#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ১৩
সাদাফঃ মিস শুভ্রা খাওয়া শেষে রেডি হয়ে নিন আমরা থানায় যাবো।
সাদাফের এহেন কথায় উপস্থিত সবার টনক নড়ে উঠলো।
সাদাফঃ এভাবে তাকিয়ে আছো কেম তোমরা? আপনাকে শুভ্রা কিছু বলে নি? ( শুভ্রার মায়ের দিকে তাকিয়ে)
শুভ্রার মাঃ কিছু মানে বাবা??
সাদাফঃ আপনারা হয়তো খেয়াল করেন নি যে শুভ্রার গায়ের সেসব মার এর দাগ। আমার সাথে উনার যতোবারই দেখা সাক্ষাত হয়েছে আমি ততোবারই উনার গালে আর হাতে স্পষ্ট হাতের ছাপ দেখা গিয়েছে। এসব তো রীতিমতো শারীরিক নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। তার বাদে কাল এমন ঝড়ের রাতে এভাবে কেউ বাড়ি থেকে বের করে দেয়? কাল যদি আপনার কিছু হয়ে যেতো, যদি আমিই না যেতাম তবে কি হতো ভেবে দেখেছেন। আর সোহেলের ব্যাপারে যা শুনলাম আমি আর চুপ থাকতে পারছি না। খাওয়া এক্ষুনি চলুন থানায় নারী নির্যাতনের রিপোর্ট করবো।
ছেলের এতো কানসার্ন সাদাফের মা কে খুব খুব খুবই ভাবাচ্ছে। এ আসলে তার কোন ছেলেকে দেখছে তাকে? দুদিনের পরিচয়ে শুভ্রার প্রতি তার এতো কিসের টান। তবে কি তিনি মনে মনে যা আউড়েছিলেন তাই কি সত্ত্যি?
সাদাফের বাবাঃ হ্যা। সাদাফ ঠিকই বলছে। নাজু , আমি কিন্তু ওই মহিলা আর ছেলেকে স্পেয়ার করবো না। আমাদের মেয়ের উপর হাত তোলা! ওরা জানে না আমাদের দাপট কতোটা।
শুভ্রাঃ আংকে… ইয়ে মানে বা..বাবাই।
শুভ্রার কথায় সাদাফের বাবা হু হা করে হেসে উঠলেন। কাল থেকেই শুভ্রা এভাবে ইতস্তত বোধ করছে সাদাফের আম্মু আব্বু কে বাবাই আর মামুনি ডাকতে। আর কুবরা তো প্রথমবারেই ডেকে ফেলেছে।
শুভ্রাঃ না মানে বলছিলাম কি, থাক না শুধু শুধু এসব ঝামেলা করে কি লাভ?
সাদাফঃ এসব কি বলছেন আপনি? ওরা আপনার সাথে কি কি করেছে ভুলে গিয়েছেন আপনি?
শুভ্রাঃ ওরা আমাকে আশ্রয় আর কাজ মজিন বেতন ও দিতো। আমাদের বিপদের সময় আংকেল এগিয়ে এসেছে বলে আমি এতোটুকু টেনে আনতে পেরেছি। ওরা যা করেছে তার জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। হ্যা সোহেল ভায়া আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করছে মানছি তবে এটা নিয়ে পরে আংকেলের মনেও রেষারেষি শুরু হয়ে যাবে। তার বদল থাক।
সাদাফঃ তাই বলে কি…..
