#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ৪০
শীত প্রায় চলেই এসেছে। ফ্যান ছাড়া ঘুমোনোয় কানে স্পষ্ট ভেসে আসছে কিচিরমিচির পাখির ডাক। লেপের তলে থাকাকালীন ইচ্ছে যেন করেই না বাইরের ঠান্ডাময় পরিবেশে বেরিয়ে আসতে। কাচের জানালা ভেদ করে পুরো ঘরময় আলোড়ন করছে এক চিলতে রোদ। এরই মাঝে হাই তুলে ঘুম থেকে সজাগ হয় ফুটফুটে ফুলের ন্যায় এক তরুন রমনী।
মনটা আজ ভিষণ ফুরফুরে লাগছে। চারদিকে শীতের মিষ্টি হাওয়া আর পাখির ডাক। তার উপর গায়ের উপর লেপের উষ্ণ উত্তাপ। সারারাত নাদিমের সাথে মন ভরে কথা বলা। সব মিলিয়ে খুব সুন্দর করে আজকের ঘুমটি ভাঙলো কুবরার।
সবার আগে উঠে গোসল করে আজ সুন্দর করে পরিপাটি হয়ে সুন্দর একটা সাদা রঙের সেলওয়ার কামিজ পড়ে। স্বভাবত সবসময় কূর্তি, জিন্স, ফতোয়া এসবই পড়তো। তবে আজ একটু আলাদাভাবে নিজেকে আয়নায় দেখছে সে। আসলে তাকে ভারি মানিয়েছে ও।
আজ নিজ হাতে সকলের জন্য চা নাস্তা বানায় কুবরা। আসলে শুভ্রা আর কুবরা তার মায়ের কাছ থেকে বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে সবরকম কাজই শিখে ফেলে। তবে কুবরা আলসেমির জন্য কোনো কাজ ই করতো না। সারাদিন মা এসবের জন্য বকা দিলে বলে এসব নাকি শশুর বাড়িতে গিয়ে করে দেখাবে বলে জমিয়ে রাখে। আর তাদের মা ও সে নিয়ে বিশেষ জোরজবরদস্তি করে না। যেহেতু শুভ্রা একাই সামলাতে পারতো তাছাড়া উনিও এখনো বেশ কর্মঠ আছেন এখনো। তবে আজ সে নিজের ইচ্ছেতেই খুশি মনে সকলের জন্য নাস্তা বানায়।
ওষুধ খাওয়ার পর শুভ্রার পেইন অনেকটায় কমে গিয়েছে। আর তার চেয়ে বেশি অবদান সাদাফের। সাদাফ অফিসে না গিয়ে সারাক্ষন শুভ্রার পাশে ছিলো। পরিপূর্ণ রেস্ট নিতে দেয় তাকে। ডাক্তার কে ইনফর্ম করলে বলে অতিরিক্ত কাজ করার ফলেই পেটে চাপ সৃষ্টি হয়ে পেইন বেড়েছে। কয়েকদিন রেস্ট নিলে আর প্যারাসিটামল, ক্যালসিয়াম, আয়রন জাতীয় খাবার খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। সেই হিসেবে শুভ্রা এখন পুরোপুরি পেইনমুক্ত।
সকাল ৮ টার পরপরই কুবরা, লুচি, আলুর দম, চা বানিয়ে টেবিলে পরিবেশন করতে করতে সকলে ইতিমধ্যে চলে আসে। ডাইনিং এর কাছে এসে তার মা তো দেখে অবাক।
কুবরার মাঃ বাবাহ আজ আমার কি সৌভাগ্য। আমার অলসের কলস ভরা মেয়েটি নিজ হাতে সকলের জন্য খাবার বানালো।
কুবরাঃ প্রতিদিন তো তোমরাই করো। আজ না হয় আমি করে খাওয়ালাম। খেয়ে দেখো ঠিকঠাক হয়েছে কিনা। ( টেবিলের ভেতর থেকে চেয়ার বের করতে করতে)
সাদাফের বাবাঃ আজ দেখছি মামনিকে খুব ফুরফুরে দেখাচ্ছে।আহহহ চা টা তো খুব জম্পেশ হয়েছে। ( চায়ে চুমুক দিয়ে)
