#উত্তরণ
পর্ব_১৫
বাসবী ফোন টা রাখার সাথে সাথে উজান এসে হিয়ার সামনে দাঁড়ায়, বুকের উপর হাত দুটো ভাঁজ করা.
হিয়া উজানের দিকে তাকিয়ে আসন্ন ঝড়ের পূর্বাভাস পায়. ও গুটি গুটি পায়ে রুম থেকে নিজের পার্স আর ফোন টা নিয়ে আসে. উজান কোনো কথা না বলে হিয়াকে লক্ষ্য করতে থাকে.
হিয়া: আমি আসছি ক্যাপ্টেন
হিয়া চলে যেতে গেলে উজান হিয়ার হাত ধরে এক ঝটকায় কাছে টেনে নেয়.
উজান: মা কি বললো শুনলেন না?
হিয়া: না থাক۔۔۔۔আপনাকে আর বিরক্ত করবোনা.
উজান: চুপচাপ নিজের রুমে যান. আমি খাবার অর্ডার করে আসছি.
উজান যেতে উদ্যত হলে,
হিয়া: স্যার۔۔۔
উজান দাঁড়িয়ে যায় কিন্তু হিয়ার দিকে ফিরে তাকায় না.
হিয়া দুপা এগিয়ে যায় উজানের দিকে, খুব শান্ত গলায় প্রশ্ন করে: বলছি۔۔ এখনো রেগে আছেন? দেখুন আপনি সব সময় আমায় হ্যাটা করেন, কথা শোনান, আমি তার একটু শোধ তুলেছি মাত্র.
উজান এবারও উত্তর দেয় না শুধু জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে.
হিয়া: আচ্ছা এতো রেগে কি অতিথি আপ্যায়ন করা যায়?
উজান: আবার জ্ঞানের বুলি আওড়াতে লাগলেন?
হিয়া: বা রে۔۔۔ আপনি এতো রেগে আছেন, আমার কেমন অস্বস্তি হচ্ছে.
উজান: সেটা আপনার সমস্যা. তাছাড়া এর কারন টাও আপনি.
হিয়া হাসে۔۔۔۔۔۔
উজান: হাসছেন আপনি? হাসি পাচ্ছে?
হিয়া: এই যে আপনি আমায় বকেন, আমার উপর রাগ করেন কিন্তু আমার খেয়ালও রাখেন. আপনি মনে হয় একটা লোকও বাদ দেন নি যাকে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করেন নি? এমন ভাব দেখান যেন আমি সামনে না থাকলেই আপনার ভালো, অথচ আমি অন্যত্র থাকলে আপনি সেখানে উপস্থিত হন. কেন?
উজান: আপনি একটু বেশী ভাবছেন.
হিয়া: আমি কিছুই ভাবছিনা. শুধু আপনার থেকে জানতে চাইছি এসবের মানে কি? আপনার এই অদ্ভুত ব্যবহারের কারণ কি?
উজান: আপনার না জানলেও চলবে. এমনিও আপনার যা প্রেসারের হাল তাতে বেশী চাপ নেবার অবস্থায় নেই আপনি.
হিয়া: (মনে মনে: কিছু তো একটা চলছে আপনার ভেতরে যেটা আমি সঠিক ভাবে বুঝে উঠতে পারছিনা) আপনি কিছুটা আমার বাবার মতো. কথা শোনাতেও ছাড়েননা আবার কেয়ার করতেও ছাড়েন না.
হিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে. উজান হিয়ার এই সহজ স্বীকারোক্তির কোনো উত্তর দিতে পারেনা. ও চলে যেতে উদ্যত হলে হিয়া বলে۔۔۔
হিয়া: স্যার আমার খিদে নেই. আমি আজ আসি.
কিছু একটা ছিল হিয়ার কথার সুরে, যেটা উজানের বাইরের কাঠিন্যকে ভেতরে ভেতরে ভাঙতে শুরু করে۔۔
উজান হিয়ার দিকে না তাকিয়েই নরম গলায় বলে: খেয়ে নিন তারপর যাবেন.
হিয়া আর কথা বাড়ায় না, রুমে চলে যায় উজান খাবার অর্ডার করে দেয়.
তারপর সোফায় বসে ভাবতে থাকে এর পর কিভাবে এগোবে? কালকের ডিউটি তা বেশ লম্বা ডিউটি, দুটো ওভারনাইট লেওভার আছে. অনেকটা সময় ও পাবে হিয়াকে. এটা মিস হয়ে গেলে আবার এরকম একটা ডিউটির জন্য অপেক্ষা করতে হবে, আর জরুরি না যে সেটা তাড়াতাড়ি হবে. কাল পরশু দুটো দিন হিয়া ওর কাছে থাকবে এটা ভাবতেই উজানের ঠোঁটে একটা হালকা হাসি খেলে যায়. পরক্ষনেই নিজেকে সামলে নেয়. নাহ হিয়ার সাথে ঝামেলাটা মিটিয়ে নিতে হবে কালকের আগেই.
এই সময় উজানের ফোনে নোটিফিকেশন আসে, সেটা খুলতেই দেখে চিফের মেসেজ: “Hiya has both locked code & key…her life is on threat… Rescue the code by hook or crook…”
কিছুক্ষন পর আর একটা মেসেজ আসে চিফের থেকে: “Have a good time with Hiya…?”..
এই শেষ মেসেজ টা দেখে উজান অবাক হয়۔۔ বিশেষত ইমোজি টা দেখে. উজানও জানে এই দুটো দিনের গুরুত্ব, কিন্তু এই “good time with hiya” মানে? ইচ্ছে থাকলেও চিফকে কন্টাক্ট করেনা উজান. চিফ ওর মনের কথা যে কিভাবে টের পান কে জানে.
মেসেজের কথা ভাবতেই আবার হিয়ার মুখটা ভেসে ওঠে. হঠাৎই উজান অনুভব করে যে ওর খিদে পেয়েছে. ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে অনেক বেলা হয়ে গেছে. ইতিমধ্যে গেটের সিকিউরিটি ফোন করে বলে ডেলিভারি বয় খাবার দিতে এসেছে. উজান ফ্ল্যাটে পাঠিয়ে দিতে বলে.
উজান টেবিল সাজিয়ে ফেলে তারপর হিয়াকে ডাক দেয়. হিয়া এসে দেখে কন্টিনেন্টাল. খাবারের পেকেট গুলোর দিকে চোখ যায় হিয়ার, এক নামী রেস্টুরেন্টের নাম.
হিয়া টেবিলে বসতে বসতে বলে: আপনাকে কে বললো আজ আমার জন্মদিন?
দেখা যাক কেন হিয়ার সাথেই ডিউটি আছে এই কথাটা ভাবতেই উজানের ঠোঁটে একটা হালকা হাসি খেলে যায়–আর চিফই বা কেন হিয়া-উজানকে নিয়ে অমন ইমুজি দেওয়া ম্যাসেজ উজান কে করে—!