#বাবার_ভালোবাসা।
পর্বঃ০৪.
লেখাঃরাইসার_আব্বু।
কথা ম্যাডামের নাকি জন্মদিন। বাড়িটা সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। অনেক বন্ধু -বান্ধুবীকে দাওয়াত দিয়েছে। রাইসার জন্য অনেক কেনা -কাটা করেছে। আঙ্কেল আমার জন্য একটা পাঞ্জাবি কিনে নিয়ে এসে বলল ‘ রাজ এটা তুমি পরে নিয়ো। ‘
– আমি পাঞ্জাবিটা পরে নিচে নামতেই ‘ কথা ম্যাডাম সবাইকে বলল, এখন আপনাদের সামনে গান নিয়ে আসছে রাজ।
– আমি আর না করতে পারলাম না। গিটার টা নিয়ে যখনি সুর তুলতে যাবো এমন সময় বার্থডে পার্টির একজোড়া কাপলদের দিকে চোখ যেতেই থমকে গেলাম! মৌ এখানে কি করছে!
– আমি ক্ষানিকটা স্বভাবিক হয়ে, গিটারটা উঠলো ভাবে ধরলাম। এমন সময় মৌ বলে ওঠল’ জনাব, আগে গিটার ধরতে শিখেন। তারপর না হয় গান বলবেন। বুঝি না এসব কই থেকে যে ধরে নিয়ে আসে!
-মৌ এর কথা শুনে সবাই হেসে দিল! নিজেকে চিড়িয়াখানার বানরের মতো লাগছে। কথা ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে দেখি ম্যাডাম লজ্জায় মাথাটা নিচু করে আছে। ম্যাডাম আগে জানলে কখনোই বলতো না গান বলতে আমাকে।
– সবাই হাসছে। সবার হাসিটা দেখে নিজের কাছেই খারাপ লাতছে।
– আমি গিটার টা ঠিক ভাবে ধরে সুর তুলতেই সবাই নিশ্চুপ হয়ে গেল।
– সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
– মৌ এর হাসিমাখা মুখটা চুপসে গেল। মৌ জানত আমি কোনদিন গিটার ছুঁয়েও দেখিনি। কারণ এই গিটারের আঘাতেই আবার বাবা আমার মাকে মেরে ফেলেছিল। সে ঘটনা মনে পড়লে আমার মন আঁতকে ওঠে। তার পর আর গিটার হাতে নেয়নি। তুলিনি গলায় কোন গানের সুর। কিন্তু আজ না বললেই নয়। মায়ের মুখটা বারবার ভেসে ওঠছে। আমি চোখ দু’টি বন্ধ করে গিটারের তালে তালে সুর ধরলাম ‘
চিরদিনি ভালোবেসে যাবো , আমি যে
তোমায়,
মনেরি গহীনে, তাই রেখেছি তোমায় ,
ঝিনুক যেমন করে মুক্তো লুকায়!
আমিও তেমন করে রেখেছি যে তোমায়।
চলে গিয়েছ তুমি, একা করে আমায়।
তবুও তোমায় রেখেছি আমার নয়নেরি
পাতায়।
কি অপরাধ ছিল বলো না আমায়।
কেন অভিমান করে, আষারো ঝড়াও!
আজ আমার আকাশ আধাঁর করে,
কার আকাশে জোছনা ফুটাও।
সে কি আজো আমার মতো ভালোবাসে তোমায়!
ভেবে না যে আমি, ভুলে যাবো তোমায়।
ভালোবাসিবো আমি চিরদিনি তোমায়।
গানটা শেষ করতেই হাত তালিতে পুরো বাড়ি মুখরিত হয়ে গেল।
– আমি মৌ এর দিকে চেয়ে আছি। পুরো বার্থডের মানুষ আমার দিকে চেয়ে আছে। মৌ সাইম সাহেবের হাতটা ধরে আছে। বুকের ভেতরটা কেমন যেন কেঁপে ওঠছে। যতই তার কাছ থেকে দূরে সরে থাকতে চাই নিয়তী ততই সামনে এসে যায়। এসব ভাবতে ভাবতে
-কথা ম্যাডাম আমার কাছে এসে বলল ‘ তুমি এতো সুন্দর গান পারো আগে বলোনি তো । জাস্ট অসাম।
– হঠাৎ বার্থডে পার্টির অনেকগুলো মেয়ে এসে বলল! ভাইয়া আপনি এতো সুন্দর গান করতে পারেন। জাস্ট অ্যামাজনিং! আপনার গিটার বাজানোটাও মুগ্ধকর। কিছু মনে না করলে আপনার ফোন নাম্বারটা পেতে পারি?
