অনন্যময়ী সানজিতা_তুল_জান্নাত পর্ব_১৭

0
6630

অনন্যময়ী
সানজিতা_তুল_জান্নাত
পর্ব_১৭

রিশাদ কপাল টা ভাজ করে মুখটা গোমড়া করে বসে ছিল। অনি রিশাদের ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। রিশাদকে কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই রিশা দরজায় এসে কড়া নাড়ে।

-ভেতরে আসব ভাবী? (রিশা)

অনি কিছুটা থতমত খেয়ে বলে; হ্যা এসো না। (অনি)

-ভাবী মা তোমাকে খেতে ডাকছে। এক্ষুণি চলো আমরা সবাই একসাথে খাব।(রিশা)

অনি রিশার কথায় সম্মতি জানায়। রিশা রিশাদকে উদ্দেশ্য করে বলে; ভাইয়া তুই এখানে থাক আম্মু তোর জন্য রুমেই খাবার নিয়ে আসবে। বলেই রিশা রিশাদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায়। মনে হচ্ছিল সে খুব তাড়ায় আছে।

রিশাদ কিছু একটা বলতে যেয়ে থেমে যায়। অনি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে বাইরে যাওয়ার জন্য পা ফেলে।

দরজার কাছাকাছি আসতেই অনির কানে নিজের নামটা প্রতিধ্বনিত হতেই অনির পা থমকে যায়।

-অনন্যময়ী!(রিশাদ)

রিশাদের কণ্ঠে নিজের নামটা শুনতে অনির কাছে বেশ অদ্ভুত রকমের সুন্দর লাগে। সে পিছনে ঘুরে তীক্ষ্ণ চোখে রিশাদের দিকে তাকায়।

রিশাদ অনির কোন সাড়া না পেয়ে বলতে শুরু করে; আমিও নিচেই সবার সাথে খাব। আপনি প্লিয আমাকে একটু হেল্প করবেন?রিশাদ তার হাতটা অনির দিকে বাড়িয়ে দেয়।

অনি মুখে কিছু না বলে রিশাদের হাতটা ধরে। রিশাদ ধীরে ধীরে পায়ের উপর ভর দেয়। রিশাদকে সামলাতে অনি তার কোমড়টা আঁকড়ে ধরে রিশাদকে নিয়ে আস্তে আস্তে বাইরের দিকে যায়।

সাবিনা বেগম ডাইনিং টেবিলে সবার জন্য খাবার পরিবশন করছিলেন। শায়লা বেগম হাতে হাতে সব এগিয়ে দিচ্ছিলেন। চেয়ারে বসে মিথিলা রিশা টুকটাক গল্প করছিল রায়হান সাহেবও মাঝে মাঝে দু একটা কথা বলছিলেন।

শায়লা বেগমের সিঁড়ির দিকে চোখ পড়তেই খুশিতে মুখটা চকচক করে ওঠে। তিনি খাবারের বাটিটা টেবিলের উপর রেখে দ্রুত এগিয়ে যান। রিশা তার ভাইকে দেখে খুশিতে চিল্লিয়ে ওঠে।

মিথিলা সিঁড়ির দিকে তাকাতেই অনি রিশাদকে পাশাপাশি দেখে তার বুকের ভেতরটা অসহ্যকর যন্ত্রণায় দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। তার ঠোঁটগুলো মৃদু কাঁপতে থাকে। মিথিলার মনের আকাশের ধূসর মেঘগুলো ঘুটঘুটে কালো হয়ে আঁধার নেমে আসে। মুখটা মলিন হয়ে যায়।মিথিলা হাত দিয়ে তার ওড়নাটা খামচে ধরে। মিথিলার কাছে এই মূহুর্তে সবকিছু বিষাক্ত লাগছে। সবার কথাগুলো তার কানে তীরের মত বিঁধছে।

সাবিনা বেগম রিশাদকে দেখে মনে মনে বেশ খুশি হন তবে অনির দিকে নজর পড়তেই মিথিলার কথা ভেবে তার হাসিমুখ ছেয়ে যায় অপ্রকাশিত বিষাদে। হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে তিনি মিথলার দিকে তাকান। তার চোখ দুটো নিষ্প্রাণ মনে হচ্ছে। আশ্চর্যজনক ভাবে সেখানে আজ কোন অশ্রু নেই।শুধু আছে অপ্রাপ্তির আত্মদহন।

