অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_২৬
ডাক্তারের সাথে প্রয়োজনীয় কথা বলা শেষ করে হিমাদ্রী গুনগুনের কেবিনের দিকে যায়। গুনগুনকে বেশ হাসি খুশি দেখাচ্ছে। হিমাদ্রী ফাইলটা কেবিনেটে রেখে গুনগুনের পাশে বসে।
–কেমন লাগছে এখন প্রিন্সেস??ব্যথা লাগছে? কোথাও কষ্ট হচ্ছে তোমার??(হিমাদ্রী)
–একটুও কষ্ট হচ্ছে না চাচ্চু। তুমি কোথায় ছিলে এতক্ষণ??তুমি থাকলে তো তুমিও পরী আন্টির সাথে দেখা করতে পারতে। (গুনগুন)
হিমাদ্রী ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সে কিছু বুঝতে পারছে না।
–পরী আন্টি!! কে পরী আন্টি??(হিমাদ্রী)
–ওইতো একটু আগেই এসেছিল। তুমি তো তখন ছিলে না। জানো চাচ্চু পরী আন্টি অনেকককক কিউট। আমাকে এত্তো গুলা আদর করেছে। একরাশ উচ্ছ্বাস আর আনন্দ নিয়ে কথাগুলো বলে গুনগুন।
গুনগুনকে হাসিখুশি দেখে মনে মনে প্রশান্তি অনুভব করে। তবে গুনগুনের কথার আগামাথা হিমাদ্রী কিছু বুঝতে না পারায় মাথা চুলকাতে থাকে।
নিরা হিমাদ্রীর অবস্থাটা বুঝতে পেরে বলে; ভাইয়া তুমি কিছু বুঝতে পারো নি মনে হচ্ছে।তোমার বোঝার কথাও না। আসলে কিছুক্ষণ আগে একটা মেয়ে এসেছিল। গুনগুনের ট্রিটমেন্ট যে ডাক্তারের আন্ডারে চলছে তার কাছে ওনার কোন রিলেটিভের হয়তো ট্রিটমেন্ট চলছে। চেকাপের জন্য এসেছিল আজ হয়ত। ডাক্তার আংকেলের কাছেই গুনগুনের কথা শুনেছে। কেবিনের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলেন। গুনগুনকে দেখে ওনার হয়ত কৌতূহল জাগে।আমি বাইরে বেরোলে ওনার সাথে টুকটাক কথা হয়। কথায় কথায় আলাপ হয় আর কি। তাই এসেছিলেন গুনগুনের সাথে দেখা করতে। গুনগুন তো তাকে দেখে খুবই খুশি হয়েছে। পরী আন্টি পরী আন্টি বলে পাগল করে দিচ্ছে আমাকে। এখন তোমাকে পেয়ে তোমাকেও পাগল করে দিবে। সত্যিই বলতে মেয়েটা খুবই চমৎকার দেখতেও ঠিক তেমনি সুন্দর। আমাদের গুনগুনের তো বেশ মনে ধরেছে তাকে।
হিমাদ্রীর কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে যায়। সবটা বুঝতে পেরে সে বোকা বোকা হাসি দেয়। ডাক্তারের কেবিনে দেখা রিশাদের কথা সে কিছুতেই মনে করতে পারছে না কোথায় দেখেছে। এখন গুনগুনের কাছে পরী আন্টির সম্পর্কে কৌতূহল জাগে হিমাদ্রীর। এসব কিছুর মাঝে সে তার মায়াবতীর কথা ভুলেই গেছে। গুনগুনকে নিয়ে যা ঝামেলা গেল মনে থাকার কথাও না। তবে এবার সে মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয় তার মায়াবতীকে খুঁজে বের করার জন্য। একবার গুনগুনকে সুস্থভাবে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলে যেন সে স্বস্তি পায়। কিছুক্ষণ গুনগুনের সাথে সময় কাটায় হিমাদ্রী।
