#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ২৮
পূব আকাশে চকচকে ঝিমিয়ে পড়া টকটকে সোনালী রোদ তরতাজা হয়ে আস্তে আস্তে জেগে উঠছে। চারদিকে কিচিরমিচির শব্দে পাখির আনাগোনা। ব্যস্ত নগরীতে সকলে নিজ নিজ কাজে যখন ব্যস্ত তখন মনের মধ্যে প্রচুর উল্লাস,আবেগ আর উৎসাহে আনন্দে ভরপুর চৌধুরী পরিবার।
উত্তেজনায় অনেকে তো রাতে ঘুমাতেই পারে নি। বলতে গেলে তাদের ঘুম আসে নি। বিশেষ করে সাদাফের মা আর শুভ্রার মা তো কাল সারা রাত ই চোখের পাতা এক করেনি খুশিতে।
সকাল হতে না হতেই বাড়ির ছোট ছোট বাচ্চারা “”আজকে বিয়ে, আজকে বিয়ে “” বলে বলে সারা ঘরময় ছোটাছুটি করছে। একটু মাঝবয়েসী কিশোরীদের মধ্যে সাজগুজের হুল্লোড়। সকালের নাস্তা সেড়ে মোটামুটি সকলেই নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
আজ ইলিয়ানা নিজে থেকে এসে সকলের সাথে হাসি মুখে কথা বলছে।ইলিয়ানার এই নরম স্বরে ব্যবহার, পোশাক আশাকের পরিবর্তন, নম্র আচরণ সকলেকে তাক লাগানো অবাক করে। তবে সকলেই খুব খুশি।
ইলিয়ানা নিজেও আজ বুঝতে পারছে যে সে এতোদিন কোন জগতে ছিলো। যেখানে এর আগে সকলে তার কাছ থেকে দূরে দূরে থাকতো, আজ সকলেই কতো সুন্দর হাসিমুখে কথা বলছে। সকলের সাতগে হাসিখুশি থাকলেই তো মনের মধ্যে আসল সুখ জেগে উঠে।
সাড়ে এগারোট-বারোটার দিকে শুভ্রাদের সাজানোর জন্য পার্লারের মেয়েরা চলে আসে।শুভ্রা আজও ইলিয়ানাকে ডাকতে গেলে ইলিয়ানা সাজতে নারাজ।
শুভ্রাঃ না না আপু আমি কোনো কথা শুনবো না। কালও তুমি এমন বলে আর যাও নি। আজও না যাওয়ার প্লেন করছো না?
ইলিয়ানাঃ না না। আমি আজ সত্যিই যাবো। তবে বোরখা পরবো তো আমি।
শুভ্রা অবাক হয়ে ইলিয়ানার দিকে তাকিয়ে আছে। দিন দিন মেয়েটার একেক কথায় কথার কথা শুধু অবাক হচ্ছে আর টাস্কি খাচ্ছে। একটা মানুষ মন থেকে কতটা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলে এতটা পালটে যেতে পারে।
ইলিয়ানাঃ অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আজই হয়তো প্রথম আমি বোরখা পড়বো। আর এই ভালো কাজটা না হয় তোমার বিয়েতে দিয়েই শুরু করি? আর তুমি তো কনে তাই আজ বোরখা পড়তে পারবে না। তুমি সাজো বুঝছো। আমি সাজবো না। এখন না এসব সাজগুজের ইচ্ছে পুরাই চলে গেছে। তবে আজ যখন আমাকে পরিবারের করার সবচেয়ে সঠিক মানুষটার এতো বড় একটা দিন আমি কি তার কথা ফেলতে পারি? আমি নাহয় নিজে নিজে সাজবো। সাজ তো আমিও কম পারি না। তুমি বরং সেজে নাও।
শুভ্রাও ইলিয়ানাকে আর জোর করলো না। তারপর এসে কুবরা আর কয়েকজন কাজিন মিলে সাজতে বসে গেলো।
২ টার দিকে শুভ্রার সাজ কম্পলিট হলো। তার কিছুক্ষন আগের কুবরা সাজ কম্পলিট হয়ে গিয়েছিলো।সাজার পর রুম থেকে বের হতেই সামনে পড়ে নাদিম।
রুপালি রঙের শেরওয়ানি, হাতে ব্রান্ডেট ঘড়ি, কানে ফোন, স্পাইক করা চুল, আর কুবরার দিকে তাক করে অবাক করা দুটু বাঘা চোখ।
নাদিম বিয়ের মেনেজমেন্টের ব্যাপারে ফোনে কথা বলছিলো। পাশ কেটে যেতেই মেকাপ রুমের দরজায় এক হুর পরীকে দেখে চোখ আটকে চলে যায় অন্য এক দুনিয়ায়। কাল মেহেদী সাজে এক রুপ আজ এক রুপ।
কুবরা নাদিমের চুজ করে দেওয়া লেহেঙ্গাটাই পড়েছে। সাথে ম্যাচিং হালকা সাজ আর মানসম্মত চুলের ডিজাইন। ব্যাস কতোটুকু তেই তাকে বাস্তবত পরীর তুলনায় কোনো অংশে কম লাগছে না। দুজন দুজনের রুপের মায়ায় মুগ্ধ আবেশে চেয়ে আছে এক নয়নে।
হঠাৎ শুভ্রার মা ফোনে কথা বলতে বলতেই এদিকেটাই আসায় দুজনেরই ধ্যান ভাঙে।
শুভ্রার মাঃ হ্যা আপা ওই ৬ নাম্বার রোড দিয়ে ঢুকে কাউকে চৌধুরী ম্যানশন কোথায় জিজ্ঞেস করলেই বলে দিবে। আর বিয়ের সাজ তো ৬ নাম্বার রোডের শুরু থেকেই। এগুলো ড্রাইভার কে বলুন ফলো করে যেন চলে আসে।……. আচ্ছা….. ।
কুবরা ভ্রু কুচকে মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ঢাকা শহরে তো তাদের চেনা কেউ নেই। যারা আছে তারা তো সাদাফ দের বাড়ি চেনে। তাহলে কাকে আসার কথা বলছে??
