অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_২৮
নিকষ কালো আঁধার রাত। দূর দূর পর্যন্ত কাউকে দেখা যাচ্ছে না। হালকা কুয়াশায় চারপাশটা ছেয়ে আছে। কিছুদূর পর পর আঁধার চিড়ে দেখা যাচ্ছে একগুচ্ছ হলুদ কৃত্রিম আলো। ব্যস্ততায় আচ্ছন্ন ক্লান্ত শহরটা সারাদিনের ধকল শেষে যেন একেবারে ঝিমিয়ে পড়েছে। রাস্তার পাশে ঝিমুতে থাকা কুকুরগুলো মাঝে মাঝে ডেকে উঠে তাদের অস্তিত্বের জানান দিচ্ছে। কোলাহলপূর্ণ শহরটা যেন মানুষের সাথে পাল্লা দিয়ে নীরবে ঘুমোচ্ছে। বাহ্যিকভাবে নীরব এই শহরের অভ্যন্তের কোন কোন ছাদের তলায় কেউ কেউ এখনও সজাগ আছে।
বেলকনির রেলিং ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে রিশাদ। কিছু অব্যক্ত মানসিক যন্তণা তাকে ঘুমাতে দিচ্ছে না। পুরনো অতীত গুলোর পাশাপাশি অনির ব্যাপারটাও তাকে ভাবাচ্ছে। সপ্তাহখানেক এর বেশি সময়ের পরিচিতি অনি রিশাদের। যেখানে অদ্রির সাথে পরিচিতি সেই কলেজ জীবন থেকে। যদিও বা সে সময় তাদের মাঝে বিশেষ কোন সম্পর্ক ছিল না। দীর্ঘ পাঁচ বছরের সম্পর্ককে এক নিমিষে ছিন্ন করে রিশাদকে বিয়ের আসরে চূড়ান্ত অপমানের মাঝে ফেলে চলে যায় অনি শুধু মাত্র তার সুন্দর ক্যারিয়ারের জন্য। রিশাদকে উপেক্ষা করে সে পাড়ি জমিয়েছে দূর অজানায়। এতোটা অসম্মান রিশাদের প্রাপ্য নয়। তাদের এতো দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ককে এভাবে অপমান করায় রিশাদ খুব বাজে ভাবে আঘাত পেয়েছে। তবুও যেন ঘুরে ফিরে অদ্রিতেই সে আটকে আছে। তার মন মস্তিষ্ক জুড়ে যেন অদ্রির বিচরণ। কোথাও কি অনির জন্য কিঞ্চিত পরিমাণ জায়গা নেই??
এমন আজগুবি চিন্তা ভাবনায় রিশাদ খুব বিরক্ত হচ্ছে। অপ্রত্যাশিতভাবে অনির সাথে রিশাদের জীবনটা জড়িয়ে গেছে। সে চায়না অনিকে এই অনাকাঙ্ক্ষিত সম্পর্কে বেঁধে রাখতে। আচ্ছা এমন কি হতে পারে না যে অনি নিজে থেকেই রিশাদের সাথে থাকতে চাইবে। সে আর এদেশ থেকে যাবে না। খুব কি অসম্ভব?? সে কি পারে না রিশাদের সাথে সম্পর্কটা নিয়ে আরেকবার ভেবে দেখতে!!
রাস্তার মাথার মসজিদ থেকে আযানের ধ্বনি ভেসে আসে রিশাদের। রিশাদের ধ্যান ভাঙে। এতক্ষণ ধরে অনিকে নিয়ে আকাশ কুসুম কল্পনায় রিশাদ বেশ লজ্জিত হয়। সে কি ভাবছে এসব! অনি কিছু দিনের অতিথি তার জীবনে। যে খুব শীঘ্রই তার নিজের জায়গায় ফিরে যাবে। নীরব হতাশাময় দীর্ঘশ্বাস ফেলে রিশাদ। চারপাশটা আযানের ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে যায়। রিশাদ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে।
রুমে এসে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে অযু করে বেরিয়ে আসে রিশাদ। অসুস্থতা জনিত কারণে বিগত দিনগুলোতে তার নামাজ পড়া হয় নি। রিশাদ ইসলামিক বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি অভিজ্ঞ না হলেও নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া সহ হালাল হারাম সমস্ত বিষয়গুলো সাধ্যমতো মেনে চলার চেষ্টা করে।
নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার মূহুর্তেই রিশাদের চোখ পড়ে অনির উপর। বিছানার ধারের দিকে জড়সড় হয়ে শুয়ে আছে অনি। ভোর রাতের দিকে ঠান্ডা আবহাওয়ায় জড়সড় হয়ে গেছে অনি। রিশাদ তা বুঝতে পেরে রিমোট টিপে এসি বন্ধ করে দেয়। ওয়ারড্রব থেকে একটা পাতলা চাদর বের করব অনির গায়ে জড়িয়ে দেয়।
রিশাদ মনে মনে ভাবে; অনি তো এই সময়ে উঠে যায়। আজ এখনো ঘুমিয়ে আছে যে? হয়তো একটু পরেই উঠে পড়বে। ভেবেই রিশাদ টুপিটা মাথায় দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
নিচে নামতেই রিশাদের দেখা হয়ে যায় রায়হান সাহেবের সাথে। তিনিও নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন। রিশাদ অসুস্থ হওয়ার আগের দিন পর্যন্তও রায়হান সাহেব আর রিশাদ একসাথে ফজরের নামাজ পড়তে গেছে। তবে অসুস্থতাজনিত কারণে কিছুদিন আর তা হয় নি। আজ ছেলেকে দেখে রায়হান সাহেবের মনটা সকাল সকাল খুব ভালো হয়ে যায়।
