বাবার ভালোবাসা পর্ব-১২

0
971

#বাবার_ভালোবাসা।

পর্বঃ১২

লেখাঃ #রাইসার_আব্বু

– নীল শাড়িতে এতটা সুন্দর লাগে সাথিকে হয়তো না দেখলে অজানাই থেকে যেতো। চোখের কোণে কাজল দেওয়াতে সাথিকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। যে কেউ তাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলবে। আমি সাথিকে নিয়ে রওয়ানা দিলাম। প্রায় ৪ ঘন্টা জার্নি শেষে অবশেষে কাঙ্খিত জায়গায় এসে পোঁছালাম। সারারাস্তায় সাথি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছিল। কিন্তু আজকের পর আর কখনো এভাবে ধরবে না । গাড়ির দরজা খুলে বললাম আসো।
– সাথি গাড়ি থেকে নেমেই কেমন যেন চমকে গেল। রাজ তুমি এখানে কেন নিয়ে আসলে? আমার ভয় হচ্ছে। ভয়ের কিছু নেই আজকের পর আর তুমি আমার জন্য পাগলামী করবে না।
– রাজ তুমি মানসিক হসপিটালে কেন নিয়ে আসলে? আমার পাগল দেখে ভয় করে।
– ভয়ের কি আছে। পাগলরাও তো মানুষ। আসো ভেতরে যাই।
– সাথি আমার হাতটি শক্ত করে ধরে আছে। মানসিক হসপিটালে গিয়ে এক নার্সকে জিজ্ঞেস করলাম সবুজ কোন রুমে আছে।
– সাথি সবুজের কথা শুনে কেমন করে তাকালো।
– নার্স অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাথির দিকে। মনে হচ্ছে ভীনগ্রহের প্রাণি দেখছে।
– কি হলো বলেন? সজিব কোন রুমে আছে?
– স্যার আসেন নিয়ে যাচ্ছি।
– রাজ কোন সবুজের কথা বলছো?
– আসো দেখলেই চিনতে পারবে।
– এদিকে নার্স সজিবের রুমটা দেখিয়ে দিল। আমরা দু’জন সজিবের রুমে ঢুকতেই দেখি সজিব মাথা নিচু করে কি যেন আকঁছে।
– সাথি খেয়াল করে দেখলো রুমটাতে অনেকগুলো ছবি আকাঁনো। সবগুলো তারই।
– কি হলো সাথি অবাক হলে?
– চিনো ছেলেটাকে?
– সাথি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
– কি হলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
জবাব দাও?
– রাজ সজিব আমার বেস্টফেন্ড ছিল।
– শুধু কি বেস্টফেন্ড?
– হুমম।
– বেস্টফেন্ডের সাথে কি বেডরুম শেয়ার করা যায়? জানো সাথি তোমার কাছে হয়তো বেডরুম শেয়ার করা আধুনিকতা। কিন্তু কারো কাছে সেটা জীবনমরণের প্রশ্ন।
– তোমাকে সজিব ভালোবাসতে জানতে তুমি?
– হুম আমি তো না করে দিয়েছি।
– ভালোবাসার অভিনয় করে, না করে দেওয়া বাহ তোমরা মেয়েরা পারোও বটে।
– রাজ আমি সজিবকে বলেছি আমি ওকে ভালোবাসি না। হ্যাঁ আমি আর ওই যা করেছি এতে সে ভাবতেই পারে আমাদের মাঝে কিছু ছিল।
– খুব সুন্দরভাবে কথাগুলো বললে। জানো সাথি, ছেলেটা তোমাকে কতো ভালোবাসে? যে ছেলেটা প্রতিদিন সকালে ভার্সিটিতে তোমাকে একবার করে উইশ করতো। তোমাকে সব কিছুর থেকে আগলে রাখে। তুমি যখন হসপিটালে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকো। সারা রাত ছেলিটি তোমার পাশে ছায়ার মতো থাকে। যে ছেলেটা কতো মেয়ের প্রপোজাল তোমার জন্য রিজেক্ট করেছে আর তুমি কি করেছ তার সাথে একটিবার ভেবে দেখবে? শোন তুমি কখনো সবুজকে বন্ধু ছাড়া অন্য কোন নজরে দেখনি। কিন্তু তোমাদের আচার-আচরণ বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড এর সীমা অতিক্রম করেছিল। তুমি ফেন্ড ভাবতে পারলেও সবুজ ভাবতে পারেনি। সেজন্য মৃত্যুর দোয়ার থেকে ফিরে এসেছে।
