Mysterious
Part _28
Romoni
তায়াশা অতি বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে বইটার দিকে তাকিয়ে আছে।
কেনোনা বইটার বাকি যে পৃষ্ঠা গুলো উল্টাচ্ছে, সব গুলোই খালি পৃষ্ঠা, কোনো কিছুই লেখা নেই।
অবশেষে বইয়ের শেষ পৃষ্ঠার মাঝামাঝি স্থানে কিছু লেখা দেখতে পায় তায়াশা।
লেখাটা হলো,
” সম্পূর্ণ রহস্য উন্মোচন করতে, পৌঁছাতে হবে সেই লাইব্রেরী নামক স্থানে, যে লাইব্রেরীর নামদ্বয় এর জড়িয়ে আছে এই বই এর সঙ্গে, হয়তো বা তোমার খুব নিকটেই সেই স্থান ”
লেখাটা দেখে তায়াশা নিজের ঘরের জানালা দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়, রাস্তার অপর পার্শ্বে থাকা অনেক পুরোনো লাইব্রেরীটার দিকে, লাইব্রেরীটা প্রায় একশত বছর পুরাতন, অপরূপ লাইব্রেরীটির আকৃতি, আর যার নাম এই বই এর নাম এর সাথে জড়িয়ে আছে,লাইব্রেরির পাশেই একটা বড় বোর্ড এ লেখা Mysterious Library.
এই লাইব্রেরীটার নামের সাথে এই লাইব্রেরীর সম্পর্কটা খুব গভীর।
আজ অব্ধি যারাই এই লাইব্রেরীর বই পড়েছে, তারা কেউই কোনো একটি বইয়েরও শেষটা জানতে পারেনি, কারন সেই বইয়ের শেষটা জানার আগেই কারোর মধ্যে এমন এক অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে, যে সেই ব্যাক্তির এই বইটার প্রতি সমস্ত আগ্রহ যেনো উভে গেছে, নয়তো বইয়ের পৃষ্ঠা গুলোর লেখা এতোটাই অস্পষ্ট যা বোঝার মতো অবস্থা নেই।
এসব ঘটনার জন্য এই লাইব্রেরীর প্রতি লোকজন এর অধিক মাএায় আগ্রহ, অনেকেই অতিব আত্নবিশ্বাস নিয়ে আসে এই লাইব্রেরীতে, যে সে যে কোনো একটা বই যেভাবেই হোক সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করবে, কিন্তু প্রতিটি ব্যাক্তিই বারংবার ব্যার্থ হয়,আর লাইব্রেরীটির এহেন অবস্থার কারনে লাইব্রেরীটি খুব জনপ্রিয়।
তায়াশা যদি আজ এই লাইব্রেরী থেকে এই বইটির শেষাংশ অব্ধি পড়ে শেষ করতে পারে, তবে এই লাইব্রেরীর “বই এর শেষাংশ অব্ধি পড়ে শেষ না করতে পারা” র রেকর্ড ভেঙে যাবে, হয়তো বা তায়াশাই সেই রেকর্ড ভেঙে দিতে পারবে।
তায়াশা বইটি বন্ধ করে টেবিল এর উপর রেখে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়, এরপর বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়ে লাইব্রেরীর অপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে।
তায়াশা একটা অদ্ভুত হাসি রেখা ঠোঁটে টেনে রাস্তা পেরিয়ে লাইব্রেরীর সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, আর লাইব্রেরীর দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করে, তারপর খুঁজতে থাকে কাঙ্খিত বইটি, কিন্তু এই বইটি যেনো কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না তায়াশা।
