Ex গার্লফ্রেন্ড পর্বঃ৯

0
535

Ex গার্লফ্রেন্ড
পর্বঃ৯
#আবির হাসান নিলয়

আমাদের যোগাযোগ বন্ধ মাসখানেক হয়ে
গেছে।চাইলেও কথা বলতে পারিনা।সন্ধ্যায়
বাসায় ফিরে আসতে আব্বু নিজের কাছে
ডাকলো।আমিও কোনো কথা না বলে বাধ্য
ছেলের মতো উনার পাশে বসলাম।
আব্বুঃতোর অনেক কষ্ট হয় তাই না?
আমিঃকষ্ট কেনো হবে?
আব্বুঃজান্নাতের জন্য
আমিঃআরে না,আমি তো একদম ভালো
আছি।দিব্যি সব করে বেড়াচ্ছি।
আব্বুঃতোর আম্মু সব বলেছে আমাকে।
আমিঃবাদ দাও আব্বু ওসব
আব্বুঃতুই ওকে নিয়ে পালিয়ে যা
আমিঃপালিয়ে গেলেই কি সব হয়ে যাবে?
আব্বুঃতোর খালুকে বলে তোর জন্য একটা
জবের জন্য ব্যবস্থা করে দেবো।
আমিঃতোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো না।
আব্বুঃতাহলে এখানেই নিয়ে আয়,আল্লাহ
আমাকে উপার্জন করার সামর্থ্য দিয়েছে।
আমিঃতুমি মামাকে দেখো,বেকার বলে তার
ভালোবাসার মানুষ ছেড়ে চলে গেছে।
আব্বুঃহুম
আমিঃআমি ফ্রেস হয়ে আসছি
আব্বুঃএকটু পরে কর,কিছু কথা আছে।
আমিঃহুম বলো
আব্বুঃকিছু জায়গা কিনেছি
আমিঃকোথায়?
আম্মুঃভালুকাতে
আমিঃখালাম্মার বাসার কাছে
আম্মুঃহুম
আমিঃতোমরা কথা বলো আমি আসছি।

রুমে এসে ফ্রেএ হয়ে ফোনটা চার্জে লাগিয়ে
আবার আব্বু আম্মু কাছে গেলাম।
আমিঃকবে কিনলে ওখানে?
আব্বুঃসেদিন তোকে দিয়ে যে কাগজ পাঠিয়ে
দিছিলাম সেখানে ঐসকল দলিল ছিলো।
আমিঃতাহলে কি আমরা চলে যাবো?
আব্বুঃযেতে তো হবেই।তবে এখন না।নিলুর
এক্সাম শেষ হলে ওকে নিয়ে আমরা ভালুকায়
থাকবো।আর তুই এদিকে অনার্সটা শেষ
করবি।
আমিঃনিলুর এক্সাম দুমাস পর থেকে শুরু
আম্মুঃহুম,এক্সাম শেষ হলে যাবো।আর
ওখানে গিয়ে কিসব কাজ করতে হবে সেটার
জন্য ওখানে থাকতে হবে।এখান থেকে
বললেই তো আর সব হয়ে যাবে না।
আমিঃকিন্তু আমি এখানে থেকে খাবো কি?
আম্মুঃমাহি আসবে,তোকে আগে হয়তো
বলছিলাম।মাহি নিজেও এখানে থেকে নিজের
পড়াশোনা করবে।মাহি দুজনের রান্না খুব
সহজেই করতে পারবে।
আমিঃও এখানে পড়তে আসবে,কাজ করার
জন্য আসবে না।
আম্মুঃওকে আমরা সব বলেছি।মাহি নিজেই
বলেছে,দুই ভাইবোন খুব ভালো করেই
পড়াশোনা করতে পাড়বে।
আমিঃতবুও আম্মু
আম্মুঃকিছুদিন পর ও আসবে তখন ওকে
তুই নিজেই জিজ্ঞাস করিস।
নিলুঃকে আসবে আম্মু?
আমিঃতোকে দেখতে আসবে,বিয়ে দিয়ে
দেবো তোকে।
নিলুঃহু আইছে বিয়ে দিতে।যাও ভাগো

