অনন্যময়ী পর্ব_৪১
#সানজিতা_তুল_জান্নাত
ভোরবেলার দিকে অনির ঘুম ভেঙে যায়। প্রচন্ড অবসাদগ্রস্ততা নিয়ে ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায়। মাথার কাছে ভারী কিছু অনুভব হচ্ছে। ভারী কিছু যেন তার কপাল ঘেঁষে রয়েছে। একটু পর পর গরম হাওয়া তার কপালে যেন বারি খাচ্ছে ছন্দাকারে। প্রথম দফায় অনির বোধগম্য হয় না। হাতটা নড়াতে গিয়ে উপলব্ধি করে তার ডান হাতটাও অন্য কারো হাতের মধ্যে মুষ্টিবদ্ধ অবস্থায় আছে। বিধায় সে হাত নড়াতে পারেনা।
কিঞ্চিত শারীরিক দুর্বলতা সাথে মানসিক ক্লান্তি তাকে এক রাতের ব্যবধানে বেশ কাবু করে ফেলেছে। একরকম জোর করেই সে চোখ মেলে তাকায়।
মাথার উপর ফ্যানটা ঘুরছে। পুরো রুমে চোখ বুলায় অনি। চোখ পড়ে রিশাদের উপর। অনিরবপ্রায় গাঁ ঘেঁষে মাথার পাশে আধশোয়া অবস্থায় বসে আছে রিশাদ। রিশাদের গরম নিঃশ্বাস একটু পর পর অনির কপাল স্পর্শ করছে। পুরো ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে পেরে অনির কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে।
অনির স্মৃতিপটে কালকের ঘটনাগুলো আস্তে আস্তে ভেসে ওঠে। কাল রাতে কি কি ঘটেছে তার আবছা আবছা মনে পড়ছে অনির। রিশাদের আকস্মিক ভাবে এসে অনিকে জড়িয়ে ধরায় তার মস্তিষ্ক জুড়ে বয়ে যাওয়া তুমুল উদ্দীপনার সাড়া দিতে পারে না এত কম সময়ের মধ্যে।
এধরনের ঘটনার জন্য সে মানসিকভাবে প্রস্তুত ছিল না। খুব যে আহামরি কিছু ঘটেছে তাও নয়। একমাত্র মরুভূমিবাসীই যথাযথভাবে পানির গুরুত্বটা যেমন উপলব্ধি করতে পারে ঠিক তেমনই দশা হয়েছে অনির। রিশাদের একটু ভালোবাসার পরশে তার পুরো পৃথিবী জুড়ে যেন আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে যা ছিল একেবারেই নতুন ও অভূতপূর্ব।
চোখ বুজতেই এক গভীর দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। শুয়ে শুয়ে কি যেন ভাবতে থাকে অনি। ঘুম নেই তার চোখে ;বিছানা থেকে ওঠবারও যেন কোন প্রচেষ্টা নেই। অলসভাবে দুচোখ বুজে শুয়ে থাকে। রিশাদের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে তার কান দুটো যেন ব্যস্ত হয়ে পড়ে।
রিশাদ কিছুটা নড়েচড়ে ওঠে। ঘুমের ঘোর কাটতে দুমিনিট সময় লাগে। বড় করে হাই তুলতে তুলতে লক্ষ্য করে সে অনির কপালের উপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ে। দ্রুত সে উঠে পড়ে। কে জানে কতক্ষণ যাবত সে এভাবে অনির উপর ভর দিয়ে শুয়ে ছিল।
রিশাদ চোখ কচলাতে কচলাতে অনির দিকে তাকায়। অনিকে দেখে তার মনে হয় সে যেন গভীর ঘুমেই মগ্ন। বাইরের দিক থেকে ভেতরটা বুঝতে সফল হয়না সে।