– আচ্ছা একটিবার মনে করে দেখবে, ভার্সিটির সজিবের সাথে দেখা হওয়া শেষ দিনের কথা। মনে নেই একটা ছেলে কতটা ভালোবেসে তোমার কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চেয়েছিল। বাট তুমি অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছ। কি অপরাধ ছিল, তোমার অভিনয়টাকে সত্যিকারের ভালোবাসা ভেবে তোমার কাছে ভালোবাসা ভিক্ষা চাওয়া।
– রাজ আমি জানি আমার ভুল হয়েছে, আমি তো সজিবকে বলেছি আমি তাকে ভালো ফ্রেন্ড মনে করি। কিন্তু তার পাগলামী চরমে পৌঁছে ছিল।
– তুমি যা করেছ সজিবের সাথে সেখানে আমি থাকলে তাই ভাবতাম। জানো সাথি সবুজ তোমাকে সত্যি অনেক বেশি ভালোবাসে।
-আমি তো তোমাকে ভালোবাসি।
– ঠাস!লজ্জা করে না এসব বলতে ‘ কি বললে আরেকবার বলো?’ ভালোবাসা কি জানো? ভালোবাসা বুঝো? শুনো তাহলে, এই যে দেখছো না পাগলটা তোমার দিকে ফ্যাল, ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। সমস্ত রুম জুড়ে তোমার ছবি আঁকিয়ে টানিয়ে রেখেছে। কেন জানো তোমাকে ভালোবাসে সেজন্য। তোমাকে ভালোবাসার জন্য সে আজ মানসিক হসপিটালে। মনে আছে তোমার ভার্সিটিতে যেদিন সজিবকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিলে সেদিনের কথা। বলেছিলে কখনো যেন তোমার সামনে না আসে। আসলে তোমার মরা মুখ দেখবে। ছেলেটা সেদিন ভেবেছিল তোমাকে আর তার মুখ দেখাবে না। তাই সুসাইড করতে গিয়েও আজ বেঁচে আছে। বাইক একসিডেন্টে মাথায় প্রচন্ড আঘাত পাওয়ার পর থেকেই পাগল। উল্টা-পাল্টা কথা বলে। তবে একটা বিষয় কি জানো? কতটা ভালোবাসলে একটা ছেলের মস্তিষ্ক বিকারগ্রস্ত হওয়ার পরও ভালোবাসার মানুষটি তার সমস্ত ভাবনাতে থাকে।
সবুজের সমস্ত ভাবনা জুড়ে তুমি রয়েছো সাথি আর যেখানে তুমি আমার ভাবনা তো দূরের কথা আমার মনের কোন একটি কোণেও নেই। আমি জানি না তুমি তোমার পাপের প্রায়শ্চিত কিভাবে করবে। তবে একটা কথা বলি তুমি সবুজের কাছে যতটা সুখে থাকবে পৃথিবীর অন্য কারো কাছে থাকতে পারবে না। তোমার ভালোবাসা দিয়েই পারবে সবুজকে সুস্থ করতে। আর শুনো, আমি তোমার জীবনে মরিচীকা ছিলাম। যার পিছনে অযথাই ছুটেছে। কি হলো কাঁদছো কেন?
– রাজ তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। আমি বুঝতে পারিনি। আমি সবুজকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। তোমার মাধ্যমে সবুজকে বুঝতে পেয়েছি। দোয়া করো ওকে যেন ভালো করতে পারি।
– হুমম অবশ্যই।
-আন্টিকে আর আঙ্কেলকে ফোন করে নিয়ে আসলাম।
– আঙ্কেল আপনাকে কথা দিয়েছিলাম, আপনাদের ছেলেকে তার ভালোবাসার মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিব। আমার কথা রাখলাম। আমি এখন আসি। আর হ্যাঁ সাথি যেদিন আঙ্কেল আর তুমি, তোমার বিয়ের কথা নিয়ে আমার বাসায় এসেছিল। তার পরের দিন সবুজের বাবা আমাকে সব কিছু খুলে বলে। যাইহোক ভালো থেকো। আরেকটা কথা সবুজ কিন্তু দেখতে অনেক কিউট। একটাবার ভালোবাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখো।

