Senior।life partner পর্ব ২২

0
1703

#Senior_life_partner
পর্ব—22
Afrin Ayoni

স্বাদ আর রেহানা বেগম ডিনার টেবিলে বসে আছেন।স্বাদের চোখ দুটো টকটকে লাল বর্ণের হয়ে আছে।আলু আর মাছের তরকারি টা স্বাদের প্লেটে তুলে দিতে দিতে রেহানা বেগম বললেন,,,

রেহানা বেগম– কিরে তোর শরীর ঠিক আছে তো?

স্বাদ ভাত নাড়াচাড়া করতে করতেই জবাব দেয়, “হু”

ছেলেকে অন্য মনস্ক দেখে রেহানা বেগম বললেন,”কি হয়েছে বলবি তো!না বললে বুঝবো কি করে?”

স্বাদ– মা আমার খেতে ইচ্ছে করছে না, শরীর টা ভালো লাগছে না। একটু ঘুমোতে পারলে ভালো হত।

রেহানা বেগম– একটু খেয়ে যা।

স্বাদ ততক্ষণে খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে।সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো,”কাল evening এ আমাদের ফ্লাইট মা,রেডি থেকো।”

ছেলের কথায় রেহানা বেগমের মনটা আনন্দে নেচে উঠলো,পরক্ষণেই আবার ছেলের মন খারাপের কারণটা না বুঝতে পারার দ্বিধায় ভুগতে লাগে।
———————————————–

হ্যাঁ রে ভাইয়া,রিদীমা আপু দেশে ফিরেছে বললি না তো!!

শিলার কথায় অবাকের চরম পর্যায়ে উঠে পড়ে শাহেদ। তারপর অবাক চাহনিতে বোনের দিকে তাকিয়ে বললো,,,

শাহেদ — আমি নিজে ও তো জানি না,,তুই কোথায় শুনলি?

শিলা — সে কি রে ভাইয়া!!

শাহেদ ভ্রু কুঁচকে– কি??

শিলা — সত্যিই তুই জানিস না?

শাহেদ– আমি কি তোর সঙ্গে মিথ্যা বলছি?

শিলা — ???

শাহেদ– রিদীমা এসেছে তুই কোত্থেকে শুনে এলি?

শিলা — আমি আবার কার কাছে শুনবো?আমার কি তোমার মত ডিটেকটিভ গ্রুপ আছে নাকি?

শাহেদ– তাহলে??

শিলা — বান্ধবীদের সঙ্গে ফুচকা খেতে বেরিয়ে ছিলাম, একটা black গাড়িতে বসে আপুকে যেতে দেখেছি।

শাহেদ– তুই Sure …. ঐ টা রিদীমাই ছিলো?

শিলা — আমি আগের মত ছোট নেই ভাইয়া, যে মানুষ চিনতে ভুল করবো।

শাহেদ– Ok

শাহেদ নিজের পকেট থেকে মোবাইলটা বের করে কাউকে কল করতে নাম্বার ডায়েল করে।বেলকনিতে এসে দাঁড়ায়। ফোনটা রিসিভ হতেই শাহেদের রাগ মিশ্রিত কন্ঠ কানে আসে শিলার।

শাহেদ ফোনের ওপাশে কাউকে বলছে,”তোমাদের কাজে অনেক হেরফের হচ্ছে, টাকা গুলো কি government থেকে বসে বসে খাওয়ার জন্য পাচ্ছো?কাজে focus করো,নয়তো বেরিয়ে যাও।ছোট থেকে ছোট সকল তথ্য আমাকে দিতে ভুল হলে পরের বার আর warning দেওয়া হবেনা, direct সাসপেনশন লেটার হাতে পাবে??”

কথাগুলো বলেই ফোনটা কেটে দিল শাহেদ।তারপর বাইরের অন্ধকার শহর টার দিকে তাকিয়ে হারিয়ে যেতে থাকে।এবার কি সেই সুযোগটা পাবে শাহেদ। একটিবার কি দাঁড়াবে রিদীমার সামনে গিয়ে?এতদিন এই জগতের সকলের কাছ থেকে যেটা আড়াল করে গেছে,যার জন্য ভালবাসার মানুষটার থেকে এত দূরে সেটা কি রিদীমাকে এখন বলে দেওয়া উচিত নাকি আরো সময় নেওয়া দরকার??

