অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_২৪
প্রতিটি মানুষের জীবনেই কিছু বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময় থাকে যাকে বলা চলে মাহেন্দ্রক্ষণ। সে সময় বিহ্বলিত আবেগ,অতি উত্তেজনায় সবকিছু মাথার মধ্যে দলা পেকে যায়। কাব্য চৌধুরীর ঠিক এমনই অবস্থা। দুহাতের তফাতে তার সামনেই বসে আছে তার প্রিয়তমা। আজ প্রিয়তমাকে নিজের করে পেয়ে সবকিছুই এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে তার কাছে। এই বিশেষ দিনের জন্য তার বিশেষ কোন পরিকল্পনা নেই। কেননা তার মতে নিরাকে পাওয়া মানে প্রতিটা সময় য়ার কাছে একেকটা বিশেষ মূহুর্ত।
নিরার সাথে কাটানো প্রতিটা মূহুর্ত সে স্মরণীয় করে রাখতে চায় যার সূচনা লগ্নে এসে উপনীত হয়েছে। ধীর পায়ে কাব্য চৌধুরী নিরার দিকে এগিয়ে যায়। নিরা ভয়ে জড়সড় হয়ে বসে আছে। উভয়েই সীমাহীন জড়তায় জরাজীর্ণ।
নীরবতা কাটিয়ে কাব্য চৌধুরি মৃদু স্বরে বলে;
এখনো এই ভারী ড্রেস গুলা পড়ে আছো! যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
নিরা কোন কথা না বলে বিছানা থেকে নেমে ব্যাগ থেকে কাপড় বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। কাব্য চৌধুরী ও ওয়ারড্রব থেকে একটা ট্রাউজার টি শার্ট বের করে চেঞ্জ করে নেয়।
মিনিট দশেক পর নিরা একটা সালোয়ার কামিজ
পড়ে বেরিয়ে আসে। কোমড় অবধি চুলগুলোব ওড়না দিয়ে ঢাকা। নিরা মাথা নিচু করে পা টিপে টিপে কাব্যর সামনে গিয়ে কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে সালাম দেয়।
কাব্য চৌধুরী নিরার সালামের জবাব দিয়ে তার হাত দুটো নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। দু ফোঁটা উষ্ণ নোনাজল কাব্যর হাতে পড়ে। কাব্য চৌধুরী অনির চোখের জল গুলো মুছে দিয়ে তার কপালে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেয়। নিরা আবেশে দুচোখ বুঝে ফেলে। আরো কয়েক ফোটা অশ্রু তার গাল বেয়ে ফ্লোরে পড়ে। কাব্য নিরাকে জড়িয়ে ধরে।
গুনগুনের কান্না শুনে নিরার ধ্যান ভাঙে। ফ্লোরে পড়ে আছে গুনগুন কপাল বেয়ে রক্ত ফ্লোরে গড়িয়ে পড়ছে। গুনগুন রক্ত দেখে খুব ভয় পায়। ব্যাথার সাথে ভয়ের চোটে সে হাউমাউ করে কান্না করতে থাকে। গুনগুনকে এই অবস্থায় দেখে নিরা ডুকরে ওঠে। দ্রুত পায়ে গুনগুনের কাছে যায়। কান্নার বেগ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে নিরার। ঠিকমতো গুনগুনের নামটাও উচ্চারণ করতে পারছেনা সে। খেলনা গাড়ির উপর পা পড়ে ফ্লোরে পিছলে গেছে গুনগুন।
নিরা ফ্লোরে বসে গুনগুনের মাথা নিজের কোলে নেয়।নিরার মাথা কাজ করছে না। গুনগুন ধীরে ধীরে নেতিয়ে পড়ে। নিরার কোলে মাথা দিয়ে নীরব হয়ে যায় গুনগুন। নিরা জোরে জোরে হিমাদ্রী কে ডাকতে থাকে। হিমাদ্রী সবে মাত্র ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। নিরার এমন আহাজারির ডাক শুনে সে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে।
গুনগুনকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে হিমাদ্রী ঘাবড়ে যায়। দৌঁড়ে গুনগুনকে কোলে তুলে নিয়ে পাগলের মতো ডাকতে থাকে। একে একে সবাই হাজির হয়। রেহানা বেগম হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। হিমাদ্রীর হুশ হতেই সে গুনগুনকে কোলে করে নিয়ে ছুটে যায়। গাড়িতে পিছনের সিটে নিরাকে বসিয়ে তার কোলে গুনগুনকে শুইয়ে দেয়। হিমাদ্রী ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি চালিয়ে যায়।
বিশ মিনিটের মাথায় তারা একটা হসপিটালে পৌঁছে যায়। হিমাদ্রী কোলে করে গুনগুনকে নিয়ে হসপিটালে ঢোকে। পাগলের মতো চিৎকার করে ডাক্তারকে ডাকতে থাকে। একজন নার্স এসে গুনগুনকে ওয়ার্ডবয় এর সহায়তায় ড্রেসিং রুমে নিয়ে যায়। ডাক্তার এসে গুনগুনকে চেকাপ করে। একজন মধ্য বয়স্ক নার্স তাকে ড্রেসিং করে দেয়।
কিছুক্ষণ পর একজন বয়স্ক ডাক্তার বাইরে বেরিয়ে আসেন।
–আপনারা পেশেন্ট এর বাড়ির লোকজন?(ডাক্তার)
হিমাদ্রী হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে যেয়ে বলে; হ্যা আমরাই গুনগুনের ফ্যামিলি। আমাদের গুনগুন ঠিক আছে তো ডক্টর?? অসহায় কণ্ঠে বলে হিমাদ্রী।
–দেখুন বাচ্চাটার অনেক ব্লাড লস হয়ে গেছে। ঠিক কতটা ইনজুরি হয়েছে তা বলা যাচ্ছে না। পেশেন্ট এর জ্ঞানও নেই। এই মূহুর্তে পেশেন্ট এর সার্জারি করতে হবে। আমরা ব্লাড ব্যাংক থেকে ব্লাড এরেঞ্জ করছি। বি নেগেটিভ খুব রেয়ার ব্লাড গ্রুপ। ব্যাংক থেকে আমরা এক ব্যাগ ব্লাড এরেঞ্জ করতে পেরেছি আপনারা চেষ্টা করুন আরো ব্লাড লাগবে। খুব ক্রিটিক্যাল সিচুয়েশন। (ডক্টর)
–ডক্টর আপনার যা যা করতে আপনি প্লিয করুন। আমি ব্লাড এরেঞ্জ করছি। প্লিজ ডক্টর গুনকগুনকে সুস্থ করে দিন। শি ইজ মাই প্রিন্সেস প্লিজ। (হিমাদ্রী)
–প্লিজ কাম ডাউন ডিয়ার। উই উইল ট্রাই আওয়ার বেস্ট। ডোন্ট ওয়ারি। শি উইল বি ফাইন। (ডক্টর)
হিমাদ্রী রাফিকে কল করে সবটা জানায়। রাফি সোশ্যাল মিডিয়া সহ সব কন্টাক্ট ইউজ করে ব্লাড এরেঞ্জ করার জন্য। সে দ্রুত গাড়ি নিয়ে হসপিটালে পৌঁছে যায়। চৌধুরী পরিবারের বাকি সকল সদস্য হাসপাতালে পৌঁছে যায়।
নিরা রেহানা বেগমকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়। ক্রমাগত সে নিজেকে দোষারোপ করে যাচ্ছে গুনগুনের এই অবস্থার জন্য। রেহানা বেগম নিজেও কাঁদছেন। নিহাল চৌধুরী একেবারে নির্বাক তার আদরের নাতনিকে এ অবস্থায় দেখে।
দু ঘন্টা পর একজন নার্স এসে তাড়া দেয় ব্লাডের জন্য। রাফি জানায় একজনের সাথে তার কথা হয়েছে সে আসছে। একটু পরেই হিমাদ্রী আর রাফি বেরিয়ে যায় মেডিসিন আনার জন্য।