–আরে রিশাদ! তুই নামাজ পড়তে যাবি? ( রায়হান সাহেব)
–হ্যা বাবা। এখন তো আমি সুস্থ আছি চলো একসাথে যাই। (রিশাদ)
ছেলের কথায় সম্মতি জানিয়ে একগাল হেসে দেন রায়হান সাহেব। এরপর রিশাদ আর রায়হান সাহেব মসজিদের দিকে যান। দূর থেকে শায়লা বেগম রিশাদ আর রায়হান সাহেবকে এতো দিন পর এভাবে দেখে মুচকি হাসে।
প্রায় পাঁচটা বাজতে চলেছে। ঘুম ঘুম চোখে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ধড় মড় করে উঠে পড়ে অনি। বিছানায় বসে চোখ কচলাতে থাকে। দু তিন মিনিট সময় নেয় স্বাভাবিক হতে। ঘাড় বাঁকিয়ে পাশে তাকাতেই রিশাদের অনুপস্থিতি টের পায় অনি। রিশাদ কে না দেখতে পেয়ে পুরো রুমে চোখ বুলায় অনি। কোথাও রিশাদ নেই। বিছানা থেকে আস্তে আস্তে নেমে ওয়াশরুমে যায়। সেখানেও রিশাদকে পায়না। ভ্রু বাঁকিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে অনি। কিছুকাল এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর অযু করে বেরিয়ে আসে ওয়াশরুম থেকে। জায়নামাজ বিছিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করে নেয়।
নামাজ শেষ করে বিছানায় পা তুলে কিছুক্ষণ বসে থাকে অনি। গালে হাত দিয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে। চুল গুলো দুপাশ দিয়ে পড়ে হাত ও গালের অংশ বিশেষ ঢেকে ফেলেছে। অনি ভাবতে থাকে রিশাদ এতো ভোরবেলা কোথায় গেল? এতো ভেবেও সে কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না। বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুলগুলো ঘাড়ের উপর বেঁধে নিয়ে মাথায় কাপড় তুলে দেয়। নিজেকে ভালো ভাবে ঢেকে নিয়ে আয়নায় একবার পা থেকে মাথা অবধি দেখে নেয়।
রুম থেকে বেরিয়ে রান্না ঘরের দিকে পা বাড়ায় অনি। সিঁড়ি বেয়ে নিচের দিকে নামে সে। ড্রইংরুম পার করে রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই কান্নার শব্দ ভেসে আসে অনির কানে। আপনা আপনি অনির পা থেমে যায়। পিছনে ঘুরে সে চারপাশে শব্দের উৎস খোঁজার চেষ্টা করে। কারো আর্তনাদ স্পষ্ট অনির কানে ভেসে আসছে। সামনের দিকে এগোতেই যেন শব্দটা আরো স্পষ্ট হয়। সাবিনা বেগমের রুমের সামনে এসে থেমে যায়। শব্দটা এই রুম থেকেই আসছে। অনি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কিছু একটা ভাবতে থাকে।
দরজাটা হালকা চাপ দিতেই কিছুটা খুলে যায়। হিজাবে আবৃত কেউ একজন জায়নামাজে বসে আসে। অনি বুঝতে পারে এটা সাবিনা বেগম। সাবিনা বেগম দু হাত তুলে মোনাজাতে কাঁদছেন আর কিছু একটা প্রার্থনা করছেন। অনি স্পষ্ট ভাবে কিছু বুঝতে পারছে না। আবছা আবছা তার কানে ভেসে আসছে তবে শব্দগুলো মস্তিষ্ক ঠিকভাবে ঠাওর করতে পারছে না। অনি আরো মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শোনার চেষ্টা করে। নিজের কৌতূহল দমিয়ে রাখতে না পেরে সে পা টিপে টিপে রুমের মধ্যে ঢুকে যায়।
— হে আল্লাহ, তুমি আমার মেয়ের কষ্ট একটু কমিয়ে দাও আল্লাহ। জন্মের পর থেকে সে পিতার স্নেহ পায় নি। এবাড়িতে এসে পেয়েছে একটা পরিবার। এই পরিবারের প্রত্যেকের কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো। এদের ঋণ আমি কখনো শোধ করতে পারবো না। সবাইকে তুমি ভালো রেখো সুখে রেখো। কারো কষ্টের বিনিময়ে আমি আমার মেয়ের সুখ কামনা করিনা। অবচেতন মনে অবুঝ বয়স থেকেই সে রিশাদকে তার মনে জায়গা দিয়েছে। আমার মেয়ের এই একতরফা অপ্রকাশিগ ভালোবাসার জন্য সে মারাত্মকভাবে মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছে। তুমি তাকে এই পীড়া থেকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করো। তার জীবনে কষ্টের অবসান ঘটিয়ে দাও আল্লাহ। আমার মেয়েকে সকল বালা মসিবতের হাত থেকে রক্ষা করো।…..
