অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
বোনাস_পার্ট
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রিশা অনি আর মিথিলার কাছে গিয়ে বসে পড়ে। রিশা নিজেকে স্বাভাবিক রেখে সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলে। রাফিও কিছুক্ষণ পর এসে রিশাদের পাশের টেবিলে বসে পড়ে। রিশা সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। আর রাফি নিজের মতোই এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে রিশার দিকে।ব্যাপারটা অনির নজর এড়ায় না। রাফিকে দেখে সে চিনতে পারে।
রাফির এভাবে রিশার দিকে তাকিয়ে থাকায় অনির কিছুটা সন্দেহ হয়।তবে সে এখন রিশাকে কিছু বলে না এবিষয়ে। লাঞ্চ করা শেষ হলে অনি বিল পে করলে তারা সবাই বেরিয়ে যায়।
বাড়ি ফিরতে ফিরতে প্রায় সাড়ে চারটা বেজে যায়। ক্লান্ত অনি আসরের সালাত আদায় করে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই তন্দ্রাভাব চলে আসে।
কপালে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে অনি ঘুম থেকে জাগা পায়। চোখ মেলে দেখতে পায় রিশাদের হাস্যজ্জ্বল মুখ।
–কি হয়েছে?এই অসময়ে ঘুমাচ্ছিলে যে?
–তেমন কিছু না।বাইরে থেকে এসে একটু ক্লান্ত লাগছিল তাই আরকি। কখন এসেছো তুমি?
–এইতো এলাম মাত্র। যাও অযু করে এসো আজান দিয়ে দিয়েছে।
অনি বিছানা থেকে নেমে অযু করে এসে নামাজ পরে নেয়। আর রিশাদ মসজিদের দিকে যায়। নামাজ পরে কিছুক্ষণ বাইরের দিকে হাঁটাহাঁটি করে রিশাদ বাসায় ফিরে আসে। অনি রুমে বসে ফোন টিপছিল। রিশাদ ফিরে এলে অনি আজকে কি কি করেছে একে একে সব রিশাদকে বলে। অনির উৎফুল্ল চেহারা দেখে রিশাদ মনে মনে খুশি হয়।
অনি রিশাদকে সবটা জানালেও রাফির ব্যাপারটা সে জানায় না।কেননা অনি ভাবে তার দেখা ভুলও হতে পারে।
রিশাদ অনির হাস্যজ্জ্বল মুখটা দেখে শান্তি অনুভব করে। এভাবেই হাসিখুশি রাখতে চায় রিশাদ অনিকে।
রিশাদ অনি তাদের নিজেদের সুখী জীবনে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। অনি নিজেকে সামলে নিয়ে সবার সাথে হাসিখুশিই থাকে। অদ্রির কথাগুলো এখন তাকে আর প্রভাবিত করেনা। তবে বেশ অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটছে। মাঝে মাঝেই অনামিকা ফোন দিয়ে অনির খোঁজখবর নেন।
প্রথম দিন অনামিকার কল পেয়ে অনি বেশ অবাক হয়ে গিয়েছিল। এখন সে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। দিনের মধ্যে একবার হলেও তার অনামিকার সাথে কথা হয়। এতে জাহানারা বেগম বেশ খুশি হন। তার অনুপস্থিতিতে হয়তো অনামিকা অনিকে সামলাবেন এই ভেবে কিছুটা নিশ্চিন্ত হন। তারও বয়স কম হচ্ছে না। আর কতদিনই বা বাঁচবেন তিনি। তবে তার সন্তান ও নাতনিদের খুশি থাকাটা দেখতে পারলে হয়তো শান্তিতে মরতে পারবেন।
প্রায় একমাস কেটে গেছে। অনি রিশাদের জীবনে সব কিছু স্বাভাবিক ভাবেই চলছে।অনি রিশাদ তাদের খুনসুটিময় ভালোবাসায় সুখের সাগরে ভাসছে। অন্যদিকে মিথিলা ইভানের সম্পর্কটা সবার সামনে জানাজানি হয়ে গেছে।