ইচ্ছে করেই চোখ বুজে শুয়ে আছে অনি। রিশাদের গতিবিধি সে চোখ বুঝে থাকলেও কিছুটা বুঝতে পারছিল। এই মূহুর্তে তার চোখ খুলতে মন চাচ্ছে না। আসল কথা সে রিশাদের মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না। কেন যেন সে রিশাদের সামনে সে কেমন আদ্ভুত আচরণ করে। চাইলেও যেন তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। তার উপর মাঝে মাঝে রিশাদের অদ্ভুত কাণ্ডগুলো যেন আরো অস্বাভাবিক করে দেয় অনিকে।
অনির ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকায় রিশাদ। মনে মনে বলেঃ
–“চোখে চোখ রাখার সাহস নেই তাইতো বার বার এই ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকাই। যতবার দেখি ততবারই যেন মনে হয় আজই প্রথম সাক্ষাত। তাইতো দেখার চাহিদা বা আগ্রহ কোনটাই কমে না। না এটা রিশাদের প্রেম নয়। বোধ হয় তার চোখের প্রেম,তার চোখজোড়াই তো বার বার অনির দিকে তাকায়। অনির সামনে তাকে অপ্রস্তুত করে দেয়। যে চোখ কোন বারণ না মেনে শুধু তাকেই খুঁজে বেড়ায় প্রতিনিয়ত, প্রতিটা মূহুর্তে। কি অদ্ভুত ব্যাপার!এও কি কখনো সম্ভব হতে পারে?? যদি সম্ভব হতো তাহলে কিন্তু মন্দ হতো না। তাকে আর অনির প্রেমে পড়ার প্রয়োজন হতো না।”
সকালবেলা ঘুম থেকে ওঠার পরই এমন অদ্ভুত সব আজগুবি কল্পনা মাথায় আসায় রিশাদ চরমভাবে অবাক হয়। না চাইতেও কেন যে বার বার এই একই কথা মাথায় আসে বুঝে উঠতে পারে না।
অনির বিষন্ন মুখাবয়বে ফুটে ওঠা একগুচ্ছ ক্লান্তি রিশাদের চোখে ধরা পড়ে। রিশাদের উতলা মন তার কোন কারণ খুঁজে পায়না। তার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন। কিসের এত বিষন্নতা,এত কষ্ট অনির?সে তো খুব শীঘ্রই এই তার পুরনো জীবনটা ফিরে পেতে চলেছে। তবুও কিসের এত হতাশা। রিশাদের কোন উত্তর জানা নেই। একের পর এক প্রশ্ন তার মাথায় এসে জমা হচ্ছে শুধু। ভাবনাগুলো ক্রমশ জটিল হয়ে যাচ্ছে। কোন সুরাহা করতে পারছে না।
কিছুক্ষণ পর রিশাদ অনির হাতটা ছেড়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে যায়। রিশাদের প্রস্থান অনি অনুধাবন করতে পারে। তবে চোখ খুলে দেখার কোন প্রয়োজন মনে করছে না।
রিশাদ অজু করে এসে ঘরেই নামাজ পড়ে নেয়। নামাজ পড়ে এসে কিছুক্ষণ অনির পাশেই বসে থাকে। অনির কিছুটা তন্দ্রাভাব চলে এসেছে।
একটু পরেই শায়লা বেগম রুমে আসে অনির কি অবস্থা দেখার জন্য। শায়লা বেগম রুমে আসলে রিশাদ অনির পাশে থেকে উঠে দাঁড়িয়ে তার মাকে বসার জায়গা করে দেয়।
শায়লা বেগম অনির মাথার কাছে বসে পড়েন। অনির শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে কিছুটা হতাশ হন তিনি। এমনিতেই মেয়েটা সব সময় বেশ চুপচাপ থাকে। হঠাৎ করে কি যে হলো বুঝতে পারছেন না তিনি। এ বিষয়ে রিশাদের সাথে তার কথা বলা উচিত। কি একটা ভেবে যেন এই মূহুর্তে তিনি বিষয়টা নিয়ে আর কিছু বলেন না।
