#বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ১১
লেখাঃ #রাইসার_আব্বু।
– এই যে রাজ, এতোক্ষণ লাগল তোমার। যাইহোক তোমাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।
– শোনো রাজ এই হচ্ছে মৌ। আমাদের কোম্পানিতে আজ থেকে কাজ করবে। আর তোমার কলিগ এটা!
– মৌ সকলের সাথে পরিচয় হয়ে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই আমি সালাম দিয়ে কেটে পড়লাম। যে হাতটা ছেড়ে দিয়েছি সে হাতটা আর কিভাবে ধরব। কথা আমার হাত ধরে টানতে টানতে তার ডেস্কে নিয়ে মৌ এর বিষয়ে সব বলল। তার হাসবেন্ড চিট করেছে!
– আমি কিছু বললাম না। ডেস্কে এসে কাজ করছি। কোন কাজেই মন বসছে না। হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠল’।
-ফোনটা রিসিভ করতেই।
– হ্যালো রাজ, আমি সাথির বাবা বলছি। সাথি বাসায় এসে ঘুমের পিল নিয়েছে অনেকগুলো। এখন হসপিটালে আছে। প্লিজ বাবা তুমি একটু আসো হসপিটালে।
-কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম ‘ আঙ্কেল আপনি কোন হসপিটালে আছেন ঠিকানাটা দেন আমি আসছি।’ বলেই ফোনটা কেটে দিলাম।
– কোথায় যাবে রাজ?
– হসপিটালে যাবো?
– হসপিটালে কেন রাইসার কিছু হয়েছে?
– আরে না। সাথি ঘুমের পিল নিয়েছে। আঙ্কেল ফোন করে জানালো।
– কী বলছো এসব? সাথি এমনটা করবে ভাবতেও পারিনি। কথার বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠল। রাজকে হারানোর ভয় হচ্ছে। মন চাচ্ছে সব বলে দেয়।
– কি হলো ম্যাডাম ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেন? আচ্ছা ম্যাডাম আমি কি এখন হসপিটালে যেতে পারি?
– আচ্ছা তুমি যাও। আমি রাইসাকে নিয়ে পড়ে যাবো।
-ধন্যবাদ ম্যাম।
– একটা গাড়ি করে হসপিটালের উদ্দেশে রওয়ানা দিলাম। রাস্তা যেন শেষ হচ্ছে না।
– আচ্ছা ম্যাডাম আপনাকে একটা কথা বলতে পারি?
– হুম। অবশ্যই।
– একটু আগে মিঃ রাজ কোথায় গেল?
-ওহ্ আর বলো না আমার বান্ধবী রাজকে ভালোবাসে। আর রাজ ভালো না বাসায় সুসাইড করতে চেয়েছিল। এখন হসপিটালে। সন্ধ্যায় রাইসাকে নিয়ে দেখতে যেতে হবে।
– কথার কাছে এমন কথা শুনে মৌ এর বুকের ভেতরটা চুর-মার হয়ে যাচ্ছে। কেন কষ্ট হচ্ছে রাজকে তো তাড়িয়ে দিয়েছি। ম্যাম আমি কি আপনাদের সাথে সন্ধ্যায় যেতে পারি?
– আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি আপনার ডেস্কে যান আমি রাইসাকে নিয়ে আসতে যাচ্ছি।
– এদিকে আমি হসপিটালে যেতেই বুকটা ছ্যাঁত করে ওঠলো। আজ আমার জন্য সাথি মরতে বসেছে। নিজেকে বড্ডবেশি অপরাধী মনে হচ্ছে। আনমনে হেঁটে হেঁটে সাথির রুমের সামনে আসতেই আঙ্কেলকে দেখলাম। চেয়ারের বসে আছে বিষন্ন মনে।
– আমাকে দেখেই আঙ্কেল বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলল’ বাবা আমার মেয়েটা ছাড়া কেউ নেই। ওকে তুমি বাঁচাও। সাথির বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউ-মাউ করে কাঁদছে। আঙ্কেলকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোন ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
– আঙ্কেল প্লিজ কাঁদবেন না। সাথির কিছুই হবে না।
– জানো বাবা কাল রাত না খেয়ে দরজা আকটিয়ে শুয়ে পড়ে। আজ সকালে অনেক ডাকাডাকির পর যখন দরজা খুলছিল না। তখন দরজা ভেঙে আমার মেয়েকে ফ্লরে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার দিয়ে ওঠি। এই নাও বাবা এই চিঠিটা সাথির হাতে ছিল।
– আমি আঙ্কেলের কাছ থেকে চিঠিটা নিয়ে পড়তে লাগলাম।
– প্রিয় রাজ,
তুমি যখন চিঠিটা পড়বে হয়তো তখন আমার অস্তিত্ব এ পৃথিবীতে থাকবে না। জানি না আর কখনো তোমার মায়াবী মুখটা দেখতে পারব কি না। জানো তোমাকে বড্ড বেশি ভালোবাসি। শুধু তোমাকেই নয় আমি রাইসাকেও বড্ড বেশি ভালোবাসি। চেয়েছিলাম রাইসার মা হবো। কিন্তু আমার ভাগ্যে নেই। চাঁদ ছোঁয়ার ক্ষমতা যেমন কারো থাকে না তেমনি তোমাকে ছোঁয়াও আমার ভাগ্যে হলো না। জানো তোমার বুকে একটু আশ্রয় চেয়েছিলাম দাওনি। কি করবো বলো এ জীবন দিয়ে যে জীবনে তোমাকে পাবো না। আমার ভালোবাসা তো নিঃস্বার্থ ছিল। তোমাকে বেশি ভালোবাসা কি আমার অপরাধ। বার্থডে পার্টিতে যাকে এক পলক দেখেই এই হৃদয়ে স্থান দিয়েছি। খুব কষ্ট হচ্ছে। আচ্ছা রাজ যদি মারা যায় আমায় একটু জড়িয়ে ধরো। আমার আত্মাটা শান্তি পাবে। ক্ষমা করে দিয়ো আমাকে। তোমাকে ইহকালে না পেলেও পরকালো চাই।
-চিঠিটা শেষ করতেই বুকের ভেতরটা হু-হু করে ওঠলো। চিঠিটা বুক পকেটে রেখে চেয়ারে গিয়ে বসতেই ডাক্তার বলল রোগির জ্ঞান ফিরেছে।
– আঙ্কেল ছোট বাচ্চার মতো দৌড়ে রুমে গেল।
– সাথি আস্তে আস্তে চোখ খুলছে।
– কিরে মা বুড়ো বয়সে কার কাছে আমাকে রেখে চলে যেতে চেয়েছিলি? আমাকে ঘুমের পিল খাইয়ে তারপর তুই খেতি। বাবা আমি বাঁচতে চাই না।
– চুপ কর তুই। রাজকে যেভাবে পায় হাতজোড় করে হলেও তোর জন্য ওকে চাইব। তবুও মরার কথা বলিস না। আমি দরজায় দাঁড়িয়ে আছি। আঙ্কেল আমাকে দেখে রুম রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি এক পা দু’পা করে সাথির কাছে যেতেই সাথি মুখটা ঘুরিয়ে নিল।
– এদিকে মৌ অফিসের ডেস্কে বসে বসে ভাবছে ‘রাজ আমাকে কি ক্ষমা করবে? ‘আমি হিরাকে কাচ ভেবে যে ভুল করেছি জানি না এ ভুলের ক্ষমা পাবো কি না। নিজের মেয়েটাকে থাপ্পর দেওয়ার কথা মনে পড়তেই কেমন যেন শরীরটা শিউরে ওঠে। এমন সময় খেয়াল করল একটা রাজকন্যা কথার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। এ সুন্দর কোন বাচ্চা হতে পারে। একদম রাজকন্যার মতো এসব ভাবতেই চোখে জল এসে যায়। নিজের মেয়ের সৌন্দর্যটাকেও এতদিন ফিল করতে পারেনি।
– মৌ আপনি নাকি হসপিটাল যাবেন?
‘ হুম চলেন’
এই বলে চোখের পানি মুছে। ঠিক তখনি রাইসা মৌকে দেখে চমকে যায়। রাইসার খুব করে মন চাচ্ছে মৌকে জড়িয়ে ধরে মম ডাকতে। কিন্তু না বাবাইকে যে কষ্ট দিয়েছে মম। বাবাইকে কথা দিয়েছে আর কখনো কাউকে মম ডাকবে না।
-রাইসা মামনি তুমি কাঁদছো কেন?
