অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_৬২

0
6420

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_৬২

উত্তপ্ত দুপুরে গাড়িতে বসে আছে অনি রিশাদ। ড্রাইভিং সিটে রিশাদ পাশেই অনি। অনির কপালে নাকে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। রিশাদ একবার অনির দিকে তাকিয়ে খোলা জানালাটা সুইচ টিপে বন্ধ করে দেয়।এসির পাওয়ারটা বাড়িয়ে দিয়ে সামনে রাখা টিস্যু বক্স থেকে টান দিয়ে একটা টিস্যু বের করে অনির নাক মুছে দেয়। অনি মুচকি হেসে রিশাদের হাত থেকে টিস্যুটা নিয়ে কপাল মুছে নেয়। আশে পাশে শখানেকের বেশি গাড়ির মাঝে আটকে আছে তাদের গাড়িটা। এদিক ওদিক তাকালে শুধু গাড়ি দেখা যায় আর আশে পাশে বড় বড় বিল্ডিং গুলো। দূরের সিগন্যাল বোর্ডটাও দেখা যাচ্ছে না। মিনিট বিশেক হলো জ্যামে আটকা পরে আছে। সবাইকে বের করে দিয়ে অনি রিশাদের বেরোতে বেরোতে কিছুটা দেরি হয়ে যায়। শায়লা বেগম আর সাবরিনা আসেননি। বাসায় থেকে তারা অপেক্ষা করছেন তাদের কলিজার টুকরো মেয়েদের বাড়ি ফেরার। কি অদ্ভুত ব্যাপার কাল অবধি যারা একজন সদস্য আজ তারা বাড়ি ফিরবে বাড়ির অতিথি হয়ে। কি অদ্ভুত সব নিষ্ঠুর নিয়ম! মেয়েদের জন্য একটু বেশিই নিষ্ঠুর মনে হচ্ছে তার।

অনির ভাবনার অবসান ঘটে হঠাৎ গাড়িটা চলতে শুরু করায়। অনি কিছুটা ঝুঁকে পড়ে সামনের দিকে। রিশাদ তার বাম হাতটা অনির সামনের দিকে দিয়ে অনিকে আটকায়।

–পড়ে যাচ্ছিলে তো অনন্যময়ী। সাবধানে বোসো। (রিশাদ)

–হুম। ধীর আওয়াজে বলে অনি।

গাড়িটা পুনরায় চলতে শুরু করেছে। রিশাদ টুক টাক কথা বলছে অনির সাথে। অনির মনটা কিঞ্চিত খারাপ বলে মনে হচ্ছে রিশাদের তবে এর কারণটা সে ঠিক ঠাওর করতে পারছে না। গাড়ি চালানোতো ব্যস্ত রিশাদ মাঝে মাঝে অনিকে দেখছে। চারপাশে মগ্ন অনি প্রকৃতি দেখায় মগ্ন থাকার ভান করে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক জীবনযাপনের মাঝেই বিনা অনুমতিতে বিষাদরূপ কষ্টের পাখি এসে ডানা ঝাপটায়। মন মস্তিষ্ক বিভোর হয়ে যায়। অনিরও ঠিক একই অবস্থা। হঠাৎ করেই সবকিছু কেমন বিষাক্ত লাগছে। যা অপ্রকাশিতই রয়ে যায় রিশাদের সামনে।

ঘন্টা খানেকের মধ্যে রিশাদ অনি এসে হাজির হয় রিসোর্টের সামনে। অনি জোরপূর্বক তার কল্পনাগুলোর ইতি টেনে দেয়। দীর্ঘশ্বাস চেপে রেখে সে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে তোলে নরম ঠোঁটজোড়ায়। রিশাদ অনির ফুটন্ত হাসিতে পুলকিত হয়ে ওঠে। দরজা খুলে হাত বাড়িয়ে দেয় অনির দিকে। অনি তার বিশ্বস্ত হাতটি ধরে গাড়ি থেকে নামে।

চারপাশে চোখ বুলিয়ে নেয় অনি। রিসোর্টের সামনে খানিকটা ফাঁকা জায়গায় গ্যারেজ করা। গ্যারেজের উপর অদ্ভুত এক ধরনের ছাউনি দেয়া। অনি এই জিনিসটার সাথে পরিচিত নয়। না টিন না সিমেন্ট কংক্রিটের ছাদ। তবে সে এই বিষয়ে এখন আগ্রহী নয়। তাই রিশাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে।মাঝারি ধরনের একটি রিসোর্ট। মাঝ বরাবর একটি পুল। পুলের শেষ মাথায় বিশাল আকার সজ্জিত একটি স্টেজ। শিকল যুক্ত রেলিং দিয়ে পুলের চারপাশে বাউন্ডারি দেয়া যা ফুলের নিচে ঢাকা পরে গেছে। অতিথিদের বসার জন্য সুসজ্জিত ও আরামদায়ক চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশ কয়েকজন ইউনিফর্ম পরিহিত ওয়েটার কিছু স্ন্যাকস ও শরবতের ট্রে নিয়ে অতিথিদের মাঝে ঘুরছে। যে যার প্রয়োজনমত নিয়ে নিচ্ছে।

