Ragging To Loving ?part-6

0
1217

? Ragging To Loving ?
Part:: 6
Writer:: Ridhira Noor

নূর হা হয়ে বসে আছে। দুই তিন বার দ্রুত পলক ফেললো। আর চিন্তা করতে লাগলো। এটা কোন ধরনের নাইনসাফি? আমি বলি নাই বলে আমি আমাকে ব্লাকমেইল করে জেনে নিছে। দাঁড়া তুই। নূরও তন্বির পিছনে গেল। ওকে থামানোর চেষ্টা করছে। তন্বি ভালো করে জানে এখন নূরের হাতে ধরা খাওয়া মানে নিজেকে শহীদ করা। তন্বির পিছনে নূর সারা বাড়ি দৌড়াচ্ছে। আম্মুর আবার এসবে অভ্যস্ত আব্বু মাত্র এলো অফিস থেকে। তাদের দুইজনকে এভাবে দৌড়াতে দেখে হেসে ফ্রেশ হতে গেল।

নূরঃঃ- তুই মিথ্যা বলছস আমাকে। দাঁড়া আজ তোর ঘাড় মটকে দিব।

তন্বিঃঃ- এমনিতেই কি তোমাকে ডায়নি ডাকি? দেখ আজ নিজে প্রমাণ করে দিলে তুমি আস্তো একটা ডায়নি।

নূরঃঃ- (জুতা হাতে নিয়ে) এই ফ্লাইং জুতা তোর মুখে মারমু। দাঁড়া তুই।

তন্বিঃঃ- ধরতে পারলেই তো। (খিলখিল করে হাসতে লাগলো।)

নূর ফ্লাইং জুতা ছুড়ে মারল তন্বি ঝুকে বসে গেল। নূর দুই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল। আম্মু আব্বুর চা বানানোর জন্য মাত্রই চুলায় পানি বসালো। ধপাসসসসস। জুতা গিয়ে পড়ল পাত্রে। আম্মুর রাগ এখন সাত আসমান উপরে। নূর আর তন্বি আম্মুর রাগকে বরাবরই ভয় পায়। দুইজনই টেবিলের নিচে ঢুকে পড়লো। নূর তন্বিকে দোষ দিচ্ছে তন্বি নূরকে দোষ দিচ্ছে। আম্মু দুইজনকে কান ধরে টেনে টেবিলের নিচ থেকে বের করল।

আম্মুঃঃ- এখন তোরা দুইজন রান্নাঘর পানির পাত্র পরিষ্কার করবি। আর ১০ মিনিটের মধ্যে চা বানিয়ে আনবি। আর একটা কথাও যেন বলতে না হয়।

আম্মু বলতে দেরি দুই বোন ঝড়ের গতিতে এমন দৌড় দিল রান্নাঘরে। কি করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না। পানি মুছতে কাপড়ও খুঁজে পাচ্ছে না। দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে দুইজন খেল মাথায় বারি। নূর এক টানে তন্বির ওড়না নিল পানি মুছতে। মুছতে যাবে তখনই আম্মু বাঁধা দেয়। কিছু না বলে একটা কাপড় দিল। তন্বি পরিষ্কার করতে লাগলো। নূর চা বানাতে লাগলো। এগুলো আম্মু মুখ টিপে টিপে হাসছে। আব্বু এসে ড্রয়িং রুমে বসল ততক্ষণে নূর আর তন্বি চা নিয়ে এলো।

আব্বুঃঃ- কি হলো? কিসের এত নিরবতা পালন করছ। আর এই কি আমার দুই মেয়ে দেখি আমার জন্য চা বানিয়ে আনলো। বাহ্!

