#Senior_life_partner
পর্ব—21
Afrin Ayoni
হন্তদন্ত হয়ে রবিন শুভ আর নয়ন চৌধুরী বাড়িতে ঢুকলো।আফজাল সাহেব তখন তার family doctor আরিফের সঙ্গে ওনার মায়ের অসুস্থতার ব্যপারে আলোচনা করছিলেন।রবিন দৌড়ে এসে ,,,
রবিন– আরিফ আঙ্কেল এখন কি অবস্থা দাদীজানের?
আরিফ — টেনশনের কিছু নেই আপাতত,তবে…..
রবিন– তবে কি ?
আরিফ — তবে একটা bad news আছে,উনি আপাতত ভালো থাকলেও ওনার হার্টের কন্ডিশন খুব একটা ভালো না।
রবিন– মানে?
আরিফ– মানে ওনার হার্ট 98% ব্লক হয়ে গেছে,এখন এই বয়সে এই পর্যায়ে এসে ওনার অপারেশন করা খুব রিস্ক।
আফজাল সাহেব চিন্তিত ভঙ্গিতে,”তাহলে কি করণীয় এখন?”
আরিফ– এখন ওনাকে কোনো স্ট্রেস দিও না, একটু মানসিক চাপ ওনার উপর বিরাট প্রভাব ফেলবে। হার্ট এট্যাক অবধি হতে পারে।
আফজাল সাহেব– এখন কি মাকে হসপিটালে ভর্তি ….
আরিফ– একদম ই না,এখন উনি সুস্থ আছেন।ওনাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। হসপিটালের বদ্ধ পরিবেশে হাফিয়ে উঠবেন ।বাড়িতে থাকাই better….
রবিন– ok
আরিফ– ওনার প্রতি আরো বেশি যত্নশীল হতে হবে।
ডাক্তার সাহেব সবকিছু বুঝিয়ে বলে বিদায় নিলেন।শুভ আর নয়ন রবিনের সাথে কিছুক্ষণ থেকে শান্তনা দিয়ে তারাও নিজ নিজ বাসায় চলে যায়।সবাই তখন ড্রয়িং রুমে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বসেছিলো, হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। রান্নাঘর থেকে দিতী চৌধুরী তাদের বাড়ির কাজের লোক রহিমাকে ডেকে দরজা খুলতে বলে।রহিমা দরজা খুলে দেয়।
রহিমা দরজা খুলে রিদীমাকে দেখে দুহাত পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। আঁচলে হাত মুছতে মুছতে বেরিয়ে এসে দিতী বেগম বলেন,”কে এসেছে রে রহিমা?”
সবাই তখন অবাক চোখে রিদীমার দিকে তাকিয়ে আছে। রহিমা আমতা আমতা করে বললো,”বড় আম্মা বড় মেডম আইছে।”
রিদীমাকে দেখে সবাই অবাক হলেও আফজাল সাহেবের তেমন কোনো হেরফের নেই।দিতী বেগম মেয়ে কে দেখে এগিয়ে আসেন হাসিমুখে। রিদীমাকে জড়িয়ে ধরতে যাবে তার আগেই রিদীমা বলে উঠলো,,,
রিদীমা– বাইরে থেকে এসেছি, এমনিতেই ভাইরাস সংকট।কোন আক্কেলে আমাকে টাচ করতে আসছো এখন মম।আগে ফ্রেশ হয়ে আসি তারপর যা যা করতে মন চায়…. করো তো।
তারপর রিদীমা রহিমার দিকে তাকিয়ে,”handwash দিয়ে হাত ধুয়ে আমার লাগেজ টা উপরের রুমে রেখে আয় জলদি।”
রহিমা মাথা নেড়ে সায় দিয়ে হাত ধুতে চলে যায়। আর রিদীমা ও কথা না বাড়িয়ে নিজের থাকার ঘরের ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
দিতী বেগম– কি মেয়ে?কই এতদিন পর বাড়িতে এলি,একটু জড়িয়ে ধরবি আমাদের,দাদীজান কেমন আছে জিজ্ঞেস করবি,তা না করে ….