চৌধুরী বাড়িতে সবাই তখন আড্ডায় ব্যস্ত,, অনেক জোরাজুরি করে আফজাল সাহেব আজ ইসুয়াদের family কে এই বাড়িতে থাকতে রাজি করিয়েছেন। ইসুয়া নিশুয়া দুজনে রিদীমার ঘরটা ঘুরে ঘুরে দেখছিলো। রিদীমা তার ঘরের বারান্দায় বসে অফিস কল এটেন্ড করছিলো।

ইসুয়া– অনেক রুচিশীল মানুষ রিদীপু,তাই না রে??

নিশুয়া মুখ ভেঙ্গচিয়ে– তো কি তোর মত ক্ষেত হবে?

ইসুয়া রেগে– আমি ক্ষেত??

নিশুয়া– হ্যাঁ, তুই মুলার ক্ষেত,সবজির ক্ষেত,সরিষার ক্ষেত।

দরজায় দাঁড়িয়ে হা হা করে হেসে উঠলো রবিন।দু বোন অবাক চোখে দরজায় তাকায়,,,নিশুয়া রবিনকে দেখে যেন সাহস পেল।এগিয়ে গিয়ে দাঁড়ায় রবিনের সামনে,,

নিশুয়া– আমি ঠিক বলেছি না , ধুলাভাই??

রবিন নিশুয়ার গাল টেনে বলে — আমার শালিসাহেবা কি কখনো ভুল বলতে পারে ?

নিশুয়া– great ধুলাভাই

ইসুয়া অল্প চিৎকার করে নিশুয়াকে শাসায়,”বেয়াদবির একটা লিমিট থাকা দরকার নিশু…. নিচে যা”

নিজের বাড়িতে এমন ধমক খেলে কিছু মনে করতো না নিশুয়া, কিন্তু এই বাড়িতে ইসুয়ার ধমক খেয়ে অভিমানে চুপ হয়ে যায় নিশুয়া। মুখ গোমড়া করে নিচে চলে যায়। খুব রেগে গেছে সে,আর কথা বলবে না ইসুয়ার সাথে মনে মনে ঠিক করে নিয়েছে।

নিশুয়ার নীরবে চলে যাওয়াটা রবিনের মনে দাগ টানে।ছোট পিচ্চি মেয়েটা না হয় একটু মজাই করেছে তাই বলে এরকম শাসন করতে হবে??রবিন ও কিছুটা বিরক্ত হয় ইসুয়ার উপর।বারান্দায় রিদীমা অফিস কলে busy ……

রবিন ইসুয়ার দিকে এগিয়ে এলো,,

রবিন– এটা কি হল?

ইসুয়া– কোনটা?

রবিন– নিশুয়াকে এভাবে বকা উচিত হয়নি আপনার?

ইসুয়া– নিজের ছোটবোনকে কিভাবে শাসন করতে হবে ঐটা অন্য কারো কাছ থেকে আশা করি আমার শিখতে হবে না।

রবিন– খুব সাহস হয়ে গেছে,,না??

ইসুয়া– সাহস আমার আগে থেকেই ছিলো,নতুন নয়।

রবিন– Miss.অধ্যাপিকা মুখে মুখে তর্ক করার কি ফল হবে আপনি চিন্তা ও করতে পারবেন না।

ইসুয়া– এইসব থ্রেট অন্য কাউকে দিবেন,ইসুয়া তালুকদারকে নয়।অনেক হয়েছে এমন ব্ল্যাকমেল করার অভিনয়।

রবিন– তাই বুঝি?আপনি সত্যিই এসব ভয় পান না ??

ইসুয়ার কাঠ কাঠ জবাব– না ।

রবিন– Ok …. just wait & watch…..

ইসুয়া কোনো জবাব দেয় না। রবিন রিদীমার ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। ইসুয়া বড় একটা নিঃশ্বাস ফেলে খাটের উপর বসে পড়ে। হঠাৎ আবার দরজা নক করার শব্দে বাইরে তাকায় ইসুয়া। রবিন ই দরজায় দাঁড়িয়ে আছে,,

রবিন– তা Miss. অধ্যাপিকা আপনি হয়তো এখনো জানেন না,অথবা খবরটা এখন পর্যন্ত আপনার কানে আসেনি যে …. আপনারা আজ রাতের জন্য আমাদের গেস্ট।

ইসুয়ার চোখ দুটো মার্বেলের মত ঘুরপাক খেতে থাকে।

ইসুয়া– What?

