বাবার ভালোবাসা পর্ব-১৭

0
724

#বাবার_ভালোবাসা।

পর্বঃ১৭

লেখাঃ #রাইসার_আব্বু।

– এদিকে মৌ, লুকিয়ে রাইসাকে দেখতে এসে যখনি জানালা দিয়ে রুমের দিকে তাকিয়েছে। তখন মৌ এর পায়ের নিচের মাটি সরে যায়। রাজকে এভাবে দেখবে কল্পনাও করতে পারছে না। কথার শরীরে তেমন কাপড় নেই। তাও ফ্লরের মাঝে দু’জন। মৌ এর বুকের ভেতরটা ফেঁটে যাচ্ছে। মৌ মনে মনে বলছে ‘ আল্লাহ এসব দেখার আগে মরণ দিলো না তার কেন। চোখের পানি গাল বেয়ে টপটপ করে পড়ছে। মৌ কাঁদতে কাঁদতে ফ্লরে বসে পড়ল।

– এদিকে কথা আমার উপর থেকে সরছে না। তাই কথাকে ধাক্কা দিয়ে বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিলাম। কথাকে বুকের উপর থেকে সরিয়ে দিতেই, কথা ফ্লরে দাঁড়িয়ে তার চোখ ধরে চিৎকার মারল।

– কি হলো ম্যাম চিৎকার দিচ্ছেন কেন?
‘ওই যে দেখ কি, এই বলে আবার এস জড়িয়ে ধরে।
– কি হলো ম্যাডাম আপনি এমন করছেন কেন? আমার ঘরে মেয়ে আছে প্লিজ ছাড়েন।
– না ছাড়বো না আর।
– কি হয়েছে বলেন আগে! কি দেখে চিৎকার দিলেন?

– না আমি বলতে পারব না।

– ম্যাডাম কি সব হচ্ছে আর আপনি চোখ বন্ধ করে আছেন কেন?
– কোন জ্বীন, পরি দেখেন নাই তো?
– রাজ আমার ভয় করছে।
– কেন ভয় করছে বলবেন তো?
‘আমি বলতে পারবো না এই বলে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরল। আমি ছাড়াতে চেয়েও ছাড়াতে পারছি না। যতই ছাড়াতে চাচ্ছি ততই শক্ত করে জড়িয়ে ধরছে।
– কথা প্লিজ ছাড়ো বলছি।
– না ছাড়বো না।
– কথাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে গালে চড় বসিয়ে দিলাম।

– তুমি আমাকে মারলে?
– হ্যাঁ মারলাম, মনে রাখবেন টিসু ব্যবহারের আগে খুব সুন্দর দামি বক্সে থাকে। যখন টিস্যু ব্যবহার করা শেষ হয়ে যায়। তখন টিস্যুর জায়গা হয় কোথায় জানেন? জায়গা হয় ডাস্টবিনে নয়তো, কোন নর্দমায়। নিজেকে প্লিজ নর্দমার, বা ডাস্টবিনের বস্তু বানাবেন না।

– কি হলো কাঁদছেন কেন? আর আপনাকে মারলাম। আপনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন।

– কি হলো এভাবে কাঁদছেন কেন? উওর দেন।

– রাজ আয়নায় দেখলাম আমার গায়ে শাড়ি নেই। তাই তোমাকে জড়িয়ে ধরছি। সরি রাজ ভুল হয়ে গেছে।

– কথার এমন কথা শুনে হাসব না কাঁদবো ভেবে পাচ্ছি না। কথা ছোট বাচ্চার মতো কেঁদেই যাচ্ছে। কথার গায়ে একটা চাদর জড়িয়ে দিলাম।

-রাইসা এসে বলল’ বাবাই তোমার শার্ট পুড়ে গেছে তো।
– আমার দিকে তাকিয়ে দেখি, আমার শার্টের অনেকটা অংশ পুড়ে গিয়েছে। নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। বারবার কথার শাড়িতে আগুন লাগার কথা মনে পড়ছে। আজ কি হয়ে যেত আল্লাহ যদি রহম না করতো।

-এদিকে মৌ জানালা দিয়ে তাকিয়ে এসব দেখেছে। আর চোখের অশ্রু ফেলছে। রাজের সাথে কাটানো প্রতিটা স্মৃতি চোখে ভাসছে। আর জল গড়িয়ে পড়ছে।