শায়লা বেগমের স্নেহের স্পর্শ পেয়ে অনির তন্দ্রাভাব কিছুটা কেটে যায়। চোখ মেলে তাকাতেই শায়লা বেগমের মায়ামাখা মুখটা স্পষ্ট হয়ে যায়। কিঞ্চিত ঠোঁট নাড়িয়ে ম্লান হাসি দেয় শায়লা বেগম। শায়লা বেগমের এই ম্লান হাসিতে অনি যেন স্বস্তি অনুভব করে। তার প্রতিটা পরশ যেন অনির মনে প্রশান্তির হাওয়া বয়।
–“এখন কেমন লাগছে মা?”(শায়লা বেগম)
–“ভালো লাগছে মামনি।”(অনি)
শায়লা বেগম অনির সাথে টুকটাক কথা বলেন। এরপর তিনি রুম থেকে বেরিয়ে যান। রিশাদ এতক্ষণ নীরব দর্শক হয়ে দেখছিল। তার দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দু অনন্যময়ী।
শায়লা বেগম রুম থেকে বেরিয়ে গেলে অনি বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে যেতে নেয়। রিশাদ এগিয়ে এসে অনিকে ধরতে নেয়।
–“আমি একাই যেতে পারবো।আপনাকে কষ্ট করতে হবে না।আমি এখন ঠিক আছি।”(অনি)
অনির কথায় রিশাদের বাড়িয়ে দেয়া হাত দুটো থেমে যায়।রিশাদ হাত নামিয়ে সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে। তার চোখ দুটো অনির উপর স্থির। রিশাদের এমন অসহায় চাহনি উপেক্ষা করে অনি ওয়াশরুমে যায়।
অনির কথাটা যেন রিশাদের মস্তিষ্ক ছাড়িয়ে বুকে গিয়ে বিঁধে। কেমন অভিমানী সুর অনির। রিশাদকে সে পরিষ্কারভাবে উপেক্ষা করে গেল। তার অল্প বিস্তর চেনা অনন্যময়ী যেন পুনরায় অচেনা হয়ে যাচ্ছে। খোলস থেকে বেরিয়ে আসা অনন্যময়ী যেন পুনরায় নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। কি দারুণ কষ্ট হচ্ছে রিশাদের অনির দুটো কথায়।
অনন্যময়ীর প্রতি রিশাদের সুপ্ত অনুভূতি গুলো জাগ্রত হতে শুরু করেছে। সময়ের সাথে সাথে তা বিকশিত হচ্ছে। রিশাদ যেন তা বুঝেও না বোঝার ভান করে আছে। সদ্য বিকশিত হতে থাকা অনুভূতি গুলো যেদিন পুরোপুরিভাবে বিকশিত হয়ে রিশাদের মন ও মস্তিষ্ক জুড়ে রাজ করবে সেদিন আর তা অস্বীকার করার কোন অবকাশ নেই তার। তবে সে দিনটা যত তাড়াতাড়ি আসবে ততই মঙ্গল। খুব বেশি দেরি যেন না হয়।
ফোনের রিংটোনের শব্দে রিশাদের ধ্যান ভাঙে। ফোনের স্ক্রিনে জয়ের নামটা ভেসে ওঠে। রিশাদ ফোনটা সাইলেন্ট করে উল্টো দিক করে টেবিলের উপর রাখে।
দরজা খোলার শব্দে রিশাদের দৃষ্টি সেদিকে যায়। অনি রুমে এসে বিছানায় বসে পড়ে। রিশাদ আড়চোখে অনির গতিবিধি লক্ষ্য করে।
অনির কিছুটা ফ্রেশ লাগছে এখন। শারীরিক দুর্বলতা কমে গেছে। রিশাদের দিকে তাকাতেই তার সাথে চোখাচোখি হয়।
নীরবতা ছেদ করে রিশাদকে বলে;
–“আপনি আজকে অফিস যাবেন না?”(অনি)
–“না।”(রিশাদ)
–“ওহ আচ্ছা”(অনি)
রিশাদ আর কোন উত্তর দেয় না। শুধু একদৃষ্টে অনির দিকে তাকায়। রিশাদ কেন অফিস যাবে না তা জানার কোন চেষ্টা করেনা অনি। রিশাদের কেমন অদ্ভুত লাগে। সে বুঝতে পারলো না অনি তাকে ইগনোর করলো কিনা।
রিশাদ কিছু একটা বলতে যাবে। শায়লা বেগম রুমে চলে আসেন নাস্তার ট্রে নিয়ে। সাথে আসেন রায়হান সাহেব। তিনি হোটেল যাওয়ার জন্য রেডি হয়েছেন। অফিস যাওয়ার পূর্বে অনির সাথে একবার দেখা করে যান।
