#বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ১৬
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু।
বলেছিলাম আপনাকে আমার বাবাই এর কষ্ট হচ্ছে আপনি কোন কথা বলেননি। কথা আন্টির বার্থডেতে আপনাকে মম ডাকার জন্য সবার সামনে কি বলেছেন মনে নাই?
আপনি প্লিজ আর কোনদিন মম ডাকতে বলবেন না। আর কোন দিন চকলেট দিতে আসবেন না। জানেন আমার বাবাই যখন আমাকে বুকে নিয়ে গালে চুমু দেয় তখন কোন চকলেটের কথা মনে থাকে না।
– আমি এবার আর পারলাম না শব্দ করেই কেঁদে দিলাম।
– মৌ আমাকে দেখেই রাইসার সামনে জড়িয়ে ধরল।
– আমি মৌ এর আকস্মিক এ অবস্থা দেখে ঘাবড়ে গেলাম। মৌ আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল’ কতো কিস করতে মন চায় আমাকে কিস করো।’ এই বলে তার ঠোঁট জোড়া আমার ঠোঁটে মিলিয়ে দেওয়ার আগেই মৌ এর দু’গালে কষে চড় বসিয়ে দিলাম।
– তুমি আমাকে মারলে?
– হ্যাঁ মারলাম কারণ আমার প্রতি তোমার কোন অধিকার নেই। তুমি যেদিন ডির্ভোস দিয়েছো সেদিন থেকেই সবকিছু শেষ হয়ে গিয়েছে। তুমি কি মনে করো? একমন বারবার জোড়া লাগে। তুমি আমার হৃদয়টাকে কাঁচের টুকরার মতো করে ফেলছো। জানো এখনো তোমার আর সাইফ সাহেবের স্মৃতিগগুলো চোখে ভাসলে মরে যেতে ইচ্ছে করে। আর হ্যাঁ নিজের মতো সবাইকে ভেবো না। আমি কথার কপালের টিপ ঠিক করে দিয়েছি। কিস করিনি।
– রাজ আমায় ক্ষমা করা যায় না?
– ক্ষমা! সেতো আপনাকে কবেই করে দিয়েছি। কিন্তু পারিনি ভালোবাসে কাছে টানতে। আপনাকে ভালোবে কাছে টানলে ভালোবাসার অপমান হতো। আর হ্যাঁ আমি চাই না অফিসের কেউ আমাদের বিষয় জানুক। আমি একাই ভালো আছি। আর আপনি যদি পাগলামী করেন, তাহলে চাকরী ছেড়ে চলে যেতে হবে আমার।
– আচ্ছা ভালো থেকো আমার মেয়েটাকে যত্নে রেখ।
– মৌ চলে গেলে রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে নিলাম। বুকের ভেতরটা উলট-পালট হয়ে যাচ্ছে।
– বাবাই তুমি কাঁদছো কেন?
– না’রে মা কাঁদছি না তো?
– বাবাই তুমি কাঁদবে না।
– কই মা কাঁদছি না তো।
– মিথ্যা বলো কেন?
এই যে তুমি কাঁদছো। কেঁদো না বাবাই।
– আচ্ছা বাবাই তোমায় একটে বথা বলি রাগ করবে না তো?
– হ্যাঁ মা বলো রাগ করবো না।
– বাবাই আমাকে পাঁচশ টাকা দিবে। কেন দুবে জানতে চাইবে না।
– টাকা দিয়ে কি করবে মামুনি?
– তোমায় বলেছি না বাবাই, কেন দিবে জানতে চাইবে না।
– আচ্ছা এই নাও।
– আমার লক্ষী বাবাই উম্মাহ্।
– আচ্ছা মামনি চলো বাসায় যাবো।
– আচ্ছা আমাকে কুলে নাও।
– এখন?
– কেন আমি কি খু্ব বড় হয়ে গেছি?
– তা না মামনি এটা তো অফিস।
– আচ্ছা নিতে হবে না। এই বলে রাইসা গাল ফুলালো।
– আমি কিছু না ভেবেই, রাইসার গালে পাপ্পি দিয়ে রাইসাকে কুলে তুলে নিলাম। রাইসাকে কুলে নিয়ে যখন অফিস থেকে বের হচ্ছি সবাই অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– কথা তো,আমাদের বাবা-মেয়ের কান্ড দেখে হেসেই দিল।
– অফিস থেকে বের হয়ে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি কথা গাড়ি এনে সামনে দাঁড় করিয়ে বলল’ এভাবে দাঁড়িয়ে না থেকে চলো বাসিয় পৌঁছে দেয়।
– না থাক আজকে রাইসা কুলে নিয়েই বাসায় যাবো। দেখো না, আমার মা’টা গাল ফুলিয়ে আছে হাসতেছে না।
– লাভ ইউ বাবাই। এখন চলো গাড়িতে যাবো। তবে আন্টির গাড়ি করে না।
– কেন যাবে না মামনি?