শায়লা বেগম রিশাদকে রায়হান সাহেবের পাশে বসান। অনিকে রিশাদের পাশে চেয়ার টেনে বসতে বলেন। অনি চেয়ারে বসে পড়ে। সবাইকে বেশ খুশি খুশি লাগছে। অনি মিথিলা মুখোমুখি বসে আছে। মিথিলার স্থির দৃষ্টি সামনের এক জোড়া মানব মানবীর উপর।সেদিকে কারো খেয়াল নেই ঠিকি। তবে দুজন মানুষ তা ঠিকি খেয়াল করছে। সাবিনা বেগমের নজর বারবার তার মেয়ের অসহায় মুখের দিকে পড়ছে। আর অপরজন হল অনি।

মিথিলার দৃষ্টি অনির কাছে বরাবরই অস্বাভাবিক লাগে। তার চোখের ভাষা অনির কাছে রহস্যময় অস্বাভাবিক লাগে। বার বার সে আড়চোখে মিথিলার দিকে তাকাচ্ছে। মিথিলার স্থির দৃষ্টি অনি রিশাদের উপর থেকে সরছেই না। অনির বেশ অস্বস্তি হচ্ছে।

শায়লা বেগমের ডাকে মিথিলার ধ্যান ভাঙে।
-কিরে মিথিলা খাওয়া শুরু কর।খাচ্ছিস না কেন?

মিথিলা শান্ত গলায় বলে; হ্যা মনি খাচ্ছি তো। মিথিলা এক লোকমা ভাত মুখে তুলে নেয়। খাবারটা তার বিস্বাদ লাগছে। গলা দিয়ে নামছে না। তার মন মস্তিষ্ক তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। চোখের সামনে সবকিছু ধীরে ধীরে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে আটকে রাখা অশ্রুগুলোর কারণে। সন্তপর্ণে সে অশ্রুগুলো আড়াল করে নেয়। মনে মনে ভাবে সে এই অশ্রুগুলো কে কোন মূল্যেই আজকের পর থেকে বের হতে দিবে না।

শায়লা বেগম রিশাদকে নিজে হাতে খাবার তুলে খাওয়াচ্ছেন। রিশাদ বেশ তৃপ্তি করে খাচ্ছে। শায়লা বেগমের খুব আনন্দ হচ্ছে পুরো পরিবারকে একসাথে দেখে। অনেক দিন পর আজ তিনি পুরোপুরি স্বস্তি পাচ্ছেন। তার আনন্দ যেন আজ ফুরাচ্ছে না। রায়হান সাহেব মনে মনে বেশ শান্তি পাচ্ছেন।

খাওয়া শেষ করে সবাই যে যার রুমে যায়। শায়লা বেগম ও সাবিনা বেগম হাতের কাজ শেষ করে ঘুমাতে যান।

রিশা কিছুক্ষণ অনির সাথে গল্প করে।মিথিলা কে থাকতে বললে সে রুমে চলে যায় কোন বিশেষ কাজের বাহানা দিয়ে।

রিশাকে অনি তার ভার্সিটির গল্প শুনাচ্ছিল তার স্কুল লাইফের কথা তার ফ্রেন্ডের কথা।রিশাও বেশ উৎসাহ নিয়ে শুনছিল। যা বেশিক্ষণ স্থায়ী হলো না। রিশাদ এর বকা খেয়ে অনি বিড়বিড় করে রিশাদকে হাজারটা কথা শুনিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

রিশা বেরিয়ে গেলে অনি ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে। তার মাথাটা ব্যাথা করছে। ব্যাগ থেকে একটা ওষুধ বের করে খেয়ে নেয়।

রিশাদ অনির গতিবিধি লক্ষ্য করছে। অনিকে ওষুধ খেতে দেখে তার জানতে ইচ্ছে হচ্ছে কিসের ওষুধ এটা। কিছু একটা ভেবে সে নিজের ইচ্ছেটাকে দমিয়ে রাখে।

অনি সোফায় বসে ভাবছে। গতরাতে সোফায় ঘুমানোর ফলে তার ঘাড়ের যে অবস্থা হয়েছিল ভাবতেই অনির মুখে অসহায় ভাব ফুটে ওঠে। রিশাদ ও চুপচাপ অনিকে দেখছে। সে কিছুটা আন্দাজ করতে পারছে। তবে নিজে থেকে আগ বাড়িয়ে কিছু বলছেও না।

অনি কিছুক্ষণ পর রিশাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রিশাদ ইশারায় বলে কিছু বলবেন??