দুপুর প্রায় আড়াইটা বাজে। বাড়ির সামনে গিয়ে তাদের গাড়ি থেমে যায়। মিথিলা রিশাও কোচিং ক্লাস টিউশনি শেষ করে সবেমাত্র বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে এসেছে। পরীক্ষার দিন যতই এগিয়ে আসছে পড়াশোনার তোরজোড় ততই বাড়ছে। শায়লা বেগম আর সাবিনা বেগম সবার ফেরার অপেক্ষায় অলস সময় পার করছিলেন। সাথে যোগ দেয় মিথিলা আর রিশা। মিথিলাকে কিছুটা ফুরফুরে দেখাচ্ছে। মলিনতা কে ছাপিয়ে ক্ষীণ হাসির রেখা ভেসে উঠেছে তার চেহারায়। নিজেকে স্বাভাবিক রাখার আপ্রাণ চেষ্টায় ব্যস্ত মিথিলা। আর তার এই চেষ্টায় সার্বক্ষণিক সহায়তা করছে মা সাবরিনা বেগম।
গাড়ির হর্ণের শব্দ শুনে রিশা অতি উৎসাহে বাচ্চাদের মতো করে চিল্লিয়ে উঠে বাইরের দিকে যায়। রিশার এই বাচ্চামি স্বভাবগুলো দেখে মিথিলা সহ সবাই হেসে ওঠে।
গাড়ির দরজা খুলে নিচে নেমে দাঁড়ায় রিশাদ। মানসিকভাবে কিছুটা প্রশান্তি অনুভব করছে সে। রিশা হাসিমাখা মুখে রিশাদের সামনে দাঁড়ায়।
–ওহ ভাইয়া!! তুমি সুস্থ হয়ে গেছো!এখন হাঁটতে পারছো ঠিকমতো?(রিশা)
–হ্যা। সামান্য একটু ব্যথা আছে তবে হাঁটতে খুব বেশি সমস্যা হচ্ছে না। (রিশাদ)
রিশা আবেগে তার ভাইকে জড়িয়ে ধরে। রিশাদকে সুস্থ হতে দেখে সে খুবই খুশি আছে। বোনের খুনসুটি ভরা এই ভালোবাসায় রিশাদ মুচকি হেসে রিশাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। অপর পাশ থেকে অনি, রায়হান সাহেবও ভাইবোনের এই ভালোবাসার সুন্দর মূহুর্তগুলো অনুভব করতে পেরে তাদের মুখেও হাসি ফুটে ওঠে। একসাথে বাড়িতে প্রবেশ করে তারা।
শায়লা বেগম রিশাদেকে দেখে তার কাছে এগিয়ে দেন। রিশাদকে আজ সুস্থ অবস্থায় দেখে তিনি যেন পুরোপুরিভাবে স্বস্তি পান। মনে মনে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। ছেলেকে নিজের পাশে বসিয়ে আদর স্নেহে ভরিয়ে দেন শায়লা বেগম। রিশাদ গভীরভাবে তার মায়ের ভালোবাসা গুলো উপলব্ধি করে মুচকি হাসে। সবার সাথে টুকটাক কথা শেষ করে একসাথে দুপুরের খাবার খেয়ে নেয়।
কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে স্টাডি রুমে যায় রিশাদ। তার অনেক কাজ পেন্ডিং হয়ে পড়ে আছে। এই কয়দিনে সে একদমই কোন কাজে হাত লাগাতে পারেনি। তার অসুস্থতায় নতুন যে প্রজেক্টটা নিয়ে কাজ শুরু করেছে সেটাতেই ফুল স্টপ পড়ে আছে। স্টাডি রুমে বসার চেয়ারটা হালকা ফু দিয়ে মুছে নিয়ে বসে পড়ে। ল্যাপটপটা চালু করে প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ফাইলগুলো চেক করে নেয়। সব কিছু ঠিকঠাকই আছে তবে বিগত কয়েকদিনের কিছু কাজ জমে আছে। এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করতে হবে।
ঘন্টাখানেক কাজ করার পর রিশাদ কিছুটা ক্লান্ত হয়ে যায়। সে এখনও পুরোপুরিভাবে সুস্থ হয়ে ওঠেনি। বিধায় একটু ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। কিছুক্ষণ ব্রেক নিয়ে সে ল্যাপটপটা ঘাটাঘাটি করছিল। জরুরি কোন ইমেইল থাকতে পারে ভেবে সে ইমেইল বক্সটা চেক করতে নেয়। ইমেইল বক্স খুলে সে কিছুটা অবাক হয়। কারণ এটা তার ইমেইল আইডি ছিল না। অন্য কারো আইডি লগ ইন করা ছিল। আইডি নেম চেক করতেই ইংরেজি হরফে ভেসে ওঠে অনন্যময়ী শেখ।