–“কেমন আছো অনি মা?”(রায়হান সাহেব)
–“আলহামদুলিল্লাহ বাবা। “(অনি)
রায়হান সাহেব রিশাদের সাথে টুকটাক কথা বলে চলে যান। শায়লা বেগম অনিকে খুব যত্ন করে অনিকে খাইয়ে দেন। অনি খেতে কিছুটা অনীহা প্রকাশ করে। তবে শায়লা বেগম তাকে জোর করে স্নেহের সাথে খাইয়ে দেন। শায়লা বেগমের মাতৃস্নেহের চাদর থেকে বেরিয়ে আসার সাধ্য অনির নেই। আদরমাখা শাসন অনির মনটা ভালো করে দেয়।
শায়লা বেগম রিশাদকে খাওয়ার জন্য জোর করলে রিশাদ কৌশলে তা এড়িয়ে যায়। কাজ করার বাহানা দিয়ে পরে খাবে বলে জানায়।
অনির ফোনটা বেজে ওঠে। জাহানারা বেগমের কল। অনি ফোন রিসিভ করে জাহানারা বেগমের সাথে কথা বলে। জাহানারা বেগমকে অনির শরীর খারাপের ব্যাপারটা জানান শায়লা বেগম।
প্রেসার লো হয়ে অনির অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা স্বাভাবিক লাগলেও তার কিছুটা খটকা লাগে। যাকে নিজের হাতে মানুষ করেছেন তার সম্পর্কে এটুকু ধারণা আছে।
তিনি আগে থেকেই জানতেন কোন কারণে খুব বেশি উত্তেজিত হয়ে গেলে অনি অজ্ঞান হয়ে যায়। ছোটবেলায় অনেক বার কাঁদতে কাঁদতে সে জ্ঞান হারাতো। তবে এবারের কারণটা তার জানা নেই।
অনিকে এব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে জাহানারা বেগমের কাছে এড়িয়ে যায়। তার শরীর খারাপের পেছনে যে অস্বাভাবিক কোন কারণ নেই তা বোঝানোর চেষ্টা করে। তবে জাহানারা বেগম পুরোপুরিভাবে আস্বস্ত হয়েছেন কিনা তা সে ফোনের এপাশে থেকে বুঝে উঠতে পারে না।
জাহানারা বেগমের সাথে কথা বলা শেষ করে অনি। ফোনটা রেখে সে রিশাদের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় রিশাদ ল্যাপটপে খুব মনোযোগ দিয়ে কিছু একটা দেখছে। তার চোখ যেন নড়ছেই না। অনি কিছটা ভ্রু কুঁচকে তাকায়।
রিশাদের দৃষ্টি অনির কেমন অস্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কি দেখছে সে ল্যাপটপে।তাকে দেখে মনে হচ্ছে না যে কোন কাজ করছে। অনির কৌতূহল বেড়ে যায়। হুট করেই তার মনে পড়ে যায় প্রথম যেদিন সে রিশাদের ল্যাপটপটা নিয়েছিল সেদিনই দেখেছিল অদ্রি আর রিশাদের একসাথে কাটানো ক্যামেরায় বন্দী ভালোবাসার মূহুর্ত। সে কি ভুল ভাবছে??তার ধারণা তো ভুলও হতে পারে। যদি ভুল হয় তাহলে বোধ হয় এই পৃথিবীতে তার চেয়ে সুখী আর কেউ হবে না।
নিমিষেই অনির মনে যেন কালো মেঘ ভিড় জমায়। বিষণ্ণতায় ছেঁয়ে যায় তার অন্তর। তার বেসামাল হৃদয় যে অবাধ্য হয়ে ভুল পথে যেতে শুরু করেছে। খুব দ্রুত তাকে এখান থেকে চলে যেতে হবে। তাছাড়া যে আর কোন উপায় নেই তার কাছে।