অনি সোজা সাপটা বলে;আমি কোথায় ঘুমাব??

অনির কথায় রিশাদ বেশ মজা পাচ্ছে।
-কেন কাল যেখানে ঘুমিয়েছিলেন আজো সেখানেই ঘুমাবেন। (রিশাদ)

রিশাদের কথা শুনে অনির মুখটা ছোট হয়ে যায়। অসহায় ভাবে রিশাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
রিশাদ জোরে জোরে হেসে দেয়। যার ফলে অনির কিঞ্চিত রাগ হয়।

রিশাদ হাসতে হাসতে বলে; আপনাকে তো আমি কালই বেডে ঘুমাতে বলেছিলাম আপনি নিজেই আমার কথা শোনেননি যার ফলটা সকালবেলাই হাতেনাতে পেয়েছেন। আজকেও যদি চান সোফাতেই ঘুমাতে পারেন সকালবেলা কি হবে আমি জানি না।

অনি ভ্রু কুঁচকে রিশাদের দিকে তাকিয়ে থাকে। রিশাদ তখনও হাসছে। রিশাদের হাসিতে প্রচণ্ড বিরক্ত লাগছে। চোখমুখ কুঁচকে রিশাদের সামনে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।

রিশাদ আস্তে আস্তে সরে গিয়ে বিছানার এক পাশে জায়গা করে দেয়। অনি কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে লাইট অফ করে দিয়ে রিশাদের পাশে বিছানার এক কোণায় গুটিসুটি মেরে অন্যদিকে মুখ করে শুয়ে পড়ে। রিশাদ অনির দিকে তাকিয়ে থেকে মিটিমিটি হাসতে থাকে। অনির এই অবস্থায় সে বেশ মজা পাচ্ছে তবে অস্বস্তিও কম হচ্ছে না।

হাত খানেকের একটু বেশ দূরত্বে অনি শুয়ে আছে। এই প্রথম কেউ রিশাদের পাশে শুয়েছে। রিশাদের কিঞ্চিত অস্বস্তি হচ্ছে। সে নিজেও যথা সম্ভব দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছে।

অপরদিকে অনি শুয়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়। ওষুধ খাওয়ার ফলে সে খুব দ্রুত ঘুমিয়ে পড়েছে। রিশাদও একসময় তন্দ্রায় হারিয়ে যায়।

ক্রমাগত শুভ্র তুষারপাতে ছেয়ে গেছে কানাডার টরেন্টো শহর। শুভ্র তুষারগুলো রাস্তার ল্যাম্পপোস্টের আলোয় তুলোর মতো লাগছে। তুষারভেদ করে গাড়ির হেডলাইটের আলো আবছা আবছা দৃশ্যমান হচ্ছে। একটি বিশাল এপার্টমেন্ট এর সামনে এসে গাড়িটি থেমে যায়। গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে আপাদমস্তক গরম কাপড়ে আবৃত একজন মানব। বেরিয়ে আসতেই কালো কাপড় তার তুষারে ছেয়ে যায়।

দ্রুত পা ফেলে এপার্টমেন্টে ঢুকে লিফটে চেপে ২৫ তম ফ্লোরে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়। ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে লাইট জ্বালিয়ে দিতেই পুরো রুম জুড়ে অনির নানা ভঙ্গির ছবিগুলো দৃশ্য মান হয়। হিমাদ্রী চৌধুরীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে।চটপট নিজের জামাকাপড়সহ কিছু টুকটাক জিনিস ব্যাগে গুছিয়ে নেয়।

অনির ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বিড়বিড় করে বলে; খুব জলদি তোমাকে আমার রাজ্যের রানী বানিয়ে নিয়ে আসব মায়াবতী।একটু অপেক্ষা করো আমি আসছি খুব তাড়াতাড়ি।

