটানি শুরু করলো।
কুবরার এই অবহেলা কাল থেকেই নাদিমকে খুব জ্বালাচ্ছে। কেমন জানি অস্বস্তি হচ্ছে তার। আগে তো হেসে খেলে মজা করতো তখন তো খুবই ভালো লাগতো তার।
নাদিম আর কিচ্ছু না বলে কুবরার কাছ থেকে ব্যাগ কেড়ে নিয়ে নিজে চলে যেতে লাগলো।
কুবরাঃ যাব্বাবাহ আমি কি বলেছি নাকি আমার ব্যাগ নিতে। এই আমার ব্যাগ দিন।
ততক্ষণে নাদিম ব্যাগ প্যাক নিয়ে গাড়িতে উঠে হাজির। গাড়িতে গিয়ে ও কুবরার জায়গা হলো নাদিমের পাশে। অগত্যা তাকে গিয়ে নাদিমের পাশে বসতে হলো।
এয়ারপোর্টে পৌঁছে প্লেনে উঠে শুভ্রা, কুবরা দুজনেই জানালার পাশে বসে নিচের ছোট্ট ছোট্ট দুনিয়া দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে।
দীর্ঘ দুই ঘন্টা পর তারা তাদের ঢাকার বাড়িতে এসে পৌছায়। সাদাফদের বাড়ি ডুপ্লেক্স। দুতলা অর্ধেক গ্লাস দিয়ে সাজানো। কুবরা তো বাড়িতে ঢুকেই আরেকদফা অবাক।
কুবরাঃ ওয়াও বাবাই!! তোমাদের এই বাড়িটা তো ওবাড়ির চেয়েও সুন্দর।
সাদাফের বাবাঃ তোর পছন্দ হয়েছে??
কুবরাঃ হুম খুব পছন্দ হয়েছে( একুরিয়ামে মাছ দেখে দেখে)
সাদাফের বাবাঃ এই জন্যই তো তোকে এখানে রেখে দিবো।
কুবরাঃ ওয়াও সত্যিইইইইইইই ( সাদাফের বাবাকে জড়িয়ে ধরে) ।
সাদাফের বাবাঃ হুম রে সত্যি।
সাদাফঃ এখানে আর কি দেখেছ? আজ সকলে মিলে হাতিঝিলে যাবো। দেখবে জায়গাটা কতো সুন্দর।
কুবরাঃ ওয়াও ভাইয়া!! ওখানে খুব সুন্দর সুন্দর হাতি আছে তাই না?
কুবরার কথা শুনে সাদাফ আর সাদাফের বাবা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। তাদের হাসি দেখে কুবরা ঠোঁট উলটিয়ে বলেঃ কি হলো? এভাবে হাসছো কেন তোমরা?
সাদাফঃ আরে কিছু না। ওখানে গিয়ে দেখিওভ। ওখানে লাল, নীল, বিভিন্ন কালারের হাতি দেখা যায়।
কুবরাঃ উমমম তোমরা আমাকে নিয়ে মজা করছো ( মুখ ফুলিয়ে)
সাদাফঃ আরে না না পাগলি। গিয়ে দেখবা তো।
আসার র থেকে বড়রা বড়দের সাথে, সাদাফ আর শুভ্রাও এক সাথে সময় কাটাচ্ছে। ভেবেছিলো ঢাকা এসে কুবরা খুব মজা করবে। কিন্তু এখানে এসেই তার শুধু বিরক্ত লাগছে। কেমন যেন একা একা লাগছে নিজেকে। এই মূহুর্তে নাদিমকে বড্ড মনে পড়ছে কুবরার। একদম ভালো লাগছে না একা একা। কেন জানি মনে হচ্ছে নাদিম থাকলে খুব ভালো হতো।
একা একা দাঁড়িয়ে এসব চিন্তা করতে করতে পেছন দিয়ে সাদাফ ডেকে উঠে।
সাদাফঃ কি গো বইনা কম শালি। মনে হচ্ছে মুড খারাপ। (ভ্রু তোলে)
কুবরাঃ তো খারাপ হবে না। যে তো যার যার মতো আছে। আমার খবর কি কেউ রাখে? আজ আমার কেউ নেই বলে পাত্তা দেয় না আর কি।
শুভ্রা ঃ হুম বুঝি বুঝি দাড়া আমি আম্মুকে বলে তোর ও বিয়ের ব্যবস্থা করে দিতে বলবো। আমি না বুঝলে আর কে বুঝবে (হায় তুলে ??)