রিশাদের মনে পড়ে যায় সেদিন অনি তার ভার্সিটির কোন জরুরি ইমেইল সেন্ট করতে তার ল্যাপটপ ব্যবহার করেছে। হয়ত সে লগ আউট করতে ভুলে গেছে। ভুলবশত চাপ লেগে প্রথম ইমেইলটা ওপেন হয়ে যায়। যেখানে অনির ভার্সিটি থেকে একটা নোটিশ ছিল।
অনির বরাবরই ইচ্ছা ছিল একজন সাইন্টিস্ট হওয়ার। সেই লক্ষ্য নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে সে। তার সাইন্টিস্ট হওয়ার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ভার্সিটির সকল সাইন্স প্রজেক্টে যেন তার অংশগ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কলেজে একজন টপার হিসেবে তার বেশ সুনাম রয়েছে। টিচার দের সুনজর তার উপর থেকে যেন সরেই না।
বাংলাদেশে আসার প্রায় ছয় মাস পূর্বেকার কথা। ভার্সিটির নোটিশ বোর্ডে টাঙানো সাইন্স ফেস্ট এর নতুন পোস্টারটা খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে অনি। সবাই নিজেদের পছন্দের মতো টপিক নিয়ে সাইন্স প্রজেক্ট সাবমিট করতে পারবে। ফাইনাল সিলেকশনে সিলেক্ট হতে পারলে পাবে একটা বড় সুযোগ। ইংল্যান্ড এর শীর্ষ তালিকার একটি প্রতিষ্ঠানে নামকরা বিজ্ঞানী দের সাথে মেগা প্রজেক্টে কাজ করার সুযোগ। অনির ভবিষ্যৎ স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে একধাপ এগিয়ে যেতে পারবে সুযোগটা হাতে পেলে। তাই সে প্রায় দু মাস যাবত রাত দিন পরিশ্রম করে ফেস্টে অংশগ্রহণ করে তার সাইন্স প্রজেক্ট নিয়ে। তার নবীন তীক্ষ্ম চিন্তাধারা বিচারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে বাধ্য করে। তার কাজ যেন বয়সের তুলনায় অনেক বেশি পারদর্শিতার পরিচয় দেয়। যার ফলে ফেস্টে বেস্ট সাইন্স প্রজেক্ট এর এওয়ার্ড টা অনির ঝুলিতে এসেই জোটে। ফাইনাল সিলেকশনের জন্য এখনো একধাপ বাকি আচে। নোটিশ অনুযায়ী যে বিজ্ঞানী দের সাথে কাজ করার সুযোগের কথা বলা হয়েছিল তারা সামনাসামনি ভাইভা নিয়ে ফাইনালি সিলেক্ট করবে। ভাইভার জন্য ডেট ফিক্সড হওয়ার পর অনির কাছে ইমেইল আসে। যেটা এখন রিশাদ খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ছে।
কৌতূহলবশত রিশাদ সেন্টবক্স চেক করে লাস্ট ইমেইল চেক করে। খুব মনোযোগ দিয়ে ইমেইলটা পড়ার পর রিশাদ নীরব হয়ে যায়।দু মিনিটের জন্য স্তব্ধতায় তার মস্তিষ্ক কাজ করা বন্ধ করে দেয়। সে পুনরায় ইমেইলটা পড়ে। এধরনের কিছু তার কল্পনাতীত ছিল। আরো একবার সে অনির উপর প্রচণ্ড ভাবে অবাক। রিশাদ বিড় বিড় করে বলে;
”অনন্যময়ী, সত্যিই তুমি অতুলনীয় অনন্যময়ী ”
অনি ভার্সিটি থেকে প্রেরিত ইমেইলের জবাবে সে বলে ভাইভা তে সে উপস্থিত হতে পারবে না। যার কারণ হিসেবে বলে তার হাসবেন্ড এর অসুস্থতা। মূলত এখানেই রিশাদ অবাক হওয়ার চরম পর্যায় পৌঁছে যায়। জোরপূর্বক যে সম্পর্ক টা তাদের জীবনের সমান্তরাল রাস্তা টা একরেখায় এনে দাড় করিয়ে দিয়েছে সে সম্পর্কের জন্যই সে আজ এতো বড় একটা সুযোগ হাতছাড়া করে দিল। অনির ক্যারিয়ারের জন্য যা এক অপূরণীয় ক্ষতি।