আফজাল সাহেব নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে– আমার মামণি ঐরকমই দিতী।
দিতী বেগম– একেবারে পাথর।
আফজাল সাহেব– ভুল বললে,আমার মামণি বরফ।
দিতী বেগম–???
রবিন– মা,আপুনি একটু স্ট্রেট তাই বলে এভাবে বলছো কেন?
দিতী বেগম– এসেছে আপুনির চামচা,আপুনির হয়ে তদারকি করতে।
আকাশ তার মামীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো — “মামীমণি তুমি এখন যেভাবে কথা বলছো,তার এক রত্তি পরিমাণ রিদীমার সামনে বলতে পারবে??”
তমা — যেখানে মামুই কিছু বলতে পারে না, সেখানে মামীমণি কিভাবে বলবে আপুকে?
দিতী বেগম– এই চুপ কর তো তোরা!কেন আমরা কি ওরে ভয় পাই নাকি?ভয় তো উল্টা ওর পাওয়া উচিত আমাদের, আমরা ওর বাবা মা।??
আফজাল সাহেব– এতদূর আশা করবেন না বিবিসাহেবা।??
রবিন হেসে– তা যা বলেছো dad …. আপুনি আর ভয়!!
দিতী বেগম রবিনের দিকে তাকিয়ে– এই দুই পিস আজব চিজ কে আমি পেটে ধরেছি ভাবতে আমার অবাক লাগে।
রবিন– আমি কি করলাম আবার?
দিতী বেগম– গরম খুন্তির ছেকা খাবি মুখে মুখে তর্ক করলে??
রবিন– মম এটা একবারেই উচিত না,আপুনির রাগ তুমি আমার উপর ঝারছো
দিতী বেগম ফুঁসতে ফুঁসতে রান্নাঘরে চলে গেল।রিদীমা ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসে।ডাইনিং টেবিলে বসে রান্নাঘরের দরজায় তাকিয়ে,,,
রিদীমা– মমমম মমমম
দিতী বেগম– কি হয়েছে বল?
রিদীমা– আমাকে কড়া এক কাপ কফি দাও তো।
দিতী বেগম– দুমিনিট বস,আনছি।
রবিন এসে বসে রিদীমার পাশের চেয়ারটাতে।রিদীমা ভাইয়ের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে,,,
রিদীমা– পড়াশোনা কেমন করছিস??
রবিন– ভালো ই ।
রিদীমা– তা তো হবেই ভালো।এরকম beautiful beautiful ম্যামরা আজকাল ভার্সিটিতে ক্লাস করায় বলে কথা।
রবিন চোখ বড় বড় করে– মানে…….
রিদীমা– আমার কাছে সব খবর থাকে সেটা তুই ভালো করেই জানিস বাবু।
রবিন– হুম
রিদীমা — তা ভার্সিটির মেয়ে ফ্রেন্ডদের ফেলে টিচারের উপর নজর পড়লো কি করে?
রবিন– আস্তে বলো আপুনি, ড্যাড শুনবে।
রিদীমা– আচ্ছা বল।
রবিন– আমার কাছে তাকে অন্য রকম লাগে ।
রিদীমা ভ্রু কুঁচকে– কেমন?
রবিন রিদীমার দিকে তাকিয়ে মুখ ছোট করে– জানি না।
রিদীমা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। রিদীমার হাসির আওয়াজে সবাই অবাক হয়।তমা আকাশের পেটে কনুই দিয়ে খোঁচা মেরে বলে –“এই ভাইয়া, এটা কি দেখছি?”
আকাশ রিদীমার দিকে তাকিয়ে বললো — “এভাবে হাসার কারণ কী?”
তমা — তুমি অবাক হচ্ছো না?