এরপর সে দরজা লক করে বেরিয়ে যায়।গাড়ির সামনে আসতেই ড্রাইভার গাড়ির দরজা খুলে দিলে গাড়িতে উঠে পড়ে। গাড়ি এয়ারপোর্ট এর দিকে চলতে শুরু করে। গাড়িতে বসে হিমাদ্রী চোধুরীর যেন আর তর সইছে না। সময় যেন আজ যাচ্ছে না বলে তার মনে হচ্ছে। বার বার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর ড্রাইভার কে ক্রমাগত তাড়া দিয়ে যাচ্ছে। বাইরের অতিব প্রিয় তুষারপাতকেও এই মূহুর্তে তার অসহ্যকর লাগছে।কেননা তুষারপাতের জন্যই বারবার গাড়ির গতি কমে যাচ্ছে।

অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে হিমাদ্রী এয়ারপোর্ট এ পৌঁছে যায়। দ্রুত বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য চেক ইন করে। আরো কিছু ফর্মালিটিস পূরণ করে অবশেষে সে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে ফ্লাইটে চড়ে বসে। অনির কথা ভাবলেই নিজের অজান্তেই তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। সেদিনের দিনটা বার বার তার স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে হিমাদ্রীর।

সপ্তাহখানেক আগের কথা। একদিনের জন্য জরুরি মিটিং উপলক্ষে দেশে এসেছিলেন হিমাদ্রী চৌধুরী। ফ্লাইট থেকে নেমেই রওনা দেন ঢাকা শহরের নামকরা হোটেল ড্রীম পার্ক এর উদ্দেশ্যে। মিটিং শেষ করেই সবে মাত্র বের হচ্ছিল কানাডা ফিরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তার ভাষ্যমতে করিডোরে বেরোতেই তার দৃষ্টি আটকে যায় আপাদমস্তক ঢাকা এক সুন্দরী কন্যার উপর ফুলের উপর উপুড় হয়ে সমস্ত ঘ্রাণ একবারে শুষে নিতে ব্যস্ত ছিল।। একদম ধবধবে ফর্সা বিদেশিদের মতো তবে চেহারায় বাঙালিয়ানার ছাপ উপচে পড়ছে। গালের বাম পাশের বাদামী রং এর তিলটা চকচক করছে। প্রথম দেখায় হিমাদ্রীর নজর তার তিলেই যেন আটকে যায়। আবেশে দুচোখ বুজে ফেলে।

-কিরে কি দেখছিস এইভাবে হা করে। হারি আপ ম্যান। ফ্লাইটটা মিস হয়ে যাবে কিন্তু। (হালকা ধাক্কা দিয়ে কথাগুলো হিমাদ্রী কে বলে তার বন্ধু রাফি।রাফি শুধু তার বন্ধুই না তার বিজনেস পার্টনার ও।তারা দুজনই এসেছিল একটা জরুরি মিটিং এর উদ্দেশ্যে।

রাফির ধাক্কায় হিমাদ্রীর ধ্যান ভাঙে। পিছনে ঘুরে সে রাফির দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।রাফির এমন কাজে সে খুব বিরক্ত হচ্ছে তার উপর। যেন তার খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজে বাধা দিয়ে দিয়েছে। চোখ মুখ কুঁচকে সে দাঁতে দাঁত চেপে বলে; কি হয়েছে কি? এত ডাকাডাকি করছিস কেন?ফ্লাইটটা কি উড়ে যাচ্ছে নাকি?

রাফি মুখ ছোট করে বলে;আরে বাবা এভাবে চটছিস কেন?আমি কি তোর রণে ভঙ্গ দিলাম নাকি। চল না ইয়ার লেট হয়ে যাচ্ছে।

-আরে বাবা যাবোই তো এখানে থাকার জন্য আসছি নাকি।গিভ মি জাস্ট ফাইভ মিনিটস। তুই যা আমি আসছি (হিমাদ্রী)

-ওকে ওকে। অনলি ফাইভ মিনিটস। আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি তুই আয়। বলেই রাফি সামনের দিকে এগিয়ে যায়।

হিমাদ্রী পিছনে ফিরে আর অনিকে দেখতে পায় না। যেখানে সে অনিকে দেখেছিল সেদিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু তাকে আর দেখতে পায় না। হোটেলের চারদিকে সে তন্ন তন্ন করে খোঁজে কিন্তু কোথাও অনিকে খুঁজে পায়না। এদিকে দেরি হয়ে যাওয়ায় রিশাদ তাকে বার বার ফোন দিচ্ছে। ফোনের রিংটোনের শব্দ তাকে প্রকটভাবে বিরক্ত করছে। রাগের বশে সে ফোনটা মাটিতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়ার সাথে সাথে রিংটোনটা থেমে যায়।