– সাথি চোখে পানি মুখে হাসির ঝিলিক দেখিয়ে বলল’ সারাজীবন তোমার কাছে কৃতজ্ঞ আমার ভুলটা এভাবে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। ‘

-যাইহোক আমি আসি। আর হ্যাঁ সাথি সবুজকে বাসায় নিয়ে যেয়ো। তার যে মেডিসিনটার প্রয়োজন ছিলো সেটা তার সামনেই।

– হুমম অবশ্যই!

– আমি হসপিটাল থেকে বের হয়ে সোজা সাথির বাবার কাছে সব ঘটনা খুলে বললাম। আঙ্কেল কিছু না বলে বুকে টেনে নিয়ে বলল’ রাজ বাবা তুমি সত্যি পরশ পাথর। দোয়া করি আল্লাহ্ যেন তোমাকে সবসময় ভালো রাখে।
– আল্লাহ্ কবুল করুক আঙ্কেল। আমি আসি মেয়েটা মনে হয় চিন্তা করছে। সন্ধ্যায় দিকে কথাকে ফোন করে বললাম, রাইসা কি করে?
– রাজ এতোক্ষণে তোমার ফোন করার সময় হলো? আর তোমার ফোনটাও বন্ধ। আর হ্যাঁ তুমি যেখানেই থাকো তাড়াতাড়ি আসো