মিনিট বিশেক পর একজন মাস্ক পরিহিত লোক আসেন হসপিটালের করিডোরে। এদিক ওদিক খুঁজে কাউকে দেখতে পায় না। একটু পরেই একজন নার্স এসে সেই ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করব বলেঃ আপনারা ব্লাডের ব্যবস্থা করতে পেরেছেন। এক্ষুণি ব্লাড দিতে না পারলে পেশেন্টের অবস্থা আরোও ক্রিটিক্যাল হয়ে যাবে কিন্তু। আপনার ফ্যামিলির বাকি সবাই কোথায় গেল। প্লিজ তাদের একটু তাড়াতাড়ি করতে বলুন।
অজানা ব্যক্তি টি বলে; ইয়েস। মাই নেম ইজ এরিক। আমিই ব্লাড ডোনেট করতে চাই। আমার ব্লাড গ্রুপ বি নেগেটিভ।
নার্স এরিককে তাড়া দিয়ে বলে;ওকে তাড়াতাড়ি আসুন আপনি আমার সাথে। বলেই নার্সটি তাকে নিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে যায়। ব্লাড প্রেশার পালস চেক করে নেয়। সব কিছু ঠিক ঠাক থাকায় তিনি এরিককে ব্লাড নেয়ার জন্য প্রস্তুত করে। এক ঘন্টা পর নার্স এসে এরিকের ব্লাডের বোতলটা নিয়ে যায়। এরিকের হালচাল জিজ্ঞাসা করে তাকে কিছুক্ষণ রেস্ট নিতে বলে।
এরিকের কিছুটা উইক ফিল হচ্ছে। সে কিছুক্ষণ বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে ছিল। এর মধ্যেই তার ফোনটা বেজে ওঠে। ফোনের স্ক্রিনে এ্যানির নামটা ভেসে ওঠে। এরিক ফোনটা রিসিভ করে বলে; হ্যালো এ্যানি।
–কোথায় তুমি এরিক? তোমার কাজ শেষ হয় নি?প্লিজ কাম ফাস্ট।(এ্যানি)
–আই এম কামিং উইদিন ফিফটিন মিনিটস।ওকে বাই।(এরিক)
এরিক সাথে সাথেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায় গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে যায়। একটু পরেই হিমাদ্রী আর রাফি মেডিসিন নিয়ে নার্সের হাতে দেয়। নার্স তখন তাদের ব্লাড এরেঞ্জ এর কথা জানিয়ে দেয়। হিমাদ্রী নার্সকে ব্লাড ডোনারের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তাকে জানায় উনার নাম এরিক তিনি পাশের কেবিনেই রেস্ট নিচ্ছে। হিমাদ্রী সেখানে গিয়ে কাউকে খুঁজে পায় না। সাময়িকভাবে সে বিষটাকে নিয়ে আর মাথা ঘামায় না। সে গুনগুনের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। গুনগুনের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে তাকে জানায়। তবে এখনো বিপদ পুরোপুরিভাবে কাটিয়ে উঠতে পারে নি।
হিমাদ্রী নিরাসহ পরিবারের কাউকেই খুঁজে পায়না করিডোরের সামনে। সামনের দিকে এগিয়ে যায় হিমাদ্রী আর রাফি। কিছুটা এগিয়েই সে পাশের কেবিনের দিকে তাকিয়ে কাচের ফাক দিয়ে তার মাকে দেখতে পেয়ে ভিতরে প্রবেশ করে।
বেডে চোখ বুজে শুয়ে আছে নিরা রেহানা বেগম তাকে জানায় কাঁদতে কাঁদতে নিরা মাথা ঘুরে পড়ে যায়। ডাক্তার তাকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে শান্ত করে রাখে। রেহানা বেগম হিমাদ্রীর কাছে গুনগুনের অবস্থা সম্পর্কে জানতে চায়। হিমাদ্রী তাকে জানায় গুনগুনের অবস্থার উন্নতি হচ্ছে বলে।