– আন্টি আজ আমি আর বাবাই রিক্সাতে যাবো।
– তাই বুঝি। গুড আইডিয়া। দারুন মজা হবে। আমিও যাবো। নিবে আমায়?
– তুমি যাবে?
– হুম যাবো তো।
-কষ্ট হবে না রিক্সা করে গেলে তোমার?
– কষ্ট কেন হবে মামনি?
– এই যে এত দামী গাড়ি রেখে রিক্সা করে যাবে। আর আর তোমরা তো বড়লোক। বড়লোকেরা তো রিক্সা চড়ে যায় না। তারা ইয়াবড় বড় গাড়ি করে যায়।
– না মামনি আমি বড় লোক নয়। দেখো না তোমার বাবার চেয়ে হাইটে ছোট। বড় লোক তো তোমার বাবা। যার এমন একটা রাজকন্যা মেয়ে রয়েছে। আচ্ছা মামনি তোমাদের সাথে আমাকে কি নেওয়া যাবে?
– হুম চলো।
– কথা ডাইভার কে বললো গাড়ি নিয়ে চলে যেতে। এদিকে বাহিরে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে আছি। মিনিট পাঁচেক দাঁড়িয়ে থাকার পর একটা রিক্সা পেলাম। রিক্সার মাঝখানে রাইসা বলল। আমি আর কথা দু’জন রাইসার দু’পাশে। রিক্সা কিছুটা পথ অতিক্রম করলেই কথা রাইসাকে কুলে বসিয়ে আমার শরীর ঘেষে বসে পড়ল। আমি কিছুটা বলতে চেয়েও থেমে গেলাম।
– কথা মনে মনে ভাবছে ‘ সত্যি যদি চিররজীবন এ ভাবে চলতে পারতাম। ‘ জীবনটা সত্যিই সুন্দর হতো। সত্যি রাজের মতো পুরুষ হয় না। যার কাছে প্রতিটা নারী সুরক্ষিত। তা না হলে এতটা সুযোগ দেওয়ার পরও কোন ছেলে এতটা ইগনোর করতো না।
– আন্টি তুমি কি ভাবছো?
– কই কিছু না তো?
– মিথ্যা বলছো কেন? বাবাই বলেছে কেউ যখন কথা না বলে তখন সে মনে মনে ভাবে। তাই তুমিও ভাবছো। ঠিক বলছি না। দেখেছ আমার কতো বুদ্ধি।
– হুমম সত্যি বলেছে মামনি। আমি ভাবছি। যদি ভাবনাটা সত্যি হতো।
– কি ভাবছো আন্টি?
– বলা যাবো না।
– বল না আন্টি।
– মামনি তোমার আন্টি নতুন প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে তো সেটা নিয়ে ভাবছে। সত্যি বলেছি না ম্যাডাম।
– ম্যাডাম আমার কথা শুনে বাংলার পাঁচের মতো মুখটা ভেংচি দিয়ে বলল’রাইসা তোমার বাবাইকে বলো, আমার কিন্তু রাগ উঠে যাচ্ছে। ‘
– ওরে আল্লাহ্ আমি রাগের কি বললাম।
– বাবাই ঝগড়া করো না তো। আন্টি তুমি বলো কি ভাবছো?
– মামনি আমি ভাবছি এ পথের যদি শেষ না হতো। যদি অন্তকাল এভাবে চলতে পারতাম।
– হিহি! মামনি বাসায় এসে গেছি। তোমার অন্তকাল তো শেষষ হয়ে গেলো।
– আমি মুখ ধরে হাসছি। কি বলব বুঝতে পারছি না। রিক্সা ওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে বাসায় এসে দেখি, ডিম নেই। এদিকে রাইসা নুডলস খেতে চেয়েছি। তার কথা আর রাইসাকে রেখে গেলাম বাসায়।
– আমি চলে গেলে, রাইসা কথাকে বলে ‘আন্টি আমাকে হেল্প করতে পারবেন?
– কিসের হেল্প মামনি?
– পরশু দিন লাঞ্চ টাইমে বাবাইকে বাসায় পাঠিয়ে দিবেন। আর আপনাকে ফোন করলে বাসায় আসবেন।
– কেন মামনি?
– উহ্ বলা যাবে না।
-আচ্ছা বলতে হবে না। পাঠিয়ে দিবো তোমার বাবাইকে।
– ধন্যবাদ আন্টি।
– ওয়েরকাম মামনি। আচ্ছা মামনি তুমি বসো আমি কিচেনে যাচ্ছি।
– কথা রাইসাকে বসিয়ে কিচেনে রান্না করতে চলে যায়।
– এদিকে আমি,ডিম নিয়ে বাসায় এসে দেখি রাইসা টম এন্ড জেরি দেখছে। কথা কিচেনে। বুঝি না মেয়েটা শুধু শুধু কেন কষ্ট করে।
– কিচেনে গিয়ে বললাম’ ম্যাডাম আপনি এখানে কেন?
