হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ০৮)

0
2638

হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ০৮)
#নাহার
·
·
·
নিরা সামনে ফিরতেই দেখে রাফিন একদম ওর মুখ বরাবর দাঁড়িয়ে আছে। নিরা ঘাবড়ে যায়। এক কদম পিছিয়ে যায়। রাফিন চোখ ছোট করে বলে,
— এই সাত সকালে একটা ছেলের রুমের সামনে দাঁড়িয়ে উঁকি ঝুঁকি দিয়ে ইভ টিজিং করা হচ্ছে তাই না?

নিরা ভয় পেয়ে যায়। মাথা নাড়িয়ে “না” জানায়। রাফিন মাথা চুলকাতে-চুলকাতে বলে,
— চুপিচুপি এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিলে তাহলে?

— আম..মি..কিছু কথা ব..বল..বলতে এসেছি।

রাফিন ঠোঁট টিপে হাসে। নিরাকে আরো ভয় লাগানোর জন্য বলে,
— এইতো তুমি তোতলানো শুরু করেছে। বলো মনের মধ্যে কি চলছে?

নিরা অন্যদিকে ফিরে বলে,
— আপনি আগে বোতাম লাগান প্লিজ।

রাফিন একপাশ ফিরে মুচকি হেসে বলে,
— এটাও খেয়াল করেছো তাহলে। হুম! কি চলে? প্রেম প্রেম।

নিরার এবার অস্বাভাবিক লাগছে। মনে মনে বলছে,
— আমি কি জানতাম রুমে এভাবে ঘুরেন। আর এখন এভাবে থাকবেন। উফফ! কি একটা অবস্থা।

রাফিন শব্দ করে হাসে। শার্টের বোতাম লাগানো শেষ হলে নিরার হাত ধরে টেনে রুমে এনে বেডে বসিয়ে দেয়। নিরার সামনে পায়ের কাছে বসে বলে,
— ওরে লজ্জাবতী এবার বলো কি বলবে।

রাফিনের মুখে লজ্জাবতী নামটা শুনে নিরা এবার সত্যিই লজ্জা পাচ্ছে। রাফিন হালকা হেসে উঠে দাঁড়ায়। নিরাকে স্বাভাবিক করার জন্য ওর থেকে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়। এভাবে ওর কাছে এসে সারাদিন বসে থাকলে একটা শব্দও মুখ থেকে বের হবে না। কিযে লজ্জা মেয়েটার। নিরা স্বাভাবিক হয়। তারপর বলে,
— আমি কোচিং-এ গিয়ে কোথায় ভর্তি হবো সেটা নিয়ে কথা বলতে চাইছিলাম। আপনি যদি যেতে দেন তাহলে আম্মুও যেতে দিবে। এটা জিজ্ঞেস করতেই এসেছি।

রাফিন নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়ে বলে,
— আচ্ছা যাও। জিজ্ঞেস করে আসো। তারপর আমাকে জানাবে। ওকে?

— হু

রাফিন চলে যায়। নিরা বসে থাকে কিছুক্ষণ।রাফিনের পড়ার টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। একটা আইডি কার্ড রাখা ছিলো টেবিলে। নিরা হাতে নিয়ে দেখে সেখানে লিখা Dr. Rafin Hossain। নিরা মনে মনে বলে,
— এটা রাফিন ভাইয়ার হাসপাতালের আইডি কার্ড না? মনে ছিলো না হয়ত। তাই না নিয়েই চলে গেছে। আমি গিয়ে দিয়ে আসি। এত তাড়াতাড়ি তো চলে যায়নি।

নিরা আইডি কার্ডটা নিয়ে তাড়াতাড়ি করে রুম থেকে বের হওয়ার জন্য দরজার দিয়ে বের হওয়ার সময় কারো সাথে খুব জোরে ধাক্কা লেগে মেঝেতে পড়ে যায়। চোখ খিচে মেঝেতে পা ধরে বসে আছে। কৌশিকের বেডে লাথি মেরে ব্যাথা পেয়েছে একবার এখন আবার ব্যাথা পেয়েছে। নিরা আর কারো সাথে নয় রাফিনের সাথেই ধাক্কা খেয়ে পড়েছে। রাফিন তাড়াতাড়ি নিরার মাথার কাছে এসে বসে নিরাকে বলে,
— এই লজ্জাবতী এভাবে তাড়াহুড়ো করে কই যাচ্ছিলে?