সাবরিনা বেগম আগে থেকেই সন্দেহ করতেন তবে নিশ্চিত ছিলেন না। মেয়ের খুশিতেই তার খুশি।রিশাদের সন্দেহটাই ঠিক ছিল। ইভান ছেলে হিসেবে খারাপ না। তাদের পরিবারও বেশ ভালো। তাই তাদের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে দুই পরিবারের সবাই।
মিথিলা অবশ্য ভাবেনি এত সহজে সবকিছু সহজ হয়ে যাবে। সে ভাবেনি তাকে ইভানের পরিবারের সবাই এত সহজে আপন করে নেবে। একটু ভয়ে ভয়েই ছিল। তবে ইভানের মা বাবার অমায়িক ব্যবহার তার সকল ভয়কে দূর করে দেয়।
বেশ ধুমধাম করে পালিত হচ্ছে মিথিলা আর রিশাদের আংটি বদল অনুষ্ঠান। আলোয় আলোকিত হয়ে উঠেছে রিশাদদের বাড়ি। রিশাদ আর রায়হান সাহেব মিলে সবটা দেখছেন। রিশাদ আয়োজনের কোন কমতি রাখে নি। মিথিলা যে এবাড়ির মেয়ে নয় তা বলার কোন সুযোগ নেই।
সন্ধ্যায় মেহমানরা সবাই আসতে শুরু করেছে। অনি আলমারি খুলে কাপড়গুলো সব উল্টেপাল্টে দেখছে। কোন ড্রেসটা পড়বে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।
তখনই রিশাদের আগমন ঘটে রুমে। সাথে একটা শপিং ব্যাগ। রিশাদ শপিং ব্যাগটা অনির হাতে ধরিয়ে দেয়।
অনি ব্যাগ খুলে দেঝতে পায় পার্পল কালারের একটা হালকা কাজ করা গাউন। সাথে ম্যাচিং করা পার্পল কালার পাঞ্জাবি। জামাটা বেশ পছন্দ হয় অনির।
–এটা কখন কিনলে?(অনি)
–অনলাইনে অর্ডার দিয়েছিলাম। নাও রেডি হয়ে নাও। রিশাদ অনির হাত থেকে পাঞ্জাবিটা নিয়ে চেঞ্জ করে হাত দিয়ে চুলগুলো ঠিক করে নেয়। তাতেই বেশ আকর্ষণীয় লাগছে রিশাদকে।
অনিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিশাদ শয়তানি হাসি দিয়ে বলে; এভাবে তাকিয়ে থেকে নিজেই নিজের বরের উপর নজর দিচ্ছো কিন্তু।
–আমার বরের উপর আমি নজর দিয়েছি তাতে কারো সমস্যা থাকলে আমার কিছু করার নেই। বেশ ভাব নিয়ে কথাগুলো বলে অনি।
-‘তাই বুঝি। এরপর তোমার বর যদি নজর দিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু করে তাহলে আমাকে দোষ দিও না কিন্তু আবার। বলেই রিশাদ অনির দিকে এগিয়ে যায়।
দুহাত দিয়ে অনিকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিয়ে কপালে ঠোঁট বুলিয়ে দিতেই লজ্জায় অনির গাল দুটো লাল হয়ে যায়। রিশাদ তার লজ্জাবতী গালে ঠোঁট ছুইয়ে দেয়।
আচমকা রিশা জোরে জোরে অনিকে ডাকতে ডাকতে রুমে চলে আসে। অনি রিশাদ কিছু বুঝে ওঠার আগেই রিশা চলে আসে। রিশা রুমে এসে রিশাদ অনিকে এভাবে দেখে লজ্জায় পেয়ে চলে যায়।
রিশাদ কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলে; এই মেয়েটা সব সময় রং টাইমে এন্ট্রি নেয়। হতাশ হয় রিশাদ।
–হয়েছে বাবা এখন যাও।সবাই রেডি হয়েছে শুধু আমি বাকি আছি।
–আমি রেডি করিয়ে দেই?হাসি দিয়ে বলে রিশাদ
অনি চোখ বড় বড় করে বলে;কোন দরকার নাই এত বড় উপকার করার।
রায়হান সাহেবের রিশাদকে জোর করে রুম থেকে বের করে দেয় অনি। রিশাদ রায়হান সাহেবের সাথে হাতে হাতে কাজগুলো এগিয়ে দেয়।