অতঃপর তায়াশার চোখ পড়ে একটা ছোট টেবিল এর উপর, যেটা লাইব্রেরীর এক কর্নারে রাখা, সেই টেবিলটার সামনে গিয়ে দেখে একটা বই রাখা, বইটা তায়াশা দেখতেই তায়াশার ঠোঁটের কোন খানিকটা প্রসারিত হয়।
তারপর তায়াশা বইটাকে হাতে নিয়ে, বইটার উপরে লেগে থাকা ধুলো গুলো হাতের সাহায্যে ঝেড়ে ফেলে দেয়, এখন বইয়ের নামটা স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে, এতোক্ষণ ধুলোর আবরনের কারনে বইয়ের নামটা কিছুটা অস্পষ্ট ছিলো।
এরপর তায়াশা বইটা নিয়ে লাইব্রেরীর অন্য এক পাশে চলে যায়।
আর অন্য দিকে এক বৃদ্ধ বয়সী পুরুষ তায়াশাকে পর্যবেক্ষণ করে চলেছে, তার মুখটা মলিন হয়ে আছে অনেকটা, তবে সেই মলিনতার মাঝেও এক পৈশাচিক আনন্দ প্রতিস্ফুটিত।
লোকটি মনে মনে বলে ওঠে, নিজেই নিজেকে ফেরারী পন্থায় নিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করলে।
কথাটা বলেই লোকটি তায়াশার থেকে কিছুটা আড়ালে গিয়ে একটা চেয়ার টেনে, হাতটা লাঠির উপর ভর দিয়ে চেয়ারে বসে পড়ে।
লাইব্রেরীর এই দিকটা অনেকটা নিরিবিলি, তাই তায়াশা এখানে এসে একটা দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বইটা খোলে।
আগের বইটার লেখাগুলো যেখানে এসে শেষ হয়েছিল, তার পরবর্তী অংশ থেকে লেখাটা এই বইয়ে শুরু হয়েছে।
আপনি যদি একসাথে এতো কিছু জানতে পারেন, তাহলে আপনার মানসিক ভাবে অনেকটা চাপ সৃষ্টি হবে, এতোটা কষ্ট আপনি হয়তো বা সহ্য করতে পারবেন না তায়াশা।
এখন যতটা ডিপ্রেশন এ আছেন, তার থেকেও বেশি ডিপ্রেশন এর স্বীকার হতে হবে হয়তো আপনাকে, আর এই ডিপ্রেশন নামক শব্দটা খুবই ভয়ঙ্কর, আর তা যদি অধিক তম হয়, তাহলে তো মারাত্মক ভয়ঙ্কর।
আর এর ফলে যদি আপনার কোনো ক্ষতি হয়ে যায়, তা আমি মানতে পারবো না।
তখন আমার যাতনার মাএা আরো অধিকতম বৃদ্ধি পাবে, আর এতোটা যাতনার অনলে আর দগ্ধ হতে চাইনা, অন্তত এখন যেভাবে আছি, বাস্তবতাটা কে মেনে নিয়েছি, বাকিটা জীবন এভাবেই কাটিয়ে দেবো, কিন্তু আপনার কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে আমি ভালো থাকতে পারবো না।
তাই নিজেকে ভালো রাখার জন্য হলেও আপনাকে একটু একটু করে সব কিছুর সম্মুখীন করছি, অন্তত আপনি একটা ঘটনা জানার পরে কিছুটা সময় পাবেন নিজেকে সামলানোর।
পরবর্তীতে অন্য একটা সত্যের সম্মুখীন হওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে পারবেন।
আর ইফান তো বলেই ছিলো যে, আমি নিজের স্বার্থ ছাড়া কিছুই করি না, তাই নিজের ভালোর জন্যই আপনাকে ভালো রাখতে চাই।