আম্মুঃঃ- একটু আগে যে কান্ড পাকিয়েছে তারই পশ্চাত্তাপ করেছে। (একটু আগে ঘটে যাওয়া কান্ড বলতেই আব্বু জোরে হেসে উঠল) হ্যাঁ তুমি আরো মাথায় তুলো।

রাতে খাবার পর নূর আর তন্বি বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়াল। আকাশে মেঘ জমেছে। হয়তো বৃষ্টি হবে। হালকা শীতল বাতাস আলতো করে ছুঁয়ে যাচ্ছে। ভালোই লাগছে বাতাসটা। দুইজনই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। নিরবতা ভেঙে তন্বি বললো_

তন্বিঃঃ- আপু একটা বলি? (নূর মাথা নেড়ে সাই দিল) তোমাদের ভার্সিটির ছেলেগুলো কি বেশি জ্বালায়?

নূরঃঃ- (এক দীর্ঘ শ্বাস নিল) তা তো দুই দিনে যা দেখলাম মনে হয় একেকটা ঘাড় ত্যাড়া। ভবিষ্যতে কি হয় বলতে পারি না।

তন্বিঃঃ- আপু শুনেছি কিছু মেয়েদের একটা এন্টি র‍্যাগিং টিম আছে। মানে যারা অন্যদের র‍্যাগিং করে মেয়েগুলো তাদের র‍্যাগিং করে। আর আমাদের কলেজের ওই স্টুডেন্টদেরও নাকি তারাই শায়েস্তা করেছে। তোমাদের যদি ওই ছেলেরা বেশি জ্বালায় তাহলে ওই এন্টি র‍্যাগিং টিমের সাথে যোগাযোগ করতে পারব।

নূর বিড়বিড় করে কি যেন বললো। তন্বি জিজ্ঞেস করাই বললো এমন কিছু হলে জানাবে। তারা গিয়ে শুয়ে পড়ল। সারারাত প্রচুর বৃষ্টি পড়েছে। সকালে থমথমে পরিবেশ। সূর্যের আবছা আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। রাস্তা-ঘাট ভিজে চুপসে আছে। অনেক জায়গায় কাঁদা মাখামাখি হয়ে আছে। তন্বি আর কলেজে যায়নি। নূর ও বাকিরা গেল ভার্সিটি।

মেহেরঃঃ- কি অবস্থা রাস্তা-ঘাটের দেখছিস। সামান্য বৃষ্টি হলেই জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।

আলিফাঃঃ- বিল্ডিংয়ের উপর বিল্ডিং তুলবে কিন্তু চলাচলের পথ ঠিক রাখবে না। কয়দিন পর দেখবি এসব রিকশা বাস কার বাদ দিয়ে নৌকা জাহাজে যাতায়াত করতে হবে। দেখ ভার্সিটির মাঠ দেখ। কাঁদায় ভরা।

সিমাঃঃ- তোদের দুইজনকে সড়ক মন্ত্রী বানাবো। কি বলিস?

হাসাহাসিতে মেতে উঠল। এমন সময় এলো ভূমিকম্প মানে আফরান আর তার বন্ধুরা জীপ নিয়ে ভার্সিটিতে প্রবেশ করল। এমন সময় দেখল নূর আর বাকিরা মাঠে দাঁড়িয়ে হাসছিল। তারপর শয়তানি বুদ্ধি মাথায় এলো। জীপটা ফুল স্পীডে চালিয়ে তাদের সামনে কাঁদার মধ্য দিয়ে গেল। কাঁদা সব ছিটকে তাদের গায়ে পড়লো। তারা বুঝতে পারলো না হঠাৎ কি হলো? সামনে তাকিয়ে দেখে তাদের আর বুঝতে বাকি রইল না। আফরানরা তাদের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে খারাপ অবস্থা। হাসারই কথা তাদের এখন দাঁড় করিয়ে দিলে স্ট্যাচুর চেয়ে কম লাগবে না। মেয়েরা পারছে না তাদের ঘাড় মটকে দিতে। রাগে পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে। ছেলেরা তাদের সামনে এসে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে এমন অবস্থা যে একজন আরেক জনের গায়ের উপর পড়ে যাচ্ছে। নূর ইশারা দিতেই মেয়েরা হাত ভরতি কাঁদা নিল। ছেলেদের হাসি উধাও হয়ে গেল। তারা বুঝতে পারলো এখন কি হবে। কি বলা বা বোঝার আগেই কাঁদা ছুড়ে মারল তাদের গায়ে। রাগে তারাও কুটিকুটি হয়ে গেল।

