#Senior_life_partner
পর্ব—23
Afrin Ayoni
ইসুয়ার রিয়েকশ দেখে রবিনের কলিজা ফেটে হাসি আসছিলো।ইসুয়া বেচারী মুখ গম্ভীর করে বসে আছে। এত রাতে অন্যের বাড়িতে এভাবে জব্দ হতে হবে কখনো ই ভাবেনি সে।
ইসুয়া– দেখুন!!
রবিন– কি দেখবো??
ইসুয়া– শুনুন।
রবিন– বলুন।
ইসুয়া– আমাকে যেতে দিন।
রবিন– দুটি শর্তের একটা তো আগে বেছে নিন তবেই আপনার ছাড়।
ইসুয়া– ????
রবিন– কি?কোনটাতে রাজি আপনি? এখন এই মুহূর্তে আমাকে চুমু খেতে নাকি আগামী এক সপ্তাহ আমি যা বলবো তা করতে ??
ইসুয়া– এমন করা জুলুম হচ্ছে কিন্তু। আমার সাথে এমন করে কি লাভ আপনার?
রবিন– আচ্ছা!দুটি শর্ত ই মাফ দিব ….
ইসুয়া উচ্ছ্বসিত হয়ে— Thank you
রবিন– এত খুশির কিছু নেই Miss.অধ্যাপিকা। আমি এই দুটো শর্ত থেকে তখনই মাফ দিব যখন আপনি আমার তৃতীয় প্রস্তাবে রাজি হবেন।
ইসুয়া– সেটা আরেক টা ফাঁদ।
রবিন — সে আপনি যা ই ভাবেন।
ইসুয়া– তৃতীয় প্রস্তাব টা কী শুনি??
রবিন– আমাকে বিয়ে করতে হবে।আমার family আপনার বাড়িতে বিয়ের proposal নিয়ে যাবে।আপনি সুন্দর ভাবে রাজি হয়ে যাবেন।
ইসুয়া — আমাকে ভালো ভালোই যেতে দিন।এত রাতে আপনার এতগুলো ফালতু কথা শুনতে ইচ্ছে করছে না।
রবিনের ফোনে টুং করে একটা মেসেজ আসলো,রবিন ফোনটা হাতে নিলো।ফোনের স্কিনে বড় বড় করে লেখা —- “অনেক জ্বালিয়েছিস মেয়েটাকে,এইবার ওকে ঘরে যেতে দে।”
রবিন ভ্রু কুঁচকালো। মেসেজটা রিদীমার ছিলো।রবিনের হালকা টনক নড়লো।না,এবার বেশিই বাড়াবাড়ি হচ্ছে। বাড়ির অন্য কেউ দেখলে কি ভাববে?নিজের জন্য না হলেও ইসুয়ার জন্য ঘটনা টা লজ্জাজনক হবে।তাই রবিন বেশি দেরি করবে না বলে ঠিক করলো।
রবিন ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো — জলদি ডিসাইড করুন কি চান??
ইসুয়া বুঝলো যে এই বান্দার হাত থেকে তার নিস্তার নেই। তাই সে দ্বিতীয় কন্ডিশন টা ই বেছে নিল।
রবিন– Ok আগামী এক সপ্তাহ আমি যা বলবো তা করতে হবে মনে রাখবেন।আপনার সময় শুরু কাল সকাল থেকে।
ইসুয়া আর এক মুহূর্ত দেরি করলো না রবিনের ঘর থেকে বের হয়ে এল।রবিন বেচারা মুচকি হেসে বিছানায় লাফিয়ে পড়লো। বুকের ধড়ফড়ানিটা ক্রমশ বেড়ে চলছে ইসুয়ার।থামার নাম গন্ধ নেই। খুব ভয় পেয়ে গেছিলো সে।শত হলেও একটা মেয়ে ইসুয়া।
ওয়াশরুম থেকে চোখে মুখে পানির ছিটে দিয়ে বেরিয়ে এল ইসুয়া। এখন রাত আড়াইটা বাজে।বিছানায় পিঠ লাগাতেই ঘুমে চোখ বুজে আসে তার।
স্বাদের চোখে ঘুম নেই। ভালো লাগছে না কিছু। রিদীমার কথা মনে পড়ছে খুব।ভার্সিটির দিনগুলোতে ও এতটা টান অনুভব হয় নি,, যা এই কয়দিনে গাঢ় আকারের ধারণ করেছে। এই কয়দিনের সময় গুলোতে রিদীমাকে সত্যি আরো কয়েক গুণ বেশী করে পেতে ইচ্ছে করছে।
স্বাদ বসে আছে রকিং চেয়ারে। মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে। কফি খেলে ভালো লাগতো।চোখ বন্ধ করে চেয়ারে বসে বারবার দুলতে লাগলো।হঠাৎ ই নাকে কড়া এক কাপ কফির ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে আসতেই চোখ মেলে তাকালো স্বাদ।
স্বাদ– ওহ …. মা তুমি!!
