#অচেনা_তুমি
#লেখিকাঃমহিমা_হাছনাত_মাহি
#পর্বঃ২৭
রাত প্রায় ৪/৪ঃ৩০ টার দিকে সকলে বাড়ি ফিরলো। সবাই নেচে, খেয়ে, এতোক্ষন রাতে অনেক টায়ার্ড তাই গাড়ি থামা মাত্র সকলেই যে যার যার মতো আগে আগে ঘুমাতে চলে যায়।
নাদিম সবাই ঠিক মতো নেমেছে কিনা চেক করতে গিয়ে দেখে কুবরা গাড়িতে বসে আছে।
পেছন থেকে কয়েক বার ডাকার পর সাড়া না দিলে সামনে গিয়ে দেখে কুবরা বসে বসেই গাড়িতে ঘুমুচ্ছে।
ইশশশ বেচারি হয়তো একদম ক্লান্ত হয়ে গিয়েছে। মিস..কু..
নাদিম ডাকতে গিয়েও কুবরার ক্লান্ত মুখটা দেখে থেমে গেলো। আসার সময় সাজটা যতোটা উজ্জ্বল লাগছিলো এখন সেটা প্রায় মিইয়ে গেছে। চোখের কাজল আর লিপ্সটিক লেপ্টে আছে। তবুও কুবরাকে দেখতে কোনো দিক দিয়ে খারাপ দেখাচ্ছে না। ঘুমন্ত চেহারাটায় আরো মায়াময়ী বেশি মনে হচ্ছে। তাই আর কষ্ট দিয়ে ডাকতে ইচ্ছে করলো না।
তারপর নাদিম আলতো করে কুবরাকে কোলে নিয়ে হাটা শুরু করে বাড়ির দিকে।
মুখের উপর গরম বাতাস অনুভব হতেই কাচা ঘুমটা ভেঙে যায় কুবরার। চোখ খোলার পর মনে হলো সে যেন শুন্যে ভাসছে। এবং আরেকটু ভালো করেই বুঝতে গেলেই দেখে নাদিম তাকে কোলে নিয়ে যাচ্ছে।
কুবরাঃ আয়ায়ায়া আল্লাহ আমি তো পড়ে যাবো। ও আল্লাহগো নামান আমাকে নামান। আল্লাহ পড়লে আমার আর কোকাকোলা ফিগারের কোমড় টাই থাকবে না ( নাদিমের পাঞ্জাবীর কলার খামচে ধরে)
এদিকে বাবাগো বাবাগো বলে নামার জন্য চেচাচ্ছে আবার নাদিমকেও শক্ত করে ধরে রেখেছে।
নাদিমঃ এভাবে চেপে ধরে থাকলে আমি নামাবো কি করে হ্যা?
এরপর কুবরা একটু ঢিল করে ছাড়ে তবুও ধরে আছে। সেই কবে ছোট বেলায় কোলে উঠেছিলো। এরপর তো কোনোদিন ও কারো কোলেই উঠেই নি। আচমকা এভাবে নিজেকে নাদিমের কোলে আবিষ্কার করায় ঘাবড়ে যায় কুবরা।
নাদিমঃ উফফফ বাবাগো কি ভারী……. নিজের কোকাকোলা ফিগার বজায় রাখতে গিয়ে তো আমার কোমড় টাই ভেঙে ফেলেছেন। এতো খান কেন আপনি? কম খেতে পারেন না?