মনের অজান্তেই রিশাদ অদ্রির সাথে অনির তুলনা করা শুরু করে দেয় যদিও তা অনুচিত। ক্যারিয়ারের দোহায় দিয়ে অদ্রি রিশাদকে বিয়ের আসরে এনে পাড়ি জমিয়েছে নিউইয়র্কে। তার ক্যারিয়ার কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে রিশাদকে ছেড়ে সে চলে গেছে। হয়তো অদ্রি অনায়াসেই এই সুযোগ আরো পেতে পারতো প্রথম সুযোগ সে হাত ছাড়া করতে চায় নি। রিশাদ কখনোই তার কোন কাজে বাঁধা দেয়নি বরং আরো সহায়তা করেছিল। সে ভেবেছিল রিশাদ হয়ত তাকে আটকে দিবে। তাই যাওয়ার আগে বলার প্রয়োজনও বোধ করে নি।
রিশাদের মনে পড়ে যায় সেই দিনগুলোর কথা। ভালোই তো ছিল তারা। ভার্সিটিতে ব্যস্ত জীবন কাটানোর পাশাপাশি কিছু সময় একসাথে কাটানো। ব্যস্ত জীবনের ক্লান্তি অবসাদ দূর করতে চায়ের আড্ডায় মেতে ওঠা, কখনো বই মেলায় কিংবা পহেলা ফাল্গুনে অদ্রির কানের পিঠে একগুচ্ছ গোলাপ গুঁজে দেয়া, মাঝে মাঝে বোরিং ক্লাস ফাঁকি দিয়ে রেস্টুরেন্টে বসে একে অপরের কথা শোনা বা শিশু ফুল বিক্রেতার কাছ থেকে সব গুলো ফুল কিনে নিয়ে প্রিয়তমার হাতে গুঁজে দেওয়া।
সময় খুব দ্রুতই যেন পার হয়ে যায়। এইতো সেদিনের কথা। হয়তো ক্যালেন্ডারের হিসেবে দেখতে গেলে বছর পাঁচেক আগের কথা। বইমেলার মৌসুম চলছে। ক্লাসের ফাঁকে সময় বের করে বন্ধু জয়ের সাথে বইমেলা থেকে ঘুরে আসার পরিকল্পনা করে। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী চলে যায় বাংলা একাডেমী কর্তৃক আয়োজিত বইমেলায়। বিকেলের দিকে রোদটা থাকলেও রোদের তেজ কিছুটা কমে গেছে। ফেব্রুয়ারি মাস। শীতের আমেজ কিছুটা আছে যদিও ঢাকা শহরে শীতের প্রকোপ বরাবরই কম থাকে।
জয়ের সাথে তাড়াহুড়া করে মেলায় ঢোকে রিশাদ। বইমেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখে তার পছন্দমতো দুই একটা বইও কিনে ফেলে। একটা স্টলে দাঁড়িয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে বই দেখছিল সে। অন্য কোন ভালো বইয়ের অনুসন্ধানে সে আশে পাশের বইগুলোর দিকে নজর বুলায়। সাজিয়ে রাখা একটি বইয়ে চোখ আটকালে হাত বাড়িয়ে বইটা ধরতে গেলে অপর পাশ থেকে আরো একটি ফর্সা হাত এসে বইটা ধরে ফেলে। রিশাদ সেই হাত অনুসরণ করে তার দিকে তাকায়। সামনে তাকিয়ে সে দেখতে পায় একজন সুন্দরী মেয়ে চশমার আড়াল থেকে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। মেয়েটাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করতেই তার মনে পড়ে যায় মেয়েটা তার কলেজেরই ক্লাসমেট ছিল। তার মনে পড়ে খুব সম্ভবত মেয়েটার নাম অদ্রি। কলেজে তাদের সেকশন আলাদা হলেও কলেজের বিভিন্ন ফাংশনে ও অন্যান্য কাজে তারা একসাথে কাজ করেছে। সেখান থেকেই কিছুটা পরিচিতি গড়ে ওঠে। সেভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা সখ্যতা কোনদিনও তাদের মধ্যে ছিল না।
রিশাদ কিছুটা অনিশ্চিত কণ্ঠস্বরে বলে; অদ্রি???