শুভ্রার মাঃ হ্যা বাবা। আমারও তাইই মনে হয়। উনারা আমাদের বিপদের সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলে৷ আজ ওনারা শুভ্রাকে বের করে না দিলে আমি কি আমার পরিবার কে আবার ফিরে পেতাম? সবই আল্লাহর হুকুম। তুমি ওসব করতে যেও না বাবা। থাক।
সাদাফের বাবাঃ ঠিকই বলেছিস। এটা একটা প্লাস পয়েন্ট। তবে তোরা যখন চাইছিস না তখন কি আর করার।
সাদাফ চুপচাপ তাদের কথা হজম করে নিলেও সে মনে মনে ঠিকি করে নেয় সোহেলের একটা না একটা ব্যবস্থা সে করবেই। খাওয়া শেষে যে যার কাজে চলে যায়। সাদাফ চলে যায় অফিসে। বড়রা আবার গল্প করতে বসে গেলো। শুভ্রা টিভি দেখছে। আর কুবরা বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।
কুবরাঃ ওয়াও কি সুন্দর বাড়ি। একদম টিভিতে যেরকম দেখি সেরকম। ইসসস আমি যদি এখানে সারাজীবন থেকে যেতে পারতাম (তালি দিয়ে লাফিয়ে উঠে)
হাটতে হাটতে কুবরা বেলকনিতে চলে আসে। বেলকনিতে দাড়ালে সেখান থেকে সমুদ্রটা অর্ধেক দেখা যায়। পুরোপুরি সুন্দর করে ভালোমতো দেখা যায় না। তাই সে রেলিঙের উপর পা দিয়ে আরেকটু উচু হয়ে দেখতে যায়। এক তাক এ দাঁড়ানোর পর আরেক তাকে দাঁড়ায়। রেলিঙগুলো অর্ধেক করেই দেওয়া যাতে ভালো করে সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে তাই। তবে আমাদের চাঞ্চল্য কুবরার আরো উপরে উঠে উপভোগ করার শখ। কোনো মতে নিজের উপর ব্যালেন্স করে দাঁড়ায় সে।
কুবরাঃ ওয়াওওওওওও কি সুন্দর দেখাচ্ছে!!!! সেই কবে আব্বু যখন ছিলো তখন বিছে এসেছিলাম। ৩ বছরের এতোকিছু বদলে গেছেএএএএএএএএ আয়ায়ায়ায়ায়া……
কুবরা উকি ঝুকি দিচ্ছিলো তখনই সে সামনের দিকে ঝুকে পড়ে যাচ্ছিলো প্রায়। কিন্তু আর পড়লো কই?
কুবরাঃ ইয়া আল্লাহ,,,,,, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবাহানাকা ইন্নি কুনতুম মিনাজ্জালিমিন। আল্লাহ আল্লাহ বাচাওওওওও। (চোখ খিচে বন্ধ করে)
নাদিমঃ আজ্ঞে হ্যা। মুসিবতে পড়ে আল্লাহকে ডেকেছেন আর আল্লাহ সাহায্য করার জন্য সেই আমাকেই পাঠালেন।
কুবরা এবার চোখ খুলে দেখে সে নাদিমের কোলে পড়ে আছে।
নাদিম এতোক্ষন সুযোগ খুজছিলো কুবরার সাথে একটু লাইন মারার জন্য। যেই কুবরা বেলকনিতে এএসেছিল নাদিম তো পেলো সুবর্ণ সুযোগ। কিন্তু এসে দেখে এই অবস্থা। কুবরা ঠাল সামলানোর আগেই নাদিম দৌড়ে এসে তাকে ধরে ফেলে।
এদিকে কুবরা তো নাদিমের দিকে তাকিয়েই আছে তখন থেকে। ব্রাউন দুটো ঘায়েলি করা চোখ নিয়ে তাকিয়ে যেন সে কুবরাকে যাদু করে নিচ্ছে। তার উপির লালছে ফরসা মুখে খুচা খুচা দাড়ি আর স্পাইক চুল পুরাই সিনেমার হিরো। অন্যদিকে নাদিম ও তাই । বেবিহাতা ফ্রক পড়ে, কপালের উপর ছোট ছোট চুল গুলো এসে হালকা বাতাসে মৃদু উড়ছে। চোখ দুটো খিছে বন্ধ করে গোলাপি ঠোঁট দুটো কাপছে। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়েই আছে।
