অপরিচিত পর্বঃ০১

0
2913

তোকে বিয়ে করতে চেয়েছিলাম কারণ তোর বাপের বিদেশি টাকা ছিলো তাই। এখন তো তোর বাপের সাথে সাথে বিদেশি টাকাও গোল্লায় গেছে। রয়ে গিয়েছিস মুটকি তুই আর তোর সৎমা। তোদের ঘাড়ে নিয়ে বিপদে পড়বো নাকি আমি….. এই কথাগুলো আজও কানে বাজে।

এই মস্ত বড় পৃথিবীটাতে কোটি কোটি মানুষ আছে। যারা একেক জন একেক রকম দেখতে, বিভিন্ন চরিত্রের, বিভিন্ন পেশার। তবে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনে একটা না বলা গল্প আছে। সবার গল্পই ভিন্ন ভিন্ন আবার কখনো কখনো কারো গল্পের সাথে কারো গল্প কাল্পনিকভাবে মিলে যায়। আমি জানি না আমার গল্পটা কারো সাথে মিলবে কিনা, তবে আমি চাই না আমার গল্পটা কারো সাথে মিলে যাক। আমার জীবনের গল্পটা শুরু হয়েছিলো আমার বয়স যখন ১৫ বছর ঠিক তখন। সবার গল্প হয় হঠাৎ অপরিচিত কারো সাথে পরিচিত হওয়ার গল্প তবে আমার গল্পটা ঠিক তার উল্টো। খুব পরিচিত একজন মানুষ এক পলকে অপরিচিত হয়ে যাওয়ার গল্প। আমার বয়স যখন ১৫ বছর আমি তখন কারো প্রেমে অন্ধ, তাকে না দেখলে মনে হয় দমটা এখনই আঁটকে মারা যাবো আবার তাকে দেখলে সে যখন আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে তখনও মনে হয়ে মরেই যাবো। কী এক অসুখ হলো আমার ? যার কোনো ঔষধও নেই…

আরফা তাড়াতাড়ি কর স্কুলের দেড়ি হয়ে যাবে তোর, তাড়াতাড়ি উঠ মা।

মায়ের ডাকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো আরফা। পুরো নাম আরফা ইসলাম, বাবা-মায়ের আদরের দুলালি। নতুন নতুন দশম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে। সামনে এসএসসি পরিক্ষা কিন্তু মহারানী প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে । দুধে আলতা গায়ের রং, টানাটানা চোখ, চিকন নাক আর লাল ঠোঁট। স্বাস্থ্য ভালো হওয়ায় দেখতে গুলুমুলু।

আরফার মা মিসেস তাইয়েবা বেগম মেয়ের রুমে ঢুকে বিছানা তুলতে তুলতে বললো, তাড়াতাড়ি উঠ আজ মিমি তোকে রেখেই চলে যাবে দেখিস।

আরফা বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে বললো, বাবা ফোন করেছিলো গতকাল ?

তাইয়েবা বেগম নিজের কাজ করতে করতে উত্তর দিলো, হ্যাঁ করেছিলো তুই ঘুমিয়ে পড়েছিলিস তাই আর ডাকতে দেয়নি।

আরফা ঘুরে এসে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে বললো, কবে আসছে বাবা কিছু বলেছে ?

তাইয়েবা বেগম এবার মেয়ের দিকে ঘুরে বললো, এটা কী অভ্যাস তোর বলতো আরফা ? তোর বাবা ছুটি থেকে গেছে পাঁচমাস হয়নি এখনো তবু প্রতিদিন জিজ্ঞেস করবি কবে আসবে কবে আসবে ? এমন করলে তার কী মন টিকবে সেখানে ? তুই তো জানিস তোর বাবা তোকে ঠিক কতটা ভালোবাসে।

আরফা মায়ের গলা ছেড়ে মুখ গুমরা করে বললো, কী করবো বাবাকে খুব মিস করি আমি ?

তাইয়েবা বেগম আরফাকে মন খারাপ করতে দেখে মেয়ের গালে হাত রেখে বললেন, মন খারাপ করিস না তোর সামনের জন্মদিনে ঠিক আসবে।

আরফা একই ভঙ্গিতে বললো, আমার জন্মদিন গেছে পাচঁমাসও হয়নি তাহলে আসতে আরো সাতমাস পেরিয়ে যাবে।

আরফা তুই কিন্তু এখন বড় হয়েছিস। এমন অবুঝের মতো করলে হবে কী করে বল ? তোর বাবা যদি বিদেশে না যায় তাহলে তুই ডাক্তার হবি কী করে, তোর বাবার স্বপ্ন পূরণ করবি কী করে ?

