Senior।life partner পর্ব ১৪

0
1772

#Senior_life_partner
পর্ব——14
Afrin Ayoni

পাঁচ জন লোককে একটা বেঞ্চিতে একসঙ্গে একই দড়িতে বেঁধে একটা রুমে আটকে রাখা হয়েছে। সবাই অল্প স্বল্প আহত।দরজা খোলার আওয়াজে সকলের চোখে মুখে ভীতি দেখা দিল।দরজা খুলে এগিয়ে আসল মুখোশ পড়া ছয়জনের gang …….

একজন এগিয়ে গিয়ে কিছু একটার সুইচ অন করতেই উপর থেকে বৃষ্টির পানির মত বরফ পড়তে থাকে।সবাই ব্যথায় কুকিয়ে উঠে।একেক জনের চেহারার বর্ণ পাল্টাতে থাকে।হঠাৎ অন্য একটা সুইচ অন করতেই আবার গরম পানি পড়তে লাগলো।এই যেন দুর্বিষহ মুহূর্ত তাদের জীবনে।আর্তনাদে ছেয়ে গেছে পুরো রুম।

হঠাৎ বন্ধ হয় অত্যাচারের সকল ধাপ। ছয়জনের gang এগিয়ে আসে সামনে,ঝাপসা চোখে একজনকে চেয়ারে বসতে দেখে সকলে।তার মুখ টা মুখোশের আড়ালে।

লোকটা — এইভাবে গুটি চালতে থাকলে তোদের বসের হার নিশ্চিত। এত কাঁচা খেলোয়াড় হয়ে আমার সাথে খেলতে নেমেছে ভাবলেই আমার বমি পায়।

হঠাৎ ওদের উপর লাথির পর লাথি বসায় জোরে।আর হুঙ্কার করে বলতে থাকে,”তোদের জানে মারবো না।তোদের জানে মারলে তোদের বসের চেহারার ভয়টা মিস করে যাব।তোদের এই অবস্থা দেখে তার চেহারায় ঠিক কতটা ভয় বিরাজ করে দেখি।আমার warning ভুলে গেছে শালা গিরগিটির বাচ্চা।তোদের দেখলে মনে করতে সহজ হবে।”

কথাটা বলে উঠে দাঁড়ায় লোকটা।নিজের gang এর দিকে তাকিয়ে,,”3rd ডিগ্রি দিয়ে ভার্সিটির রাস্তার মোড়ে ফেলে দিয়ে আসো।আর কখনো এমন ভুল করার সাহস করবে না।”

ইসুয়া সবেমাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে,ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় রাখা ফোনটার উপর নজর যায়। ফোনের স্ক্রিন 33 টা missed call এর জানান দিচ্ছে।

ইসুয়া— Ohh my god …. 33 missed call,কে দিল এত কল?

কল ব্যাক করতেই রিসিভ হয় অন্য পাশে সঙ্গে সঙ্গে।

ইসুয়া— Hlw ….. আসসালামু ওয়ালাইকুম।

অন্য পাশে– ওয়ালাইকুম ওসসালাম।

ইসুয়া– কে বলছেন??

রবিন– Miss.অধ্যাপিকার future বর।

ইসুয়া বুঝতে পারলো লোকটা রবিন, ভ্রু কুঁচকে বললো– কি চাই??

রবিন– আপনাকে??

ইসুয়া– What??

রবিন– আপনাকে চাই । কেমন আছেন??

ইসুয়া– আলহামদুলিল্লাহ্।

রবিন– Thanks…

ইসুয়া— কিন্তু কেন??

রবিন– বাবাকে …………..

ইসুয়া— এটার জন্য ধন্যবাদ নিচ্ছি না।এটা মানুষ হিসেবে আমার দায়িত্বের মাঝে পড়ে।

রবিন দুষ্টু হেসে, “তো আপনি thnx নিচ্ছেন না?”

ইসুয়া— জ্বি না।

রবিন– ওকে তাহলে thnx দিলাম না। আপনার জন্য অন্য কিছু তুলে রাখলাম। পরে মনে করে দিয়ে দিব।

ইসুয়া— আমার কিছু লাগবে না।

রবিন– কিন্তু আমি তো কারো কাছে ঋণী থাকতে পছন্দ করি না।

ইসুয়া– সে আপনার ব্যপার। আর কিছু বলবেন??

রবিন– কেন?ব্যস্ত নাকি?

ইসুয়া– বেশি কিছু বলার নেই এর চেয়েও।

রবিন– আমার আছে।

ইসুয়া– তাহলে জলদি বলে ফোন টা রাখুন।

রবিন– এত ব্যস্ততা আমাকে দেখাবেন না Miss.অধ্যাপিকা। কারণ, আপনাকে কাল সারাদিন আমার সাথে কাটাতে হবে।

ইসুয়া– কি বলতে চাইছেন??

রবিন– আপনার আশেপাশে হাতপাখা আছে??