রিহানঃঃ- হোয়াট দ্যা হেল ইজ দিস? (প্রচন্ড রেগে গিয়ে)

পুষ্পঃঃ- ইট ইজ নট হেল। ইট ইজ কাঁদা। (বলে আবার কাঁদা ছুড়ে মারল।)

নূরঃঃ- সেটা আগে বোঝার উচিৎ ছিল। নিউটন নানা বলে গেছিলো। প্রত্যেক ক্রিয়ারই একটি সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আপনারা ক্রিয়া করেছেন আমরা তার প্রতিক্রিয়া করছি। (বলে আফরানের গায়ে কাঁদা মারল।)

আফরান তো রাগে শেষ। কি করবে ভেবে পাচ্ছে না। তাই সেও কাঁদা ছুড়ে মারল নূরের গায়ে। এক প্রকারে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে গেল। একে অপরকে কাঁদা ছুড়াছুড়ি। সারা মুখে কাঁদা মাখিয়ে দিল একে অপরের। এক প্রকারে কাঁদা দিয়ে হোলি খেললো তারা। কাউকে চেনা যাচ্ছে না এমন অবস্থা হয়েছে। তাদের এই কান্ড দেখে সারা ভার্সিটির সবাই হাসতে হাসতে শেষ। অনেকে ছবি আর ভিডিও তুলছে। প্রায় এক ঘন্টা ধরে এই যুদ্ধ চলল। অবশেষে ক্লান্ত হয়ে থেমে গেল। পারছে না একে অপরকে এই কাঁদার মধ্যেই চুবিয়ে মারতে। এই অবস্থায় তো আর ক্লাস করা যাবে না। ছেলেরা রাগে জীপে উঠে গেল। নূর কাঁদা নিয়ে জীপের সামনের গ্লাসে ছুড়ে মারল।

আফরানঃঃ- হোয়াট দ্যা…….

নূরঃঃ- কাঁদা।

বলেই দৌড় দিল। তার পিছে বাকিরাও দৌড়। বাইরে এসে একে অপরের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর আমরিনের সেলফি তা তো আছেই। ওইদিকে আফরানরাও একে অপরের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে দিল। তারপর বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিল।
.
.
.
কলিং বেল বাজাতেই তন্বি এসে দরজা খুলল।

তন্বিঃঃ- আম্মু এখানে কে যেন স্ট্যাচু রেখে গেল।

নূরঃঃ- ওই শাকচুন্নি এটা আমি।

তন্বিঃঃ- (হাসতে হাসতে পেট ধরে নিচে বসে গেল) তোমার এই অবস্থা কেন?

আম্মুঃঃ- কি হয়েছে?

আম্মুকে দেখি সেও হাসছে। কোমরে হাত দিয়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে ভিতরে গেল। গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বসল বেডের উপর। তন্বি হাসতে হাসতে এসে তার পাশে বসল। নূর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। সে তাড়াতাড়ি হাসি চাপা দিল।

তন্বিঃঃ- নিশ্চয় ওই ছেলেরাই করেছে?

নূরঃঃ- হো। খাচ্চর খাটাশ বেটা। আমিও কম না। সুন্দর করে কাঁদা দিয়ে এক্কেরে মেকআপ করিয়ে দিছি।

তন্বি আর হাসি চাপা রাখতে না হাসতে হাসতে বেডের উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। আপু তুমিও এক্কান চিজ।

নূরঃঃ- শুধু চিজ??? আরে মে চিজ বাড়ি হু মাস্ত মাস্ত। মে চিজ বাড়ি হু মাস্ত….. (বলে সেও বেডের উপর শুয়ে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।)

.
.
.

চলবে

বিঃদ্রঃ ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here