– না আন্টি কাঁদছি না। মম এর কথা খুব মনে পড়ছিল তো তাই।
– কথা রাইসার দু’গালে চুমু দিয়ে বলল আমিই তোর মম।
– না আপনি আমার আন্টি।
– এমন সময় কথার চোখ যায় মৌ এর দিকে। মৌ এর চোখে পানি।
– কথা কিছু না বলে রাইসা আর মৌকে নিয়ে হসপিটালে রওয়ানা করে। মাঝপথে এসে হঠাৎ কথার মনে পড়ে বার্থডের কথা। রাইসা মৌকে জোর করেই মম ডেকেছিল। কিন্তু কেন?
– কথা গাড়ি ব্রেক করে মৌকে জিজ্ঞেস করে মৌ আপনাকে একটা প্রশ্ন করি?
– হ্যাঁ করেন।
– আচ্ছা আমার বার্থডে পার্টিতে আপনাকেই তো রাইসা মম ডেকেছিল। অনেক কিছু বলেছিল তাই না? আচ্ছা তুমি কি সত্যি রাইসার মম? মিথ্যা বলবে না।
– মৌ চোখের জল মুছে বলবে হ্যাঁ রাইসা আমার মেয়ে। ঠিক এমন সময় রাইসা বললো -আন্টি আমি বলছি। জানো কথা আন্টি সেদিন আমার ভুল ছিল। কারণ আমার মম অনেকটাই দেখতে উনার মতো ছিল। তাই বার্থডেতে মম ডেকেছিলাম। কিন্তু আমার মম তো আমাকে আর বাবাইকে রেখে মারা গিয়েছে। তাই না আন্টি।
– মৌ এর দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল রাইসা।
– মৌ কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়ালো।
– এদিকে অনেকক্ষণ ধরে বিছানায় পাশে বসে আছি আমি। সাথি অন্যদিকে ফিরে আছে। আমি স্পর্ষ্ট বুঝতে পারছি সাথি অন্যদিক ফিরে কাঁদছে।
– কি হলো কাঁদছেন কেন?
– আমি কাঁদলেই কারো কি আসে যায়।
– প্লিজ কাঁদবেন না।
– আচ্ছা কাঁদবো না আমায় সারাজিবনের জন্য আপনার বুকে জায়গা দিবেন?
– আশ্চর্য এসব কেন বলছো? শোন প্লিজ আর পাগলামী করো না। তোমার বাবার তোমার ছাড়া কেউ নেই। তাই এসব করো না আর। মানুষটাকে কষ্ট দিয়ো না।
– আমি বাঁচতে চাই না রাজ। আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না
– আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো। আর হ্যাঁ ভুলে যেয়ো না আমি বিবাহিত। আমার মেয়ে আছে।
– আমি কিছুই জানতে চাই না আমি শুধু তোমাকে চাই। আর রাইসা আমার মেয়ে।
– রাজ আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আমি পারছি না। মনে হয় মরেই যাবো একটু বুকে নাও না। এ কথা বলে সাথি আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি ছাড়ানোর শক্তি পাচ্ছি না। মেয়েটা ছোট্ট বাচ্চা যেমন ভয় পেলে কাউকে জড়িয়ে ধরে। সেভাবে জড়িয়ে ধরে আছে। চোখের পানিতে আমার বুক ভিজিয়ে ফেলছে। আমি ছাড়াতে চেয়েও ছাড়াতে পারছি না।
– এদিকে বাবাই ডাক শুনে চমকে গেলাম। চেয়েই দেখি কথা মৌ আর রাইসা। এদিকে সাথি শক্ত করে জড়িয়ে আছে।
– মৌ এর দিকে তাকাতেই বুঝলাম তার চোখ দিয়ে বাঁধলের দ্বারা নামবে।
– এদিকে কথার কেন জানি খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কেন কষ্ট হচ্ছে সেটা বুঝতে পারছে না। মন চাচ্ছে সাথিকে রাজের বুক থেকে সরিয়ে দেয়। তাও এসব সহ্য হচ্ছে না। রাজটাও যে কি মেয়ে মানুষের কোমল স্পর্শ সামলাতে পারছে না।
কিছু একটা করতে হবে এ ভেবেই সাথিকে বলল’ এই সাথি আর কতো জড়িয়ে ধরে থাকবি? বিনা টিকেটে সিনেমা তো প্রায় সম্পূর্ণ দেখে ফেলেছি। সাথি কথার কথা শুনে আমাকে ছেড়ে দেয়। আমি মাথা নিচু করে আছি। রাইসা আমার ডান সাইডে এসে বসল। এমন সময় আঙ্কেল এসে বলল ‘ বাবা রাজ তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই। ‘
– জি আঙ্কেল বলেন?
