#উত্তরণ
পর্ব_১৪
হিয়ার কথায় উজানের এতক্ষনে বাসবির কথা মনে পড়ে.
উজান এবার ফোন টা তুলে “হ্যালো” বললে বাসবী বলে: কোনো ব্যাপার না, আমি অপেক্ষা করছি, তোরা ঝগড়াটা শেষ কর.
উজান কি বলবে বুঝতে পারেনা. কেমন যেন একটা অস্বস্তি হয় ওর যেটার কারণ উজান কিছুতেই অনুধাবন করে উঠতে পারেনা. চুপ করে থাকে ও.
বাসবীর বেশ হাসি পায় উজানকে দেখে, তা সত্ত্বেও যথেষ্ট গাম্ভীর্য বজায় রেখে বলে: আমি কি পরে ফোন করবো? আগে তোরা বরং লাঞ্চ এ কি খাবি সেটা ঠিক করে নে.
হিয়াও তৈরী ছিলোনা এই পরিস্থিতির জন্য. বাসবির কথা শুনে বোঝে ও কিছু একটা ঝামেলা পাকিয়ে ফেলেছে. হিয়া ওখান থেকে চলে যেতে উদ্যত হলে বাসবী হিয়া কে দেখতে পায় আর হিয়ার উদ্দেশ্যে বলে…
বাসবী: আরে দাঁড়াও, কোথায় যাচ্ছ? কেউ যখন আমাকে তোমার সাথে আলাপ করিয়ে দেবেনা তখন আমাকে নিজেকেই করতে হবে. অবশ্য তোমার তাতে কোনো আপত্তি নেই তো?
হিয়া বাসবির কথা শুনে দাঁড়িয়ে পরে. তারপর ওর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে হেসে এগিয়ে এসে উজানের হাত থাকে মোবাইল টা নিয়ে নেয় উজানের অনুমতির অপেক্ষা না করেই. উজান অবাক হয়ে যায় হিয়ার ব্যবহারে, যদিও হিয়ার সে ব্যাপারে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই. উজান কোমরে হাত দিয়ে জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে হিয়ার দিকে.
হিয়া হেসে হাত নাড়িয়ে: হ্যালো
বাসবী প্রত্যুত্তরে হেসে মাথা নাড়ায়: আমি উজানের মা, বাসবী চ্যাটার্জী. তা তোমার নাম কি?
হিয়া: আমি হিয়া মিত্র. ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জ্জীর জুনিয়র, ফার্স্ট অফিসার.
বাসবী: ও. তা তুমিই কি সেই ইডিয়ট?
“ইডিয়ট” শব্দ তা শুনে উজান হিয়া দুজনেই চমকে ওঠে.
উজান (মনে মনে): কি বলছে মা? আর কেনই বা বলছে, তাও ওনাকে?
হিয়ার দিকে চোখ পড়তেই দেখে হিয়া সন্দেহের চোখে উজানের দিকে তাকিয়ে আছে.
হিয়া: আচ্ছা এই নাম টা স্যার দিয়েছেন না আমাকে? (তারপর উজানকে উদ্দেশ্য করে বলে) আমাকে এতো সুন্দর একটা নাম দিলেন, যেটা মা কে জানালেন অথচ আমাকেই জানালেন না? ভেরি ব্যাড.
মানুষ কে বুঝতে হয় কখন হার স্বীকার করতে হয়. উজানও বুঝে গেছে আজ ওর দিন নয়.
বাসবী: না না হিয়া, রাজা ঠিক আমাকেও বলেনি. তবে আমি তো মা, তাই জেনে গেছি (হালকা হাসে).
হিয়া: আচ্ছা কাকিমা ক্যাপ্টেন চ্যাটার্জী কি বরাবরই এই রকম, নাকি এখন হয়ে গেছেন?
উজান: এই রকম মানে?
হিয়া : মানে বদরাগী, বদমেজাজী, খিটখিটে.
রাগে, হতাশায় উজানের কথা আটকে যেতে থেকে.
উজান: কাম এগেন…
হিয়া: আমি বাকিগুলো এখনো বলিনি
উজান: মিস মিত্র আপনি এবার সব সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছেন. আপনি যান তো এখান থেকে. এবার যদি আমি রেগে۔۔۔۔
হিয়া আবার কথা শেষ করতে দেয় না উজানকে.
হিয়া: আচ্ছা সরি, আর বলবোনা. এবার শান্ত হন.
বাসবীর খুব মজা লাগে উজানকে এইভাবে নাকানি চোবানি খেতে দেখে. সে বেশ উপভোগ করে উজান হিয়ার এই খুনসুটি.
বাসবী: আচ্ছা আচ্ছা হয়েছে, এবার দুজনেই থামো দেখি. তা লাঞ্চে কি খাবে হিয়া.
হিয়ার তৎক্ষণাৎ উত্তর: বকা۔۔۔۔ইয়ে মানে থাক, কিছু খাবোনা.
বাসবী হাসি গোপন করে: তা আবার হয় নাকি? রাজা খাবারের ব্যবস্থা কর. আমি এখন রাখছি. আর হ্যাঁ, হিয়া কে না খাইয়ে ছাড়বিনা. মনে থাকে যেন.
বাসবী ফোন রেখে দেয় একরাশ ভালো লাগা নিয়ে. অনেকদিন পর বাসবীর মন আনন্দের শিশিরে ভিজে যায়. বারং বার হিয়ার চেহারাটা চোখে ভেসে ওঠে…
দেখা যাক উজান-হিয়ার এই ঝগড়া-খুনশুটির মুর্হত গুলো দেখে কেনই বা বাসবীর মন আনন্দের শিশিরে ভিজে যায়–তবে কি হিয়ার সাথেই হতে চলেছে বাসবীর নতুন সম্পর্কের সুত্রপাত—!!