Senior life partner পর্ব ৪৫

0
1690

#Senior_life_partner
পর্ব —– 45
Afrin Ayoni

??আমার কাছে তুমি মানে
সাত রাজার ধন
আমার কাছে তুমি মানে অন্য রকম!!

আমার কাছে তুমি মানে
সাত রাজার ধন
আমার কাছে তুমি মানে অন্য রকম!!

আমার কাছে তুমি মানে আমার পোষা পাখি
দিনে রাইতে চোখ বুজিয়া তোমায় আমি দেখি

তোমার কাছে হয়তো বন্ধু আমি কিছু না
তাই তো তোমার স্বপ্নে বন্ধু আমি আসি না

আমি মানে তুমি আর তুমি মানে আমি
আমার কাছে আমার চেয়ে বন্ধু তুমি দামী!!

আমি মানে তুমি আর তুমি মানে আমি
আমার কাছে আমার চেয়ে বন্ধু তুমি দামী!!

হেই হেই হেই আহো…….. হেই হেই হেই আহা
হেই হেই হেই আহো……… হেই হেই হেই!!

হেই হেই হেই আহো…… হেই হেই হেই আহা
হেই হেই হেই আহো…….. হেই হেই হেই!!??

গানটা রিদীমা যে বিল্ডিংয়ে থাকে তার আশপাশের কোনো বিল্ডিং থেকে ভেসে আসছে।কি আজব ব্যাপার!! না?? লন্ডনের মত শহরে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর একটা করে বাংলা গান শোনা যায়।

রিদীমা লন্ডন ব্যাক করেছে আজ ছয় মাসের ও বেশি সময় হয়েছে। স্বাদের ওখানে ছিলো দশ বারো দিনের মত। রেহানা বেগম অনেক জোরাজুরি করেন তাদের সাথে থাকার জন্য। কিন্তু রিদীমার মত self depended মেয়ে রেহানা বেগমের কথায় সম্মতি জানালো না। সে আলাদা বাসায় উঠে সম্পূর্ণ নিরাপত্তা সহ।

এই ছয় মাস সে শুভকে ও অনেক খোঁজার চেষ্টা করেছে। স্বাদ ও তাকে হেল্প করেছে এই কাজে।কিন্তু শুভর কোনো হদিস মিললো না। রিদীমা খুব ভালো করেই জানে শুভ আজ ও তাকে চোখে চোখে রাখে,,, রিদীমা আজ ও শুভর নজরবন্দি হয়েই আছে।কিন্তু এই ছেলেটা ইচ্ছে করেই তার থেকে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

রিদীমা তার secret gang আর রবিনের কাছ থেকে খোঁজ করে জানতে পারে শুভ তার বাবা মাকে লন্ডনের ফ্লাইটেই দেশ থেকে নিয়ে আসে রিদীমা এ দেশে আসার কিছুদিন পর। কিন্তু সবকিছু নীরবে করে ফেলেছে শুভ।একটা কাক পক্ষীতে ও টের পায়নি শুভর পরিবারের এইভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পিছনের ঘটনা।

রিদীমা কফিতে চুমুক দিতে দিতে গানটা মুগ্ধ হয়ে শুনছিলো।রিদীমার ফোনে কল আসাতে তার ধ্যান ভঙ্গ হল।

রিদীমা– Hlw ইসুয়া।

ইসুয়া– কেমন আছো আপু??

রিদীমা– তোমার কি খবর বল?? ডক্টরের কাছে গিয়ে চেক আপ করিয়েছো তো??

ইসুয়া– হুম

রিদীমা– এমন বোকামি আর করো না। তুমি এভাবে অসতর্ক হয়ে চললে তোমার সঙ্গে সঙ্গে আরো দুজনের রিস্ক আছে।

ইসুয়া– তুমি খবর টা পেয়েছো??

রিদীমা হেসে– হ্যাঁ রবিন আমাকে বলেছে।আমি double Princess এর পিম্মি হতে যাচ্ছি।

ইসুয়া– ????