এটুকু শুনে অনি আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। সে চুপচাপ রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
সাবিনা বেগমের অশ্রুসিক্ত কথাগুলো বার বার যেন তার কানে ভেসে আসছে। মিথিলা রিশাদকে ভালোবাসে ভাবতেই আর অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে। মিথিলাকে বরাবরই তার কিছুটা অস্বাভাবিক লেগেছে। তার ম্লান হাসির পেছনে লুকিয়ে থাকা বেদনাহত চাহনির পেছনে কারণগুলো অনির সামনে স্পষ্ট। সেই ছোটবেলা থেকে রিশাদকে ভালোবাসে। যা এই বাড়ির কেউ হয়ত কখনো টেরই পায়নি। কতটা মানসিক যন্ত্রণায় সে প্রতিনিয়ত ভোগ করছে। নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্য কারো সাথে দেখা খুব সহজ কথা নয়। মিথিলা নিতান্তই বাচ্চা মেয়ে। এই ছোট্ট বয়সে এতটা মানসিক পীড়া সে কিভাবে সহ্য করছে। এই সময়টা তা আনন্দ মজা করে কাটানোর কথা সেখানে প্রতিনিয়ত নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে সবার সাথে কেমন হাসি মুখে কথা বলে চলেছে। সত্যিই মেয়েটা অনেক স্টং। আল্লাহ যেন তাকে সব সময় সুখে রাখে।
কিছু একটার সাথে ধাক্কা লেগে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নেয় অনি। পড়ে যাওয়ার পূর্বে একজোড়া শক্ত হাত তাকে সামলে নেয়। অনি হঠাৎ এভাবে পড়ে যেতে নেয়ায় উত্তেজনায় দুচোখ বুজে ফেলে। হাত দিয়ে সামনে যা পেয়েছে আঁকড়ে ধরেছে অনি। কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে অনি বুঝতে পারে সে মাটিতে পড়ে নি। কুঞ্চিত হয়ে আসা চোখ দুটো মেলে দেখতে পায় রিশাদ তাকে আঁকড়ে ধরেছে। অনিও হাতের কাছে কিছু না পেয়ে রিশাদের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরেছে। অনি খুব দ্রুত সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে রিশাদের কাছ থেকে দূরে সরে যায়।
রিশাদ হালকা কাশি দিয়ে বলে; কি ব্যাপার বলুন তো। হাঁটার সময় আপনার চোখ কোথায় রাখেন? আর কি এতো ভাবছিলেন আপনি??
অনি আমতা আমতা করে বলে; কই নাতো কিছু না। আমি তো আপনাকেই খুঁজছিলাম। কোথায় ছিলেন আপনি বলুন তো।
–এইতো মিস মসজিদে গিয়েছিলাম। আপনি ঘুমোচ্ছিলেন তাই আপনাকে আর ডাকিনি। (রিশাদ)
অনি এবার ভালোভাবে রিশাদের দিকে লক্ষ্য করে। সাদা পাঞ্জাবিতে রিশাদকে বেশ শুভ্র লাগছে। তার চেহারায় ফুটে উঠেছে পবিত্র স্নিগ্ধতার পরশ। রিশাদের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে অনি।
রিশাদ অনির এভাবে তাকিয়ে থাকায় অনির সামনে হাত নাড়িয়ে বলে; হ্যালো মিস অনন্যময়ী! আপনি আবার কোথায় হারিয়ে গেলেন?