বাবা তো অনেক টাকা জমিয়েছে সেসব দিয়ে আমার পড়াশোনা হয়ে যাবে তো। এখন চলে আসতে বলো না বাবাকে।

তুই জানিস ডাক্তারি পড়তে কতো টাকা লাগে। যে টাকা আছে তা দিয়ে কিছুই হবে না আরো অনেক টাকা লাগবে। এখন তর্ক না করে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নে দেড়ি হয়ে গেছে মিমি তোকে রেখেই চলে যাবে।

আরফা মুখ গুমরা করে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। আর তাইয়েবা বেগম নিজের কাজে গেলেন। আরফাদের বাড়ি শহরতলীতে। গ্রাম আর শহর দুটোর সুবিধাই পাওয়া যায়। আরফাদের বাড়ির এড়িয়া বেশ বড়। বাড়ির মাঝামাঝি চার রুম বিশিষ্ট একতলা একটা বিল্ডিং আরফাদের। ছোট হলেও বিল্ডিংটা বেশ গুছানো আর সুন্দর, প্রত্যেকটা রুমে ওয়াশরুম আর ছোট একটা বেলকনি আছে। বাড়ির পেছনের দিকে বিভিন্ন ফলের বাগান তার শেষে বেশ বড় একটা গরুর খামার। গরুর দেখাশোনা করার জন্য দুজন মানুষ আছে তারা গরুর খামারের পাশে ছোট একটা ঘরে থাকে। বাড়ির সামনে আরফার সখের ফুলের বাগান। আরফার বাবা আলতাফ ইসলাম কুয়েতে থাকে আজ বিশ বছরের বেশি সময় ধরে। টাকা পয়সা করেছে ভালোই, একমাত্র মেয়ে আরফা তাই অনেক আদরের। মেয়েকে ডাক্তার বানাতে চায় আলতাফ তাই আদরের মেয়ে রেখে দূরে পরে আছে টাকার জন্য তবে মেয়ের জন্মদিনে দুদিনের জন্য হলেও দেশে ফিরে। আরফা রেডি হয়ে মিহির সাথে চলে গেলো স্কুলের দিকে আর তাইয়েবা বেগম আরফাকে স্কুলে পাঠিয়ে বাড়ি পরিষ্কারের কাজে লেগে পড়লো। একটা কাজের মাসি প্রতিদিন এসে কিছু কাজ করে দেয় তবে আজ আসবে না বলে গেছে। রুমের জিনিসপত্র মুছবার সময় তাইয়েবা বেগম আলতাফের ছবি মুছতে গিয়ে থেমে গেলেন। আরফা দেখতে আলতাফের মতো হয়েছে, মানুষটা দেখতে খুব সুন্দর। তাইয়েবা বেগম দেখতে আরফার মতো এতো ফর্সা নয় অনেকটা চাপা তার গায়ের রঙ।

আলতাফের ছবির ওপর হাত বুলিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লেন তাইয়েবা আর বললেন, আরফার মা হয়ে উঠতে পারলেও পারিনি আপনার সত্যিকার ভালোবাসার স্ত্রী হয়ে উঠতে। করতে পারিনি আপনার মনে নিজের জন্য একটু জায়গা। আপনার মন প্রাণ জোরে এখনো আপার রাজত্ব কিন্তু আমিও তো মানুষ আমারও ইচ্ছে করে স্বামীর ভালোবাসা পেতে। না না আমি বলছি না আপনি আমাকে বঞ্চিত করেছেন আমার অধিকার থেকে, সবই দিয়েছেন এমন কী স্ত্রীর অধিকারও ? কিন্তু ভালোবাসা, সেটা দেননি। এটা আপনার দোষ না আমার দোষ আমি অর্জন করে নিতে পারিনি।