রিদীমা– নিজের দিকে খেয়াল রেখো,,,,ভালো থেকো।

ইসুয়া– ওকে।

রিদীমা– রাখছি।

ইসুয়া– আপু ।

রিদীমা– হ্যাঁ বল,,,, কিছু বলবে??

ইসুয়া– না মানে। শুভর কোনো খোঁজ??

রিদীমা– ছয়টা মাস ধরে চেষ্টা করলাম তো অনেক।আমি আর টাইম ওয়েস্ট করতে চাচ্ছি না।আমার অনেক টা সময় এমনিতেই নষ্ট করে ফেলছি।

ইসুয়া– না আসলে তোমার ভাইয়ের চোখে সবসময় বন্ধুত্ব ভাঙার কষ্ট টা দেখি তো।তাই ভালো লাগে না।

রিদীমা– সব ঠিক হয়ে যাবে। এই শরীর নিয়ে এত টেনশন করো না তো।

ইসুয়া– Ok…. take care

রিদীমা– bye??

রবিন আর ইসুয়ার জমজ মেয়ে হতে চলেছে।ইসুয়া আজ সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় হঠাৎ পড়ে যায়। খুব বেশি উপর থেকে না পড়ায় ততটা ক্ষতি হয়নি।তারপর ও ডক্টর দেখাতে নিয়ে যায় রবিন।

রান্নাঘরে কাজ করছিলো সুরাইয়া খান। শিলা এসে দাঁড়ালো তার পিছনে,,,

শিলা– মা

সুরাইয়া খান– হ্যাঁ বল।

শিলা– বেগুনি খাব।

সুরাইয়া খান — দাঁড়া আমি ইসুয়ার জন্য আগে স্যুপ টা নামাই।তারপর তোর বেগুনি করে দিচ্ছি।

এর মধ্যেই সিনথিয়া দৌড়ে রান্নাঘরে ঢুকে — তুমি সরো তো মা,,,,আমাকে ও কিছু করতে দাও।

সুরাইয়া খান– বুঝলাম শ্বশুর বাড়ি যাবি।তাই বলে এত কাজ শিখতে হবে??

সিনথিয়া– রেহানা আন্টিকে ইমপ্রেস করতে হবে না।

শিলা — বাব্বাহ!! বিয়ে ঠিক হতে না হতেই গিন্নি সাজার কত চেষ্টা????

সিনথিয়া– দেব কান মলে তোর।এত পাকনামি করতে কে বলেছে??

সুরাইয়া খান সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে– এই নে স্যুপটা ড্রয়িং রুমে ইসুয়াকে দিয়ে আয়। দুপুরে তো রান্না করলি তুই।রাতের খাবারটা আমি রান্না করে নিতে পারবো।

সিনথিয়া– আচ্ছা দাও।আমি স্যুপটা দিয়ে আসছি।

শিলা — চল আমিও যাচ্ছি।

সিনথিয়া আর শিলা স্যুপের বাটিটা নিয়ে ড্রয়িং রুমে চলে আসে। ইসুয়া বসে আছে সোফায়। সামনাসামনি বসে আছে দিতী বেগম আর রবিন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ইসুয়ার ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। ইসুয়া মুখ মলিন করে বসে আছে।

শিলা — স্যুপ এসে গেছে।

সিনথিয়া বাটিটা ইসুয়ার সামনে সেন্টার টেবিলের উপরে রাখতেই ইসুয়া বলে উঠলো,,,, খাবো না আমি।

রবিন আড়চোখে তাকিয়ে– তোমার খেতে হবেনা। আমার মেয়েদের খেতে দাও।

দিতী বেগম ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে– এমন করলে চলে মা?? একটু খাও।

ইসুয়া– আমার এর গন্ধ সহ্য হচ্ছে না।

রবিন– নাকে আঙ্গুল চেপে ঢকঢক করে গিলে ফেল।

ইসুয়া– পারবো না বললাম তো।

আফজাল সাহেব এসে ইসুয়ার পাশে বসে,, ডক্টর কি বললেন আজ??