– দোস্ত রাজ ফোন ব্যবহার করে না। চল সবাই কেক কাঁটবো।
– এদিককে মৌ এর দিকে তাকিয়ে দেখি রাগে ফুসছে!
– অর্পিতা ছেলেটা এতো সুন্দর গান করবে ভাবতে পারিনি। ক্রাশ খেয়ে গেলাম।
– সাথি তোর মতো সুন্দরী মেয়ে শেষমেষ ক্রাশ খুঁজে পেয়েছে?
– আরে দূর আমি প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়ে গিয়েছে। দোস্ত নাম্বারটা এনে দিতে পারবি আমার না ভয় করছে!
– কথাকে বল সাথি। কথা তো তোর বান্ধবী।
– মৌ তার পাশে থাকা সাথি আর অর্পিতার কথা সহ্য করতে না পেয়ে বলল’ এই যে আপু প্রথম দেখাতেই ভালবেসে ফেললেন। তো ভালো কথা ঢোল পিটানোর কি আছে?
– আশ্চর্য আপনি রাগ করছেন কেন। আপনার কি হয়। নাকি আপনিও প্রেমে পড়ে গেছেন।
– শুনেন ওনার দিকে নজর না দিয়ে আপনার বরকে সময় দেন। চলতো অর্পিতা এখানে দাঁড়িয়ে থাকা যাবে না। আমার ক্রাশের ভাগ চাচ্ছে!
– মৌ কিছু বলল না। সাইফ মৌ এর হাতটা শক্ত করে ধরল।
– এদিকে কথা ম্যাডাম আমার হাত ধরে কেকের কাছে নিয়ে গেল।
– কেক কাটা শেষ হলে রাইসাকে নিয়ে উপরে এসে পড়লাম। নিচে থাকতে পারছিলাম না ।
– রাইসা নিচে মৌকে দেখেনি। দেখলে হয়ত কান্না করত। কারণ রাইসা তার মমকে অনেক ভালোবাসত।
-বাবাই তোমার গানটা না খুব সুন্দর হয়েছে। দাঁড়াও তোমাকে একটা গিফট দিচ্ছি!
-উম্মাহ বাবা এটা তোমার গিফট!
– আসতে পারি?
– আশ্চর্য ম্যাডাম! আপনার বাড়ি, আর আসতে পারমিশন চাচ্ছেন।
– নাহ্ তাও হলেও। আচ্ছা আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে।
– না ঠিক আছি। এমনেই কেমন জানি লাগতেছে।
– ওহ্ আচ্ছা। তাহলে নিচে চলো ভালো হয়ে যাবে। কথা ম্যাডাম নিচে সবার সাথে পরিচয় হচ্ছে।
-কথার বাবা সবার সাথে কথাকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। কারণ এখন ব্যবসার সম্পূর্ণ ধায়-ভার কথাকে দিয়ে যাবে।
এক পর্যারে সাইফ চৌধুরিকে দেখিয়ে বলল মামনি সাইমের সাথে আমাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক অনেকদিন আগের। সাইফ এবং তার স্ত্রী!
হাই আমি কথা! হ্যালো আমি সাইফ। আর এই হচ্ছে আমার স্ত্রী মৌ। এই বলে সাইম মৌ এর হাতটা ধরতে গেলে ‘ রাইসা মৌকে দেখে ফেলে
।
-মম তুমি, তুমি আমাকে দেখতে আসছো? আমি জানতাম তুমি আসবে। মম তুমি আর অভিমান করে থেকে না। বাবাই তোমাকে অনেক ভালোবাসে।
– কে তোমার মম?আমাকে মম বলছো কেন?
যত্তসব পাগলের দল!
– মম তুমি আমায় চিনতে পারছো না? আমি তোমার রাইসা। যাকে তুমি রাজকুমারী ডাকতে!
– সাইফ দেখ তো মেয়েটা কে?