ফুল দ্বারা স্টেজে সজ্জিত সিংহাসনের মতো দুটি চেয়ারে বসে আছে মিথিলা আর রিশা। তার সাজ সজ্জার পরিপূরক যেন এই এই চেয়ার দুটো। ভারী কাজ করা ব্রাইডাল লেহেঙ্গা, মাথায় লাগানো সোনার মুকুট, অতিমাত্রায় চকচকে গহনায় যেন দুজনকেই মনে হচ্ছে কোন রাজ্যের রানী। তাদের সাজ পোশাকেই শুধু রানীর মতো লাগছে না। পারিপার্শ্বিক পরিবেশও যেন তাদের রানী হওয়ার ইঙ্গিত করছে।

অনি বিদেশি রানী দেখেছে তবে দেশীয় রানী দেখার সুযোগ হয়নি। স্কুলের এনুয়াল ফাংশনকে কেন্দ্র করে দু তিনবার সে সাক্ষাত করার সুযোগ পেয়েছিল সে। লাগাতার তিনবার সে পেয়েছে বেস্ট স্টুডেন্ট অফ দ্যা ইয়ার এর এওয়ার্ড। যার কৃতিত্ব স্বরূপ রানী এলিজাবেথ এর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিল সে।

মিথিলা রিশার সাথে দেখা করে অনি। রিশা অনিকে দেখেই তাকে জড়িয়ে ধরে। হঠাৎ এমন কাজে অনি কিছুটা অবাক হয়। তবে তা দমিয়ে রেখে সে রিশাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিলে অনি রিশার সাথে কুশল বিনিময় করে। রিশা মিথিলাকে দেখে বেশ শান্তি অনুভব হচ্ছে তার। একদিনেই খুব বেশি মিস করেছে। অনির নিজের এই অবস্থা তাহলে সাবরিনা বা শায়লা বেগমের কি অবস্থা হবে?ভাবতেই এক রুদ্ধকর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে অনির।

রিশা মিথিলাকে পেয়ে এতটাই ব্যস্ত হয়ে পরেছিল অনি যে রাফি আর ইভানের কথা ভুলেই গেছে প্রায়। রাফি নিজের উপস্থিতিটা জাহির করার জন্য খুক খুক করে কেশে ওঠে। অনির তীক্ষ্ণ নজর ঘুরে সেদিকে যায়। রাফি অসহায় কণ্ঠে বলে;

–ভাবী আপনার ননদদের পেয়ে তো আমাদের তো ভুলেই গেছেন। আমরাও তো এখানে আছি নাকি। (রাফি)

রাফির কথায় অনি কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছে না। কিছুটা আমতা আমতা করতে করতে বলে;

–না না ভাইয়া কি বলছেন?আপনাদের ভুলে যাবো কেন! (অনি)

রাফি কিছু বলতে যাবে তার আগে রিশা কনুই দিয়ে রাফির পেটের দিকে একটা গুঁতো দেয়। রাফি চোখ মুখ বিকৃত হয়ে যায় ব্যথায়।তবে মুখে কোন শব্দ করে না। রিশা কর্কশ কণ্ঠে বলে;

–ওই তুমি আমার ভাবীর পিছনে লাগছো কেন?(রিশা)

–বাহ রে!আমি আবার কি করলাম?তোমার ভাবী মানেই তো আমার ভাবী।একটু মজাও কি করতে পারবো না?তাহলে বিয়েটা করে লাভ কি হলো? ব্যথায় কাতরানোর অভিনয় করে বলে রাফি।

–লাভ ক্ষতির হিসাব পরে বুঝাবোনি। তোমাকে তো আমি…..(রিশা) রিশা তার কথা শেষ করতে পারেনা। মাঝ পথেই রিশাদ তাদেরকে থামিয়ে দেয়।

–আচ্ছা বাবা থাম তোরা। বিয়ের দিনেও কি ঝগড়া করবি নাকি। (রিশাদ)