তাইয়েবা চোখ মুছে নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন। আরফা তাইয়েবার পেটের মেয়ে না। আরফা তাইয়েবার বড়বোন তাহেরার মেয়ে। আরফাকে জন্ম দিতে গিয়ে মারা গেছে সে আর তাইয়েবা কখনো মা হতে পারবে না তাই তার বিয়ে হচ্ছিল না। সবাই সিদ্ধান্ত নেয় আলতাফের সাথে তাইয়েবার বিয়ের। কিন্তু আলতাফ নিজের স্ত্রীকে খুব ভালোবাসতো তাই প্রথমে রাজি হয়নি কিন্তু পরে মেয়ের দিকে তাকিয়ে রাজি হয়ে যায়। তাইয়েবাকে তার সব অধিকার দিলেও ভালোবাসতে পারেনি কখনো। আর তাইয়েবা আরফাকে কখনো বোনের মেয়ে মনে করেনি নিজের কলিজা মনে করে বড় করেছে। আরফা এসবের কিছুই জানে না।

আরফা আর মিমি সিএনজি থেকে গেটের সামনে নামতেই দেখতে পেলো রুমান দাঁড়িয়ে আছে গেটের সামনে টকটকে গোলাপ হতে নিয়ে।

রুমান আরফাকে দেখে বললো, এখনো রাগ করে আছো আরু আমার ওপর ?

আরফা রুমানের দিকে একবার শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে গেটের ভেতরে চলে গেলো আর রুমান পেছন থেকে আরফাকে ডাকতে লাগলো কিন্তু আরফা আর ঘুরে তাকালো না।

মিমি আরফার দিকে তাকিয়ে দেখলো সে মিটমিট করে হাঁসছে তাই বললো, বেচারাকে এভাবে কষ্ট দিয়ে তুই হাঁসছিস ?

আরফা হাসি থামিয়ে মিমির দিকে তাকিয়ে বললো, আমি যে কষ্ট পাই সে খেয়াল ওর আছে ? ও কীভাবে পারলো খালাতো বোনের সাথে ঘুরতে যেতে ? তুই তো জানিসই আমি ওর পাশে কাউকে সয্য করতে পারি না।

আমার তো মনে হচ্ছে না তুই এখনো উনার ওপর রেগে আছিস, তাহলে মাফ করে দিচ্ছিস না কেনো ? বেচারা কতোদিন ধরে সরি বলে যাচ্ছে।

আরফা মুচকি হেসে বললো, ও আমার দিকে তাকিয়ে প্রথম যখন অসহায় মুখ করে সরি বলেছে তখনই মাফ করে দিয়েছি। তুই তো জানিস ওকে চোখের সামনে দেখলে আর রাগ করে থাকতে পারি না আমি৷ একবার আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলেই আমি শেষ।

মিমি আরফার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। এতটা ভালো কেউ কাউকে কীভাবে বাসতে পারে ভেবে পায় না মিমি। মেয়েটা বড্ড ভালোবাসে রুমানকে কখনো যদি রুমান ধোঁকা দেয় মেয়েটা হয়তো মরেই যাবে।

ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলাম্বিয়া ইন কানাডা

ব্রিটিশ কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বের শীর্ষ আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে একটি। এটা একটি পাবলিক গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়। ভার্সিটির ভ্যানকুভার ক্যাম্পাসের একটা বেঞ্চে বসে আছে একটা ছেলে। ভ্যানকুভার ক্যাম্পাসের দুদিকে সাগর আর দুদিকে কয়েক হাজার একর জায়গাজুড়ে বিশাল পার্ক। সারি সারি ম্যাপলগাছ, সাগরের হালকা বাতাস, মনভোলানো এক ক্যাম্পাস। ছেলেটা এই ভার্সিটিতেই গ্রাজুয়েশন করছে একবছরের মধ্যেই কমপ্লিট হয়ে যাবে। ছেলেটার নাম মেহেরাব খান, ২৩ বছর বয়সী ৬ ফিট লম্বা সুঠাম দেহের অধিকারী এক যুবক। ব্রিটিশদের মতো ধবধবে সাদা গায়ের রং, কুচকুচে কালো সিল্কি চুল কপালের অর্ধেকটা ঢেকে আছে, তাঁর নিচে কালো জোড় ভ্রু-জোগল, চোখের পাপড়ি গুলো লম্বা আর চোখের মণি গভীর সমুদ্রের পানির মতো নীল আর ঠোঁটের রঙ গাড়ো গোলাপি, গায়ে কালো শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা সাথে কালো জিন্স প্যার্ট, পায়ে ব্ল্যাক শো আর হাতে ব্ল্যাক রিচ ওয়াচ, সাদা গায়ে সব কালো একদম ফোটে উঠেছে, সব ব্রিটিশদের মতো হলেও মুখের আদুল খাঁটি বাঙালি। এখানে বসে নিজের অতীতে বিচরণ করছে মেহরাব।