নিরা এখনো চোখ খিচে বন্ধ করে বসে আছে। অন্যহাত উপরে তুলে দেখায় আইডি কার্ডটা। অস্পষ্ট ভাবে বলে,
— আপনি এটা নিতে ভুলে গেছিলেন তাই দিতে যাচ্ছিলাম।

— আমিও তো আইডি কার্ড নিতেই রুমে এসেছি।

রাফিন সব জিনিসপত্র মেঝেতে রেখে নিরাকে কোলে তুলে বেডে বসাতে বসাতে বলে,
— আমিকি জানতাম লজ্জাবতীটা আমার আইডি কার্ড নিয়ে তাড়াহুড়ো করে আমার কাছেই আসছিলো।

রাফিন নিরার পায়ের কাছে বসে পা দেখে বলছে,
— বেশি ব্যাথা পেয়েছো?

— না।

— উঠে দাড়াও। হেটে দেখাও আমাকে।

— এখন?

— হ্যাঁ এখন। হাটতে না পারলে করলার জুস খেতে হবে।

নিরা অসহায়ের মতো রাফিনের দিকে তাকায়। তারপর আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ায়। রাফিনের সামনে হেটে দেখাতে খুব লজ্জা লাগছিলো কিন্তু করলার জুস খেতে হবে সেই ভয়ে হেটে দেখালো। রাফিন হেসে নিরার হাত থেকে আইডি কার্ডটা নিয়ে মেঝে থেকে জিনিসপত্র সব নিয়ে দাঁড়ায়। তারপর নিরাকে নিরার রুমে দিয়ে রাফিন হসপিটালের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।

নিরাও রেডি হয়ে নাস্তা খেয়ে বের হয় কোচিং-এর উদ্দেশ্যে। ভয় পাচ্ছে কারণ সেদিন রাতে রাফিন তুহিনকে মেরেছে খুব। আজকে কোচিং-এ গেলে কি বলবে এইসব ভেবে। তাও গেছে।

——————————————————————————-
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা,,,,
নিরা নিজের রুমে বসে আছে। মেঝেতে বসে বেডে হেলান দিয়ে মাথা নিচু করে বসে আছে।

রাফিন বাসায় আসলে চিল্লাচিল্লি শুনতে পায় নিরার মায়ের। কৌশিক ঘোমরা মুখ করে বসে আছে সোফায়। রাফিন ইশারায় জিজ্ঞেস করে কৌশিককে কি হয়েছে? কৌশিক ইশারায় উপরে নিরার ঘরে যেতে বলে। রাফিন উপরে চলে যায়।

রাফিন দরজা ঠেলে ভেতরে এসে দেখে রুমের লাইট নেভানো। শুধু টেবিলের উপর এলইডি ল্যাম্পটা জলছে। নিরা হাটুর মাঝে মাথা গুজে বসে আছে। রাফিন গিয়ে নিরার সামনে বসে নিরার মাথায় হাত রাখলে নিরা মুখ তুলে তাকায়।

নিরা ছলছল চোখে রাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। নিরার চোখে পানি দেখে রাফিনের বুকটা ছ্যাত করে উঠে। নিরার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করে,
— কি হয়েছে?

নিরা কাদো কাদো হয়ে ভাঙা গলায় বলে,
— কোচিং-এ গেছিলাম কোথায় ভর্তি হবো জিজ্ঞেস করতে। তুহিন আমাকে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমাকে দিয়ে নাকি কিছু হবে না। বললো সব ছেড়ে ছেলেদের পিছনে পড়ে থাকলে লেখাপড়া করতে হবে না। ফিগার দেখালে এমনিতেই অনেক টাকা আসবে।

নিরা হু হু করে কেদে দেয়। রাফিনের খুব রাগ উঠে তুহিনের উপর। নিরা আবার বলে,
— এভাবে না বলে সুন্দর করে বললেই হতো। সবার সামনে আমাকে কত বাজে কথা বলেছে। আর যাবো না আমি ওইখানে। ওর জন্যই আমার আরেকটা ইয়ার লস গেছে।

