senior life partner পর্ব ১৩

0
1619

#Senior_life_partner
পর্ব—— 13
Afrin Ayoni

ইসুয়ার ক্লাস থেকে লিস্ট শেষ করলো রবিনরা।শুভ আর নয়ন হালকা গলায় কেশে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো।শুভ আর নয়ন সবার নাম চেক করে নিল।ক্লাস থেকে বেরোবার সময় রবিন আবার সকলের উদ্দেশ্যে বললো—
এইবার ভার্সিটির নবীনবরণে extra চমকের জন্য সবাই তৈরি থাকো guy’s……স্যার ম্যাম আর স্টুডেন্ট দের একটা ইভেন্ট করা হয়েছে যৌথভাবে।সেখানে special কিছু থাকছে।কথাটা বলেই রবিন ইসুয়া কে আবার চোখ মারলো।

ইসুয়া বিরক্তিতে নাক মুখ কুঁচকালো।রবিন একটা দুষ্টু হাসি দিয়ে বলে,”ok…..bye Miss.অধ্যাপিকা।”

ইসুয়া মনে মনে, “অধ্যাপিকা না!! তোর মাথা আর আমার জুতা।ছ্যাচড়া পোলা একটা……”

রবিন শুভ আর নয়ন মাঠ দিয়ে হাটছিলো,,,,শুভ রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো–“নতুন ইভেন্ট আবার কি যোগ করলি?”

নয়ন — আমার ও এইটা ঘুরছে মাথায়।

শুভ — কি চলছে রে রবিননা?তোর জিলাপিমার্কা মাথায়।

রবিন– দোস্ত তোদের ভাবী madam এর সাথে একটা পারফর্মেন্স হলে কেমন হয়??

শুভ আর নয়ন একজন আরেকজনের দিকে কিছুক্ষণ চাওয়াচাওয়ি করে চিল্লানি দিয়ে উঠে। রবিন হেসে বলে,,”এখনি এত excitement??পরে কি করবি শুনি?”

ওদের তিনজনের সাথে যোগ দিল তুলি আর তমা।তমা কৌতূহলী হয়ে জিজ্ঞেস করলো,”কি নিয়ে তোদের এত খুশি?আমাদের ও বল।”

রবিন– পরশুর অনুষ্ঠান নিয়ে।

তমা ন্যাকামি করে,”রবিন …. বলো তো আমি ঐদিন শাড়ি পড়লে কেমন হবে বেবি?”

নয়ন ভ্রু উঁচু করে, “আগে বেবি বাবু আব্বা সবই বলতি, ঠিক আছে!কিন্তু এই কয়দিন রবিন রে তুমি করে বলতেছিস ঘটনা কী?”

রবিন আর নয়নও তমার দিকে তাকালো।আসলেই রবিন ও বেশ কিছুদিন যাবত খেয়াল করছে তমা আগের চেয়ে ও বেশি গায়ে পরছে।

তমা আচমকা থতমত খেয়ে গেল নয়নের কথায়।তারপর কথা ঘুরাতে বললো,”এ আবার এমন কি?তুই তুমি আপনি সবই চলবে।আচ্ছা, বাদ দে।বল না শাড়ি পড়লে কেমন হবে?”

তুলি — তুই পড়লে আমি ও পড়বো।

তমা– আচ্ছা, done ……. দুজন ই শাড়ি পড়বো।

সবাই আবার সবার কথায় মেতে ওঠে। আড্ডা আসর জমে উঠে বন্ধুদের।
…………………………………………..

শাহেদ ক্লাসরুমে বসে স্টুডেন্ট দের homework দেখছিলো।কিছু স্টুডেন্ট কে punishment দিয়েছে বাড়ির কাজ না করায়,কেউ দাঁড়িয়ে আছে বা কেউ কান ধরে এক পায়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শাহেদ হুঙ্কার দিয়ে বললো, “আমার class এ অনিয়ম করার ফল কখনো ক্ষমা করি না, শাস্তি পেতে হবে সবাই কে।”
সবাই ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে।শাহেদ তার লাল টকটকে চোখ গুলো homework এর খাতায় দৃষ্টি দিয়েই যেন ঝাঁঝরা করে ফেলবে।
নিশুয়া বই নিয়ে এগিয়ে এল। শাহেদের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিললো।তারপর নিজেকে পুরোপুরি তৈরি করে বললো,,,

“স্যার এই পড়াটা বুঝি নি,একটু বুঝিয়ে দিন।”

শাহেদ নিশুয়ার দিকে দৃষ্টিপাত করলো।তার রাগ যেন এবার আকাশ ছুঁই অবস্থা।নিশুয়া কিছু টা ভড়কে যায়। তারপর ও মনে সাহস সঞ্চয় করে বলে,,

