#বাবার_ভালোবাসা
পর্ব:১৯
লেখা: #রাইসার_আব্বু।
– প্রমিজ করতে হবে না ম্যাম বলেন কি করতে হবে। আপনি আমাকে বিপদে আশ্রয় দিয়েছেন। আপনার জন্য জীবনটাও দিলে কম হয়ে যাবে।
– তাহলে প্রমিজ!
– আচ্ছা প্রমিজ।
– মৌ তুমি রাজকে বলবে, ম্যাম তোমাকে অনেক ভালোবাসে। তোমাকে ছাড়া বাঁচবে না। তুমি ম্যামকে বিয়ে করো। আর হে মৌ তুমি কিন্তু আমাদের বিয়েতে সারাক্ষণ থাকবে। আমার তো বোন নেই। তুমিই তো আমার বোন। বলো পারবে না রাজি করাতে রাজকে?
– মৌ কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। বুকটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। চোখের পানি টলমল করে পড়ছে।
– কি হলো বোন?
– না ভাবছি তুমি একটা মেয়ে থাকার পরও রাজের জন্য পাগল হলে কেন?
– আপু সত্যি বলতে আমি রাজকে ভালোবাসি। আর রাজকে যতটা ভালোবাসি ঠিক ততটাই রাইসাকেও ভালোবাসি।
– ওহ্ আচ্ছা তাইই বুঝি?
– জানো আপু রাজের মতো একজনকে স্বামী হিসেবে পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
– আচ্ছা আমি তুমি যেভাবে পারো রাজকে রাজি করাবে। প্রমিজ করেছ কিন্তু।
-মৌ আর কিছু বলতে পারলো না বুকে পাহাড় পরিমাণ কষ্ট নিয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দিল।
– কথা মৌকে জড়িয়ে ধরে বলল’ সত্যিই তুমি আজ থেকে আমার বোন’।
– এদিকে আমি ডেস্কে বসে অফিসের জরুরি একটা কাজ করছি। কে যেন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাকিয়েই দেখি মৌ!
– আমি মৌ এর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললাম’ কিছু বলবেন?’
– হ্যাঁ যদি কিছু মনে না করেন তাহলে বলতে পারি।
– আচ্ছা কি বলবেন বলেন?
– রাজ তোমাকে না কথা ম্যাডাম অনেক ভালোবাসে।
– হুম আমিও ভালোবাসি। মৌকে রাগানোর জন্য কথাটা বললাম।
– মৌ কিছু না বলে, করুণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল’ রাজ তুমি না আমায় ভালোবাসতে? তবে এখন কথা ম্যাডামকে ক্যামনে ভালোবাসো?
– হাসালেন। আপনিওতো আমাকে ভালোবাসতেন। তারপরও অন্য ছেলের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন? আমি তো কথাকে ভালোবাসি। তবে অনৈতিক কোন কাজ করিনি। মৌ’কে কষ্ট দেওয়ার জন্যই কথাটা বলা ।
– মৌ আমার কথা শুনে মুচকি হেসে বলল’ জানো, ভালবাসাই যেহেতু কথা ম্যাডামকে তাহলে এক কাজ করো তাকে বিয়ে করে ফেলো। ‘রাইসাও একটা মা পাবে। আর তুমিও পাবে একটা বউ।
– হুম তাই ভাবছি।
– মৌ এবার আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। আচ্ছা ভালো থেকো।
– আচ্ছা।
– মৌ রুম থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় চলে গেল। বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ করে অনেকক্ষণ কান্না করল।
– এদিকে কথা রাইসাকে নিয়ে আসতে স্কুল চলে গেল। কথা স্কুলে গিয়ে দেখে রাইসা বারান্দায় বসে কাঁদছে।
– রাইসার কান্না দেখে কথার বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠলো। দৌড়ে রাইসার কাছে গিয়ে বলল আমার মামনিটার কি হয়েছে?
– রাইসা কথাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে ওঠল।
– কি হলো মামনি? কাদঁছো কেন? বলো কি হয়েছে তোমার?
– রাইসা কাঁদতে কাঁদতে বলল’ জানো আন্টি সবার মা আছে। আমার মা নেই। বাবাকে বলতেও পারি না। বাবা কষ্ট পাবে বলে। আজ রাতুল আমাকে বলেছে তোর মা নেই। আর মা’কে নিয়ে অনেক গল্প বলেছে। ওর মা ওকে অনেক আদর করে।
– কে বলছে তোমার মম নেই? আমি তোমার মম। কেউ যদি বলে তোমার মম কে? তখন আমার কথা বলবে!
– সত্যি তুমি আমার মম?
