Mysterious
Part-5
Romoni
তায়াশা ইয়ানকে এভাবে রেগে যেতে দেখে বলে,
–আরে স্যার এতো রাগ করছেন কেনো? আর আপনি যে রাগও করতে পারেন জানতাম না?
সবসময় তো নিজেকে রহস্যময় করে উপস্থাপন করেন।
আর আমি নিজেকে রহস্যময়ী করে উপস্থাপন করলেই দোষ?
–মানেহ?(ইয়ান)
— মানে, আপনি এমন অনেক কিছুই করেন, যেগুলোর পেছনের রহস্য খুঁজে বের করতে আমার অনেক ভাবতে হয়, রাগ ওঠে।
যেমন,আপনি সেদিন পার্কে হঠাৎ এসেছিলেন,কোথা থেকে এসেছিলেন,কিছুই জানিনা।
আর আপনি আমায় চিনলেনইবা কিভাবে? তাও জানিনা।
ইফান বললো আপনি নাকি নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই করেন না,কথাটা কি সত্যি স্যার?
কথাটা বিশ্বাস করবো কি করবো না সেটাই বুঝতে পারছিনা।
কারন ইফান যখন আপনাকে বললো আপনি স্বার্থ ছাড়া কিছু করেন না, তখন আপনি কিছু না বলে স্বাভাবিক ছিলেন, তবে আপনার এই স্বাভাবিক থাকার কারনটা আমি এখনো বুঝিনি, হয়তো ইফানের কথাটা ভুল ছিলো, তাই আপনি ইফানের সাথে তর্কে জড়ান নি।আবার হয়তো বা ইফান সত্যি বলছে, তাই মেনে নিয়েছেন ইফানের কথা, তাই চুপ ছিলেন।
আর আমি একটা বিষয় লক্ষ করেছি, আপনি আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলেন , যেন আমি আপনার কত আগের চেনা,অথচ আমাদের পরিচয় ক্ষনিকের।
আপনি আমাকে সম্পূর্ন কনফিউসড করে রেখেছেন,আর আমি আপনাকে একটু রাগিয়ে দিলেই দোষ, আমি কি আপনাকে একটু কনফিউসড করতে পারিনা,ইয়ান স্যার?
কথা গুলো শান্ত কন্ঠে বলে, তায়াশা হেসে দেয়।
–আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন তায়াশা? (ইয়ান)
–হুম করছি, আপনিও তো করেন। (তায়াশা)
— আশা করি আপনার মজা করা শেষ? (ইয়ান)
ইয়ানের কন্ঠে তায়াশা কিছু হারিয়ে ফেলার উদাসীনতা পরখ করেছে।
আর তায়াশা ইয়ানকে এভাবে রেগে কথা বলতে দেখে, আর তায়াশার প্রতি ইয়ানের এতোটা কেয়ারিং দেখে খানিকটা শকড হয়।
কেনোনা তায়াশার সাথে ইয়ানের সম্পর্কটা এতোটাও গভীর নয়, যে ইয়ান তায়াশার বিষয়ে এতো কেয়ারিং হবে।
এছাড়াও, ইয়ানের করা অনেক কর্মকান্ডই তায়াশার বোধগম্য হয় না, আসলে ইয়ান কি চায়, ইয়ান কি নিজের পরিচয় সমন্ধে সব সত্যি বলেছে নাকি এর পেছনেও অন্য রহস্য আছে?