“দেখুন sir ….. কিছু কিছু স্টুডেন্ট এর রাগ সবার উপরে দেখানো অন্যায়।”

শাহেদ যেন নিশুয়ার এমন কথায় কিছু টা নিভলো।কিন্তু তার রাগটা যে কমেনি এটা ক্লাসের সবাই টের পাচ্ছে।
শাহেদ ভেবে পায় না এই মেয়ে টা কি করে এতটা সাহস পায়।

রিদীমা নিজের কেবিনে বসে মাথাটা পিছনের দিকে দিয়ে চোখ বুজে। হালকা ব্যথা করছে মাথাটা।ফোনের রিংটন টা চরম বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তার কাছে।মনে মনে ভাবছে নাহ্ এইবার নাম্বার টা আবার চেন্জ করতে হবে। এভাবে আবার কাজ থেকে আলাদা হয়ে যাচ্ছে রিদীমা। বাইরের অনেক কিছুর প্রতি দুর্বলতা সৃষ্টি হয়েছে আবার তার ।নিজের কঠিন রূপ টা সে হাতছাড়া করতে চায় না।

হঠাৎ রিদীমার ফোনে মেসেজ আসে,”It’s urgent call”

রিদীমা দেখলো নাম্বার টা তার বাবার । কিন্তু এই মূহুর্তে কথা বলতে একেবারেই ইচ্ছে করছে না তার।তাই সে চোখ বন্ধ করে আগের মতোই রইল।

——————————————————-

স্বাদ চেম্বারে বসে কিছু দরকারি অফিসিয়াল কাগজ পত্র দেখছিলো,হঠাৎ বয়স্ক দুজন লোক চেম্বারে ঢুকে।
স্বাদ চোখ দুটো একবার উপরে তুলে তাকালো। নিজের কাজে পুনরায় মন দেয়।

স্বাদ– আমার তো আপাতত রোগী দেখার টাইম ওভার।

লোক দুটো স্বাদের সামনের চেয়ার দুটো টেনে বসে,,

একজন বললো,”hlw young man”

স্বাদ— yes….

অন্য জন বললো– আমরা তোমার patients নই।

স্বাদ— তাহলে??

বৃদ্ধ দের পিছনে একটা মেয়ে এসে দাঁড়ায়, স্বাদ অবাক হয়ে তাকায়। এটা তো সেই দিনের সেই propose করা বিদেশীনি।

স্বাদ তিনজনের দিকে তাকিয়ে কঠোর ভাবে বললো– “কি চাই?”

বৃদ্ধ দের একজন বললো– আমার নাতনি নাতাসা।

স্বাদ– তো??

বৃদ্ধ– আমরা তোমার কাছে আমাদের নাতনি নাতাসার পছন্দের কথা জানাতে এসেছি।

স্বাদ— Sry to say …. নাতাসা হয়তো জানে না I’m married….

এবার তিনজন ই যেন আকাশ থেকে পড়লো।হা করে তাকিয়ে আছে স্বাদের দিকে। নাতাসার যেন বিশ্বাস ই হচ্ছে না।

নাতাসা —- No ….. don’t tell lie

স্বাদ— it’s truth dear …. তোমাকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করলে কষ্ট পাবে,তাই সেদিন বলিনি।

নাতাসা মেয়ে টা কান্নায় ভেঙে পড়ে।বৃদ্ধ দুজন তাকে সামলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।স্বাদ ও কিছু টা দুঃখ অনুভব করে,কিন্তু কিছুই করার নেই। এটুকু মিথ্যা না বললে এই বিদেশী মেয়ে টা যেন তার পিছু ই ছাড়ছিলো না।

নাতাসা আবার স্বাদের দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি আমার সাথে চিট করতে পারো না Mr.Ahsan…”

স্বাদ— আমি কখন চিট করলাম?আমি আপনার কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলাম না কখনোই মিস নাতাসা।

নাতাসা যেন স্বাদের কথায় হতাশ হল।বৃদ্ধ দের সাথে স্বাদের চেম্বার থেকে বেরিয়ে গেল সে।স্বাদ একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।

রবিনদের ড্রয়িং রুমে বসে আছে পরিবারের সবাই। সুরাইয়া খান এক গ্লাস পানি এনে ধরলেন আফজাল সাহেবের সামনে। আফজাল সাহেব পানিটা এক চুমুকে শেষ করলেন।

আকাশ– মামা, এত বড় একটা accident ঘটে যেত আজ মিস ইসুয়া না থাকলে।

আফজাল সাহেব– এই মেয়ে টা ঐদিন একবার ঝামেলায় পড়লো ,আজ আবার আমাকে বাঁচালো ।মেয়ে টা বারবার আমাদের জন্য সমস্যায় পড়ছে।

সুরাইয়া খান— ভাইজান আল্লাহর দরবারে হাজার শোকরিয়া, আজ অল্পের জন্য কিছু হয়নি।

আফজাল সাহেব– কিন্তু আমার মাথায় চলছে……..

