Senior।life partner পর্ব ১৯

0
1541

#Senior_life_partner
পর্ব—19
Afrin Ayoni

দিতী চৌধুরী রান্নাঘরে কফি করছিলেন সন্ধ্যা বেলায়। পাশেই সুরাইয়া খান সবজি কাটছেন।

দিতী — আকাশের মা,তোমার সবজি কাটা শেষ হলে কফি টা রিদীমা আর আকাশের বাবাদের দিয়ে আসো তো।

সুরাইয়া– আচ্ছা ভাবী , এইতো যাচ্ছি।

সুরাইয়া কফির কাপ দুটো নিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল । রবিন রান্নাঘরের দরজায় উঁকি ঝুঁকি মারছে দেখে দিতী তাকে বললো ,,,

দিতী — কি রে?আজ হঠাৎ রান্নাঘরের দরজায় হাডুডু খেলছিস যে?জীবনে ও তো আসিস না।

রবিন মায়ের কথা শুনে রান্না ঘরে ঢুকে।এসেই মাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

দিতী সন্দেহের দৃষ্টিতে, “কি রে কি চাই বলে ফেল?”

রবিন– মা , ও মা।

দিতী — ছাগলের 5 নাম্বার বাচ্চার মত ম্যা ম্যা না করে বলে ফেল।

রবিন– তোমার ছেলে কে বিয়ে দাও মা।

দিতী চোখ বড় বড় করে পিছনে তাকায়,”কি???”

রবিন– হুম।

দিতী — খুন্তির বারি খেতে না চাইলে রান্না ঘর থেকে বের হ।

রবিন– দাও না মা??

দিতী — এমনভাবে বলছে যেন দুটাকার সিকি চাচ্ছে।

রবিন– প্লিজ!!

দিতী — লজ্জা করে না বিয়ের কথা বলতে?তোর বড় বোনের এখনো কোনো নাম গন্ধ নেই বিয়ের, তুই এসে বলছিস বিয়ে দাও!!

রবিন– সেটা আপি কখনোই করবে না।

দিতী — তাইলে শুধু রিদীমা কেন তুই ও চিরকুমার থাক।

রবিন– আমি সন্ন্যাসী হতে চাই না।

দিতী — মেয়ে টা কে??

রবিন– ভার্সিটির madam…

দিতী — এই হতচ্ছাড়া!তুই কি আমাকে একের পর এক শক দিবি?

রবিন– আসলে……..

দিতী — মেয়ে তোর টিচার!শেষে কিনা টিচারের উপর নজর দিলি আমার ছেলে হয়ে??

রবিন– কি করবো আর?আমার Miss অধ্যাপিকা কে ভালো লেগেছে তাই।

দিতী — মেয়ে তোর senior!!

রবিন– তাতে কি ? বউমা হিসেবে senior বুঝদার মেয়ে গুলো ই best হয়।

দিতী — তুমি আমাকে বুঝাতে হবেনা কোন ধরনের বউমা best?

রবিন–???

দিতী — তা রিলেশন কয়দিনের??

রবিন– আর রিলেশন!রিজেক্ট করে দিছে???

দিতী — রিজেক্ট করার পর ও বিয়ে করতে চাস??

রবিন– হু???

দিতী — যা , আবার proposal দে।মেয়ে একসেপ্ট করুক,দুয়েক সপ্তাহ প্রেম কর তারপর বিয়ে।

রবিন– দু এক সপ্তাহ প্রেম করে কি হবে,তার চেয়ে ও ভালো বিয়ের পর ই একেবারে প্রেম করবো।

দিতী — মেজাজ খারাপ করিস না, এখান থেকে যা।

রবিন মুখ মলিন করে বেরিয়ে যায়। দিতী বেগম মুচকি হাসে ছেলের কান্ডে।

রবিন রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে বাবা আর ফুফার সাথে সোফায় বসলো,,,,সিনথিয়া ও হঠাৎ এসে রবিনের পাশ ঘেঁষে বসে।রবিন আরেকটু দূরে সরে বসে।

সিনথিয়া — তুই কিছু খাবি?

রবিন– না।

সিনথিয়া — তোর favourite হালুয়া বানিয়ে দেই?

রবিন– তুই বানাবি হালুয়া??