— না মানে.. আপনি যাওয়ার আগে আমাকে বলে যাবেন তো নাকি। এতো সকাল বেলা ঘর থেকে উধাও। (অনি)
–এক্সট্রিমলি সরি। আপনাকে ডিস্টার্ব করতে চাইনি। তাই ডাকিনি। আসলে আমি প্রায়ই ভোরবেলা বাবার সাথে নামাজ পড়তে যাই। আপনি আমাদের বাসায় নতুন এসেছেন তো তাই জানেন না। (রিশাদ)
–হুম। ইটস ওকে। আপনি যান আমি একটু রান্নাঘরে যাচ্ছি মামনির কাছে। (অনি)
বলেই অনি রান্নাঘরের দিকে যায়। রিশাদ অনিকে আটকে দিয়ে বলে; ওয়েট অনন্যময়ী। আম্মু এত সকালে রান্নাঘরে যায় না। এখন নামাজ পড়ছে আম্মু। আমি আম্মুর রুমের সামনে দিয়ে আসছিলাম
অনি ধীর গলায় বলে; ওহ আচ্ছা।
অনিকে চুপ থাকতে দেখে বলে; আচ্ছা আপনি যদি রাজি থাকেন আমরা বাইরে থেকে একটু হেঁটে আসতে পারি। কি বলেন মিস?
–আচ্ছা ঠিক আছে চলুন। কিন্তু একটা শর্ত আছে আমাকে চা খাওয়াতে নিয়ে যেতে হবে। ওই দিনের চা টা খুব মজার ছিল কিন্তু। খুব ঊৎফূল্ল হয়ে কথাগুলো এক নাগাড়ে বলে অনি।
রিশাদ হালকা হেসে বলে; ওকে ম্যাম। বলে রিশাদ হাঁটা শুরু করে। অনি খুব উৎসাহ নিয়ে রিশাদের পিছু পিছু হাঁটে।
সকালের হালকা কুয়াশার চাদর ভেদ করে ফাঁকা রাস্তায় পাশাপাশি হেঁটে চলেছে অনি রিশাদ। কখনো রিশাদের কথা শুনে ফিক করে হেসে দিচ্ছে তো আবার কখনো খুব উৎসাহ নিয়ে রিশাদকে নিজের গল্প গুলো শোনাচ্ছে। এই মূহুর্তে এই দম্পতি দেখে মনে হচ্ছে যেন সুখী দম্পতিদের মাঝে তাদের নাম শীর্ষে থাকার যোগ্য।
রিশাদ অনির পাশাপাশি আরো দু একজনকে হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে কেউ হয়ত অসুস্থতার জন্য ডাক্তারের পরামর্শে হাঁটছে নয়তো কারো প্রতিদিনের অভ্যাস। হাঁটতে হাঁটতে রিশাদদের এরিয়ার পার্কের সামনে চলে আসে অনি রিশাদ। পার্কের লোহার গ্রীলের প্রাচীর ভেদ করে অনি নজর পড়ে বেঞ্চে বসে খুনসুটিতে মেতে থাকা একজোড়া কপোত-কপোতীর উপর। তারা উভয়েই সিনিয়র সিটিজেন। জীবনের অন্তিম পর্যায়ে এসে উপনীত হয়েছেন। তবুও দূর থেকে তাদের খুনসুটি দেখে মনে হচ্ছে যেন বছর বিশেক এর যুবক যুবতী। বয়সের ভাড়ে নুইয়ে পড়ছে ঠিকি ভালোবাসা কিন্তু এখনো সেই প্রথম দিনের মতোই সতেজ।
–অনন্যময়ী!! (রিশাদ)
রিশাদের ডাক শুনে ধ্যান ভাঙে অনির। কিছুটা দূর এগিয়ে যাওয়া রিশাদ পুনরায় পিছনে ফিরে অনির কাছে এসে বলে; কি হয়েছে?? থেমে গেলেন যে??