রাফি পুনরায় কল দেয়। সংযোগ না পাওয়ায় সে কিছুটা যা বোঝার বুঝে নেয়। হিমাদ্রীর উদ্দেশ্যে গাড়ি থেকে নামতেই দূরে হিমাদ্রিকে আসতে দেখে। হিমাদ্রীকে হতাশ হয়ে আসতে দেখে আসতে কিঞ্চিত চিন্তিত হয়।

হিমাদ্রী রাফির ডাকে সাড়া না দিয়ে চুপচাপ গাড়িতে বসে পড়ে। রাফিও গাড়িতে বসলে এয়ারপোর্ট এর উদ্দেশ্যে রওনা হতে বলে। হিমাদ্রী গাড়িতে বসে কিছু একটা ভাবছে। রাফি তাকে তীক্ষ দৃষ্টিতি বার বার আড় চোখে দেখছে।
হিমাদ্রীর এ ধরনের আচরণের সাথে পরিচিত নয় সে। তবে এই মূহুর্তে তার সাথে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছে।

-হ্যালো স্যার। হিয়ার ইজ ইউর স্নাকস। (এয়ারহোস্ট)

এক জন নারীর কন্ঠ শুনে হিমাদ্রীর ধ্যান ভাঙে। সামনে তাকিয়ে সে একজন এয়ারহোস্টকে দেখে হাসি মুখে স্নাকস সার্ভ করছে। সে তাকে ছোট্ট করে থ্যাংকস জানায়।

কয়েক ঘন্টা পর ফ্লাইট বাংলাদেশে ল্যান্ড করে। এয়ারপোর্ট এর সব প্রসেস শেষ করে বাইরে বেরিয়ে আসে। খোলা আকশের নিচে দাঁড়িয়ে সে চোখ বুজে বুক ভরে শ্বাস নেয়। কিছুক্ষণ এভাবে কাটিয়ে দিয়ে সে ফোন বের করে রাফিকে টেক্সট করে।

রাফি কিছুক্ষণের মধ্যেই গাড়ি নিয়ে হিমাদ্রীর কাছে পৌঁছে যায়। হিমাদ্রী রাফিকে জড়িয়ে ধরে। তারপর তারা একসাথে রওনা দেয়।

বিশাল একটা ডুপ্লেক্স হাউজের সামনে এসে গাড়ি থেমে যায়। হিমাদ্রী রাফি গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে যায়।ডোরবেল বাজিয়ে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। নেভিব্লু জরজেট শাড়ি হাতে সাদা গ্লাভস পরিহিতা একজন দরজা খুলে দরজার পাশে দাঁড়ায়।

হিমাদ্রী তাকে দেখে মুচকি হাসি দিয়ে কুশল বিনিময় করেন। হিমাদ্রীর মা রেহানা বেগম তখন শোয়ার জন্য নিজের ঘরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াচ্ছিলেন। এত রাতে ডোরবেলের আওয়াজ শুনে তিনি থেমে যান কে এসেছে দেখার জন্য।

হিমাদ্রী দরজা পার করে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। রেহানা বেগমের সামনে তার ছেলের মুখটা স্পষ্ট হতে থাকে। তার মুখে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটে ওঠে। হিমাদ্রী সোফায় তার ব্যাগটা রেখে মায়ের কাছে গিয়ে সালাম জানিয়ে তার সাথে কুশল বিনিময় করে। রেহানা বেগম ছেলেকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে আবেশে তার চোখের জল ছেড়ে দেন। হঠাৎ করে ছেলেকে দেখে তিনি নিজের আবেগকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেননি।
ছেলের কপালে তিনি পরম আবেশে ভালোবাসার পরশ এঁকে দেন। হিমাদ্রী তার মায়ের চোখের জল মুছে দিতেই রেহানা বেগম লম্বা হাসি দেন। চোখের কোণায় জলের কণাগুলো চকচক করছে। হিমাদ্রীর কাছে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু হলো তার মায়ের এই আনন্দের অশ্রু মেশানো হাসি।

চলবে……

আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here