রবিন– ডক্টর বলেছেন এতদিন যে খাবারটা খেয়েছে এখন সেই খাবারটা ডাবল করে দিতে।

ইসুয়া– বাজে কথা।

দিতী বেগম– কথা বন্ধ করে খা তো স্যুপটা।

রবিন সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে– স্যুপ কে বানিয়েছে??

সিনথিয়া– মা??

রবিন হাফ ছেড়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো– যাক আমার মেয়েদের অন্তত তোর বানানো হাবিজাবি খেতে হবে না।

সিনথিয়া– কি?? আমি হাবিজাবি রান্না করি??

রবিন– তা নয় তো কী??

সিনথিয়া– তোকে তো আমি গলা টিপেই মেরে ফেলবো ফাজিল কোথাকার। ??

শিলা — ভাইয়া কিন্তু একেবারে ঠিক কথাই বলেছে।

সিনথিয়া অসহায় মুখ করে বললো– তুই ও।

রবিন ইসুয়া আর শিলা উচ্চ স্বরে হেসে উঠে। আফজাল সাহেব ভ্রু কুঁচকে বলেন– মেয়েটাকে এভাবে জ্বালাচ্ছিস কেন তোরা দুটিতে??

দিতী বেগম– সত্যিই তো।ও একটু রান্না শিখতে চাইছে তোদের জন্য শান্তি মত সেটাও করতে পারবে না।

সিনথিয়া– যখন তোদের ছেড়ে চলে যাব তখন মিস করবি।তখন চাইলে ও দেখা করতে পারবি না।

শিলা– আসলেই।তবে একটা কথা কি!! বাংলাদেশের খাবার গুলোর বারোটা বাজিয়ে এখন লন্ডনের ডিস গুলোর চৌদ্দটা বাজাতেই স্বাদ ভাইয়া তোমাকে ঐ দেশে নিয়ে যাচ্ছে।

রবিন হেসে– একদম রাইট।??

সিনথিয়া– দুর আমি গেলাম।তোদের সাথে আর কোনো কথাই নেই।

সিনথিয়া অভিমান করে চলে গেল।হ্যাঁ,,,, সিনথিয়ার সাজা মওকুফ করা হয়েছে দু মাস পর ই।কারণ তার কোনো গুরুতর অন্যায় ছিলো না। শোধরানোর জন্য তাকে দু মাস হাজতে কাটাতে হয়। সিনথিয়া নিজেকে অনেকটা সংশোধন করে ফেলেছে। তার ভালো আচরণের জন্য তাকে ছেড়ে দেয়া হয় কারাগার থেকে।

রেহানা বেগম স্বাদের বিয়ে নিয়ে এবার বাড়াবাড়ি রকমের পাগলামি করতে থাকেন।তিনদিন তিন রাত না খেয়ে অসুখ বাঁধিয়ে বসলেন।স্বাদ আর অমত করেনি। রেহানা বেগম যাকে পছন্দ করবেন তাকেই বিয়ে করে ঘরে তুলবে বলে দিয়েছে। রেহানা বেগম বাঙালি মেয়েকেই বউমা হিসেবে চায়। তাই তিনি আবারো কয়েক দিনের জন্যে দেশে আসেন ছেলের জন্য মেয়ে খোঁজতে।

দেশে এসে একা মানুষ কোথায় থাকবেন?? তাই রিদীমাদের বাড়িতেই উঠেন তিনি।সিনথিয়াকে দেখে তিনি অবাক হলেন। আগের চেয়েও অনেক পরিবর্তন আসে তার আচরণে। পোশাক আশাকেও অনেকটা শালীনতা এসেছে।ভদ্র স্বভাবের মিষ্টি মেয়ে হয়ে উঠেছে সিনথিয়া। তাই তিনি মেয়ে খোঁজার মত বোকামি করলেন না। রিদীমাদের বাড়িতে থেকেই সিনথিয়াকে কিছুদিন গোপনে গোপনে পর্যবেক্ষণ করলেন।তারপর আফজাল সাহেব আর সুরাইয়া খানের কাছে সিনথিয়া এবং স্বাদের বিয়ের প্রস্তাব রাখলেন।