দেলোয়ার খান মেয়ের মতলব বুঝতে পেরে তার সাথে তাল মেলায়।

দেলোয়ার খান– মামণি রবিন কে নিজের হাতের বানানো হালুয়া খাওয়াতে যখন চাইছো ই তখন আমাদের ও খাওয়ার সুযোগ দিও।

রবিন সিনথিয়া আর তার বাবার এমন আহ্লাদিপনা একেবারে নিতে পারছিল না বলে সোফা থেকে উঠে পড়ে।তারপর সিনথিয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,,

“আসলে এই মুহূর্তে হালুয়া খাওয়ার mood নেই,তুই বরং বাকি সবাই কে হালুয়া বানিয়ে খাওয়াতে পারিস।আমার কাজ আছে,বাইরে যেতে হবে একটু।”

কথাটা বলেই রবিন বেরিয়ে পড়ে। আফজাল সাহেব ছেলের ব্যবহারে মনে মনে অনেক খুশি হন।অপরদিকে বাপ বেটির চেহারা খানা দেখার মত হয়েছিল।
……………………………………………

স্বাদ আজ তার মাকে নিয়ে একটু বাইরের হাওয়া খেতে বেরিয়েছিলো।রেহানা বেগম বেজায় খুশি তার ছেলে তাকে সঙ্গ দিচ্ছে এই কদিন।এমনিতেই কাজ নিয়ে পড়ে থাকে চব্বিশ ঘণ্টা। স্বাদ তার মায়ের হাত ধরে হাঁটছে। এই মুহূর্ত টা কে যেন সে অন্য রকম ভাবে fill করছে।

রেহানা বেগম– একটা কথা বলবো?

স্বাদ– অনুমতি নিচ্ছো যে হঠাৎ?

রেহানা বেগম– এমনিতেই।

স্বাদ– বল।

রেহানা বেগম– রিদীমা কে তোর কেমন লাগে?

স্বাদ– অনেক পুরনো বন্ধু , অবশ্যই ভালো লাগে।এটা বলার কি হল?

রেহানা বেগম– আরে বন্ধুর চোখে না ।

স্বাদ মায়ের দিকে সন্দেহের চোখে তাকিয়ে,”রিদীমা আমার just বন্ধু ই মা,খুব ভালো বন্ধু। এর বেশি কিছু ই কখনো আশা করো না। হবে ও না তেমন কিছু।”

রেহানা বেগম মুখ ফুলিয়ে,”কেন হতে পারে না?”

স্বাদ– মা তুমি সবসময়ই অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বল।রিদ কে তুমি পুরোপুরি চিন না মা।

রেহানা– আমার চেনার দরকার ও নেই।

স্বাদ– তাহলে ওকে নিয়ে কথা বাড়িয়ো না।

রেহানা– বল না রিদীমা কে তোর কেমন লাগে?

স্বাদ– বললাম তো ও আমার খুব ভালো বন্ধু।

রেহানা বেগম ছেলের কথায় অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিন।স্বাদ তার মায়ের অভিমান বুঝতে পেরে মাকে নিয়ে রাস্তার পাশেই একটা বেঞ্চিতে বসে। তারপর রেহানা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,

স্বাদ– জানো মা! রিদ একজন কে প্রচণ্ড ভালবাসতো।ভালবাসতো বললে ভুল হবে,হয়তো এখনো ভালবাসে।

রেহানা বেগম অবাক চোখে তাকায় স্বাদের দিকে।স্বাদ মুচকি হাসে। তারপর আবার ও মায়ের দিকে তাকিয়ে তার হাতটা শক্ত করে ধরে,,,

আমরা যখন ভার্সিটিতে পড়তাম আমরা তিনজন ই খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।পুরো ভার্সিটি জুড়ে আমাদের বন্ধুত্বের সুখ্যাতি। একজন আরেকজনের জান প্রাণ।তোমার এই হাবাগোবা ছেলেটা যে কখন সেই দুষ্টু মিষ্টি বন্ধুত্বের ফাঁকে রিদ কে ভালবেসে ফেলেছিল বুঝে উঠতে পারেনি।

রেহানা বেগম এবার ছেলের মুখ পানে অসহায় ভাবে তাকায়। স্বাদ নিচু হয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বলতে থাকে, “কিন্তু রিদ আমাকে না,ভালবেসেছে আমার ই আরেক প্রাণপ্রিয় বন্ধু শাহেদ কে।সেদিন ক্যাম্পাসে যখন রিদ কে propose করবো বলে যাই,ততক্ষণে রিদ শাহেদ কে তার মনের সবটুকু ভালবাসা দিয়ে ফেলেছিলো।সেদিন তোমার ছেলে বড্ড দেরি করে ফেলেছিলো মা।”

রেহানা বেগমের চোখ দুটো স্বাদের কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলা কথাগুলো শুনে জলে ভরে ওঠে।

স্বাদ– তাই তো সেদিন প্রাণপ্রিয় বন্ধুদের ছেড়ে লন্ডনে পাড়ি জমিয়েছি।সইতে পারবো না দেখে।হয়তো দেখা গেল শাহেদ কে আমি আর সহ্য করতে পারছি না। নয়তো রিদীমা কে ইগনোর করছি। বন্ধুত্বে যেন ফাটল না ধরে তাই দূরে সরে এসেছি।

মায়ের চোখে জল দেখে স্বাদ মুচকি হাসে, “দুর!তুমি কাঁদছো কেন?এটা আরো কয়েক বছর আগের কথা।এখন আর সেরকম কোনো fillings নেই আমার।আর রিদ যেমন মেয়ে, আমার বউ হলে আমাকে মাসে কয়েকবার হাড়গোড়ের এক্সরে করাতে হবে কয়টা হাড় ভাঙলো কি ভাঙলো না।”??