কথাটা বলতে গিয়ে ও চুপ হয়ে গেলেন তিনি। ড্রয়িং রুমে অনেক মানুষ। সবার সামনে এসব বলা ঠিক হবে না। এইটা ভেবেই চুপ হয়ে গেলেন।

দেলোয়ার খান—কিন্তু ভাইজান লোকগুলো কারা?কিছু ক্লু পেয়েছেন??

আফজাল সাহেব– আমার উপর হঠাৎ আক্রমণ করা হয়েছে দেলোয়ার, তাদের কিছু ই আমি ভালো করে খেয়াল করিনি।

দেলোয়ার খান দুঃখীভাব করে,”ওহ্।”

বাড়ির সদর দরজা দিয়ে তড়িঘড়ি করে ঢুকলো তমা আর রবিন। রবিন দৌড়ে এসে বাবার পাশে বসলো,,,

রবিন– ভার্সিটি গেট থেকে কেউ কি করে তোমাকে kidnapped করার সাহস করতে পারে?I can’t believe

আফজাল সাহেব– আমি ও বুঝতে পারছি না।

শুভ রবিনদের বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বললো,”সবকিছুই আগের থেকে full planned করা আঙ্কেল।”

নয়ন — নয়তো ভরা জনসাধারণের মাঝখানে কেউ এরকম সাহস দেখাবে না।

আফজাল সাহেব কিছু একটা ভেবে, “যাক এখন সবকিছু ঠিকঠাক আছে সেইইইই অনেক।”

রবিন— এখন থেকে অনেক সাবধানে থাকতে হবে সবাই কে।

তমা এগিয়ে এসে, “আমার তো এবার বেশ ভয় করছে বাড়ি থেকে বের হতে।”

দেলোয়ার খান মেয়ের দিকে তাকিয়ে, “রবিন বাবা আছে,ওর সাথে ভার্সিটিতে আসবে যাবে।আমার ও তোমার জন্য এইবার খুব চিন্তা হচ্ছে মামণি।”

আফজাল সাহেব— রবিন!!

রবিন– হ্যাঁ বাবা বল।

আফজাল সাহেব– ইসুয়া মামণির খোঁজ নিয়ে আমাকে জানাও,কেমন আছে ও??

রবিন — আচ্ছা।

দেলোয়ার খান আফজাল সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো, “ঐ মেয়ে আপনাকে কিভাবে সাহায্য করলো ভাইজান?একা একটা মেয়ে হয়ে……..”

আফজাল সাহেব— আমাকে টেনে যখন ওরা গাড়িতে উঠাচ্ছিলো ,তখন ইসুয়া ঐখান দিয়ে যাচ্ছিলো।প্রথমে বাকি পথচারী দের মত অচেনা ব্যক্তির ভান করে কাছে এগিয়ে আসে,এতে kidnappers রা তেমন কোনো গুরুত্ব দেয়নি,অসচেতন হয়ে যায়।কাছে আসার সাথে সাথে ব্যাগ থেকে কিছু একটা বের করে আমাকে চোখ বন্ধ করতে বলে স্প্রে করা শুরু করলো ইসুয়া।

নয়ন — মরিচ গুঁড়োর জল নিশ্চয়ই।

শুভ — হ্যাঁ এখন অনেক মেয়েই এগুলো নিয়ে চলাফেরা করে।

সুরাইয়া খান — যাক ,এই মেয়েটার সাহসিকতার জন্য ই আজ অনেক বড় বিপদ কাটলো।

আফজাল সাহেব– অনেক ঋণী হয়ে গেলাম।

তমা নাক উঁচু করে,”এ আর এমন কি কাজ?একজন ম্যাম হয়ে ভার্সিটির কৃর্তপক্ষের হ্যাড কে বাঁচানো তো দায়িত্ববোধের মাঝেই পড়ে।”

সুরাইয়া খান– তারপর ও আজকাল বিপদ আপদ দেখলে সবাই দূরে দূরে থাকে।কজন এগিয়ে আসে??

সবাই আলোচনায় মত্ত,রবিন মনে মনে বলে– “Miss.অধ্যাপিকা এত ঋণের বোঝা শোধ করতে গেলে আপনার উপর এই রবিন চৌধুরীর কত ঝড় তুফান যে যাবে,সব একসঙ্গে নিতে পারবেন তো??”

_____________________________(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here