– মিস কথা মেয়েটা কে? আমার wife কে মম ডাকছে? সাইম সবটা জেনেও মিথ্যা বললো। কারণ মৌ এবং সাইম চাই না তাদের মাঝে রাইসা আসুক।
– বন্ধু এটা আমার মম। তুমি দাঁড়াও বাবাইকে ডাক দিচ্ছি।
– বাবাই বাবাই মম আসছে দেখে যাও!
– রাইসা আমাকে নিয়ে মৌ এর সামনে দাঁড়া করিয়ে দিয়ে মৌ এর হাতটা আমার হাতে রেখে বলল’ আর তুমি বাবাইকে ছেড়ে যাবে না।
– মৌ আমার হাত থেকে তার হাতটা সরিয়ে নিয়ে রাইসার গালে চড় বসিয়ে দিল। কথা চড় দেওয়া দেখে চমকে ওঠে! সাথে পার্টির সবাই।
– আশ্চর্য আপনার মেয়েকে ডাক্তার দেখান। যাকে তাকে মম বানিয়ে ফেলছে।
– সরি ম্যাডাম, আমার মেয়েটার মা আপনার মতোই দেখতে ছিল। কিন্তু এক দুর্ঘটনায় মারা যায়। আর আমার মেয়েটা না চিনে আপনাকে মম ডেকে ফেলেছে ক্ষমা করে দিয়েন।
– সাথি দোস্ত শেষ পর্যন্ত বিয়ে করা একটা ছেলেকে পছন্দ করলি?
– দূর মেয়েটা কিন্তু অনেক কিউট!
– রাইসা আমার কথা শুনে দৌড়ে উপরে চলে গেল। রাইসা উপরে গিয়ে কাঁদতে থাকে। আমি ক্রাচে ভর করে যখনি, উপরে যায়। তখন দেখি রাইসা কাঁদছে।
আমি বিছানায় বসে রাইসার মাথার উপর হাতটা রাখতেই আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।
– কি হলো আমার মা টা কাঁদছে কেন?
– বাবাই তুমি আমাকে ছেড়ে যাবে না তো।
বাবাই মম আমাকে চিনে না। মম আমাকে মারল বাবাই। তুমি যেয়ো না আমাকে ছেড়ে । জানো বাবাই সবার মা সবাইকে আদর করে আর আমার মা আমাকে চড় মারে। জানো বাবাই আমি ভেবেছিলাম মম আমায় কুলে নিয়ে আগের মতো দু’গালে চুমু দিবে। কিন্তু মম আমাকে চড় দিবে ভাবিনি। আচ্ছা বাবাই আমি কি দেখতে খুব খারাপ? যার জন্য মম আমাকে চিনতে পারল না। জানো বাবাই তুমি যখন রাতে মম এর ছবি বুকে নিয়ে কাঁদো তখন আমার খুব কষ্ট হয় খুব। তাই মমকে তোমার কাছে আনতে চেয়েছিলাম। তোমার কষ্ট হলে যে আমারো কষ্ট হয়।
– রাইসাকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।
– এদিকে পিছনে কারো অনুপস্হিতি টের পেয়ে, তাকিয়ে দেখি কথা ম্যাডাম দাঁড়িয়ে আছে। ম্যাডামের চোখে পানি।
– ম্যাডাম কাঁদছেন কেন?