রাফিন নিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। নিরা কেদেই যাচ্ছে। রাফিনের হাত শক্ত করে মুঠ করে নেয়। চোয়াল শক্ত হয়ে আসে রাগে। মনে মনে বলে,
— ওই ছেলেটা কি জানে না কিভাবে মেয়েদের সাথে কথা বলতে হয়? আমারই ভুল ছিলো ওকে একা যেতে দেয়াটা।

রাতে নিরা খাবার না খেয়েই শুয়ে পড়ে। কিছুই ভালো লাগছে না নিরার। দুই বছর গ্যাপ হয়ে গেছে ভাবতেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে। কোনোরকম রাতটা পার করে।

সকালে সবাই নাস্তা খাচ্ছে একসাথে টেবিলে। কিন্তু নিরা আসেনি। মিসেস তানজুম নিরার মাকে জিজ্ঞেস করে,
— কিরে মেঝো মেয়েটা এখনো এলো না নাস্তা খেতে। কি হয়েছে?

— দুই বছর লস হয়েছে মেয়েটার। তাই মন খারাপ করে রুমে বসে আছে।

রাফিন কৌশিনকে ইশারা করে বলে খাওয়া শেষে দেখা করতে। দুইজন মিলে ভেবে একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিরার বাবা মোহাম্মদ আফজাল সাহেবকে জানান। উনিও খুশি হয়। তিনজন একসাথে বের হয় বাসা থেকে।

কাল সন্ধ্যায় নিরা খুব কেদেছে। আর আজ সন্ধ্যায় নিরার খুশিতে দিশেহারা হয়ে গেছে। নিরা তার বাবার পা জড়িয়ে ধরে বলছে,
— ধন্যবাদ বাবা।

মোহাম্মদ আফজাল সাহেব হেসে মেয়েকে বলেন,
— তো পা জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ দেয়া এটা কই থেকে শিখলি?

— আরে বাবা তুমিতো দাঁড়িয়ে আছো আর আমার বই গুলো রেখে উঠতে ইচ্ছে করছে না তাই পা জড়িয়ে ধরেই ধন্যবাদ দিয়ে দিলাম।

নিরার বাবা হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে চলে যান। নিরা খুশিতে গদগদ।

——————–
কিছুক্ষণ আগে রাফিন, কৌশিক এবং নিরার বাবা অনার্স ১ম বর্ষের বই নিয়ে বাসায় আসে। নিরা তখন মন খারাপ করে এই শীতে মেঝেতে শুয়ে ছিলো। ওদের তিনজনের আগমনে নিরা উঠে বসে। নিরার বাবা বলে,
— তোকে একটা কলেজে অনার্সে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি যাতে আরেকটা বছর গ্যাপ না যায় তাই।

— কোথায়?

— তোর স্কুলের পাশে যে কলেজটা আছে সেখানে অনার্সে। আর সব বই নিয়ে এসেছি।

তাই নিরা খুশিতে বাবার পা জড়িয়ে ধরে।।

বর্তমানে,,,,,
রাফিন বই রেখেই নিজের রুমে চলে এসেছে ফ্রেস হতে। কৈশিক নিরাকে ভেঙিয়ে বলে,
— হইছে আর কান্দিস না। এমন ভাবে কানতাছিস যেন বিয়া দিয়া ফেলছি আমরা। হুহ

নিরা রাগে কৈশিক এর পায়ে চিনটি কাটে। কৈশিক আহ করে বলে,
— শাকচুন্নি কোথাকার। পায়ে ব্যাথা পাইছি না?

— তোরে যেনো আদর করার জন্য চিমটি দিছি। ভাগ এখান থেকে।

— হ্যাঁ এখন তো আর আমাকে ধন্যবাদ দিবি না। সবতো চাচারেই দিছোস। আর বাকিগুলা দিবি রাফিনরে।

কৈশিক ন্যাকা কান্না করে বলে,
— আজ আমি পর হয়ে গেলাম।

নিরা উঠে এসে কৈশিকের চুল মুঠ করে ধরে ঝাকিয়ে বলে,
— ধন্যবাদ।

— আহ্ ছাড় শাকচুন্নি। তোর ধইন্নাপাতা আমার লাগবে না।

— কাল সকালে আমারে যে বকা বানাইছিলি সেটার প্রতিশোধ এটা।

কৈশিক কোনোরকম নিরার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দৌড়ে বের হয়ে আসে। রাফিনের সাথে ধাক্কা লাগলে রাফিন বলে,
–কিরে মিয়া দৌড়াস কেরে?