আকাশ– এভাবে হাসছে দেখে একটু অবাক হয়েছি, কিন্তু কারণ টা কী বলতো????
তমা বিরক্তি নিয়ে বললো– আমি কি জানি?আমিও তো
তোমার মতো এখানেই বসে আছি।??
আকাশ চিন্তার সুরে– হুম।
ঐ দিকে দিতী বেগম রান্নাঘর থেকে এক কাপ কফি নিয়ে এসে রিদীমার সামনে মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে থাকে। রিদীমা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো
রিদীমা– Any problem মম??
দিতী বেগম– হঠাৎ এলি খবর দিলি না তো??
রিদীমা– Dad কে বলেছি তো।বলেনি তোমাদের?
আফজাল সাহেব– তোমার দাদীজানের টেনশনে কাউকে বলা হয়নি,ভুলে গেছি।
রিদীমা– তাহলে ভুল টা Dad এর মম।
দিতী বেগম– আমাদের জানালে ও পারতি?
রিদীমা– নিজের বাড়িতে ফিরছি,জনে জনে খবর দিয়ে আসতে হবে নাকি এখন থেকে??অদ্ভুত কথা বলো…
দিতী বেগম আমতা আমতা করে– না না এমনিতেই বললাম।
রিদীমা– বলার মত কোনো ভালো টপিক থাকলে বলো, এসব নিয়ে পড়ো না তো এখন।
দিতী বেগম রান্নাঘরের দিকে এগোতে এগোতে, “আমি কিছু বললেই তো তোদের কাছে আউলফাউল মনে হয়।”
রিদীমা রবিনের দিকে তাকিয়ে– কি রে কি হয়েছে এরকম বিহেভ করছে কেন misses চৌধুরী?
রবিন– মিসেস চৌধুরী এখন তার মেয়ের বিয়ে নিয়ে টেনশিত???
রিদীমা– What?
রবিন– আরে কিছু না, বাদ দাও তো।
রবিন রিদীমার কথার মাঝেই আবারো বাড়ির কলিংবেল বেজে উঠল। রবিন অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো,,
রিদীমা– কটা বাজে?
রবিন– 8:10 মিনিট
রিদীমা– এখন আবার কে এল?
রবিন– দাঁড়াও দেখছি আমি।
সুরাইয়া খান সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে রিদীমার দিকে তাকিয়ে বললো– “আমার Doll এসেছে নাকি শুনলাম!”
রিদীমা দাঁড়িয়ে পড়ে,সুরাইয়া খানের দিকে এগিয়ে গিয়ে
তার সামনে দাঁড়ায়– Ohh my god,ফুপি তুমি তো সেই লেভেলের সুন্দরী হয়ে গেছো।
সুরাইয়া খান — থাক থাক এখন আর আহ্লাদ দেখাতে হবে না আপনাকে।আসার পর থেকে কোনো খোঁজ নিয়েছেন আমার?
রিদীমা– আহা রাগ করছো কেন ফুপি?
সুরাইয়া খান — আমার রাগের কোনো দাম আছে নাকি??
রিদীমা– এভাবে কেন বলছো my sweetheart
সুরাইয়া খান — হয়েছে হয়েছে আর দরদ দেখাতে হবেনা।
রবিন ততক্ষণে দরজা খুলে দেয়।রবিন দরজা খুলেই স্টেচো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,ভিতর থেকে আফজাল সাহেব হাক ছাড়লেন —
কে এসেছে রবিন??
রবিন — Dad তারেক আঙ্কেল আর তার family এসেছে।
আফজাল সাহেব এগিয়ে এসে রবিনের পাশে দাঁড়িয়ে– তো ওদের ভিতরে আসতে দাও,বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখলে কেন?