মেহরাবের মা মেহেক খান একজন স্থানীয় ব্রিটিশ নাগরিক আর মেহরাবের বাবা মাহতাব খান খাঁটি বাঙালী। মেহরাবের বাবা-মাও এই ভার্সিটি থেকে ডাক্তারই পড়াশোনা করেছে একসাথে। সেখান থেকেই তাদের বন্ধুত্ব আর বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা যা পরবর্তীতে বিয়ে পর্যন্ত গড়ায়। মেহরাবের মা নিজের ইচ্ছায় খ্রিষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম ধর্ম গ্রহন করে। এতে মেহরাবের নানা-নানি কোনো বাঁধা দেয়নি তারা মেনে নিয়েছে। মাহতাব খান পড়াশোনা শেষে মেহেককে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসে নিজের বাবার কাছে। তখন মেহরাবের বয়স কেবল ছ’মাস। ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছিলো ডাক্তারি পড়তে আর ছেলে বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে হাজির হয়েছে দেখে প্রচন্ড রেগে জান মুজাহিদ খান। ঢাকা শহরের প্রভাবশালী ব্যাক্তি তিনি। বেশ কয়েকটা ব্যবসা আছে এখানে। তবে এক মাত্র ছেলেকে ভালো ডাক্তার বানানোর জন্য বিদেশে পাঠিয়েছিলো। ছেলের জন্য একটা হসপিটাল ও তৈরি করে রেখেছে। সেই ছেলে এমন কান্ড করে বসবে বিশ্বাসই হচ্ছে না তার। ব্রিটিশ আমলের ম্যাট্রিক পাশ মুজাহিদ খান। পারিবারিক ব্যবসাকে অনেকটা বাড়িয়েছে বেশ দাপটের সাথে চলেন। মাহতাব বাবাকে অনেক বেশি সম্মান করে আর ভয়ও পায় তাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে পাশেই শাড়ীর সাথে হিজাব পড়ে মেহরাবকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মেহেক।

মুজাহিদ খান হাতের লাঠি দিয়ে ফ্লোরে আঘাত করতে করতে বললেন, তোমার থেকে আমি এটা আশা করিনি মাহতাব। তুমি জানো এই ব্রিটিশরা কতো খারাপ ? ছোট ছিলাম কিন্তু মনে আছে কী নির্যাতন করেছিলো আমার দেশের নিরীহ মানুষের ওপর।

মাহতাব দৃষ্টি ফ্লোরে সীমাবদ্ধ রেখে বললো, বাবা ভালো খারাপ সবখানেই আছে। আর আপনি এখনো পঞ্চাশ বছর আগের ইতিহাস নিয়ে পরে আছেন। অনেক সময় চলে গেছে সেই ইতিহাসের।

মুজাহিদ খান হুংকার ছেড়ে বললেন, সময় যতোই যাক কিন্তু ইতিহাস কখনো বদলায় না আর না খারাপ কখনো ভালো হয়।

মেহেক বাংলা পুরোপুরি বলতে না পারলেও বুঝতে পারে স্পষ্ট। তাই মুজাহিদ খানের সব কথাই বুঝতে পারছে কিন্তু কিছু বলছে না, কারণ সে জানে বাবা হিসেবে তার রাগ করাই স্বাভাবিক। মাহতাবের সাথে থেকে বাঙালি বাবা-মা আর বাঙালি কালচার সম্পর্কে ভালোই জ্ঞান হয়েছে তার। তাই এখানে সে নিরব দর্শক ছাড়া কিছু না।

মাহতাব বললো, বাবা তুমি মেহেককে একটা সুযোগ দিয়ে দেখো ও তোমাকে অভিযোগের সুযোগ দিবে না। আর আমাদের জন্য না হলেও মেহরাবের জন্য মাফ করে দাও ও তো তোমারই রক্ত।