সাদাফঃ উমম…. শুধু কি চা লুচি আর আলুর দমটা খেয়ে দেখো। বেশ হয়েছে খেতে।
সাদাফের মাঃ বাবাহ আমাদের কুবরা এতোদিন চুপচাপ বসে থাকতো বলে কি কিছুই জানে না মনে করেছো নাকি? সবই জানে ও।
শুভ্রাঃ হ্যা শুধু নাকি শশুর বাড়িতে গিয়ে কাজ করবে বলে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকতো। ( ফিক হেসে)
কুবরাঃ আপ্পিইইইই…. এগুলো একদম ঠিম না ( গাল ফুলিয়ে)
সাদাফঃ হুমমম চেতিয়ে কি হবে বলোতো। তোমায় তো দেখছি বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। এখন তো এক্কেবারে বউ মেটারিয়াল হয়ে গিয়েছো।
কুবরাঃ ভাইয়া…. আপনিও!!! আমি একদম আর কিচ্ছু করবোই না। যাও ( লজ্জায় কুবরা পালিয়ে নিজ রোমে চলে আসে)
কুবরা আজ চেয়েছিলো নিজের রান্নার টেস্ট করতে। কোনো দিন তো কাউকে কিছু বানায়ে খাওয়ায় নি তেমন। এমনি শুভ্রার সাথে কাজে হাত লাগিয়ে টুকটাক নাদিমের পছন্দের কিছু খাবার বানিয়েছিলো শুধু কয়েকবার।
তবে মনে মনে খুব খুশি হয়েছে কুবরা যে সকলের তার হাতের রান্না পছন্দ হয়েছে। নিশ্চয় বিয়ের পর সবাই এমন ভাবে তার হাতের রান্নার তারিফ করবে।ইশশশ….. ভাবতেই লজ্জায় মুখ ঢেকে ফেলে সে।
সকাল ১১ টা বাজে। শুক্রবার হওয়ায় আজ সাদাফ অফিসে যায় নি। সকালের নাস্তা সেড়ে সকলে মিলে ড্রইংরুমের বড় কাচের জানালা ভেদ করে সূর্যের কিরন আসা জায়গাটাতে রোদ পোহাতে বসে। এরই মধ্যে কুবরা ও খাওয়া দাওয়া সেরে এদিকেই আসছে।
হঠাত কলিং বেল বাজাতেই টনক নড়ে সকলের। কুবরা দাড়িয়ে থাকায় সে ই গিয়ে আগে দরজা খুলতে যায়।
দরজা খোলা মাত্র উপারে এক জন বয়স্ক, নরম সরম, সাদা দাড়ি ওয়ালা, বেটে করে সাদা পাঞ্জাবি পরিহিত এক ভদ্রলোককে দেখতে পায় কুবরা। মাথায় উড়না টেনে সালাম দেয় কুবরা।
কুবরাঃ আসসালামু আলাইকুম।
লোকটিঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম।
ততোক্ষনে সাদাফের বাবা কুবরার পেছনে চলে আসে।
সাদাফের বাবাঃ আরে আফজল সাহেব!! আসসালামু আলাইকুম। ভেতরে আসুন। ( উনাকে বিনয়ের সাথে ঘরে ঢুকাতে ঢুকাতে)
লোকটিঃ ওয়ালাইকুমুসসালাম। আমাকে নিয়ে এতো ব্যাতিব্যাস্ত হওয়ার দরকার নেই। ( ভেতরে ঢুকে)
ইতিমধ্যে বাড়ির সকলেই দরজার দিকে চলে আসে।
সাদাফের মাঃ আরে ভাইজান আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন? বসুন বসুন। আমরা আপনার কথা ই বলছিলাম এতোক্ষন। আজ আরো ভাবছিলাম ও আপনাকে একটু দেখতে যেতাম।
কিছুক্ষন পর নাদিম দুই হাতে বড় বড় হাতে কয়েকটা পলিথিন আর প্যাকেট নিয়ে ঢুকে। দরজার সামনে কুবরা দাঁড়িয়ে থাকায় “উহুম” করে গলা ঝাকরি দেয় নাদিম।