রবিন– জ্বি আজ আপনারা আমাদের বাড়িতেই থাকছেন।

ইসুয়া— না,কক্ষনো না, জীবনেও না।

রবিন– সারাজীবন কই থাকবেন এটা না হয় আমরা দুজন মিলে পরে ডিসাইড করবো,আপাতত আজ রাত আপনি আমার বাড়িতে আমার হাতের নাগালের মধ্যেই আছেন।

ইসুয়া অসহায় মুখে তাকিয়ে রইলো।এ যেন বাঘের গুহায় বসে বাঘের সাথেই যুদ্ধ করতে কাটাচামচ নিয়ে সামনে বসে আছে ইসুয়া।আজ আর সত্যি সত্যি রেহাই নেই ঐ বদ বেটার হাত থেকে। জোরে জোরে কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে করছে নিজের।
প্রায় দশ মিনিট বসে ছিলো স্থির হয়ে ইসুয়া। পরক্ষণে ভাবলো যে, না তাকেই কিছু একটা করতে হবে।এত রাতে দরকার হলে সে একা বাসায় চলে যাবে।তারপর ও এখানে থাকবে না।

যে ভাবা,সে কাজ।বাবাকে বলার প্রস্তুতি নিয়েই নিচে নেমে আসে ইসুয়া।সবাই একসঙ্গে গল্প করছিলো।ইসুয়া কে দেখে আফজাল সাহেব আনন্দের সাথে বলে উঠেন,,

আফজাল সাহেব– আরে ইসুয়া মামণি এসো এসো।

রবিন একবার ইসুয়ার চেহারার দিকে আড়চোখে তাকায়। ইসুয়া এসে সোফায় বসলো।ইসুয়া উশখুশ উশখুশ করছে।বুঝতে পারছে না কথাটা কি করে বলবে?

সবাই যার যার আড্ডায় ব্যস্ত। ইসুয়া তারেক সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো, “বাবা অনেক রাত হয়েছে।এবার আমাদের ফেরা উচিত।”

রবিন মনে মনে– ওহহো মহারাণী এই মতলব আটছে মনে মনে তাইলে??

আফজাল সাহেব ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে– কিন্তু মামণি তোমরা তো আজ যাচ্ছো না।

ইসুয়া সবটা জেনে ও অবাক হওয়ার ভান করে বললো — মানে??

তারেক সাহেব– আর বলিস না মা,তোর আঙ্কেল আমাদের ছাড়তেই রাজি হচ্ছে না। তাই আজ রাতটা আমরা এখানে ই থাকছি।

ইসুয়া– কিন্তু বাবা……….

দিতী বেগম– ইসুয়া মামণি আজ একটা রাত আমাদের সাথে থাকো না, আশা করি খারাপ লাগবে না।

ঝুমা বেগম– ভাবী আপনি এভাবে কেন বলছেন,আমরা তো সিদ্ধান্ত নিয়েছি ই আজ থাকবো।এতে আমার মেয়ে দুটোর মত থাক আর না থাক।

ইসুয়া বুঝে গেছে এদের বুঝিয়ে আর লাভ নেই। এরা বুঝবে বলে মনে হচ্ছে না। আজ এইখানেই নয় নাম্বার বিপদ সংকেত নিয়ে থাকতে হবে তাকে। ওর মা নাছোড় বান্দা,যেটা বলেছে সেটার আর নড়চড় নেই।

এইদিকে ইসুয়ার দিকে তাকিয়ে নিশুয়া আর রবিন শয়তানি হাসি দিচ্ছে।

সবাই ডিনার করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।রবিনদের বাড়িতে দুটো গেস্টরুম। একটা নিচতলায় রান্নাঘরের পাশে ,আরেকটা দোতলার কর্ণারে রবিন আর রিদীমার ঘরের মাঝখানে।

দুর্ভাগ্যক্রমে ইসুয়া আর নিশুয়া কে দোতলার গেস্টরুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে। আর ওদের বাবা মা নিচতলায় রয়েছেন।

বাম পাশের রুমটা যে রিদীমার সেটা ইসুয়ার জানা থাকলে ও ডান পাশের রুমের মালিক কে সেটা ইসুয়ার ধারণার বাইরে ছিলো।