স্বাদ নিঃসেন্দহে ভালো ছেলে।তারা আর অমত করলেন না। সিনথিয়ার মনে ও স্বাদের জন্য একটু soft corner ছিলো আগে থেকেই। এখন বিয়ের কথা শুনে সে কিছু বললো না। রিয়েকশ করেছিল স্বাদ। শেষমেশ কিনা সিনথিয়া?? আর মেয়ে পেল না তার মা। কিন্তু রিদীমার কথামতো স্বাদ ও আসে কয়েক দিনের জন্যে বাংলাদেশে।

সিনথিয়াকে বোঝার জন্য কিছু সময় দেয়।সিনথিয়ার সঙ্গে অনেকটা সময় স্পেন্ড করে সে।তারপর ধীরে ধীরে স্বাদ ও বুঝতে পারে আসলেই মেয়েটা অনেক change হয়ে গেছে। তারপর দুই পরিবারের মতানুযায়ী বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়। সিনথিয়া বলে সে আগে সংসারের সকল কাজ শিখবে তারপর শ্বশুরবাড়িতে পা রাখবে। এতে স্বাদ আর সিনথিয়া দুজনে দুজনকে চেনার আরেকটু সময় পাবে।

সিনথিয়ার কথায় স্বাদ আর রেহানা বেগম বেশ খুশি হলেন।মেনে ও নিলেন। ব্যাস ……সিনথিয়া সারাদিন ভর কাজ শিখছে নিজের সংসারের জন্য আর রাতে তার উডবি হাজবেন্ডের সাথে জমিয়ে প্রেম করছে।

যেতে যেতে নয় মাসে পা দিল ইসুয়া আর তার সন্তানরা।
আজ ইসুয়ার ডেলিভারি ডেট। বাড়িতে সবাই আজ যে যার কাজ ফেলে সারাক্ষণ ইসুয়াকে চোখে চোখে রাখছে।আজ সকাল সকাল নিশুয়া ও চলে এসেছে বোনের কাছে।

ইসুয়া সবার চক্ষুবন্দী আজ।নিশুয়াকে ইসুয়ার কাছে বসে থাকতে নির্দেশ দিয়েছে তার মা।ইসুয়া অস্বস্তিতে একটু কপাল ভাঁজ করেও শান্তি পাচ্ছে না।

নিশুয়া– কি হল? শরীর খারাপ লাগছে? আন্টিকে ডাকবো? ভাইয়াকে ডাকবো? কি হল বল?

ইসুয়া রেগে– তুই চুপ করে বসে পাহারা দেওয়ার হলে দে।একটা কথা বলবি তো।তোর জিভ কেটে শিন্নি রাধবো।??

নিশুয়া মলিন মুখে– আচ্ছা।তবে খারাপ লাগলেই বলবে কিন্তু।

ইসুয়া বেচারি এতটা কড়া পাহারায় আছে যেন নিঃশ্বাস নিতেও অসুবিধা হচ্ছে। হঠাৎ ইসুয়ার রুমে প্রবেশ করলো শাহেদ।

শাহেদ– আসবো??

ইসুয়া– আসেন ভাইয়া।

শাহেদ– শরীর ঠিকঠাক তো??

ইসুয়া– আলহামদুলিল্লাহ্।

শাহেদ– ভালো।তবে শরীর একটু খারাপ হলেই কাউকে না কাউকে জানাবে!

ইসুয়া– ভাইয়া আপনিও? আমার আর ভাল লাগছে না। সারাদিন আপনার ভাই পাহারা দিল।এখন এই হতচ্ছাড়ি উগান্ডাটাকে রেখে গেছে মা।আমি একটু comfortable ফিল করবো তার জো নেই।

শাহেদ আড়চোখে নিশুয়ার দিকে তাকাতেই নিশুয়ার চোখে চোখ পড়ে গেল।নিশুয়া অন্য দিকে ফিরে গেল।

শাহেদ– আমার জন্য এক গ্লাস পানি নিয়ে আসো তো।

নিশুয়া ভ্রু কুঁচকে– কাকে বলছেন??

