উত্তরণ পর্ব_১

0
2642

#উত্তরণ
পর্ব_১

উত্তরাখণ্ডের শৈল শহর নৈনিতাল।যাকে বলা হয় সুইজারল্যান্ড অফ ইন্ডিয়া।নৈনি হ্রদের তীরে অবস্হিত বলে শহরটির নাম নৈনিতাল।আরেক জনশ্রুতি মতে দেবী সতীর ত্রিনয়ন পড়েছিলো আর গড়ে ওঠেছে নয়নাদেবীর মন্দির তাই দেবীর নাম অনুসারে এই শহরটির নাম নৈনিতাল।যারা এ শহরে একবার এসেছেন তারা সবাই এই শহরের প্রেমে পড়তে বাধ্য!কারণ শহর সৌন্দর্য সবাইকে মোহিত করে।

নৈনিতাল রাজভবনের ঠিক পাশে একটি বাংলো…গ্রিক ভারতীয় স্থাপত্য শৈলীর এই বাংলোর বাহিরের রুপ দেখে সবাই পথে যাতায়াত করতে বাংলোর দিকে তাকতে বাধ্য…বাংলোটির নাম “স্বর্গদ্বার”

“স্বর্গদ্বার” আজ আর চার পাঁচটা দিনের থেকে একটু বেশিই ব্যস্ত۔ উজান যে কিনা পেশায় পাইলট আজ সে কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা দেবে আর একটু পরেই۔ বাসবী নিজের হাতে সব গুছিয়ে দিচ্ছে ছেলেকে۔
উজান এক দৃষ্টি তে চেয়ে আছে বাসবির দিকে۔ সে তার মা কে চেনে۔ বাসবির মধ্যে যে ঝড়টা উঠেছে তার অস্তিত্ব উজান ঠিকই টের পেয়েছে۔ আজ অনেক বছর পর আবার বাসবীর অতীত তার সামনে দাঁড়িয়ে, যদিও এই পঁচিশ বছরে এক দিনের জন্যও ও সমরেশ কে ভুলতে পারেনি۔ যখন ও সমরেশ কে ছেড়ে চলে আসে তখন ছোট্ট রাজা মাত্র তিন বছরের۔ তারপর আর কোনোদিন সমরেশের সাথে দেখা হয়নি ওদের ۔ বাসবী কোনো খোঁজ রাখেনি সমরেশের۔ কিন্তু সমরেশ? ও কি কোনো খোঁজ করেছিল? বাসবী জানেনা۔ আজ আবার পঁচিশ বছর পর সমরেশ আর উজান মুখোমুখি হবে۔ ভাবতেই কেমন যেন মাথা টা ঘুরে যায় বাসবির۔
উজানের দৃষ্টি এরাই না কোনো কিছুই۔ সে এক গ্লাস জল এগিয়ে দেয় বাসবির দিকে۔

উজান : তুমি শুধু শুধু এতো চিন্তা করছো۔

বাসবী বরাবরের মতো অত্যন্ত দক্ষতার সাথে নিজেকে সামলে নেয়۔ যাই হয়ে যাক, উজানের সামনে দুর্বল হওয়া যাবেনা۔۔

বাসবী : চিন্তা কি আর এমনি এমনি করছি? কখন কি যে করিস বুঝতে পারিনা۔ এরোনটিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এয়ারফোর্স জয়েন করলি۔ তারপর সেখানে পাইলট হয়ে এতগুলো বছর কাজ করে হঠাৎ করে সব ছেড়ে দিলি۔ তারপর এয়ারলাইন পাইলট হয়ে জয়েন করলি۔ হায়দ্রাবাদ, দিল্লি হয়ে এখন কলকাতা۔ ভালো লাগে না (বিরক্ত হয়ে অন্য দিকে চেয়ে থাকে)

উজান : (বাসবির হাত দুটো ধরে) কি করবো বোলো? ট্রান্সফার করেছে۔۔۔۔۔যেতে তো হবেই۔ এর আগে তো কখনো তুমি এতো রিএক্ট করোনি? তাহলে এবার কেন?

