বাবার ভালোবাসা পর্ব-১৩

0
1002

#বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ১৩

লেখাঃ #রাইসার_আব্বু।

– ওহ্ আচ্ছা। ম্যাডাম সরি, রাইসার না খেয়ে থাকার কথা শুনে সব ভুলে গিয়েছিলাম। প্লিজ মনে কিছু নিবেন না। আসেন ডিনার করি।
– কথা কিছু না বলে বাধ্য মেয়ের মতো, টেবিল বসে পড়ল।
– আন্টি তুমি খাচ্ছো না কেন?
– ম্যাডাম কি হলো খাচ্ছেনন না কেন?
– প্লিজ রাজ এটা আমার অফিস না। আর এখানে ম্যাডাম বলে ডেকো না।
– ও বুঝেছি আন্টি তোমাকেও খাইয়ে দিতে হবে। -কথা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক জবাব দিল।
– রাইসা কথাকে খাইয়ে দিয়ে বলল ‘ আন্টি তুমি এখন বাবার মুখে খাবার তুলে দিবে। বাবাই দিবে আমাকে।
– কথা যখনি আমার মুখে খাবার তুলে দিবে এমন সময় দরজা খুলে গেল। দরজার দিকে তাকাতেই দেখি মৌ! মৌ স্পর্ষ্ট দেখতে পেল কথা আমার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। মৌকে দেখে রাইসা বলল’ বাবাই দেখ মম ডেকেছিলাম না ভুল করে সে আন্টি। ‘
– আমি মৌকে দেখে চমকে ওঠলাম। রাতে মৌ কেন আমার বাসায়?
– মৌ আপনি রাতে রাজের বাসায়?
– ওহ্ আপু আর বলবেন না। এদিকে যাচ্ছিলাম। গেটে আপনার গাড়ি দেখে ভাবলাম কিছু হয়েছে নাকি।
– ওহ্ আচ্ছা ভেতরে আসেন।
– আমি কিছু বলছি না মাথা নিচু করে আছি।
– আন্টি ডিনার করেছেন?( রাইসা)
– মৌ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিল।
– আচ্ছা আমি এখন আসি।
– চলে যাবেন কিছু খাবেন না?
– না এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভাবলাম রাইসাকে দেখে যায়।
– কথা অনেকটা সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকালো মৌ এর দিকে। মৌ চলে গেলে, কথা বলল ‘ আমি তাহলে আসি রাত প্রায় নয়টা বাজতে চলল।
– আন্টি থেকে যাও না খুব মজা হবে।
– অন্যদিক মামনি। আজ আসি কেমন?
– না না তুমি যেতে পারবে না।
– হুম মামনি আমি তো থাকতেই চাই চিরজিবন। তোমার বাবাই তো রাখবে না
– কি বললেন ম্যাডাম?
– ও কিছু না বাদ দাও। আর হ্যাঁ রাইসাকে রেখে আর কোথাও যেয়ো না কেমন?
– আচ্ছা ঠিক আছে। ম্যাডাম আপনাকে কি এগিয়ে দিয়ে আসতে হবে।
– না এগিয়ে দিতে হবে না গাড়ি আছে। ত্রিশ মিনিটের মতো লাগবে।
– আচ্ছা।
– কথা চলে গেলে রাইসার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। রাইসা চোখ বন্ধ করে এটা-সেটা বলছে।
– আচ্ছা বাবাই, আমি একটা কথা বলবো?
– হ্যাঁ মা বলো কি বলবে?
– জানো বাবাই আজ মমকে দেখে জড়িয়ে ধরতে মন চেয়েছিল। মম যখন এসেছিল তখন খুব করে মনে চাচ্ছিল মমকে বলি ‘মম আমাকে খাইয়ে দাও।’
– আমি কোন কথা বলছি না। অতীতের কথাগুলো বারবার মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতর কেমন যেন শূন্য শূন্য লাগছে।
– বাবাই তুমি বুঝি মন খারাপ করলে? বাবাই মন খারাপ করো না। আমি কখনো মম ডাকবো না কাউকে তুমি আমাকে ছেড়ে কোথাও যেয়ো না বাবাই তাহলে আমি বাঁচবো না। জানো বাবাই আজ সারাদিন তুমি খাইয়ে দেওনি বলে আমি খাইনি। তাই অভিমান করে তোমাকে বকা দিয়েছি পঁচা কথা বলেছি। জানো বাবাই যখন বকা দিয়েছি তখন আমি খুব খুব কেঁদেছি। তুমি মন খারাপ করো না।
– পাগলী মেয়ে আমার মন খারাপ করবো কেন আমি। তুই না আমার মা। তবে কখনো বাবাই ডাকা বন্ধ করিস না মা। বাবাই ডাকা বন্ধ করে দিলে আমি ধম বন্ধ হয়ে মারা যাবো। তুই যে আমার বেঁচে থাকার অক্সিজেন। এতো কষ্ট, লাঞ্ছনা ভোগ করার পরও তোর বাবাই ডাক শোনার জন্যই বেঁচে আছি।