রবিন দরজা ছেড়ে সরে দাঁড়ায়।তারেক সাহেব, ঝুমা বেগম, ইসুয়া আর নিশুয়া সবাই হাসিমুখে বাড়িতে প্রবেশ করলো।
আফজাল সাহেব– আয় বন্ধু আয়।
তারেক সাহেব– এখন খালাম্মা কেমন আছে দোস্ত?
আফজাল সাহেব– এখন তো আপাতত ভালো তবে health condition অনেক খারাপ।
তারেক সাহেব সমবেদনা জানান। তারপর আফজাল সাহেব ঝুমা বেগমের দিকে তাকিয়ে,”কেমন আছেন ভাবীসাহেবা?”
ঝুমা বেগম– খবর টা শুনে বাড়িতে সকলে খুব চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম। এখন একটু ভালো লাগছে।খালাম্মা সুস্থ আছেন জেনে।
সবার সাথে ইসুয়া দের পরিচয় করিয়ে দেন আফজাল সাহেব। ইতিমধ্যে আকাশ তমা রবিন আর রিদীমা… ইসুয়া কে চিনলেও বাকিদের সাথে তেমন কোনো আলাপ পরিচয় না থাকায় সবার সাথে হাসিমুখে পরিচিত হয়।
ইসুয়া আর নিশুয়া ড্রয়িং রুমের সোফায় এক কোণে বসে আছে। দু বোনেই অনেক uncomfortable ফিল করছিলো।অন্য দিকে আকাশ,রবিন,আফজাল সাহেব, তারেক সাহেব আর দেলোয়ার খান আড্ডা দিচ্ছিলো।
তমা তার ফোন ঘাটতে ব্যস্ত, তার মুখ দেখে বোঝা যাচ্ছে ইসুয়াদের উপস্থিতিতে বড়ই বিরক্ত হয়েছে সে।রিদীমা তখন ও কফি হাতে বসেছিলো ডাইনিং টেবিলে। আর চোরা চোখে ইসুয়াকে পরখ করছিলো।ইসুয়া নিশুয়ার হাত ধরে বসে আছে।রবিন ও কিছুক্ষণ পর পর তাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে।ইসুয়া বেচারি পারছে না এক ছুটে বাড়িতে চলে যেতে। রবিন ইসুয়ার অস্বস্তি খুব ভালো করেই টের পায়।
রিদীমা তার কফি শেষ করে এগিয়ে আসে ইসুয়াদের দিকে,,,
রিদীমা– তুমি ভার্সিটির সেই ক্যান্টিনের ….
ইসুয়া– হুম আপু আমি ইসুয়া, ভার্সিটিতে একবার আমাদের দেখা হয়েছিলো।
রিদীমা– Yes yes ….. আমার সেই photocopy girl
ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে– কি? বুঝলাম না।
রিদীমা– কিছু না,বুঝতে হবে না। এই তোমাদের দেখে মনে হচ্ছে তোমরা এখানে বড়দের সাথে বসে বসে boring fill করছো।আমার সাথে উপরে চলো,যাবে??