কুবরাঃ আম্মু কার সাথে কথা বলছো বলোতো?? কে আসছে?
শুভ্রার মা ঃ উমম কে আসছে? আচ্ছা গেস করতো কে আসছে?
কুবরাঃ এখানে তো আমাদের পরিচিত কেউ নেই। আর যারা আছে তারা তো এই বাড়ি চিনে। ও আম্মু বলো না কে আসছে..
শুভ্রার মাঃ তা হয় ভাব তুই। আমার আপাতত অনেক কাজ। আর আসলেই না হয় দেখবি কে আসছে?
কিছুক্ষন পর বাড়ির কলিংবেল বাজায় কুবরা গিয়ে দরজা খুলে “ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়া” বলে চিতকার দিয়ে উঠতে বাড়ির উপস্থিত সকলেই স্থগিত হয়ে গেল।
কুবরাঃ ভাইয়া এটা তুমি সত্যিই!! মানে স্বপ্ন দেখছি না তো?
পেছন দিয়ে একজন মহিলা বলে উঠে “শুধু ভায়াকে দেখলি? আমায় বুঝি চোখে পড়ে না?? ”
কুবরাঃ আরে…৷ মিনু আন্টিইইইইই আসসালামু আলাইকুম। আল্লাহ… আমি সত্যিই দেখছিতো!
পেছন দিয়ে ততক্ষণে শুভ্রার মা চলে আসে।
শুভ্রার মাঃ আসসালামু আলাইকুম আপা। আসতে সমস্যা হয় নি তো?
মিনু আন্টিঃ না না আপা। পুরো রাস্তা যে সুন্দর করে ডেকুরেশন করা হয়েছে দেখেই বাড়ি চিনে ফেলেছি।
শুভ্রার মাঃ ভেতরে আসুন। ভায়া, ভাবি দেখো কে এসেছে৷ পারভেজ আসো। ইতস্তত বোধ করার কিছুই নেই। আমাদের আগের বাড়িতে যেমন কমফোর্ট ফিল করতে, এখানেও যেমন খুশি তেমন পারবে। বলতে গেলে এটা আমার আরেকটা বাড়ি।
মিনু আন্টিঃ কি রে কুবরা? সেই শুভ্রার খবর না পেয়ে টাউনে চলে গেলি সেখান থেকে তো সোজা ঢাকা চলে এলি। আর চলে এলি তো এলি আমাদের তো পুরাই ভুলে গেলি। একটা খবর ও তো নিলি না এই বুড়ি আন্টির।
কুবরাঃ সরিইইইই মিনু আন্টি। আসলে নতুন জায়গায় এসে বেশি এক্সাইটেড ছিলাম না আমার মাথায় তো এতো কিছু আসেই নি। এখন চলে এসেছো। আর ছাড়বো না তোমায়। আর ভাইয়া তুমি কবে এসেছো?
পারভেজঃ এই তো কালই ব্যাক করলাম। আমাদের শুভির বিয়ে বলে কথা! শুভি কোথায় রে? কতোটা স্বার্থপর হয়ে গেলিরে তোরা। শুধু আন্টির ই আমাদের মনে ছিলো। তোরা তো নতুন মানুষ আর নতুন জায়গা পেয়ে আমাদের ভুলেই গেলিরে।
কুবরাঃ মোটেও না। বরং আমিই আম্মুকে তোমাদের কথা গতো সপ্তাহে বলেছিলাম। ভেবেছিলাম আন্টি এতো দূরে একা কি করে আসবে। বাট তোমায় তো এক্সপেক্ট ই করি নি। কতো দিন পর তুমি দেশে এসেছো। বাই দ্যা ওয়ে ভাইয়া, তুমি কিন্তু খুব হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছ।( দাত চেপে হেসে)
পারভেজঃ এই শুরু হয়ে গেলো তো তোর? তুমি কি কোনো দিনও বদলাবি না? তুই জানিস আমি এসব কথা পছন্দ করি না তবু এসব বলিস। থাক বাদ্দে তোকে কিন্ত খুব মিষ্টি দেখাচ্ছে। তবে এখনো আগের মতো পিচ্চি থেকে গেলি ( কুবরার মাথায় হাত দিয়ে)
এদিকে নাদিম শুরু থেকে বেদমের মতো দাঁড়িয়ে কুবরা আর তার মায়ের কান্ডকাহিনি দেখছে।
আরে…. এরা কারা! আমি তো জানতাম কুবরাদের কক্সবাজারে কোনো আত্মীয় ই ছিলো না । আর এই ভায়াটাই বা কে৷ আর কোবরার ও এতো কথা কিসের। এক ঝামেলা পুহাতে না পুহাতেই আরেকজন হাজির ?। ধুর আমার কপালটাই এমন কেন সবসময়। ( মনে মনে বলতে থাকে নাদিম)
#চলবে।
(আচ্ছা এই পারভেজ কে হতে পারে বলুন তো? দেখি কার ধারনা কেমন! আর পর্ব বড় করে দিতে না পারার জন্য দুঃখীত অনেক। আমি খুব অসুস্থ। লিখতে গেলে মাথা ব্যাথা আর চোখ টানে। সুস্থ হলে ইনশাআল্লাহ বড় করে দিবো। ???)