–হ্যা! তুমি রিশাদ না? (অদ্রি)
–হ্যা। কি খবর বলো?(রিশাদ)
–এইতো আমার ফ্রেন্ড এর সাথে বইমেলায় এসেছিলাম আরকি। তুমি কেমন আছো?(অদ্রি)
–আলহামদুলিল্লাহ। আমিও এসেছিলাম কিছু বই কিনতে। (রিশাদ)
টুকটাক কথা বলে রিশাদ আর অদ্রি। তাদের কথার মাঝখানে এসে উপস্থিত হয় রাইসা। সে অতিব উৎসাহী গলায় বলে; আরে রিশাদ তুমি এখানে? সবকিছুতেই যেন সে একটু বেশিই উৎসাহিত হয়ে যায়।
রিশাদ রাইসার দিকে তাকিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে যায়। রাইসার নামটা জানলেও এই মেয়ের সাথে কখনো সেরকম কথা বলেছে কিনা মনে পড়ছে না। তবুও মেয়েটা তার সাথে কত সহজ সাবলীল ব্যবহার করছে দেখো যেন কতদিনের চেনা। বিষয়টা বেশ ভালো লাগে রিশাদের কাছে। মুচকি হেসে সে রাইসাকে বলে; আরে রাইসা কেমন আছো তুমি?
রাইসা এক গাল হেসে দিয়ে বলে;বাব্বাহ কলেজ টপার আবার আমার নামও জানে দেখি। আমার তো কপাল খুলে গেছে।
রিশাদ কিছুটা লজ্জা পায়। রাইসার কথার জবাব না দিয়ে সে বোকা বোকা হাসি দেয়। রাইসার কথাগুলো সব সময় এমনই হয়। বই মেলায় কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে একটা ক্যাফেতে বসে রাইসা,রিশাদ,অদ্রি আর জয়। তারা চারজনই একি কলেজে পড়াশোনা করেছে। পুরনো দিনের স্মৃতি গুলো তাজা করতেই এখানে এসে একসাথে সময় কাটানোর হঠাৎ পরিকল্পনা করে তারা। অদ্রি প্রথমে আসতে না চাইলেও রাইসার কথা সে আর ফেলতে পারে না। একসাথে মিলে হাসি আড্ডায় মেতে উঠে কিছুটা সময় কাটায় তারা। বিকেলটা খুব ভালো ভাবে কাটায় তারা। কিছু সুন্দর স্মৃতি তৈরি হয়। কলেজে তারা হয়তো একে অপরকে ঠিকঠাক চিনতোও না তবুও যেন আজ মনে হচ্ছে তারা একে অপরের কত চেনা কত পরিচিত। যোগাযোগ সচল রাখতে নাম্বার বিনিময় হয় একে অপরের সাথে। সেদিনের মতো একে অপরের থেকে বিদায় নিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যের দিকে চলে যায় যে যার মতো।
কোন একদিন আবার এভাবে সময় কাটাতে পারবে কিনা সে ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত না। তবুও আজকের বিকেলটা তাদের মনে রাখার মতো ছিল। আবার ফিরে যেতে মন চায় সেই পুরনো ক্লাসরুমে। যেখানে বসেই কেটে গেছে জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সময় গুলো। পাশাপাশি পেয়েছে একদল সহপাঠীর ভিড়ে কিছু কাছের বন্ধু আর পেয়েছে পিতামাতার ন্যায় শিক্ষক শিক্ষিকা। সত্যি দিনগুলোর কথা মনে পড়লে মনটা ভারী হয়ে যায়।
চলবে……….
আসসালামু আলাইকুম
তাড়াহুড়া করে গল্প লিখিতে গেলে একটুও ভালো হয় না?? পরের পর্বটা আরেকটু ভালো করে লিখবো?