কুবরাঃ এএএএই আমি একদম এটা মিন করে বলি নি আপুনি!!!!!
সাদাফঃ হুমমম বুঝেছি নাদিম কে মিস করছো তাই না????? ( ঠোঁট টিপে হেসে)
কুবরাঃ এএএএহ আমারে কোন বাগারে পাইছে হ্যা আপনার ওই পচা বাদাম বন্ধুকে মিস করবো। বয়েই গেলো আমার উনাকে মিস করার।
সাদাফঃ আসলে ঢাকা ব্যাক করার পর পর ই ওর বাড়িতে কাজ এসে যায়। তাই আংকেল ডেকে নিয়ে গেলো। ফোন দিয়েছিলাম। বললো বিজি আছে নাকি৷ আজ আর দেখা হবে না।
কুবরাঃ তো,,,,,, আবার আমাকে বলছেন কেন এসব? আমি কি জানতে চেয়েছি?? একদম যেভাবে বলছেন আমি যেন জানার জন্য উৎসুক হয়ে পড়েছি।
সাদাফঃ হুম আসলে নয়া নয়া প্রেম করছি তো। প্রেনে পড়লে কার কি কি হয় তা একটু একটু বুঝছি (শুভ্রার দিকে চোখ টিপ দিয়ে)
কুবরাঃ যান তো এবার দুজনে প্রেম করে আমায় উদ্ধার করুন। আমার পেছনে আর আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট কইরেন না।
এই বলে ঠেলে তাদের কে গার্ডেনের দিকে পাঠিয়ে দিলো কুবরা। উপর দিয়ে হাসিখুশি দেখালেও মনে মনে খুব মনে খারাপ হচ্ছে তার। আচ্ছা একটু না হয় রাগ ই তো করেছে সে। আরেকবার না হয় সরি বলতো। অবশ্য আর বলবেই বা কেন? চেহারা দেখেই বুঝা যায় প্লে বয় টাইপ। ঢাকায় কি স্টাইল, মডার্ন মেয়ের অভাব আছে নাকি? ঢাকায়া তো সবাই এমনই হয় নাকি। যাকগে যাক হ্যা আমার কি? আমি কেন এসব চিন্তা করছি।
বিকেলে শুভ্রা,কুবরা, সাদাফ রেডি হয়ে নিয় হাতিরঝিল দেখতে যাওয়ার জন্য।
জায়গাটা রাতেই বেশ জমজমাট হয়ে উঠে। আর দেখতেও তখন খুব মনোমুগ্ধকর লাগে।
হাতিরঝিল পোছেই শুভ্রা আর কুবরা খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কক্সবাজার আর ঢাকার রাস্তাঘাটের কতো তফাত। কতো সুন্দর নিয়ম মাফিক চলে এখানে সবকিছু।
সাদাফ আর শুভ্রা এক সাথে হাটছে। পেছনে কুবরা ও হাটছে আর এদিম ওদিক দেখছে। এক পর্যায়ে গিয়ে সাদাফ আর শুভ্রা কুবরার চোখের অগুচরে চলে যায়। এদিক ওদিক তাকিয়ে ও তাদের খুজে পাচ্ছে না সে। যতটুকু রাস্তা এসেছে, সামনে এগিয়েও তাদের দেখতে পাচ্ছে না। তার কাছে একটা ফোন ও নেই যে কল করে জিজ্ঞেস করবে। এতোলোকের ভিড়ে এতো বড়ো শহরে সে কি হারিয়ে গেলো। খুজতে খুজতে ভয়ে কুবরার চোখ লাল হয়ে পানি চলে এলো। এক জায়গায় ঠায় হাত দুটো মুঠো করে দাঁড়িয়ে আছে। এতোগুলো মানুষের সামনে কান্না করাটাও রীতিমতো লজ্জার বিষয়। কিছু ছেলে তো তার দিকে কিভাবে তাকিয়ে আছে। আর কিছু লোক তো কুবরার চোখের জল দেখে হাসছে। হঠাৎ পেছন থেকে কারো ডাক এলো।
মিস কুইন কুবরা আপনি কান্নাও করতে পারেন???
