#উত্তরণ
পর্ব_২৫
উজান সকালে ব্রেকফাস্ট করতে গিয়ে হিয়া কে কোথাও দেখতে পায়না. ও সারা কে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারে হিয়া আগেই ব্রেকফাস্ট সেরে ওর রুমে চলে গেছে. উজান একটু চিন্তিত হয়, হিয়ার শরীর ঠিক আছে তো?
উজান তাড়াতাড়ি নিজের ব্রেকফাস্ট সেরে হিয়ার রুমের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়.
হিয়া তখন ব্যস্ত ওর পুরোনো ফোনটা নিয়ে. এই সময় দরজায় নক হয়. হিয়া দরজা খোলে, ওপর প্রান্তে উজান.
উজান: এতো তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট করে চলে এলেন, শরীর ঠিক আছে তো?
হিয়া: হ্যাঁ۔۔۔কিন্তু ফোনটা ঠিক নেই.
উজান: ফোন? এই তো পরশু কিনলেন এর মধ্যেই খারাপ হয়ে গেলো?
হিয়া: আরে না না, নতুনটা না, পুরোনোটা.
উজান: কি হয়েছে?
হিয়া: পরশু সমরেশ স্যারের বাড়ি থেকে ফিরে সোনাল কে কল করতে গিয়ে দেখি এই ফোনটা চলছে না ( পুরোনো ফোন টা দেখিয়ে). পরের দিন সকালে বেরোবো বলে তখনি ফোন কিনতে গেলাম আর তারপরেই বিপত্তি. আপনি খামোখা আমাকে বকলেন সেদিন (গাল ফোলায় হিয়া).
উজান: দেখি দিন ফোনটা
হিয়া পুরোনো ফোনটা এগিয়ে দেয়. যদিও ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার সুবাদে হিয়া নিজেই সক্ষম, তবুও উজানের সাহায্যের জন্য বাড়ানো হাতটা ধরতে ইচ্ছে করে ওর. উজান একটু ভালো করে দেখে বলে۔۔
উজান: পুরোনো ফোনটা সম্পূর্ণ ডেড হয়ে গেছে, কিছু করার নেই. (হিয়াকে ফেরৎ দেয় ফোনটা)
হিয়া মুষড়ে পড়ে: হুম
উজান: মেমরি চিপে কিছু থাকলে পেয়ে যাবেন, বা কোনো ড্রাইভ এ যদি রেখেছেন তাহলেও পেয়ে যাবেন۔۔۔ নাহলে অসম্ভব
হিয়া: আরে সেসব জানি, কিন্তু ফোন টা۔۔۔۔(কয়েক সেকেন্ড পুরোনো ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকে, তারপর আর কিছু না বলে ফোনটা ব্যাগে ঢুকিয়ে নেয়).
উজান: ওটা আর বয়ে বেড়ানো অর্থহীন, ফেলে দিন বরং.
হিয়া হালকা হাসে: না স্যার ফেলতে পারবোনা.
উজান: কি করবেন ওটাকে নিয়ে?
হিয়া: রেখে দেব স্মৃতি হিসেবে
উজান: স্মৃতি?
হিয়া: হ্যাঁ۔۔۔۔ দাদার শেষ স্মৃতি হিসেবে থাকবে আমার কাছে.
উজান অবাক: আপনার দাদা? কিন্তু আপনার তো۔۔۔۔۔
হিয়া একটু ম্লান হেসে: ক্যাপ্টেন হার্দিক কাশ্যপ
উজান হতবম্ব: হোয়াট?
হিয়া: হুম
উজানের উত্তেজনা আকাশ ছোঁয়: হার্দিক ওটা আপনাকে দিয়েছিলো?
হিয়া: হ্যাঁ۔۔۔۔আমার বার্থডে তে۔۔۔۔(বলেই স্থির হয়ে যায়)
উজানের হৃৎপিণ্ড ও হিয়ার মতোই থমকে যায়۔۔
হিয়া একবার ব্যাগের দিকে তাকায় আর একবার উজানের দিকে۔
উজান উত্তেজনা কোনোমতে চেপে: ফোনটা একবার এক্ষুনি দিন তো আমাকে۔۔
উজানের কথায় হিয়া ফোনটা ব্যাগ থেকে বার করতে যায়, কিন্তু হাত বাড়িয়েও থেমে যায়.
উজান: কি হলো? দেরি করছেন কেন?
হিয়া উজানের দিকে ফিরে দাঁড়ায়: ফোনটা আপনাকে কেন দেব? কে আপনি তাই তো জানিনা.
হিয়ার গলার হঠাৎ কাঠিন্যে চমকে ওঠে উজান. ও এর জন্য তৈরী ছিলোনা. নিজেকে সামলে নিয়ে বলে۔۔
উজান: আমি আপনার বন্ধু.
হিয়া অবিচল: আমার বন্ধুকে ক্যাপ্টেন কাশ্যপের জিনিস কেন দেব?
উজান অস্থির হয়ে পড়ে. নিজের লক্ষ্যের এতো কাছে এসে আর হিয়ার কথা শোনার মত ধৈর্য্য থাকেনা ওর.