পেছন থেকে আওয়াজ আসায় ফিরে দেখে নাদিম ও সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে আজ। আজ নাদিমকেও দেখতে কতো অপুর্ব লাগছে, সাদা পাঞ্জাবি, সাদা প্যান্ট, হাতে ঘড়ি, স্পাইক করা চুল তার সাথে কুবরার দিকে ঘায়েল করা এক সুদীর্ঘ চাহনী।
আজ প্রথম নাদিম কুবরা কে সেলওয়ার কামিজ পরিহিত দেখছে। কুইন্সিডেন্সলি তাদের পরনের পোশাকের রঙ ও মিলে যায়। মাথায় উড়নাটা অর্ধেক করে টেনে দেওয়ায় চেহারার মাধুর্যতা আরো যেন বৃদ্ধি পেয়েছে।
দুজন দুজনের দিকে আজ আবার সেই প্রথম দিন যেভাবে দরজা খোলার পর দেখা হয়েছিলো এই মূহুর্তটা যেন আজও সেই স্বরূপ ভাবেই তাকিয়ে আছে।
সাদাফঃ আরে নাদিম!! বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? ভেতরে আয়।
সাদাফের কথায় দুজনেরই হুশ ফিরে হচকচিয়ে উঠে। তারপর নাদিম হাতের প্যাকেট গুলো কুবরাকে ধরতে দিয়ে ভেতরে ঢুকে।
সাদাফঃ আরে!! আজ কি তুই আমাদের বাড়িতে প্রথম এলি নাকি যে এতো কিছু নিয়ে আসলি ( নাদিমের পিঠে হালকা থাপ্পড় দিয়ে)
নাদিমঃ অন্যসব দিন আর আজকের দিন কি সেইম নাকি?
সাদাফ ভ্রু কুচকে নাদিমের দিকে তাকাতেই সাদাফ আর কুবরার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে নাদিম। সাদাফ মনে মনে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে তবে কুবরার মাথায় নাদিমের বলা কথার আগামাথা কিছুই ঢুকছে না।
নাদিমের বাবাঃ আপনি নিশ্চয় সাদাফের ফুফি মানে এখন বর্তমান শাশুড়ী তাই না?
শুভ্রার মাঃ জ্বি ভাইজান। আমিই শুভ্রার মা।
নাদিমের বাবাঃ কই তো বউমা দেখছিনা যে?
সাদাফের মাঃ আসলে রান্নাঘরে গিয়েছে মনে হয়। শুভ্রা একটু এদিকে এসো। নাদিমের আব্বু এসেছে দেখো।
নাদিমের বাবাঃ আরে আমি বললাম না আমাকে নিয়ে এতো ব্যাস্ত হওয়ার দরকার নেই।
শুভ্রা এসে নাদিমের বাবাকে সালাম বিনিময় করে। তারপর তিনি শুভ্রাকে নিজের পাশে বসালেন।
নাদিমের বাবাঃ ভারি লক্ষি দেখতে তুমি। নাদিম আমাকে বিয়ের সব ছবি ই দেখিয়েছে। সেই থেকে তোমাদের চেনা। আসলে অসুস্থ ছিলাম বলে আসতে পারি নি তখন। বুঝতেই তো পারছো অসুস্থ ছিলাম।
শুভ্রাও লক্ষি মেয়ের মতো চুপচাপ নাদিমের বাবার পাশে বসে থাকে।
নাদিমের বাবাঃ এই বুঝি তোমার ছোট বোন! তুমি তো সত্যিই ভারি মিষ্টি দেখতে। একদম নাদিম যেমন বলেছে।
কুবরা মুচকি হেসে একবার নাদিমের দিকে তাকায় আরেকবার নিচের দিকে তাকায়।
তারপর দুবোন মিলেই আবার রান্নাঘরে চলে যায় খাবার দাবারের ব্যবস্থা করতে।
সাদাফের বাবাঃ তা এখন তো আপনি মোটামুটি সুস্থই বলতে গেলে। কোম্পানির কাজ সামাল তো এখন সব নাদিমই সামলাচ্ছে।
