Different Love পার্ট ১২

0
1594

Story:- #Different_Love
Writer:- গল্পছোঁয়া
Part:- 12

আরিয়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আয়মান ফোনটা প্যান্টের পকেটে ঢুকালো,আরিয়া কে কিছু বলতে যাবে তখনই রোজ বললো…

— স্যার,চলুন যাওয়া যাক।

— ও যাবে নাকি? (আরিয়া কে দেখিয়ে)

— হুম,প্লিজ ডন্ট মাইন্ড স্যার।একচুয়ালি নিমু আরিয়া কে ছেড়ে কোথাও যায়না।
আর আমরাতো শুধু ঘুরতে না,মিশনেও যাচ্ছি তাইনা।ওই ট্রিপল মার্ডার কেসের মেইন ক্লু ওই গ্রাম থেকেই পাব।

— ওর বাবা-মা জানে??
আর পোশাক আনছে?

— হুম,৫দিনের জন্যইতো যাচ্ছি ঘুরতে।

— ওকে,যাওয়া যাক।

নিমু আর রোজ পেছনের সিটে বসলো ইচ্ছে করে, যাতে আরিয়া আর আয়মান পাশাপাশি বসতে পারে।
রোজ আয়মান আর আরিয়ার ব্যাপারে সবই জানে,নিমু বলছে।
এখন ওদের দু’জনের প্ল্যান ওদের কে মিলিয়ে দেওয়া।
আরিয়া আয়মানের পাশের সিটে বসলো,আয়মান ড্রাইভিং সিটে।
গ্রামে যাচ্ছে ওরা,রোজদের গ্রামে।
আর সেখানে ট্রিপল মার্ডার কেস নিয়ে বেশ অনেক দিন ধরে ঝামেলা চলছে,তাই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে রোজ আয়মান কেও সাথে নিয়েছে। আরিয়াতো নিমুর সাথে আছেই, এবার যদি মিল করানো যায় এদের।রোজের বাবামা কেউই নেই, বাড়িটা ফাঁকাই পরে আছে।


৩ঘন্টা জার্নির পর গ্রামের বাড়িতে পৌছালো ওরা।সন্ধ্যা হয়ে গেছে,নিমু আর আরিয়ার এক রুম।আর রোজ ও আয়মানের আলাদা আলাদা রুম,এখানে তো কোনো কাজের লোক নেই,নিজেদেরই রান্না করে খেতে হবে।রাতের বেলায় কিছু কেনাকাটাও করা নাই,তাই আসার সময় গ্রামের বাজার থেকে ডালপুরি কিনে আনছে,রাতে খাওয়ার জন্য।
যে যারযার রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো,বাড়িটা লোক দিয়ে আগেই পরিষ্কার করে নেওয়া হয়েছে।
একতলা বিশিষ্ট টিনসেট দালান বাড়ি,৪টা রুম রয়েছে।
ডায়নিং টেবিলে সবাই বসে খাবার খাচ্ছে।রোজ,নিমু,আরিয়া এটাসেটা বলে বেশ আড্ডা দিচ্ছে।আর আমাদের আয়মান,গোমড়ামুখো চুপচাপ খাবার খেয়ে উঠে চলে গেলো।
রুমে গিয়ে কানে ব্লুটুথ লাগিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো,রোজ আর নিমু একে-অপরের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেললো।
রাত ১০টা অবধি আড্ডা দিয়ে রোজ আয়মান এর সাথে দেখা করে নিজের রুমে চলে গেলো,নিমু আর আরিয়াও রুমে গিয়ে বেডে সুয়ে পড়লো।
পরেরদিন সকাল ৭টার দিকে আরিয়া বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে ফ্রেশ হাওয়া নিচ্ছে, মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। নিমুও ধোয়া ওঠা চায়ের কাপ এনে বারান্দায় থাকা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসলো,আরিয়াও বসলো।এক কাপ আরিয়ার হাতে দিলো।
দুই বান্ধবী চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে আর নিরবে ভোরের প্রকৃতি দেখছে।
আয়মান,রোজ কারোরই দেখা নেই, কি জানি কোই গেছে।
বেশকিছুক্ষন পর আয়মান আর রোজকে দেখা গেলো হাতা কাটা গেঞ্জি পরে জগিং করতে করতে এদিকেই আসছে।
আয়মান আরিয়ার দিকে একবার আরচোখে তাকিয়ে গটগট করে রুমে চলে গেলো,উহু কি এটিডিউড।
রোজ ওদের জন্য ব্লাক কফি বানাতে বলে ফ্রেশ হতে চলে গেলো,দুই বান্ধবী মিলে কফি বানিয়ে ফেললো।নিমু একটা কাপ আরিয়ার হাতে দিলো…