– বাবা আমি তোমার কাছে করোজোড়ে অনুরোধ করি আমার মেয়েটাকে তুমি বিয়ে করো। আমার মেয়েটাকে বাঁচাও। সাথি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসে। নেক্সট টাইম আবার যদি এমন পাগলামী করে তাহলে ওকে বাঁচানো যাবে না। প্লিজ আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করো না বাবা।
– আচ্ছা আঙ্কেল।
– মৌ আমার মুখে এমন কথা শুনে তাড়াহুড়া করে বের হয়ে গেল রুম থেকে।
– মৌ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে চোখ থেকে টপটপ করে জল পড়ছে। কিন্তু তার চেয়েও বেশি হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে রাজের বিয়ের কথা শুনে। কিভাবে বাঁচবে সে। রাজের বিয়ের কথা শুনেই নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। আন্টি আপনি এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন সবাই খুঁজছে আপনাকে!
– মৌ পিছন দিকে তাকাতেই দেখে তারই রাজকন্যাটা দাঁড়িয়ে।
– আচ্ছা যাচ্ছি। আমার কাছে এসো মামনি।
– রাইসা কাছে আসতেই মৌ রাইসাকে বলল ‘ এক বার মা ডাকবে আমাকে?’
– আমার মা মারা গিয়েছে। এ ছাড়া এখনো আমার বাবাকে মারার কথা আমার মনে পড়ে।এই দেখেন আন্টি আমার ঠোঁটে কাটা দাগ এটা মম ডাকার জন্য।
– মৌ আর কিছু বলতে পারে না। এখনো ছোট্ট মুখটাতে কাটা দাগ দেখা যায়।
– মৌ চোখের পানি মুছে রুমে আসতেই দেখে রাজ আর সাথি একসাথে বসে আছে। কথা কোন কথা বলছে না।
– এদিকে আঙ্কেলকে কথা দিয়েছি। সাথি হসপিটালে সারাক্ষণ আমাকে সাথে রেখেছিল। কোনভাবেই ছাড়ছে না। রাত্রিবেলা মৌ আর কথা রাইসাকে নিয়ে চলে যেতে চাইলে সাথি বাধা দেয়। সাথি রাইসাকে বুকে নিয়ে সারারাত শুইয়ে থাকে। রাইসাও কিছুটা আঁচ করতে পেয়েছে।
-পরের দিন অফিস থেকে ছুটি নিয়ে কথাকে বললাম রাইসাকে যেন দেখে রাখে।
– সাথি মোটামুটি সুস্থতাবোধ করলে ওকে বলি আমরা একটা জায়গায় বেড়াতে যাচ্ছি। -সাথি খুশিতে আমাকে জড়িয়ে ধরে। সাথিকে ছাড়িয়ে বললাম ‘ যাও আজ সুন্দর করে সাজবে। যেন তোমার মাঝে হারিয়ে যেতে পারি।
– সাথি চলে গেল রুমে। প্রায় ঘন্টাখানেক পর বের হলো, নীল পরীর সাজে।
– নীল শাড়িতে এতটা সুন্দর লাগে সাথিকে হয়তো না দেখলে অজানাই থেকে যেতো। চোখের কোণে কাজল দেওয়াতে সাথিকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। যে কেউ তাকে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলবে। আমি সাথিকে নিয়ে রওয়ানা দিলাম। প্রায় ৪ ঘন্টা জার্নি শেষে অবশেষে কাঙ্খিত জায়গায় এসে পোঁছালাম। সারারাস্তায় সাথি আমার হাতটা শক্ত করে ধরে রেখেছিল। কিন্তু আজকের পর আর কখনো এভাবে ধরবে না । গাড়ির দরজা খুলে বললাম আসো।
– সাথি গাড়ি থেকে নেমেই কেমন যেন চমকে গেল। রাজ তুমি এখানে কেন নিয়ে আসলে? আমার ভয় হচ্ছে। ভয়ের কিছু নেই আজকের পর আর তুমি ””’ চলবে ””
বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।