অনি নির্বিকার ভঙ্গিতে জবাব দেয়ঃ “কিছুনা চলুন”।
রিশাদের উত্তরের অপেক্ষা না করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। রিশাদ কিছুটা অবাক হয়ে যায়। পরক্ষণেই অনির সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটা ধরে।
চায়ের দোকানের সামনে এসে থামে অনি রিশাদ। চাওয়ালা লোকটা দোকান খুলে হয়ত সবে মাত্র চুলায় চা বসিয়েছে। রিশাদ অনিকে দেখে হাসিমুখে বেরিয়ে আসে। কাঁধের গামছাটা দিয়ে বেঞ্চি মুছে দিয়ে বসতে দেয়। রিশাদ অনি চাওয়ালার সাথে কুশল বিনিময় করে বসে পড়ে।
মিনিট সাতেক পর চাওয়ালা লোকটা একরাশ উচ্ছ্বাস আর আবেগঘন হাসির সাথে ধোঁয়া ওঠানো চা ভর্তি কাপ নিয়ে হাজির হয়। অনির মনটা এক নিমিষেই ভালো হয়ে যায়। সেদিনের চায়ের স্বাদটা যেন আজো তার মুখে লেগে আছে। তাড়াহুড়ো করে কাপে চুমুক দিতেই –
–আহ!!(অনি)
রিশাদ অনির বেদনাতুর কণ্ঠ শুনে উদগ্রীব হয়ে অনির নিকটে চলে যায়।
— কি হলো আপনার? আর ইউ ওকে অনন্যময়ী? (রিশাদ)
— তেমন কিছু না।চা টা একটু বেশিই গরম ছিল। ঠোঁটে একটু ছ্যাকা লেগেছে। (অনি)
রিশাদ অনিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই অনির মুখের কাছে গিয়ে ঠোঁটে ফুঁ দিতে থাকে। সারা শরীর জুড়ে হালকা কাঁপুনি অনুভব করে অনি। হার্টবিট বেড়ে গেছে তার। খুব অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছে তার। রিশাদ যতবার ফুঁ দিচ্ছে ততবারই যেন অনির সারা শরীর জুড়ে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। বরফের মতো জমে গেছে অনি। তার স্থির নজর অস্থির রিশাদের উপর আটকে গেছে। নড়ন চড়ন ও যেন বন্ধ হয়ে গেছে অনি।
আনুমানিক এক মিনিটের ব্যবধানে রিশাদের হুশ ফেরে। অনির খুব কাছে চলে এসেছে। তার শরীরের গন্ধ স্পষ্ট রিশাদের নাকে ভেসে আসছে। অনির নিঃশ্বাসের শবটাও তার কানে এসে বাজছে। রিশাদ অনির কাছ থেকে ছিটকে দূরে সরে যায়। নিজের অবস্থানে বসে পড়ে। তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। কোষের নিউরন গুলো যেন তার চিন্তা ভাবনার ক্ষমতাকে হ্রাস করে দিতে দিতে একেবারে তলানিতে চলে এসেছে। দুচোখ বুজে বড় করে নিঃশ্বাস নেয় রিশাদ।
মিন মিন গলায় বলে; সসসরিইই!! আসলে আমি ভেবেছি আপনার হয়তো বড় কোন সমস্যা হয়েছে। (রিশাদ)
রিশাদের আওয়াজ পেয়ে অনিও কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বলে; ইটস ওকে। বাই দ্যা ওয়ে থ্যাংকস ফর ইউর কনসার্ন। (অনি)
–হুম। চা টা খেয়ে নিন ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। জলদি বাসায় ফিরতে হবে। কাউকে বলে আসা হয়নি। বাসার সবাই টেনশন করবে। (রিশাদ)
অনি রিশাদের কথায় সম্মতি জানিয়ে চা খাওয়ায় মনোযোগ দেয়। পিনপতন নীরবতা। কেউ টু শব্দটি পর্যন্ত করেনি একে অপরের সাথে কথা বলা তো দূরেই থাকলো।
চা খাওয়া শেষ করে রিশাদ বিল মিটিয়ে দিয়ে অনিকে নিয়ে বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করে। চাওয়ালা লোকটা টাকা নিতে না চাইলে রিশাদ জোর করে তার হাতে পাঁচশ টাকার একটা নোট গুঁজে দেয়।
বাড়ি ফেরার পথে রিশাদ অনির সাথে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করে। সকল জড়তা সংকোচবোধ উপেক্ষা করে রিশাদ অনির সাথে টুক টাক কথা বলে। প্রথম দিকে অল্প কথায় উত্তর দিলেও ধীরে ধীরে অনিও রিশাদের সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলে।