– যার ঘর সে আসবে না?
– মানে কি বলছেন আপনি? আপনার ঘর মানে ।
– ধ্যাত তুমি কিছুই বুঝো না। কিচেন মেয়েদের ঘরই তো। তাই না?
-তা বটেই।
– তো আমি এসেছি প্রবলেম কি?
-এক কাজ করো তুমিও আসো । দু’জন মিলে-মিশে রান্না করি মজা হবে।
– আমি কিছু না বলে কথাকে হেল্প করতে করছি। আমি পেয়াজ কুঁচিকুঁচি করছি। কথা আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। এদিকে পেয়াজের ঝালা চোখে লাগছে। কথা হেসে লুটিপুটি খাচ্ছে। হঠাৎ খেয়াল করলাম কথার শাড়ির আঁচলে আগুন লেগেছে। এদিকে কথার আচঁলে আগুন লেগে গেছে।
– এই কথা তোমার শাড়িতে আগুন।
– আগুন মানে?
– কথা তাকিয়ে দেখে তার শাড়িতে আগুন লেগে গেছে। কথা চিৎকার দিয়ে কিচেনের বাহিরে যাওয়ার জন্য যখনি দৌড় দিল। তখন আগুন আরো বেশি জ্বলতে লাগল। বুঝতে পারছিলাম না কি করবো?
– কথা চিৎকার পাচ্ছে, আগুন শাড়ি থেকে প্রায় শরীরে লেগে যাচ্ছে। আমি দৌড়ে গিয়ে কথাকে জড়িয়ে ধরে ফ্লরে শুয়ে পড়ে গড়াগড়ি খেলাম আগুন নিভে গেল। কথা আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে। কথার শরীর কাঁপছে। এই যে ম্যাডাম আগুন নিভে গেছে আপনি আমার উপর থেকে সরেন। কথা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে আমায়। কথার চোখ জোড়া বন্ধ। এখনো তার ভয়ের রেশ কাটেনি।
কি হলো উপর থেকে সরো। আশ্চর্য তুমি বাচ্চাদের মত জড়িয়ে ধরছো কেন?
– রাজ আমায় ভয় করছে। ছেড়ো না আমায়!
– কথার আগে ভয় করলেও এখন ভয় করছে না। কারণ সে নিরাপদ স্থানে আছে। এই বুকটা থাকার কত চেষ্টা করেছে। অবশেষে আসতে পেয়েছে। এতো তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিবে কেন?
– কি হলো কথা ছাড়ো, রাইসা দেখছে তো।
– বাবাই আমি কিছু দেখছি না। আমি চোখ বন্ধ করে আছি।
– দেখছো রাইসা চোখ বন্ধ করে আছে। আর তুমি দূরে সরিয়ে দিতে চাইছো। আর একটু থাকি না আমার ভয় করছে।
– আমি ম্যাডাম কে সরাতে চেয়েও সরাতে পারছি না। মনে মনে বলছি, আল্লাহ কোন বিপদে ফেলল আমায়। এ দিকে এশার আযান হয়ে যাচ্ছে।
– ম্যাডাম প্লিজ আপনি সরেন। আমি উঠবো।
– কই উঠবে? আমি উঠতে পারছি না। মনে হয় কোমড়টা ভাঙছে।
-বাবাই, তোমরা থাকো আমি টম এন্ড জেরি দেখি গিয়ে।
– রাইসা চলে গেল। কি হয়ে যাচ্ছে কিছুই বুঝতেছিনা। ম্যাডামকে সরাতেও পারছি না।
– এদিকে মৌ, লুকিয়ে রাইসাকে দেখতে এসে যখনি জানালা দিয়ে রুমের দিকে তাকিয়েছে। তখন মৌ এর পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। রাজকে এভাবে দেখবে কল্পনাও করতে পারছে না। কথার শরীরে তেমন কাপড় নেই। তাও ফ্লরের মাঝে দু’জন। মৌ এর বুকের ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছে। মৌ মনে মনে বলছে ‘ আল্লাহ এসব দেখার আগে মরণ দিলো না তার কেন। চোখের পানি গাল বেয়ে টপটপ করে পড়ছে। মৌ কাঁদতে কাঁদতে ফ্লরে বসে পড়ল।
– এদিকে কথা আমার উপর থেকে সরছে না। তাই কথাকে ধাক্কা দিয়ে বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিলাম। কথাকে বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিতেই, কথা ফ্লরে দাঁড়িয়ে তার চোখ ধরে চিৎকার মারল।
চলবে”””””””’
বিঃদ্রঃভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।