ইসুয়া– কাকে আর তোকে!! যা,,পানি নিয়ে আয়।

নিশুয়া– আম্মু, আন্টির আর ভাইয়ার কড়া নির্দেশ তোমাকে এক সেকেন্ডের জন্য চোখের আড়াল করা যাবে না।

শাহেদ– এখানে আমি আছি তো।এত বেশি তোমাকে বুঝতে হবে না, যাও পানি নিয়ে এসো।

শাহেদের ধমকে নিশুয়া উঠে গেল।মুখটা বাংলার পাঁচ করে রুম থেকে বেরিয়ে গেল সে। ইসুয়া আর শাহেদ হেসে উঠলো।

শাহেদ– তোমার বোনটা এমন কেন??

ইসুয়া– আপনার ছাত্রী এমন কেন? সেটা আপনিই ভালো জানতে পারবেন!!

শাহেদ– আমার সাথে চালাকি করা হচ্ছে??

ইসুয়া– মোটেও না। ??

হঠাৎ ইসুয়ার তলপেটে মোচড় দিয়ে ওঠে। ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠে সে।কিন্তু সামনে থাকা বড় ভাইয়ের সামনে লজ্জায় সে স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে।শাহেদ বেচারা পুরুষ মানুষ,,, মেয়েলি ব্যাপারে সে নিতান্তই অজ্ঞাত।
সে ইসুয়ার সামনে বসে রইলো।

দিতী বেগম আর সুরাইয়া খান এসেছেন ইসুয়ার খোঁজ করতে। এসে তার চোখমুখ দেখে তাদের যা বোঝার ছিলো বুঝে নিয়েছেন।সুরাইয়া খান শাহেদের দিকে তাকিয়ে বললো,,,,,

সুরাইয়া খান — একটু ড্রয়িং রুমে যা তো।

শাহেদ– কেন??

দিতী বেগম– যেতে যখন বলছে যা না।

শাহেদ চলে যেতেই ইসুয়ার চোখমুখের রঙ পাল্টে গেল। কপাল দিয়ে সমানে ঘাম ঝড়তে লাগলো।দিতী বেগম ইসুয়ার পাশে বসেই রবিনকে কল দিলেন।

দিতী বেগম– কোথায় তুই??

রবিন– বাসার আশেপাশেই আছি নয়নের সাথে।

দিতী বেগম– জলদি আয়। গাড়ি বের কর।

রবিন– এক্ষুনি আসছি।

রবিন জলদি ফোন কেটে নয়নকে নিয়ে বাসায় আসে। দিতী বেগম আর সুরাইয়া খান,, ইসুয়াকে নিয়ে নিচে নেমে আসলেন।সিনথিয়া আর শিলা এগিয়ে আসে।নিশুয়া পানির গ্লাস হাতে এগিয়ে এসে,,,

নিশুয়া– কি হয়েছে??

দিতী বেগম– হসপিটালে নেওয়ার সময় হয়েছে। তোমার আম্মুকে ফোন করে খবরটা দিয়ে দাও।

নিশুয়া– আচ্ছা আন্টি।

দিতী বেগম, রবিন, সিনথিয়া ওরা তিনজনে ইসুয়াকে নিয়ে হসপিটালে যায়।ইসুয়ার বাবা মা ও মেয়ের কথা শুনে বাসা থেকে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়।

ইসুয়া কে নিয়ে হসপিটাল এডমিট করানো হল।রিদীমা তখন একটা মিটিং এ ব্যস্ত ছিলো।বাড়ির নাম্বার থেকে কল আসতে দেখেই তার টনক নড়ে। সে জলদি করে কলটা রিসিভ করে,,,

শিলা– আপু!!

রিদীমা– শিলা কি হয়েছে?? ইসুয়া ঠিক আছে??