ইসুয়া– আমার রুমে এসি চলছে,হাতপাখার no need…

রবিন– আমি এখন যেটা বলতে যাচ্ছি, আপনি সেটা শোনার পর double এসিতে ও কাজ হবেনা।

ইসুয়া রেগে, “ফালতু বকবক না করে আসল কথা বলুন।”

রবিন– আরে wait wait…এত রাগেন কেন??

ইসুয়া– ওকে আমি রাখছি।

রবিন– বলছি বলছি।আপনার পরশু আমার সাথে ডুয়েট কিছু performance আছে,আপনি আর আমি singing with dance ইভেন্টে একসঙ্গে পার্টিসিপেট করছি।

ইসুয়া– No never … কখনোই না ,জীবনে ও না।

রবিন– এখন মিছিল মিটিং করে লাভ নেই, লিস্ট মেইন জায়গায় জমা হয়ে গিয়েছে।এখন মাঝে আছে একদিন, প্রস্তুতি নিন।

ইসুয়া– আমাকে জিজ্ঞেস না করে আমার নাম দেওয়ার মত ভুল করে আবার আমাকে বোঝাচ্ছেন??

রবিন– আমি বোঝাচ্ছি না ,,, শুধু জানিয়ে দিলাম।

ইসুয়া– আমি পরশু যাব ই না।

রবিন– পাঁজাকোলে করে তুলে নিয়ে আসবো বাসা থেকে।

ইসুয়া– দেখুন,এরকম হ্যারাসমেন্ট করার জন্য আপনার নামে আঙ্কেল কে নালিশ করতে বাধ্য করবেন না।

রবিন– সে আপনি যা করার করুন,শুধুমাত্র পরশুর অনুষ্ঠানের জন্য তৈরি থাকুন।আর কাল আমার সাথে ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে একটু practice করলেই হয়ে যাবে।

ইসুয়া– আমি কাল ও যাব না।

রবিন– আমাকে বাড়িতে গিয়ে তুলে নিয়ে আসতে বাধ্য করবেন না।আর এখন এমনিতেই ঐ বাড়িতে যখন তখন যাওয়ার লাইসেন্স আমার আছে।

ইসুয়া রেগে, “কি করতে পারেন আমি ও দেখবো?”

রবিন– লাইব্রেরির কথা ভুলে গেছেন??

ইসুয়া কিছু টা মিইয়ে গেল,”দেখু……..”

রবিন– ওকে বাই।তোতলাতে হবেনা আপনাকে…. just আমার কথামতো কাজ করুন।নয়তো যা ঘটবে,তার সব দায় আপনার। আমার নয়।

কলটা কেটে হাসিতে ফেটে পড়ে রবিন আর বলে, “Miss.অধ্যাপিকা!!রবিন নামের প্যারা থেকে এত সহজে নিস্তার নেই আপনার।”

ইসুয়া রেগে বিছানায় বসে খাটের চাদর খামচে ধরে, আর বিড়বিড় করতে থাকে– শালা গন্ডারের চামড়া, বেহায়া,নির্লজ্জ, লজ্জার এক ইঞ্চি ও নাই তোর মাঝে।শয়তান, কুত্তা, বিলাই।আমার ইচ্ছে করছে কি যে করি??

ইসুয়া দাঁতে দাঁত চেপে রবিন কে দশ মিনিট ধরে বকতে থাকে।

————————————————–

সিনথিয়া নিজের রুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সবগুলো ব্লাউজ গায়ে দিয়ে ট্রাই করছে।দরজা টা ফাঁক করে রাখা কিছু টা। সিনথিয়ার উন্মুক্ত ফর্সা পিঠ টা খুব বিশ্রী ভাবেই দেখা যায় তার চিকন ফিতার ব্লাউজ গুলোর কাপড়ের স্বল্পতায়।
রবিন ফোন চাপতে চাপতে যাচ্ছিলো সিনথিয়ার রুমের সামন দিয়ে। সিনথিয়া রবিন কে এক পলক আয়নায় দেখে,,,,

সিনথিয়া — এই রবিন, রবিন!!

রবিন ফোনে নজর দিয়েই ভ্রু কুঁচকে দাঁড়িয়ে পড়লো।তারপর সিনথিয়ার রুমে উঁকি দিয়ে আবার অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়ালো। সিনথিয়া দরজার দিকে এগিয়ে গিয়ে,,,

সিনথিয়া — এভাবে ঘুরে গেলি কেন ? রুমে আয়।

রবিন অন্য দিকে ফিরেই জবাব দিলো– এই অবস্থায় তুই আমাকে ডাকলি কেন??আমি পরে আসছি।

সিনথিয়া রবিনের হাত ধরে টেনে রুমে নিয়ে আসে, “আমার ব্লাউজের পিছনের হুকটা লাগিয়ে দিবি প্লিজ?”