— তোর বউডা আস্তা শাকচুন্নি। হুহ…তুই সামলা তোর বউরে। যত্তসব।

কৈশিক চলে যায়। রাফিন হেসে নিরার রুমে প্রবেশ করে। নিরা বইগুলোকে জড়িয়ে ধরে বইয়ের উপর চুমু দেয়। তারপর বইয়ের দড়িটা খুলতে চায় কিন্তু পারছে না। রাফিন শব্দ করে হেসে দেয়। নিরা তাকিয়ে দেখে রাফিন ওর কান্ডে হাসছে। নিরা রেগে দড়ি টানাটানি করে খুলতে চাচ্ছে কিন্তু কোনোভাবেই পারছে না৷ রাফিন নিরার সামনে বসে বইয়ের দড়িটা খুলে দেয়। তারপর বলে,
— ওই কলেজে সব ডিপার্টমেন্ট ফিলাপ ছিলো। শুধু জুলোজি ডিপার্টমেন্ট -এ কয়েকটা সিট খালি ছিলো। তাই তোমাকে ওখানেই ভর্তি করিয়ে দিয়েছি।

নিরা খুশি হয়ে বলে,
— আমারও জুলোজি নিয়েই পড়ার ইচ্ছা ছিলো।

নিরা বইগুলো উল্টাচ্ছে আর দেখছে। অনেক খুশি নিরা।রাফিন একটা কাগজ নিরার হাতে দেয়। নিরা কাগজটা খুলে পড়ে৷ তারপর কাদো কাদো হয়ে রাফিনকে বলে,
— আর একমাস পর পরীক্ষা আমি কিভাবে পাস করবো?

— চেষ্টা করে যাও। আর আমিতো আছি। না বুঝলে আমার কাছে আসবে আমি বুঝিয়ে দিবো।

নিরা আবার বই গুলো ঘাটতে থাকে। রাফিন নিরাকে বলে,
— নিরা এটাই সু্যোগ নিজেকে প্রমাণ করার। যে বলেছে তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না তাকে দেখিয়ে দাও তুমি কোনো অংশে কম না। শুধু মনে রাখবে “সফলতার জন্য ভাগ্য নয়, নিজের যোগ্যতার উপর বিশ্বাস রাখা উচিত! “(–মাদার তেরেসা)

নিরা রাফিনের কথায় আস্থা খুজে পেলো। কেনো যেনো এখন নিজেকে স্ট্রং মনে হচ্ছে নিরার। সবাই মিলে নিচে গিয়ে নাস্তা খেয়ে নেয়। নিরা খাওয়া শেষ করে আর দাঁড়ায় না। রুমে এসে বই খাতা নিয়ে পড়তে বসে যায়। রাফিন এসে একটু দেখে যায়। তারপর নিজের রুমে এসে নিজের কাজ করে।

——————————————————————————–
রাত প্রায় দুইটা তিনটা পর রাফিন কি মনে করে উঠে গিয়ে নিরার রুমের সামনে দাঁড়ায়। দরজা খোলাই ছিলো। দরজা ঠেলে রুমে প্রবেশ করে দেখে নিরা বেডে শুয়ে পড়তে পড়তে ঘুমিয়ে গেছে। বুকের উপরে বই রাখা চোখে চশমা। রাফিন আস্তে করে এসে নিরার পাশে বসে।

তখন নিরার মা আসে নিরাকে দেখতে। রাফিনকে রুমে দেখে উনি দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে যায়। রাফিন নিরার বুকের উপর থেকে বইটা নিয়ে নেয়। চশমা খুলে নেয়। তারপর মুখের উপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে কাথাটা ভালো করে টেনে নিয়ে ঝাপটে দেয়। বই, চশমা নিরার পাশে বেডে রাখে যাতে সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়তে পাড়ে। বইয়ের জন্য যেনো বেড থেকে নামতে না হয়। লাইট অফ করে রুমের দরজা লাগিয়ে বের হয়ে দেখে নিরার মা দাঁড়িয়ে। উনি কিছু বলেননি। শুধু রাফিনের হাত ধরে মুচকি হেসে চলে যান।