-বাবাই তুমি মরার কথা বলো না প্লিজ। তুমি কান্না করছো কেন? মায়ের কাছে সন্তান কাঁদলে মায়ের কষ্ট হয় না? হাসি তো বাবাই।
-আচ্ছা এখন ঘুমাও মামনি কাল স্কুল আছে।
– রাইসা ঘুমিয়ে গেল। পূণির্মার চাঁদের আলো জানালার কাঁচ ভেদ করে মেয়েটার উপর পড়ছে। চাঁদের আলোতে নিষ্পাপ মুখটা খুব সুন্দর লাগছে। রাইসার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে কখন যে ঘুমিয়ে গেছি খেয়াল নেই।

– মাঝরাতে কারো চাঁপা কান্না শুনে ঘুম ভেঙে গেলো। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত তিনটা ছুঁইছুঁই। আমি পা সরাতে পারছি না। পা দু’টো কে যেন ধরে রেখেছে।
– পায়ের দিকে তাকাতেই বুকটা ধর্ক করে ওঠল! মৌ এতোরাতে!
– আপনি?
– মৌ কিছু বলছে না পা দু’টো জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। পা ছাড়া আর এতরাতে কেউ দেখলে কি ভাববে?
– রাজ আমাকে আপনি করে বলো না। আমি পারছি না। আমাকে হয় মেরে ফেলো নয়তো বুকে টেনে নাও।
– আশ্চর্য এতরাতে এসব কি বলছেন?
– রাজ আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না। প্লিজ রাজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।

– ক্ষমা তুমি কেন চাচ্ছো? ক্ষমা তো আমি তোমার কাছে চাইবো। কারণ আমি তোমার জীবনটাকে নষ্ট করে রে দিয়েছি।
– না রাজ তুমি আমার জীবনটাকে সাজিয়ে দিয়েছিলে। আমি মিথ্যা ভালোবাসার পিছনে ছুটে ছিলাম। আমাকে ক্ষমা করবে না?
– জানো রাজ কেউ তোমার সাথে কথা বললেও আমার সহ্য হয় না। আমি তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারছি না।
– আপনি প্লিজ পা ছাড়েন।
– যতক্ষণ না ক্ষমা না করবে ততক্ষণ পর্যন্ত পা ছাড়বো না।
– ক্ষমা আপনাকে অনেক আগেই করে দিয়েছি।
– আমাকে একটু বুকে নিবে? আমার না খুব কষ্ট হচ্ছো। মনে হচ্ছে নিঃশ্বাস নিতে পারছি না। নিবে একটু বুকে?
– এ বুকে আমার মেয়ের জন্য শুধু জায়গা রয়েছে অন্য কারো জন্য নয়। কিভাবে আপনাকে বুকে নিবো বলবেন? যে কিনা ছোট্ট বাচ্চাকে রেখে নিজেকে অন্যের কাছে সপে দিতে ব্যস্ত? যে অসুস্থ স্বামীকে রেখে নিজের চাহিদা মেটাতে ব্যস্ত? ছোট্ট বাচ্চা যখন, অসুস্থ বাবার মাথায় বারবার জলপট্টি দিয়ে দেয় আর অন্যদিকে তার মা ড্রিংকস করে আছে। যে নিজের মেয়েকে সন্তান বলে পরিচয় দেয় না তাকে কিভাবে বুকে নিবো?

– মৌ কিছু বলছে না চোখের সামনে অজস্র স্মৃতি ভেসে ওঠছে। চোখের পানি টপটপ করে পড়ছে।
– মন চাচ্ছে মৌ এর চোখের জলগুলো মুছে দিয়ে বুকে টেনে নেয়। কিন্তু না বুকে যে সবাইকে নেওয়া যায় না। যায় কাছে ভালোবাসা চেয়ে যৌন চাহিদাটাই মেটানো শ্রেয় তাকে কিভাবে বুকে জড়িয়ে নেয়।