রেহানা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে,”তাহলে রিদীমা কে দেখে বোঝার উপায় নেই কেন ওর husband বা boyfriend আছে কিনা?”

স্বাদ– Bcz …. রিদ single তাই।

রেহানা বেগম– একটু আগে না বললি …….?

স্বাদ– কোনো ঝড়ে হয়তো ওর রিলেশন টা ও টিকেনি।তবে আমি আবার সব ঠিক করে দিব।রিদ কে কষ্ট পেতে দিব না।

রেহানা বেগম– আর তোর কষ্ট টা?

স্বাদ হেসে মায়ের কোলে মাথা রেখে বলে,”আমার মা আছে না!!”

রেহানা বেগম ছেলের চোখের পানি লুকিয়ে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা সহজেই ধরে ফেলেন।কিন্তু কিছু বলেন না।

———————————————-

নিশুয়া ক্লাসরুমে দাঁড়িয়ে আছে। সামনে ই বিজ্ঞানের সবচাইতে কঠিন চ্যাপ্টার বোঝাচ্ছে শাহেদ। নিশুয়া মনে মনে শাহেদ কে একশো একটা গালি দিচ্ছে।শাহেদ এক এক লাইন পড়াচ্ছে আর আড়চোখে তাকিয়ে নিশুয়া কে দেখছে। নিশুয়া ও থেমে থাকার পাত্রী নয়।বারবার question করে শাহেদের মাথা উলোটপালোট করে দিচ্ছে। অতঃপর শাহেদ নিশুয়ার বেয়াদবি বুঝতে পেরে বসতে বলে।নিশুয়া ও রাজ্য জয়ের হাসি হেসে বসে পড়ে নিজের জায়গায়।

ইসুয়া বারান্দায় বসে চা আর মায়ের হাতের বানানো সিঙ্গারা খাচ্ছিলো।আজ দুদিন ভার্সিটিতে যায় না।বাসায় থেকে বোর হয়ে গেছে। তাই বিকেলের এই সময়টা তে এখানে এসে বসেছে ইসুয়া। হঠাৎ ই নিচে চিল্লাপাল্লার আওয়াজে ঐ দিকে নজর দেয় ।

সামনের রাস্তা টা তে নবম দশম শ্রেনীর ছেলেরা ক্রিকেট খেলছে।তাই এত শোরগোল। আশেপাশের বিল্ডিংয়ের বারান্দায় বসা লোকেরাও তাদের খেলা উপভোগ করছে। ইসুয়া ও চা খেতে খেতে মনোযোগ দেয় খেলাতে।

ক্রিকেট খেলার দলটাতে কয়েকজন সিনিয়র ও আছে ।তবে মাথায় ক্যাপ থাকার জন্য তাদের চেহারা স্পষ্ট নয়।তারপর ও খেলাটা তে আশেপাশের সবাই দারুণ উৎসাহী। এর মাঝে লাল ক্যাপ মাথার ছেলেটা ই বেশির ভাগ বল কেস করছে আর ব্যাটসম্যান দের out করছে।তাই সবাই মনে মনে তাকেই সেরা আর ভালো খেলোয়াড় হিসেবে বেছে নিল।

সবশেষে ঐ ছেলেটা বেটিং করবে বলে নেমেছে। ইসুয়া এতক্ষণ খেলাটা খুব মনোযোগ সহকারে দেখেছে।তাই সে ব্যাটসম্যানের চেহারা দেখার জন্য ভীষণ কৌতূহলী হয়ে উঠে।কিন্তু না,মাথার ক্যাপটার জন্য তার চেহারা কিছু তেই দেখা যাচ্ছে না।

প্রথম ব্যাটেই ছক্কা। যে যে খেলা দেখছিলো সবাই চিৎকার করে উঠে উত্তেজনায়। ইসুয়া ও ছক্কা বলে লাফিয়ে উঠে। কিন্তু পরের ঘটনা টার জন্য ইসুয়া মোটেও প্রস্তুত ছিলো না। বেটিং করা ছেলেটা তার মাথার ক্যাপ সরিয়ে ইসুয়ার দিকে একটা flying kiss ছুড়ে মারে।সে আর কেউ নয়।রবিন …….

ইসুয়া এতক্ষণ যা ইনজয় করছিলো,এই মুহূর্তে সে যেন বিরক্তির চরম পর্যায়ে নেমে এসেছে।

_______________________________(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here