নাদিমের কথায় কুবরার লজ্জায় ইচ্ছে করছে মাথার চুল সব ছিড়ে ফেলতে। বড় হওয়ার পর এর আগে তো কেউ তাকে কোলে নেয় নি। নিশ্চয় তাকে নিতে অনেক ভারী লাগছিলো। তবুও নিজের লজ্জা টজ্জা বাদ দিয়ে আগে নাদিমের সাথে জিততে হবে।
কুবরাঃতো আমি কি বলেছি নাকি আমাকে কোলে নিতে? সেধে কেন নিতে গিয়েছিলেন? আর আমি মোটেও অতো মোটা নয়। গতো বছরই তো মাপলাম ৪৫ কেজি। হয়তো এবছর হলেও হবো ৪৮-৫০ কেজি। সামান্য এই টুকু ওওজন বইতে না পারলে আপনি কিসের পুরুষ মানুষ?? আর লাভ আছে কি এই তক্তাপুক্ত বডি রাখার?
নাদিমঃ কিইই এতো বড় হওয়ার পরেও তোমার ওজন মাত্র ৪৮/৫০কেজি?? তুমি যে এতো খাও তাহলে যায় কোথায়?
কুবরাঃ এক মিনিট এখন আবার উল্টো সুর গাইছেন কেন? বুঝলেন না ব্যাপারটা (চোখ ছোট করে)
নাদিমঃ আরে তুমিও না…. তোমাকে বললাম আর বিশ্বাস করে নিলে? এই দেখো তোমায় তো আমি এক হাতেই কোলে নিতে পারবো। ( এই বলে ডান হাতের বাহুতে নিমিষেই কুবরাকে কোলে নিয়ে ফেলে সে)
কুবরাঃ আয় আয় আআ….. আল্লাহ আল্লাহ আমি পড়ে যাবো ওয়াল্লাহ আমার ভয় লাগছে। প্লিজ নামান আমাকে। হ্যা হ্যা বুঝেছি আপনি অনেক শক্তিমান, বলবান, এবার নামান। ( নাদিমের গলা, কলার জোরে চেপে ধরে)
নাদিমঃ না নামাবো না। এটা তোমার শাস্তি।
কুবরাঃ এএএএএ মিস্টার পচা বাদাম সরি। আর বলবো না কোনো দিন। প্লিজ নামান।
নাদিমঃ উহু এটা সেটার জন্য নই। আগে বলো ওই আবিরের সাথে এতো কথা কিসের? এতো হেসে হেসে কি কথা বলোতো?
কুবরাঃ এহ??? এখানে উনার কথা এলো কোথা থেকে? আর কঠা তো আমি সবার সাথেই বলি। আপনি উনাকেই দেখেন নাকি শুধু?
নাদিমঃ হ্যা। ও একটু বেশিই… মনে হয়। নেক্সট টাইম থেকে যেন তোমাকে দূরে দূরে দেখি অর কাছ থেকে।
কুবরাঃ কেন কেন?? এতো জ্বলার কারণ কি? আমি আপনার কে? আর আপনি যদি এত্তো গুলো মেয়ের পেছনে ঘুর ঘুর করতে পারেন , আমি সামান্য কথা কেন বলতে পারবো না?