নাদিমের বাবাঃ এখন তো আছিই আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ। তবে বয়স তো হচ্ছে আর নাদিম কতোদিন বসে থাকবে। আর কুলিয়ে উঠতে পারছিনা বলেই বাধ্য হয়েছি ছেলেটার উপর সব ভার চাপিয়ে দিতে।
সাদাফঃ এভাবে কেন বলছেন। ও তো ভালোই পারছে সব কিছু মেনেজ করতে। এছাড়া ও কোম্পানির হাল ধরার পর থেকে আগের থেকে আরো ইম্প্রুভ করেছে।
নাদিমের বাবাঃ বুঝতেই তো পারছো। আজকালকার ব্যবসায়ীক নিয়ম কানুন তোমাদের জেনারেশন ই ভালো বুঝবে। আমি নাহয় রিটায়ার্ড করলাম। তবে কি জানো তো নাদিম তো সারাদিন অফিসে থাকে। বাড়িতে এখন আর একা থাকতেই ইচ্ছে করে না। আর নাদিমের ও বিয়ের যথেষ্ট বিয়ের বয়স হয়েছে।
সাদাফের মাঃ হ্যা। আমি তো ওইদিন নাদিম কে বললাম যেন একটা বিয়ে করে দিতে। তাতে সে বিয়েও হয়ে গেলো। আপনি একটা সময় কাটানোর বাড়িতে সাথী ও পেয়ে গেলেন।
নাদিমের বাবাঃ এই জন্য আপনাদের সাথে আমি কিছু কথা বলতে এসেছিলাম।
সাদাফের মাঃ আপনি কোনো চিন্তা করবেন না আফজল ভাই। মেয়ে দেখা, নির্বাচন, বিয়ের সব ব্যবস্থাপনা আমারা নিজ হাতে নিজ পায়ে দাঁড়িয়ে দিবো। আর আমাকে সেদিন নাদিমই বললো ওর নাকি পছন্দ কেউ আছে। আপনি চাইলে আমরা কিন্তু কথা পাকা করে নিতে পারি।
ততোক্ষণে কুবরা ট্রে করে চা, নাস্তা করে নিয়ে আসে সার্ভ করছে।
নাদিমের বাবাঃ এক্ষেত্রে তো আমাকে একমাত্র বেয়াইন সাহেবাই সাহায্য করতে পারে।
সাদাফের বাবাঃ কি বলছেন আফজল ভাই। আমার বোন তো মাত্র ঢাকাতে নতুম এসেছে। কারো সাথে তেমন কোনো পরিচিতি কিংবা আত্মীয়তা ও নেই।
নাদিমের বাবাঃ ঘরের মানুষ থাকতে আমি আর কোন সাধে বাইরের লোক দেখতে যাবো বলুন তো চৌধুরী সাহেব।
সাদাফের মাঃ মানে? আসলে ভাই আপনার কথা না আমাদের মাথায় ঠিক ঢুকছে না। একটু খোলাসা করে বললে ভালো হতো আর কি।
নাদিমের বাবাঃ আসলে আমি তাহলে সোজাসুজিই বলছ বেয়াইন সাহেবা। কাল রাতে নাদিম আমাকে তার পছন্দের কথা বলে। এমনকি তার ছবিও আমাকে দেখায়। মেয়ে হিসেবে আমারও তাকে বেশ ভালো লাগে। আমি চাই তাকে আমার ঘর আলো করে বউ করে নিয়ে যেতে। আর সে কেউ নয় আপনার ছোট মেয়ে। আমি আপনার মেয়েকে আমার ঘরের লক্ষি করে নিয়ে যেতে চাই। ( আবদারের সুরে)
নাদিমের বাবার কথা শুনে মিসেস মালিহা তো হতবাক হয়ে যায়। মেয়ের জন্য নিজ থেকে এতো ভালো সম্মন্ধ এসেছে তা তিনি বিশ্বাসই করতে পারছেন না।
কুবরার মাঃ এভাবে কেন বলছে। আপনি আমার অনেক গুরুজন হবেন। আমার ডানপিটে মেয়ের জন্য এতো ভালো সম্মন্ধ আসবে তা তো আমার কল্পনাতীত। এতো আমার বড় কপাল যে আপনি নিজে থেকে আমার মেয়েকে বাড়ির বউ করে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু…..