উজান: মিস মিত্র আমি হার্দিকের ও বন্ধু۔ প্লিজ আর দেরি করবেননা, তাহলে অনর্থ টা কে আটকাতে পারবোনা.
হিয়া: আপনাকে বিশ্বাস করার কোনো বিশেষ কারণ আছে কি? এটা পুলিশ কে দেব আমি.
হিয়ার অজান্তেই ওর মন হঠাৎই উজানকে প্রতিপক্ষ প্রতিপন্ন করে বসে.
উজান: লিসেন۔۔۔۔۔ ইউ উইল বি ইন ট্রাবল
হিয়া: আই এম ইন দি ট্রাবল ক্যাপ্টেন, ঘরে বাইরে সব জায়গায়.
উজান মরিয়া হয়ে ওঠে: আপনি ভুল বুঝছেন۔۔
হিয়া: রিয়ালি?? তাহলে সঠিক টা বুঝিয়ে বলবেন প্লিজ?
উজান: ওটা আপনার কাছে থাকলে আপনার বিপদ বাড়বে বৈ কমবেনা.
হিয়া: এখন কি কম আছে? মৃত্যুর থেকে বড় কোনো বিপদ হয় কি ক্যাপ্টেন?
উজান হিয়াকে শান্ত করার চেষ্টা করে: আচ্ছা ঠিক আছে আপনি পুলিশকেই দেবেন, কিন্তু আগে তো জানা দরকার এই ফোনেই সেটা আছে কিনা۔۔
হিয়া : সেটাও না হয় পুলিশই খুঁজে দেখুক. আপনি না পুলিশ, আর না কোনো সরকারি লোক. আপনাকে কোন ভরসায় দেব? আপনি তো তাদের দলের লোকও হতে পারেন যারা ক্যাপ্টেন কাশ্যপ কে মেরেছে (হিয়া নিজের জায়গায় অবিচল)
উজান এবার মোক্ষম চাল দেয় : মিস মিত্র۔۔۔ গতকাল রাত্রে আপনি বলছিলেননা আমার প্রতি আপনার আলাদা অনুভূতির কথা, সেটা এতো তাড়াতাড়ি বদলে গেলো? এখন বলছেন আমি কে?
হিয়া: আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করে কোনো লাভ হবে না ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী. নিজের কর্তব্য কে আমি নিজের থেকেও বেশী ভালোবাসি. জানেন, আগে না আমি এটা বুঝতামনা. কিন্তু ক্যাপ্টেন কাশ্যপ কে দেখে বুঝলাম যে নিজের কর্তব্যকে এতটা ভালোবাসা যায় যে তার জন্য প্রাণ গেলেও বিন্দুমাত্র আফসোস হয়না. এই কয়েক মাস যাবৎ আমার সাথে যা কিছু ঘটেছে তাতে আমি অন্তত নিজের মধ্যে এই বদলটা আনতে পেরেছি, আর সেটা কোনো কিছুর বিনিময়ে পাল্টাতে পারবোনা. না নিজের প্রাণের বিনিময়ে আর না নিজের আবেগের বিনিময়ে.
উজান এবার হিসহিসিয়ে বলে : আপনি ভুল করলেন মিস মিত্র. এতদিন পর্যন্ত আপনাকে বাঁচিয়েছি কারণ যা কিছু হচ্ছিলো তার জন্য ক্যাপ্টেন হার্দিক কাশ্যপ ওয়াজ রেস্পন্সিবল, কিন্তু আজকের পর যা কিছু ঘটবে তার জন্য একান্তই আপনি দায়ী থাকবেন.
হিয়ার মুখে শ্লেষের হাসি: আর আপনি আমাকে বাঁচাবেন না۔۔۔۔তাই তো? স্বাভাবিক. স্বার্থে ঘা লাগলে মুখোশের আড়ালে থাকা আসল মানুষটা বেড়িয়ে পড়ে.
উজান দাঁতে দাঁত চেপে বলে: কথা দিচ্ছি, এই আসল মানুষটা কে আর আপনার ভালো লাগবেনা.
উজান বেড়িয়ে যায়. হিয়া কাউচ পর্যন্ত যেতে পারেনা, যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলো ওখানেই বসে পড়ে. এতো বড় ভুল ও করলো কি করে? একবারও ওর মন জানান দেয়নি আগে۔۔۔۔۔না কি দিয়েছিলো? কষ্টগুলো দু’চোখে উপছে পড়ছে হিয়ার. আর ভাবে না হিয়া, দ্রুত ওর কর্তব্য স্থির করে ফেলে. যে করেই হোক ফোনটা ওকে উজানের হাত থেকে বাঁচাতেই হবে…
দেখা যাক ফোন আর ক্যাপ্টেনর কাশ্যপের মাঝে–কি এমন যোগসুত্র লুকিয়ে আছে–আর উজানই বা কেন একটা ফোনের জন্য হিয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার করলো–!
(আজকের পর্ব পড়ার পড় অনেকেই—৪৪০ভোল্টের ঝাটকা খাবেন???।ঝাটকা খেয়ে কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন??)