ড্রইংরুমের এ মাথা ও মাথা জুড়ে পাইচারি করছে শায়লা বেগম। হাতের ফোনটা দিয়ে বার বার অনি রিশাদের নাম্বারে ডায়াল করে যাচ্ছে কিন্তু কেউই ফোন রিসিভ করছে না। দরজার দিকে ফিরে ফিরে তাকাচ্ছেন তিনি। এতো ভোর বেলা কোথায় গেল অনি রিশাদ? আটটা বাজতে চলেছে কারো কোন হদিস নেই। বিড় বিড় করে বকা দিচ্ছেন অনি রিশাদকে।
রায়হান সাহেব নিশ্চিত ভঙ্গিতে সোফায় বসে পেপার পড়ছেন। এতে যেন শায়লা বেগম আরো বেশি রেগে যাচ্ছেন।
–আহ শালু। প্লিজ রিলাক্স। ওরা আশে পাশেই কোথাও গেছে হয়তো দেখো ;এক্ষুণি ফিরে আসবে। তুমি অযথা এতো হাইপার হচ্ছো। (রায়হান সাহেব)
রায়হান সাহেবের কথা শুনে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে শায়লা বেগম।
–তুমি চুপ করো। সেই ভোরবেলা থেকে ছেলে মেয়ে দুটো বাড়ি থেকে উধাও আর আমাকে বলে অযথা হাইপার হচ্ছো। পায়ের উপর পা তুলে পেপার পড়ছো তো নিজে কত বার করে বলছি তোমাকে একবার বাইরের দিকে দেখে এসো কোথায় গেলো?? না ওনার তো সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই। পেপার পড়া তো তোমার কাছে বেশি জরুরি। তো পড়ো না পেপার এতো কথা কে বলতে বলেছে তোমাকে শুনি। (শায়লা বেগম)
শায়লা বেগমের রাগ চরমে পৌঁছে গেছে। এই মূহুর্তে রায়হান সাহেবের কোন কথা বলা মানে আগুনে ঘি ঢালা তাই তিনি বুদ্ধিমানের মতো কোন কথা না বাড়িয়ে চেপে যান।
রায়হান সাহেবের এভাবে চুপ করে থাকাতেও শায়লা বেগমের মেজাজ খারাপ হচ্ছে। আরো কিছু বলার পূর্বেই রিশাদের কণ্ঠ ভেসে আসে শায়লা বেগমের কানে।
–আম্মু!!(রিশাদ)
শায়লা বেগম রাগান্বিত স্বরে বলেন; কই গেছিলি তুই? আমাকে বলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করিস না নাকি? আর কতক্ষণ ধরে আমি তোকে কল দিচ্ছি ফোর ধরিস না কেনো? আর অনি মা তুই তো অন্তত বলে যাবি।
–সরি আম্মু। আসলে ফোনটা রুমে রেখে গেছি। আর আমরা যখন বেরিয়ে যাই তখন তুমি নামাজ পড়ছিলা। (রিশাদ)
–দেখেছো তো। আমার কথা না শুনে তুমি শুধু শুধু টেনশন করছিলে। (রায়হান সাহেব)
–এই তুমি চুপ থাকো তো। এই বাড়িতে কেউ আমার কথার মূল্য দেয় না। কেউ আমাকে দাম দেয় না। বলেই শায়লা বেগম রাগ দেখিয়ে রান্নাঘরের দিকে যায়।
সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে একে অপরের দিকে তাকায়। রায়হান সাহেব বলে; চেপে যাও সবাই। মহারানী খুব খেপেছে।
রায়হান সাহেবের কথা শুনে অনি রিশাদ শব্দ করে হাসতে থাকে। রায়হান সাহেবও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে হাসিতে যোগ দেয়।
কিছুক্ষণ পর অনি রান্নাঘরের দিকে যায়। শায়লা বেগম চোখমুখ কুঁচকে রান্না করছিলেন। অনি পেছনে দাঁড়িয়ে বলে; সরি মামনি। আসলে বুঝতে পারিনি এতোটা দেরি হয়ে যাবে। প্লিজ সরি মামনি।
অনি অসহায় কণ্ঠে শায়লা বেগমের মান ভাঙে। অনির দিকে ফিরে তার গালে হাত দিয়ে বলেন; হয়েছে আর সরি বলতে হবে না মা। এভাবে হুট করে উধাও হয়ে গেলি ফিরতেও দেরি হচ্ছিল আমার খুব টেনশন হচ্ছিল। যাওয়ার আগে বলে তো যাবি।
–সরি মামনি। আর এরকম হবে না। (অনি)
শায়লা বেগম মুচকি হেসে অনির কপালে চুমু দেন।
প্রায় সাড়ে এগারোটা বাজে। বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছিল রিশাদ। অনি রুমে বসে বসে খুব বোর হচ্ছিল। ফোনট কিছুক্ষণ ঘাটাঘাটি করে রেখে দেয়। রিশাদ দু একবার আড়চোখে দেখে তবে কিছু বলে না। অনি অলসভাবে সোফায় পা তুলে হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আসে। তার লম্বা চুলগুলো এলোভাবে দুপাশ দিয়ে মুখটা প্রায় ঢেকে দিয়েছে।