–আমি কই ঝগড়া করলাম?ওই তো সব সময় খালি আমার পিছনে লাগে। কিছুটা ভাব নিয়ে বলে রিশা।

–আমি আবার কখন তোমার পিছনে লাগলাম। রাফির বলা শেষ না হতেই রিশা চোখ বড় বড় করে রাফির দিকে তাকায়। অগ্নিমূর্তি নিক্ষেপ করে। রাফি একটা শুকনো ঢোক গিলে বলে;

–আচ্ছা বাবা আমারই ভুল। সরি মাফ করে দাও। (রাফি)

–হুহ। বলেই রিশা ভেংচি কাটে রাফিকে।

উপস্থিত সবাই রিশা আর রাফির কথাবার্তা শুনে বড়সড় ধাক্কা খায়। রিসেপশনের দিনেও এরা ঝগড়া করছে। বাকী জীবন কি করবে আল্লাহ ভালো জানে।

মিথিলা রিশার সাথে বসে কিছুক্ষণ সময় কাটায় অনি। বেশ কয়েকটা ছবিও তোলে রিশা মিথিলা অনির সাথে। অনিকে দেখতেও আজ দারুণ লাগছে বলে জানায় তারা। অনি কিছুটা লজ্জা পায়। অনির লজ্জা মিশ্রিত চোখ এদিক ওদিক খুঁজছে রিশাদের সান্নিধ্য পাওয়ার জন্য। রিশাদের কোন ছায়াও খুঁজে পায়না অনি।

কিছুক্ষণ পরেই সে দেখতে পায় একটা খাম্বার পাশে দাঁড়িয়ে কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে
দূরে হওয়ায় শোনা যাচ্ছে না কাকে কি বলছে। এখানে আসার পর থেকেই অনি লক্ষ্য করছে রিশাদ একটু পর পর ফোনে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ফোনটা বেজে উঠলেই সে আড়ালে গিয়ে কথা বলছে। কি এমন কথা যে তার সামনে বলা যায় না।

রিশা মিথিলার সাথে কথা বলা শেষ করে একটা চেয়ারে বসে রিশাদের গতিবিধি লক্ষ্য করছে অনি। অনির শান্ত চাহনি রিশাদের উপর স্থির। কিছুক্ষণ পর কথা বলা শেষ করে অনির কাছে আসে রিশাদ। রিশাদের উপর অনির অপলক দৃষ্টি। এই দৃষ্টির অর্থ রিশাদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না। রিশাদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। ফোনটা তার হাতেই আছে।

রিশাদকে এভাবে তাকাতে দেখে অনি চোখ সরিয়ে নেয়। অনির নীরবতার শব্দ গুলো আজ রিশাদের মস্তিষ্ক যেন ঠিকমতো ঠাওর করতে পারছে না। রিশাদও নাছোড়বান্দা না বুঝে ছাড়বেনা। অনি রিশাদকে কিছু বলার আগ্রহ পাচ্ছেনা। হয়তো কোন জরুরি কল আসছে। তবুও কিঞ্চিত উদ্বেগ থেকে যায় যা জোরপূর্বক সরিয়ে ফেলে।

হাসিমুখে কথা বলছে অনি রিশাদের সাথে। কৃত্রিম হাসিটা এখন তার মুখে যেন স্থায়ী ভাবে লেপ্টে আছে। অনি রিশাদের কথোপকথনের মাঝে বিরতি ঘটায় রেহানা বেগমের আগমন।

রিসোর্টে আসার পর তার গুনগুন নিরার সাথে দেখা হলেও রেহানার সাথে হয়নি। অসুস্থতাজনিত কারণে তিনি আসতে দেরি করেন। রিশাদ উঠে দাঁড়িয়ে রেহানাকে বসার জায়গা করে দেন। রিশাদ বিনীত স্বরে রেহানার সাথে কুশল বিনিময় করে প্রস্থান করে।

অনি হাসিমুখে বলে;

–কেমন আছেন আন্ট?আপনার শরীর খারাপ ছিল তো।এখন কেমন?(অনি)

–এখন ভালো আছি রে মা।তুমি কেমন আছো?(রেহানা)

–আলহামদুলিল্লাহ ভালো। (অনি)

–আমাকে আন্টি বলছো কেন?বড় মা বলবে। (রেহানা)

অনি মুখে কিছুনা বলে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানায়। তার মস্তিষ্ক বড় মা শব্দটা নিয়ে নাড়াচাড়া করতে থাকে। কেমন যেন অদ্ভুত একি মাতৃত্বের ছোঁয়া মেশানো ডাক। অবশ্য রেহানার কাছ থেকে অনি মাতৃস্নেহই পেয়েছে।

