#উত্তরণ
পর্ব_৫
গাড়িতে হিয়া উজানের পাশে বসে থাকায় হিয়াকে এবার কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয় উজানের. হিয়া তখন জানলার বাইরে তাকিয়ে ছিল তাই সে উজানকে লক্ষ্য করেনা. এমনিতেও আজ উজানের মন খুব খুশি সমরেশের সাথে দেখা হওয়ায়. ওর খুব ইচ্ছে করছিলো নিজের ফেলে আসা ছোটবেলা টা আজ আবার অনুভব করতে.
হিয়াকে ওর আবাসনের গেটে নামিয়ে দিয়ে উজানের জাগুয়ার ছোটে সেই গঙ্গার পাড়, ইডেন গার্ডেন, চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়ার উদ্দেশ্যে. রাত্রি অনেক হওয়ায় লোকজন প্রায় নেই সেভাবে. উজান গাড়ি থেকে নামতে গিয়েও নামেনা, ও জানে ওর আসার খবর ইতিমধ্যে তারা জেনে গেছে. যতক্ষণ গাড়ির মধ্যে আছে ততক্ষন ও সম্পূর্ণ সুরক্ষিত. অনেকটা রাত্রি হয় ওর বাড়ি ফিরতে.
উজান ড্রয়িং রুমে একটা রকিং চেয়ারে বসে আজকের পার্টির কথা চিন্তা করছিলো. পার্টি থেকে ফিরে বাসবীর সাথে কথা হয়েছিল, কিন্তু ওরা দুজনেই ইচ্ছাকৃত ভাবেই সমরেশের কথা টা এড়িয়ে যায়. উজানের চিন্তার মাঝেই ওর মোবাইলে একটা নোটিফিকেশন আসে. সেটা ওপেন করতেই ওর ঠোঁটের কোনায় একটা মৃদু হাসির রেখা ফুটে ওঠে, এটার অপেক্ষাতেই ও ছিল.
মেসেজে লেখা: কংগ্রাচুলেশন্স সমরেশ চ্যাটার্জীর সাথে দেখা হওয়ার জন্য. কিন্তু তোমার টার্গেট হিয়া মিত্র. ক্যাপ্টেন কাশ্যপের কাছের মানুষদের একজন. ও অনেক কিছুই জানে. ওকে কোনোভাবেই ছাড়া যাবেনা.
মেসেজ পড়ে উজানের ভ্রুতে ভাঁজ পড়ে. হিয়ার মুখটা ভেসে ওঠে.
উজান: হিয়া মিত্র? উনি কিভাবে জড়িয়ে ক্যাপ্টেন হার্দিক কাশ্যপের সাথে? কাছের মানুষ মানে কি? ঘনিষ্টতার গভীরতা কতটা? উনি ঠিক কি জানেন? কতটা জানেন? আজতো উনি সোনাল কৌরের সাথে কোনো বিপদ নিয়ে আলোচনা করছিলেন. কিন্তু কি ভাবে জানলেন?
চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে চিন্তিত উজান: নাহ,এমনিই অনেক দেরি হয়ে গেছে. পুলিশ ইনভেস্টিগেশনও অনেকটা এগিয়েছে. ওরা হিয়া মিত্র পর্যন্ত পৌঁছনোর আগেই আমাকে পৌঁছতে হবে. Hiya mitra now you are under magnifying glass, be cautious.
হিয়া নিজের বেডরুমে শুয়ে ছিলো. অনেক এলোমেলো ভাবনারা ভিড় করেছে মাথায়,অনেক ভেবেও কোনো উত্তর পাচ্ছেনা. ক্যাপ্টেন হার্দিক কাশ্যপ ওকে খুব স্নেহ করতেন ঠিকই,কিন্তু এতে ওর কিভাবে ক্ষতির সম্ভাবনার তা ও কিছুতেই বুঝে উঠতে পারেনা. নিজের চুলগুলো দুহাতের মুঠোয় চেপে ধরে.
মরতে ভয় পায়না হিয়া. ওর পেশায় ও জীবন হাতে নিয়ে চলে. প্রত্যেকবার ফ্লাই করার সময় ও এটা ভেবেই প্লেনে চড়ে যে এটাই হয়তো ওর শেষবার. কিন্তু তা বলে খামোকা কেন মরতে যাবে ও? ওর বিপরীতে যারা আছে তারা যে সুবিধার লোক নয় সেটা ও জানে, কিন্তু ওরা হয়তো জানেনা হিয়া মিত্রও সহজ না. যদি মরতেই হয় বিনা লড়াই এ ও মরবেনা. হিয়া ঠিক করে নেয় কাল একবার এসিপি সংকল্প সেনের সাথে দেখা করবে যদি ওনার পক্ষে দেখা করা সম্ভব হয়.
একটা স্লিপিং পিল খেয়ে ও শুয়ে পরে. ঘুমের মধ্যে ও স্বপ্ন দেখে, একটা লেপার্ড ওকে তাড়া করে চলেছে আর ও প্রাণ ভয়ে দৌড়োচ্ছে. ভয়ে ওর ঘুম ভেঙে যায়. দেখে এসিতেও ও ভীষণ রকম ঘেমে গেছে. উঠে বেডরুম সংলগ্ন ব্যালকনিতে যায়. ঠান্ডা হাওয়ায় কিছুটা শান্ত হয়ে আবার বেডরুমে ফিরে আসে. কিন্তু স্বপ্নটা ওকে ভাবায়. এরকম অদ্ভুত স্বপ্নের মানে কি? ওর সাথে লেপার্ডের কি সম্পর্ক? অনেক ভেবেও কোনো উত্তর পায়না হিয়া. এক সময় আবার ঘুম এসে যায় ওষুধের প্রভাবে…
দেখা যাক উজান-হিয়া দুজনের জীবন কোন নতুন পথের বাঁকে মোড় নেই…!!