প্রায় সাড়ে সাতটার দিকে ইভান ও তার পুরো পরিবার উপস্থিত হয়। রিশা আর অনি সবাইকে আপ্যায়ন করে সাথে শায়লা বেগম আর সাবরিনা। সাবরিনা আজ খুশি হলেও কিছুদিন পরেই মেয়ে যে একবারে তার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যাবে ভাবতেই তার মনটা ডুকরে ওঠে।
অনি আর রিশার আতিথেয়তায় ইভানের পরিবার যথেষ্ট সন্তুষ্ট হয়। ইভানের পরিবারের সবাই খুব ভালো খুব সহজেই দুই পরিবার একে অপরের সাথে মিশে গেছে।
ইভানের ছোট ভাই ইহান। মিথিলা রিশার সমবয়সী। বার বার সে আসছে রিশার সাথে ভাব জমাতে। রিশা কিছুতেই পাত্তা দিচ্ছে না। রিশা আর ইহানকে দেখে হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে অনি।
হাসতে হাসতে সে সামনের দিকে যাচ্ছিল। কিছু বুঝে ওঠার আগেই কোথা থেকে যেন রিশাদ এসে অনির হাত ধরে টেনে পাশের রুমে নিয়ে দরজা লক করে দেয়।
–কি হলো এটা?আমাকে এখানে আনলে কেন?বাইরে সবাই খুঁজবে তো।(অনি)
–কি আবার হলো?আমার বউকে আমি যেখানে খুশি নিয়ে যাবো তাতে কারো সমস্যা থাকলে আমার কিছু করার নেই। (রিশাদ)
–ওহ আচ্ছা। আমার কথা আমাকেই ফেরত দেয়া হচ্ছে তাইনা। (অনি)
–কই না তো।(রিশাদ)
–এভাবে তাকিয়েই থাকবা নাকি যেতে দিবা বলো তো। এতক্ষণ পর আসছে ভালোবাসা দেখাইতে তাইনা। আমি যে এত সুন্দর করে সাজলাম সেটা কি কারো খেয়াল আছে?(অনি)
–কারো খেয়াল থাকা লাগবে না শুধু আমার খেয়াল থাকলেই চলবে। খুব সুন্দর লাগছে তোমাকে।সেটা বলার জন্যই তো নিয়ে এলাম। (রিশাদ)
রিশাদের কথায় অনি মনে মনে খুশি হলেও মুখে প্রকাশ করেনা তা ।
–হয়েছে থাক। আর প্রশংসা করতে হবে না। যান আপনার কাজে যান। এক্ষুণি কেউ ডাকবে হয়তো। (অনি)
–উঁহু না। আগে তোমাকে ভালো করে দেখি তারপর। (রিশাদ)
অনির এবার লজ্জায় রাঙা হয়ে যায়। লাল হক্যে যাওয়া গাল দুটো আলতো করে টেনে দিয়ে রিশাদ টুপ করে চুমু খায়। অনিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই দরজা খুলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
অনি মুচকি হাসে। রিশাদের এই পাগলামিগুলোর জন্য যেন সে আরো বেশি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছে রিশাদের প্রতি। রিশাদের ভালোবাসায় আসক্ত হয়ে ক্রমাগত সে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। রিশাদের ভালোবাসাই যথেষ্ট তার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জোগানোর জন্য। এই মানুষটার জন্য স্ব দুনিয়ার সব কষ্ট হাসি মুখে সহ্য করতে পারে।সব সুখ বিসর্জন দিয়ে হাসিমুখে বাঁচতে পারবে।
রিসশাদের সাথে প্রতিটা মূহুর্তই অনির কাছে শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা লাভ করে।বার বার রিশাদের নিত্য নতুন পাগলামিগুলোর প্রেমে পড়ে যায়। নতুন নতুন ভালোবাসার অনুভূতির উদ্ভব ঘটায় অনির মাঝে। এই মানুষটাকে ছাড়া যে তার জীবন কতটা অচল হয়ে পড়বে তা অভাবনীয়। তার সকল সুখ রিশাদের মাধ্যমেই পরিপূর্ণতা লাভ করেছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই অনি নিজেকে স্বাভাবিক করে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