রাত তখন 1:45 মিনিট।পুরো বাড়ি নিস্তব্ধ।সবাই হয়তো ঘুমে বিভোর।শুধু ঘুম আসছে না ইসুয়ার চোখে। পাশে থাকা নিশুয়া ও তৃপ্তি নিয়ে ঘুমোচ্ছে। ইসুয়া সহজে কোথাও যায় না, বাড়িতে ই থাকে।কারণ তার নতুন জায়গায় ঘুম আসে না। সমস্যা হয়।আজকেও তাই হচ্ছে। অনেক চেষ্টা করেও চোখে ঘুম আনতে অক্ষম সে।

কিন্তু তারপর ও অন্ধকার রুমে সে সোজা হয়ে শুয়ে আছে বোনের পাশে।কিছুক্ষণ পর চোখ লেগে এসেছিল ঘুমে।মনে হচ্ছে সে হাওয়ায় ভাসছে।কিন্তু চোখ খুলতে ইচ্ছে করছে না। এদিক থেকে নড়ে অন্য দিকে ফিরবে বলে যেই পাশ কাটতে যাবে,তখনই কারো বুকে তার নাক মুখ বিধলো। চোখ খুললো তাড়াহুড়ো করে।যেই চিৎকার করবে বলে ঠিক করছিলো তখনই কেউ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বললো,,

“চুপচাপ যা হচ্ছে হতে দিন,বেশি বাড়াবাড়ি করলে এরচেয়ে ও খারাপ+বেশি কিছু হয়ে যাবে।তখন আমাকে দায়ী করতে পারবেন না।”

ইসুয়া বুঝে গেছে যার খপ্পরে পড়ার ছিলো ,তার কাছে ধরা পড়ে গেছে সে।বিপদ না বাড়িয়ে চুপ থাকাই শ্রেয়। রবিন ইসুয়াকে কোলে করে নিজের রুমে নিয়ে আসে।ইসুয়াকে খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে নিজের রুমের দরজা লাগায়।রুমের লাইট এতক্ষণ অফ ছিলো বিধায় অন্ধকারে আচ্ছন্ন ছিলো দুজনে।লাইট অন করে ইসুয়ার পাশে এসে বসে রবিন।

ইসুয়া নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। রবিন ইসুয়ার অস্বস্তি বুঝতে পারে।

রবিন– এবার বলুন,আপনাকে কি শাস্তি দেওয়া যায়?

ইসুয়া– ???

রবিন– এভাবে তাকিয়ে কোনো লাভ নেই, আপনি যতটা ইনোসেন্ট সাজতে চাইছেন ততটা ধোয়া তুলসী পাতা ও আপনি নন Miss. অধ্যাপিকা।

ইসুয়া চুপ করে থাকে।

রবিন— So বলে ফেলুন,কেমন শাস্তি আপনি চান?

ইসুয়া– কোনটাই না।গেস্টের সাথে এত রাতে এটা কেমন বিহেভ?

রবিন– আমি আমার বাড়ির অতিথি দের এতরাতেই আপ্যায়ন করি।

ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে– তা সব কি মেয়ে অতিথি ই ??

ইসুয়ার কথাটা বুঝতে রবিনের কিছু সময় লাগে,তারপর বললো — এত জেনে আপনার কাজ কী?আপনি বরং নিজের চড়কায় তেল দিন।বলুন,আপনাকে কি সাজা দেওয়া যায়??

ইসুয়া– একটা গান শুনান।

রবিন– punishment আপনার,,,,আমার না।

ইসুয়া আবারো চুপটি মেরে বসে থাকে।

রবিন হুট করে বলে উঠে — Kiss me ….

ইসুয়া চোখ বড় বড় করে — কী??

রবিন– ওহ্,আপনি তো আবার বাংলা অধ্যাপিকা। বাংলায় বললে বুঝবেন নিশ্চয়ই। আমাকে চুম্বন করুন Miss. অধ্যাপিকা।

ইসুয়া– এটা কেমন ফাজলামি??

রবিন– এতদিন যতবার আমাদের মধ্যে কিস আদান প্রদান হয়েছে সবই আমার তরফ থেকে ছিলো।আজ আপনি সেগুলো সুদে আসলে ফিরত দিবেন আর এটাই আপনার উপযুক্ত শাস্তি।

ইসুয়া– অসম্ভব।

___________________________(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here