– বাবাই আমার ক্ষুধা লাগছে চলো খাবে।
– কথা টেবিলে খাবার সাজিয়ে দিয়ে। টেবিলে বসলো। কথার সারা গায়ে চাঁদর জড়ানো। আমি রাইসাকে খাইয়ে দিচ্ছি, কথার দিকে তাকিয়ে দেখি কথা খাচ্ছে না।
-ম্যাডাম আপনি খাচ্ছেন না কেন?কি হলো কথা বলছেন।
– রাজ আমার হাত ঝলসে গেছে।
– আন্টি দেখি তোমার হাতে কি হয়েছে?
– কথা তার হাতটা রাইসার দিকে বাড়িয়ে দিল।
– রাইসা কথার হাতটা আমাকে দেখিয়ে বললো’ বাবাই দেখ তো আন্টির হাত কেমন ঝলসে গেছে।
তুমি আন্টিকে খাইয়ে দাও। কি হলো বাবাই খাইয়ে দাও।
– আমি খাবার মেখে কথার মুখে তুলে দিচ্ছি কথা অসহায়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কি হলো খাবে না?
– হুমম খাবো তো। দাও তুলে, সারাজীবন এভাবে তুলে খাইয়ে দিবে?
– কি বললে?
– না কিছু না।
– মৌ এসব দেখে আর সহ্য করতে পাচ্ছে না। মৃত্যুর যন্ত্রনাও এতটা কষ্টকর হয় না। যতটা কষ্ট কথাকে রাজ খাইয়ে দেওয়ার জন্য লাগছে। না এখানে থাকা যাবে না মৌ এসব ভাবতে ভাবতে তার বাসায় চলে গেল। মৌ বাসায় গিয়ে বিছানায় শুয়ে বালিশে মুখ লাগিয়ে কাঁদতে লাগে।

-এদিকে কথার চোখে পানি, মুখে একরক্তিম হাসি লেগে আছে।
– আন্টি তুমি কাঁদছো কেন?
– কথা রাইসার কথা শুনে মাথা নাঁড়িয়ে জবাব দির। কই মা কাঁদছি না তো?
– এ্যা এ্যা বললেই হলো ‘ তুমি কাঁদছো ‘। কেঁদো না আন্টি ।
– না তো মামনি কাঁদছি না আমি। জানো মামনি খুশিতে চোখের পানি পড়ছে।
– খুশিতে মানুষ কাঁদে নাকি?
– হুম মামনি কাঁদে তো।
– আচ্ছা বাবাই খুশিতে মানুষ কি কাঁদে?
– হুমম কাঁদে। তুমি খাও তো। সেই কখন থেকে গল্প করেই যাচ্ছো।

– খাচ্ছি তো বাবাই। তুমি ও না একটু গল্প করতেও দাও না।
– আচ্ছা মামনি গল্প করো।
– হুমম, আচ্ছা আন্টি, তুমি এতো খুশি কেন?
– কথা রাইসার কথা শুনে অবাক হয়ে গেল। কি উওর দিবে ভেবে পাচ্ছে না।
– আন্টি বল না কেন তুমি এতো খুশি?
– মামনি তোমার বাবাইকে বলো, তোমার বাবাই জানে।
– বাবাই বলো তো আন্টি এতো খুশি কেন?
– আমি রাইসাকে কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।
– হঠাৎ, কথার ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে উঠলো ‘ ফোনটা ধরতেই, ওপাশ থেকে কথার বাবা বললো’ মা’রে কখন আসবি নয়টা বাজতে চললো। ‘
এইতো বাবা আসছি।
– আচ্ছা ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি আসিস।

– কথা ফোনটা কেটে দিয়েই, অবনীর কাছে ফোন দিল। অবনী ফোন ধরতেই কথা বলল’ দোস্ত তোর শাড়ি আছে না?
– হ্যাঁ, তবে শাড়ির কথা বলছিস কেন?
– পড়ে বলছি, তোকে একটা ঠিকানা দিচ্ছি দশমিনিটের মাঝেই আসই।

– আচ্ছা আসতেছি।
– প্রায় মিনিট পনেরো পড়ে অবনী এসে বাসায় হাজির। অবনী কথাকে এ অবস্থায় দেখে চমকে যায়।
– অনেকটা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে ‘ দোস্ত তোর এ অবস্থা কেন?
– কথা অবনীকে সব কিছু খুলে বলল।
– কথা অবনীর নিয়ে আসা কাপড়টা পড়ে বের হয়ে গেল।