টুকটাক কথা বলে অনি রেহানার সাথে। এরই মাঝে খাওয়ার জন্য ডাক পরে। রেহানার হাঁটতে কিছুটা অসুবিধা হচ্ছিল। তাই সে রেহানার বাহু ধরে আস্তে আস্তে তাকে নিয়ে যায়।

দূরে দাঁড়িয়ে এই দৃশ্যটাই উপভোগ করছে হিমাদ্রী। এমনই একজন কাউকে চেয়েছিল সে জীবনে। যে এভাবেই তার বাবা মার খেয়াল রাখবে। তবে বড্ড দেরি করে ফেলেছে সে। নিয়তি তার আর অনির গন্তব্য সম্পূর্ণভাবে পৃথক করে দিয়েও যেন পুনরায় এক করে দিল। হঠাৎ করেই সম্পর্কের সমীকরণ গুলো এলোমেলো করে দিল। অজানা সম্পর্কের সত্যতা প্রকাশ্যে আসাটা হয়তো সবার জন্য সুখকর ছিল তবে হিমাদ্রীর জন্য তা ছিল সুখমিশ্রিত এক বিষাক্ত বেদনা। অনন্যময়ী তার চাচাতো বোন। এই চরম সত্যিটা হিমাদ্রীকে যেন অনির অস্তিত্বের কথা ভুলতে দেয়না। ভুলতেই তো চেয়েছিল সে অনন্যময়ীকে। নিয়তি আর তা হতে দিল কই। এক সুতোর দুই প্রান্তে বাঁধা পরে গেল অনন্যময়ী আর হিমাদ্রী।

অনুষ্ঠান শেষে এখন বিদায় নেবার পালা। দুই দম্পতির জন্য আলাদা আলাদা দুটো গাড়ির ব্যবস্থা করেছিল আগেই রিশাদ।যথাসময়ে গাড়িগুলো পৌঁছে যায়। রিশাদ তাদেরকে গাড়িতে তুলে দেয়। রিশা আর রাফির সাথে যায় কাব্য নিরা গুনগুন। অন্যদিকে মিথিলা আর ইভানের সাথে যায় ইভানের ভাই ইহান আর তার কাজিন নেহা। রওনা দিতে দিতে প্রায় পাঁচটা বেজে যায়। আসতে সময় লাগবে বলে সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে পড়ে। রিশাদ অনি রাফি ও ইহানের পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে যায়।

_________

চারদিকটা অন্ধকার হয়ে এসেছে। একটু আগেই মাগরিবের আযানের ধ্বনি ভেসে আসে অনির কাছে। খুব মনোযোগ দিয়ে আযানের উত্তর দিচ্ছিল। অন্ধকার রাস্তায় একটু পর পর ল্যাম্পপোস্টের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। আলোর এই বিস্তার বহুদূর পর্যন্ত নয়। একটু পর পর গাড়ির ভেতরটা সামনের পেছনের বড় বড় গাড়িগুলোর হেডলাইটের আলোয় আলোকিত হয়ে উঠছে। কৃত্রিম আলোর অদ্ভুত এক খেলা চলছে যেন। মহাসড়ক হওয়ায় জনসমাগম নেই। রাস্তার পাশে বালুচর।মাঝে মাঝে একটা দুটো বাড়ি দেখাচ্ছে। বাড়ির ভেতরে আলো জ্বলায় বাড়ির অস্তিত্বটা টের পাচ্ছে অনি। জানালা খুলে দিতেই বাতাস এসে অনির মুখে ক্রমাগত বাড়ি খাচ্ছে। অনি আবেশে দুচোখ বুজে সিটের সাথে হেলান দেয়। হিমশীতল বাতাসে অনির শরীর মনে শিহরণ জেগে যায়। নিমিষেই তার মনটা ভালো হয়ে যায়। চুপি চুপি হাতটা রিশাদের হাতের কাছে নিয়ে যায়। রিশাদ সাবধানে একটা হাত স্টিয়ারিং থেকে সরিয়ে তার প্রেয়সীর বাড়িয়ে দেয়া হাতকে আঁকড়ে ধরে।

রিশাদ অনির দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় চোখ বুজে আছে। তবে চেহারায় তার অম্লান হাসি লেপ্টে আছে। রিশাদ চোখ সরিয়ে নিয়ে সামনের দিকে তাকায়। ঠোঁটের কোণায় ফুটে ওঠা রিশাদের হাসি কিছুটা প্রশ্বস্ত হয়। আপন গতিতে গাড়ি ছুটটে থাকে তাদের গন্তব্যের দিকে আর রিশাদ অনির শব্দবিহীন অনুভূতিগুলোর আদান প্রদান হয় নীরবে।