– হ্যাঁ আজ থেকে আমিই তোমার মম।
– না না। তোমাকে মম ডাকা যাবো না। বাবাই রাগ করবে। আর বাবাই রাগ করলে অনেক কাঁদে। বাবাই কাঁদলে পড়ে আমারি তো কষ্ট হবে। বাবাই যদি বলে তুমি আমার মম তাহলে ঠিকআছে।
-কথা রাইসার কথা শুনে রাইসাকে বুকের সাথে চেপে ধরল। রাইসায় ছুঁয়াতে কথা আজ মাতৃত্বের অজানা এক অনুভূতি ফিল করছে। রাইসা মামনি? তোমার বাবাই যদি আমাকে মম ডাকতে বলে। আমাকে তুমি মম ডাকবে?
– হ্যাঁ ডাকবো তো। আচ্ছা তাহলে শুনো তোমার বাবাইকে আমি যেভাবে বলতে বলব সেভাবে বলবে। কথা রাইসাকে কানে কানে অনেক কথা বলে দিল। রাইসা লক্ষী মেয়ের মতো বলতে রাজি হয়ে গেল।
– বিকেল বেলা কথা রাইসাকে নিয়ে সোজাসুজি অফিসে এসে পড়ল। আমি ডেস্কে বসে বসে মৌ এর সাথে কাটানো স্মৃতিগুলো মনে করছি। হঠাৎ রাইসা বাবাই করে ডাক দিয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরল।
– বাবাই তুমি আর কত কাজ করবে? চলো বাসায় যায়।
– এখনি বাসায় যাবো? এখন বাসায় গেলে তোমার কথা ম্যাডাম আমার চাকরি খেয়ে দিবে!
– কি বললে? কে তোমার চাকরি খাবে। আমি তার চাকরি খেয়ে দিবো।
– তাই বুঝি।
– হ্যাঁ তাই কারণ তুমি অফিসেও আমার হুকুমে চলবে।
– এদিকে রাইসার কথা শুনে কথা দরজায় দাঁড়িয়ে একপ্রকার জুরেই হেসে দিল।
– আমি কিছু না বলে, রাইসাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
– রাত্রে বেলা রাইসা ঘুমিয়ে গেলে বিছানায় নিচ থেকে মৌ এর ছবিটা বের করে বুকের উপর রেখে একা একাই কথা বলছি। আর চোখের পানি ফেলছি। হঠাৎ কারো স্পর্শ টের পেলাম। কপালে একটা পাপ্পি দিয়েই বলল’ বাবাই তুমি কাঁদছো কেন?
– কই কাঁদছি না তো?
– ছি, বাবাই তুমি না বলেছো মিথ্যা বলা ভালো না?
– হ্যাঁ বলেছি তো।
– তো মিথ্যা কেন বললে?
– রাইসা আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলল’ বাবাই তোমাকে একটা কথা বলবো রাখবে?
– কি কথা মামনি? তোমার সব কথায় তো আমি রাখি!
– হুম জানি তো।
– আচ্ছা তাহলে বলো কি করতে হবে আমার?
– বাবাই বেশি কিছু না। তার আগে আমার মাথা ছুঁয়ে প্রমিজ করো আমার কথা রাখবে? আমার হাতটা রাইসার মাথায় রেখে।
– আমি রাইসার মাথা থেকে হাতটা সরিয়ে বললাম ‘হ্যাঁ মামনি রাখবো বলো।’
– লাভিউ বাবাই। আমি জানি তুমি আমার কথা রাখবে। আচ্ছা বাবাই কথা আন্টি তো ভালোই তাই না। জানো আমাকে অনেক আদর করে।
– হুম। ভালো।
– ভালোই তাহলে কথা আন্টিকে আমার মম বানিয়ে ফেল। সবার মম আছে আমার মম নেই। সবাই আমার মম নেই বলে আমাকে রাগাই। আচ্ছা বাবাই বলো আন্টিকে আমার মম বানাবে।
– রাইসার কথা শুনে মুহূর্তের মাঝে দুনিয়াটা উলট-পালট হয়ে গেল। কি বলব কিছু ভেবে পাচ্ছি না। রাইসার মাথা ছুঁয়ে প্রমিজ করেছি। যদি কথাকে বিয়ে না করি তাহলে কেমন হবে। রাইসা যে আমার জীবন।
– কি হলো বাবাই তুমি কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছ। বলো বাবাই কথা আন্টিকে মম বানিয়ে নিয়ে আসবে?
-হুম মা মম বানিয়ে নিয়ে আসব। আমি যে আমার মা’টাকে কথা দিয়েছি।
– আচ্ছা বাবাই তোমার ফোনটা দাও তো।
– এতো রাতে ফোন দিয়ে কি করবে?
– দাও না।
– এই নাও। রাইসা ফোনে কার যেন নাম্বার তুলে ফোন দিয়ে বলল ‘ হ্যালো মম! বাবাই রাজি হয়েছে। লাভিউ মম। কাল সকালেই আমাদের বাড়ি এসো পড়ো কেমন?
– কথা রাইসার মুখে এমন কথা শুনে আনন্দে কেঁদে ফেলল। রাজকে নিজের করে পাবে বিশ্বাস হচ্ছে না।
– কি হলো মম কথা বলছো না কেন?