শিলা– এখনো খবর জানি না।তবে হসপিটালে এতক্ষণে বোধ হয় এডমিট করা হয়ে গেছে।

রিদীমা– আচ্ছা। আমি রবিনকে কল দিচ্ছি।তুমি লাইনটা কাটো।

শিলা কল কেটে দেয়। রিদীমা মিটিং টা জলদি শেষ করে। রবিনের নাম্বারে কল দিতেই রিসিভ করে রবিন,,

রিদীমা– কি অবস্থা??

রবিন– OT তে নিয়ে গেছে।আমার খুব টেনশন হচ্ছে।

রিদীমা– আল্লাহ্ ভরসা। মা আছে তো??

রবিন– হুম।মা,,সিনথিয়া, ঝুমা আন্টি আর তারেক আঙ্কেল ও আছেন।

রিদীমা– ঠিক আছে। অপেক্ষা কর,,, ভয়ের কিছু নাই।
আমাকে update জানাস।অপেক্ষায় আছি।

রবিন– আচ্ছা।

রবিনের চোখ দুটো লাল হয়ে আছে। চুলগুলো উশকো খুশকো। চেহারায় ক্লান্তির ছাপ। প্রায় দুঘণ্টা পর একজন নার্স এসে দুটো নাদুসনুদুস মেয়ে রবিনের সামনে ধরলো।

নার্স– আপনার মেয়ে!!??

রবিনের হাতগুলো কাঁপছে। তার হাতে যেন কোন শক্তি পাচ্ছে না। দিতী বেগম এগিয়ে এলেন।একটা মেয়েকে দিতী বেগম নিজে নিলেন আর অন্য মেয়েটা ঝুমা বেগম নিলেন।

রবিন– নার্স,,,,,, আমার wife????

নার্স– উনার এখনো জ্ঞান ফিরেনি।

রবিন– কখন ফিরবে?

নার্স– কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন।

রবিন– দেখা যাবে????

নার্স– কেবিনে দেওয়া হলেই দেখতে পারবেন।

মেয়েদের কোলে নিয়ে দাদী নানির আনন্দের সীমা নেই।রবিন তার অধ্যাপিকার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় বসে আছে। সে তার অধ্যাপিকার সর্বোচ্চ সুস্থতা কামনা করছে মনে মনে।

নিশুয়ার চিল্লাচিল্লিতে সারা চৌধুরী বাড়ি কেঁপে ওঠে।সুরাইয়া খান কিছু কাজে বাইরে গিয়েছিলো।শিলা বাসার ছাদে।নিশুয়া যখন সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে চিল্লাচ্ছিলো তখন শাহেদ এগিয়ে এল,,,

শাহেদ– কি হল? এভাবে লাফালাফি করার মানে কী?

নিশুয়া– আমি আন্টি হয়ে গেছি।

শাহেদ– বুঝলাম আন্টি হয়েছেন।কিন্তু যেভাবে লাফাচ্ছেন হাত পা ভেঙে হসপিটালে ভর্তি হতে হবে।

নিশুয়া– আমার অনেক খুশি লাগছে।

শাহেদ– কেন??

নিশুয়া– দুই দুইটা ভাগ্নী!পরী!oooppppps

শাহেদ– হায় খোদা।

নিশুয়া– কখন বাসায় ফিরবে? আমার আর তর সইছে না।

শাহেদের পকেটের ফোনটা Vibration হচ্ছে। কলটা ধরতেই রিদীমার কন্ঠ ভেসে এলো,,,,

রিদীমা– হ্যাঁ রে কি অবস্থা?রবিন অনেক টেনশনে আছে,,, তাই ওকে কল করার সাহস পাচ্ছি না।

শাহেদ হেসে– তোর double Princess এসে গেছে পৃথিবীতে।

রিদীমা– ইসুয়া?ইসুয়ার কি খবর???

শাহেদ– ওটা তো জানি না। আমি জেনে কল ব্যাক করছি তোকে।

রিদীমা– আচ্ছা।

——————————————————–

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here