এই কেনোর উত্তরটা জানে উজান۔ তাও প্রশ্নটা করে বাসবিকে۔ মনে মনে বলে : একদিন না একদিন আমাকে যেতে তো হতোই۔ জানতে হবেই সত্যিটা, কাজেই সুযোগ হাতছাড়া করার প্রশ্নই নেই۔

বাসবিও যে একদম আন্দাজ করতে পারেনা তা নয়۔ যদিও উজান কোনোদিন বাসবির সামনে সমরেশের কথা বলেনা কিন্তু বাসবী জানে উজানের জীবনে একটা শূন্যস্থান তৈরী করেছে ও সমরেশের থেকে সরিয়ে এনে۔
সমরেশ শুধুমাত্র উজানের বাবা ছিলোনা, ওর বেস্টফ্রেন্ড ছিল۔ সমরেশ এর পথ চেয়ে বসে থাকতো ছোট্ট রাজা۔ বাবা ফিরলে ঝাঁপিয়ে পড়তো কোলে۔ সমস্ত কিছু এক নিঃশ্বাসে উগরে দিতো۔ সমরেশেরও সমস্ত সময়টুকু শুধুই উজানের জন্য বরাদ্দ ছিল۔ আজও উজানকে সমরেশের থেকে আলাদা করা যায়নি۔ তাই বোধহয় এতো কিছু থাকতে উজান পাইলট হওয়ায় মনস্থির করে তার বাবার মতো۔ যদিও বাসবীও কোনোদিন চাইনি উজান সমরেশকে ভুলে যাক۔ কোথাও অপরাধ বোধে ভুগতে থাকে বাসবী۔

উজান বেরিয়ে পড়ে বাসবীর গাড়ি নিয়ে গন্তব্য পান্হনগর এয়ারপোর্ট।আজ অবশ্য উজান গাড়ি নিয়ে একা আসে নি..বলা ভালো বাসবী আসতে দেন নি..তাই অগত্যা উজান বাসবীর ড্রাইভার মোহন কে অানতে বাধ্য
হয়েছে।নৈনিতাল থেকে যার দুরত্ব প্রায় দুঘণ্টা ১৫মিনিট।মোহন গাড়ি ড্রাইভ করছে আর উজান পেছনে বসে ভাবছে নিজের ছোট বেলার অতীতের কথা! ৩ বছর বয়সে মা র হাত ধরে নিজের বাবা কে ছেড়ে একটা অচেনা শহরে পা রেখেছিল! কিন্তু ভাগ্য সেই টেনে নিয়ে যাচ্ছে পুরোনো ফেলে আসা শহর তিলোত্তমা কলকাতায়।উজান এতটাই চিন্তায় মগ্ন যে কখন,রাজভবন,নৈনি লেক,মল্লিতাল,ছোট বেলায় চেনা পাহাড়ী রাস্তা,নয়নাদেবীর মন্দির,মুক্তেশ্বর,কুমায়ন হিলস স্ট্রেশন,ভাওয়ালি হিলস কখন সব পেছনে ফেলে এসেছে বুঝতেই পারে না।মোহন এসে ব্রেক কষে পান্হনগর এয়ারপোর্টর সামনে!!গাড়ি থামতেই উজানের ঘোর কাটে।উজান গাড়ি থেকে নেমে লাগেজ গুলো নামিয়ে নেয়।

মোহন:ম্যা চলতা হু..ছোটে সাব জী

উজান:ঠিক হে আপ চলে যাইয়ে..মোহন জী।

মোহন:ঠিক হে আপ সাহি সালামাত কলকাত্তা পৌচ যানা।

মোহন গাড়ি নিয়ে নৈনিতালের পথে বেরিয়ে যায়।

অন্যদিকে উজান বোর্ডিং কমপ্লিট করে۔۔۔ কিছুক্ষনের মধ্যেই নৈনিতাল-দিল্লি-কলকাতা গামী ফ্লাইট টেক অফ করে۔۔

অবশেষে উজানের ফ্লাইট ল্যান্ড করে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বোস ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে۔۔۔ ও লাগেজ কালেক্ট করে নির্দিষ্ট গাড়িতে বসে ওর নতুন আস্তানার উদ্দেশ্যে রওনা দেয়۔۔

বাকিটা….পরের…পর্বে..

দেখা যাক পুরনো শহরে উজানের নতুন কর্মজীবন কেমন কাটে!!

NB:কিছু দিন এএয়ারলাইন্স বেস FF এর কথা অ্যানাউসমেন্ট করেছিলাম।তাই আজ #উত্তরণ পোস্ট করলাম।এটা একদম নতুন ধরনের গল্প..আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।আর কেমন লাগলো অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন??।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here