— নে ধর,ভাইয়াকে দিয়ায়

— আআমিইই?
বইন,যদি ধমক দেয়।

— এই হ্যালো,ন্যাকামি করিসনা ওকে।
এখানে আমরা কেন আসছিলাম বলতো,বিয়ের আগে হবু বরের সাথে একটু ঘুরতে।কিন্তু তোমাদের দুজনের মিল করানোর জন্য ঘুরাঘুরি বাদ দিয়ে ভাইয়াকে কেস সল্ভের নাম করে নিয়াসছি।
এখন রোজ আর ভাইয়া কেস নিয়েই বিজি থাকে,আর আমাদের ঘুরাঘুরি লাটে উঠেছে।
কিন্তু যে কারণে এতকিছু, সেটাই যদি না হয় আমরা মেনে নেব নাকি।
যা কফিটা ভাইয়ার কাছে দিয়ায়,আর দুটো মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবি ওকে।নাও গো ফাস্ট।

আরিয়া যতই সাহস করুক,আয়মানের সামনে গেলে একটু ভয় নাহ বা বেশ অনেকটা ভয় পায়,যেদিন থেকে জেনেছে আয়মান পুলিশ।
ভয়েভয়ে ধীরপায়ে রুমে ঢুকে দেখলো আয়মান বেডে হেলান দিয়ে কোলের ওপর ল্যাপটপ রেখে কানে এয়ারফোন লাগিয়ে কিছু করছে,বলছে।
আরিয়া গিয়ে আয়মানের সামনে দাঁড়ালো,কিছু বলবে তখনই আয়মান এমন জোর ❝রাসকেল❞ বলে উঠলো যে আরিয়ার ভয়ে হাত থেকে কফি কাপনটা ধপ করে পরে গেলো।
শব্দ পেয়ে আয়মান ল্যাপটপ থেকে নজর সরিয়ে সামনে তাকিয়ে দেখলো আরিয়া ভীতু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,আর নিচে কফি কাপ ভেঙে পরে আছে।
আয়মানের মেজাজ এমনই বিগড়ে আছে,এখন আরও কয়েকগুণ বিগড়ে গেলো।

— কারোর রুমে আসলে নক করে আসতে হয়,ইউ নৌ দ্যাট।
যখনতখন এভাবে হুটহাট আমার রুমে আসবেনা,বিজি আছি আমি। নাউ গেট লস্ট (ধমকে)

— আআমিতো কফি..

— কফি মাই ফুট,ইম্পর্ট্যান্ট মিটিংএ আছি দেখতে পারছোনা।লিভ

আজকাল আয়মান আরিয়ার সাথে সবসময় ধমকে কথা বলে,রুড বিহেভিয়ার করে।বিয়েটা না মানলেও আগে এমন ব্যবহার করতোনা,আর এখন আয়মান তো আরিয়াকে সহ্যই করতে পারেনা।
আরিয়া কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে,আয়মান ল্যাপটপ টা ঠাস করে বন্ধ করে চোখ বুজে সুয়ে রইলো।
সে ইচ্ছে করেই আরিয়াকে এড়িয়ে চলে,একটু রুড বিহেভিয়ার করে বইকি,তার একটাই কারণ আরিয়া যেন তাকে ভুলে নিজের জীবনটাকে নতুন করে শুরু করে।কিন্তু আরিয়া তো নাছোড়বান্দা, সে আয়মানকেই চায়।
আর আজকে ব্যবহার টা বেশি খারাপ হয়ে গেছে,কেস নিয়ে ঝামেলা চলছে।আয়মানের মেজাজ ঠিক নেই।


আরিয়া বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে, নিমু ওকে এটাসেটা বলে সান্ত্বনা দেওয়ার বৃথা চেষ্টা করছে।

— আরুসোনা,আমি বলিকি তুই ভাইয়াকে ভুলে যা।ডিভোর্স দিয়ে দে,ভাইয়া যদি তোকে না চায় কি করবি বল।চেষ্টা তো কম করিনি

— প্লিজ নিমু,এটা সম্ভব না।
প্লিজ এগুলো বলিসনা,আমি সারাজীবন ওয়েট করবো,এখন একটু একা থাকতে চাই।

নিমু কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো,রোজের রুমে গিয়ে সবটা বললো।
এবার কিছু একটা করতেই হবে,এদের দুজনকে কাছাকাছি আনলে হয়তো আয়মান আর আরিয়া কে ছারতে চাইবেনা, প্ল্যানিং শেষ। কালকেই যা করার করতে হবে,প্রাইভেসি দেওয়া দরকার ওদের।