রুম থেকে এসে নিলুও আমাদের সাথে এসে
বসলো।পিচ্চিটাও বড় হয়ে গেছে,সামনে
নাকি এসএসসি এক্সাম দিবে।এতো
তাড়াতাড়ি বড় কিভাবে হয়ে গেলো কেউ
বুঝতেও পারলাম না।
নিলুঃআব্বু বলোনা
আব্বুঃমাহি আসবে কিছুদিন পর
নিলুঃওয়াও,আশফি আসবে আম্মু?
আম্মুঃনা,তোর এক্সাম শেষ হলে আমরাই
ওদের ওখানে যাবো।
নিলুঃতাহলে তো অনেক মজা হবে।
আমিঃহুম মজা করতে করতে পুকুরে পড়ে
যাস না আবার।ওখানে কিন্তু নদী বেশি।
নিলুঃসাতার শিখে নেবো,সমস্যা কি?
আমিঃতাহলে তো ভালোই,এখন যা পড়তে
বস।সামনে তোর এক্সাম।
নিলুঃহুম বাই।

আড্ডা থেকে উঠে গিয়ে রুমে চলে গেলো।
আম্মুঃনিলয় তোকে বন্ধুর মতো উপাধি দিচ্ছি
তুই জান্নাতকে ছেড়ে দিস না।
আমিঃছাড়ছি না তো
আম্মুঃতুই আবার ওর সাথে আগের মতো
করে নে।
আমিঃহুম
আম্মুঃকি হুম?
আমিঃকি হুম হবে(হেসে দিয়ে)
আম্মুঃআমি চাই জান্নাত আমার ছেলের বউ
হোক,সেটা কিভাবে হবে আমি জানিনা।
আমিঃভাগ্যে যা লেখা আছে সেটা তো হবে
তাই না।এখন যদি ও না থাকে।
আব্বুঃতুই চাইলেই তোদের সম্পর্ক আগের
মতো হবে।
আমিঃআচ্ছা আমি ওর সাথে কথা বলবো
আব্বুঃনাস্তা করে নে এখন
আমিঃতোমরা করো,আমি একদম রাতে খাবো

আম্মু আব্বুর সাথে কথা শেষ করে রুমে
আসলাম।ফোনে অনেকটা চার্জ হয়ে গেছে।
ফোনটা নিয়ে ফেসবুকে গেলাম।কপাল ভালো
হলে যা হয়।জান্নাত একটিভ আছে।আমি জানি
আমার আইডি থেকে জান্নাতকে মেসেজ
দিলে কোনো রিপ্লে দিবে না।উল্লেখ্য আমার
একটা ফেইক একাউন্ট আছে,যা জান্নাতের
আইডির সাথে অনেক আগে থেকেই অ্যাড
করা।আইডিটা মেসেঞ্জারে লগ ইন করলাম।
তারপর ধুপধাপ কয়েকটা মেসেজ দেয়ার
পর মেসেজ সিন করলো।
জান্নাতঃকেরে ভাই তুই?
আমিঃএকজন প্রেমিক
জান্নাতঃনাম কি?আর এসব কি নাম দেয়া
ভাই আপনার মালেকা ফালেকা(Malekith)
আমিঃছ্যাকা খেয়ে এমন নাম দিছি
জান্নাতঃহো মানুষজন এখন বেশিই ছ্যাকা
খাচ্ছে।একটু আগে আমিও খাইছি
আমিঃএকটু আগে না কয়েকদিন আগে?
জান্নাতঃধুর মিঞা,চা বানাতে ছ্যাকা খাইছি
আমিঃআমি ভাবলাম প্রেমের ছ্যাকা
জান্নাতঃআপনি কে?
আমিঃতোমার প্রেমিক
জান্নাতঃফাজলামো করেন?
আমিঃফাজলামি কেনো করবো,তোমাকে
সেই দুবছর ধরে ফলো করি।
জান্নাতঃছ্যাচড়া ছেলে
আমিঃহুম,শুধু তোমার জন্য।একটা প্রশ্ন
ছিলো,করবো?
জান্নাতঃদরকার নাই ভাই
আমিঃনিলয়ের সাথে তোমার কি সম্পর্ক?
জান্নাতঃআপনার জেনে লাভ আছে?
আমিঃলাভ না থাকলে হুদাই কি প্রশ্ন করি?
জান্নাতঃকেউ না আমার,কুত্তাটারে কাছে
পাইলে ছাদ থেকে ফেলে দিতাম।?