এদিকে কুবরার চিৎকার শুনে বাড়ির সবাই দৌড়ে এসে দেখে এই দৃশ্য। শুভ্রা সবার আগে আসায় এহেম এহেম বলে গলা ঝাকিয়ে তাদের হুশে ফেরায়। নাদিম তারপর কুবরাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।
নাদিমঃ দেখে চলাফেরা করবেন তো। এক্ষুনি কি অঘটন টা হয়ে যেতে পারতো। সাগর দেখতে ইচ্ছে করলে ছাদে চলুন। ওখান থেকে সুন্দর করেই ছাদ দেখা যায়। এখানে রেলিঙের উপর দাঁড়িয়ে দেখার মানে কি? আজ আমি না ধরতাম তো কি হতো কোনো আইডিয়া আছে? ৫ তলা থেকে তো সোজা উপরে উঠে যেতেন
শুভ্রার মাঃ কিইইইইইই। এত্তোবড় মেয়ে হয়েছিস আর এখনো বাদড়ামি করছিস? গ্রামে গাছে চড়ে শান্তি পাশ না এখন এখানে এসেও শুরু করেছিস? ওরে এটা কি সুপারি গাছ নাকি যে পড়লে শুধু কোমড় টাই ভাংবে? বলি লজ্জাশরম কি তোর আর কখনোই হবে না? যেখানে যাবি সেখানেই বাদড়ামো শুরু করে দিয়ে। আজ কি হয়ে যেতো বলতো? ( পিঠে একটা ঠাস করে লাগিয়ে দিয়ে)
নাদিম তো এই দৃশ্য দেখে পারছে ন যে সেখানে পেট ফাটিয়ে হাসতে তবু কোনো ঠোঁট টিপে হেসেই কোনো মতে নিজেকে কন্ট্রোল করছে সে।
নাদিমকে হাসতে দেখে গাল গুলিয়ে কুবরা বলেঃ তুমি একদম আমাকে যেখানে সেখানে সবার সামনে শুধু লজ্জা দাও। আমি বাদড়ামির কি করলাম। আর এই মি.বাদাম নাকি গোদাম!!! উনি না আসলেও আমি ঠিকই নিজেকে কন্ট্রোল করে নিঞ্জার মতো বেচে যেতাম। হুহহহ আমাকে শুধু শরম দেওয়া ছাড়া তোমার আর কোনো কাজেই নেই। ( এই বলে গাল ফুলিয়ে সে রুমের দরজা বন্ধ করে ঘরে বসে রইলো)
সাদাফের বাবাঃ কি রে নাজু। বাচ্চা মেয়ে। তাই বলে এভাবে বলবি? আমাদের সাথে কতোটাই বা ফ্রি হয়েছে সে। বেচারি খুব লজ্জা পেয়েছে।
শুভ্রার মাঃ আর বলো না। তোমার বন্ধু ওকে এভাবে আশকারা দিয়ে বাদর বানিয়েছে। এতোবড় হয়ে গেলো এখনো মানুষ করতে পারিনি আমি।
সাদাফের মা হেসে হেসে বললেনঃ হবে হবে সময়ের সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। এই বলে তারা আবার নিজেদের আড্ডায় মশগুল হলেন।
এদিকে নাদিম তো পুরাই বোকাবনে গিয়ে থ হয়ে দাড়িয়ে আছে। ২৫ বছরের জিবনে তাকে কেউ বাদাম আর গোদাম বলে ডাকেনি। বিশেষ করে মেয়েদের কথা তো অনেক দূরে। সাদাফ ও হয়তো ওখনো নাদিম্মা ছাড়া কিছু বলে নি। আর এই মেয়ে কি বলে গেলো আমাকে।
শুভ্রা নাদিমকে দেখে ভালো করেই বুঝতে পারছে কুবরার কথায় সে বেশ অবাক। কারন হলো সে হা করে কুবরার দরজা পানে তাকিয়ে আছে।
শুভ্রাঃ ভাইয়া কিছু মনে করবেন না। বয়সে আমার চেয়ে ১ বছরের ছোট হলে কি হবে খুব ছেলে মানুষ। কিছু না বুঝে শুনেই হুটহাট কথা বলে ফেলে। এসব পাগলামো মাথায় ঢুকাবেন না।
এদিকে অফিসে???
সাদাফঃ মি.সোহেল আপনি কতোদিন হলো জয়েন করেছেন?