– পরের দিন সকালে রাইসাকে নিয়ে স্কুলে দিয়ে অফিসে চলে গেলাম।
– অফিসে ঢুকতেই কার সাথে যেন ধাক্কা লাগল। চেয়েই দেখি মৌ। মৌ কিছু না বলে ডেস্কে চলে গেল। আমাকে সরি বলার সুযোগ দিল না।

– এদিকে রাইসা, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে প্রায় বারোটা বাজে। ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে, জেসিয়া ম্যাডামকে বলল’ ম্যাম আসতে পারি?
– হ্যাঁ আসো মামনি। কিছু বলবে?
– ম্যাম আমার ছুটি লাগবে।
– ওহ্ ছুটি কেন লাগবে?
– ম্যাম, আমার বাবাই এর জন্মদিন তাই।
– আচ্ছা তোমার বাবাইকে ফোন করছি তোমার বাবাই নিতে আসবে।

– ম্যাম প্লিজ বাবাইকে ফোন দিবেন না। আপনি আমার আন্টিকে ফোন দেন। আমি কথা বলছি ।
– জেসিয়া, রাইসার কাছ থেকে ফোন নাম্বার নিয়ে কথাকে ফোন দিল। রিং হচ্ছে, দু’বার রিং হতেই কথা ফোন ধরল। জেসিয়া রাইসাকে ফোনটা দিয়ে বলল, তোমার আন্টির সাথে কথা বল।

– রাইসা ফোনটা ধরেই বলল’ হ্যালো আন্টি আমি রাইসা। তুমি কোথায়? আমাদের স্কুলে আসো তো, আর হ্যাঁ বাবাইকে বলবে না। একাই আসো। এই বলে লাইনটা কেটে দিল। কথাকে কোন কথা বলার সময় দিল না।

– কথা কোনকিছু না ভেবেই প্রায় ত্রিশ মিনিট পর স্কুলে এসে হাজির।
– রাইসা কথাকে নিয়ে স্কুল থেকে বের হয়ে সোজা ‘হাটি-মাটিম-টিম’গির্ফট কর্ণার এ চলে যায়। কি হলো মামনি এখানে নিয়ে আসলে কেন?
– আন্টি তুমি কোন কথা বলো না তো। চলো ভেতরে যায়।
– কথা বুঝতেছে না রাইসা কেন এখানে নিয়ে এসেছে। রাইসা দোকানে ঢুকেই একটা ঘড়ি দেখে দোকানদারকে বলল’ এই যে, আঙ্কেল ঘড়িটির দাম কতো?’
– মামনি পনেরোশো টাকা।
– আচ্ছা দেন তাহলে। আর হ্যাঁ সুন্দর করে প্যাকেট করে দেন কেমন?
– রাইসা তুমি ঘড়ি দিয়ে কি করবে?
– ওহ্ আন্টি কথা বলো না’তো। তোমাকে নিয়ে আসাটাই ভুল হয়েছে। আর হ্যাঁ ভেবো না, তোমাকে বিল দিতে হবে। তুমি শুধু আমার সাথে এসো।
– দোকানিরা রাইসার কথায় হেসে দেয়।

– রাইসা, টিম থেকে বের হয়ে, তাজ ব্রেকারিতে গিয়ে একটা দু’পাউন্ডের কেক কিনে। সাথে রুম সাজানোর অনেক কিছু।

– কথা বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকে। কি হচ্ছে কিছুই বুঝতেছে না কথা।

– রাইসা কেনাকাটা শেষ করে কথাকে নিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে বিকেল তিনটা বেজে যায়।
– আন্টি বাবাইকে ফোন করে বলো যে তুমি আমাকে নিয়ে বাসায় এসে পড়েছ। আর বাবাইকে পাঁচটায় অফিস শেষ করে আমাদেে জন্য বিরিয়ানি আনতে বলবে।
– আচ্ছা বলবো, তার আগে আমায় বলোতো মামনি আজ কি তোমায় জন্মদিন?
– হিহি, তুমি সত্যিই বোকা আজ আমার জন্মদিন নয়। আমার বাবাই এর জন্মদিন।
– রাজের জন্মদিন! কি বলছো মামনি? আমাকে আগে বলবে না?
– তোমাকে বললে কি হতো? আচ্ছা এখন তো বললাম। এখন চলো রুমটা সাজাই।