– রাজ আমাকে বুকে নিবা না? রাজ তোমার কাছে আমার ভালোবাসা ভিক্ষে চাইছি। আমাকে ফিরিয়ে দিয়ো না। জানো রাজ ‘রাইসা আমাকে মা বলে ডাকে না। ‘ খুব কষ্ট হয় রাইসাকে দেখলে। যে ছিল আমার বুকে তাকে অন্য কেউ বুকে নিয়ে ঘোমায়। অন্য কেউ তাকে খাইয়ে দেয়। কষ্টে কলিজাটা ফেঁটে যায়। আমি তোমার কাছে ভিক্ষা চাই ভালোবাসা। তোমার পায়ের নিচে স্থান দেও আমায়।
– এদিকে ফজরের আযান দিচ্ছে। মৌ ফ্লরে বসে কাঁদছে। মৌ এর কান্না ঠিক কলিজাতে এসে লাগছে। সহ্য করতে পারছি না আর তাে কষ্ট। মৌ যদি এভাবে আর কিছুক্ষণ কান্না করে তাহলে আমি আর মৌকে দূরে সরিয়ে দিতে পারবো না। তাই মৌকে বললাম’ প্লিজ আপনি চলে যান। ‘
– রাইসা আপনাকে দেখলে মন খারাপ করবে।
– তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে বুকে না নিবে ততক্ষণ পর্যন্ত এখান থেকে যাবো না। আর কোথায় যাবো বলো? আমার যে যাওয়ার মতো কোন জায়গা নেই। নাও না আমাকে বুকে।
– আমি চোখ বন্ধ করে আছি। আমি মৌ এর চোখের পানি দেখতে পারছি না।
– হঠাৎ কারেন্ট শর্ক খাওয়ার মতো শর্ক খেলাম। মৌ আমাকে জড়িয়ে ধরেছে। আমি পারছি না মৌকে ছাড়াতে। মন বলছে মৌকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু না পারলাম না মৌকে বুক থেকে সরিয়ে, গালে চর বসিয়ে দিলাম।
– মৌ করুণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
– কি হলো ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো? আপনার কি করে সাহস হয় আমাকে জড়িয়ে ধরার? আপনাকে একদিন বলেছিলাম না ‘ খুব কাঁদবেন আপনি। আমার প্রতিটা স্মৃতি আপনাকে কাঁদাবে। খুব করে কাঁদালে। ‘ আজ সে ক্ষণ। এটাই নিয়তি।
– মৌ এখন অনেকটাই শব্দ করে কাঁদছে।
– আমার ভেতরটা চুর-মার হয়ে যাচ্ছে।
– কি করবো ভেবে পাচ্ছি না। মৌকে পারছি না আর কিছু বলতে। মৌ এখানে থাকলে আমি নিজের সাথেই নিজেই যুদ্ধ করে হেরে যাবো। তাই মৌকে বললাম ‘ তুমি যদি এখান থেকে না যাও এখন। তাহলে আমার মরা মুখ দেখবে। ‘

– মৌ’ কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে গেল।মৌ এর ফিরে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। মৌ চলে গেলে বুকের পাহাড় সম কষ্ট নিয়ে, বিছানায় এসে শুয়ে পড়লাম। বিছানায় শুয়ে শুয়ে মৌ এর কথা ভাবছি এমন সময় রাইসার দিকে দৃষ্টি গেল। রাইসার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখি, রাইসার চোখে পানি। চোখ দু’টি বন্ধ করা। বুঝতে আর বাকি রইল না রাইসা সব দেখছে।
– রাইসার চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিয়ে বললাম ‘ আমার মা’ টা কান্না করে কেন?
– বাবাই মম চলে গেছে?
– হুমম! তুমি জেগেছিলে মামনি?
– হুমমম বাবাই, মমের কান্না শুনে ঘুম ভেঙে যায়। বাবাই জানো মমকে যেতে দিতে মন চাচ্ছিল না। কিন্তু মম যে তোমাকে কষ্ট দিয়েছে। এখনো মনে পড়ে তোমার কান্নার কথা মমের ছবি বুকে জড়িয়ে ধরে। বাবাই আমাকে বুকে নিবে?
– রাইসাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বাবা-মেয়ে কাঁদলাম। জানি না এ কান্না কবে শেষ হবে।

.
এদিকে পাঁচটা বেজে গেছে। তাই অযু করে ফজরের নামাযটা পড়ে নিলাম।

– ফজরের নামায পড়ে রাইসার জন্য ব্রেকফাস্ট রেডি করছি এমন সময় রাইসা কিচেনে এসে বলল ‘ বাবাই আন্টি ফোন করেছে?’

– ফোনটা ধরে সালাম দিতেই ওপাশ থেকে কথা ম্যাডাম সালামের জবাব দিয়ে আমাকে অফিসে যাওয়ার আগে তাদের বাসায় যেতে বলল।

– আমি রাইসাকে রেডি করে স্কুলে দিয়ে ওদিক দিয়েই কথা ম্যাডামের বাসায় চলে গেলাম। বাসায় গিয়ে কাজের মেয়েটাকে বললাম ম্যাডাম কোথায়?
– স্যার ম্যাডাম উপরে তার রুমে।
– আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তিন তলার উঠে ম্যাডামের রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দেখি ম্যাডাম ড্রেস চেঞ্জ করছে। আমি চোখ দু’টি বন্ধ করে ফেললাম।
– ম্যাডাম চিৎকার দিয়ে উঠলো ‘

চলবে ””

বি:দ্র:ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here