এই কথা গুলো তায়াশাকে খুব করে ভাবাচ্ছে।
তায়াশা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,
–স্যার শান্ত হোন, এতোটা রাগ ভালো নয়।
–রাগিয়ে দিয়ে বলেন এতোটা রাগ ভালো নয়, এতো বছর পর আমি আপনার মুখোমুখি আছি, আপনার সাথে সামনাসামনি দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছি,এতোটা অপেক্ষা করেছি এই সময়টার জন্য, অবশেষে এই মুহুর্তটা আমার জীবনে এসেছে, আর আপনি কিনা আমার থেকে দুরত্ব বজায় রেখে চলছেন। (ইয়ান খুব রেগে একপ্রকার চিৎকার করে কথাগুলো বলে)
–মানে?(তায়াশা)
ইয়ান কি বলতে কি বলে ফেলেছে, প্রয়োজন এর তুলনায় বেশিই বলে ফেলেছে ইয়ান,যে কথাগুলো ইয়ান এতো বছর আড়াল করে রেখেছিলো তায়াশার কাছে,আজ সে কথা গুলো ইয়ান নিজের রাগ নিয়ন্ত্রনে না রাখতে পেরে প্রকাশ করেই ফেলছিলো।
আর তা বুঝতে পেরে ইয়ান নিজের রাগটাকে মুহুর্তেই নিঃশেষ করে দেয়, আর নিজেকে সামলে বলে,
সরি তায়াশা, আমি একটু বেশিই রিয়েক্ট করে ফেলেছি, আসলে আপনি না বলে চলে এসেছেন, তাই একটু ভয় পেয়ে গেছিলাম, যদি আপনার কোনো ক্ষতি হয়ে যেতো, এক্সট্রিমলি সরি।
–আপনাকে আমি সরি বলতে বলি নি স্যার, আপনি কি বললেন এসব, কিসের অপেক্ষা? (তায়াশা)
–কিছুনা।(ইয়ান)
–স্যার আপনি যদি সব সত্যি না বলেন, তাহলে আমি আপনার কোনো সাহায্য করবো না, এবার ভেবে দেখুন কি করবেন? (তায়াশা)
–তায়াশা আপনি নিজের সম্পর্কে নিশ্চই এতোক্ষণে জেনে গেছেন, যে আপনিও Invisible Island এর সদস্যের সন্তান।
আপনার মা বাবা আপনার জন্মের পর পরই আপনার সুরক্ষার কথা ভেবে lone island থেকে নিয়ে এসে, এই মানব সমাজে বসবাস করতে শুরু করে, যেন ডেভিলরা আপনার কোনো ক্ষতি করতে না পারে, কারন আপনার মধ্যে সেই পাওয়ার আছে, যে পাওয়ার এর অপব্যাবহার করে খুব সহজেই ডেভিলরা নিজেদের ক্ষমতা দ্বিগুণ করতে পারবে, আর এতে আপনার পাওয়ার এর ঘাটতি দেখা দেবে, যার ফলে আপনার মৃত্যুও হতে পারত।
কিন্তু এই সাধারণ মানব পৃথিবীতে যদি আপনি থাকেন, তাহলে আপনার পাওয়ার নিস্তেজ থাকবে, যতদিন না আপনি আপনার পাওয়ার নিজে থেকে নিজের আয়ওে আনেন।
এতে করে ডেভিলদেরও আপনার হোদিস পেতেও খুব সমস্যা হবে, আর পেলেও কোনো লাভ হবে না, কারন আপনার পাওয়ার তখন আর আপনার আয়ওে নেই।
আর আপনাকে মেরেও ফেলতে পারবে না, কেনোনা আপনাকে মেরে ফেললে ওদেরই ক্ষতি, ওরা আপনার সংরক্ষিত পাওয়ার নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবে না, আর আপনার পাওয়ার নিজেদের করে নেওয়ার জন্য হলেও আপনাকে বাঁচিয়ে রাখবে।
আর আপনাকে কোনোভাবে জোর করেও আপনার পাওয়ার চাইতে পারবেনা,কেনোনা যেই কক্ষে তলোয়ার রাখা আছে, সেই কক্ষে lone island এর সদস্যরা ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করতে পারবেনা।
আর পাওয়ার নিজের আয়ওে আনার জন্য সেই Power Sword এক প্রধান বস্তু।