রেহানা বেগম কিছুটা স্বস্তি অনুভব করেন। তার চোখদুটো ছল ছল করে ওঠে। নিরার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। হিমাদ্রী রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রাফিও তার পিছনে পিছনে যায়।
অপারেশন থিয়েটারের সামনে যায়। দরজার উপরে জ্বলন্ত লাইটটার দিকে তাকিয়ে থাকে। গুনগুনের কথা ভাবতেই তার কাছে সবকিছু ফাঁকাফাঁকা লাগছে। তার ছোট্ট পরীটার কষ্টের কথা ভাবতেই বুকটা মোচড় দিয়ে ওঠে। রাফি হিমাদ্রীর কাঁধে হাত রেখে তাকে ভরসা জোগায়। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে তারা অপেক্ষা করতে থাকে।
দরজার উপরের দিকে জ্বলন্ত লাইটটা নিভে যেতেই হিমাদ্রীর মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যায়। কপালে তার বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে। ডক্টরের সামনে দাঁড়িয়ে তার মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। ডাক্তার হিমাদ্রীর কাঁধে হাত দিয়ে মুচকি হেসে হবে; অপারেশন সাকসেসফুল মি.চৌধুরী। গুনগুন ইজ আউট অফ ডেঞ্জার নাও। ওকে কেবিনে শিফট করে দেয়া হবে।কিছুদিন আমরা অবজারভেশনে রাখবো। আশা করি সব ঠিক হয়ে যাবে।
ডাক্তারের কথা গুলো বার বার হিমাদ্রীর কানে ভাসতে থাকে। কয়েক ফোটা নোনাজল বার উঁকি দিতে দিতে বেরিয়ে আসে। হিমাদ্রী হাসিমুখে হাতের উলটো পিঠ দিয়ে চোখ মুছে নেয়। গুনগুনের সুস্থতার খবরে সবার বুক থেকে যেন পাহাড় সমান কষ্ট এক নিমিষেই শেষ হয়ে যায়।
নিরা গুনগুনের সাথে দেখা করার জন্য অস্থির হয়ে যায়। রেহানা বেগম কোনমতে তাকে সামলে নিচ্ছেন। তার নিজেরও মন চাইছে গুনগুনকে একবার চোখের দেখা দেখতে তার কপালে ঠোঁট বুলিয়ে দিতে। তাই তিনি বার বার হিমাদ্রীকে বলেই যাচ্ছেন গুনগুনকে কখন কেবিনে শিফট করা হবে।
রাত আড়াইটার দিকে স্ট্রেচারে করে গুনগুনকে এনে বেডে শুইয়ে দেয় একজন নার্স। গুনকগুনের মাথার অর্ধেক অংশ জুড়ে সাদা ব্যান্ডেজ। তার কিঞ্চিত লম্বা চুলগুলো ক্ষতস্থান থেকে চেঁছে ফেলে দেয়া হয়েছে। গুনগুনের ছোট্ট কোমল হাতে লাগানো স্যালাইনের সরু সুঁচ। পুরো হাতটাই ঢেকে গেছে সাদা টেপে। গুনগুনের মুখের দিকে তাকায় হিমাদ্রী। তার ছোট ছোট চোখ গুলে বুজে পরন নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। চোখে মুখে ব্যথাতুর চাহনি। এখনো তার সেন্স ফেরেনি। নিরা গুনগুনের পাশে বসে ওর হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে নীরব অশ্রুপাত করছে। রেহানা বেগম গুনগুনের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
দূর থেকে গুনগুনের উপর নজর বুলায় হিমাদ্রী। সেখানে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। তাই সে বেরিয়ে ক্যান্টিনের দিকে যায়। রাফি হিমাদ্রীর জন্য এক কাপ কফি নিয়ে আসে।
–হিমাদ্রী কফিটা খেয়ে নে। প্লিজ টেনশন করিস না গুনগুন একদম সুস্থ হয়ে যাবে। (রাফি)