মিসেস মালিহার মুখে কিন্তু শুনে কুবরা আর নাদিমের বুক আচমকা কেপে উঠে।। তবে কি তিনি মানা করে দিবেন!! বিয়েতে কি তিনি মত দিবেন না?
নাদিমের বাবাঃ কিন্তু কি বিয়াইন সাহেবা?
কুবরার মাঃ আসলে আমার মেয়েটা তো খুব ছোট এখনো। যথেষ্ট ম্যাচিউর হয়ে উঠে নি এখনো। ছোটদের মতো এখনো পাগলামি করে। শুভ্রা তো বয়স কম হলেও যথেষ্ট গুছিয়ে চলতে পারে। এখন যদি বিয়ে করে তাহলে যদি আপনাদের ওর কাজকর্ম পছন্দ না হয়। আর কুবরা যদি বিয়েতে রাজি না হয় মানে বুঝছেন তো……
মায়ের মুখে এমন কথা শুনে কুবরার ইচ্ছে করছে পায়ের তলার টাইলস ফাক করে নিচে ঢুকে যেতে। কতোবড় বেইজ্জত!!! আর বিয়েতে রাজি না থাকার কি কারন। আজব!!! ( মনে মনে আওড়াতে থাকে তবে) ।
কুবরার মায়ের কথা শুনে হু হা করে হেসে উঠে নাদিমের বাবা।
নাদিমের বাবাঃআরে আপনি এটার জন্য টেনশন করছেন। ছেলেমেয়ে দুজন দুজনকে পছন্দ করে বলেই তো আমি এই সম্মন্ধ নিয়ে এলাম। আর আপনি ভয় পাচ্ছেন মেয়ে রাজি থাকবে না!
নাদিমের বাবার কথা শুনে মিসেস মালিহা তো পুরাই অবাক। সারাদিন বাচ্চামি করে করে ভেতরে ভেতরে ভালোই চলিয়ে যাচ্ছে। তিনি অবাক চোখে নিজের পেছনে তাকিয়ে দেখে কুবরা তার মায়ের পেছনে দাড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে উড়নার কোনা নিয়ে হাত আওড়াচ্ছে। তার মানে উনি সত্যিই বলছেন।
নাদিম আস্তে করে গিয়ে কুবরার পাশে দাঁড়ায়।
নাদিমঃ কিই কেমন দিলাম বলোতো সারপ্রাইজ টা??