~কেন কি হয়েছে?
~কিছু হয়নি। রাইসা সারাদিন কিছু খায়নি । কি আগে বলবে তো?
– তোমার ফোন তো সারাদিন ধরেই বন্ধ পাচ্ছি।
~ আচ্ছা আমি আসছি।
– তাড়াহুড়া করে বাসায় গিয়ে দেখি রাইসা রুমের দরজা বন্ধ করে রেখেছে।
– দরজার কাছে গিয়ে বললাম’ মামনি দরজা খুলো বাবা আসছে তো। ‘ভেতর থেকে কোন কথা বলছে না। মামনি আমার না অনেক ক্ষুধা লেগেছে। আমাকে খাইয়ে দিবে না। আসো খাইয়ে দিবে।
– কাকে ডাকছেন সে খাবে না কাউকে খাইয়েও দিবে না। সে রাগ করেছে।
– মামনি লক্ষি মা আমার রাগ করে না। আমার ভুল হয়েছে এই যে কান ধরছি আর কখনো এমন হবে না।
– তুমি কান ধরলেও আমি দেখতে পাবো না।
– তাহলে দরজা খুলে দেখ আমি কান ধরেছি।
– দরজা খুলা যাবে না। আমি কোন দিনই দরজা খুলবো না। আর খাবোও না। রাইসা মা আমার আর অভিমান করে থেকো না। আমার না অনেক ক্ষুধা লেগেছে। একটু খাইয়ে দিবে?
– আমি খুলবই না খুলবই না।
– প্লিজ মা আমার তুমি না বলেছে তুমি আমার মা। তুমি দেখো না তোমার সন্তানের ক্ষুধা পেয়েছে। তুমি খাইয়ে দাও না। তোমার ছেলেটা যে খেতে পারে না একা।
– আমার কোন বাবাই নেই। আর আমি কারো মা নই সো দরজা খুলবো না
– রাইসার মুখে ‘আমার বাবাই নেই। আমি কারো মা নই ‘কথাটা শুনে বুক ফেঁটে কান্না আসছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম সত্যিই কি আমি তোর বাবাই নই?
– রাইসা বুঝতে পারছে আমি কাঁদছি। রাইসা দরজা খুলেই দেখে আমি সত্যিই কাঁদছি।
– বাবাই তুমি কেঁদো না। প্লিজ কেঁদো না আমার বাবাই তুমি। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না বাবাই। আর কখনো বলবো না। বাবাই আমাকে বুকে নাও। আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবাই।
– ফ্লরে হাঁটুগেড়ে বসে বললাম’ আরে মা বুকে আয়। ‘
– রাইসা বুকের সাথে একবারে মিশে যায়। কিছুক্ষণ পর ছোট্ট পাখির মতো বলছে ‘ বাবাই তুমি বুঝি আমার কথায় কষ্ট পেয়েছো? আমার কথায় কষ্ট পেয়ো না বাবাই। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমার জীবনের মতো ভালোবাসি। জানো বাবাই আমি সারাদিন খায়নি। তুমি খাইয়ে দিবে আমায়? আর হ্যাঁ বাবাই কখনো কাঁদবে না। তুমি কাঁদলে না আমার বুকে কেমন কেমন করে। বলো বাবাই আমার কথায় কিছু মনে করোনি? বলো না বাবাই। বাবাই, ও বাবাই, বাবাই, বাবাই কাঁদছো কেন? রাইসার গালে মুখে চুমু দিয়ে বললাম ‘ মা’রে তুমি আমার পৃথিবীরে মা। ‘ এখনো বেঁচে আছি তোর জন্য। তোমার ছোট্ট মুখে মধুর কন্ঠে বাবাই ডাকটা শোনার জন্য। তুই যে আমার কলিজারে মা। তুকে ছাড়া বাঁচা সম্ভব না। আর তোর বাবাই ডাকটা আমার অক্সিজেন। এই ডাকটা বন্ধ হয়ে গেলে আমি যে আর বাঁচবো না।
– বাবাই চলো খাবে। রাইসা আমাকে হাত ধরে টেনে খাবার টেবিলে বসিয়ে দিল। রাইসা তার হাত ধুয়ে খাবার আমার মুখে তুলে দিব যখন তখন আমার কাছে মনে হল ‘ আমার মা আমার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। আমিও রাইসাকে খাইয়ে দিচ্ছি। বাবা-মেয়ের দু’জনেরই চোখের জল বেয়ে পড়ছে কিন্তু ঠোঁটের কোণে রৌদ্রের ঝলকানি।
– এদিকে কথা আমাদের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে মনে ভাবছে বাবা মেয়ের ভালোবাসা মনে হচ্ছে পৃথিবীর সকল ভালোবাসার উর্ধ্বে পবিত্রতম ভালোবাসা। চোখের কোণেবিন্দু বিন্দু জল দেখা যাচ্ছে।
– বাবাই দেখ আন্টি কাঁদছে। রাইসার কথায়, কথার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কাঁদছে। আমার খেয়ালই ছিল না কথা ম্যাডাম আমাদের বাসায়।
– মামনি তোমার আন্টি খেয়েছে?
– না বাবাই বলেছে একসাথে খাবে।
– ওহ্ আচ্ছা। ম্যাডাম সরি, রাইসার না খেয়ে থাকার কথা শুনে সব ভুলে গিয়েছিলাম। প্লিজ মনে কিছু নিবেন না। আসেন ডিনার করি।
– কথা কিছু না বলে বাধ্য মেয়ের মতো, টেবিল বসে পড়ল।
– আন্টি তুমি খাচ্ছো না কেন?
– ম্যাডাম কি হলো খাচ্ছেনন না কেন?
– প্লিজ রাজ এটা আমার অফিস না। আর এখানে ম্যাডাম বলে ডেকো না।
– ও বুঝেছি আন্টি তোমাকেও খাইয়ে দিতে হবে। -কথা কিছু না বলে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সুচক জবাব দিল।
– রাইসা কথাকে খাইয়ে দিয়ে বলল ‘ আন্টি তুমি এখন বাবার মুখে খাবার তুলে দিবে। বাবাই দিবে আমাকে।
– কথা যখনি আমার মুখে খাবার তুলে দিবে এমন সময় দরজা খুলে গেল। দরজার দিকে তাকাতেই দেখি মৌ! মৌ স্পর্ষ্ট দেখতে পেল কথা আমার মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। মৌকে দেখে রাইসা বলল’ বাবাই দেখ মম —

চলবে——

বিঃদ্রঃভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here