– এদিকে অফিসে কাজ করছি হঠাৎ ফোনটা ক্রিং ক্রিং করে বেজে ওঠলো। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে কথা বলল ‘অফিস শেষ করে আলিশান থেকে বিরিয়ানি আনতে। ‘
– অফিস থেকে বের হয়ে বিরিয়ানি আনতে আনতে সন্ধা লেগে যায়। বিরিয়ানি নিয়ে যখন রুমে ঢুকবো তখন ভয়ে বুকটা কেঁপে ওঠল। বাড়িটা শুন-শান নিরবতা। আর অন্ধকার। রাইসাকে বারবার ডাকছি কোন শব্দ আসছে না। হঠাৎ রুমের সবগুলো লাইট একসাথে জ্বলে ওঠল। সাথে, মায়াভরা কন্ঠে রাইসা বলতে লাগল’ হ্যাপি বার্থডে টু ইউ, বাবাই! আমি রুমটা দেখে অবাক হয়ে গেলাম। সারা রুম বেলুন দিয়ে খুব সুন্দর করে সাজানো। টেবিলের উপর কেক রাখা। বুঝতেছি না এসব কে করল।
– কি হলো রাজ কিছু ভাবছো?
– এসব কে করল?
– তোমার রাজকন্যাটা করছে। সবকিছু আমাকে না জানিয়ে। আমি সারপ্রাইজড হয়ে গেছি রাইসার বুদ্ধি দেখে।

– কথার কাছে এমন কথা শুনে চমকে ওঠলাম। রাইসা টাকা কোথায় পেল?
– রাইসা মামনি আমার কাছে আসো তো।
– বলো বাবাই।

– মামনি তুমি এসব করার জন্য টাকা কোথায় পেলে?

– রাইসা কোন কথা বলছে না।
– কি হলো বলছো না কেন? টাকা কোথায় পেলে?
– বাবাই সেদিন তোমার কাছ থেকে ৫০০ টাকা নিয়েছিলাম। আর তুমি যে পুতুলটা আমায় কিনে দিয়েছিলে সেটা দোকানদার আঙ্কেলকে ফেরত দিয়ে ১০০০ টাকা নিয়ে এসেছি। আঙ্কেল দিতে চায়নি, পরে রুদ্ধকে নিয়ে গিয়েছিলাম। রুদ্ধদের দোকান তো তাই পরে দিয়েছে। আর ৯৯০ টাকা আমি টিফিনের টাকা থেকে জমা করেছি। বাবাই চোখ বন্ধ করো তো।
– আমি চোখ বন্ধ করে আছি। রাইসা হাতটা নিয়ে হাতে কি যেন পড়িয়ে দিল।
– বাবাই এবার চোখ খুলো তো। আমি চোখ খুলে দেখি ঘড়ি। রাইসাকে যেদিন গিফট কিনে দেয় সেদিন ঘড়িটা দেখে এসেছিলাম। হাতেও দিয়েছিলাম কিন্তু রাইসার কেনাকাটা করার জন্য টাকা শর্ট পড়ে বিধায় রেখে আসতে হয়। কিন্তু রাইসা যে এই ঘড়ির নিয়ে আসবে কে জানতো!
– কি হলো বাবাই পছন্দ হয়নি?বাবাই কাঁদছো কেন?
– আমি ফ্লরে হাঁটুগেড়ে বসে রাইসাকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরলাম। বাবাই তুমি বললে না তোমার পছন্দ হয়েছে কি না?
– খুব পছন্দ হয়েছে মা আমার। আচ্ছা মামনি আমি আমার জন্মদিন ভুলে গিয়েছি, তুমি কেমনে মনে রাখলে?
– বা’রে মনে রাখবো না। আমার বাবাই না তুমি। আমার জীবন না তুমি। বাবাই তুমি কাঁদছো কেন?
– এদিকে কথার দিকে তাকিয়ে দেখি কথাও কাঁদছে। আমি রাইসাকে শক্ত করে বুকের সাথে জড়িয়ে রেখেছি। মনে হচ্ছে আমার মাকে জড়িয়ে ধরেছি। মায়ের মুখটা স্পর্ষ্ট চোখের সামনে ভাসছে।
– বাবাই চলো কেক কাটবে।
– এদিকে যখন কেক কাঁটবো ঠিক এ সময় কথা বলে ওঠলো ‘ এই সময়ে তোমার কাছে একটা জিনিস চাই দিবে আমায়?’
– কি চান ম্যাডাম বলেন।
– রাজ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি তোমাকে ছাড়া —-

চলবে””””””””

বিঃদ্রঃভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here