হঠাৎ করে গাড়ি থেমে যাওয়ায় অনি চোখ মেলে তাকায়। রিশাদ ব্যস্ত রাস্তার পাশে গাড়ি থামায়। অনি রিশাদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। রিশাদ মুচকি হেসে হাত দিয়ে ইশারা করে বাইরের দিকে। রিশাদের ইশারা অনুসরণ করে অনি সেদিকে নজর ঘুরায়।

অনির চোখ জুড়ে বিস্ময় নেমে আসে। গাড়ি থেকে নেমে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। হাতটা পাশেই রিশাদের মুঠোয় বন্দি। সম্পূর্ণ গোল আকারের পূরণিমার চাঁদ। আলোকচ্ছটা ঠিকরে পরছে দিগ্বিদিক। জলাশয়ের পানিতে দেখা যাচ্ছে চাঁদের পূর্ণ প্রতিবিম্ব। কম্পমান জলের ঢেউয়ে বিম্বটা কিছুটা কাঁপছে বলে মনে হচ্ছে। ঝির ঝির করে বাতাস বইছে। দীর্ঘ তেইশ বছরের জীবনে প্রথমবার এমন নৈসর্গিক, মোহনীয় এক পরিবেশের সাক্ষী হলো অনি তাও আবার প্রিয় মানুষটার হাত ধরে। অনি রিশাদের কাঁধে মাথা রাখে। হালকা শব্দ করে বলে;

–ভালোবাসি,ভালোবাসি,ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। (অনি)

রিশাদ অনির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে। অনির মুখে উচ্চারিত ভালোবাসি শব্দটা বার বার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে তার কানে। মিনিট দুয়েক পর সে অনিকে সামনা সামনি দাঁড় করিয়ে দুহাতের মুঠোয় তার গালদুটো ধরে। কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে রিশাদ অনির নাকের সাথে নিজের নাকটা স্পর্শ করায়। হালকা কেঁপে উঠে অনি দুচোখ বুঁজে ফেলে। রিশাদের হাতের উপর তার হাতদুটো চলে যায়। রিশাদ অস্ফুট স্বরে বলে; আমিও খুব ভালোবাসি। বলেই রিশাদ অনির গালে ঠোঁটের পরশ বুলিয়ে দেয়। চোখে,কপালে, থুতনিতে রিশাদ গভীর ভাবে চুমু এঁকে দেয়। ভালোবাসায় সিক্ত অনি প্রতিটা স্পর্শে বার বার যেন কেঁপে উঠছে।

কিছুটা দূরে রাস্তার পাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে অতিক্রম করা ট্রাকের হর্ণের শব্দ শুনে ঘোর ভাঙে অনি রিশাদের। ভালোবাসার এই মূহুর্তটা দরকার ছিল চাঁদনী রাতটাকে মনের গহীনে গেঁথে রাখার জন্য।লজ্জাস্নাত অনি যেন লজ্জায় নুইয়ে পরছে। রিশাদের দিকে মুখ তুলে তাকাতে পারছে না।

অনিকে আরো এক দফা চমকে দিয়ে রিশাদ অনিকে কোলে তুলে নেয়। রিশাদ অনির দিকে তাকাতেই অনি রিশাদের ঘায়েল করা এই নজর এড়িয়ে তার বুকে মুখ লুকায়। রিশাদ মুচকি হেসে অনিকে নিয়ে গাড়ির দিকে এগিয়ে যায়।

__________

অনি রিশাদের বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় নয়টা বেজে যায়। সবাই এসে পৌঁছে গেছে। বাসার দরজার সামনে বেশ ভিড় জমে আছে। এখনো বরণ করা শেষ হয়নি। শায়লা দুই মেয়ে জামাইকে বরণ করে নেন। মিথিলা রিশাকে দেখে দুই মা শায়লা ও সাবরিনা নিজেকে সামলাতে না পেরে কেঁদেই দেন। যেন কত বছর পর বাড়িতে ফিরেছে। বিয়ের পর মেয়েরা সত্যিই অদৃশ্যভাবে পর হয়ে যায় হয়তো। সময়ের সাথে সাথে তা দৃশ্যমান হতে শুরু করে।

রিশাদ সব অনুষ্ঠান উপেক্ষা করে উপরের দিকে যায়। দুজন লোক এক ডালি ফুল আর কিছু জিনিসপত্র নিয়ে নিচে নামছিলেন। রিশাদ তাদের সাথেই কি সব কথা বলছিল। অনি দূরে দাঁড়িয়ে সেদিকে একবার তাকায়। পরবর্তীতে সে আবার মা মেয়েদের কান্না দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। কেন জানে না এই কান্নাটা তার কাছে কিছুটা সুখের মনে হচ্ছে।

সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে মিথিলা রিশাকে তাদের জামাই সহ রুমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনক রিশাদও তাদের সাথে আছে। রুমের দরজা খুলেই সবাই বেশ অবাক হয়। সাথে এই দুই দম্পতিও। খুব সুন্দর করে সাজানো তাদের রুমগুলো। বাসর ঘরের মতো অতিরিক্ত মাত্রায় সাজানো নয়।বেশ সুন্দর করে অর্কিড ফুল দিয়ে সাজানো। ডিজাইনার দুটো বোলে পানিতে ভাসমান লাল গোলাপের পাপড়ির মাঝে জ্বলন্ত মোমবাতি সাথে আকর্ষণীয় লাইটিং। রিশাদের রুচিশীলতা দেখে মুগ্ধ হয় সবাই।

দুই দম্পতিকে তাদের রুমে দিয়ে এসে অনি এবার রুমের দিকে যায়। অনির পেছন পেছন রিশাদও আসছিল। আশে পাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে রিশাদ পেছন থেকে অনির চোখ দুটো একটা পাতলা কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয়। অনি কিছু বলার আগেই রিশাদ তার ঠোঁটে আঙুল রেখে বলে;

–ভয় পেয়ো না আমি। কোন কথা বলবে না জাস্ট টু মিনিটস।

রিশাদের এমন কান্ডে অনি হতবাক হয়ে যায়। আরো বেশি অবাক হয় রিশাদ যখন অনিকে কোলে তুলে নেয়। অনি রিশাদের ঘাড় চেপে ধরে আরেক হাত দিয়ে পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে।

রিশাদ অনিকে রুমে এনে নামিয়ে দেয়। দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে রিশাদ অনির চোখের বাঁধন খুলে দেয়। অনি চোখ কচলাতে কচলাতে তাকায়। বড়সড় ধাক্কা খায়। এটা যে তাদের রুম চেনাই যাচ্ছে না। মোমবাতির সোনালি আলোয় ও লাইটিং এ অন্ধকার রুমটা এক বিশেষ রূপ লাভ করেছে। সে যেন স্বপ্নের মধ্যে আছে। রুমের চারদিকে চোখ বুলায় অনি। এসব কিছুর জন্যে মটেও প্রস্তুত ছিল না অনি।

রিশাদ অনির সামনে এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে নত জানু হয়। অতঃপর সে বলতে শুরু করে;

–তথাকথিত বাসর শব্দটায় আমি বিশ্বাসী নই। বিয়ের পর একের পর এক ঘটনা গুলোয় আর জীবনের নাটকীয় মোড়ে সবকিছু যেন বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল। ভালোবাসাকে শুধুই অবিশ্বাসও প্রতারণার সমার্থক বলে মনে হতো। তোমার আগমন আমার জীবনে অনেক আগেই ঘটেছিল তবে তোমার ভেতরের অনন্য সত্ত্বার সান্নিধ্য পেতে বেশ দেরী হয়ে গিয়েছিল। বেটার লেট দ্যান নেভার। দেরিতে হলেও তোমার প্রতি অনুভূতি গুলো নাড়া দিয়ে ওঠে।নতুন করে জীবনের সন্ধান খুঁজে পাই। আমার ছন্নছাড়া জীবনে নিয়মমাফিক ভালোবাসা হয়ে ওঠে। বিয়ের প্রথম দিনে প্রত্যেকটা মেয়ের স্বপ্ন থাকে রাত টা স্মরণীয় করে রাখার। আমার নিজেরও স্বপ্ন ছিল। কিছু খারাপ অভিজ্ঞতা সব এলোমেলো করে দিয়েছে
সেই রাত আর আজকের রাতের মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত। তবুও এক সুন্দর রাত উপহার দেয়ার আকাঙ্ক্ষা জাগে। তাই আজকের এই আয়োজন। ভালোবেসে সারাটা জীবন তোমায় আগলে রাখতে চাই। ভালোবাসি অনন্যময়ী। (রিশাদ)

কাপাঁ কাপাঁ হাতে অনি রিশাদের কাছ থেকে ফুলগুলো গ্রহণ করে। রিশাদ অনির কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় অনি রিশাদের চোখে চোখ রাখে। অনির চোখে জল টুপ টুপ করছে। গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ার পূর্বেই রিশাদ তা শুষে নেয়। অনিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। ভালোবাসা বিনিময়ের জন্য অনি যেন আজ ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। রিশাদের সাজানো ভালোবাসার সামনে তার কথাগুলো যেন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। সবকিছুই সুখকর মনে হচ্ছে তার।