নিশুয়া যেন বাড়িটা একটু ঘুরে দেখার অপেক্ষায় ই ছিলো,সে জলদি করে বলে উঠলো — হ্যাঁ আপু চলুন চলুন।
ইসুয়া নিশুয়ার দিকে চোখ পাকিয়ে তাকালো,তারপর রিদীমার দিকে তাকিয়ে বললো– না আপু,আমরা বোরিং হচ্ছি না।ঠিক আছে।
রিদীমা– তুমি আমার photocopy হলেও তোমার বোন কিন্তু full little রিদীমা। সবকিছু কাট কাট বলে ফেলে।
এবার যেন ইসুয়া নিশুয়া একটু লজ্জায় মিইয়ে গেল।পাশে উপস্থিত থাকা তমার এসব একদমই সহ্য হচ্ছিল না।সে এমনিতেই ইসুয়া কে দুচোখে সহ্য করতে পারে না তার উপর আজ নিজের বাড়িতে ওদের এমন আপ্যায়ন তার গা জ্বালিয়ে দিচ্ছিলো।
ইসুয়া হালকা হেসে মাথা নাড়লো রিদীমার কথায়।
রিদীমা– আরে এত কোয়ালিটি বজায় রাখতে হবে না তো,এসো তোমরা আমার সাথে।
নিশুয়া আর ইসুয়া উঠে দাঁড়ায় রিদীমার সঙ্গে যাওয়ার জন্য। তমার মাথায় তখন স্বয়ং ইবলিশ টোকা মারে, ইসুয়ার যাওয়ার সময় নিজের বাম ঠ্যাং দিয়ে ল্যাং মারে।ইসুয়া বিষয়টা নিজ চোখে দেখে তমা ইচ্ছাকৃত ভাবে কাজটা করেছে,কিন্তু ততক্ষণে সে পা সামনে দিয়ে ফেলেছিলো বিধায় নিজেকে সামলাতে পারেনি।হোঁচট খেয়ে সামনেই রবিনের গায়ে ঢলে পড়লো।
সবাই ইসুয়ার দিকে নজর দেয় ততক্ষণে,,রবিনের কাঁধের উপর গিয়ে ইসুয়ার মাথা ঠেকে।রবিন বেচারা শকড খেয়ে বসে আছে। রিদীমা জলদি করে এগিয়ে আসে।
রিদীমা– এই আস্তে,তুমি ব্যথা পেয়েছো?
ইসুয়া নিজেকে সামলে রবিন কে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়াতে নিবে তখনই রবিন চোখ মেরে ইসুয়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,”কি Miss.অধ্যাপিকা!বিয়ের আগেই আমার কোলে বসার,কাছে এসে জড়িয়ে ধরার এত ইচ্ছে?আগে বললেই তো পূরণ করে দিতাম।এভাবে সকলের সামনে….”
ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে উঠে দাঁড়ালো,তারপর রবিনের দিকে তাকিয়ে বললো– Sorry
রিদীমা– Sorry কেন বলছো?এটা একটা coincidence……
ইসুয়া কিছু না বলে সামনে এগোতে থাকে।নিশুয়া রবিনের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে,রবিন ও হেসেই জবাব দেয়। আকাশ কিছু একটা বুঝতে পেরে রবিনের কাছ ঘেঁষে বসে।
রিদীমা ইসুয়া নিশুয়া কে নিয়ে দোতলার সিঁড়িতে পা রাখে।পিছন থেকে দিতী বেগম আর ঝুমা বেগম রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসার সময় তাদের ডাকে,,,
দিতী বেগম– ইসুয়া মামণিরা কোথায় যাচ্ছো?
রিদীমা– ওদের উপর থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসি একটু।
দিতী বেগম– ওদের নাস্তা করতে দিবি তো আগে নাকি!
নিশুয়া– আন্টি আমরা একটু ঘুরে আসি আগে।
দিতী বেগম কিছু বলতে যাবে তার আগেই ঝুমা বেগম বলে উঠলেন — এই মেয়েকে নিয়ে আর পারি না, এক জায়গায় থাকতে মন চায় না।শুধু চড়কির মত ঘুরে।
দিতী বেগম হেসে– ছাড়ুন তো ভাবী,ওরা এই বয়সে একটু মজা করবে সেটাই তো স্বাভাবিক। আমার মেয়ের মত রোবট বানাবেন না।
রিদীমা ইসুয়া নিশুয়া উপরে যায়। আর দিতী বেগম, ঝুমা বেগম নিজেদের আড্ডা চালায়।আকাশ রবিনের পিছনে হাত দিয়ে টেনে নিজের কাছে নিয়ে আসে,,
রবিন চোখ ছোট করে — এই ভাই তুই third gender এর মত আচরণ করছিস কেন???