জান্নাতের এমন মেসেজ দেখে না হেসে আর
থাকতে পারলাম না।কি রিপ্লে দেবো সেটা
ভাবছি তখন আবার মেসেজ করলো….
জান্নাতঃতবে আপনারে পাইলে আপনাকেও
পিটানি দিতাম।
আমিঃযা বাবা আমি আবার কি করলাম?
জান্নাতঃকেউ পরিচয় জিজ্ঞাস করলে তাকে
পরিচয় দিতে হয়।
আমিঃপরিচয় দেয়ার পর আমার সাথে কথা
বলবে তার কোনো গ্যারান্টি আছে?
জান্নাতঃনা দিলে ব্লক করে দেবো।
আমিঃজানি সেটা করবে না।কারণ তোমার
মাথায় কারো সম্পর্কে জানতে ইচ্ছা করলে
তুমি সেটার শেষ অবধি না জেনে কোনো
ডিসিশন নাও না।
জান্নাতঃআপনি নিলয়ের পরিচিত?
আমিঃসেটা কেনো মনে হলো?
জান্নাতঃএটা নিলয় এবং ওর কিছু ফ্রেন্ডকে
বলেছিলাম একদিন।
আমিঃআমি সেদিন তোমার পেছনে ছিলাম।
জান্নাতঃওকে বাই
আমিঃকেনো কেনো?
জান্নাতঃআপনি কে হে?যার সাথে আমাকে
কথা বলতে হবে?
আমিঃকেউ না,তবে খুব তাড়াতাড়ি হতে
চলেছি।শুধু সময়ের অপেক্ষা।
জান্নাতঃভালো
আমিঃমামা বাসা থেকে কবে আসবে?
জান্নাতঃআর যাবো না ওখানে
আমিঃকেনো?
জান্নাতঃবলতে বাধ্য নয়
আমিঃযদি বন্ধু হিসাবে জানতে চাই?
জান্নাতঃআমি বন্ধু করতে চাই না
আমিঃকষ্ট পাইলাম বুকের বাম পাশে
জান্নাতঃছিদ্র করে বাতাস দেন ঠিক হবে
আমিঃকি ডেঞ্জারাস মেয়েরে বাবা?
জান্নাতঃফ্রিতে অ্যাডভাইস দিলেও দোষ?
আমিঃবাদ দাও,এখন তোমার কি খেতে
মন চাইছে?
জান্নাতঃআম্মার হাতের খাবার
আমিঃতুমি চাইলে আমি সেটা পূরণ করে
দিতে পারি।তবে বেশি প্রশ্ন করা যাবে না।
জান্নাতঃআপনি প্লিজ মজা বাদ দেন।
আমিঃতুমি ৯টা অবধি অপেক্ষা করো আমি
খাবার নিয়ে আসছি।
জান্নাতঃহু ঢং,মেয়ে পটাতে কতো মিথ্যা
বলে এসব ছেলেরা আল্লাহ ?
আমিঃতোমার কল্পনাতে খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি

আর কোনো কথা না বাড়িয়ে অফলাইন হয়ে
আম্মুর কাছে গেলাম।
আমিঃআম্মু টিফিফে খাবার বেড়ে দাও
আম্মুঃকেনো?
আমিঃজান্নাত ওর আম্মুত হাতের খাবার
খেতে চায় এখন।
আম্মুঃতোকে কে বলল?
আমিঃআমাকে বলেছে
আম্মুঃওর আম্মুর থেকে নিতে বলছে,আমার
থেকে নিতে না পাগল।।
আমিঃবিয়ের পর তুমিই তো হবে তাই না?
আম্মুঃপাগল ছেলে
আমিঃতুমি দাও তো আম্মু

আম্মু দিতে না চাইতেও জোড় করিয়ে বেরে
নিলাম।এখন রিক্সা করে যাওয়া আসা
অনেকটা সমস্যা হবে।তাই আব্বুর থেকে
বাইকের চাবি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।বাইকে
যেতে মিনিট ৩০ লাগবে।টিফিনটা সাবধানে
রেখে বাইক চালাতে শুরু করলাম।৩০ মিনিটের
বেশিই টাইম লেগেছে জান্নাতের মামা বাড়ির
সামনে আসতে।বাইকটা একটু দূরে রেখে
হেলমেট পড়া অবস্থায় গেটের কাছে গেলাম।
জেনো কেউ চিনতে না পারে।গেটের কাছে
গিয়ে দেখলাম পরিবেশ অনেকটা ঠাণ্ডা আছে
চুপিচুপি বাসার দরজার কাছে গিয়ে টিফিন
রেখে দৌড়ে গেটের বাইরে চলে আসলাম।
পকেট থেকে দ্রুত ফোনটা বের করে
অনলাইনে এসে দেখলাম জান্নাত তখনো
একটিভ আছে।আজ কপালটা অনেক
ভালো।যেটা চাচ্ছি সেটাই হচ্ছে।দেরি না করে
জান্নাতকে মেসেজ করলাম…
আমিঃতোমাদের বাসার দরজায় খাবার রেখে
আসছি।একটু দরজা খুলে দেখো।
জান্নাতঃভাই আপনি মজা বাদ দিবেন প্লিজ?
আমিঃধুর বাল,বলছি না আমি তোমার ভাই
না।আর মজা করার জন্য এই অন্ধকারে
দাঁড়িয়ে থাকার ইচ্ছা নাই।
জান্নাতঃআপনি সত্যি বাইরে আছেন?
আমিঃহুম
জান্নাতঃওকে