রিশাদের ভালোবাসা প্রতিদিন এক নতুন রূপে প্রকাশিত হয় অনির সামনে। আনকোরা এই ভালোবাসার সুখানুভব লাভ করেছে যেদিন থেকে সেদিন থেকেই এক নতুন জগতের সন্ধান পেয়েছে। সুখের সাগরে নিমজ্জিত অনির যেন দিনশেষে আর কোন কষ্ট থাকে না।

____________

ছয় মাস পর

অনি রিশাদ ব্যস্ত তাদের নিজের দৈনন্দিন জীবনে ব্যস্ততার মাঝে যেটুকু সময় পায় একান্ত নিজেদের জন্যই রাখে। অনি এখন নিয়মিত ক্লাস করছে। রিশাদ তাকে নিজে রেখে আসে। আসার সময় প্রতিদিন সময় হয়না রিশাদের অনিকে নিয়ে আসার। অনির ক্লাস কখনো দুপুরে হয় তো কখনো বিকেলের দিকে। একা চলাফেরা করতে করতে অনেক কিছুই অনি চিনে ফেলেছে। আর সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো সে পুরোপুরিভাবে ভাবে বাংলা লেখা ও পড়া শিখে নিয়েছে। এদেশে এসে বাংলা না পারায় যে কতটা অসহায় লাগছিল বলে বোঝানো যাবে না। রিশাদের কাছেই মূলত সে বাংলাটা শিখে নিয়েছে।

এই ছয় মাসে অনি একবারের জন্যও তাদের বাড়িতে যায়নি। জাহানারা বেগমের সাথে তার নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। অনামিকা বেশ কয়েকবার তাকে কল দিয়েছে এবং দেখা করার চেষ্টা করেছে। অনি তার মায়ের প্রতি রেসপন্স করেনি। এই মানুষটাকে সে চায়না আর তার জীবনের কোথাও। মা নামক সত্ত্বার প্রতি সকল আকাঙ্ক্ষা সে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। আশরাফ সাহেবের সাথেও কেমন দূরত্ব তৈরী হয়ে গিয়েছিল যার কিছুটা সুরাহা হয়েছে। কেননা আশরাফ সাহেবই একমাত্র মানুষ যার কাছে ছোটবেলা থেকেই পিতৃসুখ পেয়েছে অনি। তার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর জন্য শুধুমাত্র তার মা ই দায়ী। জীবনের যত অস্বাভাবিকতা জটিলতা ছিল তা আজ আর নেই। অনেকটা সহজ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে সে।

ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে ক্যান্টিনে বসে অনি রিশাদকে ফোন লাগায়। দুবার রিং হতেই রিশাদ কল রিসিভ করে।আজকে তার এখানে আসার কথা ছিল। রিশাদ কল রিসিভ করেই বলে;

-সরি সোনা আজকে আমি একদম যেতে পারবো না। খুব ইম্পরট্যান্ট একজন মানুষের সাথে দেখা করতে হবে। আমি গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি তুমি বাসায় চলে যাও।

–আচ্ছ ঠিক আছে। আল্লাহ হাফেয।

–হুম।তুমি বাসায় পৌঁছে আমাকে কল করবে। আল্লাহ হাফেয।

অনি রিশাদের কথার আর কোন উত্তর না দিয়ে ফোনটা রেখে দেয়। ফোনের ওপাশে রিশাদ অবাক হয় কিছুটা।রিশাদ আসবে না শুনে অনির মনটা খারাপ হয়ে যায়। কিছুটা হতাশ হয়ে ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে সে গেটের দিকে যায়।

গেট থেকে কিছুটা দূরে রিশাদের গাড়ি দাঁড়ানো। রিশাদ যেদিন আসেনা সেদিন সে গাড়ি পাঠিয়ে দেয়। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অনি চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে। সামনের দিকে তাকাতেই সে বড়সড় ধাক্কা খায়।

রিশাদ তার দিকে তাকিয়ে হাসছে। অনি চোখ বড় বড় করে রিশাদের দিকে তাকায়।

–একি তুমি!তোমার না একটা খুব ইম্পরট্যান্ট পারসনের সাথে দেখা করতে হবে। তাহলে এখানে কি করছো। অনির কণ্ঠে স্পষ্ট অভিমান।