অনি কোন কথা না বলে নিঃশব্দে পা ফেলে বেলকুনিতে গিয়ে বসে। অন্যদিকে রিশাদ এতটাই মগ্ন যে তার সেদিকে কোন খেয়ালই নেই। সে যে ল্যাপটপে তার অনন্যময়ীর আলোকচিত্র দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
অনি রিশাদের অগোচরে মিথিলা তাদের একসাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো ক্যামেরায় বন্দী করে নিয়েছিল। রিশাদ তার কাছ থেকেই এই সকল ছবি সংগ্রহ করেছে।
খুব স্বাভাবিক অকৃত্রিম ছবি। না আছে মুখে কোন সাজসজ্জা না আচ্ছে কোন কৃত্রিম দেহভঙ্গি। প্রতিটা ছবিই রিশাদকে মুগ্ধ করেছে বার বার। কোন ছবিতে উদীয়মান সূর্যের আলোক রেখায় তার চোখমুখ চকচক করছে তো আবার কোনটাতে সে ফুলের সুবাস নিতে ব্যস্ত।
রিশাদের সবচেয়ে প্রিয় যে ছবিটা সেটা হলো সেদিন ছাদের উপর ওঠানো ছবিটি। যেখানে অনি রিশাদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে আর রিশাদ তার হাতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে অনির কোমড়টা জড়িয়ে ধরেছে। ছবিটা দেখে রিশাদ অজান্তেই হেসে দেয়। সাথে একটু লজ্জাও পায়। সবগুলো ছবির মধ্যে এই ছবিটা তার কাছে একটু স্পেশাল মনে হয়। তাইতো রিশার সব আবদার মেনে নিয়ে এই ছবিগুলো সে সংগ্রহ করেছে।
বেলকনিতে রাখা ঝুলন্ত ফুলের টবটার দিকে তাকিয়ে আছে অনি। দৃষ্টি তার সেদিকে থাকলেও অন্য ভাবনায় মগ্ন সে। তার ভাবনার সবটা জুড়েই এখন শুধুই রিশাদের বিচরণ। রিশাদ রিশাদ রিশাদ! উফফফ!কেন না চাইতেও বার বার এই একটা কথাই তার মাথায় আসে।
অনির খুব কান্না পাচ্ছে। তবে এর কারণ সে বুঝতে পারছে না। চেয়ারের হাতল মুষ্টিবদ্ধ করে চেপে ধরে। তার ঠোঁট নাক মুখ কাঁপছে। শুষ্ক চোখ দুটো আদ্র হয়ে আসছে। কান্না চেপে রাখার প্রাণপণ চেষ্টা করছে সে। ঠিক যেমন করে সমুদ্রের ঢেউ উপকূলে এসে আছড়ে পড়ে একই ভাবে তার অবাধ্য অশ্রুগুলোও যেন আর বাঁধ মানে না।
চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসছে। অবাধ্য অশ্রু থামার নামই নিচ্ছে না। একের পর এক আসতেই আছে। যত অশ্রু গড়াচ্ছে বুকটা ততই ভারী হয়ে আসছে। ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কি অদ্ভুতভাবে কোন শব্দ না করে নীরবেই তা সহ্য করে যাচ্ছে। আর্তনাদ গুলো সব দলা পেকে আছে। এত কষ্ট নিয়েও কি এতটা শান্ত থাকা যায়?
অনেকক্ষণ পর রিশাদ ল্যাপটপ মাথা তুলে তাকায়। রুমের চারদিকে চোখ বুলিয়ে অনিকে খুঁজে পায়না। সে ভাবতে থাকে অনি কোথায় গেল। আর একটা মানুষ এখান থেকে উঠে চলে গেল সে টেরই পেলনা।
রিশাদ বেলকনির দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় অনিকে। অনির পেছনের দিকটা দেখতে পাচ্ছে সে। চুপ চাপ বসে আছে বাইরের দিকে তাকিয়ে হয়তো। রিশাদ ল্যাপটপটা বন্ধ করে সরিয়ে রাখে।
অনির কাছে যাবে কিনা বেশ দ্বিধায় আছে। কিছুক্ষণ পর সকল দ্বিধার অবসান ঘটিয়ে বেলকনির দিকে পা বাড়ায় রিশাদ।
চলবে…….
আসসালামু আলাইকুম?