অনি রুম থেকে বেরোতেই শায়লা বেগমের মুখোমুখি হয়।শায়লা বেগম এতক্ষণ ধরে তাকেই খুঁজছিলেন। অনির কাছে তিনি ইভানের জন্য কেনা আংটিটা রাখতে দিয়েছিলেন। অনি রুম থেকে আংটিটা এনে শায়লা বেগমের হাতে ধরিয়ে দেন। শায়লা বেগম অনিকে সাথে করে নিচে চলে যান।
কিছুক্ষণের মাঝেই আংটি বদল শুরু হয়। মিথিলা আর ইভানকে পাশাপাশি বসানো হয়। মিথিলাকে একটা গোল্ডেন কালারের লেহেঙ্গা পরানো হয়েছে। আর ইভানকেও সাথে ম্যাচিং করে ড্রেস পরানো হয়েছে। অনি আর রিশা মিলেই এগুলো সব প্ল্যান করে শপিং করে।
মিথিলাকে বেশ সুন্দর লাগছে। মিথিলার দিকে তাকিয়ে ইভানের চোখ আটকে যায়।মিথিলাকে পুরোপুরি পর্যবেক্ষণ করে ইভান মিথিলার চোখের দিকে তাকায়। এই চোখের দিকে তাকিয়েই তো সে মিথিলার প্রেমে পড়েছিল। আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সুন্দর চোখের অধিকারিণীকে নিজের করে পাবার প্রথম পর্যায় সম্পন্ন হতে চলেছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে এই দিনটার জন্যেই তারা প্রার্থনা করেছে এতদিন ধরে। আজ স্বপ্নপূরণের খুব কাছাকাছি চলে এসেছে তারা। এ অব্যক্ত অনুভূতি অবর্ণনীয়।
মিথিলা আর ইভান একে অপরকে আংটি পরিয়ে দেয়।এক নতুন জীবনের দিকে ধাবিত হওয়ার জন্য তারা আজ আনুষ্ঠানিকভেব চুক্তিবদ্ধ হলো। নিজেরা অনেক আগেই একে অপরকে একসাথে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আজ পারিবারিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সেই প্রতিশ্রুতি পূর্ণতা পেল। আজ তাদের জীবনের একটি বিশেষ দিন। এই দিনটা তাদের স্মৃতির পাতায় আমৃত্যু স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আংটি বদল অনুষ্ঠান শেষে বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। ইভানের হসপিটাল থেকে ছুটি না পাওয়ায় পরের মাসে বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়। এই সম্পর্কে দুই পরিবারের সবাই খুব খুশি।মিথিলা আর ইভানের খুশিটাই পরিবারের সবার কাছে মুখ্য ছিল তাই তাদের বিয়েতে অমত করার কোন প্রশ্নই আসে না।
একসাথে ডিনার করে সবাই মিলে। মিথিলা ইভানকে পাশাপাশি বসিয়ে অনি আর রিশা তাদেরকে খাবার সার্ভ করে। অন্যান্য ওয়েটাররা এসে বাকি সবাইকে খাবার সার্ভ করে। রিশাদ সব পর্যবেক্ষণ করছে।
রিশাদ আজ অনিকে দেখে খুব অবাক হচ্ছে। প্রকৃত অর্থেই আজ তাকে এই বাড়ির বউ মনে হচ্ছে। একদম পাক্কা গৃহিণী। সব দায়িত্ব একা হাতে সামলাচ্ছে। কারো কোন ভুল ধরার সুযোগ নেই।সব দিকেই নজর রয়েছে তার। নিমিষেই যেন সে এক দক্ষ গৃহিণী হয়ে উঠেছে। শায়লা বেগম অনিকে সব দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিন্ত আছেন। অবশ্য রিশাও আজ বেশ সাহায্য করছে অনিকে। ছোট বোনটাও যেন হঠাৎ করে বড় হয়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে।