রেহানা বেগম– এই নে কফি টা ধর।
স্বাদ– Thnx মা,এটার ভীষণ প্রয়োজন ছিলো এখন।
রেহানা বেগম– আগে কফিতে চুমুক দে,পরে কথা বলিস।
স্বাদ দু চুমুক কফি খেল।রেহানা বেগম তার ফর্সা রঙের ছেলের দিকে মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। রেহানা বেগম চেয়েছিলেন তার প্রথম সন্তান যেন মেয়ে হয়।কিন্তু যখন তার স্বামী তাকে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা রেখে Car accident এ মারা যান তখন সে আর তার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়েন তিনি। তারপর স্বাদের জন্ম হয়। মেয়ে সন্তানের ইচ্ছে থাকলে ও তখন তার একটা ছেলে সন্তানের খুব প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাই তিনি স্বাদের জন্ম নেওয়াতে ও আল্লাহর দরবারে শোকরিয়া আদায় করেন।
রেহানা বেগম– এবার বল কি হয়েছে?
স্বাদ– কিছু না মা।
রেহানা বেগম– তাহলে তোর মুখ দেখে খুশি মনে হচ্ছে না কেন?
স্বাদ– আমার এত রাতে খুশি হওয়ার কি কোনো কারণ আছে?
রেহানা বেগম– অবশ্যই আছে।কাল আমরা দেশে ফিরছি, এতে আমার চেয়েও তোর বেশি খুশি থাকার কথা নয় কী??
স্বাদ– আমি happy ই তো।
রেহানা বেগম– তোর মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে না তো।
স্বাদ– একটু Disturb ছিলাম তাই।
রেহানা বেগম– তোর সব গোছানো আছে?
স্বাদ– হুম,তুমি তৈরি হয়ে নিও।এখন অনেক রাত হয়েছে ঘুমোতে যাও,নয়তো শরীর আবার খারাপ করবে।
রেহানা বেগম ঘুমানোর উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো।সত্যিই বয়স টা বেড়েছে।এখন একটু অনিয়ম করলেই শরীর ভেঙে পড়ে। তাই ছেলের কথা ফেললেন না তিনি।
——————————————–
“খোলা জানালা দখিনের বাতাসে
থেকে যায় পর্দার আড়ালে…..
কখন তুমি?এসে হেসে বলে দাও
আছি তোমার পাশে……
বহুদূর পথ,ভীষণ আঁকাবাঁকা
চলতে ভীষণ ভয়,,,,,
তুমি এসে বলে দাও—-
আছি আমি পাশে,করো না কিছুতেই ভয়
কখনো ভাবিনি চলে যাবে তুমি
আমাকে এভাবে কাঁদিয়ে
কখনো বুঝিনি ফিরে আসবে না
আমার পৃথিবী রাঙিয়ে।।”
এত সকাল সকাল ভাইয়ের দরদ মাখা শীতল কন্ঠ শুনে দু কাপ চা নিয়ে ছাদে উঠে আসে শিলা।গানটা গেয়ে চোখ বুজে সকালের ঠান্ডা বাতাস উপভোগ করছিলো শাহেদ।পিছন থেকে ভাইয়ের উদ্দেশ্যে,,,
শিলা — বন্ধ করলি কেন?আরেকটু গা না ….
শাহেদ পিছনে ফিরে বোনের দিকে এগিয়ে যায়। চায়ের কাপ হাতে তুলে নেয়।
শাহেদ — আপাতত আর না,এখন বরঞ্চ থাক।
শিলা — তুই খুব ভালো গাস।
শাহেদ হেসে অন্য দিকে ফিরে। শিলা খানিকক্ষণ পরে ইতস্তত করে বলে,”তা আপুর সাথে কখন দেখা করতে যাবি কিছু ঠিক করলি?”
শাহেদ– হাতে সময় নেই।সামনেই Student দের সেমিস্টার exam….
শিলা — আমাকে একদম বুঝাবি না এসব ভুংভাং
শাহেদ– ???
শিলা — আপুকে বাসায় ইনভাইট কর।
শাহেদ– Business lady রিদীমা চৌধুরীর সময় হবে না তোর সামান্য শিক্ষক ভাইয়ের বাসায় দাওয়াত গ্রহণ করার।
শিলা — সে পরে দেখা যাবে।
শাহেদ– বেশি বকবক না করে তুই ব্রেকফাস্ট দে তো টেবিলে।আমি আসছি।
শিলা ভাইয়ের আদেশে নিচে নেমে গেল।শাহেদ তার ভাবনার গভীরে তলিয়ে যেতে থাকে। সত্যিই রিদীমার সাথে দেখা করাটা খুব জরুরী হয়ে দাঁড়িয়েছে।সে ও আর পারছে না নিজেদের মধ্যে এত ভুল বোঝাবুঝি রেখে দূরে সরে থাকতে।
সকালবেলা রান্নাঘরে সুরাইয়া খান আর দিতী চৌধুরী কাজ করছিলেন।রবিন ইদানিং একটু বেশিই রান্নাঘরে উঁকি ঝুঁকি মারছে। বিষয়টা সুরাইয়া খান ভালোই লক্ষ্য করেছেন। সুরাইয়া খান তখন রুটি বলেছিলেন,রবিনের উপস্থিতি টের পেয়ে বললেন,,,,
সুরাইয়া খান — কি রে?কাকে চাই?মা কে নাকি ফুফুকে?