–পাগলি মেয়ে। তোমার চেয়ে ইম্পরট্যান্ট পারসন কে আছে বলো তো?(রিশাদ)

রিশাদের কথার উত্তর না দিয়ে অনি ভেংচি কাটে
রিশাদ অনিকে সামনে আসতে বললে অনি সেখানেই ঠায় বসে থাকে।

–তুমি নিজে থেকে সামনে আসবে নাকি আমি কোলে করে নিয়ে আসবো। সেকেন্ড অপশনটা আমার কাছে বেশি বেটার মনে হচ্ছে। বাকিটা তোমার ইচ্ছা।

রাগে গজ গজ করতে করতে অনি সামনে এসে বসে। মনে মনে রিশাদের গুষ্টি উদ্ধার করে দেয়।

বিকেল অবধি ঘোরাঘুরি করে অনি রিশাদ। ঘোরাঘুরি শেষ করে অনিকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে যায় রিশাদ। এখনো লাঞ্চ করা হয়নি তাদের। রেস্টুরেন্টে বসে খাবারের জন্য অপেক্ষা করছে।

কয়েকটা টেবিল পরে বসা এক জোড়া মানব মানবীকে দেখে চোখ আটকে যায় রিশাদের। রিশাদ অনিকে ইশারা করে সেদিকে।অনিরও একই অবস্থা। কিছুটা দূরেই অবস্থান করছে অদ্রি আর অচেনা একটি ছেলে। ছেলেটাকে বেশ হাস্যজ্জ্বল মনে হচ্ছে।তবে অদ্রি যথাসম্ভব কম কথা বলছে।

অনি রিশাদ একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।এই ছেলেটাকে তারা কেউই চেনে না। হতে পারে অদ্রির কোন ফ্রেন্ড। না ফ্রেন্ড হলে তো রিশাদের চেনার কথা। সে যাই হোক। অদ্রির ব্যাপার নিয়ে তারা বেশি মাথা ঘামায় না। তবে হঠাৎ করেই রিশাদ অনির সাথে অদ্রির চোখাচোখি হয়ে যায়। তারা তিনজনই মনে হয় অপ্রস্তুত হয়ে পরে।

কিছুক্ষণ পর অদ্রি উঠে তাদের টেবিলে আসে।
অনি অদ্রির সাথে কুশল বিনিময় করে। অদ্রির সাথে খুব কম কথা হয় তার। তবে আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে তাদের সম্পর্কের।

–তোমরা এখানে?(অদ্রি)

–এইতো আপু লাঞ্চ করতে এসেছি। (অনি)

–ওহ আচ্ছা। আমিও লাঞ্চ করতেই এসেছিলাম।(অদ্রি)

–তাহলে আমাদের সাথেই বসো না। (অনি)

–আরে নাহ। তোরা বোস না। আমার সাথে গেস্ট আছে একজন।

–কে উনি আপু?

–আমরা নিউ ইয়র্কে একসাথে ইন্টার্ন ছিলাম। দুজন বাংলাদেশি একসাথে ছিলাম তাই আলাপ হয় আরকি।

–ওহ আচ্ছা ওনাকে নিয়েই বোসো আমাদের সাথে।

রিশাদ এবার অনির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকায়। অনি সেদিকে একবার তাকিয়ে শুকনো ঢোক গিলে। কথা বলেও সে যেন চিপায় পরে গেছে। রিশাদ বিরক্ত চাহনি নিক্ষেপ করে অনির দিকে।

অদ্রি কিছু একটা ভেবে রিশাদ অনির সাথে বসে পড়ে। তার সাথে থাকা গেস্টকে পরিচয় করিয়ে দেয়। তার নাম সাদাত। সাদাতের সাথে পরিচয় হয়ে বেশ ভালোই লাগে রিশাদ অনির। একটু বেশি কথা বলে তবে মানুষ হিসেবে খুব ভালো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রিশাদ বিল মিটিয়ে দেয়। অতঃপর তারা যে যার মতো বেরিয়ে যায় নিজেদের গন্তব্যের দিকে। অদ্রির জন্য আজকের এই সময়টা বেশ কঠিন ছিল। তবে সে নিজেকে সামলানোর জন্যই চাইছিল অনি রিশাদকে ফেস করতে। অনির সাথে কথা অন্যায়গুলোর জন্য সে বেশ লজ্জিত মনে মনে।বেশ কয়েকবার ক্ষমা চায় অনির কাছে। রিশাদ অনি একসাথে দেখাটা যদিও কষ্টকর তার জন্য। তবুও সে মেনে নিয়েছে নিয়তির বিধানকে।

চলবে…..
আসসালামু আলাইকুম?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here