রবিন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।এমন জানলে সিনথিয়ার ডাকে দাঁড়াতো না সে।কি একটা লজ্জাজনক ব্যপার। খুব অস্বস্তি লাগছে।এটা কেমন বেহায়া আবদার করে বসে আছে সিনথিয়া। রবিন নিজেকে মনে মনে বকতে থাকে।

সিনথিয়া — কি রে লাগা হুকটা।

রবিন– আকাশ ভাইয়ার বউকে বল।

সিনথিয়া — তুই লাগিয়ে দিলে আমার ভালো লাগবে।

রবিনের সিনথিয়ার এমন বেয়াদবি কাজকর্ম ভালো লাগছে না, কিন্তু কিছু বলতে ও পারছে না।কেউ দেখলে কি না কি ভেবে বসে থাকে।

দরজায় তাকাতেই রবিন সুরাইয়া খানকে দেখে।সুরাইয়া খান ঘটনা খানিকটা বুঝতে পেরে চোখ দিয়ে ইশারা করে রবিন কে বেরিয়ে যেতে বলে।রবিন ও ফুপির কথামতো বেরিয়ে যায়। সিনথিয়া অন্য দিকেই ঘুরে আছে,,,

কি রে লাগা।।

সুরাইয়া খান রুমে ঢুকে মেয়ের ব্লাউজের হুকটা লাগিয়ে দেয়।সিনথিয়া হাসি হাসি মুখ করে পিছনে তাকায়। পিছনে ফিরে নিজের মায়ের মুখ দেখে চেহারার রং পাল্টে গেল।

সিনথিয়া — তুমি??

সুরাইয়া খান— নিজের মেয়েকে মানুষ না করতে পারলে ও ভাইয়ের ছেলে টা ভালো মানুষ ই হয়েছে।

সিনথিয়া বিরক্তিতে মুখ কুঁচকে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। সুরাইয়া খান তার মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে বড়ই চিন্তায় পড়েন।

………………………………………..

এখন তুমি কেমন আছো, Dad??

আফজাল সাহেব– আমি ভালো ই আছি।

রিদীমা– এরকম একটা ঘটনা ঘটে গেল আমি ভাবতে ও পারছি না।

আফজাল সাহেব– কাঁটা গাছ বেড়েই চলছে। আমাদের হাতের নাগালে চলে যাচ্ছে, বুঝতে পারছো কিছু??

রিদীমা– আমি (ক থেকে চন্দ্রবিন্দু) সবই বুঝেছি।কিন্তু আমাদের হাতে কোনো প্রমাণ নেই।

আফজাল সাহেব– ওদের আটকানো যাচ্ছে না আর।

রিদীমা– আচ্ছা, তোমাকে আমি একটা pic send করেছিলাম দেখেছো??

আফজাল সাহেব– ওহ হ্যাঁ। আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করতে ভুলে ই গেছিলাম,ইসুয়া মামণির পিক তুমি কোথায় পেলে??

রিদীমা– কে এই মেয়ে টা??

আফজাল সাহেব– আমার বন্ধুর মেয়ে + ভার্সিটিতে পড়ায়।

রিদীমা– ohh I see…

আফজাল সাহেব– She is little Ridima…

রিদীমা– Same to same …

আফজাল সাহেব– হঠাৎ ওকে নিয়ে এত গবেষণা করছিস যে??

রিদীমা — Plan করছি।

আফজাল সাহেব– কিসের??

রিদীমা– তোমার কাঁটা গাছ ছাঁটাই করার।

আফজাল সাহেব– ইসুয়া মামণি কে দিয়ে?কিভাবে?

রিদীমা– ধৈর্য্য ধর ,আমি সব ক্লিয়ার করবো তোমাকে।আমার লোক ওর 24 hours এর আপডেট নিচ্ছে প্রতিনিয়ত।

আফজাল সাহেব– মেয়ে টা এমনিতেও আমার জন্য একটুর উপর বিপদে পড়তো।

রিদীমা– Don’t worry dad …. যা হবে সেটা হবেই,এত ভেবে লাভ নেই।

আফজাল সাহেব– তা ঠিক।

রিদীমা– আমি তোমাকে details পরে খুলে বলবো।এখন রাখছি।

আফজাল সাহেব– Ok … bye

আফজাল সাহেব চোখ বুজে হেলান দিলেন রকিং চেয়ারে।

তারেক রহমান অফিস থেকে এসে সোফায় বসলেন আরাম করে।নিশুয়া আইসক্রিম খাচ্ছিলো।ইসুয়া পাশে বসেই ফোন ঘাটছে।

তারেক রহমান– আমার মামণি রা কি করে??

নিশুয়া– আইসক্রিম খাচ্ছি।

ইসুয়া– বাবা কিছু টাকা দিবা??

তারেক রহমান– কেন ??

ইসুয়া– একটু শপিং করবো।

নিশুয়া– এখন আর তোকে কোনো টাকা দেওয়া হবে না।

ইসুয়া ভ্রু কুঁচকে, “কেন?”

নিশুয়া– তুই না জব করিস,নিজের টাকায় চল।

ইসুয়া– আইছে । আমি বাবার থেকে নিব ,হাজার বার নিব।তোর কী কুটনি??

নিশুয়া– লজ্জা করে না??

ইসুয়া– না , করে না।

তারেক রহমান মেয়েদের খুনসুটি দেখে প্রাণ খুলে হাসেন।দুজন ই তার প্রাণ।ওদের সাথে থাকলেই মনে হয় দেহে বল আসে দ্বিগুণ।

__________________________(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here