সোহেলঃ এই তো স্যার এক সপ্তাহ হবে।
সাদফঃ এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই নিজের আসল রুপ দেখিয়ে দেওয়া শুরু করলেন? গুড আই লাইক ইট। যতোদ্রুত সম্ভব আমার সামনে সবার নিজের রুপ টা সামনে চলে আসাই ভালো।
সাদাফের কথা শুনে সোহেলের রীতিমতো ঘাম ছূড়তে শুরু করেছে। তাহলে কি ওরা সব বলে দিয়েছে।
সাদাফঃ কি ভাবছেন মি.সোহেল? আমি জানলাম কি করে? বস হিসেবে তো আমারও উচিত এম্পলয় দের উপর নজর রাখা। আপনি মনে ভুলে গিয়েছেন মি.সোহেল আমার সম্পূর্ণ অফিস সি সি ক্যামেরা দ্বারা ঘিরে রাখা। সেখানে আপনার সাহস কি করে হয় আমার অফিসে বসে আমারই অফিসের ফিমেইল এম্পলয় দের সাথে অসভ্যতা করা?? দু দিনেই এসে পাখা গজিয়ে গিয়েছে। অফিসের বাইরে আপনি কাকে বাড়ি নিয়ে গিয়ে অসভ্যতামো করছেন আর বাড়ির অসহায় মানুষের উপর সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন এটা মেইন বিষয় নয়। মেইন হলো অফিস কাস্টাডিতে বসে আপনি কি করে এসব করছেন।
সাদাফের কথায় সোহেল বেশ ভালো করেই বুঝছে যে তাকে এসব শুভ্রাই বলেছে। আর এও বুঝতে পারছে যে শুভ্রা এখন সাদাফের কাছেই আছে। কিন্তু এসব বাদ দিয়ে এখন ভাবতে হবে কি করে এখন বাচা যায়।
সোহেলঃ স্যার আম সো সরি। স্যার আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আর হবে না স্যার।
সাদাফঃ আপনি জানেন আমি আপনার বিরুদ্ধে পুলিশে কম্পলেইন করতে পারি? আপনার কিন্তু নারী নির্যাতন আর ইভটিজিং এর জন্য জেল ও হতে পারে (এক ভ্রু তুলে কিঞ্চিৎ ভিলেন টাইপ করে বলে )।
সোহেলঃ না না স্যার এরকম করবেন না।
সাদাফ দৌড়ে এসে সটান সোহেলের কলার ঝাকি দিয়ে টেনে ধরে বলেঃ শয়রের বাচ্চা তোর সাহস হয় কি করে ফুলের মতো মেয়েদের গায়ে হাত তোলার? তোর মা ও তো মেয়ে। শুনেছি তোর নাকি বোন ও আছে। তোর মা বোনের গায়ে ও হাত দেওয়ার জন্য লোক পাঠাই কি বল?? হারামজাদা এক্ষুনি বের হয়ে যাবি আমার অফিস থেকে। আর কক্ষনো এখানে পা ও মাড়াবি না। শালা দুটাকার কাজের লোক।
শুভ্রাকে বলা সোহেলের সেসব কথায় সাদাফ আবার সোহেলকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। এসব কথা শুনে সোহেলের রী রী করে গা জ্বলছে।
সাদাফঃ খুব গায়ে লাগছে না?? তো কি করে সাহস পাশ তুই শুভ্রা কে এসব কথা বলার? তুই জানিস শুভ্রার যে যে প্রপার্টি আছে তা নিয়ে তোর ফেমেলি আর তোর ওই গোটা বাড়ি দশ বার কিনতে পারবে?
কারো পরিস্থিতির সুযোগ তো তোর মতো কাপুরষরাই নেয় তা আজ দেখে নিলাম। মি.সোহেল ইউ আর ডিসমিস ফ্রম দিস অফিস। নাও গেট আওট ফ্রম হেয়ার। গো…. ( বলেই হুংকার দিয়ে উঠল)
সোহেল চলে যাওয়ার পর উফফফফ বলে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলল সাদাফ।
#চলবে