–জানিস রাফি ভাইয়া মারা যাওয়ার পর যেদিন প্রথম গুনগুনের আগমনের খবর পাই সেদিন থেকেই একটু একটু করে ভাইয়াকে হারানোর কষ্টটা কমাতে পেরেছি। ডাক্তার যেদিন ছোট্ট গুনগুনকে সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে আমার হাতে তুলে দেয় আমার হাত কাঁপছিল। আমি সাহস করে হাত বাড়িয়ে গুনগুনকে তুলে নেই। আমার হাত কাঁপছিল দেখে আম্মু আমার হাতের মাঝে হাত রেখে গুনগুনকে আমার কোলে দেয়। আজ গুনগুনকে এই অবস্থায় দেখে এক মূহুর্তের জন্য মনে হচ্ছিল ভাইয়ার মতো আমরা গুনগুনকেও হারিয়ে ফেলবো। ভাইয়াকে হারিয়ে আমাদের পরিবার পুরোপুরিভাবে ভেঙে পড়েছিল। গুনগুনের আগমনে সবটা আগের মতো হয়ে গেছে। ভাইয়াকে ভুলতে পারা আমাদের পক্ষে কখনোই সম্ভব না। পরিবারের সবাই গুনগুকে আঁকড়ে ভাইয়ার কষ্টটা ভুলে থাকতে চেয়েছে।
হিমাদ্রী কথাগুলো বলছে আর তার গাল বেয়ে অশ্রুগুলো টপটপ করে পড়ছে। রাফি অবাক হয়ে চেয়ে আছে হিমাদ্রীর দিকে। সে জানত হিমাদ্রী গুনগুনকে কতটা ভালোবাসে। তবে আজ তা সে স্বচক্ষে অনুভব করতে পারছে। গুনগুনের প্রতি ভালোবাসার গভীরতা দেখে অভিভূত সে। যেন গুনগুনকে তার নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসে। ভাবতে ভাবতেই রাফির চোখের কোণায় অশ্রু জমে যায়। সন্তপর্ণে অশ্রু মুছে ফেলে সে হিমাদ্রীকে জড়িয়ে ধরে। হিমাদ্রীর নিরব কান্নাগুলো শব্দ পেয়ে যায়। রাফি সেই শব্দ গুলোকে আটকানোর চেষ্টা করে না। হিমাদ্রীর কষ্টগুলো আজ তাকেও ভেতর থেকে প্রচণ্ড ভাবে আঘাত করছে।
শহরের কোথাও বিষণ্ণতায় ছেয়ে গেছে তো কোথাও কিঞ্চিত ভালো লাগা অতীতের স্মৃতির মাঝেও যেন অঙ্কুরিত বীজের ন্যায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। অতীতটা যত প্রকটভাবে তাকে ছন্নছাড়া করে দিচ্ছে রিশাদের বর্তমান টাও তার পিছু ছাড়ছে না। অতীত বর্তমানের জাঁতাকলে যেন সে প্রতিনিয়ত সে পিষে যাচ্ছে। অতীতের চেয়ে বর্তমান টা যেন আরো বেশি জটিল মনে হয় তার কাছে। অতীত তার ধরাছোঁয়ার বাহিরে আর বর্তমানকে ছোঁয়ার অনুমতি নেই। অসহ্যকর চিন্তাগুলো বার বার তাকে ভেতর থেকে বিধ্বস্ত করে দিচ্ছে।
ঘাড় ঘুরিয়ে অনির দিকে তাকায় সে। কপালটা একটু কুঁচকে জড়সড় হয়ে ঘুমাচ্ছে অনি। যথাসম্ভব দূরত্ব বজায় রাখলেও ঘুমের ঘোরে কিছুটা এগিয়ে এসেছে সে। রিশাদের মাথায় শুধু একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার আর অদ্রির জন্য অনির জীবনটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনির সম্পর্কে রিশাদের সবটাই জানা।তবে পুরো সত্যটা সে জানে না কখনো জানার চেষ্টাও করে নি। অনির বিষয়গুলো তাকে খুব ভাবায়। সে মনে প্রাণে চায় অনিও যেন সবার মতো একটা সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব সেটা?????আদৌও কি কখনো সম্ভব?? সম্পর্কের সমীকরণ গুলো আজ বড্ড অগোছালো!!!
চলবে….