-বাবা-মেয়ের ভালোবাসা দেখে।
– দিনগুলি ভালোই কাটতেছিল। মাসখানেক পর খবর পেলাম মৌএর বাবা মারা গিয়েছে। আর কথা তার সমস্ত সম্পক্তি সাইফের নামে উইল করে দিয়েছে।
– মৌকে এখন আর আগের মতো সাইফ ভালোবাসে না। অফিসের কাজে বাহিরেই বেশি থাকে। তারপরও মৌ অনেক খুশি। কারণ সাইফ তার চাহিদার সবটাই পূরণ করতে পারে।
– আমি আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ! ভাবছি কথা ম্যাডামদের বাসাটা ছেড়ে দিবো। অন্যের দয়ার আর কতোদিন। তাদের দয়ায় একটা চাকরিও পেয়েছি। কথা ম্যাডামের p. A । আজ ভাবছি আঙ্কেলকে বলবো যে আমরা বাড়ি ছেড়ে দিবো।
– রাতে ডিনার করতে সময় যখন আঙ্কেলকে সবকিছু খুলে বললাম তখন আঙ্কেল বলল ‘ কথা ম্যাডামের বিয়ে হবে এ মাসে। তাই বিয়ের আগে এসব কিছু না বলতে।
– আমি আর কিছু বললাম না।
-পরের দিন সকালে জানতে পারলাম। কথা ম্যাডাম তার পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করছে।
– বিয়ে প্রায় সব ঠিক ঠাক।
– ছেলেটার নাম নিলয়। অনেক বড় লোকের ছেলে নাকি শুনেছি।
– যেদিন কথা ম্যাডামকে আন্টি পরিয়ে দিয়ে গেল। সেদিন ড্রয়িংরুমে ছেলেটাকে দেখেই চমকে যায়। এই সেই নিলয়। একে অনেকদিন আগে থেকেই চিনি। প্রতিসপ্তাহে নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে হোটেলে যায়। যে অফিসে কাজ করতাম তার পাশেই একটা আবাসিক হোটেল ছিল। আর এ ছেলের জন্যই অবনী সুসাইড করে। না এসব কিছু কথা ম্যাডামকে বলতে হবে। আমি চাই না ম্যাডামের এতবড় ক্ষতি হোক।
– ছেলে পক্ষ আন্টি পড়িয়ে চলে গেলে, আমি কথা ম্যাডামের রুমের কাছে যেতেই দেখি। রুমের দরজা খুলা। আমি দরজায় পা রাখতেই রাইসা দৌড়ে বের হয়ে গেল।
– আসব ম্যাডাম?
– হ্যাঁ আসেন!
– কেমন আছেন?
– হ্যাঁ ভালো।
– ম্যাডাম কিছু না মনে করলে একটা কথা বলতাম।
– হ্যাঁ বলো।
– ম্যাডাম আপনি নিলয় ছেলেটাকে বিয়ে করবেন না প্লিজ।
– হঠাৎ এই কথা। আচ্ছা বলো তো কেন বিয়ে করবো না?
– ছেলেটার চরিএ ভালো না। অনেক মেয়ের সাথে ফ্যাজিকাল রিলেশন করছে। আমার কলিগ অবনী, ওর জন্য সুসাইড করছে। নিলয় ওর জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। এখন আপনার ইচ্ছা।
– ঠাস! লজ্জা করে না নিলয়ের সম্পর্কে এমন মিথ্যা কথা বলতে? কিছুক্ষণ আগে ছোট্ট মেয়েটা বলে গেল, তুমি আমার মম হবে আর এখন আসছেন আপনি। ছিঃ দুধ-কলা দিয়ে কাল সাপ পুষেছিলাম। এই মুহূর্তে আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবেন।
– কি হয়েছে মা চিল্লাচিল্লি করছিস কেন?
– দেখ বাবা এই দুধ-কলা দিয়ে পোষা কালসাপটা বলছে নিলয়ের চরিএ খারাপ।ছোট মেয়েটাকে ঘটক বানিয়ে পাঠিয়েছে মা বানাতে।
– আঙ্কেল কথা ম্যাডামের কথা শুনে বলল ‘ রাজ তুমি বেরিয়ে যাও। তোমার ওই শয়তানী মুখটা দেখিয়ো না। এই ছিল তোমার মনে?
– আমি উপরে গিয়ে দেখি রাইসা কাঁদছে।
– এই কাঁদছিস কেন?
– বাবাই বন্ধুকে বলেছিলাম আমার মম হবেন? বন্ধু আমাকে বকা দিয়েছে।
– আমি রাইসার মুখে এমন কথা শুনে রাইসার গালে চড় বসিয়ে দিলাম।
– বাবাই তুমি আমাকে মারলে? সবার মম আছে আমার মম নাই। বাবাই আমাকে একটু বুকে নিবে? আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে বাবাই!
– তোকে না বলছি আমিই তোর মম আমিই তোর বাবাই। অন্যকে কেন মম ডাকতে চাস এর পর যদি কাউকে মন ডাকিস। দেখিস আমি গাড়ির নিচে পড়ে মরে যাবো।
চলবে”””’
বিঃদ্রঃ ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।