কুবরাঃ আমাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার চক্করে আজ আপনার জন্য আমি শেষ। আম্মু কি করে তাকিয়ে ছিলেন দেখেছেন?? আজ নিশ্চিত আমি মাইর খাবোই খাবো।
নাদিমঃ তাহলে খাবে। সমস্যা কি তাতে? আমার জন্য না হয় একটু মাইর খেলা।
নাদিমের কথা শুনে কুবরা চোখ দুটি রসগোল্লার ন্যায় বড় বড় করে তার দিকে তাকিয়ে রয়।
কুবরাঃ কিইইইইই আমি মাইর খাবো তাও আবার আপনার জন্য?? বিয়েটা হোক। তারপর দেখবেন উদুম কেলানি কাকে বলে! আমাকে মাইর খাওয়ানো না খুব খুশি হ্যা?? ( চেতিয়ে)
নাদিমের বাবাঃ আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে চিন্তা করছেন? এরকম মেয়েই তো আমার চাই যে পুরো ঘরময় রমরমা করে রাখবে সারাদিন। সারাদিন হৈ চৈ করে ঘর মাতিয়ে রাখবে। এমনি তে তো ওর মা মারা যাওয়ার পর আমার বাড়িটাই অন্ধকার হয়ে গিয়েছে।
কুবরার মাঃ এতো আমার পরম সৌভাগ্য। নাদিম বাবাকে তো আমি শুরু থেকেই দেখছি, দেখতে শুনতে, আচার আচরন, চাল চলন, স্বভাব চরিত্র একেবারে একজন সুপাত্রের নিদর্শন। এরকম ছেলে তো লাখে একটা পাওয়া যায়। যেমন আমি আমার শুভির জন্য সাদাফকে পেয়েছি। কারো যদি কোনো আপত্তি না থাকে তাহলে আর কি হবে।
সাদাফের মাঃ এটা তো আপনি ঠিকই বলেছেন। ও মেয়েরা বিয়ে হলে ঠিকি সাংসারিক হয়ে যায়। আর আমার নাদিম কি কোনো খারাপ ছেলে নাকি যে আপত্তি থাকবে? ও তো আমার আরেকটা ছেলে ই বটে। এতো আমার সৌভাগ্য যে ঘরের ছেলে মেয়ে ঘরেই সম্পর্ক জুড়বে।
নাদিমের বাবাঃ তাহলে কথা পাকা করলেন বলছেম বেয়াইন সাহেবা? আমি যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার মেয়েকে আমার মেয়ে করে নিয়ে যেতে চাই। কদিন আর বাচবো তারই বিশ্বাস নেই। আগেভাগে নাহয় নিজ চোক্ষে দেখে মনটাকে শান্তি দিতে পারবো।
সাদাফের বাবাঃ তাহলে মিষ্টিমুখ হিয়ে যাক এই খুশিতে। বাহহহ এতো মহা আনন্দের খবর। আমাদের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হতে যাচ্ছে। ( নাদিমের বাবার সাথে কুশল বিনিময় করে) ।
ইতিমধ্যেই জোহরের আযান পড়ে গেছে চারদিকে। চৌধুরী ভিলায় আজ খুশির রমরমা। নামাজ শেষ করে এসে গুরুজনদের ইচ্ছায় দুজন দুজনের আংটি পড়ানো ও হয়ে গিয়েছে। আর এক সপ্তাহ পর নেক্সট শুক্রবার বিয়ের দিন ঠিক করেছে। বেশি ঝাকঝমক করে বিয়েটা করতে চাচ্ছেন না। কারণ নাদিমের বাবা পরহেজগার মানুষ । বেশি মানুষের ভিড়, গানবাজনা, হৈ-হুল্লোড় তেমন পছন্দ করে না। নাদিম আর কোবরার মতেই ছোট করে পারিবারিক ভাবে বিয়েটা সম্পন্ন করতে চাচ্ছে দুপক্ষের পরিবার।
নাদিম আর কোবরা তো মনে মনে খুশিতে লাফাচ্ছে। কুবরা ভাবতেই পারেনি যে এতো তাড়াতাড়ি নিজের মনের আকাঙ্খা এভাবে পুঙ্খনুপুঙখ ভাবে পূরণ হবে। ভাবতেই দুজনের মন খুশিতে নেচে উঠছে যে আর মাত্র কয়েকদিন পর তারা এক হতে যাবে। তাদের সম্পর্ক টা হালাল ভাবে সম্পন্ন হবে।
#চলবে।
( শুরু করেছিলাম শুভ্রা-সাদাফ দিয়ে। এখন দেখি সবাই নাদিম আর কুবরার জন্যই পুরা ফ্যান। যাই হোক আজকাল একটু বাড়ির কাজে খুব বিজি তাই লেইট হচ্ছে। আর ঠিকঠাক মাথায় আইডিয়া ও আসছে না। নিজের যতোদূর সম্ভব চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কিরেছি। হ্যাপি রিডিং ???)