দূর থেকে দাঁড়িয়ে রিশাদ সবাইকে দেখছে। তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনকারী নারীরা সবাই আজ খুব খুশি। অনি, রিশা, মিথিলা,শায়লা বেগম,সাবরিনা প্রত্যেককে আজ কতটা খুশি মনে হচ্ছে।তাদের চোখে মুখে উপচে পড়া সুখের পরশ অনুভব করতে পেরে রিশাদের বুকে প্রশান্তির হাওয়া বয়। এই খুশিটা যেন চিরকাল অটুট থাকে এই প্রার্থনা করে রিশাদ।
ইভানদের খাওয়া হয়ে গেলে তারা সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যায়। সবকিছু সামলে উপরে যেতে যেতে প্রায় এগারোটা বেজে যায়। অনি রুমে গিয়ে এসিটা অন করে সোফায় হেলান দিয়ে বসে পড়ে। আজ অনেক কাজ করেছে সে। ড্রেসটাও এখনো চেঞ্জ করা হয়নি। মাথাটাও প্রচন্ড ব্যথা করছে। এত কাজের মধ্যে সে খাওয়ারও সুযোগ পায়নি। সবাইকে খাইয়ে দিয়ে সে নিজের কথাই ভুলে গেছে। শায়লা বেগম তাকে কয়েকবার খাওয়ার কথা বললে কাজের জন্য সে ব্যাপারটা এড়িয়ে যায়। কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকায় সে প্রায় ভুলেই গিয়েছিল।
হালকা ক্ষুধা লেগেছে। তবে ক্ষুধার চেয়ে ক্লান্তির পরিমাণটা বেশি। ক্লান্তির কাছে ক্ষুধা অনুভূতি গুলো হেরে যাওয়ায় অনি অলসভাবে সোফায় হেলান দিয়ে বসে থাকে। মাথা ব্যথায় চোখ বুজে থাকে কপালে হাত দিয়ে।
অনি রুমে বসে রেস্ট নিচ্ছিল। একটু পরেই রিশাদ রুমে আসে। হাতে তার খাবারের প্লেট আর এক গ্লাস পানি। কারো উপস্থিতি টের পেয়ে অনি চোখ মেলে তাকাহ। রিশাদের দিকে তাকাতেই রিশাদের হাতে খাবেরে প্লেট দেখে মুচকি হাসে।
রিশাদ একটা চেয়ার টেনে অনির সামনে বসে পরে।না খেয়ে থাকার জন্য প্রথমে অনিকে এক দফা বকা দেয় রিশাদ। অনি কাচুমাচু হয়ে যায়। এরপর রিশাদ যত্ন করে অনিকে তুলে খাইয়ে দেয়। অনি বেশ তৃপ্তি করে খায়। অনির প্রতিটি বিষয়েই রিশাদের নজর আছে।
অনিকে খাইয়ে দিয়ে রিশাদ প্লেটটা নিচে রেখে আসে। এতক্ষণে অনি ড্রেসটা চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। মাথা ব্যথাটা এখনো কমেনি তার। রিশাদ রুমে এসে দেখতে পায় অনি বিছানায় শুয়ে আছে।
অনির দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখতে পায় তার চোখমুখ অস্বাভাবিক করে রেখেছে। বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। কপাল কুঁচকে গেছে।
রিশাদ লাইট অফ করে দিয়ে কিছু একটা ভেবে অনির পাশে বসে মাথাটা টিপে দেয়। অনি চোখ মেলে তাকিয়ে অন্ধকারে রিশাদের মুখটা দেখতে পায়না। কোন কথা না বলে সরে গিয়ে রিশাদের কোলে মাথা রাখে। রিশাদ মুচকি হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় আলতো করে।
কিছুক্ষণ পর অনি ঘুমিয়ে পড়লে রিশাদ অনিকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিয়ে শুইয়ে পড়ে। ক্লান্ত রিশাদের চোখে রাজ্যের ঘুম ভর করে। একে অপরের ভালোবাসায় সিক্ত অনি রিশাদ গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়।
চলবে……
আসসালামু আলাইকুম?
গল্পটা শেষ করে দিতে চাই তাড়াতাড়ি। যেহেতু এটা আমার প্রথম গল্প তাই এবিষয়ে আপনাদের মতামত জানতে চাচ্ছি।ধন্যবাদ?