নাদিমঃ আচ্ছা তুমি কি কিছুই বুঝো না? আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝনা তুমি আমার কে হউ? কি চাই আমার? এতোদিনেও চিনোনি আমায়।
কুবরাঃ তাহলে নামান বুঝিয়ে দিই আমি। (নাদিমের কানের কাছে এসে আলতো ভাবে ঘাড় ধরে)
নাদিম তো কুবরার এমন ব্যবহারে মহামাতাল। আস্তে করে কুবরাকে নামাতেই একলাফে প্রায় অনেক দূরে চলে যায়।
কুবরাঃ কচু বুঝাবো। ( হাতের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে) ঘুম পেয়েছে অনেক কাল হবে না হয় বাকি হিসাব।( এই বলে দিলো দৌড়)
এই ফাজিল,,,,, আমাকে এভাবে ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে ছুটে গেলো? এর শাস্তি তো পেতেই হবে তোমাকে। ধরা তো তোমায় আমার কাছের দিতে হবে। ( এই বলে নিজে নিজেই হাসছে সে)
➡️➡️➡️➡️
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে দেখে ৫ টা বাজবে প্রায়। একেবারে ফজরের নামাজ পড়েই রেস্ট নিবে বলে বসে আছে শুভ্রা। কিছুক্ষন পর আজানের আওয়াজ শুনে ওযু করতে গেলে দেখে ইলিয়ানার ঘরের দরজা খানিকটা খোলা লাইট জ্বলানো।
এতো রাতে ইলিয়ানার ঘরের আলো জ্বালানো দেখে কৌতুহল বশত চেক করতে গিয়ে দেখে ইলিয়ানা ওযু করে এসে জায়নামাজ বিছাচ্ছে। শুভ্রা নিজের চোক্ষে বিশ্বাস করতে পারছে না যে এতো তাড়াতাড়ি ইলিয়ানা এভাবে বদলে গিয়েছে। যে মেয়ে সারাদিন শর্ট ড্রেস পড়ে নিজেকে সবসময় এট্রাক্টিভ দেখানোর জন্য চেষ্টা করতো সে মেয়ে তো এখন কারো সামনে যায় ই না আরো ফুলহাতা সেলওয়ার পড়ে।
ইলিয়ানার দরজার দিকে চোখ পড়তেই দেখে শুভ্রা দাঁড়িয়ে আছে।
ইলিয়ানাঃ একি শুভ্রা দাঁড়িয়ে আছো যে? ভেতরে এসো। ( মুচকি হেসে)
শুভ্রাঃ আপু তুমি ফজরের নামাজ পড়ছো?
ইলিয়ানাঃ এই কয়েকদিন আগে থেকে পড়া শুরু করলাম। আগে তো পড়তাম ই না। তুমিই তো বললে রবের কাছে সাফ মনে প্রার্থনা করলে, মাফ চাইলে তিনি সব ক্ষমা করে দেন। আমি না হয় সেই চেষ্টাই করছি।
আজ সকাল থেকে ইলিয়ানার প্রত্যেকটা কথায় শুভ্রা অবাক না হয়ে পারছে না। মানুষ এক ধাক্কায় কতোটা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে তা ইলিয়ানাকে না দেখলে বুঝাই যাবে না।
শুভ্রাঃ অনুষ্ঠানে এতোবার করে ডেকেছি সেই যাও নি তো? এখনো আমার উপরই রুশে আছো।
ইলিয়ানাঃ না না আসলে মন চায়নি। আর সাদাফ ভায়া ও আমাকে দেখে তেমন একটা খুশি হবে না। আনন্দ টাই মাটি হয়ে যেতো। এমনিতেই আমাকে নিয়ে সে যতো বিরক্তি।
শুভ্রাঃ কোনো মাটি ফাটি কিচ্ছু হবে না। তুমি একমাত্র খালাতো বোন তার। ভুল তো মানুষ মাত্রই করে। একবার সবার সামনাসামনি হও দেখবে তোমার এই পরিবর্তন সকলেই হাসিমুখে মেনে নিবে। দেখবে সবাই কতো খুশি হবে। এখন চলো আজান তো অনেক আগে শেষ হয়ে গিয়েছে। নামাজ পড়ে নিই।