আজকে সারাটাদিন আরিয়া আয়মানকে এড়িয়ে চলেছে,খাবারের সময় রুমে গিয়ে খাবার খেয়েছে।আয়মানের সামনে যায়নি একবারও।
এতে আয়মানের খারাপ লাগলেও যতটা সম্ভব নরমাল বিহেভিয়ার করছে কিন্তু ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে।বাট কি-ই বা করবে সে,সেতো নিরুপায়।


পরের দিনও সারাটা দিন আরিয়া এরকম এড়িয়েই চললো আয়মান কে,কিন্তু আয়মান পারছেনা আর সহ্য করতে।
যার দরুন কারণে অকারণে সবার ওপর রাগ ঝারছে।
আজ আকাশ টা মেঘলা ছিল,বিকেলের দিকে আরও বেশি মেঘ করেছে।রাতে যে বৃষ্টি নামবে শিওর।
রোজ আর নিমুর করা প্ল্যান টা সাকসেস করতেই যেন তাদের হেল্প করছে।
প্ল্যান মাফিক সন্ধ্যার আগে বাজারে কিছু কেনাকাটার নাম করে রোজ নিমুকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো,আর বলে গেলো ফিরতে রাত হবে।কিছু রিলেটিভ দের সাথে দেখা করার আছে।
আরিয়ার চোখমুখ ফুলে গেছে, চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে,আয়মানেরও সেইম কেস।
হয়তো দুজনের কেউই রাতে ঠিক করে ঘুমায়না,তারই প্রমাণ এটা।
রোজ নিমু চলে গেলে আরিয়া গেট আটকে চলে এলো,রুমে গিয়ে নিউজপেপার পরছে সে।যাতে মনটা ভালো থাকে,কিন্তু সেটাকি আদৌ সহজ। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না সে,একতরফা ভালবাসা, চাওয়া যে বড্ড যন্ত্রণা দায়ক।সেটা হারেহারে টের পাচ্ছে আরিয়া,আয়মান কেনো তাকে বুঝেনা।
আয়মানের প্রফেশন নিয়ে আরিয়ার কোনো প্রবলেম নেই, জন্ম মৃত্যু বিয়ে তিনই বিধাতা নিয়ে। মানুষ মরনশীল, একদিন নাতো একদিন মানুষ মরবেই,আয়মান আগে থেকেই কেন এরকম করছে।
আয়মানের মনে কি তার জন্য বিন্দু মাত্র জায়গাও নেই, ফুস করে দম ছারে আরিয়া।

সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ আকাশের বুক চিঁড়ে বর্ষন শুরু হলো,আরিয়ার চোখের পানির মতো আকাশের চোখ থেকেও যেন অঝোরে পানি ঝরছে।
আরিয়া সাধারণত বৃষ্টিতে তেমন ভিজেনা,অতিরিক্ত মন খারাপ থাকলে বৃষ্টি তে ভিজে বৃষ্টিতে নিজের চোখের নোনাপানি বৃষ্টির পানির সাথে মেশাতে ভালোবাসে।এতে কষ্ট টা না কমলেও সাময়িক শান্তি পায় সে,আজও ব্যতিক্রম নয়।
রুম থেকে বেরিয়ে বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে আরিয়া।

আয়মানও এতক্ষণ রুমে আপসেট হয়ে বসে ছিল, মনমেজাজ কিছুই ভালো নেই তার।আজ তার নিজের জন্যইতো আরিয়া এতো কষ্ট পাচ্ছে, আর সে নিজে??
নিজেও তো কম কষ্ট পাচ্ছে না।
বাইরে বর্ষন শুরু হয়েছে,যার দরুন বিদ্যুৎ চলে গেছে। বাতাসও হচ্ছে, গ্রামতো গাছের ডালপালা ভেঙে পরতে পারে।তাই বিদ্যুৎ নামানো হয়েছে। আয়মান গিয়ে বারান্দায় দাঁড়ালো, রাতের বৃষ্টি দেখছে সে একমনে। থেকেথেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, সেই আলোতেই আয়মানের চোখ গেলো সামনের খোলা জায়গায় বৃষ্টির মাঝে দাড়িয়ে থাকা এক মানবির দিকে।
আরও একবার বিদ্যুৎ চমকানোর আলোতে আয়মান এবার সেই মানবির মুখটা স্পষ্ট দেখতে পেলো, আরে এটাতো আরিয়া।
চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে সে,কতটা স্নিগ্ধ লাগছে তাকে।
বৃষ্টি তে ভেজার দরুন জামাটা শরীরের সাথে শিটে রয়েছে। আয়মান এই থেকে থেকে বিদ্যুৎ চকমকানোর আলোতেই আরিয়ার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
হঠাৎই….

To be continue….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here