আকাশ– তোর ব্যপার কি বলতো?থুরি তো গোলমাল আছে।
রবিন আকাশের কথায় কান না দিয়ে উঠে দাঁড়ালো আর হালকা করে গাইল — “Golmal hain bhai sab golmal hain”
আকাশ বিষয়টা বুঝতে না পেরে জিজ্ঞাসাবোধক দৃষ্টিতে তাকিয়েই রইলো।
——————————————————-
স্বাদ বেলকনিতে বসে ফোনে অনলাইনে টিকিট কাটার চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু তার বারবার মনে হচ্ছে তাকে লুকিয়ে লুকিয়ে কেউ দেখছে।চারপাশে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে আবার নিজের কাজে মন দেয় স্বাদ। হঠাৎ ই তার চোখ যায় সামনের বাসার বেলকনিতে। সেই বিদেশিনী ……
স্বাদ চোখ নামিয়ে ফেলে,হঠাৎ স্বাদের ফোনে কল আসে কারো।কলটা রিসিভ করতেই কেউ ভাঙা ভাঙা গলায় বাংলা উচ্চারণ করলো,,
Hlw Mr. Ahsan একতু ছামনে তাকাবেন??
স্বাদ বুঝতে পারে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সেই বিদেশিনীই কল করেছে।কলটা কানে রেখেই সে সামনে তাকালো,সাথে সাথে সে প্রচন্ড রাগে ফেটে পড়ে???। আর কলটা কেটে নিজের বেলকনি থেকে উঠে রুমে চলে যায়। আর বেলকনির দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়।
স্বাদ রুমে এসেই তার ফোনটা বেডে ছুঁড়ে মারে। রেগে flower basket টা আয়নায় ছুঁড়ে মারে। ছিঃ!এমন অশ্লীল dress পড়ে সামনে এসে এই মেয়ে স্বাদকে কি ইঙ্গিত করতে চায়।স্বাদের চোখ দুটো টকটকে লাল হয়ে উঠে। এমন কুরুচিপূর্ণ ইঙ্গিতের মুখোমুখি আগে কখনোই হয়নি স্বাদ।এমন সাহস একটা অপরিচিত মেয়ে কি করে দেখাতে পারে?তার আত্মসম্মানবোধ বলতে কি কিছুই নেই।নিজেকে কি করে কেউ এত নিচুতে নামাতে পারে তা স্বাদ বুঝতে পারছে না।
হঠাৎ স্বাদের ফোনে মেসেজের টুন বেজে উঠল,যাতে স্পষ্ট লেখা — I can do everything for u Mr.ahsan
স্বাদের রাগ যেন আকাশ ছুঁলো??,সে এমন একটা কাজ করে বসলো যা তার সাথে মোটেও যায় না।তার কাছের কেউ স্বচক্ষে দেখলে বিশ্বাসই করতো না যে, কাজটা স্বাদ করেছে।সে ফোনটা নিয়ে বেলকনিতে গেল পুনরায়। প্রথমে মেসেজের রিপ্লাই দিলো — Go to hell…
তারপর ফোনটা এত জোরে নিজের বেলকনি থেকে পাশের বাসার যে বেলকনিতে মেয়েটা এসে দাঁড়িয়েছিলো সে বেলকনিতে ঢিল মারে,সঙ্গে সঙ্গে অনেক জোরে আওয়াজ হয়।নিশ্চয়ই ঐ বাসার আয়না টা ও গেছে।
আয়না ভাঙার শব্দে সেই বিদেশিনী আঁতকে উঠে আর বিষয়টা বুঝতে পারে। স্বাদ রেগে আছে বুঝতে পেরে যেই তাকে “Sorry” লিখে মেসেজ দিতে যাবে,তখনই সে দেখলো একটা মোবাইল ফোন তার রুমের মেঝেতে পরে আছে।মেয়ে টা হাসে,মিষ্টি করে হাসে।
আর ফিসফিসিয়ে বলে– I love it, I love ur behaviour Mr.Ahsan……..???
_________________________(চলবে)