নিরা সকালে রেডি হয়ে নেয় কলেজে যাবার উদ্দেশ্যে। বই খাতা গুছিয়ে বের হয়ে সিড়ির কাছে আসতেই পেছন থেকে কেউ ডাক দেয়,
— নিরা

নিরা পেছন ফিরে দেখে রাফিন। সেও বের হবে এখন। রাফিন নিরাকে দেখে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। নিরা কালো বোরকা আর কালো জরজেট হিজাব বেধেছে। কাধে ব্যাগ। একদম বাচ্চা পুতুল লাগছে। পুতুল পুতুল লাগছে আজকে নিরাকে। রাফিনের ইচ্ছা করছে ওর গালটা টেনে দিতে কিন্তু দেয়নি। জমা রেখেছে সব একদিন টেনে দিবে তাই। নিরা জবাব দেয় রাফিনকে,
— ডেকেছেন?

নিরার আওয়াজে রাফিনের ধ্যান ফিরে। নিরাকে বলে,
— হ্যাঁ।

— বলেন।

— আমার সাথে যেও ঠিকাছে।

— আচ্ছা।

দুইজন একসাথে নিচে এসে ব্রেকফাস্ট করে নেয়। রাফিন নিরাকে নিয়ে বের হয়ে যায়। বের হওয়ার আগে নিরার মা মিসেস শায়েলা নিরার কপালে চুমু দেন। রাফিন নিরাকে গাড়িতে করে নিয়ে আসে কলেজে। নিরা নামতে গেলে রাফিন হাত ধরে নিরার। নিরা রাফিনের দিকে ফিরে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। রাফিন বলে,
— তুমি যেমন তেমনভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করবে। তোমার সবকিছু শুনে যে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করবে সেই তোমার আসল বন্ধু হবে। ঠিকাছে।

— হু।

রাফিন নিরার হিজাবের কিছু অংশ নিয়ে নিরার মুখে নেকাব বেধে দিয়ে বলে,
— তোমার বান্ধুবি যারা হবে তাদের সামনে নেকাব খুলবে। অপরিচিত কারো সামনে খুলবে না। ওকে?

— আচ্ছা।

— তোনাকে আমি নিতে আসবো। একা যাবে না। কালকে থেকে একা যেও। হুম।

নিরা মাথা নাড়িয়ে ” হ্যাঁ ” বলে৷ রাফিন নিরার এক গালে হাত দিয়ে নিরার গালটা আকড়ে ধরে অন্য হাতে নিরার কপালের হিজাবটা আরেকটু টেনে দিয়ে বলে,
— এখন আর চুল দেখা যাবে না।

নিরা গাড়ি থেকে নেমে কলেজের ভেতরে চলে যায়৷ নিরা ভেতরে ঢুকলেই রাফিনও চলে যায় হসপিটালে। কলেজ ছুটির পর রাফিন নিরাকে নিয়ে বাসায় চলে আসে। ফ্রেস হয়ে নিরা রাফিনের রুমে যায়। দরজায় নক করলে রাফিন দরজা খুলে দেয়। নিরা ভেতরে ঢুকে সোফায় বসে বলে,
— আপনি ঠিক বলেছেন। আমার সবকিছু সম্পর্কে শুনে যারা বন্ধুত্ব করবে তারাই আসল বন্ধু। হ্যাঁ, সত্যি। কয়েকজন আমাকে কেমন করে যেনো দেখেছে। জানেন আজকে আমার তিনটা বন্ধুবি হয়েছে। ওরা আমার নাম্বারও নিয়েছে।

নিরার চোখে মুখে খুশির ঝলক দেখে রাফিনও খুব খুশি হয়। রাফিনকে কিছু বলতে না দিয়ে নিরা রুমে এসে পড়তে বসে যায়৷ রাফিন হেসে বলে,
— আমার লজ্জাবতী।
·
·
·
চলবে……………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here