– বলছি তো মামনি। কাল সকালে আসবো। আমাকে যে আসতেই হবে। কথা ফোনটা কেটে দিয়ে অযু করে দু’রাকাত নফল নামায পড়ে নিল।
– এদিকে মৌ এর কোন ভাবেই ঘুম হচ্ছে না। খুব একা একা লাগছে। অফিসের কথা ভাবতেই মৌ’এর চোখে জল এসে পড়ে। রাজের একটা ছবি বের করে মৌ দেখতে লাগে। ছবিটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মৌ ঘুমিয়ে যায়।
– এদিকে আজ কথা আর রাজের বিয়ে। বিয়ের সাজে রাজকে খুব সুন্দর লাগছে। এতোটা মানুষ সুন্দর হয় কিভাবে। রাজের সামনেই একটা স্টেজে কথা আর রাইসা বসে আছে। রাইসা কথার কুলে বসে আছে। কথা রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। বিয়ে বাড়িতে নীল-লাল বাতির আলো আজ মৌ এর কাছে বড্ড অসহায় লাগছে। হঠাৎ সবাই বলে ওঠল কাজি এসেছে। কাজে যখন কথাকে কবুল বলতে বলে, কথা যখন কবুল বলে কাবিন নামায় সাইন করবে এমন সময় মৌ চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে এ বিয়ে হতে পারে না। রাজ আমার স্বামী। আর রাইসা আমার মেয়ে। এ বিয়ে যদি হয় তাহলে আমারর লাশের উপর দিয়ে হবে। কথা মৌ এর কথা শুনে বলে ওঠল’ আপু তুমি না আমার বোন হও। তবে বোন হয়ে বোনের স্বপ্ন নষ্ট করতে চাচ্ছো কেন?
– আমি আর পারছি না কথা। রাজ অন্য কারো হোক তা আমি মানতে পারব না। আমি রাজকে ছাড়া বাঁচবো না।
– আপনি কে আপনি এমন করছেন কেন? আর আপনি আমাকে আপনার মেয়ে বলছেন কেন? যেদিন আপনি আমার অসুস্থ বাবাইকে রেখে অন্য ছেলেকে বিয়র করছেন? তখন আমি আর আমার বাবাই আপনাকে বিয়ে করতে না করে ছিলাম। আর আপনি কি বলেছেন? আমার অসুস্থ বাবা সেদিন কেঁদেছে। ছোট্ট শিশুর মতো আজ আপনি আমাদের আবার কষ্ট দিতে আসছেন। আপনি প্লিজ চলে যান। আপনি আমার মা হতে পারেন না। আপনি আমার বাবাইকে ভালোবাসলে অসুস্থ বাবাইকে রেখে আপনার বসকে বিয়ে করতেন না। জানেন এখনো আমার বাবাই আপনার জন্য কাঁদে। আমি আর আমার বাবাইকে কাঁদতে দিবো না।
-হঠাৎ মৌ এর ঘুম ভেঙে যায়। মৌ এর বুঝতে বাকি থাকে না সে স্বপ্ন দেখলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সকার নয়টা বাজে। ঘুম থেকে উঠেই চলে যায় রাজের বাসায়। বাসায় দরজা ধাক্কা দিতেই দেখে কথা রাজকে জড়িয়ে ধরে আছে।
– রাজকে এভাবে দেখে মৌ এর ভেতরের আত্মাটা যেন বেরিয়ে আসবে।
– এই মৌ কি করছো? ছাড়ো। এটা ঠিক না।
– কেন বরকে এসব করা যায় না।
– এখনো তো হয়নি?
– হতে কতক্ষণ।
– মৌ রাজ আর কথার কথা শুনে নিজের চোখের পানি আকটাতে পারছে না। মৌ যখনি রুম থেকে বেরিয়ে আসতে যাবে এমন রাইসা মৌকে দেখে বলে। আন্টি আপনি এখানে?
– রাইসার কথায়, কথা আমাকে ছেড়ে দিয়ে মৌ এর দিকে তাকায়।
– আপু আপনি এখানে?
– আর বলো না তুমি যে বললে সে কথাটা বলতে আসছিলাম।
– কথা মৌ’কে জড়িয়ে ধরে বলল ‘ আপু দোয়া করো রাজ রাজি হয়েছে। সামনে মাসেই আমাদের বিয়ে। তুমি কিন্তু সারাদিন থাকবে। চলো আমরা সবাই বিয়ের কার্ড বানাতে যাবো। কথা মৌ’কে সহ আমাকে নিয়ে গাড়িতে উঠল। রাইসা আমাে কুলে ঘুমিয়ে গেছে। কথা আমার পাশে বসে আছে। মৌ বার বার আমার দিকে আর চোখে তাকাচ্ছে। আমি রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। হঠাৎ কথা আমার গালে চুমু দিয়ে দেয়।
– মৌ এটা দেখার সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে বলে ওঠল রাজ ”””
চলবে”””’
বি:দ্র:ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।