চেনা কন্ঠ কানে ভেসে আসতেই কুবরা পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে নাদিম মিটি মিটি হাসছে।
কুবরার মাথায় আর কিছু চলছে না। পা দুটো অবশ হয়ে আসছে তার। বাড়ি ফিরতে পারবে, পরিচিত কাউকে পেয়েছে এটা ভেবে দৌড়ে গিয়ে নাদিমকে জড়িয়ে ধরে অঝোর ধারায় কাদতে থাকে।
কুবরার এহেন কাজে নাদিম নিজেই ভেবাচেকা খেয়ে যায়। ভেবেছিলো এটা বলায় ঝগড়া করতে তেড়ে আসবে। তার বদলে জড়িয়ে ধরলো?
তবে কুবরার জড়িয়ে ধরায় তার বুকে এতো প্রশান্তি কেন কাজ করছে? এর আগেও তো সে অনেক মেয়ের সাথে হাগ করেছে। তাহলে কুবরার ক্ষেত্রে তার কিসের এতো ভালো লাগা।
ওই মূহুর্তে কুবরাকে তন্য তন্য করে খুজতে খুজতে সাদাফ আর শুভ্রা হাপিয়ে হাপিয়ে তাদের দিকে এগিয়ে আসে। কুবরা আর নাদিমকে দেখে শুভ্রাতো অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। সাদাফ কুবরাকে মজা করে নাদিমের কথা বললেই সে ভেবেছিলো তাদের মধ্যে তেমন কিছু এখনো হয় নি। কিন্তু এখন এই অবস্থাতে দেখে দুজনেই টাস্কি খেয়ে যায়।
সাদাফঃওওও তুমি মিয়া এখানে রোমাঞ্চ করছো আমাদের এখানে টেনশনে ফেলে। জানো কতো খুজা খুজেছি তোমায়? আমাদের প্ল্যান ভেস্তে দিয়ে নিজেরা যতোদূর গড়িয়ে গেলে। আর নাদিম!!!!!
নাদিমঃ দোস্ত বিশ্বাস কর আমি কিচ্ছু করি নি। সব তোর বোন করেছে। আমি তো তোদের সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। এসে দেখি ম্যাডাম দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাদছেন।
কুবরাঃ এই একদম নিজেদের সাফাই গাইবা না ভাইয়া। জানো আমি কতো ভয় পেয়েছিলাম। এতো বড় জায়গায় আমি আজ হারিয়ে গেলে কি হতো? আমার তো একটা মোবাইল ও নেই আর নাম্বার ও জানা নেই কারো কাছ থেকে জিজ্ঞেস করবো। কান্না আসবে না বলো?? তোমারা তো একে অপরকে পেলে আর অন্য দুনিয়ার খেয়াল থাকে না।
সাদাফঃ আচ্ছা আচ্ছা সরি। আসলে তখন শুভ্রা হাওয়াই মিঠাই খেতে চেয়েছিলো তাই আমি ওইদিকেই গিয়েছিলাম। এসে দেখি তুমি নেই। তারপর এদিকে এসে দেখি এই সিন। বাই দ্যা ওয়ে এই ছেলে কিন্তু খুব সাংঘাতিক। দূরে দূরে থাকবা, সুবিধার নয় কিন্তু ( নাদিমের দিকে চোখ টিপ দিয়ে)
কুবরাঃ তা তো আমি প্রথম দিন দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম। ওতো সহজে আমাকে কাবু করা সহজ নই ( ভাব নিয়ে)
নাদিমঃ এহহহ বাংলাদেশে মেয়েদের সংখ্যা কম পরেছে যে আমি তোমার পেছনে লাগতে যাবো।
কুবরাঃ এহহ যান যান তো।
নাদিমঃ এখন তো নিজেই খুজে জান জান বলছো।
কুবরাঃ এএএএ আমি মোটেও সেটা মিন করে বলিনি।
নাদিমঃ হুম জানি জানি মনে মনে তুমি আমার উপর লাট্টু। এসবের উপর আমি পিএইচডি করে এসেছি জানো??
কুবরাঃ আপনাকে তো আমিইইইই
এই বলে কুবরা দিলো দৌড় নাদিমের পেছনে। এদিকে সাদাফ আর শুভ্রা এদের কান্ড দেখছে আর হাসছে।
এভাবে হেসে খেলে মজা করে তারা তাদের ঢাকায় প্রথম দিন হৈ হৈ করে কাটিয়ে গেলো।
#চলবে।
( আচ্ছা আপনাদের কি গল্প পড়তে ভালো লাগছে?? আমার তো আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। সামনে আমার পরিক্ষা। হয়তো প্রতিদিন গল্প না দিতেও পারি)