নীরবতার রেশ কাটিয়ে অনির ফোনের রিংটোন বেজে ওঠে। রিশাদ অনির দিকে তাকায়। অনি কল রিসিভ করার ক্ষেত্রে কোনরকম দ্রুততা দেখায় না। ফোনের শব্দে যেন তার মাথাটা ভন ভন করছে। একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা হাতে নেয়।
হোমস্ক্রিনে একটা অচেনা নাম্বার। অনি মনে মনে ভাবে; আননোন নাম্বার! আমাকে আবার কে কিল দিবে? ভাবতে ভাবতেই কল রিসিভ করে কানে ধরে অনি।
ফোনের ওপাশ থেকে একটা বাচ্চার কণ্ঠস্বর ভেসে আসে।
–আসসালামু আলাইকুম। (ফোনের ওপাশে)
–ওয়ালাইকুমুস সালাম।(অনি)
অনি বুঝতে পারছে না বাচ্চাটা কে? এই দেশে তাকে কোন বাচ্চা এভাবে কল দিবে। চিন্তায় পড়ে যায় অনি। অনির চিন্তার অবসান ঘটিয়ে অপর পাশ থেকে বলে ওঠেঃ
–কেমন আছো পরী আন্টি?(গুনগুন)
অনির কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে গেছে।
–আলহামদুলিল্লাহ আমি ভালো আছি। তুমি কেমন আছো প্রিন্সেস?(অনি)
–ভালো আছি। তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো পরী আন্টি। তোমার সাথে কাট্টি। (গুনগুন)
–কে বলেছে? প্রিন্সেসকে কখনো ভুলতে পারি আমি। প্রিন্সেসকে তো আমি এত্তো এত্তোগুলা ভালোবাসি। (অনি)
ফোনের ওপাশ থেকে খিল করে হাসে গুনগুন। গুনগুনের হাসির শব্দে অনির মনটাও ভালো হয়ে যায়।
–তাহলে বলো তুমি আমার বার্থডে তে আসবে। (গুনগুন)
–প্রিন্সেসের বার্থডে? কবে সেটা?(অনি)
–কালকে। তুমি আসবে কিন্তু। না এলে তোমার সাথে গুনগুন কথা বলবে না। তোমাকে আসতেই হবে। (গুনগুন)
–আচ্ছা সোনা তোমার মাম্মা আছে?? তোমার মাম্মাকে একটু দাও তো।
–না মাম্মাম তো নেই। চাচ্চু আছে তুমি চাচ্চুর সাথে কথা বলো।(গুনগুন)
–গুনগুন শোনো তোমার মাম্মাকে……
অনিকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই গুনগুন হিমাদ্রীর হাতে ফোন ধরিয়ে দেয়। হিমাদ্রীও গুনগুনের এমন কাজে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। কিছুটা অস্বস্তিবোধ নিয়ে কানে ধরে।
–হ্যালো।(হিমাদ্রী)
পুরুষালি কণ্ঠ শুনে অনি কিছুটা অস্বস্তিবোধ করে। কিছুটা সংকোচবোধ নিয়ে বলে;
–আসসালামু আলাইকুম। (অনি)
–ওয়ালাইকুমুস সালাম? আপনি অনন্যময়ী??(হিমাদ্রী)
–হ্যা, আমিই অনন্যময়ী শেখ। গতকাল গুনগুনের সাথে হসপিটালে পরিচয় হয়। (অনি)
–হ্যা গুনগুন আমাকে সবটা বলেছে। আসলে আজকেই আমরা গুনগুনকে নিয়ে বাসায় ফিরেছি। এখনও পুরোপুরিভাবে সুস্থ হয়নি। কাল গুনগুনের জন্মদিন। প্রতিবছর অনেক ধুমধাম করেই সেলিব্রেট করে হয় তবে এবছর গুনগুন একটু অসুস্থ। তাই ছোটখাটো করেই ঘরোয়াভাবে একটা পার্টি এরেঞ্জ করা হয়েছে। সবাই ফ্যামিলি মেম্বার্স। গুনগুনের আপনাকে খুব ভালো লাগে বারবার আপনার কথা বলছিল। তাই বাধ্য হয়ে কল দিলাম। আই হোপ আপনি বিরক্ত হবেন না। আপনি আসলে গুনগুনেরও খুব ভালো লাগবে। (হিমাদ্রী)
–ইটস ওকে। একচুয়ালি আমারও গুনগুনকে খুব ভালো লেগেছে। শি ইজ সাচ এ লাভলি কিড। আই জাস্ট লাভ হার। বাট একটা প্রবলেম আছে। পার্টিটা এটেন্ড করার ব্যাপারে আমি আপনাকে এক্ষুণি কিচ্ছু জানাতে পারছি না। আই উইল কল ইউ ব্যাক ইন এ ফিউ মিনিটস। (অনি)
–ওকে ওকে নো প্রবলেম। প্লিজ টেক ইউর টাইম।আপনার একা আসতে প্রবলেম হলে আপনি আপনার ফ্যামিলিকে নিয়ে আসতে পারেন। ইট উইল বি গ্রেট। (হিমাদ্রী)
–ওহ ওকে। আই উইল কল ইউ ব্যাক। আল্লাহ হাফেয। (অনি)
–আল্লাহ হাফেয। (হিমাদ্রী)