জান্নাতের ওকে মেসেজ দেখে বাইক নিয়ে
গেটের সামনে গেলাম।কিছু সময়ের মাঝে
জান্নাত বাইরে এসে টিফিন হাতে নিয়ে
আমার দিকে দেখতেই বাইক নিয়ে দ্রুত চলে
আসলাম।মাইয়াটা হয়তো ভাবতেই পারেনি
আমি সিরিয়াস হয়ে সব কথা বলছিলাম।
জানিনা জান্নাতের মধ্যে কিসের মায়া আছে।
তবে আব্বু আম্মুর অনুপ্রেরিত কথা শুনে
মায়াটার প্রতি বেশি আকর্ষিত হচ্ছিলাম।
বাইকটা পার্ক করে হেলমেট নিয়ে বাসায়
এসে ফ্রেস হয়ে নিলাম।ফ্রেস হওয়ার পর
আম্মু খাওয়ার জন্য ডাকলে খেয়ে নিয়ে
পুনরায় মেসেঞ্জারে গেলাম।মেসেঞ্জারে
যেতেই দেখলাম জান্নাত অনেকগুলো মেসেজ
দিয়েছে।তখন রিপ্লে দিলাম…
আমিঃহাই

যদিও একটিভ দেখাচ্ছিলো না,তবে হুট
করেই মেসেজ সিন করলো।
জান্নাতঃকে আপনি?
আমিঃমানুষ
জান্নাতঃএটা আমার আম্মুর হাতের খাবার না
তবে কোথায় জানি খেয়েছি আমি।অনেক
পরিচিত এই খাবারটা।
আমিঃশ্বাশুড়ি মায়ের খাবার পরিচিত না
হয়ে যাবে কোথায়।এটা আমার মায়ের হাতের
খাবার ছিলো।
জান্নাতঃআপনি কে প্লিজ বলবেন?
আমিঃসময় হলে বলবো।আর কাল কলেজ
শেষ করে যে রিক্সায় বাসায় যাবে সেই
রিক্সাওয়ালাকে টিফিন ফিরিয়ে দিও।না
হলে পরে আর পাঠাতে পারবো না।
জান্নাতঃপরিচয় না দিলে ফিরিয়ে দেবো না
আমিঃতাহলে একদম বিয়ের পর নিয়ে এসো
জান্নাতঃপ্লিজ বলেন না কে আপনি?
আমিঃবললে আমাকে ভালোবাসবে?
জান্নাতঃসরি
আমিঃতাহলে অপেক্ষা করো
জান্নাতঃকিন্তু পরিচয় দিলে কি সমস্যা?
কোনো রিপ্লে না দিয়ে অফলাইন হয়ে গেলাম।

আজকেই এতো কথা বললে শুধু জান্নাতই
না বরং সব মেয়েরই কথা বলার আগ্রহ কমে
যায়।কিন্তু যদি একটু করে কথা বলার পর
এমন কিছু বলা/করা হয় যেনো সে এমনটা
কখনো আশা করেনি।তাহলে অনেকেই
আগ্রহ নিয়ে কথা বলতে চায়।

পরেরদিন…….
কলেজ মাঠে বসে আছি তখন জান্নাত ওর
মামার সাথে মানে আমাদের প্রিন্সিপাল স্যারের
সাথে কলেজে আসলো।বন্ধুবান্ধব তেমন
কেউ আসেনি।তাই উঠে ওর কাছে গেলাম।
আমিঃহাই জান্নাত
জান্নাতঃকি হয়ছে?
আমিঃকথা আছে তোর সাথে
জান্নাতঃতোর সাথে আমার নাই
আমিঃআরে চল
জান্নাতঃযাবো না
আমিঃতুই যাবি না মানে,তোর চোদ্দ গুষ্টি
যাবে কুত্তী।

কুত্তীটারা হাত ধরে টানতে টানতে কলেজের
পেছনের বেঞ্চটাতে আনতে লাগলাম।এমন
অবস্থা দেখে অনেক স্টুডেন্ট হাসাহাসি
করছিলো।যা দেখে জান্নাত আরো বেশি রেগে
গেছে।অনেক কষ্টে বেঞ্চটাতে এনে বসিয়ে
দেয়ার পর জান্নাতের কাদে হাত রাখলাম।
জান্নাতঃকাদে থেকে হাত সরা শুয়োরছানা ?

চলবে…………
(কেমন হচ্ছে গল্প জানাবেন)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here