রবিন ফুফুর কথায় রান্নাঘরে ঢুকলো। দিতী বেগম মন দিয়ে তার কাজ করে যাচ্ছেন।ছেলের সাথে এখন বিন্দুমাত্র কথা বলার সময় নেই বলে মনে হচ্ছে তার।
রবিন সুরাইয়া খানের দিকে এগিয়ে গিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে, “দেখেছো ফুফু মমের চেয়ে ও তুমি আমার বেশি খেয়াল রাখো।”
সুরাইয়া খান — মানে?
রবিন– আমি সেই কখন থেকে রান্নাঘরের দরজায় দাঁড়িয়ে আছি,তুমি ঠিক ই খেয়াল করলে মম বুঝলো না।
দিতী বেগম– আপা, হতচ্ছাড়াকে কাজের কথা থাকলে বলে বিদায় হতে বল।আজাইরা টাইম নেই,অনেক কাজ হাতে।
সুরাইয়া খান — মম ক্ষেপে আছে,কি বলতে এসেছিস বলে বিদায় হ।
রবিন ফ্রিজ খুলে একটা আপেল হাতে নিল।আপেলে কামড় বসাতে বসাতে বললো,”তোমাদের অনেক কাজ করতে হয়,তোমাদের যাতে কাজ করতে না হয় একটা লোক নিয়ে আসলেই তো হয়।”
দিতী বেগম– সরাসরি বল বিয়ে করে বউ আনতে চাস ।এত নাটক করছিস কেন?
সুরাইয়া খান হালকা হেসে — তা মাথায় হঠাৎ বিয়ে করার ভূত কেন চাপলো? তুই তো মেয়ে দেখলে এমন ভাব মারিস যেন তোর সামনে পেত্নি দাঁড়িয়ে আছে।
রবিন দুষ্টু হেসে– তোমার ভাইপো স্বয়ং শাকচুন্নির কবলে পড়েছে ফুফু।আমাকে বিয়ে দাও।
সুরাইয়া খান — ছোটখাটো পেত্নিদের রেখে ডিরেক্ট শাকচুন্নির প্রেমে পড়লি?হায় খোদা!!
দিতী বেগম– পেনপেনানি শেষ হলে রান্নাঘর থেকে যা।
রবিন– এভাবে বলছো কেন?
সুরাইয়া খান — তা ভাগ্যবতী মেয়ে টা কে??
দিতী বেগম– পোড়া কপালী মেয়ে টা আর কেউ নয় আপা, ওর ভার্সিটির ই টিচার।
সুরাইয়া খান — কি বলিস ?
রবিন– তোমরা দুজন ই তাকে দেখেছো।
এবার দিতী বেগম হাতের কাজ দুহাত দূরে ফেলে ছেলের দিকে এগিয়ে আসেন।
দিতী বেগম– ফাজলামি করার জায়গা পাস না??
রবিন অসহায় মুখ করে– সত্যি!!
সুরাইয়া খান — আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
রবিন– ঐ যে তারেক আঙ্কেলের বড় মেয়েটা আছে না, ইসুয়া!! সেই ই…..
দিতী বেগম আর সুরাইয়া খান একজন আরেকজনের দিকে চেয়ে আছেন।রবিন বুঝতে পারছে না তার মা আর ফুফুর কেমন রিয়েকশ হবে??
দিতী বেগম– সত্যি ইসুয়া কে তোর পছন্দ??
সুরাইয়া খান — ঐ মিষ্টি মেয়ে টা !!
রবিন– আমি কি করলা নাকি? ও মিষ্টি হলে আমি রসগোল্লা।
দিতী বেগম– আমার বিশ্বাস হচ্ছে না ইসুয়া আমার একমাত্র ছেলের বউ হবে।
রবিন হা করে আছে। মায়ের এমন কথা একেবারেই আশা করেনি বেচারা। মা যে ইসুয়াকে এতটা পছন্দ করে ধারণার বাইরে ছিলো তার।রবিন বুঝতে পারে এবার যা করার তার মা ই করে ফেলবে।তাই নিশ্চিন্তে সে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলো।
দিতী বেগম আর সুরাইয়া খান খুশি মনে সবার ব্রেকফাস্ট বানাতে লাগলেন।আর দিতী বেগম তো মনে মনে ঠিক ই করে ফেলেছেন খাবার টেবিলে বসলেই আজ তিনি এ বিষয়ে আলোচনা করবেন পরিবারের বড়দের সাথে। আর দেরি করা ঠিক হবে না।
______________________(চলবে)