অনি ফোনটা রেখে রিশাদের দিকে তাকায়। রিশাদও আড়চোখে অনির দিকেই তাকিয়ে ছিল। রিশাদের সাথে অনির চোখাচোখি হতেই রিশাদ চোখ সরিয়ে নেয়। অনি রিশাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
–কে কল করেছিল আপনাকে??(রিশাদ)
–গুনগুন!(অনি)
–গুনগুন? বলেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় রিশাদ।
–ওই যে হসপিটালের ওই বাচ্চা মেয়েটা আপনাকে বলেছিলাম না। (অনি)
–ওহ হ্যা মনে পড়েছে। কি হয়েছে গুনগুনের? (রিশাদ)
–কিছু হয় নাই। আজকেই ওকে বাসায় নিয়ে গেছে। কালকে ওর বার্থডে তাই ইনভাইট করেছে। আমি এখনো কিছু বলি নাই। (অনি)
–ওদের কে তো আমরা খুব ভালো ভাবে চিনি না। এভাবে একদিনের আলাপে কি যাওয়াটা ঠিক হবে অনন্যময়ী?(রিশাদ)
–হ্যা তা ঠিক। বাট ওনাদের সাথে কথা বলে আমার বেশ ভালো লেগেছে। গুনগুন বার বার করে বলছে তাই আর কি ভাবছিলাম। (অনি)
–আচ্ছা ঠিক আছে। আপনি চাইলে যেতে পারেন। এড্রেসটা নিয়ে রাখবেন আমি ড্রাইভারকে বলে রাখবো আপনাকে রেখে আসবে। (রিশাদ)
–কিহ!! আমি একা যাবো??(অনি)
–তা নয়তো কি। আপনাকে ইনভাইট করেছে তো আপনিই যাবেন। (রিশাদ)
–না আমি একা যাবো না। আপনিও যাবেন আমার সাথে। (অনি)
–কেন? আমি কেন যাবো আপনার সাথে? (রিশাদ)
–কেন যাবেন না আপনি? এটা তো আপনার দায়িত্ব নিজের ওয়াইফকে দেখে দেখে রাখা। তো আপনি আমাকে একা পাঠাবেন কিভাবে?? বলেই মুখটা গোমড়া করে অনি।
অনির মুখে ওয়াইফ শব্দটা শুনে ভ্রু কুঁচকে তাকায় রিশাদ। তবে অনির মুখে কথাটা শুনে তার বেশ ভালোই লাগছে।
কিছুক্ষণের ব্যবধানে অনি বুঝতে পারে সে কি বলে ফেলেছে। রিশাদকে চুপচাপ থাকতে দেখে বলে; না মানে আমি তো কিছুদিন পর চলেই যাবো। আপনি কিন্তু বলেছিলেন আমাকে সবকিছু ঘুরে দেখাবেন। তাহলে আজ থেকেই সেটা শুরু হোক। প্লিজজজ। (অনি)
–আচ্ছা ঠিক আছে। যেতে পারি তবে একটা শর্ত আছে?(রিশাদ)
–কি শর্ত??( অনি)
–সেটা পরে জানতে পারবেন। (রিশাদ) বলেই মুচকি হাসে রিশাদ।
অনি কিছুটা বিরক্তি নিয়ে বলে; আচ্ছা ঠিক আছে।
অনি রিশাদের সাথে কথা বলা শেষ করে যে নাম্বার থেকে কল করেছিল গুনগুন সেই নাম্বারে কল ব্যাক করে। দুবার রিং হতেই হিমাদ্রী কল রিসিভ করে বলে;
–হ্যা অনন্যময়ী বলুন। (হিমাদ্রী)
–গুনগুন কোথায়? ওকে একটু দেয়া যাবে? (অনি)
–গুনগুন তো এখন নেই আমি বাইরে চলে এসেছি। বাসায় যেয়ে আপনাকে কল ব্যাক করছি।(হিমাদ্রী)
–আচ্ছা ঠিক আছে। আপনাকে আর ফিরে যেতে হবে না। আপনি গুনগুনকে বলে দেবেন আমি আসছি। (অনি)
–ওহ সো নাইস। গুনগুন তো শুনলে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে। থ্যাংকস ফর কামিং। (হিমাদ্রী)
হিমাদ্রীর সাথে কথা বলা শেষ করে রিশাদের সাথে টুকটাক গল্প করে অনি। অনিকে বেশ হাসিখুশি দেখাচ্ছে। রিশাদও খুব আগ্রহ নিয়ে অনির কথাগুলো শুনছে সাথে নিজের কাজগুলোও করছে।
দুপুরে খেয়ে দেয়ে বসে আছে অনি। রিশা দরজার কাছে এসে বলে; ভাবি আসবো?
–হ্যা এসো না। (অনি)
–আম্মু তোমাকে ডাকছে। এক্ষুণি যেতে বলেছে। ভাইয়া কোথায়? (রিশা)
–তোমার ভাইয়া একটু কাজে বেরিয়েছে। আধ ঘণ্টার মধ্যে ফিরে আসবে বলে গেছে। (অনি)
–দেখেছো সুস্থ হতে না হতেই বাইরে বেড়োনো শুরু হয়ে গেছে। ভাইয়া না আসলেই একটা পাগল। তুমি চলো আম্মহ বলেছে তোমাকে সাথে করে নিয়ে যেতে। (রিশা)
–আচ্ছা ঠিক আছে চলো। (অনি)
অনির এই মূহুর্তে উঠতে মন চাচ্ছে না। তবুও সে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে উঠে রিশার সাথে যায় শায়লা বেগমের রুমের দিকে।
চলবে……….