এবার মুজাহিদ খানের দৃষ্টি আটকালো মেহেকের কোলে থাকা ছোট্ট মেহরাবের দিকে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে দেখছে তাকে। এতো কথা-কাটাকাটি হচ্ছে তবু একটু ভয় পাচ্ছে না। হঠাৎ মুজাহিদ খানের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি ফোটে উঠলো। নাতি তার মতোই সাহসী হয়েছে দেখে। সাথে সাথেই মুখ গম্ভীর করে জোরে বললেন, রহমান সব জিনিসপত্র ভেতরে নিয়ে যা।

এ কথা বলেই সেখান থেকে চলে গেলেন। মেহেক আর মাহতাব একে অপরের দিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। দেখতে দেখতে সময় অতিবাহিত হতে লাগলো। মেহেক সবসময় চেষ্টা করে শশুরের মন জয় করতে কিন্তু পেরে উঠে না। বাংলা ভাষাটাও ঠিকঠাক রপ্ত করে নিয়েছে সে, সাথে বাঙালি কালচার। রান্না থেকে শুরু করে শাড়ি পড়া, রোযা রাখা, নামাজ পড়া, কুরআন তিলাওয়াত সব। কিন্তু তবু মুজাহিদ খান খুব একটা পছন্দ করে না তাকে৷ মুজাহিদ খানের কলিজার টুকরো হয়ে গেছে মেহরাব। সে যেমন নাতি ছাড়া কিছু বুঝে না মেহরাবও দাদাজান বলতে অজ্ঞান। সব মিলিয়ে সুখে ভরপুর সংসার মেহেকের। ব্রিটিশ হলেও একদম বাঙালি মেয়ের মতো নিজের সংসার আগলে রাখতে শিখে গেছে। মাহতাবের সাথে ডাক্তারিও করছে মন দিয়ে তবে এতো সুখ সইলে তো। বাগানে দাদাজানের সাথে ক্রিকেট খেলছে সাত বছরের মেহরাব। বাবা-মা দুজনেই কোনো গ্রামে গেছে ক্যাম্পিংয়ে। দাদাজান থাকলে তাদের খুব একটা চাইও না মেহেরাবের। হঠাৎ বিকট শব্দ করতে করতে একটা এম্বুলেন্স এসে দাঁড়ালো তাদের গেটের সামনে। দারোয়ান গেট খোলে দিলে ভেতরে এলো। মুজাহিদ খানের হাত থেকে ব্যাট পরে গেলো আর মেহরাব বল হাতে তাকিয়ে আছে এম্বুলেন্সের দিকে৷ একটু পরই মাথায় ব্যান্ডেজ নিয়ে নেমে এলো মেহেক। মেহরাব মা বলে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।

এম্বুলেন্সের ভেতরে কাউকে সাদা চাদরে ঢাকা দেখে মেহরাব জিজ্ঞেস করলো, মা ওখানে কে ? আর তুমি একা কেনো, বাবা কোথায় ? বাবা বলেছিলো এবার ফিরে অনেকগুলো ব্যাট আর ক্রিকেট বল কিনে দিবে, বাবা কোথায় ?

মেহরাব……?

কারো ডাকে ঘোর কাটলো মেহরাবের। আজ বাবা আর দাদাজানের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে মেহরাবের। দুজনকেই খুব বেশি ভালোবাসে মেহরাব। কে ডাকলো দেখার জন্য পিছনে তাকাতেই সিনথিয়াকে দেখতে পেলো। গোলগাল মুখের খুব সাধারণ একটা মেয়ে, মেহরাবের সাথেই পড়ে। সিনথিয়া ইন্ডিয়ান মেয়ে তবে বাঙালি আর মুসলিম। এখন অবশ্য সিনথিয়ার পুরো পরিবার কানাডায় সেটেল্ড হয়ে গেছে ।

সিনথিয়া মেহরাবের পাশে বসে বললো, গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট হলে মেডিক্যাল পড়বে শুনলাম ?

মেহরাব শান্ত গলায় সামনে দৃষ্টি রেখে বললো, আমি ডক্টর হতে চাই না। ডক্টর হয়ে মমের মতো টাকা ইনকামের মেশিন হতে চাই না আমি। যার কাছে ছেলের জন্য এক মিনিট সময় পর্যন্ত নেই।

চলবে,,,,,

দুই মেরুর দুটো মানুষ #অপরিচিত থেকে হয়তো একসময় হয়ে উঠবে আপনজন আর তাদের আপনজনরাই হবে তাদের #অপরিচিত।

অপরিচিত পর্বঃ০১
লেখিকাঃ তাহমিনা তমা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here