ইয়ান এর এই কথাটার মাঝে অজস্র অভিমান আড়াল কৃত আছে ইফান এর প্রতি, নিজের ভাইয়ের প্রতি এহেন আচরণ করতে ইয়ান এরও তীব্র কষ্ট হচ্ছে, তবে তা বহিঃপ্রকাশ করতে পারছে না ইয়ান, আর যা তায়াশা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে।
–আচ্ছা চলুন এবার এই ঘর থেকে, আঙ্কেল আন্টির সাথে কথা বলুন গিয়ে,আর আমারও কিছু কাজ আছে, যেতে হবে আমায়।
আর সন্ধ্যায় গিয়ে মম এর কাছে পড়তে বসবেন, আমি এসে মমকে জিজ্ঞেস করলে যেনো শুনতে পাই, আপনি সব পড়া ঠিকঠাক ভাবে শেষ করছেন। (ইয়ান)
ইয়ান এর হঠাৎ প্রসঙ্গ বদলে পড়ার বিষয় কথা বলাটা তায়াশার ঠিক বোধগম্য হলো না, পরীক্ষা তায়াশার অথচ তায়াশার থেকে তায়াশার পরীক্ষা নিয়ে ইয়ান এর চিন্তা অধিক।
অতঃপর তায়াশা ইয়ান এর কথায় সম্মতি দিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়, তায়াশার পিছু পিছু ইয়ানও কক্ষ থেকে বেরিয়ে যায়।
ইয়ান তায়াশা বাদে সবাইকে বলে কোথাও একটা চলে যায়, আর যাওয়ার আগে তায়াশাকে মাইন্ড কানেকশন এর দ্বারা মেসেজ দিয়ে বলে, আজ রাত ঠিক ১২ টার সময় যেনো তায়াশা Lone island এ উপস্থিত থাকে,আর সেটাও বাড়ির সবার চোখের আড়ালে।
আর তায়াশা তাতে সম্মতি জানিয়ে দেয়।
|
|
তায়াশা লাইব্রেরিতে দাঁড়িয়ে বই পড়ায় মগ্ন, এর মধ্যেই কেউ একজন এসে তায়াশার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,হাই তায়াশা।
কোনো এক মেয়েলি কন্ঠ শুনে তায়াশা বই এর থেকে চোখ তুলে সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে, মেয়েটার মুখে একটা রুমাল বাঁধা, চোখ দুটো শুধু খোলা আছে।
এরপর তায়াশাও মেয়েটার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে হাত মিলিয়ে বলে, হাই।
এরপর মেয়েটি গিয়ে একটা চেয়ার এনে তায়াশার মুখোমুখি বসে পড়ে।
— আমি আমিহা ( মেয়েটি)।
— ওহ, কিন্তু আপনি আমার নাম জানলেন কিভাবে? (তায়াশা অবাক হয়ে প্রশ্ন করে)।
— সেসব না হয় পরে কখনো জেনে নিও, এখন যেটা করছিলে সেটা করো।
আর তুমি যে কেনো এই বইটা পড়তে গেলে?
নিজের কতো বড় বিপদ ডেকে এনেছো, তা নিজেও জানো না, কৌতুহল ভালো তবে অধিক কৌতুহল নয়,আর তুমি অধিক কৌতুহল এবং জেদ দেখিয়ে ফেলেছো, যা তোমার একদমই উচিত হয় নি।
এর পরিনাম ঠিক হবে, তা তোমার ধারনারও বাহিরে।
আর এই বইয়ের অন্তিম পৃষ্ঠায় কিছু শব্দ রয়েছে, তা যেনো ভুল করেও পড়তে যেও না, তাহলে আমার হাতে আর কিছুই থাকবে না।
তায়াশা আমিহার কথার কিছুই বুঝতে পারছে না।তায়াশা কিছু বলতে যাবে তখন আমিহা তায়াশাকে থামিয়ে দেয়, আর বলে,এখন কোনো প্রশ্ন নয় তায়াশা, শুধু যা বলছি তাই করো।
বাকিটা পড়া শেষ করে আমার কাছ থেকে সব কিছু জেনে নিও, আর আমি এখানেই আছি, তাড়াহুড়ো করার কিছু নেই, এবার পড়া শুরু করো।
To be continue…