সাদাফ আর নাদিম ওযু করে হয়ে নামাজ পড়তে যাচ্ছিলো। জীবনের সবচেয়ে বিশেষ দিন আজ তার। আজকের দিনে কি ঘুমিয়ে থাকা চলে? শুভ্রা আসার পির থেকে বাড়ির সকলেই তার দেখার দেখা বদলাতে শুরু করে। সাদাফ ও তাই। আর সাদাফের দেখাদেখি নাদিমও।
দুজনে নামাজ শেষে রুমের দিকে যেতেই সাদাফের কানে শুভ্রার কন্ঠ ভেসে আসে। কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকে ইলিয়ানার ঘরের দিকে উকি দিতেই দেখে ইলিয়ানা আর শুভ্রা হেসে হেসে কথা বলছে। তাও আবার জায়নামাজে বসে বসে। সাদাফ চোখ বড় বড় করে চেয়ে আবার পেছনে শক্ত হয়ে ফিরে দাড়ায়।
“এ আমি ঠিক দেখছি তো!! শুভি আর ইলু একসাথে। আর ইলু নামাজ পড়ছে! এও সম্ভব? ব্যাপারটা কি সত্যিই নাকি কাকতালীয়? (সাদাফ মনে মনে ভাবতে থাকে)
কিছুক্ষণ পর শুভ্রা বেরিয়ে আসে ইলিয়ানার রুম থেকে। দরজার সামনে সাদাফকে দেখতে পেয়ে পেছন থেকে বলে উঠে “” একি আপনি এখানে? “”
সাদাফঃ শুভি ইলু নামাজ পড়ছিলো? লাইক সিরিয়াসলি? তাও তোমার সাথে? ( পেছন ফিরে)
শুভ্রাঃ জানেন তো আজ সকাল যখন আপুকে ডাকতে এসেছিলাম তখন……….. [সকালে মেহেন্দির আগে যা যা হয়েছিলো সব খুলে বলে শুভ্রা ]
সাদাফঃ শুভ্রা আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না ইলু এভাবে পালটে যাবে। আর তাই জন্যই কি এতো দিন নিজেকে ঘরবন্ধি করে রাখতো সে?
শুভ্রাঃ হ্যা। জানেন নিজেকে নিজে বড্ড চেপে রাখতে চাচ্ছে। নিজের কষ্টের কথা মন খুলে কাউকে বলতেও পারছে না আর লজ্জায় মুখ ও দেখাতে চাইছে না। তাই আজ তিনি মেহেন্দীতে আসে নি। প্রথম প্রথম তো আমার বিশ্বাস ই হয় নি। কিন্তু আমি উনার চোখে স্পষ্ট সততা দেখেছি। দেখেছি অনুতপ্ততা। আমি বলি কি উনার উপির আর রাগ করে থাকবেন না। ছোট বোন ই তো হয় আপনার।
সাদাফঃ চলো তো।
” ইলু আছিস? ”
শুভ্রাঃ আপু দেখো উনি কথা বলতে চাইছেন তোমার সাথে।
ইলিয়ানা দরজা থেকে একটু দূরে ছিলো। সাদাফের কন্ঠ শুনি গুটিসুটি মেরে এক কোনায় দাড়িয়ে শুভ্রাকে আসতে বলে।
সাদাফঃ অনুষ্ঠানে যাস নি কেন?
ইলিয়ানা কিছু না বলে চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।
সাদাফঃ দেখ যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। ভুল মানুষের হয়। আজ ভুল হয়েছিল বলে দেখ তুই ভালো পথে ফিরতে পেরেছিস। এবং ভবিষ্যতেও আরো ভালো হবি। তাই বলে নিজেকে গুটিয়ে রাখতে হবে তা তো না। কাল যেন তোকে বিয়েতে মাস্ট দেখি। এসব আজগুবি চিন্তা মাথায় রাখিস না। সবাই আমার কাছে যেমন তুই ও তেমন। বুঝছিস?
ইলিয়ানা শুধু হ্যা বোধক মাথা নাড়ায়।
সাদাফ তারপর চলে যায়। শুভ্রা ও ইলিয়ানার সাথে বিয়েতে যাওয়ার টুকিটাকি কথা বলে চলে যায়।
#চলবে।
(করোনার টিকা দেওয়াতে আমার সারাদিন অনেক জ্বর,সর্দি,২ বার বমি ও হয়েছে। শরীর খুব দূর্বল তাই আর বড় করে লিখতে পারি নি। নেক্সট টাইম সুস্থ থাকলে ইইনশাল্লাহ বড় করে দেওয়ার চেষ্টা করবো। দোয়া করবেন আমার জন্য ???)