তাই আপনার সম্মতিতেই আপনার পাওয়ার নিতে হবে, যার চেষ্টা ইফান করেছিলো।
আর আপনার মা বাবা ভেবেছিলো আপনার পূর্ণ বয়স হওয়ার পর আপনাকে আবার সেখানে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে, কিন্তু একটা কার এক্সিডেন্ট এ তারা দুজন আপনার পূর্ণ বয়স সম্পন্ন হওয়ার আগেই মারা যান।তাই আর আপনাকে সেখানে নিয়ে যেতে পারেন নি, তাই আমায় আসতে হয়েছে আপনাকে ফিরিয়ে নিতে। (ইয়ান)
–হুম, আমার পাওয়ার আমার কাছে ফিরে পাওয়ার পর এই বিষয় জানতে পারি,কিন্তু আপনি আমায় ফিরিয়ে নিতে এসেছেন মানে…?(তায়াশা)
–আপনি Invisible island থেকে চলে আসার এক বছর পর আমার জন্ম হয়, আর আমায়ও এই মানব পৃথিবীতে নিয়ে আসা হয় একই কারনে।
যখন আমি আস্তে আস্তে বড় হই তখন মা বাবা আমায় আপনার কথা জানায়, আর আপনার কথা শোনার পর আপনাকে দেখার ইচ্ছে হয়েছিলো, আর প্রথম দেখার পর থেকে আপনাকে চোখের আড়াল করার ইচ্ছে জাগেনি।
রোজ আমি আপনাকে আড়াল থেকে দেখতাম, কিন্তু কেনো দেখতাম তা জানি না।
আর অপেক্ষা করতাম কবে আমি আপনার সামনে যাবো,কবে আপনার সাথে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কথা বলবো, কিন্তু আপনার সামনে যাওয়ার সাহস হোতো না, তাই দূরেই থাকতাম।
অতঃপর আমার প্রাপ্ত বয়স সম্পন্ন হওয়ার পর আবার আমায় Ione island এ নিয়ে যাওয়া হয়, আর তখনই মা বাবা আমায় বলে,আপনাকে ফিরিয়ে আনতে।জানেন তখন খুব খুশি হয়েছিলাম যে, আপনার সামনে যেতে পারবো।
আর তারপরই আসি আপনাকে নিয়ে যেতে। (ইয়ান)
–হুম বুঝলাম, কিন্তু আমার কাছে এসব লুকানোর মানে কি? আমায় কনফিউসড করার কারন কি মিস্টার জুনিয়ার? (তায়াশা)
তায়াশার কথায় ইয়ান হেসে বলে, আমি এমনই মিস সিনিয়ার, সবাইকে কনফিউসড করতে পছন্দ করি।
–ওহ (তায়াশা)
–হুম।(ইয়ান)
ইয়ান দেয়ালে থাকা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সময় ৩.৩০ মিনিট।
ইয়ান বলে,তায়াশা এখন ঘুমিয়ে পড়ুন, কাল অনেক কাজ আছে, জানিনা ইফান আবার কি করে, আজ যেভাবে রেগে গেছিলো আমার ওপর, শুধু ইফানের কাছে পাওয়ার লকেটটা ছিলো না।
থাকলে এই রাতের বেলায়, মাঝ রাস্তায় একটা ছোটখাটো টর্নেডো হয়ে যেতো।
— ওহ ইফান অযথাই রেগে গেছে? আপনি কিছু করেন নি? (তায়াশা)
–না..হ ঠিক তা নয়, আমিও একটু দুষ্টুমি করেছিলাম, তাই রেগে গেছে। (ইয়ান)
–জানি। (তায়াশা)
–ভালো, এবার ঘুমান। (ইয়ান)
তারপর ইয়ান ফিরে যায়, আর তায়াশা ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে, তবে ঘুমাতে পারেনা।
তায়াশা চুপ করে শুয়ে মাথার উপরে ঘূর্নেয়মান সিলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে আছে।
আর অন্য দিকে তায়াশার চোখ বেয়ে এক ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে,তারপর তায়াশা আলতো স্পর্শে চোখ বন্ধ করে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
To be continue…